আইন
অবয়ব
আইন হলো মানুষকে সুষ্ঠু, স্বাধীন এবং সুশৃংখলভাবে জীবন পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন তৈরি এবং প্রয়োগ করা হয় তাকে আইন বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আইন হলো সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক বলবৎযোগ্য বিধান, যা সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়। আইন হলো নিয়মের এক পদ্ধতি যাকে নাগরিক বাধ্যতা, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের ভিত্তি নির্মাণ করতে ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকরী করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আইনের অসংখ্য সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- পুঁজিবাদী করে টাকা নিয়ে খেলা, তাদের কুকুরো খায়,
দেখ কত শত শিশু ভগবান ক্ষুধায় মরিয়া যায়;
এমন আইন চাই—
যে আইন-বলে শিশু ও কিশোর বাঁচিবে সর্বদাই।- সুনির্মল বসু, আমাদের দাবী, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৪
- আমি বিশ্বাস করি, বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখার আইনটা এদেশের মানুষকে পরাধীনতার গ্লানি সব চেয়ে বেশি অনুভব করায়। একপেশে স্বেচ্ছাচারিতার, শাসক ও শাসিতের মধ্যে অসৎ সম্পর্কের এমন সুস্পষ্ট নগ্ন অভিব্যক্তি আর আছে কিনা সন্দেহ।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, “ব ক্সা ক্যা ম্পে শি ল্পী - সা হি ত্যি ক”, লেখকের কথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৩
- মহাত্মা গান্ধী এক নূতন আন্দোলন প্রবর্ত্তন করিলেন—সত্যাগ্রহ আন্দোলন। যে সত্যাগ্রহী হইবে, সে রাউলাট আইনকে অস্বীকার করিতে প্রতিজ্ঞা -বদ্ধ হইবে এবং পরে যখনি এমনিধারা অন্য কোন অন্যায় আইন দেশের লোকের উপর চাপানো হইবে, তাহাদিগকেও অমান্য করিতে হইবে। ইহার অর্থ হইল যে, স্বেচ্ছায় কারাবাস এবং নির্যাতনকে বরণ করিয়া লইতে হইবে।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০
- “তোমার কথাবার্ত্তা আমি ত কিছুই বুঝতে পারচি না” বলে’ সে গালে হাত দিয়ে বসে রইল। আমি বল্লাম—“প্রসন্ন, তুমি যদি এত সহজে আইনের কথা বুঝতে পারতে তা’হলে আইন করাই যে বৃথা হ’ত—তা বুঝচ না। বুঝিয়ে বলি শোন—এই যে দেশটী দেখচ, যার একদিকে পুণ্যতোয়া জাহ্নবী আর তিনদিকে পগার তোলা—এইটা দেশ, আর এর বাইরে যে বিশাল বাংলা দেশটা পড়ে আছে সেটা বিদেশ, সুদূর হিমালয়ের ত কথাই নাই;—সেই দূর হিমালয়-গৃহ থেকে যে মা নেমে তোমার বাড়ীতে আসবেন, তিনি ত বিদেশিনী বলেই পরিগৃহীতা হবেন—এই দেশে প্রবেশাধিকার লাভ কর্ত্তে হলে তাঁর একটা ছাড়-পত্র চাই; তারপর তিনি সাঙ্গোপাঙ্গ সঙ্গে করে’ আসবেন, ২০ জনের অধিক হলেই ত আইনের খেলাপ হয়ে যাবে। তার উপর আবার তিনি দশপ্রহরণ দশহাতে ধারণ করে’ আসবেন, অস্ত্র আইনের মধ্যেও পড়তে পারেন, এ সকল জটিল কথার মীমাংসা করবার জন্য একবার উকিলের বাড়ী যেতেই হবে।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসন্ন গোয়ালিনীর বাড়ী পূজা, কমলাকান্তের পত্র- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- প্রবর্ত্তক পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩-৪
- পুরুষের চেয়ে নারী এবং শিশু শ্রমিক নিযুক্ত করাই মালিকরা বেশি পছন্দ করত. কারণ তাদের মাইনের হার অল্প। অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং কদর্য পরিবেশের মধ্যে এদের কাজ করতে হত, অনেকসময় দিনে আঠারো ঘণ্টা পর্যন্ত এদের খাটানো হত। শেষ-পর্যন্ত রাষ্ট্রই এগিয়ে এসে এর উপরে হস্তক্ষেপ করল; দিনে একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি শ্রমিককে খাটানো চলবে না, তাদের যে পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে তারও উন্নতি করতে হবে, ইত্যাদি ব্যবস্থা করে কতকগুলো আইন তৈরি করল। এই আইনগুলোকে বলা হয় কারখানা-সংক্রান্ত আইন। এই আইনে বিশেষ করে নারী এবং শিশু শ্রমিকদের রক্ষার ব্যবস্থা করা হল। কিন্তু দীর্ঘ কাল ধরে কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে তবেই এই আইন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। কারণ, কারখানার মালিকরা প্রাণপণে একে বাধা দিচ্ছিল।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫৯
- সাতকড়ি কহিল, “ভাই, চট কেন? সিভিলিজেশন সস্তা জিনিস নয়। সূক্ষ্ণ বিচার করতে গেলে সূক্ষ্ণ আইন করতে হয়, সূক্ষ্ণ আইন করতে গেলেই আইনের ব্যবসায়ী না হলে কাজ চলেই না, ব্যাবসা চালাতে গেলেই কেনাবেচা এসে পড়ে— অতএব সভ্যতার আদালত আপনিই বিচার-কেনাবেচার হাট হয়ে উঠবেই— যার টাকা নেই তার ঠকবার সম্ভাবনা থাকবেই। তুমি রাজা হলে কী করতে বলো দেখি।”
গোরা কহিল, “যদি এমন আইন করতুম যে হাজার দেড় হাজার টাকা বেতনের বিচারকের বুদ্ধিতেও তার রহস্য ভেদ হওয়া সম্ভব হত না, তা হলে হতভাগা বাদী প্রতিবাদী উভয় পক্ষের জন্য উকিল সরকারি খরচে নিযুক্ত করে দিতুম। বিচার ভালো হওয়ার খরচা প্রজার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সুবিচারের গৌরব করে পাঠান-মোগলদের গাল দিতুম না।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩৩
- ব্রিটেনের বেশীরভাগ অরণ্য ও বেশ বড় সংখ্যক বন্যপ্রাণ হারিয়ে গেছে তাদের ভারত বিজয়ের কয়েক শতক আগেই। প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ১০৬৬ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট উইলয়ামের সময়ে। সম্রাট উইলিয়াম শিকার করতে ভালোবাসতেন, তিনিই অরণ্য আইন প্রতিষ্ঠা এবং লাগু করেছিলেন। এই আইন সাধারণ আইনের আওতার বাইরে সক্রিয় ছিল। আইনটি সাধারণ ইংরেজদের শিকারের হাত থেকে ক্রীড়া-পশু ও তাদের বাসস্থান সংরক্ষণের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
- মাধব গাডগিল, প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল, অনুবাদক- মৈত্রী দাস, প্রকাশক- একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬
- পূর্ববঙ্গের কোন কোন অঞ্চলে বিনা চাষেই আগাছার মত-লিঙ্গস্ত্র সিদ্ধিগাছ জন্মায়, মানুষের ঘরের পিছনে থাকে সিদ্ধি গাছের জঙ্গল। আইন আছে যে যেখানেই সিদ্ধিগাছ জন্মাক সেটা গবর্ণমেণ্টের সম্পত্তি, কিন্তু ঘরের পিছনের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে সিদ্ধিপাত ছিড়ে লোকে সরবৎ করে খেলে তো আর আইন খাটানো যায় না। আইন খাটানো চলে তখন, কেউ যখন তামাক পাতা ঢাকা দিয়ে রাশি রাশি সিদ্ধিপাত সে দেশে চালান দেবার চেষ্টা করে যেখানে এভাবে সিদ্ধিগাছ গজায় না।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
- মার্চ মাসে গান্ধীজীর বিখ্যাত ডাণ্ডি-অভিযান শুরু হল; সমুদ্রের তীরে ডাণ্ডি, সেখানে গিয়ে তিনি লবণ-আইন ভাঙলেন। লবণ-আইনটিকে ভেঙেই তিনি তাঁর অভিযানের উদ্বোধন করবেন স্থির করেছিলেন, কারণ এই আইনটিতে দরিদ্রদের উপরেই খুব বেশি চাপ পড়ে, সেদিক থেকে এটি একটি বিশেষ খারাপ আইন।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮৪
- রাজার যে দেশ শাসন করিবার অধিকার, তাহার ভিত্তি হইতেছে জনসাধারণের সন্তোষ ও সম্মতি। আমরা দেখিব যে, এটি কেবলমাত্র একটি সদিচ্ছা বা ধর্ম্মবেত্তা ব্রাহ্মণগণের মত মাত্র ছিল না। রাজা নিজে ছিলেন প্রধান বিচারপতি, দেশের দেওয়ানী বা ফৌজদারী আইন অনুসারে দণ্ডাদি দিবার ব্যাপারে সকলের উপরে রাজারই আধিপত্য ছিল। তাঁহার বিচারপতিরা বা আইনে অভিজ্ঞ ব্রাহ্মণরা আইনের যে স্বরূপ নির্দ্ধারণ করিয়া দিতেন, সেই নির্দ্ধারণ যথাযথভাবে কার্য্যে পরিণত করিতে তিনি বাধ্য ছিলেন।
- অরবিন্দ ঘোষ, ভারতের রাষ্ট্রনীতিক প্রতিভা - অরবিন্দ ঘোষ, অনুবাদক- অনিলবরণ রায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১-২২
- অপূর্ব্ব চুপ করিয়া রহিল। ভারতী রলিল, ক্ষতি যা হবার হয়েছে, এর পরে আবার তারা এলে অপমান শুরু হবে।
কিন্তু আইন আছে—
অপূর্ব্বর কথা শেষ হইল না, ভারতী অসহিষ্ণু হইয়া উঠিল; বলিল, আইন থাকে থাক; এ আপনাকে আমি কিছুতে করতে দিতে পারবো না। আইন সেদিনও ছিল আপনি যেদিন জরিমানা দিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যেই তা ভুলে গেছেন?
অপূর্ব্ব কহিল, লোকে যদি মিথ্যে বলে, মিথ্যে যামলা সাজায়, সে কি আইনের দোষ?
ভারতীর মুখ দেখিয়া মনে হইল না সে কিছুমাত্র লজ্জা পাইল। বলিল, লোকে মিথ্যে বলবে না, মিধ্যে মামলা সাজাবে না, তবেই আইন নির্দ্দোষ হয়ে উঠবে, এই আপনার মত না কি? এ হলে ত ভালই হয়, কিন্তু সংসারে তা হয় না এবং হবার বোধ করি বিস্তর বিলম্ব আছে।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১
- মালিকদের লোভ আর স্বার্থপরতার হাত থেকে শ্রমিকদের বাঁচাবার জন্যে ব্রিটিশ পার্লামেণ্ট প্রথমবার আইন প্রণয়ন করল। এই আইনটি হচ্ছে ১৮১৯ সনের ফ্যাক্টরি-অ্যাক্ট। এই আইনে বলা হল, ন’ বছর বয়সের শিশুদের দিনে বারো ঘণ্টার বেশি খাটানো চলবে না! আইনের এই বিধিটি থেকেই কিছুটা বুঝতে পারবে, কী ভয়ানক অবস্থার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হত।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮০
- গবর্ণমেণ্টের কৌন্সেলের বিচারে, হিন্দুশাস্ত্রানুসারে বিধবার পুনর্ব্বার যখন বিবাহ হইতে পারে, তখন বিধবার গর্তজাত পুত্র ঔরসজাত পুত্র বলিয়া, পৈতৃক-সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবে, এই ব্যবস্থা বিধিবদ্ধ হইল। ইংরাজী ১৮৫৬ খৃঃ অব্দের ১৩ই জুলাই, এই আইন পাশ হইল। ইহার নাম ১৮৫৬ সালের ১৫ আইন হইল। এই সংবাদে ভারতবর্ষের সকলেই মনে মনে পরম আহ্লাদিত হইলেন। তৎকালে গ্রাণ্ড সাহেব, আইন-পাশ-বিষয়ে আশাতীত সাহায্য করিয়াছিলেন। তজ্জন্য ভারতবাসী হিন্দুমাত্রেই তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতা-পাশে বন্ধ আছেন।
- শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন, বিধবাবিবাহ, বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন, সম্পাদনা- ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২১
- পদ্ধতিগত নিয়ম বিজ্ঞানের জন্য, আইনের নিয়ম এবং রীতিনীতি আচরণের জন্য।
- এমিল ডুর্খেইম (১৮৯৩), দ্য ডিভিশন অফ লেবার ইন সোসাইটি, ১৯৩৩, ১৯৪৭ সালে জর্জ সিম্পসন কর্তৃক ইংরেজি ভাষায় অনূদিত, পৃষ্ঠা ৩৬৪
- —এমন মিথ্যা মোকদ্দমায় যদি মেয়াদ হয়, তবে বুঝিলাম যে এ দেশে প্রলয় উপস্থিত। কি নিষ্ঠুর আইন প্রচার হইয়াছে। আইনের দোষ কি, আইন কর্ত্তাদিগের বা দোষ কি— যাহাদিগের হস্তে আইন অর্পিত হইয়াছে, তাহারা যদি নিরপেক্ষ হয়, তবে কি দেশের সর্ব্বনাশ ঘটে। আহা! এই আইনে কত ব্যক্তি বিনাপরাধে কারাগারে ক্রন্দন করিতেছে—তাহাদের স্ত্রী পুত্রের দুঃখ দেখিলে বক্ষ বিদীর্ণ হয়—উনানের হাঁড়ি উনানেই রহিয়াছে, উঠানের ধান উঠানেই শুকাইতেছে, গোয়ালের গোরু গোয়ালেই রহিয়াছে—ক্ষেত্রের চাস সম্পূর্ণ হলো না, সকল ক্ষেত্রে বীজ বপন হলো না, ধানের ক্ষেত্রের ঘাস নির্ম্মূল হলো না, বৎসরের উপায় কি—কোথা নাথ, কোথা তাত শব্দে ধূলায় পতিত হইয়া রোদন করিতেছে। কোন কোন মাজিষ্ট্রেট সুবিচার করিতেছেন, তাঁহাদের হস্তে এ আইন যমদণ্ড হয় নাই।
- দীনবন্ধু মিত্র, নীল-দর্পণ নাটক, তৃতীয় অঙ্ক, নীল-দর্পণ নাটক - দীনবন্ধু মিত্র, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯-৭০
- আমাদের বলা হয় যে রক্ষণশীলতা এখন পুরনো হয়ে গেছে। এই অভিযোগ একেবারেই অযৌক্তিক, এবং আমাদের সাহসের সঙ্গে এর প্রতিবাদ করা উচিত। ঈশ্বরের আইন ও প্রকৃতির নিয়মের কোনো সময়সীমা নেই। এই নীতিগুলি মানব স্বভাব থেকে উদ্ভূত এবং ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির সম্পর্কে যে চিরন্তন সত্য প্রকাশ করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
- ব্যারি গোল্ডওয়াটার, দ্য কনসায়েন্স অফ আ কনজারভেটিভ (১৯৬০), পৃষ্ঠা ১৫
- ডাক্তার ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া বলিলেন, এতক্ষণ হাসছিলাম সত্যি, এবার কিন্তু রাগ করব ভারতী। পথ আমাদের এক নয় এটা জানা কথা, কিন্তু লক্ষ্য যে আমাদের তার চেয়েও অধিক স্বতন্ত্র এ কি তুমিও এতদিন বোঝনি? পৃথিবীর বহু জাতিই স্বাধীন,—তার চেয়ে বড় গৌরব মানব-জন্মের আর নেই, সেই স্বাধীনতার দাবী করা, চেষ্টা করা ত ঢের দূরের কথা, তার কামনা করা, কল্পনা করাও ইংরেজের আইনে ভারতবাসীর রাজদ্রোহ। আমি সেই অপরাধেই অপরাধী। চিরদিন পরাধীন থাকাটাই এ দেশের আইন। সুতরাং, আইনের বাইরে এই সব প্রবীণ পূজ্য ব্যক্তিরা ত কোনদিন কোন কিছুই দাবী করেন না। চীনাদের দেশে মাঞ্চুরাজাদের মত এদেশেও যদি ইংরাজ আইন করে দিত—সবাইকে আড়াই হাত টিকি রাখতে হবে, তবে টিকির বিরুদ্ধে এঁরা কোনমতেই বে-আইনি প্রার্থনা করতেন না। এঁরা এই বলে আন্দোলন করতেন যে, আড়াই হাত আইনের দ্বারা দেশের প্রতি অত্যন্ত অবিচার করা হয়েছে, এতে দেশের সর্ব্বনাশ হয়ে যাবে, অতএব, একে সওয়া দু’হাত করে দেওয়া হোক।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩৬
- সরকার একটা বিশেষ আইন জারি করলেন, তার নাম ‘বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স’—এই আইনের বলে যাকে তাঁরা দয়া করে সন্দেহ করবেন তাঁকেই গ্রেপ্তার করতে এবং বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখতে পারবেন। এই অর্ডিন্যান্স অনুসারে শত শত বাঙালী যুবককে গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে রাখা হল। এঁদের বলা হত রাজবন্দী বা ডেটেনিউ, কতদিন এঁদের জেলে থাকতে হবে তারও কোনো মেয়াদ নির্দিষ্ট ছিল না। লক্ষ্য করবার বিষয়, এই অপূর্ব আইনটি যখন তৈরি করা হয়, তখন ইংলণ্ডের মন্ত্রিত্ব ছিল শ্রমিকদের হাতে, সুতরাং এই অর্ডিন্যান্সটি জারি করবার কৃতিত্ব তাঁদেরই।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮৩-৬৮৪
- ১৮৭১ থেকে নানারকম ফৌজদারি আইন চালু হল ক্রিমিনাল ট্রাইব্স অ্যাক্টের আধারে। এই আইনগুলোর ন্যায্যতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্রিটিশ আধিকারিক জে এফ স্টিফেন বলেন, “পেশাদার অপরাধীদের সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, আমরা মনে করছি যে জনজাতির পূর্বপুরুষেরা অপরাধী ছিল স্মরণাতীতকাল থেকে। তারা তাদের জাতকে ব্যবহার করত অপরাধ করার জন্য। সেই জাতিগুলোর উত্তরপুরুষেরাও একইভাবে আইনের চোখে অপরাধী হবে, যতদিন না সম্পূর্ণ জাতিটা নির্মূল হয়ে যাচ্ছে।”১১ ১৯৩৬ সালে জওহরলাল নেহেরু এই আইনটার নিন্দা করে বলেছিলেন, “এই আইনে যে দানবীয় বিধান রয়েছে তা মানুষের নাগরিক স্বাধিকারকেই নাকচ করে। কোনো জনজাতিকে এভাবে অপরাধী বলা যায় না। কোনো সভ্য নীতির সঙ্গে এই বক্তব্য আদৌ সাযুজ্যপূর্ণ নয়।”
- মাধব গাডগিল, প্রকৃতি বনাম মানুষঃ একটি পরিকল্পিত সংঘাত - মাধব গাডগিল, অনুবাদক- মৈত্রী দাস, প্রকাশক- একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০২২ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪-১৫
- সেদিন কাগজে পড়িয়াছিলাম, ডাক্তার চন্দ্র খৃষ্টান মিশনে লাখখানেক টাকা দিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন—আইনঘটিত ত্রুটি থাকাতে তাঁহার মৃত্যুর পরে মিশন্ সেই টাকা পাওয়ার অধিকার হারাইয়াছিল। কিন্তু ডাক্তার চন্দ্রের হিন্দু ভ্রাতা আইনের বিরূপতাসত্ত্বেও তাঁহার ভ্রাতার অভিপ্রায় স্মরণ করিয়া এই লাখটাকা মিশনের হস্তে অর্পণ করিয়াছেন। তিনি ভ্রাতৃসত্য রক্ষা করিয়াছেন। যদি না করিতেন, যদি বলিতেন, আমি হিন্দু হইয়া খৃষ্টানধর্ম্মের উন্নতির জন্য টাকা দিব কেন—আইনমতে যাহা আমার, তাহা আমি ছাড়িব না। এ কথা বলিলে তাঁহাকে নিন্দা করিবার জো থাকিত না, কারণ সাধারণত আইন বাঁচাইয়া চলিলেই সমাজ নীরব থাকে। কিন্তু আইনের উপরেও যে ধর্ম্ম আছে, সেখানে সমাজের কোন দাবী খাটে না, সেখানে যিনি যান, তিনি নিজের স্বাধীন মহত্ত্বের জোরে যান, মহতের গৌরবই তাই; তাঁহার ওজনে সাধারণকে পরিমাণ করা চলে না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সফলতার সদুপায়, আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- মজুমদার লাইব্রেরি, প্রকাশস্থান-কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪
- এণ্ড্রি বল্লো, এইটেই তো স্বাভাবিক। আইন আমাদের ওপর যতটা কড়া, ওদের ওপর ততটা নয়। আর আমাদের চাইতে আইনের দরকারও ওদের বেশি। এইজন্যেই আইন যখন ওদের নিজেদের মাথায় ঘা দেয়, ওরা কাঁদলেও জোরে কাঁদেনা—নিজের লাঠি নিজের মাথায় পড়লে তত লাগেনা! ওদের কাছে আইন রক্ষা-কর্তা, আর আমাদের কাছে আইন শৃঙ্খল—যা’ আমাদের হাত-পা বেঁধে পঙ্গু, দুর্বল ক’রে রেখেছে, আমাদের আঘাত দেবার শক্তি লোপ করেছে।
- মাক্সিম গোর্কি, মা - ম্যাক্সিম গোর্কি, অনুবাদক- বিমল সেন, প্রকাশক- বর্মণ পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৮২
- বাংলার একজন সাহিত্যিক হিসাবে আমি এই প্রশ্ন ও প্রতিকারের দাবি তুলছি: সাধারণ আইনে প্রকাশ্য আদালতের বিচার যখন দেশের মানুষ আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত, তখন বিনা বিচারে আটক রাখার আইন কেন? বিদেশী শাসকের নামে রাস্তার নাম পর্যন্ত যখন অপমানজনক বিবেচিত হচ্ছে, তখন জাতীয় অপমানের প্রতীক ইংরেজের তৈরি বক্সা ক্যাম্পে বন্দীদের আটক রাখার ব্যবস্থাই বা কেন?
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, “ব ক্সা ক্যা ম্পে শি ল্পী - সা হি ত্যি ক”, লেখকের কথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬
- এই মুহুর্তে, একটি জরুরী প্রশ্ন উত্থাপিত হয়: ... একজন পুঙ্খানুপুঙ্খ ও পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করা কি আমাদের কর্তব্য; অথবা, বিপরীতভাবে, একটি সমগ্রের একটি অংশ মাত্র, একটি জীবের অঙ্গ? সংক্ষেপে, শ্রম বিভাজন, একই সাথে এটি প্রকৃতির একটি আইন, মানব আচরণেরও একটি নৈতিক নিয়ম; এবং, যদি এটি এই শেষোক্ত চরিত্রটি থাকে তবে কেন এবং কোন মাত্রায়?
- এমিল ডুর্খেইম (১৮৯৩), দ্য ডিভিশন অফ লেবার ইন সোসাইটি, ১৯৩৩, ১৯৪৭ সালে জর্জ সিম্পসন কর্তৃক ইংরেজি ভাষায় অনূদিত, পৃষ্ঠা ৪১
- ১৯৩০ সনের এপ্রিল মাসেই দেখা গেল আইন অমান্য আন্দোলন পূর্ণ উদ্যমে চলেছে; দেশের সর্বত্র শুধু লবণ আইন নয়, অন্যান্য বহু আইনও ভাঙা হচ্ছে। সমস্ত দেশ জুড়ে একটা অহিংস বিদ্রোহ দেখা দিল; সে বিদ্রোহকে দমন করবার জন্য সরকারও অতি দ্রুতবেগে বহু নূতন নূতন আইন এবং অর্ডিন্যান্স তৈরি করে ফেললেন। তখন আবার এই অর্ডিনান্সগুলোকেই ভেঙে আইন অমান্য করা হতে লাগল।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮৫
- যেখানে আইনের তর্ক ধরিয়াই কাজ হয়, সেই আদালতের উকিল শুদ্ধমাত্র তর্কের জোর ফলাইতে সাহস করেন না, জজের মন বুঝিয়া অনেক সময় ভাল তর্কও তাঁহাকে পরিত্যাগ করিতে হয়, অনেক সময় বিচারকের কাছে মৌখিক পরাভব স্বীকারও করিতে হয়—তাহার কারণ, জজ্ ত আইনের পুঁথিমাত্র নহেন, তিনি সজীব মনুষ্য। যিনি আইন প্রয়োগ করিবেন, তাঁহার সম্বন্ধে যদি এত বাঁচাইয়া চলিতে হয়, যিনি আইন সৃষ্টি করিবেন, তাঁহার মনুষ্যস্বভাবের প্রতি কি একেবারে দৃকৃপাত করাও প্রয়োজন হইবে না?
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সফলতার সদুপায়, আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- মজুমদার লাইব্রেরি, প্রকাশস্থান-কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭০
- ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের –এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে।
ওদের কিছু নেই
ভিটে নেই ভিত নেই রীতি নেই নীতি নেই
আইন নেই কানুন নেই বিনয় নেই ভদ্রতা নেই
শ্লীলতা-শালীনতা নেই।- অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ছন্নছাড়া [১]
- আমি আইন ব্যবসায়ী, কিন্তু আমি ব্যবসায় করিতে পারি নাই। কোন দুর্লঙ্ঘ্য অদৃষ্ট আমাকে ঐ ব্যবসায়ের সহিত বাঁধিয়া দিয়াছিল, কিন্তু আমার চিত্ত উহাতে প্রবেশ লাভ করিতে পারে নাই। আমি শিশুকাল হইতে সাহিত্য ভালবাসিতাম; কবিতার পূজা করিতাম, কল্পনার আরাধনা করিতাম; আমার চিত্ত তাই লইয়া জীবিত ছিল।
- রজনীকান্ত সেনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদনা- ড. বারিদবরণ ঘোষ, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ৭
- একজন মানুষের নিজের ভেতরেই আছে নিজের শাসনের সব প্রয়োজনীয় উপাদান। সে নিজের জন্য নিজেই আইন। তার জীবনে যা সত্যিকারের ভালো কিংবা মন্দ ঘটবে, তার উৎস সে নিজেই। শুধু সে-ই পারে নিজেকে ভালো করতে কিংবা আঘাত দিতে। তাকে কিছু দেওয়া যায় না, কেড়ে নেওয়াও যায় না—সবকিছুরই একধরনের প্রতিফল আছে। মানুষের আত্মা আর জগতের প্রতিটি বস্তু—নাকি বলা ভালো, যেগুলো সে চিনতে পেরেছে—সবকিছুর সঙ্গে এক গভীর মিল রয়েছে। বাইরের জিনিসগুলোকে আলাদাভাবে না দেখে, তার মূল সত্তার মধ্যে দিয়ে বোঝা যায়। প্রতিটি কাজ আমাদের নতুন এক জায়গায় নিয়ে যায়। জীবনের মানে, যেন নিজেকে চেনা। ভবিষ্যৎকে অন্যের মুখে শুনে নয়, তাকে বাঁচতে হয় এই মুহূর্তে, এই বাস্তবের ভিতরে। আর সর্বোচ্চ উপলব্ধি হল—ঈশ্বর আছেন, প্রতিটি মানুষের ভেতরেই।
- রাল্ফ ওয়াল্ডো এমারসন, ৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩; The Infinitude of the Private Man থেকে উদ্ধৃত
- যাহারা জ্ঞানের অহংকার করিয়া বেড়ায় তাহারাই যথার্থ মূর্খ, যাহারা অন্যায় করিয়া দেশের আইনকে ফাঁকি দেয়, তাহারা জানে না যে ভগবানের কাছে ফাঁকি চলে না। যে মানুষ খাওয়ায় পরায় অল্পতেই সম্ভষ্ট, সহজভাবে সরল কথায় সৎচিন্তায় সময় কাটায়, সেই সুখী—আধপেটা খাইয়াও সুখী, মানুষের নিন্দা অত্যাচারের মধ্যেও সুখী।
- সক্রেটিস - সুকুমার রায়, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০
- মুক্তি হলো এমন এক অবস্থা যেখানে ব্যক্তির প্রকৃতি নির্ধারিত নিজস্ব আইন ব্যতীত আর কোনো বিধিনিষেধ নেই; যেহেতু এই আইন কোনো বহিরাগত আইনপ্রণেতা দ্বারা আরোপিত নয় বরং অন্তর্নিহিত ও নিহিত, তাই এগুলো আমাদের মুক্তিকে সীমাবদ্ধ করে না বরং তা নিশ্চিত করে।
- মিখাইল বাকুনিন, প্যারিস কমিউন ও রাষ্ট্রের ধারণা উদ্ধৃত নোয়াম চমস্কি, নৈরাজ্যবাদ নিয়ে নোটস (১৯৭০)
- মনে আছে, ছাত্রাবস্থায় ও সাহিত্যিক জীবনের প্রথমদিকে ইংরেজের নিরাপত্তা আইনটা মনে করতাম আমার দেশের চরম অপমান, এ দেশের লোকের বিচারবুদ্ধি, মানবতা ও ন্যায়বোধ সম্পর্কে সীমাহীন অবজ্ঞার ঘোষণা। মনে হতো, আমরা আইন ও শৃঙ্খলা মানি, গণ-আন্দোলনের পথে ছাড়া অন্যায় আইন পর্যন্ত ভাঙি না, প্রকাশ্য বিচার মানি, তবু বিনা বিচারে আটক রাখার আইন দরকার— এ মিথ্যা নিন্দা আর অপমান কেন? এ প্রশ্নের আসল মানে ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হলো। ক্রমে বুঝতে পারলাম, বিনা বিচারের আইনটা, দেশবাসীর আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি স্বভাবনিষ্ঠ, ন্যায়বোধ, যুক্তিবোধ, নীতিবোধ ইত্যাদি সম্পর্কে শাসকগোষ্ঠির অবজ্ঞার নিদর্শন নয়, সভয় শ্রদ্ধারই প্রমাণ! জনসাধারণের ন্যায়বোধ, নীতিবোধ, বিচারবুদ্ধিতে ভেজাল থাকে না, গোষ্ঠিস্বার্থ ঠিক সেই জন্যেই প্রকাশ্য বিচার এড়িয়ে চলতে চায়।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, “ব ক্সা ক্যা ম্পে শি ল্পী - সা হি ত্যি ক”, লেখকের কথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪
- নারী পতিতা হইলে তাহার নাকি কোন মূল্যই থাকে না। তাহাকে অপমান করিলেও আইন অনুসারে ‘মান হানীর’ দাবী চলে না, কিন্তু ‘পতিত’ পুরুষের বেলায় এই আইনই কার্যকারী―কারণ, আইন প্রণেতা পুরুষ। আমার উকিল বলেন―আইনের এই ত্রুটির জন্যই, সুরুচী পতিতা নহে―এই মিথ্যা কথা বলিতে বাধ্য হইয়াছে। কংগ্রেস কাউন্সিলে যাঁহারা নারী পুরুষের সমানাধিকার দাবী করেন তাঁহারা কি আইন সভায় ইহার প্রতিকার প্রার্থী হইতে পারেন না?
- মানদা দেবী, শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- ময়মনসিংহ, প্রকাশসাল- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় লেখা
- সাড়ে পাঁচ বছর আগে জেল থেকে এই চিঠি লেখার পরে ভারতে অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। সে সময়েও আইন অমান্য আন্দোলন চলছিল—যদিও তার গতিবেগ মন্দীভূত হয়ে পড়েছিল, এবং বহুসংখ্যক কংগ্রেসকর্মী জেলে ছিলেন। স্বয়ং কংগ্রেস প্রতিষ্ঠান উহার সহস্র সহস্র শাখাসমতি ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ বে-আইনী বলে বিঘোষিত হয়েছিল। ১৯৩৪ মনে কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ করে দিল, সরকারও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল। আইন-সভা বর্জনের পুরোনো নীতি পরিবর্তিত করে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিশেষ সাফল্য অর্জন করল।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮৯
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় আইন সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে আইন শব্দটি খুঁজুন।