বিষয়বস্তুতে চলুন

অধিকার

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

অধিকার হলো এমন কোনো দাবি বা সুবিধা, যা আইন, সমাজ বা নৈতিক নীতি দ্বারা স্বীকৃত এবং যা কোনো ব্যক্তির জন্য বা কোনো গোষ্ঠীর জন্য নিশ্চিত করা হয়। অন্য কথায়, অধিকার হলো সেই সব সুযোগ বা স্বাধীনতা, যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য ন্যায্য এবং তাদের ব্যক্তিগত বিকাশ বা সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত সুযোগ বা সুবিধার সমষ্টিকে অধিকার বলা যায়। প্রকৃতি অনুসারে অধিকার প্রধানত দুই প্রকার, যথা নৈতিক অধিকার ও আইনগত অধিকার।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হৈমন্তী, গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৫০
  • বৈদিক যুগের পরে ক্রমে নারীদের অধিকার অনেক বিষয়ে যে সংকুচিত হইয়া আসিয়াছে তাহার কারণ সন্ততিলাভের জন্য বাধ্য হইয়া আর্যগণ শূদ্রকন্যাদের বিবাহ করিতেন। কন্যা কম ছিল বলিয়াই হউক, বা শীঘ্র শীঘ্র বংশবিস্তার করিবার জন্যই হউক, আর্যগণের মধ্যে শূদ্রকন্যাকে বিবাহ করার প্রথা বিলক্ষণ প্রচলিত হইল। তাই যেসব অধিকার আর্যকন্যাগণ পাইতেন সেইসব অধিকার পরে শূদ্রকন্যাদের হয়তো দেওয়া হইত না। ক্রমে এইসব কারণে ভারতে নারীদেরই অধিকার কমিয়া আসিতে লাগিল। এখন তো ব্রাহ্মণকন্যা ব্রাহ্মণের পত্নী হইয়াও শূদ্রারই সমতুল্যা। বেদাদিতে তাঁহাদের অধিকার নাই।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২-৩
  • নারীর আসল নারীত্ব হচ্ছে মাতৃত্ব। এই মাতৃত্বের যে মহাব্রত, তাই নারীর একমাত্র ব্রত। এখানে যেমন পুরুষের অধিকার নেই, সেই রকম পুরুষের যে বাহিরের জীবনের কর্ম্ম সেখানেও নারীর হস্ত অনাবশ্যক।
    • মৃতের কথোপকথন - নলিনীকান্ত গুপ্ত, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৩
  • রাজশক্তি নাই নেশন্ আছে, রাজশক্তি ধ্বংশ হইয়া গেছে নেশন্ টিকিয়া আছে, এ দৃষ্টান্ত কাহারো অগোচর নাই। রাজার অধিকার সকল অধিকারের উচ্চে, এ কথা এখন আর প্রচলিত নহে; এখন স্থির হইয়াছে, ন্যাশনাল অধিকার রাজকীয় অধিকারের উপরে। এই ন্যাশনাল্ অধিকারের ভিত্তি কি, কোন্ লক্ষণের দ্বারা তাহাকে চেনা যাইবে? অনেকে বলেন, জাতির অর্থাৎ raceএর ঐক্যই তাহার লক্ষণ। রাজা, উপরাজ ও রাষ্ট্রসভা কৃত্রিম এবং অধ্রুব,—জাতি চিরদিন থাকিয়া যায়, তাহারই অধিকার খাঁটি।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেশন কি?, আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- মজুমদার লাইব্রেরি, প্রকাশস্থান-কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩
  • আমাদের দায়িত্ব খুব সহজ নয়। যুদ্ধ দীর্ঘকাল চলিবে এবং খুবই কঠোর হইবে। আমাদের ন্যায়নিষ্ঠা ও দুর্ভেদ্যতার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রহিয়াছে। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ৩৮ কোটি মানবের স্বাধীন হইবার অধিকার নিশ্চয়ই আছে এবং স্বাধীনতার মূল্য দিতে তাহারা প্রস্তুত। আমাদের স্বাধীনতায় জন্মগত অধিকার হইতে বিচ্যুত করিতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে নাই।
    • এম. জি. মুলকর, আজাদী সৈনিকের ডায়েরী- এম. জি. মুলকর, প্রকাশক- ওরিয়েন্টাল এজেন্সী, প্রকাশস্থান-কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০-৬১
  • মুদ্রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতুখণ্ড। স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র এই তিন প্রকার ধাতুতে মুদ্রা নির্ম্মিত হয়। এই সকল ধাতু দুষ্পাপ্য, এই নিমিত্ত ইহাতে মুদ্রা নির্ম্মণ করে। দেশের রাজা ভিন্ন আর কোন ব্যক্তিরই মুদ্রা প্রস্তুত করিবার অধিকার নাই! রাজাও স্বহস্তে মুদ্রা প্রস্তুত করেন না। মুদ্রা প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত রাজার লোক নিযুক্ত করা থাকে। রাজা স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র ক্রয় করিয়া দেন। ঐ নিযুক্ত ভূত্যেরা উহাতে মুদ্রা প্রস্তুত করে। যে স্থানে মুদ্রা প্রস্তুত করা যায় তাহাকে টাকশাল কহে। কলিকাতা রাজধানীতে একটী টাকশাল আছে।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্রয় বিক্রয়-মুদ্রা, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭
  • মধ্যশ্রেণী ক্ষমতা অধিকার করিয়া তাহাদের স্বার্থের অনুকূল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করিবে; আমরা চাহি গণবিপ্লব দ্বারা সমাজতন্ত্রসম্মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করিতে; মধ্যশ্রেণীর বিপ্লব রক্ষণশীল, অর্দ্ধবিপ্লব কার্য্যতঃ প্রতিবিপ্লব।
    • জোসেফ স্তালিন, ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৫৩
  • বর্ষা-ঋতুটা বিশেষভাবে কবির ঋতু। কেননা কবি গীতার উপদেশকে ছাড়াইয়া গেছে। তাহার কর্ম্মে ও অধিকার নাই; ফলেও অধিকার নাই। তাহার কেবলমাত্র অধিকার ছুটিতে;–কর্ম্ম হইতে ছুটি, ফল হইতে ছুটি।
  • সংসারাশ্রমেও পত্নীর অধিকার কম ছিল না। যজ্ঞে ও সামাজিক ধর্মাচরণে পত্নীর পূর্ণ অধিকার ছিল। ‘জায়া’ কথাতে ততটা অধিকার সূচিত হয় না। জায়াশব্দে তিনি পুত্রের জননী মাত্র। ‘পত্নী’ কথাতে বুঝা যায়, নারীদেরও অধিকার ও নেতৃত্ব আছে। তবে অনেকস্থলে পত্নীকে জায়া বলিয়া প্রকরণবিশেষে উল্লেখ করা হইয়াছে।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০
  • ভানুগুপ্তের জীবিতকালে অথবা তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে মালবরাজ যশোধর্ম্মদেব মগধ, গৌড় ও বঙ্গ অধিকার করিয়াছিলেন। তাঁহার মন্দশোরে আবিষ্কৃত থোদিতলিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, হিমালয় হইতে মহেন্দ্রগিরি পর্য্যন্ত, লৌহিত্য বা ব্রহ্মপুত্রতীর হইতে পশ্চিমসমুদ্র পর্য্যন্ত তাঁহার অধিকার বিস্তৃত হইয়াছিল। যশোধর্ম্মদেবের যে শিলালিপিতে তাঁহার ব্রহ্মপুত্রতীর পর্য্যন্ত অধিকার বিস্তারের বর্ণনা আছে, তাহা ৫৮৯ বিক্রম সম্বৎসরে (৫৩২-৩৩ খৃঃ অব্দ) উৎকীর্ণ হইয়াছিল[১১৯] কিন্তু দামোদরপুরে আবিষ্কৃত ভানুগুপ্তের তাম্রলিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে, তিনি ২১৪ গৌপ্তাব্দে (৫৩৩ খৃঃ অব্দ) জীবিত ছিলেন।
    • রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩-৮৪
  • আমার যেটুকু অভিজ্ঞতা তাতে বলতে পারি, আমাদের দেশের মূঢ় রায়তদের জমি অবাধে হস্তান্তর করবার অধিকার দেওয়া আত্মহত্যার অধিকার দেওয়া। এক সময়ে সেই অধিকার তাদের দিতেই হবে, কিন্তু এখন দিলে কি সেই অধিকারের কিছু বাকি থাকবে? তোমার লেখার মধ্যে এই অংশে আমার মনে যে সংশয় আছে তা বললেম।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রায়তের কথা, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • মুক্তি হলো প্রতিটি মানুষের পরম অধিকার, যেখানে সে শুধুমাত্র নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকে, নিজের ইচ্ছায় নিজের কার্যক্রম নির্ধারণ করে এবং তার প্রথম দায়িত্ব নিজের প্রতি থাকে।
    • মিখাইল বাকুনিন, নৈরাজ্যবাদ: তত্ত্ব থেকে বাস্তবে, ড্যানিয়েল গ্যুরিন, নিউ ইয়র্ক: মান্থলি রিভিউ প্রেস (১৯৭০), পৃষ্ঠা ৩১
  • আল্লাহ বললেন, তাহলে তুই এখান থেকে নেমে যা। কেননা তোর এই অধিকার নেই যে, এখানে (থেকে) অহংকার করবি। সুতরাং বের হয়ে যা। তুই হীনদের অন্তর্ভুক্ত।
    • কুরআন, সূরা আল আ'রাফ (আয়াত নং -১৩) মুফতী তাকী উসমানী
  • বিনোদিনী চা লইয়া বিহারীর কাছে গেল না।— বিহারী ভালোবাসা স্বীকার করিয়া তাহাকে যে অধিকার দিয়াছে, সেই অধিকার স্বেচ্ছামতে খাটাইতে তাহার সংকোচ বোধ হইতে লাগিল। অধিকার লাভের যে মর্যাদা আছে সেই মর্যাদা রক্ষা করিতে হইলে অধিকার প্রয়োগকে সংযত করিতে হয়। যতটা পাওয়া যায় ততটা লইয়া টানাটানি করা কাঙালকেই শোভা পায়— ভোগকে খর্ব করিলেই সম্পদের যথার্থ গৌরব। এখন বিহারী তাহাকে নিজে না ডাকিলে, কোনো-একটা উপলক্ষ করিয়া বিনোদিনী তাহার কাছে আর যাইতে পারে না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩৬
  • মহাভারতে অনেক স্থলে নারীদের এই অধিকার স্বীকৃত হয় নাই। স্বামীর সেবা ছাড়া যাগযজ্ঞ বা শ্রাদ্ধ-উপবাস নারীদের নাই।[১০] অথচ কুন্তী বলিতেছেন, আমি যথাবিধি সোমপান করিয়াছি।[১১] তাহাতেই মনে হয়, যজ্ঞে সোমের অধিকার তখনও নারীদের ছিল।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
  • গৌড়দেশে কতকাল পর্য্যন্ত বুধগুপ্তের অধিকার অক্ষুণ্ণ ছিল তাহা বলিতে পারা যায় না। সারনাথে আবিষ্কৃত শিলালিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে, ১৫৭ গৌপ্তাব্দে (৪৭৬ খৃঃ অব্দ) বারাণসীতে অর্থাৎ মধ্যদেশে বুধগুপ্তের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। দামোদরপুরের তাম্রলিপিতে যদিও তারিখ নাই তথাপি ইহা হইতে স্পষ্ট প্রমাণ হইতেছে যে পুণ্ড্রবর্দ্ধনভুক্তি কিছুকাল বুধগুপ্তের রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল।
    • রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
  • আমি নিজে জমিদার, এইজন্যে হঠাৎ মনে হতে পারে আমি বুঝি নিজের আসন বাঁচাতে চাই। যদি চাই তা হলে দোষ দেওয়া যায় না— ওটা মানবস্বভাব। যারা সেই অধিকার কাড়তে চায় তাদের যে বুদ্ধি, যারা সেই অধিকার রাখতে চায় তাদেরও সেই বুদ্ধি; অর্থাৎ কোনোটাই ঠিক ধর্মবুদ্ধি নয়, ওকে বিষয়বুদ্ধি বলা যেতে পারে। আজ যারা কাড়তে চায় যদি তাদের চেষ্টা সফল হয় তবে কাল তারাই বনবিড়াল হয়ে উঠবে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রায়তের কথা, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • দুই শত বৎসরের অধিক কালাবধি, ইংলণ্ডের মধ্যে কেবল কোম্পানি বাহাদুরেরই ভারতবর্ষে বাণিজ্য করিবার অধিকার ছিল। কিন্তু তৎকালে কোম্পানি বাহাদুর ভারতবর্ষের রাজসিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। অতএব, রাজ্যেশ্বরের বাণিজ্য করা উচিত নহে, এই বিবেচনায়, নূতন বন্দোবস্তের সময়, কোম্পানি বাহাদুরের কেরল রাজ্য শাসনের ভার রহিল আর অন্যান্য বণিকদিগের বাণিজ্যে অধিকার হইল।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাঙ্গালার ইতিহাস, অষ্টম অধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪
  • আমি বিশ্বাস করি যে প্রাণীদেরও অধিকার আছে যা আমাদের নিজস্ব থেকে ভিন্ন হলেও, ঠিক ততটাই অনির্বাণযোগ্য। আমি বিশ্বাস করি যে প্রাণীদের আমাদের দ্বারা তাদের উপর ব্যথা, ভয় বা শারীরিক বঞ্চনা না পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কসাইখানার পথে থাকলেও, পশুদের খাদ্য, জল এবং প্রয়োজনে আশ্রয়ের অধিকার রয়েছে। খাদ্য সম্পদ, বিনোদন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনোভাবেই নৃশংসতার শিকার না হওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে।
    • রজার এ. কারাস, নিউজউইকে (২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৮) উই মাস্ট ফাইন্ড অল্টারনেটিভস টু অনিমালস ইন রিসার্চ
  • যে পাখির ডানা সুন্দর ও কণ্ঠস্বর মধুর তাকে খাঁচায় বন্দী করে মানুষ গর্ব অনুভব করে; তার সৌন্দর্য সমস্ত অরণ্যভূমির, এ কথা সম্পত্তিলোলুপরা ভুলে যায়। মেয়েদের হৃদয়মাধুর্য ও সেবানৈপুণ্যকে পুরুষ সুদীর্ঘকাল আপন ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে কড়া পাহারায় বেড়া দিয়ে রেখেছে। মেয়েদের নিজের স্বভাবেই বাঁধনমানা প্রবণতা আছে, সেইজন্যে এটা সর্বত্রই এত সহজ হয়েছে।
  • তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেখা যায়, মন্ত্রপাঠে হোমে আহুতিতে স্ত্রী সমানভাবে যোগ দিতে পারিতেন, সামগানের সময়ে ধুয়াও ধরিতে পারিতেন। পরে এরূপ তর্কও উঠিল, যেহেতু স্ত্রীর নিজস্ব অর্থ নাই তাই তাঁহার যজ্ঞ অসম্ভব। জৈমিনি এইরূপ তর্ক তুলিয়া তাহার উত্তর দিয়াছেন যে, অর্থে স্বামীর ও স্ত্রীর অধিকার সমবেত, ‘অর্থেন চ সমবেতত্বাৎ’; কাজেই সেখানে ভাষ্যকার মাধবও বলেন, নারীদেরও ধর্মকর্মের অধিকার আছে, ‘অস্তি স্ত্রিয়াঃ কর্মাধিকারঃ’। এইরূপ ক্ষেত্রে স্বামীর ও স্ত্রীর একই অধিকার এবং একত্র অধিকার আশ্বলায়ন-শ্রৌতসূত্রে যজ্ঞপত্নীর কর্তব্যের কথা পাওয়া যায়।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০
  • ইংরাজের ছেলে জানে, তাহার বাপ-পিতামহ অনেক যুদ্ধজয় দেশ-অধিকার ও বাণিজ্য-ব্যবসায় করিয়াছে; সেও নিজেকে রণগৌরব ধনগৌরব রাজ্যগৌরবের অধিকারী করিতে চায়। আমরা জানি, আমাদের পিতামহগণ দেশ-অধিকার ও বাণিজ্যবিস্তার করেন নাই। এইটে জানাইবার জন্যই ভারতবর্ষের ইতিহাস।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতবর্ষের ইতিহাস, ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
  • যে ভূখণ্ড মোগলযুগে মালবসুবা ও আগরাসুবা নামে পরিচিত ছিল[১০৮], তাহা বুধগুপ্তের অধিকারভুক্ত ছিল। মধ্যদেশের পশ্চিমভাগ বুধগুপ্তের অধিকারভুক্ত ছিল কি না তাহা প্রমাণাভাবে বলিতে পারা যায় না। পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে, দামোদরপুরে আবিষ্কৃত বুধগুপ্তের রাজ্যকালের তাম্রলিপিগুলিতে তারিখ নাই, সুতরাং বুধগুপ্তের অধিকার মধ্যদেশে, মগধে ও গৌড়দেশে কত দিন পর্য্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল তাহা বলিতে পারা যায় না।
    • রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮
  • আজ অধিকার কাড়বার বেলা তারা যে-সব উচ্চ-অঙ্গের কথা বলে তাতে বোঝা যায়, তাদের নামে রুচি’ আছে; কিন্তু কাল যখন ‘জীবে দয়া’র দিন আসবে তখন দেখব, আমিষের প্রতি জিহ্বার লেলিহান চাঞ্চল্য। কারণ, নামটা হচ্ছে মুখে, আর লোভটা হচ্ছে মনে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রায়তের কথা, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • এ যুগে হুজুগের হিড়িকে শুধু অঙ্গভঙ্গির বাহাদুরী দেখিয়ে সস্তায় নাম কেনবার প্রলোভন যে স্বল্প কয়জন জয় করেছেন, দিনেশ দাস শান্ত সমাহিত সেই স্বধর্মনিষ্ঠ কবিদের মধ্যেও একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর অঙ্গও আছে, ভঙ্গিও। কিন্ত পরম সৌষ্ঠবের কঠিন শাসনে তা পরিমিত।
    • প্রেমেন্দ্র মিত্র, দিনেশ দাসের কবিতা- বইয়ের ভূমিকায় লেখেন, প্রকাশক- পাণ্ডুলিপি, কলিকাতা, প্রকাশসাল- শ্রাবণ ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ
  • যদি কর্তা হতে চাই তবে মুক্ত হতে হবে। এইজন্য গীতা সেই যোগকেই কর্মযোগ বলেছেন যে যোগে আমরা অনাসক্ত হয়ে কর্ম করি। অনাসক্ত হয়ে কর্ম করলেই কর্মের উপর আমার পূর্ণ অধিকার জন্মে; নইলে কর্মের সঙ্গে জড়ীভূত হয়ে আমরা কর্মেরই অঙ্গীভূত হয়ে পড়ি, আমরা কর্মী হই নে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ত্যাগ, শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
  • আমি বিশ্বাস করি মুক্তি হলো ঈশ্বরের উপহার এবং প্রত্যেক মানব হৃদয়ের আশা। মুক্তি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আমাদের গৃহযুদ্ধ অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করেছিল। মুক্তি সৃষ্টিশীলতা জাগিয়ে তোলে, উদ্ভাবনকে পুরস্কৃত করে এবং দারিদ্র্য দূর করে সমৃদ্ধি সৃষ্টি করে।
  • এতদিন রসিক এই গ্রামের বনবাদাড়, রথতলা, রাধানাথের মন্দির, নদী, খেয়াঘাট, বিল, দিঘি, কামারপাড়া, ছুতারপাড়া, হাটবাজার সমস্তই আপনার আনন্দে ও প্রয়োজনে বিচিত্রভাবে অধিকার করিয়া লইয়াছিল। সব জায়গাতেই তাহার একটা একটা আড্ডা ছিল, যেদিন যেখানে খুশি কখনো বা একলা কখনো বা দলবলে কিছু-না-কিছু লইয়া থাকিত। এই গ্রাম এবং থানাগড়ের বাবুদের বাড়ি ছাড়া জগতের আর-যে কোনো অংশ তাহার জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় তাহা সে কোনোদিন মনেও করে নাই। আজ এই গ্রামে তাহার মন আর কুলাইল না। দূর দূর বহুদূরের জন্য তাহার চিত্ত ছটফট করিতে লাগিল। তাহার অবসর যথেষ্ট ছিল—বংশী তাহাকে খুব বেশিক্ষণ কাজ করাইত না। কিন্তু, ঐ একটুক্ষণ কাজ করিয়াই তাহার সমস্ত অবসর পর্যন্ত যেন বিস্বাদ হইয়া গেল; এরূপ খণ্ডিত অবসরকে কোনো ব্যবহারে লাগাইতে তাহার ভালো লাগিল না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পণরক্ষা, গল্পগুচ্ছ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১৭
  • রাজনৈতিক উৎপাত তো ছিলই, তা ছাড়া আবার ধর্মসম্বন্ধীয় গোলযোগেরও সূত্রপাত হয়েছিল। লোকে রোমান ধর্মসম্প্রদায়কে সন্দেহ করতে শুরু করল; আগের মতো তারা আর চার্চের আদেশ মানতে রাজি হল না। ধর্মের ব্যাপারে সন্দেহ বিপজ্জনক। সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক পোপের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছিলেন, সমাজচ্যুত হবার ভয়ে তিনি ভীত হন নি। এমনকি, সম্রাট লিখিতভাবে পোপকে কতকগুলো প্রশ্নও করেছিলেন, কিন্তু গোপ তার সদুত্তর দিতে পারেন নি। সেই সময়ে ইউরোপে অনেকের মনেই নানা সন্দেহ জেগেছিল। অনেকে আবার পোপ কিংবা চার্চের অধিকার নিয়ে মাথা ঘামায় নি বটে, কিন্তু ধর্মসম্প্রদায়ের কর্তৃপক্ষের বিলাসিতা আর ব্যভিচারে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
    • জওহরলাল নেহেরু, রোমান ধর্ম সম্প্রদায় কর্তৃক বলপ্রয়োগ, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৭
  • মহাভারতের যুগে নারীদের অধিকারের বিরুদ্ধে মুখে কেহ-কেহ কিছু বলিলেও সামাজিক জীবনে নারীদের অনেক অধিকারই দেখা যায়। রাজকন্যাদের তখন প্রায়ই স্বয়ংবর প্রথায় বিবাহ হইত। সাবিত্রী দময়ন্তী কুন্তী দ্রৌপদী প্রভৃতি অনেকের বিবাহে কন্যারা নিজেরাই বর বরণ করিয়াছেন। এই স্বয়ংবর প্রথায় নারীর অধিকার কিরূপ ছিল তাহা জানিতে হইলে বনপর্বের ২৯২তম অধ্যায়ে সাবিত্রীর প্রতি তাঁহার পিতার প্রদত্ত উপদেশগুলি দেখা উচিত (৩২-৩৬ শ্লোক)।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪
  • বস্তুত ত্যাগ জিনিসটা শূন্যতা নয়, তা অধিকারের পূর্ণতা। নাবালক যখন সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকারী না হয় তখন সে দান বিক্রয় করতে পারে না— তখন তার কেবল ভোগের ক্ষুদ্র অধিকার থাকে, ত্যাগের মহৎ অধিকার থাকে না। আমরা যে অবস্থায় কেবল জমাতে পারি কিন্তু প্রাণ ধরে দিতে পারি নে, সে অবস্থায় আমাদের সেই সঞ্চিত সামগ্রীর সম্বন্ধে আমাদের স্বাধীনতা থাকে না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ত্যাগ, শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
  • ভারতের প্রথম শক-সাম্রাজ্যের শেষ দশায় ইউচিগণ বাহ্লীক পরিত্যাগ করিয়া ক্রমশঃ উত্তরাপথের দিকে অগ্রসর হইতে আরম্ভ করেন। অবশেষে ইউচি জাতির পাঁচটি প্রধান বিভাগ, কুষাণবংশ কর্ত্তৃক একত্র হয়। এই সময় হইতে ইউচিগণ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠেন এবং একে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শকরাজ্যগুলি অধিকার করেন। কুষাণবংশীয় রাজা কুজুলকদফিসের সময়ে, কপিশা গান্ধার ও পঞ্চনদে শকক্ষত্রপগণের অধিকার শেষ হইয়াছিল বলিয়া অনুমান হয়। কুজুলকদফিস খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর প্রারম্ভে জীবিত ছিলেন। তাঁহার পরে বিমকদফিস বারাণসী পর্য্যন্ত অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন।
    • রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
  • অন্য কোনো সময় হইলে এই প্রত্যাখ্যানে মহেন্দ্রের আবেগ আরো বাড়িয়া উঠিত। কিন্তু আজ তাহার অত্যন্ত ঘৃণাবোধ হইল। সে ভাবিল, ‘এই সামান্য এক স্ত্রীলোকের কাছে আমি নিজেকে এতই হীন করিয়াছি যে, আমাকে যখন-তখন এমনতরো অবজ্ঞাভরে দূর করিয়া দিবার অধিকার ইহার জন্মিয়াছে। অধিকার ইহার স্বাভাবিক অধিকার নহে। আমিই তাহা ইহাকে দিয়া ইহার গর্ব এমন অন্যায়রূপে বাড়াইয়া দিয়াছি।’
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চোখের বালি, পরিচ্ছেদ—৫২, চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২১-২২২
  • আজ কেন এই হিন্দু মুসলমানের বিবাদ, ব্রাহ্মণ অব্রাহ্মণের রেষারেষি দ্বেষাদ্বেষি—তাই বলছি সময় থাকিতে এখনও ঘর সামলাও। ঘর শক্রতে রাবণ নষ্ট। আমরা স্বার্থত্যাগ করবো না, নিজেদের অন্যায় আবদার অধিকার ছাড়বোনা, কি করে বড় হ’ব, জাতি গড়ে তুলবো? জাপানে যা একদিন সম্ভব হয়েছে, ভারতে কি তা হবে না? অস্পৃশ্যতা পাপ হিন্দু ভারতবর্ষ ব্যতীত কোথাও পাবেন না। 
    • প্রফুল্লচন্দ্র রায় ঘর সামলাও, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪৫
  • যে দিক্ ধরিয়া এবং যে গতিতে উল্কাপিণ্ডগুলি সৌরজগতে প্রবেশ করে, তাহাদের প্রাত্যকের নির্ব্বাণলাভের কাল সেই দিক্ ও গতির উপরেই নির্ভর করে। সুতরাং দেখা যাইতেছে, যেটি খুব অনুকূল গতি ও দিক্ লইয়া বৃহস্পতি ও সূর্য্যের অধিকারে প্রবেশ করিবে, তাহার জীবনও দীর্ঘ হইবে। সহস্র সহস্র উল্কাপিণ্ড বা ক্ষুদ্র গ্রহের মধ্যে অন্ততঃ দু’চারিটির এইপ্রকার অনুকূল পথে অনুকূল গতি লইয়া প্রবেশ করা একটুও আশ্চর্য্য নয়। কাজেই সূর্য্য বা বৃহস্পতির ক্রোড়ে আশ্রয় গ্রহণ না করিয়া আমাদের সুপরিচিত গ্রহদের ন্যায় ইহাদের নিরাপদে পরিভ্রমণ করাই স্বাভাবিক। জর্জ্জ ডারুইন্‌ বলিতে চাহিতেছেন, সৌরজগতে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল প্রভৃতি যে-সকল গ্রহ নির্দ্দিষ্ট কক্ষায় পরিভ্রমণ করিতেছে, তাহারা সকলেই অনুকূল গতি ও দিক্ লইয়া সৌর অধিকারে প্রবেশ করিয়াছিল, এই কারণেই তাহাদের কক্ষা স্থির রহিয়াছে; যাহারা প্রতিকূল অবস্থায় আসিয়াছিল, তাহারা সূর্য্য বা অপর কোন প্রতাপশালী গ্রহের টানে ঐ সকল জ্যোতিষ্কে পড়িয়া নিজেদের অস্তিত্ব লোপ করিয়াছে; ইহারা এখন সূর্য্য বা অপর কোন বৃহৎ গ্রহের অঙ্গীভূত।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহদিগের কক্ষা, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫৮
  • যেখানে ভালোবাসার একমাত্র অধিকার, সর্বনাশ হইয়া গেলেও সেখানে বলকে প্রবেশ করিতে দিবে না, এই তাহার মনের ভাব। এ সম্বন্ধে তাহাকে যদি ভর্ৎসনা করা যাইত তবে সম্ভবত সে এইর‍ূপ সূক্ষ্ম তর্ক করিত যে, বাজারে যদি অন্যায় কারণেও আমার ক্রেডিট না থাকে তবে তাই বলিয়া বাজার লুটিয়া লইবার অধিকার আমার নাই, স্ত্রী যদি স্বেচ্ছাপূর্বক বিশ্বাস করিয়া আমাকে গহনা না দেয় তবে তাহা আমি কাড়িয়া লইতে পারি না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মণিহারা, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩৯৯
  • আশু। আমাকে আপনার পুত্র ক’রেই রাখবেন, এমন সুবাসঙ্গীত শােন্‌বার অধিকার থেকে বঞ্চিত ক’র্‌বেন না। যা পাওয়া গেল, এই আমি পরম লাভ মনে ক’র্‌চি। মন্ত্রতন্ত্রের কথা ভুলেই গেচি। এখন বুঝতে পার্‌চি, মন্ত্রের কোনো দরকারই নেই!
    শ্যামা। অমন কথা বােলাে না বাবা! মন্ত্রের দরকার আছে বৈ কি! নইলে শাস্ত্র—
    আশু। সে তো ঠিক কথা! মন্ত্র আমি অগ্রাহ্য করি নে। আমি ব’ল্‌ছিলেম মন্ত্র প’ড়্‌লেই যে মন বশ হয়, তা নয়, গানের মােহিনী শক্তির কাছে কিছুই লাগে না। (স্বগত) মেয়েটি আবার লজ্জায় লাল হ’য়ে উঠ্‌লো! ভারি লাজুক!
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বশীকরণ, ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৬
  • তলওয়ারকর বিস্মিত হইয়া বলিল, গৃহস্থের কি দেশের সেবার অধিকার নেই? জন্মভূমি কি শুধু আপনাদের, আমাদের নয়?
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৪
  • আমাদের স্মৃতি নিপুণ সাহিত্যরচয়িতার মতো তাঁহার অধিকাংশই বাদ দিয়া ফেলে। তাঁহার ছোটোবড়ো সমস্ত অংশই যদি ঠিক সমান অপক্ষপাতের সহিত আমাদের স্মৃতি অধিকার করিয়া থাকে তবে এই স্তূপের মধ্যে আসল চেহারাটি মারা পড়ে ও সবটা রক্ষা করিতে গেলে আমাদের পরমাত্মীয়কে আমরা যথার্থভাবে দেখিতে পাই না। পরিচয়ের অর্থই এই যে, যাহা বর্জন করিবার তাহা বর্জন করিয়া যাহা গ্রহণ করিবার তাহা গ্রহণ করা।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্যের বিচারক, সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • মনুষ্যত্বের পরম অধিকার লাভ করবার প্রার্থনা অনেকদিন জানিয়েছি— দুর্যোগের মুখে, বিঘ্নের মুখে, মোহান্ধতার মুখে এই আমার প্রার্থনা— এ প্রার্থনা ব্যর্থ হতেই পারে না— বিপুল ইন্ধনের তলায় যখন আগুন ধরে তখন সে কি চোখে পড়ে? সে নিতান্তই ছোটো, কিন্তু তার শক্তি কি কম? আজ সকালে তাঁর দরবারে আর—একবার দাঁড়িয়েছি। সমস্ত মানুষের হয়ে মানুষের বড়ো ভাই এই প্রার্থনা করে গিয়েছেন: Thy Kingdom come! আমাদের ঋষিরাও এই কথাই আর-এক ভাষায় বলেছেন: আবিরাবীর্ম এধি! সমস্ত মানুষের সেই অন্তরতম প্রার্থনাকে নিজের জীবনের মধ্যে সত্য করে তোলবার চেষ্টায় যদি বিরত হই তা হলে আমাদের প্রতিদিনের অন্ন চুরি করে খাওয়া হবে— তা হলে আমাদের মানবজন্মটা একটা অপরিশোধিত ঋণের স্বরূপ হয়ে আমাদের চিরদায়িক করে রেখে দেবে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, খৃষ্ট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২-৬৩
  • ভীমকন্যা দময়ন্তী পুনরায় স্বয়ংবর করিবেন শুনিয়া রাজা ও রাজপুত্রগণ সেখানে যাইতে লাগিলেন (বন ৭০. ২৪)। কাজেই ইহা বৈধ ও সর্বসম্মত ছিল। বিবাহে নারীদের এইসব অধিকারের কথা তখনকার অন্যান্য বহু পুরাণেই পাওয়া যাইবে। বিবাহের অধিকার বাদ দিলেও তখনকার দিনে নারীরা ধর্ষিতা হইলে এখনকার নারীদের মত সমাজে পরিত্যক্তা হইতেন না। ধর্ষণকারী পুরুষই অপরাধী বলিয়া গণ্য হইত।
    • ক্ষিতিমোহন সেন, আদর্শ ও অধিকার, প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯
  • ভালবাসার উন্নতি অবনতির স্থান নাই। যখন সে থাকে তখন সে সমস্ত স্থান জুড়িয়া থাকে, নয় সে থাকে না। যখন সে দেখে তাহার অধিকার হ্রাস হইয়া আসিতেছে, তখন সে বন্ধুত্বের ক্ষুদ্র স্থানটুকু অধিকার করিয়া থাকিতে চায় না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বন্ধুত্ব ও ভালবাসা, বিবিধ প্রসঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্র, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]