বিষয়বস্তুতে চলুন

অবসর

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

অবসর বা অবকাশযাপন হলো ব্যক্তির মুক্ত সময় এবং নির্ধারিত কাজ থেকে অন্যভাবে সময় কাটানো। অবসর হলো নিজের পদ বা পেশা থেকে অথবা সক্রিয় কর্মজীবন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা। ব্যবসা, কর্মজীবন, গৃহস্থালী কাজ থেকে দূরে থাকার অলস সময়টুকুই অবসর বা অবকাশযাপন সময় নামে বিবেচিত হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, অবসর পাই নে আমি হায়—
    বাহিরের খেলায় ডাকে সে,  যাব কী ক’রে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গীতবিতান- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৪০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫৪
  • কর্ম্ম করিয়া অবসর পাইলেই লেখা পড়া করিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সর্ব্বদা অবসর পাইতাম না। আমি অবসর পাইলেই পড়িতে বসি দেখিয়া, প্রভু অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইতেন, এবং যাহাতে অবসর না পাই, এরূপ চেষ্টা করিতেন। কি অভিপ্রায়ে তিনি সেরূপ করেন, আমি প্রথমে তাহা বুঝিতে পারি নাই। অবশেষে অনুসন্ধান করিয়া জানিতে পারিলাম, আমি যে কর্ম্মের আকাঙ্ক্ষায় লেখা পড়ায় যত্ন করিতেছিলাম, তিনি আপন কনিষ্ঠ পুত্রকে ঐ কর্ম্মে নিযুক্ত করিবার নিমিত্ত চেষ্টিত ছিলেন।
    • উইলিয়ম গিফোর্ড, চরিতাবলী- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সংস্করণ ১৪, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬-৯৭
  • অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে?
    অমিতা নিজে কি তাকে?
    অবসর মতো কথা ভাবা যাবে,
    ঢের অবসর চাই;
    দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই;
    • জীবনানন্দ দাশ, লোকেন বোসের জর্নাল, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- নাভানা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২০
  • সৃষ্টির সহিত সাহিত্যের তুলনা হয়। এই অসীম সৃষ্টিকার্য অসীম অবসরের মধ্যে নিমগ্ন। চন্দ্রসূর্য গ্রহনক্ষত্র অপার অবসরসমুদ্রের মধ্যে সহস্র কুমুদ কহ্লার পদ্মের মতো ধীরে ধীরে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে। কার্যের শেষও নাই, অথচ তাড়াও নাই। বসন্তের একটি শুভ প্রভাতের জন্য শুভ্র চামেলি সৃষ্টির কোন্‌ অন্তঃপুরে অপেক্ষা করিয়া আছে, বর্ষার মেঘস্নিগ্ধ আর্দ্র সন্ধ্যার জন্য একটি শুভ্র জুঁই সমস্ত বৎসর তাহার পূর্বজন্ম যাপন করিতেছে। সাহিত্যও সেইরূপ অবসরের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। ইহার জন্য অনেকখানি আকাশ, অনেকখানি সূর্যালোক, অনেকখানি শ্যামল ভূমির আবশ্যক। কার্যালয়ে শান-বাঁধানো মেজে খুঁড়িয়া যেমন মাধবীলতা উঠে না, তেমনি সাহিত্যও উঠে না।
    • সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮০
  • অবসর হল দর্শনের জননী।
    • টমাস হব্‌স, টমাস হবস (২০১৬) "দ্য এসেনশিয়াল লেভিয়াথানঃ এ মডার্নাইজড এডিশন", হ্যাকেট পাবলিশিং, পৃষ্ঠা ২৬০
  • নানা কারণ বশতঃ থিয়েটার হইতে অবসর গ্রহণ করিয়া সুখ-দুঃখময় জীবন নির্জ্জনে অতিবাহিত করিতে ছিলাম। এই নানা কারণের প্রধান কারণ যে আমায় অনেক রূপে প্রলোভিত করিয়া কার্য্য উদ্ধার করিয়া লইয়া আমার সহিত যে সকল ছলনা করিয়াছিলেন, তাহা আমার হৃদয়ে বড় লাগিয়াছিল। থিয়েটার বড় ভালবাসিতাম তাই কার্য্য করিতাম। কিন্তু ছলনার আঘাত ভুলিতে পারি নাই! তাই অবসর বুঝিয়া অবসর লইলাম। এই দুঃখময় জীবনের একটী সুখের অবলম্বন পাইয়াছিলাম। একটী নির্ম্মল স্বর্গচ্যুত কুসুমকলিকা শাপভ্রষ্টা হইয়া এ কলঙ্কিত জীবনকে শান্তিদান করিতে ছিল। কিন্তু এই দুঃখিনীর কর্ম্মফলে তাহা সহিল না!
    • বিনোদিনী দাসী, আমার কথা (প্রথম খণ্ড) - বিনোদিনী দাসী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৭-১০৮
  • ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া সঙ্গে সঙ্গে যথা পরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে।
  • একটি জাতির ভাষা, সেইসাথে এর বিজ্ঞান এবং এর ইতিহাস যা ঠিক করে এবং সংরক্ষণ করে, তা হল কেবল তার রাজনৈতিক শক্তির শক্তি, যার সাথে এর অধিবাসীদের সুখী কল্যাণ এবং অবসর থেকে থাকে।
    • ইবনে হাযম, আল-আন্দালুসে এম. আসীন; ১৯৩৯; চতুর্থ খণ্ড; পৃ. ২৭৮
  • জননী, তোমার শুভ আহ্বান
    গিয়েছে নিখিল ভুবনে--
    নূতন ধান্যে হবে নবান্ন
    তোমার ভবনে ভবনে।
    অবসর আর নাহিকো তোমার--
    আঁটি আঁটি ধান চলে ভারে ভার,
    গ্রামপথে-পথে গন্ধ তাহার
    ভরিয়া উঠিছে পবনে।
    জননী, তোমার আহ্বান লিপি
    পাঠায়ে দিয়েছ ভুবনে।
  • বাঙ্গালা দেশে আমরা বারমাসে তের পার্ব্বণ দেখিয়া আসিতেছি, এখানে ১২ মাসের পূজা পার্ব্বণের সংখ্যা করিয়া উঠাই এক কঠিন ব্যাপার। কি গুর্খা, কি নেওয়ার, নেপালীদিগের ভিতর চির উৎসব চলিয়াছে। এত পূজা পার্ব্বন, আমোদ আহ্লাদ করিয়া কখন যে তাহারা জীবিকা উপার্জ্জনের অবসর পায় তাহাই ত এক সমস্যা। গুর্খাগণ হিন্দু, নেওয়ারগণ পূর্ব্বে বৌদ্ধ ছিল। এই উভয় সম্প্রদায়ের উৎসব এখন নেপালের জাতীয় উৎসব হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই কারণেই নেপালে পূজা পার্ব্বণের এত বাহুল্য দেখা যায়।
    • নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
  • ভগবান কন্দর্পের প্রভাব ভিন্ন লোকের উপর ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়। রাজীব তাঁহার প্ররোচনায় দুটো চারটে মনের কথা বলিবার অবসর খুঁজিয়া বেড়ায়, মহামায়া তাহাকে সে অবসর দেয় না—তাহার নিস্তব্ধ গম্ভীর দৃষ্টি রাজীবের ব্যাকুল হৃদয়ে একটা ভীতির সঞ্চার করিয়া দেয়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহামায়া, বিচিত্র গল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিতীয় খণ্ড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩০১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮১
  • কানাডার জনতাত্ত্বিক পরিস্থিতি বাকি উন্নত বিশ্বের মতো-একটি বিশাল জনসংখ্যা অবসর গ্রহণের দিকে এগিয়ে চলেছে এবং প্রতিস্থাপন প্রজন্মের মধ্যে খুব কমই তরুণ মানুষ আসছে।
    • পিটার জেইহান, জেন গারসনের সাথে সাক্ষাৎকার, ২০ মার্চ ২০১৫
  • জীবিকা অর্জনের পরিকল্পনা করার দূরদর্শিতা থাকা, জীবনের শান্তি ও অবসরের অর্ধেক।
  • আমি কয়েক দিনের মধ্যে নিজেকে উদ্বেগ এবং শ্রম থেকে বিচ্ছিন্ন করব যার সাথে আমি নিপীড়িত হয়েছি এবং আমার পরিবার, আমার বন্ধুবান্ধব, আমার খামার এবং বইয়ের সাথে অবর্ণনীয় আনন্দের সাথে অবসর নেব। সেখানে আমি দীর্ঘ সময় ধরে সেই প্রশান্তি এবং সেইসব সাধনায় লিপ্ত হতে পারি যেগুলি থেকে আমি জীবনযাপন করার সময়গুলির চরিত্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছি এবং যেগুলি আমাকে কর্তব্যবোধের অধীনে এবং একটি মহান বিরুদ্ধে রাজনৈতিক জীবনের লাইনে বাধ্য করেছে। এবং এর প্রতি অবিরাম বিদ্বেষ।
  • আমি পটোম্যাকের তীরে একজন ব্যক্তিগত নাগরিক হয়েছি, এবং আমার নিজস্ব লতা এবং আমার নিজস্ব ডুমুর গাছের ছায়ায়, শিবিরের কোলাহল এবং জনজীবনের ব্যস্ত দৃশ্য থেকে মুক্ত, আমি সেই প্রশান্তিতে নিজেকে শান্ত করছি। ভোগ, যে সৈনিক সর্বদা খ্যাতির সন্ধানে থাকে, যে রাষ্ট্রনায়কের সজাগ দিন এবং নিদ্রাহীন রাত্রিগুলি নিজের কল্যাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যয় করে, সম্ভবত অন্যান্য দেশের ধ্বংস, যেন এই পৃথিবী আমাদের জন্য অপর্যাপ্ত। সব, এবং দরবারী যে সর্বদা তার রাজকুমারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, একটি করুণাময় হাসি ধরার আশায়, খুব কম গর্ভধারণ করতে পারে। আমি শুধু সকল সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিচ্ছি না, আমি নিজের মধ্যেই অবসর নিচ্ছি; এবং একাকী হাঁটা দেখতে সক্ষম হবেন, এবং আন্তরিক তৃপ্তির সাথে ব্যক্তিগত জীবনের পথ পাড়ি দিতে পারবেন। কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত নয়, আমি সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ; এবং এই আমার প্রিয় বন্ধু, আমার অগ্রযাত্রার আদেশ হচ্ছে, আমি আমার পিতার সাথে ঘুমানো পর্যন্ত জীবনের স্রোতে আস্তে আস্তে চলে যাব।
  • কর্ম্মই কর্ম্মের প্রবর্ত্তক, পুরুষকারই কর্ম্মের কর্ত্তা;—এখানে এতদতিরিক্ত কর্ম্মাধিপের স্থান কোথায়? আর তাই যদি হয়, তবে কর্ম্ম যেমন পুরুষাধীন পুরুষও তেমনি কর্ম্মাধীন হইয়া পড়েন। কর্ম্ম পুরুষকে বাঁধিতে চাহে, পুরুষ কর্ম্মকে রোধিতে চাহেন; —ইহাই তো, তাহা হইলে, সংসারের মর্ম্ম হয়। আর জীবন যদি এই নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামেরই নামান্তর হয়, তবে সংগ্রামের জয়-পরাজয়ে দুঃখ, বেদনা ও অনুশোচনার অবসর থাকে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনুতাপের অবসর কোথায়?
    • বিপিনচন্দ্র পাল, জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- যুগযাত্রী প্রকাশক লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল= ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯-৬০
  • তারা একটি শক্ত ঘাঁটি হিসাবে বিচার বিভাগে অবসর নিয়েছে। সেখানে ফেডারেলিজমের অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণ করা হবে এবং কোষাগার থেকে খাওয়ানো হবে; এবং সেই ব্যাটারি থেকে প্রজাতন্ত্রের সমস্ত কাজগুলিকে পিটিয়ে মুছে ফেলা হবে।
  • তবে অবসর গ্রহণ করুন। যার যার কঠিন বিবেচনা হয়, অবসর গ্রহণ করুন। এখন আর সকতজঙ্গ সজ্জিত নয়, যে অস্ত্র পরিত্যাগ ক’রে নবাবকে দমিত কর্‌বেন। ইংরেজের সহিত সন্ধি স্থাপনা আপনাদের মন্তব্য প্রত্যক্ষ দেখ্‌লেম;—মন্তব্য মত কার্য্য হলো! এ পর্য্যন্ত বরাবর সুমন্ত্রণা প্রদান কর্চ্ছেন। যুদ্ধে উৎসাহ দিয়ে কলিকাতায় র’য়ে গেলেন। আপনি সেনাপতি ছিলেন, একবারও তত্ত্ব লন নাই, যে নবাব কোথায়! রজনীতে প্রান্তরে বৃক্ষতলায় অবস্থান করি। বল্‌তে পারেন, ক্ষুদ্র ছয়শত নাবিক সৈয় ল’য়ে কি সাহসে ক্লাইব নিশাযুদ্ধে প্রবৃত্ত হ’লো? বাক্—বাক্যব্যয়ে প্রয়োজন নাই, অবসর গ্রহণের ইচ্ছা অবসর গ্রহণ করুন। অন্তরের ছুরী কাহারো লুক্কায়িত নাই। আমার নিজ সহিষ্ণুতায় আশ্চর্য্য হ’চ্ছি। অনেক সহ্য করেছি, এর পর কি হয় জানি না! সকলে স্বস্থানে গমন করুন।
    • সিরাজদ্দৌলা নাটকে সিরাজের উক্তি, সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১১
  • কিন্তু দুদিন যাইতে না যাইতেই বুঝিতে পারা গেল যে, নিরঞ্জনের কাছে বিদ্যাশিক্ষা করিতে যাওয়ার মধ্যে অসুবিধা তার যতই থাক না কেন, বুঝি আনন্দও একটুখানি কোথায় যেন ছিল। সেই আপ্‌নাভোলা অসহায় ও নিঃসঙ্গ জীবটাকে সে যে ঘণ্টাখানেকেও একটুখানি কাজ দিয়া রাখে; এইটুকু হইতেও সেই কর্ম্মহীন দীর্ঘ অবসরের ক্লান্ত জীবনটকে বঞ্চিত করা তার কাছে হঠাৎ যেন চৌর্য্যের মতই অপরাধজনক ঠেকিল। আর এই অবসরে এই বিপুল রাজপ্রাসাদের অসংখ্য দাসদাসীবর্গের দ্বারায় উৎপীড়িত উপদ্রুত মানুষটাকে সে যে কতকটা রক্ষা করিয়াও চলিতেছিল, সেইটুকুকে হারাইয়া ফেলায় তার মন আজ পীড়া বোধ করিতে লাগিল।
    • অনুরূপা দেবী, হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী, পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ভূদেব পাব্লিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪
  • দুমাস পরে বৈশাখ মাসে বকুলের বিবাহ হইয়াছিল। ছেলের নাম মোহিনী, ছেলের বাপের নাম বিভূতি, নিবাস কৃষ্ণনগর। বিভূতি ছিল পোষ্টমাষ্টার, এখন অবসর লইয়াছে। মোহিনী পঞ্চাশ টাকায় ঢুকিয়াছে পোষ্টাপিসে, আশা আছে বাপের মত সেও পোস্টমাষ্টার হইয়া অবসর লইতে পারিবে। মোহিনী কাজ করে কলিকাতায়, থাকে কাকার বাড়ি, যার নাম শ্রীপতি এবং যিনি মার্চেণ্ট আপিসের কেরাণী।
  • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৪৩
  • এতদিন রসিক এই গ্রামের বনবাদাড়, রথতলা, রাধানাথের মন্দির, নদী, খেয়াঘাট, বিল, দিঘি, কামারপাড়া, ছুতারপাড়া, হাটবাজার সমস্তই আপনার আনন্দে ও প্রয়োজনে বিচিত্রভাবে অধিকার করিয়া লইয়াছিল। সব জায়গাতেই তাহার একটা একটা আড্ডা ছিল, যেদিন যেখানে খুশি কখনো বা একলা কখনো বা দলবলে কিছু-না-কিছু লইয়া থাকিত। এই গ্রাম এবং থানাগড়ের বাবুদের বাড়ি ছাড়া জগতের আর-যে কোনো অংশ তাহার জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় তাহা সে কোনোদিন মনেও করে নাই। আজ এই গ্রামে তাহার মন আর কুলাইল না। দূর দূর বহুদূরের জন্য তাহার চিত্ত ছটফট করিতে লাগিল। তাহার অবসর যথেষ্ট ছিল—বংশী তাহাকে খুব বেশিক্ষণ কাজ করাইত না। কিন্তু, ঐ একটুক্ষণ কাজ করিয়াই তাহার সমস্ত অবসর পর্যন্ত যেন বিস্বাদ হইয়া গেল; এরূপ খণ্ডিত অবসরকে কোনো ব্যবহারে লাগাইতে তাহার ভালো লাগিল না।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পণরক্ষা, গল্পগুচ্ছ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১৭

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]