অপরাধ
অবয়ব
অপরাধ বা কসুর হলো কোন ব্যক্তি কর্তৃক আইনবিরুদ্ধ কাজ। দেশ বা অঞ্চলের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ গুরুতর কিংবা লঘু উভয় ধরনেরই হতে পারে। অপরাধের ফলে ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড, হাজতবাস বা কারাগারে প্রেরণসহ উভয় দণ্ড কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ডও প্রদান করা হয়ে থাকে। যে বা যিনি অপরাধ করেন বা অপরাধের সাথে যুক্ত থাকেন, তিনি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী নানা সংস্থা যেমন পুলিশ, গোয়েন্দা প্রভৃতি রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আদালতের মহামান্য বিচারক অপরাধীকে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে থাকেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- ক্ষমা করো তবে ক্ষমা করো মোর আয়োজনহীন পরমাদ
ক্ষমা করো যত অপরাধ।
এই ক্ষণিকের পাতার কুটিরে
প্রদীপ-আলোকে এসেও ধীরে ধীরে,
এই বেতসের বাঁশিতে পড়ুক তব নয়নের পরসাদ—
ক্ষমা করো যত অপরাধ।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আবির্ভাব, সঞ্চয়িতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৩৩
- একটা সত্যকার অপরাধ অনেক মিথ্যা অপরাধের বোঝা বয়ে আনে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গৃহদাহ, বিংশ পরিচ্ছেদ, গৃহদাহ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১২
- বিশ্বতত্ত্ব সম্বন্ধে যেমন, তেমনি চরিত্রনীতি সম্বন্ধেও। নতুন শাসনে যে আইন এল তার মধ্যে একটি বাণী আছে সে হচ্ছে এই যে, ব্যক্তিভেদে অপরাধের ভেদ ঘটে না। ব্রাহ্মণই শূদ্রকে বধ করুক বা শূদ্রই ব্রাহ্মণকে বধ করুক, হত্যা-অপরাধের পঙক্তি একই, তার শাসনও সমান— কোনো মুনিঋষির অনুশাসন ন্যায়-অন্যায়ের কোনো বিশেষ দৃষ্টি প্রবর্তন করতে পারে না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালান্তর, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫
- পক্ষপাতিত্ব বিক্রয় না করে শুধু শ্রমটুকু বিক্রয় করে একজন অল্প বেতনের কেরানীর মতো বেঁচে থাকতে চেয়ে সাহিত্যকে পেশা করা কেন অপরাধ হবে সাহিত্যিকের?
অপরাধ হবে এইজন্য যে, লেখক মজুর বা অল্প বেতনের কেরানী নন, শ্রমটাই তাঁর একমাত্র পণ্য নয়। তাঁর পক্ষপাতিত্বের মূল্য এত বেশি যে, তাঁর শ্রমের মূল্য বিচার তুচ্ছ হয়ে যায়।- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখকের সমস্যা, লেখকের কথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬
- অপরাধ করিলে ছাত্রগণ আমাদের প্রাচীন প্রথা অনুসারে প্রায়শ্চিত্ত পালন করিবে। শাস্তি পরের নিকট হইতে অপরাধের প্রতিফল, প্রায়শ্চিত্ত নিজের দ্বারা অপরাধের সংশোধন। দণ্ডস্বীকার করা যে নিজেরই কর্তব্য এবং না করিলে যে গ্লানিমোচন হয় না, এই শিক্ষা বাল্যকাল হইতেই হওয়া চাই―পরের নিকটে নিজেকে দণ্ডনীয় করিবার হীনতা মনুষ্যোচিত নহে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিক্ষাসমস্যা, শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৮
- আমি বলি, রমণীমণ্ডলী এ সংসারের নারিকেল। নারিকেলও কাঁদি কাঁদি ফলে বটে, কিন্তু (ব্যবসায়ী নহিলে) কেহ কখন কাঁদি কাঁদি পাড়ে না। কেহ কখন দ্বাদশীর পারণার অনুরোধে, অথবা বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণসেবার জন্য একটি আধটি পাড়ে। কাঁদি কাঁদি পাড়িয়া খাওয়ার অপরাধে যদি কেহ অপরাধী থাকে, তবে সে কুলীন ব্রাহ্মণেরা। কমলাকান্ত কখন সে অপরাধে অপরাধী নহে।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মনুষ্য ফল, কমলাকান্তের দপ্তর, কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬-১৭
- বিধাতার শাস্তিতে আমাদের পিঠের উপর যখন বেত পড়িল তখন দেশাভিমান ধড়্ফড় করিয়া বলিয়া উঠিল, ‘ওড়াও ঐ বেতবনটাকে।’ ভুলিয়া গেছে, বেতবনটা গেলেও বাঁশবনটা আছে। অপরাধ বেতেও নাই, বাঁশেও নাই, আছে আপনার মধ্যেই। অপরাধটা এই যে, সত্যের জায়গায় আমরা কর্তাকে মানি, চোখের চেয়ে চোখের ঠুলিকে শ্রদ্ধা করাই আমাদের চিরাভ্যাস। যতদিন এমনি চলিবে ততদিন কোনো-না-কোনো ঝোপেঝাড়ে বেতবন আমাদের জন্য অমর হইয়া থাকিবে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৪-৬৫
- আমেরিকাতে গত ক’বছরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ঘটেছে, সে হচ্ছে অপরাধ-অনুষ্ঠানের বৃদ্ধি, বিশেষ করে ‘দলবদ্ধ’ অপরাধ—এক-একদল গুণ্ডা একত্র মিলে কাজ চালায়, তাদের পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে এলে অনেক সময়েই গুলি ছুঁড়ে তাকে মেরে ফেলে। অনেকে বলেন, মাদক পানীয় বিক্রি করা নিষিদ্ধ করে আইন রচিত হয়েছিল, তার পর থেকেই নাকি অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্বযুদ্ধের অল্পদিন পরেই এই ‘মদ্যপান নিষেধ’ বিধিটিকে আইনে পরিণত করা হয়। এই আইনটির মূলে খুব উৎসাহ ছিল বড়ো বড়ো কারখানার মালিকদের; তাঁরা চেয়েছিলেন যেন তাঁদের শ্রমিকরা মদ খেতে না পায়, কারণ তা হলেই তারা কাজ ভালো করতে পারবে।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৯৫
- কৃষ্ণের উপর শিশুপালের অনেকদিন হইতেই রাগ ছিল, আর তিনি নানারকমে তাঁহাকে অপমান করিতেও ত্রুটি করেন নাই। কৃষ্ণ এতদিন তাহা সহিয়া থাকিবার কারণ এই যে, তিনি শিশুপালের মায়ের নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, ‘আপনার পুত্রের একশত অপরাধ ক্ষমা করিব।’
শিশুপালের একশত অপরাধ ইহার পূর্বেই হইয়া গিয়াছে, সুতরাং আর তাঁহাকে ক্ষমা করিবার কোনো কারণ নাই।
শিশুপাল ভয়ানক অপমানের কথা বলিয়া কৃষ্ণকে গালি দিতে দিতে শেষে বলিলেন, “আইস! আজ তোমাকে আর পাণ্ডবদিগকে যমের বাড়ি পাঠাইতেছি।”- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, ছেলেদের মহাভারত, সভাপর্ব, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৭
- যেখানে দীনতা সেখানেই অপরাধ, শক্তিকে কোনাে অপরাধ স্পর্শ করে না। চোরই চুরি করে, বিজয়ী রাজা লুঠ করে নেয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিমলার আত্মকথা, ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪২
- জঙ্গ বাহাদুর ইংলণ্ড হইতে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া অশেষ প্রকারে নেপালের উন্নতি সাধনে মনোযোগী হইলেন। তিনি শাসন বিভাগে অনেক প্রকার সংস্কার আনয়ন করেন। পূর্ব্বে চৌর্য্যঅপরাধে অপরাধী ব্যক্তিকে নানা প্রকার নিষ্ঠুর উপায়ে অপরাধ স্বীকার করান হইত। হস্ত পদ নাসা প্রভৃতি কর্ত্তন করিয়া অপরাধী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হইত। জঙ্গবাহাদুর এ সকল শাস্তির ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রহিত করিয়া দেন। নেপালে সহমরণ প্রথাও এই সময় নিষিদ্ধ হয়।
- হেমলতা দেবী, নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৭
- বিদায় লইবার সময় দামিনী শচীশকে প্রণাম করিয়া বলিল, “শ্রীচরণে অনেক অপরাধ করিয়াছি, মাপ করিয়ো।”
শচীশ মাটির দিকে চোখ নামাইয়া বলিল, “আমিও অনেক অপরাধ করিয়াছি, সমস্ত মাজিয়া ফেলিয়া ক্ষমা লইব।”
দামিনীর মধ্যে একটা প্রলয়ের আগুন জ্বলিতেছে, কলিকাতার পথে আসিতে আসিতে তাহা বেশ বুঝিতে পারিলাম। তারই তাপ লাগিয়া আমারও মনটা যেদিন বড়ো বেশি তাতিয়া উঠিয়াছিল সেদিন আমি শচীশকে উদ্দেশ করিয়া কিছু কড়া কথা বলিয়াছিলাম।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীবিলাস, চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯০ বঙ্গাব্দ), কলকাতা, পৃষ্ঠা ১০৭-১০৮
- সকলেই একদৃষ্টে হোসেনের দিকে চাহিয়া রহিল। হোসেন পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “ভাই সকল, এ দিন— চিরদিন তোমাদের সুদিন থাকিবে না; কোন দিন ইহার সন্ধ্যা হইবেই হইবে। ঈশ্বরের অনন্ত ক্ষমতার প্রতি একবার দৃষ্টিপাত কর; তাঁহাকে একটু ভয় কর। ভ্রাতৃগণ! পিপাসায় জলদান মহাপুণ্য, তাহাতে আবার অল্পবয়স্ক শিশু! ভ্রাতৃগণ! ইহার জীবন তোমাদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিতেছে। আমি সামান্য সৈনিক পুরুষ নহি; আমার পিতা মহামান্য হরজত আলী, মাতামহ নূরনবী হজরত মোহাম্মদ, মাতা ফাতেমা জোহরা খাতুনে জেন্নাত। এই সকল পুণ্যাত্মাদিগের নাম স্মরণ করিয়াই এই শিশু সন্তানটির প্রতি অনুগ্রহ কর। মনে কর, যদি আমি তোমাদের নিকট কোন অপরাধে অপরাধী হইয়াও থাকি, কিন্তু এই দুগ্ধপোষ্য বালক ত তোমাদের কোন অনিষ্ট করে নাই, তোমাদের নিকট কোন অপরাধে অপরাধীও হয় নাই। ইহার প্রতি দয়া করিয়াই তোমরা ইহার জীবন রক্ষা কর।”
- মীর মশাররফ হোসেন, মহরম পর্ব্ব—চতুর্বিংশ প্রবাহ, বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্রফ হোসেন, প্রকাশসাল- ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৪-১৯৫
- আমার কুঠুরীর গায়ে লেখা ছিল—“আয়স্তে লেটেতু” বা সলিটারী সেল্। আমার পাশেই এমন ধারা আরও পাঁচটী কুঠুরী দেখিলাম। আমার প্রতিবেশী ছিল একজন কাফ্রি, সে খুন করিবার চেষ্টা করার অপরাধে অপরাধী। তাহার পিছনে আরও তিনজন কাফ্রি ছিল, তাহারা পাশবিক ব্যভিচার অপরাধে কারারুদ্ধ। এমনই সঙ্গীদের মধ্যে, এই ..বেস্থার ভিতরে, প্রিটোরিয়া জেলে আমার অভিজ্ঞতার আরম্ভ।
- মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, কারাকাহিনী- মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, অনুবাদক- অনাথনাথ বসু, প্রকাশক- বিচিত্রা প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল= ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭
- রাজমহিষী কুশলপ্রশ্নাদি করে শিশুটিকে কৃষ্ণের কোলে দিলেন, তৎক্ষণাৎ তার অতিরিক্ত দুই বাহু খ’সে গেল, তৃতীয় চক্ষু ললাটে নিমজ্জিত হ’ল। মহিষী বললেন, কৃষ্ণ, আমি ভয়ার্ত হয়েছি, তুমি বর দাও যে শিশুপালের অপরাধ ক্ষমা করবে। কৃষ্ণ উত্তর দিলেন, দেবী, ভয় নেই, আমি এর একশত অপরাধ ক্ষমা করব। ভীম, এই মন্দমতি শিশুপাল গোবিন্দের বরে দর্পিত হয়েই তোমাকে যুদ্ধে আহ্বান করছে। এই বুদ্ধি এর নিজের নয়, জগৎস্বামী কৃষ্ণের প্রেরণাতেই এমন করছে।
- কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, শিশুপালবধপর্বাধ্যায়, অনুবাদক- রাজশেখর বসু, মহাভারত - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২০
- হেমাঙ্গিনী মাথা নিচু করিয়া ধীরে ধীরে কহিল, “দিদি, তোমার আশীর্বাদ লইতে আসিয়াছি।”
প্রথম একমুহূর্ত কাঠের মতো হইয়া পরক্ষণেই উঠিয়া বসিলাম, কহিলাম, “কেন আশীর্বাদ করিব না, বোন! তোমার কী অপরাধ।”
হেমাঙ্গিনী তাহার সুমিষ্ট উচ্চকণ্ঠে হাসিয়া উঠিল; কহিল, “অপরাধ! তুমি বিবাহ করিলে অপরাধ হয় না আর আমি করিলেই অপরাধ?”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দৃষ্টিদান, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৪২১-৪২২
- মাতঙ্গিনী বলিল, না, না, কিছু ব’লো না তুমি —বলিতে বলিতে মাতঙ্গিনী যেন নিজেই নিজের কথার প্রতিবাদ করিবার চেষ্টা করিল, মস্তক অবনত করিয়া সে নিজের উদ্গত অশ্রুর বন্যা লুকাইতে লুকাইতে বলিয়া উঠিল, মাধব, তুমি আমাকে গালাগালি দাও, ধিক্কার দাও, আমার শিক্ষা হোক। আমি পাপী, পাপ করেছি, আমার ঈশ্বরের কাছে আমি অপরাধী এবং এই পৃথিবীতে যে আমার ঈশ্বর—আমাকে বলতে দাও মাধব, সেই তোমার কাছেও অপরাধ করেছি। আমি নিজেকে নিজে যতটা ঘৃণা করছি, তার চাইতে বেশি ঘৃণা তুমি আমাকে করতে পারবে না।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,নবম পরিচ্ছেদ, রাজমোহনের স্ত্রী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অনুবাদক- সজনীকান্ত দাস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৮-৫৮
- বিনয়। যাকে জাতিভেদের ফল বলছেন সেটা অবস্থার ফল, শুধু জাতিভেদের নয়। নড়া দাঁত দিয়ে চিবোতে গেলে ব্যথা লাগে, সেটা দাঁতের অপরাধ নয়, নড়া দাঁতেরই অপরাধ। নানা কারণে আমাদের মধ্যে বিকার ও দুর্বলতা ঘটেছে বলেই ভারতবর্ষের আইডিয়াকে আমরা সফল না করে বিকৃত করছি— সে বিকার আইডিয়ার মূলগত নয়। আমাদের ভিতর প্রাণ ও স্বাস্থ্যের প্রাচুর্য ঘটলেই সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে। গোরা সেইজন্যে বার বার বলে যে, মাথা ধরে বলে মাথাটাকে উড়িয়ে দিলে চলবে না— সুস্থ হও, সবল হও।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা, পরিচ্ছেদ ১৮, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪১
- কাশীনাথের অপরাধ নেই। তিনি রোগা বেঁটে মানুষ, পিছনের ভিড়ের ঠেলা সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় গয়েশ্বরী উলটো দিক থেকে আসছিলেন। তিনি স্থূলকায়া, সুতরাং তাঁর দেহেই পতনোম্মুখ কাশীনাথের ধাক্কা প্রতিহত হল। গয়েশ্বরী পড়ে গেলেন না, অত্যন্ত রেগে গিয়ে বললেন, আ মরণ ছোঁড়া, নেশা করেছিস নাকি? ভদ্রলোকের মেয়ের গায়ে ঢলে পড়িস এতদূর আম্পর্ধা!
কাশীনাথ বললেন, ক্ষমা করবেন ঠাকরুন, ভিড়ের চাপে এমন হল, আমি ইচ্ছে করে অপরাধ করি নি।
গয়েশ্বরী বললেন, এক শ বার অপরাধ করেছিস, হতভাগা বেহায়া বজ্জাত!- রাজশেখর বসু, কাশীনাথের জন্মান্তর, আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮২
- ইহকাল-পরকাল, স্বর্গ-নরক, ঈশ্বর-জগৎ ইত্যাদি যাবতীয় বৈপরীত্যের নিঃসংশয় স্বীকৃতি আস্তিক্যবাদের মূলাধার। এতে সমাজেও স্থিরতা অটুট থাকে অর্থাৎ অক্ষুন্ন থাকে আধিপত্যবাদী বর্গের প্রতাপ। নাস্তিকদের সবচেয়ে বড়ো অপরাধ এই নয় যে ওরা ঈশ্বর-পরকাল মানে না, ওরা বেদের প্রামাণিকতা স্বীকার করে না। তলিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারি, ওদের সবচেয়ে বড়ো অপরাধ, ওরা যুক্তিবাদী। সব কিছুতেই ওরা তর্ক করে যায় এবং প্রশ্ন না করে, পরখ না করে কিছুই মেনে নেয় না।
- তপোধীর ভট্টাচার্য, নাস্তিকতার সমাজতত্ত্ব, সময় অসময় নিঃসময়- তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- একুশশতক, কলকাতা, প্রকাশসাল-২০১০ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৩
- কিছুকাল বিশ্রামের পর তারা আবার কহিল, আমার এই গৃহে আজ তোমার নিমন্ত্রণ। একদিন তুমি এখানে আহার কর নাই। আজ খাইতে হইবে। আমি ফল আহরণ করিব।
গোকুলজী তারার হাত ধরিয়া কহিল, সে সময়ের অপরাধ কি এখনো ভুলিতে পার নাই?
তারা। তুমি আমার সর্ব্বস্ব। পূর্ব্ব কথা তুলিলে তুমি আপনাকে অপরাধী মনে করিও না। তোমাকে পাইয়াই আমার সুখ। আমার নিকটে তুমি অপরাধী?- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, পর্ব্বতবাসিনী, একত্রিংশ পরিচ্ছেদ, পর্ব্বতবাসিনী - নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত, প্রকাশক- শ্রী রাখাল চন্দ্র ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০১ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৫
- বিক্রমাদিত্য তাঁর দণ্ডনায়ককে সম্বোধন করে বললেন, ওহে বীরভদ্র, এই ব্রাহ্মণের জন্য একটি সুপাত্রীর সন্ধান কর। আর, শিলীন্ধ্রীনাম্নী যে রমণী আমার মহিষীদের জন্য পুষ্পালংকার রচনা করে, তাকে রাজনিন্দার অপরাধে দণ্ড দাও — মস্তকমুণ্ডন, দধিলেপন, এবং গর্দভারোহণে বহিষ্কার। ব্যাকুল হয়ে ডম্বরু বললেন, মহারাজ, বুদ্ধিহীনা অবলা সরলা বালার অপরাধ মার্জনা করুন।
- রাজশেখর বসু, ডম্বরু পণ্ডিত, আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১
- তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী, বলে না তো কিছু চাঁদ।৷- বুলবুল কাব্যগ্রন্থ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, ষষ্ঠ খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭৩
- নিরু বাপের মুখ দেখিয়া সব বুঝিতে পারিল। বৃদ্ধের পক্ব কেশে, শুষ্ক মুখে এবং সদাসংকুচিত ভাবে দৈন্য এবং দুশ্চিন্তা প্রকাশ হইয়া পড়িল। মেয়ের কাছে যখন বাপ অপরাধী তখন সে অপরাধের অনুতাপ কি আর গোপন রাখা যায়। রামসুন্দর যখন বেহাইবাড়ির অনুমতিক্রমে ক্ষণকালের জন্য কন্যার সাক্ষাৎলাভ করিতেন তখন বাপের বুক যে কেমন করিয়া ফাটে তাহা তাঁহার হাসি দেখিলেই টের পাওয়া যাইত।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেনাপাওনা, গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড)- প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২
- স্ত্রী ও পুত্রকন্যার সঙ্গে তাহার কথা ও ব্যবহার সহজ ও স্বাভাবিক হয়, অথচ তার কাছে কারো যেন মূল্য নাই, কিছুই সে যেন গ্রাহ্য করে না। শ্যামার টাকা লইয়া পালানোর পর হইতে তাহার এই পাগলামি-না-করার পাগলামি আরম্ভ হইয়াছে। ধার করিয়া রাখালকে টাকা দেওয়ার অপরাধ, শ্যামার জমানাে টাকাগুলি নষ্ট করার অপরাধ, তাহার কাছে অবশ্যই পুরনাে হইয়া গিয়াছে, মনে আছে কিনা তাও সন্দেহ।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জননী, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিঃ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- অপরাধ যদি কিছু করিয়াই থাকি ত সে তাঁর কাছে। সে দন্ড তিনিই দিবেন; কিন্তু নির্বিচারে যে-কেহ শাস্তি দিতে আসিবে, তাহাই মাথা পাতিয়া লইব কিসের জন্যে?
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গৃহদাহ, দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ, গৃহদাহ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২০
- ললিতা আশ্চর্য হইয়া আনন্দময়ীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। ব্রাহ্মপরিবারের সংস্কার ললিতার মনে খুব দৃঢ় ছিল; যে মেয়েরা আধুনিক প্রথায় শিক্ষা পায় নাই এবং যাহাদিগকে সে ‘হিঁদুবাড়ির মেয়ে’ বলিয়া জানিত তাহাদের প্রতি ললিতার শ্রদ্ধা ছিল না। শিশুকালে বরদাসুন্দরী তাহাদের যে অপরাধের প্রতি লক্ষ করিয়া বলিতেন ‘হিঁদুবাড়ির মেয়েরাও এমন কাজে করে না’ সে অপরাধের জন্য ললিতা বরাবর একটু বিশেষ করিয়াই মাথা হেঁট করিয়াছে। আজ আনন্দময়ীর মুখের কয়টি কথা শুনিয়া তাহার অন্তঃকরণ বার বার করিয়া বিস্ময় অনুভব করিতেছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা, পরিচ্ছেদ ৩৬, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮১
- মেরী কার্পেণ্টার্ দরিদ্রবিদ্যালয়ের বালক-বালিকাদিগের মধ্যে কার্য্য করিতে করিতে, দেখিতে পাইলেন যে—অনেক বালক এই বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইবার সময়েই বিখ্যাত চোর হইয়া আসিয়াছে। তখন অল্পবয়স্ক বালকবালিকা চৌর্য্য প্রভৃতি অপরাধে অপরাধী হইলে, তাহাদিগকে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদিগের সহিত একই কারাগারে বাস করিতে হইত। শাস্তি দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য—চরিত্র সংশােধন। কিন্তু ক্রমাগত দণ্ডিত হইয়া, বার বার জেলখানায় বাস করিয়া ইহাদের চরিত্র আরও কঠিন এবং দূষিত হইত। অধিকন্তু যেরূপ ভাবে পূর্ণবয়স্ক ও অল্পবয়স্ক বালকবালিকাদিগকে শাস্তি পাইয়া একই কারাগৃহে বাস করিতে হইত, তাহাতে বালকবালিকাদিগের চরিত্র সংশােধিত না হইয়া বরং উত্তরােত্তর অধধাগতি প্রাপ্ত হইত।
- কুমুদিনী বসু, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩-২৪
- অপরাধ অত্যন্ত প্রত্যক্ষ না হলে সমাজ নিজের গরজে তাকে পাশ কাটিয়ে যায়, কিন্তু অবশেষে অভীক একবার এত বাড়াবাড়ি করে বসল যে তার অপরাধ অস্বীকার করা অসম্ভব হল। ভদ্রকালী ওদের গৃহদেবতা, তার খ্যাতি ছিল জাগ্রত বলে। অভীকের সতীর্থ বেচারা ভজু ভারি ভয় করত ঐ দেবতার অপ্রসন্নতা। তাই অসহিষ্ণু হয়ে তার ভক্তিকে অশ্রদ্ধেয় প্রমাণ করবার জন্যে পুজোর ঘরে অভীক এমন-কিছু অনাচার করেছিল যাতে ওর বাপ আগুন হয়ে বলে উঠলেন, ‘বেরো আমার ঘর থেকে, তোর মুখ দেখব না।’ এত বড়ো ক্ষিপ্রবেগের কঠোরতা নিয়মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণপণ্ডিত-বংশের চরিত্রেই সম্ভব।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবিবার, তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৮৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮
- লিখিত বলিলেন, “আমি আর কিছুই চাহি না, আপনি আমার অপরাধের উচিত শাস্তি দিন।”
লিখিতের সরল সাধুতা দেখিয়া রাজার মনে তাঁহার প্রতি বড়ই শ্রদ্ধা হইল। কিন্তু তিনি অনেক চেষ্টা করিয়াও তাঁহার মন ফিরাইতে পারিলেন না। লিখিত বলিলেন, “পাপের উচিত শাস্তি না পাইলে আমার শরীর হইতে সে পাপ দূর হইবে না, সুতরাং আমাকে শাস্তি দিতেই হইতেছে।”
তখন রাজা আর কি করেন? চোরের সাজা হাত কাটিয়া দেওয়া, সুতরাং তিনি লিখিতের হাত দুখানি কাটিয়া দিয়া তাঁহার মনের দুঃখ দূর করিলেন।
সেই কাটা হাত লইয়া লিখিত শঙ্খের নিকট আসিয়া বলিলেন, “দাদাদেখুন রাজা আমাকে শাস্তি দিয়াছেন। এখন আপনি দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করুন।”- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শঙ্খ ও লিখিত, মহাভারতের কথা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১০
- ইশা খাঁ। কিন্তু বাবা, মনের মধ্যে একটা আগুন জ্বলছে। ইন্দ্রকুমার যে অভিমান করে দূরে চলে গেল তার এই অপরাধের শাস্তি দেবার জন্যে আমি হয়তো বেঁচে থাকব না।
যুবরাজ। যদি বেঁচে না থাক সেনাপতি, তাহলে তার শাস্তি আরও ঢের বেশি হবে। সে যে তোমাকে পিতার মতো জানে।
ইশা খাঁ। আল্লা! সে-কথা সত্য। বাবা, আজ বুঝছি, আমার সময় হবে না। কিন্তু, যদি তোমার সুযোগ হয় তবে তাকে বোলো, যদি ইশা খাঁ বেঁচে থাকত তবে তাকে শাস্তি দিত কিন্তু মরবার আগে তাকে ক্ষমা করে মরেছে। বাস্, আর সময় নেই— চললুম, বাবা। এসো, একবার আলিঙ্গন করে যাই। আল্লার হাতে দিয়ে গেলুম, তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুকুট, ষষ্ঠ দৃশ্য, মুকুট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭
- ইংরেজ সৈনিকদের ধারণা হইল যে, কোন ইংরেজ-শিশুকন্যকে ইহারা ছদ্মবেশ পরাইয়া চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছে।
সে-সময় বিচার এবং শাস্তি নিমেষের মধ্যে হইয়া যাইত; এবং এই ধরণের অপরাধের একমাত্র শাস্তি হইল, মৃত্যু।- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩
- দিদি, শত সহস্ৰ প্রণাম তোমার পায়ে। অজ্ঞানে অপরাধ করেছি, মাপ করো। যদি সেটা অপরাধ না হয়, তবে তাই জেনেই সুখী হ’ব। তার চেয়ে সুখী হবার আশা রাখব না মনে। কিসে সুখ তাই বা নিশ্চিত কী জানি। আর সুখ যদি না হয় তো নাই হোলো। ভুল করতে ভয় করি।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শশাঙ্ক, দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১২
- প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের উপর নির্মিত যেকোনো সমাজে, বর্ণের মিশ্রণ কেবল ব্যবস্থাটিকে অন্যায্য হিসেবে চ্যালেঞ্জ করে না, বরং এটি ব্যবস্থাটিকে অস্থিতিশীল এবং অসংলগ্ন হিসেবে প্রকাশ করে। বর্ণের মিশ্রণ প্রমাণ করে যে বর্ণগুলি মিশ্রিত হতে পারে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই মিশ্রিত হতে চায়। যেহেতু একজন মিশ্র ব্যক্তি ব্যবস্থার যুক্তির প্রতি সেই তিরস্কারকে মূর্ত করে, তাই বর্ণের মিশ্রণ বিশ্বাসঘাতকতার চেয়েও খারাপ অপরাধ হয়ে ওঠে।
- ট্রেভর নোয়া, বর্ন আ ক্রাইম: স্টোরিজ ফ্রম আ সাউথ আফ্রিকান চাইল্ডহুড , (থিম: বর্ণবাদ, পৃষ্ঠা ২১ )[১]
- কর্তব্যবুদ্ধির অত্যাচারেই মন আরো যাচ্ছে বিগড়িয়ে। নিজের অপরাধ ক্ষমা করা কঠিন হয়ে উঠল ব’লেই অপরাধ প্রশ্রয় পেতে লাগল। বেদনায় আফিমের প্রলেপ দেবার জন্যে শশাঙ্কের সঙ্গে খেলায় আমোদে নিজেকে সর্বক্ষণ ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। বলে, যখন সময় আসবে তখন আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে, এখন যে-কয়দিন ছুটি ওসব কথা থাক্।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঊর্মিমালা, দুই বোন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
- আধুনিক যুগের ধনিকগুলো ধনী দরিদ্রকে মালিক শ্রমিককে শোষণ করে মোটা হচ্ছে; এই শোষণের অনেক নিন্দাই আমরা করি। শোষণ সত্যই চলছে তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু এর অপরাধ ধনিকের নয়, অপরাধ আসলে এই ব্যবস্থাটিরই, এইরকম শোষণের উপরেই তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
- জওহরলাল নেহেরু, মার্ক্স্বাদ, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৯৫
- তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ।
- কুরআন, সূরা আহযাব (৩৩:৫৩)
- “সে আপনার সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল বিয়ে করবে না।”
“তখন সেটা ছিল সত্য, এখন সেটা সত্য নেই। মুখের কথায় সত্য সৃষ্টি করা যায় না। প্রতিজ্ঞা উমা আপনিই ভাঙত, আমি ভাঙালুম, ওর অপরাধ বাঁচিয়ে দিলুম।”
“প্রতিজ্ঞা রাখা না-রাখার দায়িত্ব ওরই, না হয় ভাঙত, না হয় করত অপরাধ।”
“ভাঙতে ভাঙতে আশেপাশে ভাঙচুর করত বিস্তর, লােকসান হত আমাদের সকলেরই।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম অধ্যায়, চার অধ্যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
- দিল্লীর মহাপ্রতাপান্বিত সমাট আজ মিবারের রাণার গৃহে অতিথি। আতিথ্য সৎকারের কোন ক্রটিই হইল না। রাজপুতের ভদ্রতা ও সৌজন্য দর্শনে আলাউদ্দীন মুগ্ধ হইলেন। এবং বীনয়নম্রবচনে বারম্বার আপনার অপরাধ স্বীকার করিলেন। বিদায় গ্রহণের পূর্ব্বে পদ্মিনীর প্রতিচ্ছায়া একবার মাত্র দর্পনে প্রতিবিম্বিত হইল। মনে হইল যেন কোন স্বর্গীয় আলোকচ্ছটা মুকুরের মধ্য দিয়া বিদ্যুতের মত চলিয়া গেল! মুগ্ধনেত্র আলাউদ্দীন তৃষিত নেত্রে চাহিয়া রহিলেন!
- হেমলতা দেবী, মিবার-গৌরব-কথা - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- এস, কে, লাহিড়ি এণ্ড কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
- মানুষ তো নিজের অজান্তে ও অনেক জঘন্য অপরাধ করে বসে। সমস্ত ধর্মতো পাপ বোধের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। যেহেতু মানুষ হিসাবে তোমাকে জন্ম নিতে হয়েছে তাই, তুমি পাপী !
- আহমদ ছফা, অর্ধেক নারী, অর্ধেক ঈশ্বরী, পৃঃ৪০
- পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে চেয়ে দেখ ইয়োরোপের বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা থেকে কোন দুর্ব্বল জাতিই আজ আর আত্মরক্ষা করতে পারেনি। দেশের মাটি, দেশের সম্পদ থেকে ছেলেরা বঞ্চিত হয়েচে কোন অপরাধে জানো ভারতী? একমাত্র শক্তিহীনতার অপরাধে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪১
- নানা আশু ও সুদূর কারণে, অনেক দিনের পুঞ্জিত অপরাধে হিন্দু-মূসলমানের মিলনসমস্যা কঠিন হয়েছে, সেইজন্যেই অবিলম্বে এবং দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে তার সমাধানে প্রবৃত্ত হতে হবে। অপ্রসন্ন ভাগ্যের উপর রাগ করে তাকে দ্বিগুণ হন্যে করে তোলা চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কালান্তর, হিন্দুমুসলমান। শ্রাবণ, ১৩৩৮
- বাইবেল বিরোধী অসত্য ভাষণের অপরাধে ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল প্রকাশ্যে। গ্যালিলিও গ্যালিলেইকেও ধর্মান্ধতার বিচারে অর্ধামিক ও অসত্য মতবাদ প্রচারের অপরাধে জীবনের শেষ আটটা বছর বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু এত করেও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, ঈশ্বর-পুত্র, পোপ এবং সংখ্যাগুরু জনমত সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ করতে পারেনি। আনাক্সাগোরাস বলেছিলেন, চন্দ্রের কোনও আলো নেই। সেই সঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ। সেদিন আনাক্সাগোরাসের তত্বের প্রতিটি সত্যই ছিল ধর্মবিশ্বাসী বিশ্ববাসী সংখ্যাগুরুদের চোখে মিথ্যে। ঈশ্বর বিরোধিতা, ধর্ম বিরোধিতা ও অসত্য প্রচারের অপরাধে দীর্ঘ ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়।
- প্রবীর ঘোষ, আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৩ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৩০
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় অপরাধ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে অপরাধ শব্দটি খুঁজুন।