বিষয়বস্তুতে চলুন

আইন র‍্যান্ড

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
আইন র‍্যান্ড
আইন দ্বারা প্রয়োগকৃত অবাধ প্রতিযোগিতা' একটি ভয়াবহ বৈপরীত্য।

অ্যালিস ও'কনর (২ ফেব্রুয়ারী ১৯০৫ - ৬ মার্চ ১৯৮২), যিনি তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম আইন র‍্যান্ড সম্বোধনেই বেশি পরিচিত ছিলেন, তিনি একজন রুশ বংশোদ্ভূত আমেরিকান ঔপন্যাসিক, দার্শনিক , নাট্যকার এবং চিত্রনাট্যকার। আইন তার সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাস, দ্য ফাউন্টেনহেড এবং অ্যাটলাস শ্রাগডের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তিনি অবজেক্টিভিজম বা বস্তুনিষ্ঠবাদ নামের একটি বিশেষ দার্শনিক ব্যবস্থা বিকাশের জন্য পরিচিত।

র‍্যান্ড দার্শনিক হিসাবে যুক্তিবাদ-এর পক্ষপাতিত্ব করতেন এবং বিশ্বাস ও ধর্মের বিরোধী ছিলেন। তিনি যুক্তিবাদী স্বার্থপরতা এবং নৈতিক স্বার্থপরতা -এই দুই মতবাদের সমর্থক ছিলেন। পরার্থপরতাভোগবাদ -এর তত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রাজনীতিতে বলপ্রয়োগের সূচনা -কে তিনি অনৈতিক বলে নিন্দা করেছেন এবং লেসে-ফের ক্যাপিটালিজম (যার আক্ষরিক অর্থ; অসাধু পুঁজিবাদ) -এর ধারনার পক্ষে ছিলেন, যা তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

আইন উদারপন্থা-এর বিরোধিতা করেছিলেন, কারন এই ধারনাকে তিনি নৈরাজ্যবাদ হিসাবে বিবেচনা করতেন, তবুও তিনি আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে প্রায়ই সংযুক্ত হন। শিল্পকলায় তিনি রোমান্টিক বাস্তববাদ -এর প্রচার করেছেন। তিনি তার পরিচিত বেশিরভাগ দার্শনিক ও দার্শনিক ধারার তীব্র সমালোচনা করতেন (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)।

র‍্যান্ডের লিখিত বইয়ের বিশ্বব্যাপী ৩৭ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। তার কথাসাহিত্যের ধারা প্রাথমিকভাবে সাহিত্য সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, তবে পরবর্তী রচনাগুলো আরও বেশি নেতিবাচক পর্যালোচনার সম্মুখীন হয়। যদিও তার মৃত্যুর পর থেকে তার প্রণীত দার্শনিক ব্যাখা ও ধারনার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে তবে দর্শনশাস্ত্রের সনাতন ধারনার অনুসরনকারী দার্শনিকরা সাধারণত র‍্যান্ডের দর্শনকে উপেক্ষা বা প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের মতে, র‍্যান্ডের সমস্ত কাজে একটি বিতর্কমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় এবং তার কাজে পদ্ধতিগত কঠোরতার অভাব রয়েছে। তার লেখাগুলি কিছু ডানপন্থী এবং রক্ষণশীলদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে । বস্তুনিষ্ঠবাদের আন্দোলনের সময় জনসাধারণের কাছে এবং শিক্ষামূলক পরিবেশে তার ধারণাগুলি প্রচার করা হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • আশা করি আপনারা বুঝতে পারবেন কেন আমি একজন এমন ব্যক্তিকে চিঠি লেখার বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। তাকে আমি এমন এক দার্শনিক চিন্তার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি বলে মনে করি, তার প্রতি আমি আমার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
    • এইচ এল মেনকেনের কাছে লেখা চিঠি , ২৮ জুলাই, ১৯৩৪।

উই দ্যা লিভিং(১৯৩৬)

[সম্পাদনা]
  • তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, আন্দ্রেই? না। আমিও না। কিন্তু এটা আমার খুব প্রিয় প্রশ্ন। একটা উৎকট প্রশ্ন। জানো, তুমি কী বোঝাতে চাইছো? আচ্ছা, যদি আমি মানুষকে জিজ্ঞাসা করি যে তারা জীবনে বিশ্বাস করে কিনা, তাহলে তারা কখনই আমার প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারবে না। এটা একটা খারাপ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের এত বেশি ব্যাখা আছে যে আখেরে প্রশ্নটাই নিরর্থক হয়ে ওঠে। তাই আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি তারা কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে? আর যদি তারা বলে যে তারা বিশ্বাস করে - তাহলে, আমি জানি তারা জীবনে বিশ্বাস করে না। কেন? কারণ, তুমি দেখো, ঈশ্বর-অথবা তাকে তুমি যে নামেই সম্বোধন কর - তিনি হলেন সর্বোচ্চ সম্ভাবনার স্তর, সর্বোচ্চ ধারণা। আর যে সেই সর্বোচ্চ ধারণাকে তার নিজের সম্ভাবনার উপরে রাখে সে নিজেকে এবং তার নিজের জীবনকে খুব কমই গুরুত্ব দেয়। তুমি জানো, নিজের জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করা এবং নিজের জন্য সেরা, সর্বোচ্চতা অথবা সর্বশ্রেষ্ঠতার আশা করা একটি বিরল উপহার। কোন ব্যাক্তি যদি স্বর্গের কল্পনা করে তাহলে কেবলমাত্র এই বিষয়ে স্বপ্ন না দেখে তার বাস্তবতার দাবি করা সবচেয়ে বেশি জরুরী।
    • প্রথম ভাগ, অধ্যায় ৯।
  • কর্তব্য বলে কিছু নেই। যদি তুমি জানো যে কোন কাজটা সঠিক, তাহলে তুমি সেই কাজ স্বচ্ছন্দে করতে চাইবে। যদি তুমি নিজে থেকে কোন কাজ করতে না চাও - তাহলে অবশ্যই সেই কাজটি সঠিক কাজ নয়। কিন্তু যদি কোন কাজ সঠিক কাজ হিসাবে পরিগনিত হওয়ার পরেও তুমি সেই কাজ করতে না চাও - তাহলে ঠিক-ভুল সম্পর্কে তোমার কোনও ধারনা নেই এবং তুমি পুরুষ নও।
    • প্রথম অংশ অধ্যায় ৬
  • একটাই জিনিস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাই আমরা মনে রাখব। বাকি সবকিছু তুচ্ছ। জীবন আমাদের সঙ্গে কী করবে বা কেমন হবে, আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু আমরা কোন অবস্থাতেই ভেঙে পড়বনা- না তুমি, না আমি। এটাই আমাদের জীবনযুদ্ধের অন্যতম শক্তি, আমাদের বিজয়পতাকা যা আমরা আমাদের শত্রুদের সম্মুখে সগৌরবে তুলে ধরব। ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে আমাদের যদি এইটুকু বদ্ধমূল ধারনা থাকে, তাহলেই তা যথেষ্ট।
  • ঈশ্বর একজন মানুষের মধ্যেকার সর্বোচ্চ অস্তিত্ব হতে পারেনা, সর্বোচ্চ হল সেই ভাব-ভক্তি যা তাকে ঈশ্বরের প্রতি সম্মান জানাতে শেখায়; তাকে তার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা সম্পর্কে অবগত করায়।
    • শেষ পৃষ্ঠা
  • এক মুহূর্ত না অনন্তকাল—এটা কি গুরুত্বপূর্ণ? জীবন, অপরাজিত, অস্তিত্বময় এবং প্রবাহমান। ভবিষ্যৎ জীবনে যা কিছু হতে পারত সেই সমস্ত সম্ভাবনার প্রতি সে হাসল, তার শেষ হাসি।
  • আমি অস্তিত্বশীল, চিন্তাশীল এবং কর্ম সম্পাদনের জন্য সদা ততপর।
  • আমার অস্তিত্বের জন্য কোনো অনুমতিপত্রের প্রয়োজন নেই, কিংবা কোনো অনুমোদনেরও দরকার নেই। আমি নিজেই আমার অস্তিত্বের অনুমতিপত্র এবং অনুমোদন।
  • আর এখন আমি ঈশ্বরের মুখ দেখতে পাচ্ছি, ঈশ্বর-যাকে আমি জাগতিক সবকিছুর উর্দ্ধে উত্থিত করেছি। সেই ঈশ্বর যাকে মানুষ সৃষ্টির পর থেকে খুঁজছে। সেই ঈশ্বর যিনি তাদের আনন্দ, শান্তি এবং গর্ব দেবেন। সেই ঈশ্বর, যাকে কেবল একটি মাত্র শব্দের সাহায্যে বর্ননা করা যায়: আমি
  • অন্যরা যে লক্ষ্য অর্জন করতে চাইবে, আমি তার মাধ্যম নই। আমি তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যাবহার্য হাতিয়ারও নই। না আমি তাদের আজ্ঞাবহ দাস, না আমি তাদের ক্ষতের পট্টি। তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বেদিতে উতসর্গিকৃৎ বলিও নই আমি।
  • অন্য মানুষ ছাড়া আর কেউই একজন মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারে না। মুক্ত হতে হলে একজন মানুষকে তার সহমানবদের থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
  • এই যে বিস্ময়কর আমার "আমিত্ব"- ইহা আমার নিজস্ব, স্বরক্ষিত, নিজ ব্যাবহার্য এবং আমি তার সামনে নতজানু হই। আমার আত্মার ঐশ্বর্য কোনোও পিতলের মুদ্রার সাথে তুলনীয় নয়— যা অবজ্ঞাভরে আত্মাহীনদের নিকট দান করা যাবে।
  • আমি মানুষের মধ্যে থেকে বন্ধু নির্বাচন করব, কিন্তু সে যেন অবশ্যই আমার দাস বা প্রভু না হয়ে ওঠে। আমি কেবল তাদেরই বন্ধু হিসাবে নির্বাচন করব যারা আমাকে খুশি রাখবে এবং আমিও তাদের ভালোবাসব এবং সম্মান করব। কিন্তু তাদের আমি কোন অবস্থাতেই আদেশ করবনা বা তাদের আনুগত্য স্বীকারও করব না। আমরা যখন ইচ্ছা তখন আমি তাদের সঙ্গ দেব অথবা যখন ইচ্ছা তখন একাকী বিচরন করব।
  • তার আত্মার মন্দিরে প্রতিটি মানুষ একা।
  • খুব বেশি আনন্দ অনুভব করাটা ভালো নয়, আমাদের দৈহিক আবরনের সজীবতার কারনেও আমাদের খুশি হওয়া উচিত নয়। কারণ আমাদের মরন-বাঁচন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের সহমানবরা, সঙ্গীরা যা চায়, সেটাই হওয়া উচিত। আমরা জীবিত থাকতে পেরে আনন্দিত। কিন্তু এটা যদি কোনো দোষ হয়, তবে আমাদের কোনো গুণের আকাঙ্খা নেই।
  • একক কোনো ব্যক্তির প্রজ্ঞা, নির্বাচিত সকল পণ্ডিতের সম্মিলিত জ্ঞানকে অতিক্রম করতে পারে না—এই বিশ্বাসই সমাজের ভিত্তি। কিন্তু আমরা পারি। আমরা তা করি। বহুদিন ধরে আমরা এই সত্য উচ্চারণ থেকে নিজেকে সংযত রেখেছিলাম, কিন্তু আজ তা বললাম—নিঃসংশয়ে। এখন আর পরোয়া করি না। আমরা ভুলে গেছি মানুষকে, সমাজকে, আইনকে। এখনও অজানার দিগন্তে অসংখ্য জিজ্ঞাসা পড়ে আছে! সামনে বিস্তৃত এক দীর্ঘ পথ, আর আমরা তাতে একা চলতে প্রস্তুত। যদি নিঃসঙ্গতা হয় জ্ঞানের মূল্য, তবে সেই নিঃসঙ্গতাই আমাদের আনন্দ।
  • প্রকৃতি দর্শনের মাধ্যমে মানুষ যে এক বিশেষ পবিত্র উল্লাস অনুভবের দাবি করে—সেই অনুভূতি আমি তা প্রকৃতি দেখে পাইনি, পেয়েছি মানুষনির্মিত স্থাপত্য দেখে, আকাশচুম্বী সব দালান দেখে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সূর্যাস্ত দেখার বদলে আমি নিউ ইয়র্ক শহরের গগনরেখা একবার দেখতে চাই। সেই সকল স্থপতি, যাদের চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ এই দৃশ্য।নিউ ইয়র্কের আকাশ, আর মানুষের দৃঢ় ইচ্ছা—দৃশ্যমান রূপে। আর কী ধর্মের প্রয়োজন আমাদের?
    অথচ মানুষ তীর্থযাত্রায় যায়—জঙ্গলের ভেতর এক স্যাঁতসেঁতে, রোগ-জর্জর স্থানে, যেখানে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক ভাঙাচোরা মন্দিরের সামনে, এক বিকৃত মুখের, স্থূল, দৈত্যাকার এক পাথরের সামনে, যাকে সৃষ্টি করেছে কোনো কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত বর্বর। সৌন্দর্য ও প্রতিভা যদি মানুষকে আকর্ষণ করে, যদি তারা মহত্বের এক বোধ খুঁজে বেড়ায়—তবে আসুক তারা নিউ ইয়র্কে, হাডসন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সম্মুখের দৃশ্য অবলোকন করুক, হাঁটু গেঁড়ে বসে শ্রদ্ধা জানাক তার মহত্বকে।
    যখন আমি আমার জানালা থেকে এই শহরকে দেখি, তখন আমি আমার ক্ষুদ্র অস্তিত্বের কথা ভাবি না, বরং আমি অনুভব করি, যদি কখনো যুদ্ধ আসে, এই শহরকে ধ্বংস করার জন্য, তখন আমি নিজে এই শহরের ঢাল হয়ে উঠব, আমার দেহ দিয়ে রক্ষা করি এই গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলোকে।
    • দ্যা ফাউন্টেনহেড (১৯৪৩)
  • একজন ব্যক্তিবাদী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি বলেন: "আমি কারো জীবন চালনা করবনা অথবা কাউকে আমার নিজের জীবন চালাওনা করতে দেব না। আমি শাসন করব না বা শাসিত হব না। আমি প্রভুও হবনা অথবা কারো দাসও হব না। আমি কারো কাছে নিজেকে উৎসর্গ করব না - অথবা নিজের কাছে কাউকে উৎসর্গ হতে দেবনা।"
    • টেক্সটবুক অফ আমেরিকানিজম(১৯৪৬)[১]
  • "আইন দ্বারা আরোপিত মুক্ত প্রতিযোগীতা"- যদিও নামে মুক্ত প্রতিযোগীতা, কিন্তু সে আইন দ্বারা পরিচালিত- এ এক অদ্ভুত পরিহাসকারী শব্দবন্ধ।
    • অ্যান্টিট্রাস্ট দ্য রুল অফ আনরিজন- দ্য অবজেক্টিভিস্ট নিউজলেটার (ফেব্রুয়ারী ১৯৬২) পৃষ্ঠা ১।
  • আমি মূলত পুঁজিবাদের সমর্থক নই, বরং অহংকারবাদ(ইগোইজম) -এর দিকেই আমার বিশেষ সমর্থন আছে এবং আমি পুরোপুরি অহংকারবাদেরও সমর্থক নই, বরঞ্চ সঠিকভাবে চিন্তা করলে আমি যুক্তিবাদের সমর্থক। যদি কেউ যুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে এবং তা ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে বাকি সবকিছুই সে অনুসরণ করতে পারবে।
    • ইন্ট্রোডিউসিং অব্জেক্টিভিসম- দ্য অবজেক্টিভিস্ট নিউজলেটার, খণ্ড ১, নং ৮, (আগস্ট ১৯৬২), পৃষ্ঠা ৩৫।
  • বস্তুনিষ্ঠতাবাদ একটি দার্শনিক আন্দোলন। যেহেতু রাজনীতি দর্শনের একটি শাখা তাই বস্তুনিষ্ঠতাবাদ কিছু রাজনৈতিক নীতির সমর্থন করে- বিশেষ করে, অবাধ পুঁজিবাদের নীতিগুলিকে এবং তাদের অন্তর্গত মৌলিক দার্শনিক নীতিসমূহ এবং তাদের চূড়ান্ত ব্যবহারিক প্রয়োগকে সমর্থন করে। বস্তুনিষ্ঠতাবাদ রাজনীতিকে একটি পৃথক বা প্রাথমিক লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে না, বরঞ্চ রাজনীতি বস্তুনিষ্ঠবাদের অন্তর্গত একটি সামগ্রিক লক্ষ্য যা একটি বৃহত্তর আদর্শিক প্রেক্ষাপট ছাড়াই অর্জন করা যেতে পারে। . . . বস্তুনিষ্ঠরা রক্ষণশীল নন। আমরা পুঁজিবাদের জন্য উগ্রপন্থা অবলম্বন করেছি। আমরা সেই দার্শনিক ভিত্তির জন্য লড়াই করছি যা পুঁজিবাদের অংশ ছিল না, যে দার্শনিক ভিত্তির অভাবে এটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
    • চ্যুস ইয়োর ইস্যুস-দ্য অবজেক্টিভিস্ট নিউজলেটার, ভলিউম ১, নং ১ (১৯৬২)
  • কমিউনিজম এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই; শুধুমাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের যে উপায় ছাড়া। কমিউনিজম বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মানুষকে দাসত্বে আবদ্ধ করার প্রস্তাব দেয় এবং সমাজতন্ত্রে সেই একই জিনিষ করা হয় জনগনের ভোটগ্রহনের মাধ্যমে। হত্যা এবং আত্মহত্যার মধ্যে যা পার্থক্য, কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্রের মধ্যেও ঠিক তাই।
    • "বিদেশ নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অস্ত্রশস্ত্র খর্ব করছে," লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস , ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬২, জি২ — দ্য আইন র‍্যান্ড লেক্সিকন : অবজেক্টিভিজম ফ্রম এ টু জেড (১৯৮৬) -এ প্রকাশিত।[২]
  • মহত্ত্ব কী? এর উত্তরে জন গাল্ট নির্দেশিত জীবনযাপনের তিনটি মৌলিক মূল্যবোধের কথা বলা যায়: যুক্তি, উদ্দেশ্য এবং আত্মসম্মান।
    • প্লেবয় ইন্টারভিউ(১৯৬৪)

দ্যা ভার্চিউ অফ সেলফিশনেস(১৯৬৪)

[সম্পাদনা]

এই সংগ্রহে ন্যাথানিয়েল ব্র্যান্ডেনের উদ্ধৃত ১৯৬৩ সালের একটি প্রবন্ধ রয়েছে ।

  • মানুষই একমাত্র জীবিত প্রজাতি যার নিজেকে, নিজ স্বজাতিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে- এবং ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় ধরে মানুষ সেই কাজই করে চলেছে।
  • যারা যুক্তির মাধ্যমে নয় বরং বল প্রয়োগের মাধ্যমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে, তারা আসলে পশুদের মতোই বেঁচে থাকে।
  • অযৌক্তিক ইচ্ছার পিছনে ছুটে জীবন বা সুখ কোনটাই অর্জন করা সম্ভব নয়। মানুষ পরজীবী, ছিনতাইকারী বা লুটেরা হিসেবে যেকোনো উপায়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে সে সফলতা অর্জন করতে পারে না - তেমনই সে মানুষ যদি কোন অযৌক্তিক প্রতারণা, ভ্রান্তিকর ইচ্ছা ইত্যাদির মাধ্যমে বাস্তবতা থেকে পলায়নের মাধ্যমে তার সুখ খুঁজতে চায়, তাহলেও সে তার চূড়ান্ত পরিণতির থেকে বাঁচতে পারেনা।
    • কখনও কখনও আপনি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারেন, কিন্তু সেই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার পরিণতি যে অবস্যম্ভাবী, তা ব্যাখ্যা করার জন্য এই উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ টানা হয়।
  • সরকারের একমাত্র যথাযথ, নৈতিক উদ্দেশ্য হল মানুষের অধিকার রক্ষা করা; তাকে শারীরিক সহিংসতা থেকে রক্ষা করা। তাদের নিজের জীবন, নিজের স্বাধীনতা, নিজের সম্পত্তি এবং নিজের সুখ অর্জনের অধিকার রক্ষা করা। সম্পত্তির অধিকার ছাড়া অন্য কোনও অধিকার সম্ভব নয়।
  • যখন আমি পুঁজিবাদ -এর উল্লেখ করি, তখন আমি একটি পূর্ণাঙ্গ, বিশুদ্ধ, অনিয়ন্ত্রিত, অনিয়ন্ত্রিত অবাধ পুঁজিবাদকেই বোঝাই - যার মধ্যে রাষ্ট্র এবং অর্থনীতির পৃথকীকরণ করা হয়েছে- ঠিক যেমনভাবে, রাষ্ট্র এবং গির্জার পৃথকীকরণ করা হয়।
  • দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, অসুস্থতা এবং এই ধরণের অন্যান্য সমস্যা জরুরি অবস্থার অধীন নয়। মানুষের অস্তিত্ব ও তার প্রকৃতি অনুসারে, সে তার নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার জীবন বজায় রাখতে সক্ষম হয়। তার প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ - যেমন সম্পদ বা জ্ঞান -এই সবকিছু প্রকৃতির উপহার হিসাবে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেওয়া হয় না, বরং তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং কাজের মাধ্যমে সেই সবকিছু আবিষ্কার এবং অর্জন করতে হয়।
  • ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি থেকে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ মেশিনগানের গুলির পরোয়া না করে, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন দেখে, তখন আর বিশ্বাস করা যায় না যে সমাজতন্ত্রের ভাবনা কোনোভাবেই দানশীলতা এবং মানুষের কল্যাণ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত।
  • সমাজতন্ত্রের কথা বিবেচনা করলে এর তাতক্ষনিক প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেকে বোকা বানাবেন না। মনে রাখবেন যে মানবাধিকার বনাম সম্পত্তির অধিকার -এই দুইয়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ নেই। সম্পত্তির অধিকার ছাড়া কোনও মানবাধিকারের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
  • পুঁজিবাদই একমাত্র ব্যবস্থা যেখানে এই বিশেষ ধরণের মানুষেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে- যেখানে সমৃদ্ধি, ভোগ এবং জীবনের উপভোগের সাধারণ স্তরের ক্রমাগত বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে অগ্রগতি আসে- জোরপূর্বক এবং বঞ্চনার মাধ্যমে নয়।
  • রাজনীতিতে লক্ষ্য করুন, "চরমপন্থা" শব্দটি আজকাল প্রায়ই "অসৎ" বা "অকল্যাণকর"-এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়—তা সে যে প্রসঙ্গেই ব্যবহার হোকনা কেন।(আপনি কোন বিষয়ে চরমপন্থার অনুসরন করেছেন তা গুরুত্বহীন , বরং আপনি যে চরমপন্থী—অর্থাৎ, আপনি আপনার যুক্তিতে স্থির ও ধারাবাহিক—সেটাই কারোর কারোর কাছে সমস্যার বিষয়।)
  • যেহেতু কেবলমাত্র একজন একক ব্যক্তিই অধিকার পেতে পারে, তাই "ব্যক্তিগত অধিকার" অভিব্যক্তিটি অপ্রয়োজনীয়(যা আজকের বৌদ্ধিক বিশৃঙ্খলার স্পষ্টীকরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হয়)। কিন্তু "সম্মিলিত অধিকার" অভিব্যক্তিটি পরিভাষার দিক থেকে একটি স্ববিরোধী ধারণা।
  • মানুষের অধিকার কেবল শারীরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই লঙ্ঘিত হতে পারে। কেবলমাত্র শারীরিক শক্তির মাধ্যমেই একজন মানুষ অন্য একজনকে তার জীবন থেকে বঞ্চিত করতে পারে অথবা তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে পারে; তার অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে; তাকে তার নিজস্ব লক্ষ্য অর্জন থেকে বিরত রাখতে পারে অথবা তাকে তার নিজস্ব যুক্তিসঙ্গত বিচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করতে পারে।
  • যেকোনো "সামগ্রিক" গোষ্ঠী বড় বা ছোট হিসাবে বিবেচিত হয় কেবলমাত্র তার অন্তর্ভুক্ত সদস্যের সংখ্যার মাধ্যমে। একটি গোষ্ঠীর তার স্বতন্ত্র সদস্যদের অধিকার ছাড়া অন্য কোনও অধিকার থাকতে পারে না।
  • যখন একজন মানুষ ঘোষণা করে: "নৈতিকতায় সাদা বা কালো বলে কিছু নেই", তখন তিনি আসলে একটি মানসিক স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হলো: "আমি পুরোপুরি সৎ হতে প্রস্তুত নই—আর অনুগ্রহ করে আমাকে পুরোপুরি অসৎও ভাববেন না!"
  • জ্ঞানের ত্রুটি নীতির লঙ্ঘন নয়; কোনও সঠিক নৈতিক নিয়মই অভ্রান্ততা বা সর্বজ্ঞতার দাবি করতে পারে না।
  • বর্ণবাদ হলো সমষ্টিবাদের সবচেয়ে নীচু, সবচেয়ে অভদ্র আদিম রূপ। এটি একজন মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য, তার বংশগতির সাথে নৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক তাৎপর্য আরোপ করার ধারণা। এই ধারণা অনুসারে একজন মানুষের বৌদ্ধিক এবং চারিত্রিক সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ তার দেহের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন হয়। যার অর্থ, বাস্তবে, একজন মানুষকে তার নিজস্ব চরিত্র এবং কর্ম দ্বারা নয়, বরং তাদের পূর্বপুরুষদের চরিত্র এবং কর্ম দ্বারা বিচার করা হবে।
    বর্ণবাদ এমন একটি মতবাদ যা দাবি করে যে একজন মানুষের মননশীলতা (তার জ্ঞানলব্ধ ক্ষমতা নয়, বরং তার মানসিক উপাদান) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত; অর্থাৎ একজন মানুষের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও চরিত্র জন্মের আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়- এমন সব ভৌত শক্তির দ্বারা যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটি আদিম মানবের জন্মগত ধারণা বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান-এর এক বিকৃত রূপ—যা দর্শন ও বিজ্ঞান দ্বারা সম্পূর্ণভাবে খণ্ডিত হয়েছে। বর্ণবাদ একটি অমানবিক মতবাদ—যা শুধুমাত্র অসভ্য, বর্বরের জন্য তৈরি। এটি আসলে পশুপালনের চিন্তাধারারই এক সামগ্রিক রূপ, যার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব, কিন্তু প্রাণী ও মানুষের মধ্যে পৃথকীকরণ সম্ভব নয়।
  • একজন প্রতিভাবান মানুষ প্রতিভাশালীই হয়, তার স্বজাতিতে যত মূর্খই থাকুক না কেন—আর একজন মূর্খ কেবল মূর্খই হবে, তার স্বজাতিতে যত সংখ্যক প্রতিভাবান মানুষের অস্তিত্ব থাকুক না কেন।
  • নিউ ইয়র্কের আকাশরেখার অনবদ্য অনাবিল দৃশ্যপট, যা চিরকালের জন্য স্মৃতিতে উজ্বল হয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট, তার সাথে কোনও পিরামিড বা প্রাসাদের তুলনা হয়না।
  • যেসব যুক্তির মাধ্যমে শারীরিক বলপ্রয়োগকে নেতিবাচক করে তোলা হয়, সেই একই যুক্তির মাধ্যমে প্রতিশোধের হেতু শারীরিক বলপ্রয়োগকে নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসাবে প্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়।
  • ব্যক্তির অধিকার হলো সমাজকে নৈতিক আইনের অধীনে অধীনস্থ করার মাধ্যম।
  • কোন কিছুকে গ্রহন করার সঠিক মানসিকতা হল, সমস্ত পরিস্থিতিকে বিচার করা এবং যে কোন পরিস্থিতিতে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা।
  • নিজেকে জিজ্ঞাসা করো কেন একনায়কতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী তাদের নিজেদেরই অসহায়, শৃঙ্খলিত, নিস্তব্ধ প্রজা- যাদের কোনো প্রতিবাদ বা আত্মরক্ষার উপায়ই নেই, তাদের জন্যও বিপুল অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে প্রচারণা চালাতে বাধ্য হয়। এর উত্তর হলো: সবচেয়ে বিনয়ী কৃষক বা সর্বনিম্ন স্তরের আদিম মানুষটিও একদিন অন্ধ বিদ্রোহে ফেটে পড়তে পারে, যদি সে বুঝতে পারে যে তাকে উৎসর্গ করা হচ্ছে কোনো দুর্বোধ্য মহান উদ্দেশ্যের জন্য নয়, বরং নিছক, নির্লজ্জ মানবিক অসুরত্বের জন্য।
  • সব ভোগবাদী ও পরার্থবাদী মতবাদে যে নৈতিক নরখাদকতা নিহিত আছে তার মূল অর্থ হল এই যে—একজন মানুষের সুখ অর্জনের জন্য অপর একজনের ক্ষতি অনিবার্য।
  • ব্যক্তিগত অধিকার জনমতের অধীন নয়; সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো অধিকার নেই সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার। যেকোন সামাজিক অধিকারের রাজনৈতিক কার্যকারিতাই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের দমন-পীড়ন থেকে সংখ্যালঘিষ্ঠদের সুরক্ষা দেওয়া (এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র সংখ্যালঘিষ্ঠ হলেন ব্যক্তি নিজেই)।
  • যেহেতু জনসাধারণ নামে কোনো সত্তা বাস্তবে নেই—জনসাধারণ মানে কেবল একাধিক ব্যক্তির সমন্বয় মাত্র, তাই জনস্বার্থব্যক্তিগত স্বার্থ -এই দুইয়ের মধ্যে যেকোনো দাবি বা ইঙ্গিতপূর্ণ দ্বন্দ্ব আসলে এই তত্ত্বকে বোধগম্য করে তোলে যে কিছু মানুষের স্বার্থকে অন্যদের স্বার্থ ও ইচ্ছার জন্য বলি দেওয়া হবে। এই সুবিধাজনকভাবে অসংজ্ঞায়িত ধারণাটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীরা তাদের নিজ সুবিধার্থে কি ভাবে ব্যাবহার করবে তার উপর জনসাধারন নামক শব্দবন্ধের সামগ্রিক প্রকাশ নিরভর্শীল; কিভাবে তারা এই ধারনার ব্যাবহার করে নিজ অস্তিত্বের প্রমাণ দেবে এবং বন্দুকের ক্ষমতার জোরে তাদের নিজস্ব দাবি বজায় রাখবে, তার উপরই সমস্ত কিছু নির্ভর করে।
    • অধ্যায় ১১, দ্যা মনুমেন্ট বিল্ডার্স

পুঁজিবাদ: অজানা আদর্শ(১৯৬৬)

[সম্পাদনা]
  • অহংকার ও মৌল নীতিতে আপস করার নৈতিক ব্যর্থতার ফলেই অশুভতা ছড়িয়ে পড়ে—এটি একটি শূন্যতার লক্ষণমাত্র। যখনই অশুভ জয়ী হয়, তা ঘটে কেবলমাত্র শুভবোধের অনুপস্থিতির কারণে: সেইসকল ব্যাক্তিবর্গের নৈতিক ব্যর্থতার কারণে, যারা এই সত্য এড়িয়ে চলে যে মৌলিক নীতিগুলোর ক্ষেত্রে কোনো আপসের স্থান নেই।
  • পুঁজিবাদী সমাজে সকল মানবিক সম্পর্ক স্বেচ্ছামূলক। ব্যাক্তি তাদের নিজস্ব বিচার, বিশ্বাস এবং স্বার্থ অনুসারে অন্যের সাথে সহযোগিতা করতে বা নাও করতে পারে। সে একে অপরের সাথে সামাজিকভাবে আচরণ করবে কি না করবে সেটা তার সম্পূর্ণ নিজস্ব ইচ্ছা।
  • স্ট্যাটিজম বা পরিসংখ্যান হল প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতা এবং চিরস্থায়ী গৃহযুদ্ধের একটি ব্যবস্থা। স্ট্যাটিজম রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য লড়াই করা ছাড়া মানুষের কাছে আর কোন বিকল্প রাখে না। লুন্ঠন করো বা লুন্ঠিত হও, হত্যা করো বা অন্যের হাতে নিহত হও...স্ট্যাটিজম লুটপাটের মাধ্যমে টিকে থাকে; কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ তার উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে টিকে থাকে।
    • অধ্যায় ২, রুটস অফ ওয়ার
  • আমেরিকার প্রাচুর্য জনসাধারণের কল্যাণের জন্য বা জনসাধারণের ত্যাগের দ্বারা তৈরি হয়নি বরং সেইসকল স্বাধীন মানুষের উৎপাদনশীলতার দ্বারা তৈরি হয়েছিল যারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং নিজ ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য তৎপর ছিলেন। আমেরিকা তার শিল্পায়নের জন্য জনগণকে অনাহারে রাখেনি বরং তারা তাদের উদ্ভাবিত প্রতিটি নতুন যন্ত্রের মাধ্যমে, প্রতিটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে জনগণের আরও ভাল এবং উচ্চ মজুরিসহ কর্মক্ষেত্রের ব্যাবস্থা করেছে, আরও সস্তায় পণ্য সরবরাহ করেছে - এবং এইভাবে পুরো দেশ এগিয়ে চলেছে এবং তাদের আগ্রগতির পথে তারা কোনভাবেই দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে না, উপরন্তু লাভবান হচ্ছে।
  • অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় ইতিবাচক মাধ্যমে, মানুষকে পুরষ্কার, প্রণোদনা, অর্থ প্রদান, মূল্য প্রদানের মাধ্যমে; রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় নেতিবাচক মাধ্যমে, শাস্তি, আঘাত, কারাবাস, ধ্বংসের হুমকির মাধ্যমে। ব্যবসায়ীর হাতিয়ার হল মূল্যবোধ; আমলাদের হাতিয়ার হল ভয়।
  • বন্দুকের সম্মুখে কোনও তর্ক প্রস্তুত করা যায়না।
  • যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ সামগ্রিক ভাবে এই ধারণা পোষণ করছে যে ব্যক্তিকে সমষ্টির জন্য বলিদান দিতে হবে, কিছু মানুষের বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্যদের শাসন করার অধিকার আছে এবং কিছু তথাকথিত নৈতিক ধারণার নিরিখে তাদের সেই সমস্ত কার্যক্রমকে ন্যায্যতা দেওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও জাতি বা সমাজের অন্দরে শান্তি থাকবেনা এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক শান্তিও বজায় থাকবেনা।
  • যখন একটি সমাজের সাধারণ কল্যাণকে তার সদস্যদের ব্যক্তিগত কল্যাণ থেকে আলাদা এবং শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়, তখন এর অর্থ হল কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের কল্যাণের জন্য অন্যদের গুরুত্ব না দেওয়া এবং তাদেরকে খরচের খাতায় ফেলে দেওয়া।
  • জোর করে যদি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেষ্টা করা হয় তাহলে তা একজন মানুষের দৃষ্টিশক্তি বিনষ্ট করার পর তাকে চিত্রশালায় নিয়ে যাওয়ার সমতুল্য।
  • ব্যবসায়ীরা হলেন একমাত্র গোষ্ঠী যা পুঁজিবাদ এবং আমেরিকান জীবনধারাকে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রতন্ত্র থেকে আলাদা করে। অন্যান্য সমস্ত সামাজিক গোষ্ঠী যেমন, শ্রমিক, কৃষক, পেশাদার পুরুষ, বিজ্ঞানী, সৈনিক- একনায়কতন্ত্রের অধীনে তারা সকলেই বিদ্যমান, যদিও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে, সন্ত্রাসের মধ্যে দুর্দশাময় জীবনযাত্রা পালনের ফলে তারা আত্ম-ধ্বংসের পথমে অগ্রগামী, কিন্তু একনায়কতন্ত্রের অধীনে ব্যবসায়ীদের মতো কোনও দল নেই। তাদের স্থান দখল করে আছেছে সশস্ত্র গুন্ডারা: আমলা এবং কমিশনপ্রাপকরা। ব্যবসায়ীরা একটি মুক্ত সমাজের প্রতীক - আমেরিকার প্রতীক।
  • অর্থনীতিতে সরকারের প্রতিটি হস্তক্ষেপের মানেই হলকিছু মুষ্টিমেয় মানুষকে অন্যদের ক্ষতির বিনিময়ে বলপ্রয়োগ করে অর্জিত, অনার্জিত সুবিধা প্রদান করা।
  • প্রত্যেকটি আন্দোলন যা একটি দেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়, প্রত্যেকটি একনায়কতন্ত্র বা সম্ভাব্য একনায়কতন্ত্র—তাদের প্রয়োজন হয় কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে বলির পাঁঠা বানানোর, যাকে তারা জাতির সংকটের জন্য দোষারোপ করতে পারে এবং নিজেদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার দাবি বৈধ করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। সোভিয়েত রাশিয়ায় সেই বলির পাঁঠা ছিল বুর্জোয়া শ্রেণি; নাৎসি জার্মানিতে তা ছিল ইহুদি জনগোষ্ঠী; আর আমেরিকায়, তা হলো ব্যবসায়ী শ্রেণি।
  • যদি কেউ না জানে যে সে কিসের জন্য লড়াই করছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা বৃথা।
  • মনে রাখবেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম সংখ্যালঘু হল ব্যক্তি। যারা ব্যক্তিগত অধিকার অস্বীকার করে, তারা সংখ্যালঘুদের রক্ষক বলে নিজেদেরকে দাবি করতে পারে না।
    • অধ্যায় ৩, আমেরিকা'স প্রেসিকিউটেড মাইনোরিটি: বিগ বিজনেস, পৃষ্ঠা ৬১।
  • পুঁজিবাদ পৃথিবীতে সর্বকালের সর্বোচ্চ জীবনযাত্রার মান তৈরি করেছে। এর অকাট্য প্রমাণ মজুত আছে। পশ্চিম এবং পূর্ব বার্লিনের মধ্যে জীবনযাত্রার বৈপরীত্যই হল সর্বশেষ প্রমাণ। এটি যেন এক সামগ্রিক পরীক্ষাগার। তবুও যারা দারিদ্র্য দূরীকরণের আকাঙ্ক্ষার কথা সবচেয়ে বেশি উচ্চস্বরে ঘোষণা করে তারাই সবচেয়ে জোর গলায় পুঁজিবাদের নিন্দা করে। মানুষের মঙ্গল তাদের লক্ষ্য নয়।
  • যারা বিশ্বাস করেন যে উচ্চ জীবনযাত্রার মান হলো শ্রমিক সংঘের অস্তিত্ব এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ অর্জন, তাদের উচিত নিজেকে নিম্নলিখিত প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার: যদি কারো কাছে একটি সময়যান থাকত এবং তার মাধ্যমে আমেরিকার ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক নেতাদের সাথে সাথে ত্রিশ লক্ষ সরকারি আমলাদের দশম শতাব্দীতে নিয়ে যাওয়া হত, তাহলে কি তারা মধ্যযুগীয় ভূমিদাসদের বৈদ্যুতিক আলো, রেফ্রিজারেটর, অটোমোবাইল এবং টেলিভিশন সেট সরবরাহ করতে সক্ষম হতেন?
  • রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে বহু শতাব্দীর বৌদ্ধিক ও দার্শনিক বিকাশের প্রয়োজন হয়েছিল। এটি ছিল এক দীর্ঘ সংগ্রাম, যা অ্যারিস্টটল, জন লক ইত্যাদির হাত ধরে আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের কাছে পৌঁছায়। যে শাসনব্যবস্থা তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন, তা সীমাহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতার শাসনের ভিত্তিতে নয়, বরং তার বিপরীতে—ব্যক্তিস্বত্বার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট কিংবা সংখ্যালঘুর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া যাবে না। ব্যক্তিকে তাঁর প্রতিবেশী বা শাসকদের দয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। সংবিধানগত ভারসম্যের ব্যবস্থাটি ছিল বিজ্ঞানসম্মতভাবে নির্মিত। এ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এক মহান অর্জন। যদি আজকের নেতাদের উদ্দেশ্য সত্যিই অন্যান্য জাতির কল্যাণ হতো, তবে সমগ্র বিশ্বের শাসকদের কাছে আমাদের গৃহীত এই ব্যবস্থাই শিক্ষনীয় হত।

অ্যাপোলো অ্যান্ড ডায়োনিসাস (১৯৬৯)

[সম্পাদনা]
  • অ্যাপোলো ১১-এর উৎক্ষেপণ উপলক্ষে উপস্থিত জনতার প্রসঙ্গে: এই মানুষগুলো ছিল না কোনো আতঙ্কিত জনতা বা প্ররোচিত ভিড়; তারা ফ্লোরিডার জনপদ ধ্বংস করেনি, প্রাকৃতিক পরিবেশ লণ্ডভণ্ড করেনি, অথবা আর্তনাদকারী সন্ত্রাসীর মতো আচরন করেনি- তারা কারো প্রতি অন্যায়ও করেনি। তারা এসেছিল দায়িত্বশীল ব্যক্তিসত্তা হিসেবে, যারা তাদের নিজ জীবনের আগামী দুই-তিন দিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই পূরণ করতে সক্ষম। বয়স, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষ সমাজের সকল স্তরের মানুষেরা উপস্থিত হয়েছিলেন। কেউ তাঁবুতে, কেউ গাড়ির ভেতর দিনরাত কাটিয়েছে, অসহ্য গরম ও অস্বস্তির মধ্যে; কিন্তু তারা তা সহ্য করেছে সাহসের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে, উদ্দীপনার সঙ্গে। তাদের মধ্যে ছিল এক অদম্য আত্মবিশ্বাস, শুভেচ্ছার আবহ, এক অভিন্ন উৎসাহের বন্ধন; তারা গড়ে তুলেছিল এক দায়িত্বশীল ব্যক্তিগততার জনসম্মুখ উপস্থিতি—এবং তারা যেমন এসেছিল, তেমনি নিরুত্তাপভাবে চলে গিয়েছিল, কোনো প্রচারকের সহযোগিতা ছাড়াই।
  • আমাদের যুগের অন্যতম পরিহাস হলো এই যে—বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বর রোধকারী নানা রকমের আওয়াজ আজকাল উচ্চস্বরে জনসাধারণের মঙ্গল -এর কথা বলে। তারা চিৎঅকার করে বলে যে, জনগনই সর্বোচ্চ মূল্যবোধের মানদণ্ড। অথচ তারা কোন কালে এত নির্লজ্জভাবে সাধারণ মানুষের প্রতি এত উদাসীন ছিল না। এর পেছনের কারণ স্পষ্ট: সামষ্টিকতার স্লোগানগুলো হচ্ছে এক ধরনের যুক্তিকরণ, যার মাধ্যমে কিছু মানুষ নিজেদেরকে জনগণের অনুগামী হিসেবে নয়, বরং তাদের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
  • এই দেশে সবচেয়ে গভীর বিভাজন ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে নয়, বরং জনগণ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে। জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে আমেরিকান জনগণ মূলত অ্যাপোলোবাদী (অ্যাপোলোনিয়ান) — তারা বাস্তবমুখী, সাধারণ জ্ঞাননির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর। অন্যদিকে মূলধারার বুদ্ধিজীবীরা ডায়োনিসীয় (ডায়োনিসিয়ান) — আবেগনির্ভর, যারা বাস্তবতার মোকাবিলা করতে না পেরে তার থেকে পালানোর পথ খোঁজে এবং এমন একটি প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, যার মধ্যে তাদের আবেগ-অনুভূতির ধারণা গুরুত্ব পায়না। বুদ্ধিজীবীরা সাধারণ মানুষের এই বাস্তববাদী মনোভাবকে ভোগবাদীমধ্যবিত্তীয় বলে অবজ্ঞা করে।
  • এবং এটিই এক সামগ্রিক জঘন্য গোপন সত্য: কিছু মানুষের মননে সাফল্যের দৃশ্য এক ধিক্কারের মনোভাব উজ্জিবীত করে—কারন এটি তাদের নিজেদের অযৌক্তিক জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় যে যুক্তি ও বাস্তবতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনও ফাঁকফোকর নেই। তাদের এই বিরক্তি আসলে কোণঠাসা ডায়োনিসীয় প্রবৃত্তির দন্তবিকশিত রূপ মাত্র।
  • একদিন পৃথিবীর সকলে বুঝতে পারবে যে চিন্তাভাবনা ছাড়া ভালোবাসা হয়না।
  • [হিপিদের] বলা হয়েছিল, নির্বিচারে সব মানুষের প্রতি ভালোবাসা — এটাই নাকি সর্বোচ্চ নৈতিকতা, এবং তারা তা মেনে নিয়েছিল। বলা হয়েছিল, নিজের সত্তাকে একটি দলের, গোষ্ঠীর, কিংবা সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়াই মানুষের জন্য সবচেয়ে মহৎ জীবনপদ্ধতি — এবং তারা তাও মেনে নিয়েছিল। আজকের প্রভাবশালী সমাজব্যবস্থার এমন কোনো দার্শনিক মতবাদ নেই, যা তারা গ্রহণ করেনি বা যার প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারল যে এই দর্শন কার্যকর নয় — কারণ এটি বাস্তবে কার্যকর হতেই পারে না — তখন তাদের মধ্যে ছিল না সেই বুদ্ধিমত্তা বা সাহস, যা দিয়ে তারা এই দর্শনের বিরোধিতা করতে পারত। তারা বরং নিজের ব্যর্থ ও অসহায় হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটাল, তাদের পূর্বপ্রজন্মকে ভণ্ডামির অভিযোগে দোষারোপ করল- যেন তাদের ভণ্ডামিই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের একমাত্র বাধা। আজ, তারা এক রহস্যময় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে, যা তাদের মানসিকতার সাথে মেলেনা। তারা অন্ধ, অসহায় এবং বোধহীন অবস্থায় রয়ে গেছে- তাই যা কিছু আজ তাদের কাছে বাঁধা হয়ে দাড়ায়, সে মানুষ হোক বা কোন বস্তু- তাদের ওপর তারা অশ্লীলভাবে চিৎকার করে নিজেদের ক্ষোভ জাহির করে। আজকের সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যারা ক্ষোভ ও বিদ্বেষের পৃষ্ঠপোষক, তাদেরকেই ভালোবাসার প্রবক্তা বলে গ্রহণ করা হয়।
  • সাম্প্রতিক জনমাধ্যমে হিপিদের নায়ক হিসেবে তুলে ধরার মধ্যে তাদের প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ এবং অবজ্ঞাপূর্ণ মনোভাব ধরা পরে। এই হিপিরা একটি অসহায়, দিশেহারা দল, যারা তাদের নিজেদের জন্য একজন অধিপতির খোঁজ করে—সে যে কেউ হোকনা কেন, সে তাদের শাসন করুক বা যাই করুক, বদলে তাদেরকে সঠিক দিশা প্রদান করুক, তাদের চিন্তামুক্ত করুক, শুধু এটুকুই তাদের চাওয়া। এ এমন এক ধরনের মানসিকতা, যা একজন যুদ্ধবাজ নেতার অনুগামীদের জন্য আদর্শ—যেমনটি একসময় জার্মান জনগণের ভেতর গড়ে উঠেছিল।
  • হিপিরা হচ্ছে জীবন্ত প্রমাণ, কী ঘটে যখন মানুষ যুক্তিবোধ ত্যাগ করে এবং প্রবৃত্তি, অনুভূতি ও খেয়ালের ওপর নির্ভর করে চলে। তারা নিজেদের ইচ্ছাও পূরণ করতে জানে না—যেমন একটি উৎসব আয়োজন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ নাগরিকদের দান-অনুগ্রহ ছাড়া তারা কোথায় যেত? নিউ ইয়র্ক থেকে পাঠানো পঞ্চাশ জন চিকিৎসক না থাকলে তাদের অবস্থা কী হতো? যাতায়তের জন্য গাড়ি, হেলিকপ্টার, পান করার জন্য পানীয়—সবই এসেছে সেই প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতা থেকে, যাকে তারা ঘৃণা করে। প্রযুক্তি ছাড়া তারা কিভাবে বেঁচে থাকত? বাস্তবে, তারা এতটাই অজ্ঞ ছিল যে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় খোজার প্রয়োজনীয়তাও তারা বুঝতে পারেনি।
  • হিপিদের তাড়না করে চলে তাদের ভয় এবং অসুরক্ষার অনুভূতি— এই ভয় তাদের ঠেলে দেয় দলীয় নিরাপত্তার খোঁজে যার মাধ্যমে তারা উষ্ণতা ও সুরক্ষা লাভ করতে পারে। সেইকারনে তারা নিজেদের অস্তিত্বকে কোনো "মহৎ সমষ্টি" বা দলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার কথা বলে, তখন আসলে তারা চায় চাটুকার মানবসমষ্টীর ভিড়ে নিজেদের ভয়কে আড়াল করতে—আর সেই ভিড় থেকে তারা কেবল এক মিথ্যা অনুভব লাভ করে, এক ক্ষণিক মরীচিকার মতো!
  • মাদকাসক্তি যে এক অসহ্য অভ্যন্তরীণ অবস্থা থেকে পালানোর চেষ্টা, এমন এক বাস্তবতা থেকে পলায়ন যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, কিংবা এমন এক মস্তিষ্কের অবক্ষয় থেকে মুক্তির চেষ্টা যা পুরোপুরি ধ্বংস করা যায় না—এ নিয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে? যদি অ্যাপোলোনীয় যুক্তিবাদ মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ হতো এবং ডায়োনিসীয় প্রবৃত্তি প্রকৃতি ও সত্যের নিকটতর করত, তবে অযুক্তিবাদের প্রবক্তাদের মাদকের আশ্রয় নিতে হতো না। সুখী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ নেশা করে বাস্তবতা থেকে নিজেকে মুছে ফেলতে চায় না। মাদকাসক্তি মানে নিজের চেতনা ধ্বংসের চেষ্টা—ইচ্ছাকৃত পাগলামির খোঁজ। যারা এতে লিপ্ত তাদের নৈতিক চরিত্র নিয়ে কোনো সংশয় থাকাটাও একপ্রকার নৈতিক বিকৃতি।
  • তোমরা সকলেই শুনেছ সেই পুরনো প্রবাদ: মানুষের চোখ থাকে তারার দিকে, কিন্তু পা কাদায়। সাধারণত এর মানে এই যে—মানবের যুক্তি ও ইন্দ্রিয়ই তাকে নিচের দিকে টানে, আর তার অজানার প্রতি আগ্রহ, অতিরিক্ত-যুক্তিবাদী আবেগ তাকে উত্থিত করে তোলে। এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ উল্টো ব্যাখ্যা। কিন্তু গত গ্রীষ্মে এই যুক্তির বাস্তবতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে যে, মানুষের অযৌক্তিক আবেগই তাকে কাদায় নামিয়ে আনে আর মানুষের যুক্তিই তাকে তারার দিকে লক্ষিত করে।

দ্যা রোমান্টিক ম্যানিফেস্টো(১৯৬৯)

[সম্পাদনা]
  • শিল্প হলো একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত মূল্যবোধের বিচার অনুসারে বাস্তবতার একটি নির্বাচনী পুনর্সৃষ্টি।
    • অধ্যায় ১, "দ্যা সাইকো এপিস্টোমোলজি অফ আর্ট"
  • যে কেউ ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করে, সে আসলে বর্তমান সময়ের চিন্তাতেই আবদ্ধ।
  • একজন শিল্পী তার কাজের মাধ্যমে তার অনাবৃত আত্মাওকে প্রকাশ করেন - এবং পাঠক হিসাবে আপনি যখন এতে সাড়া দেন তখন আপনিও নিজেকে প্রকাশ করেন।
  • দোষীদের প্রতি করুণা আসলে নির্দোষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।
  • শিল্প হলো মানুষের অধিবিদ্যাগত দর্পণ; যুক্তিসম্পন্ন মানুষ সে দর্পণে দেখতে চায় এক অভিবাদন, আর অযুক্তিক মানুষ সেখানে খোঁজে যুক্তিসংগতা— যদিও সেই যুক্তিসংগতা তার নিজ অধঃপতনেরই এক শেষ হাহাকার, তার প্রতারিত আত্মসম্মানের অন্তিম ধ্বনি।
    • অধ্যায় ৩, আর্ট অ্যান্ড সেন্সেস অফ লাইফ
  • সংজ্ঞা হল যুক্তিবাদের অভিভাবক, মানসিক বিচ্ছিন্নতা ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম পংক্তি।
    • অধ্যায় ৩, আর্ট অ্যান্ড কগনিশন
  • ধোঁয়াশা যদি মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে থাকে, তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রযুক্তি ছাড়া প্রকৃতির জীবন কেবল মৃত্যু।
    • দ্য অবজেক্টিভিস্ট (ফেব্রুয়ারী ১৯৭১)
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—কেবল “কিছু একটা করার” জন্য ভুল মতাদর্শভিত্তিক দল বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবেন না। এখানে “মতাদর্শভিত্তিক” বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন সব দল বা আন্দোলন যারা অস্পষ্ট, সংজ্ঞাহীন (এবং প্রায়ই পরস্পরবিরোধী) রাজনৈতিক লক্ষ্য অনুসরন করে। যেমন, রক্ষণশীল দল যারা যুক্তিকে ধর্মবিশ্বাসের অধীন করে এবং পুঁজিবাদের স্থলে ধর্মতন্ত্র প্রবর্তনের চেষ্টা করে; অথবা তথাকথিত স্বাধীনতাবাদী হিপিরা, যারা যুক্তিকে খেয়ালের অধীন করে এবং পুঁজিবাদের স্থলে নৈরাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ ধরনের দলে যোগ দেওয়া মানে হলো কোনো সুদূরপ্রসারী নীতিকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষণস্থায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া—যা অবশেষে ব্যর্থ হবেই।
    • হোয়াট ক্যান ওয়ান ডু? আইন র‍্যান্ড লেটার প্রথম খন্ড, নং ৭ (১৯৭২)
  • আদিবাসী আমেরিকানদের জমির উপর কোন অধিকার ছিল না এবং তাদের এমন অধিকার দেওয়ার কোন কারণ ছিল না যা তাদের কল্পনাতীত, যার ব্যবহার তারা কখোনো করেনি। এই মহাদেশে আগত বিদেশী শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের বিরোধিতা করার সময় তারা কীসের জন্য লড়াই করছিল? তাদের আদিম অস্তিত্ব বজায় রাখার ইচ্ছার জন্য, নাকি পৃথিবীর কিছু অংশকে অস্পৃশ্য, অব্যবহৃত রেখে সেই ভূমিকে নিজ সম্পত্তি হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য? আপনারা সকল বিদেশীদের নিজ ভূমি থেকে বাইরে রাখতে চান যাতে আপনারা কার্যত পশুর মতোই আদিম জীবন পালন করে গুহার মধ্যে বসবাস করতে পারেন। সভ্যতার উপাদান নিয়ে আসা যেকোনো শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির এই মহাদেশ দখল করার অধিকার রয়েছে।
    • ৬ মার্চ, ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্কের ওয়েস্ট পয়েন্টে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার ভাষণের পর প্রশ্নোত্তর পর্ব - ডেরিক জেনসেনের লেখা এন্ডগেম: রেজিস্ট্যান্সে , সেভেন স্টোরিজ প্রেস, ২০০৬, পৃষ্ঠা ২২০ -তে উদ্ধৃত।
  • এখন আমি আমেরিকান আদিবাসীদের এই দেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নই। আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি—এবং তার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারনও রয়েছে—যে হলিউডের সিনেমাগুলিতে যেভাবে আদিবাসীদের চিত্রিত করা হয়েছে, তা যথার্থ। তারা শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে যা করেছিল, তা বর্বরতা। শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা এই দেশে জন্মগ্রহন করেছে-তার জন্য তারা এই দেশের ওপর কোনো অধিকার দাবী করতে পারেনা। শ্বেতাঙ্গরা এই দেশকে "দখল" করেনি...
    • এই বক্তব্যটি ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি একাডেমি (ওয়েস্ট পয়েন্ট)-এর স্নাতক সমাবর্তনে দেওয়া হয়েছিল।
  • আরবরা সংস্কৃতিগতভাবে সবচেয়ে কম উন্নত জাতি। তারা সাধারণত যাযাবর। তাদের সংস্কৃতি আদিম, তারা ইসরায়েলকে ঘৃণা করে কারণ তাদের মহাদেশের অন্তর্গত একমাত্র সেই দেশেই আধুনিক বিজ্ঞান ও সভ্যতার ছোয়া লেগেছে। যখন সভ্য মানুষরা বর্বরদের সাথে লড়াই করে, তখন আপনার উচিত সভ্য মানুষদের সমর্থন করা, তারা যেই হোক না কেন।
    • আইন র‍্যান্ড ফোর্ড হল ফোরাম লেকচার (১৯৭৪) এর লেখাটি আইন র‍্যান্ড ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত।[৫]
  • মনস্তাত্ত্বিকভাবে, সবচেয়ে খারাপ যা আপনি করতে পারেন তা হল নিজেকে নিয়ে হাসা। এই কাজ প্রায় নিজের মুখে থুথু ফেলার মতো।
    • লিওনার্ড পিকফের "দ্য ফিলোসফি অফ অবজেক্টিভিজম" (১৯৭৬) শৃঙ্খলার ১১ নং ভাষনের পরের প্রশ্নোত্তর পর্ব।
  • আজকের বিশ্বের সমস্যার মূলে রয়েছে দর্শনগত সংকট; কেবল একটি সঠিক জীবনদর্শনই আমাদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু এক বিশেষ দল আমার কিছু মতবাদের নকল করে এবং সেগুলিকে সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তাধারার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে। তারপর তারা ধর্মবাদী, বিশৃঙ্খলাপন্থী, বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থ ও মূল্যহীন লোকেদের খুঁজে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা নিজেদের স্বাধীনতাবাদী (লিবার্টেরিয়ান) বলে দাবি করে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়।
    • আইন র‍্যান্ড (২০০৫)। মেহিউ, রবার্ট, সম্পাদক। আইন র‍্যান্ডের প্রশ্নোত্তর পর্ব। নিউ ইয়র্ক: নিউ আমেরিকান লাইব্রেরি। পৃষ্ঠা ৭৩। (১৯৭৬)

অসম্পূর্ণ উৎস তথ্য

  • যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন, "ইজরায়েল না আরব—কার পক্ষ নেওয়া উচিত?" তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলব ইজরায়েলের, কারণ এটি একটি অগ্রসর, প্রযুক্তিনির্ভর ও সভ্য রাষ্ট্র, যাকে ঘিরে রয়েছে প্রায় সম্পূর্ণভাবে প্রাচীনপন্থী এবং স্থবির সমাজে বসবাসকারী এক জাতিগোষ্ঠী—যারা যুগের পর যুগ ধরে অপরিবর্তিত থেকে গেছে। তারা বর্ণবাদী, তারা ইজরায়েলের প্রতি বিরূপ, কারণ ইজরায়েল তাদের স্থবিরতার মাঝে শিল্প, বুদ্ধিবৃত্তিকতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে।
    • ডোনোহু, লাইভ ইন নিউ ইয়র্ক (১৯৭৯) ছবির রেকর্ডিং চলাকালীন প্রশ্নোত্তর পর্ব , ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপর আইন র‍্যান্ডের বক্তব্য।[৬]

নতুন বামপন্থী: শিল্প-বিরোধী বিপ্লব (১৯৭১)

[সম্পাদনা]
  • একজন এশীয় চাষি, যিনি যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত আদিম কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সারাদিন পরিশ্রম করেন—একজন দক্ষিণ আমেরিকান আদিবাসী, যিনি জঙ্গলের ঝরণায় হিংস্র পিরানহার দ্বারা আক্রান্ত হন—একজন আফ্রিকান, যিনি সেতসি মাছির কামড়ে আক্রান্ত হন—একজন আরব, যার দাঁতে-মুখে পচন ধরেছে—এরা সবাই প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করেন, কিন্তু খুব কমই তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সক্ষম হন। চীনদেশীয় কোন মহিলা, যার সন্তান কলেরায় মারা যাচ্ছে, তাকে আপনি গিয়ে জিজ্ঞেস করুন: ‘মানুষ কি তার সাধ্য অনুযায়ী সবকিছু করবে? অবশ্যই না।’ কিংবা একজন রুশ গৃহিণী, যিনি তুষারপাতের মাঝখানে মাইলের পর মাইল হেঁটে রাজ্য নিয়ন্ত্রিত খাদ্যের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন তার মাসিক খাদ্য মজুত করার জন্য, তার কাছে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, বিপনন কেন্দ্র, পাকা সড়ক আর যানবাহনের আধিক্যের কারণে আমেরিকা কলুষিত হচ্ছে।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ৮৮
  • একই নীতির ভিত্তিতে, কোনো অপরাধীর মতাদর্শের প্রকৃতি বিবেচনা করে সরকার তাকে বিশেষ ছাড় দিতে পারে না।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ৯৯
  • অপরাধ হলো বলপ্রয়োগ (বা প্রতারণা) দ্বারা অন্য ব্যক্তির অধিকার লঙ্ঘন। একটি মুক্ত সমাজে, শুধুমাত্র অন্যদের বিরুদ্ধে শারীরিক বলপ্রয়োগ—অর্থাৎ সহিংসতার আশ্রয় নেওয়াই অপরাধ হিসেবে গণ্য যেতে পারে (যা একটি অসামাজিক বা বেসামরিক ভুল থেকে স্বতন্ত্র ধারনা)। একটি মুক্ত সমাজে চিন্তা বা মতবাদ কোনো অপরাধ নয়—এবং তা কোনো অপরাধের বৈধতা প্রদান করতে পারে না।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ৯৯
  • কনফরমিস্ট বা প্রথানুসারী ব্যাক্তিরা যে স্তরের কাপুরুষতা প্রদর্শন করে তার থেকেও নিচু স্তরের হল তথাকথিত প্রথাবিরোধী (নন-কনফরমিস্ট) কেতাদুরস্ত ব্যাক্তিদের কাপুরুষতা।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ১২৩
  • পরিবেশবিদদের ধারণার বিপরীতে প্রকৃতি কখনো স্থির থাকে না, আর এমন কোনো স্বাভাবিক সাম্যাবস্থা বজায় রাখে না যা নির্দিষ্ট কোনো প্রজাতির টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয় — আর সবচেয়ে উন্নত ও সবচেয়ে ভঙ্গুর যে সৃষ্টি: মানুষ, তাদেরই টিকে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ১৩৪
  • .. লক্ষ্য করুন যে পরিবেশবিদদের সমস্ত প্রচারণায় - প্রকৃতির প্রতি তাদের সমস্ত আবেদন এবং 'প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য' রাখার আবেদনের মধ্যে - মানুষের চাহিদা এবং তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনও আলোচনা নেই। মানুষের অস্তিত্বকে এমনভাবে বিবেচনা করা হয় যেন সে একটি অপ্রাকৃতিক বস্তু। পরিবেশবিদরা যে ধরণের প্রকৃতির অবস্থা কল্পনা করেন - অর্থাৎ যেখানে সামুদ্রিক অর্চিন থেকে মেরু ভালুক ইত্যাদি প্রজাতিরা স্বচ্ছন্দে বসবাস করবে - সেই পরিস্থিতিতে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না...
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ১৩৬
  • আজ, সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা চর্চিত হলে বর্ণবাদকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় - কিন্তু সংখ্যালঘুদের দ্বারা বর্ণবাদের চর্চা করা হলে তা একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
    • দ্যা নিউ লেফ্ট: দ্যা অ্যান্টি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশন, পৃষ্ঠা ১৬৭

আইন র‍্যান্ডের চিঠি থেকে (১৯৭১–১৯৭৬)

[সম্পাদনা]
  • থ্যাঙ্কসগিভিং বা ধন্যবাদজ্ঞাপন মূলত একটি আমেরিকান উৎসব… এই সমৃদ্ধ ভোজ আসলে এক প্রতীক—যার মাধ্যমে এই সত্য প্রকাশিত হয় যে প্রাচুর্যপূর্ণ ভোগ আসলে উৎপাদনের ফল এবং পুরস্কার।
  • ভোটাধিকার কোনো মুক্ত সামাজিক ব্যবস্থার প্রাথমিক কারণ নয়, বরং একটি ফলাফল—এবং এর মূল্য নির্ভর করে সংবিধানিক কাঠামোর উপর, যা ভোটারের ক্ষমতা প্রয়োগে ও সীমাবদ্ধকরণকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করে। সীমাহীন সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন হলো স্বৈরশাসনেরই একটি রূপ।
  • প্রতিযোগিতা হলো উৎপাদনশীল কাজের একটি উপজাত, লক্ষ্য নয়! একজন সৃজনশীল মানুষ পরিচালিত হয় তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষায়, অন্যদের হারানোর ইচ্ছায় নয়।
  • সম্মান হলো আত্মসম্মান, যা ব্যাক্তির কাজের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়।

ফিলসফি: হু নিডস ইট (১৯৮২)

[সম্পাদনা]

নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই, ববস-মেরিল, ১৯৮২

  • মানুষের কাছে একে অপরের সাথে মোকাবিলা করার জন্য কেবল দুটি উপায় আছে: বন্দুক অথবা যুক্তি; বল অথবা প্ররোচনা। যারা জানে যে যুক্তি দিয়ে তারা জিততে পারবে না, তারা সর্বদা বন্দুকের আশ্রয় নেয়।
  • আধুনিক বুদ্ধিজীবী—উদারপন্থী হোক বা রক্ষণশীল—তাঁদের গভীর গোপন আতঙ্ক, যা তাঁরা কখনও স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন না, তাঁদের সব বিদ্যমান অযৌক্তিকতার অন্তর্নিহিত ভয়—তা হলো এই নিঃশব্দ জ্ঞান যে সোভিয়েত রাশিয়া হচ্ছে পরার্থপরতার নৈতিকতার পূর্ণ, বাস্তব, সরল ও একমাত্রিক রূপ। স্তালিন কোনো মহান আদর্শকে বিকৃত করেননি; পরার্থপরতা কেবল এইভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে, এবং অন্য কোনোভাবে নয়।
    • পৃষ্ঠা ৮৪
  • রক্ষণশীলদের মতে, মানুষ একটি স্বাধীন দেহ—যা ইচ্ছেমতো পৃথিবীজুড়ে ঘুরে বেড়াতে পারে, নির্মাণ করতে পারে শিল্প বা অবকাঠামো—কিন্তু তার চেতনা, চিন্তা ও সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত থাকে ওয়াশিংটনের নির্দেশনায়। অন্যদিকে উদারপন্থীদের কাছে মানুষ মূলত একটি স্বাধীন আত্মা—যা অবাধে মহাবিশ্বে বিচরণ করতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে, যেমন রুটি কিনতে রাস্তা পার হওয়ার সময়, তার উপর আরোপিত হয় কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বাধা।

দ্য ভয়েস অফ রিজন (১৯৮৯)

[সম্পাদনা]
  • একটি সংস্কৃতি গঠিত হয় — অথবা ধ্বংস হয়ে যায় — তার সুস্পষ্ট ও প্রকাশক্ষম কণ্ঠস্বরগুলোর মাধ্যমে।
  • অ্যারিস্টটলকে পশ্চিমা ইতিহাসের সাংস্কৃতিক ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যখনই তাঁর প্রভাব প্রাধান্য বিস্তার করেছে, তা ইতিহাসের এক উজ্জ্বল যুগের পথ প্রশস্ত করেছে; আর যখনই তাঁর প্রভাব হ্রাস পেয়েছে, তখনই মানবজাতি পতনের মুখে পড়েছে।
  • প্রত্যেকটি বলপ্রয়োগমূলক একচেটিয়া ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান মূলত রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ফলেই গড়ে উঠেছে—যেমন সরকারপ্রদত্ত বিশেষ সুবিধা, ভর্তুকি বা বিশেষ অনুমতিপত্র, যা সচেতনভাবে প্রতিযোগিতার পথ রুদ্ধ করেছে এবং কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে বাকিদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াই একচেটিয়া আধিপত্যের প্রকৃত উৎস।

আইন র‍্যান্ডের দিনলিপি থেকে(১৯৯৭)

[সম্পাদনা]
  • আমার কাজের উদ্দেশ্য: মানব উন্নয়নের প্রাচীন ও মৌলিক পথগুলির সাথে পুনরায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। ব্যক্তিগত দায়িত্ব, আত্মোন্নয়ন, শিক্ষা এবং সামাজিক নীতিকে একসময় ব্যক্তি-কেন্দ্রিক ও কার্যকর বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু আজ, যখন এসব বিষয়কে "গ্রহণযোগ্যতা"র নিরিখে বিচার করে দেখা হচ্ছে, তখন আমাদের আদর্শগত বিচারের উপর অন্যের সম্মতির শিলমোহরের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এখন সময় এসেছে সেই স্বার্থনিষ্ঠ, আত্মভিত্তিক আদর্শে ফিরে যাওয়ার—যেগুলো একসময় ব্যক্তিকে নিজের উন্নয়নের পথ নিজেই নির্ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করত।
  • কখনোই অন্যের কাছে এমন কিছু দাবি করো না যার জন্য তাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে আর কখনোই অন্যের জন্য এমন কিছু করতে রাজি হয়োনা যার জন্য তোমাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
  • কখনও অন্য কারও ওপর প্রথমে বলপ্রয়োগ কোরো না। আর যদি কেউ তোমার ওপর বলপ্রয়োগ করে, তবে তাকে জবাব দেওয়ার জন্য বলপ্রয়োগ অবশ্যম্ভাবী।
  • ইতিহাস জুড়ে সকল দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডের একটি সাধারণ উপাদান ছিল: পরার্থপরতা - সমষ্টিগতের সাধারণ কল্যাণ। ধর্মীয় নেতারা এবং "নৈতিক" সংখ্যাগরিষ্ঠরা হিটলার , স্ট্যালিন ইত্যাদি ব্যক্তিদের নিন্দা করে কিন্তু তাদের নিজেদের আন্দোলন এবং তার ভিত্তিও প্রায় একই রকম।
  • যদি অধিকাংশ মানুষ নিজেদের জন্য কী ভালো তা বুঝতে না পারে, তাহলে তারা অন্যদের ভালো কিভাবে বুঝতে পারবে? যদি তাদের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হতে হয়, তাহলে তারা কীভাবে এবং কোন মানদণ্ডে সেই বিশেষজ্ঞকে বেছে নেবে?
  • মানব জাতির শুধুমাত্র দুটি অসীম ক্ষমতা রয়েছে: প্রথম, কষ্ট সহ্য করার আর দ্বিতীয়, মিথ্যাচার করার। আমি ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই, কারণ তা মানবজাতির সব ধরনের মিথ্যাচারের মূল এবং মানব দুঃখের একমাত্র অজুহাত।
  • ব্যক্তির নিজস্ব কার্যের ফলাফল হল সামগ্রিক অগ্রগতি।
  • স্বার্থপরতা মানে কেবল নিজের জন্য কিছু করা নয়। কেউ নিজের আনন্দ এবং সুবিধার জন্য অন্যদের প্রভাবিত করে অনেক কিছু করতে পারে। এর মধ্যে অনৈতিক কিছু, বরং এ সর্বোচ্চ নৈতিকতা।
  • কিছু বিশেষ শ্রেনীর মানুষ যাদের আমি সেকেন্ড-হ্যান্ডার হিসাবে উল্লেখ করি; তারা যোগ্যতা বা দক্ষতার বদলে ভালবাসা, সৌন্দর্য বা মিষ্টভাষার মতো সহজ জিনিসের মাধ্যমে নিজেকে মূল্যবান প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু আসল শক্তি হলো নতুন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা—আর তার কোনো বিকল্প নেই।
  • এই বিশেষ শ্রেনীর মানুষ যাদের আমি সেকেন্ড-হ্যান্ডার হিসাবে উল্লেখ করি, তারা সবসময় মানব সামাজের অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে- তথ্য, ধারণা, কাজ ইত্যাদি সকল বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। অথচ ভাবো, যারা চিন্তা করে, পরিশ্রম করে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করে তারা না থাকলে এই পৃথিবীর কী হতো?

তারিখবিহীন

[সম্পাদনা]
  • তুমি কি জানো যে আমার ব্যক্তিগত জীবনের ধর্মযুদ্ধ (দার্শনিক অর্থে) কেবল সমষ্টিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নয়, অথবা পরার্থপরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও নয়? এগুলো কেবল যুদ্ধের পরিণতি ও প্রভাব, কারণ নয়। আমি আসল কারণের খোঁজে বেরিয়েছি, পৃথিবীতে অশুভের আসল মূল - অযৌক্তিকতা।
    • গডেস অফ দ্যা মার্কেট: আইন র‍্যান্ড অ্যান্ড আমেরিকান রাইট, ২০০৯, পৃষ্ঠা ১০০
  • রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক সংগ্রাম—যা আরিস্টটল থেকে শুরু হয়ে জন লক ও আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতৃগণের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পায়। তারা যে ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, তা সীমাহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়—বরং ব্যক্তিস্বত্বার উপর নির্ভর ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে বা সংখ্যালঘুদের ষড়যন্ত্রে ব্যক্তির অধিকার বাতিল করা যাবে না—এই ছিল মূলনীতি। ব্যক্তিকে তার প্রতিবেশী বা শাসকের ইচ্ছার দাসে পরিণত হতে দেওয়া হয়নি; বরং সংবিধানিক ভারসাম্যের বৈজ্ঞানিক কাঠামো তাকে সুরক্ষা প্রদান দিয়েছিল। এটাই ছিল আমেরিকার মহান অর্জন।
    যদি সত্যিই বিশ্বের অন্যান্য জাতির কল্যাণে আমাদের নেতৃবৃন্দের আগ্রহ থাকত, তাহলে আমরা এই জ্ঞানটিই তাদের শেখাতাম। কিন্তু আজ, আমরা অর্ধশিক্ষিত ও অসভ্য জনগণকে এই বলে বিভ্রান্ত করছি যে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার প্রয়োজন নেই—আমাদের শাসনব্যবস্থাও কেবল পছন্দের ব্যাপার মাত্র। এর ফলে, আমরা যেকোনো আদিম গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত স্বেচ্ছাচারিতাকে সমর্থন দিচ্ছি, যেখানে গুলি আর গণহত্যার রাজনীতিকেই সমর্থনযোগ্য বলে দেখানো হচ্ছে।
    ফলে আমরা দেখি, ১৯৬২ সালে আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে শ্রমিকেরা স্লোগান দিচ্ছে: "রক্ত নয়, কাজ চাই!"—কিন্তু তারা জানে না যে এর পেছনে কত গভীর জ্ঞান ও নৈতিকতা থাকা দরকার। ১৯১৭ সালে রুশ কৃষকরা চেয়েছিল “জমি ও স্বাধীনতা”—কিন্তু পেয়েছিল লেনিন ও স্তালিন। ১৯৩৩ সালে জার্মানরা চেয়েছিল “জীবন”—কিন্তু পেয়েছিল হিটলারকে। ১৭৯৩ সালে ফরাসিরা বলেছিল “স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব”—কিন্তু পেয়েছিল নেপোলিয়নকে। কেবল ১৭৭৬ সালে আমেরিকানরা যখন বলেছিল “মানবাধিকারের” কথা—তখন তারা সঠিক জীবন দর্শনের পথে অগ্রসর হয়ে সত্যিই সেটা অর্জন করেছিল।
    কোনো বিপ্লব, যত ন্যায্যই হোক না কেন, এবং কোনো আন্দোলন, যত জনপ্রিয়ই হোক না কেন, কখনও সফল হতে পারে না যদি তা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শনে পরিচালিত না হয় এবং সঠিক লক্ষ্য ও দিকনির্দেশনা না পায়।
    • আইন র‍্যান্ড কলাম
  • আলজিয়ার্সের জনগণ গৃহযুদ্ধের নতুন হুমকির বিরুদ্ধে মরিয়া প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় মিছিল করে, চিৎকার করে বলে: 'আমরা শান্তি চাই! আমরা একটি সরকার চাই!' কিন্তু তারা কীভাবে তা অর্জন করবে? গৃহযুদ্ধের বছরগুলিতে, তারা কোনও রাজনৈতিক দর্শনের দ্বারা নয়, কেবল একটি জাতিগত কারনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তারা কোনও কর্মসূচির জন্য নয়, কেবল ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। যখন তারা স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন তারা বিভক্ত হয়ে যায়- প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতি এবং সশস্ত্র বিল্পবীরা একে অপরের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পরে।
    • আইন র‍্যান্ড কলাম 'ব্লাইন্ড ক্যাওস'
  • কেউ যদি এমন কোনো সামাজিক ব্যবস্থার পক্ষে থাকেন, যা ব্যক্তির ওপর জোরজবরদস্তি করে—তাহলে তিনি কখনোই প্রকৃত শান্তির পক্ষে কথা বলছেন না।
    • ফর দ্যা নিউ ইন্টেলেক্ট
  • প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব লক্ষ্য থাকা উচিত, কোন ব্যাক্তি অপর কোন ব্যাক্তির লক্ষ্য অর্জনের উপায় নয়। মানুষকে নিজের স্বার্থেই বাঁচতে হবে, অন্যের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে না বা অন্য কাউকে নিজের স্বার্থের জন্য ব্যাবহার করতে হবে না। তাকে তার নিজ যুক্তিসঙ্গত স্বার্থের জন্য কাজ করতে হবে, নিজের সুখ অর্জনকে তার জীবনের সর্বোচ্চ নৈতিক উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
    • আইন র‍্যান্ডের কলাম 'বস্তুবাদের পরিচয়'

র‍্যান্ড সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]

লেখক দ্বারা বর্ণানুক্রমিকভাবে

  • আইন র‍্যান্ডকে একজন ঔপন্যাসিক বা চিন্তাবিদ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া কঠিন। তবু মিসেস ব্র্যান্ডেনের জটিল বিবরণ থেকে যে চরিত্র উঠে আসে, তাতে কিছু আকর্ষণ এবং একটু মহিমা রয়েছে: এক তরুণী আমেরিকায় এসে তার নিজ মতবাদ,নিজ মনের ভাব প্রকাশের জন্য তার রেমিংটন র‍্যান্ড সংস্থা নির্মিত টাইপ রাইটারটিকে একটি মুখ্য মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহার করতে শুরু করেন (এই টাইপ রাইটারের সংস্থার নাম থেকেই তিনি তার নিজের ছদ্মনামের অনুপ্রেরনা পান); তিনি শুধু নিজের নাম বদলাননি, নিজের প্রবল আদর্শ অনুযায়ী নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলেন; তিনি তার রচনায় নিজ সৃষ্ট চরিত্রগুলির প্রতি যথেষ্ট সম্মান করতেন। তিনি উপন্যাসে অসাধারণ সকল প্রধান চরিত্রের সৃষ্টি করেন এবং সাধারণ মানুষকে বোঝান যে তারাও তাদের নিজের জীবনের গল্পের নায়ক হয়ে উঠতে পারে। পরিণত ও সফল এই নারী প্রবল কষ্টের মুখেও কখনো নিজ জীবনে আপস করেননি এবং ব্যক্তিগত হতাশা ও বেদনার মুখে অটল সাহস দেখিয়েছেন। তাই বোঝা যায়, তার বুদ্ধিগত বা ব্যক্তিগত ত্রুটি থাকলেও, কেন তিনি মানুষের আনুগত্য ও অনুপ্রেরণা অর্জন করতে পেরেছিলেন।
    • পিটার এল. বার্গার, "অ্যাডাম স্মিথ ও নিৎশের সাক্ষাৎকার", দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (৬ জুলাই, ১৯৮৬)
  • আইন র‍্যান্ডের মতে, নৈতিকতা বা নীতিশাস্ত্র হল, “মানুষের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপকে পরিচালিত করার জন্য একটি মূল্যবোধের সংহতি—যা তার জীবনের উদ্দেশ্য ও গতি নির্ধারণ করে।” র‍্যান্ড যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মূল্যবোধের সংহতিকে বুঝতে হলে সবার প্রথমে মূল্যবোধের প্রকৃতিকে বুঝতে হবে।
    • ক্রেগ বিডল, "আইন র‍্যান্ডের পর্যবেক্ষণ-ভিত্তিক নৈতিকতা", আইন র‍্যান্ডের অধিকার তত্ত্ব: একটি মুক্ত সমাজের নৈতিক ভিত্তি (২০ আগস্ট, ২০১১)[৭]
  • এই কথা বলাই বাহুল্য যে অবজেক্টিভিস্ট বা বস্তুনিষ্ঠবাদীদের আন্দোলনের মধ্যে একটি উপাসনামূলক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বর্তমান ছিল। আইন র‍্যান্ডের ব্যক্তিগত মহিমান্বিতকরণ, নানা বিষয়ে তার ব্যক্তিগত মতামতগুলোর প্রতি অন্ধ আনুগত্য, লাগাতার নৈতিক ভাষণ এই সমস্ত কিছুর মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় যে অবজেক্টিভিজম বা বস্তুনিষ্ঠবাদের যে মৌলিক আকর্ষণ, তা ছিল ধর্মীয় উপাসনার সম্পূর্ণ বিপরীত।
    • বারবারা ব্র্যান্ডেন , দ্য প্যাশন অফ আইন র‍্যান্ড (পৃষ্ঠা ৩৭১), শেরমারের 'দ্য আনলিকিলেস্ট কাল্ট ইন হিস্ট্রি' (১৯৯৩) বইয়ে উদ্ধৃত।[৮]
  • আমরা আক্ষরিক অর্থে, অভিধানিক অর্থে কোনও সম্প্রদায় ছিলাম না, তবে অবশ্যই আমাদের জগতের একটি সাংস্কৃতিক দিক ছিল.... আমরা একজন অনন্যসাধারন নেতাকে ঘিরে সংগঠিত একটি দল ছিলাম, যার সদস্যরা একে অপরের চরিত্র বিচার করত মূলত সেই নেতার প্রতি তার আনুগত্যের নিরিখে...
    • নাথানিয়েল ব্র্যান্ডেন (প্রকাশিত পৃষ্ঠা ২৫৬), শেরমার কর্তৃক উদ্ধৃত।[৯]
  • আইন র‍্যান্ড আরও মনে করেন যে বাস্তব জগতে একজন ব্যক্তিরা শুধুমাত্র শব্দ ও যুক্তি ব্যবহার করে যেকোন বিষয় সহজেই বুঝতে পারেন। এই ধারণা—যা প্রায় সব আধুনিক বিজ্ঞানী প্রত্যাখ্যান করেছেন—মূলত প্লেটোর বিশ্বদৃষ্টির পুনরুক্তি। এর মৌলিক স্বীকার্য হলো, বিশ্ব আদর্শ সত্তা বা মূল্যবোধ (র‍্যান্ডের পছন্দের শব্দ) দিয়ে গঠিত, যা সেইসকল সাহসী মনের অধিকারী ব্যক্তিরা আবিষ্কার, নিরপেক্ষভাবে বিচার এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন, যারা অতীতের পুরনো ধ্যান ধারণা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সমর্থ। একবার মুক্ত হলে, যে কোনো সত্যিকারের যুক্তিবাদী ব্যক্তি কেবল শাব্দিক যুক্তি প্রয়োগ করে জীবন, ন্যায়বিচার এবং বিশ্ব সম্পর্কে একই মৌলিক সিদ্ধান্তে স্বাধীনভাবে পৌঁছাতে বাধ্য। (স্বাভাবিকভাবে, যে মানুষ এটি করতে ব্যর্থ হয়, সে এখনো মনের দিক থেকে মুক্ত হতে পারেনি।)
    • ডেভিড ব্রিন, লিবার্টি ম্যাগাজিন, সেপ্টেম্বর ২০০০।
  • তার উপন্যাস অ্যাটলাস শ্রাগড... এক হাজার পৃষ্ঠার আদর্শবাদী কল্পকাহিনী। এটি পড়আর জন্য আমি নিজেকে প্রায় একপ্রকার বাধ্য করেছি।
    • চার্লি রোজের অনুষ্ঠানে উইলিয়াম এফ. বাকলি জুনিয়রের বক্তব্য।[১০]
  • আইন র‍্যান্ডের রচনা পড়ে তুমি তোমার জীবনের মূল্যবান সময় অপচয় করতে পারো—ত তরুনদের মধ্যে তার বিরক্তিকর প্রভাব, তার দুর্বল লেখনী আর অপ্রিয় ব্যক্তিত্ব- একবার আমার অনুষ্ঠানে তার আসার কথা ছিল। তিনি না আসায় আমি বেশ দুঃখিত হয়ে পড়েছিলাম কারন আমি আসলে তার সাথে তর্ক করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তিনি একটা শর্তাবলির তালিকা পাঠিয়েছিলেন যাতে পুরো পনেরোটি শর্তের উল্লেখ ছিল। তার একটিতে লেখা ছিল, "মিস র‍্যান্ড-এর দর্শনের সাথে কেউ দ্বিমত পোষণ করা যাবে না।" আমি তালিকার নিচে এই মন্তব্য লিখে ফিরিয়ে দিলাম যে: "তাহলে মিস র‍্যান্ড-ও এখানে থাকছেন না।"
    • ডিক ক্যাভেট , এলন গ্রিনের একটি সাক্ষাৎকার থেকে একটি কথোপকথন (২০১৪)[১১]
  • গ্রন্থটির প্রতিটি অক্ষরের স্বৈরাচারী সুরে এমন একটি ইঙ্গিত গেঁথে আছে, যা এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় এমন কোনো বই আমি পড়েছি বলে মনে পড়ে না, যেখানে এতটা অহংকারী সুর এত অবিচলভাবে ধরে রাখা হয়েছে। এর তীক্ষ্ণ ভাষা কোনোভাবেই দয়াশীল নয়। রচয়িতার একগুঁয়ে মনোভাব লেখার প্রতি কোনো আকর্ষণ জাগায় না। যে শ্রেনীর পাঠকের মননে এই লেখনির তীব্রতাকে স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়, তাদের মধ্যে অবশ্যই নিম্নলিখিত ধারনাগুলি পোষন করার প্রবনতা দেখা যাবে-
    ১) অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে ক্ষমতা হিসাবে জাহির করা। ক্ষমতা যত বেশি অপ্রতিরোধ্য হবে, তার প্রতি আনুগত্য তত বেশি হবে।
    ২) নিজেকে চূড়ান্ত সত্যের প্রকাশক হিসেবে কল্পনা করা। নিজ বার্তার বিরোধিতা সহ্য না করা, কারণ মতভেদ কখনোই সৎ, বিচক্ষণ বা মানুষের সাধারণ ভুল হতে পারে না। লেখকের দৃষ্টিতে যেহেতু তার বাণী যুক্তিসঙ্গত, তাই এর বিরোধিতা মানেই ইচ্ছাকৃত দুষ্টামি। এই ধরনের দুষ্টামির কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, সেটাও এই তথাকথিত যুক্তি -এর মাধ্যমেই বলা হয়। "অ্যাটলাস শ্রাগড"-এর প্রায় প্রতিটি পাতায়ই যেন এক নিষ্ঠুর নির্দেশ ভেসে আসে: "গ্যাস চেম্বারে যাও!"
    • হুইটেকার চেম্বারস , 'বিগ সিস্টার ইজ ওয়াচিং ইউ' , ন্যাশনাল রিভিউ (১৯৫৭)[১২]
  • আমার যখন ১৮ বছর বয়স তখন আমি আইন র‍্যান্ডকে ভালোবাসতাম — আমার তখনো সন্তান হয়নি। এই জগত কিভাবে চালিত হয় আসলে সেটাও তখন আমি ঠিক বুঝতে পারতামনা। এখন আমি দেখতে পাই যে এই জগত এক ভিন্ন পথে ক্রিয়াশীল, তার কথিত দর্শন অনুসারী নয়।
    • স্টেফানি ক্লেটন , নিউ ইয়র্ক টাইমস , ২০১৭।[১৩]
  • আমার বিশ্বাস আইন র‍্যান্ডের জীবনের প্রথম প্রেমের কবিতাটি ছিল: গোলাপের রং লাল/ ভায়োলেট ফুল নীল/ বাকিটা তুমি বলো/ ওহে পরজীবী নির্ভরশীল!
    • স্টিফেন কলবার্ট , টুইটার পোস্ট (২০১৩)[১৪]
  • ধর্মের প্রতি তীব্র ঘৃণা পোষণকারী র‍্যান্ড নিজের ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে একটি সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিলেন, যারা ধর্ম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আচার-অনুষ্ঠানকে রীতিমতো গুরুত্ব দিত। যুক্তিবাদ ও তর্কশাস্ত্রে গভীর বিশ্বাসী হলেও তিনি নিজের কাজের ত্রুটিগুলি দেখতে অক্ষম ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন যুক্তিবাদী, কিন্তু পুরোপুরি যুক্তিসংগত ছিলেন না; তিনি যুক্তিবাদ এবং যুক্তিসংগততার মধ্যে পার্থক্য করতে পারতেন না। সংকীর্ণ নান্দনিক সহানুভূতির অধিকারী হয়েও তিনি একজন সর্বাধিনায়কের মতো শিল্পকলার বিচার করতেন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। সততায় বিশ্বাসী হলেও তিনি আত্মপ্রতারণা ও বিশেষ যুক্তিতর্কে পারদর্শী ছিলেন। খুব কমই লেখক আছেন, যার সঙ্গে দেখা করার পার তার প্রতি আমার আগ্রহ এত কম হয়ে গেছে।
    • থিওডোর ডালরিম্পল , আইন র‍্যান্ড: ইঞ্জিনীয়ার অফ সোলস , দ্য নিউ ক্রাইটেরিয়ন (২০১০)[১৫]
  • জর্জ মনবিওট লিখেছেন, "র‍্যান্ডের অনুগামীদের অভ্যন্তরীণ বৃত্তের সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ সদস্য ছিলেন অ্যালান গ্রিনস্প্যান , যিনি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের প্রাক্তন প্রধান ছিলেন । র‍্যান্ডের জন্য তিনি যে প্রবন্ধগুলি লিখেছিলেন সেগুলি ক্যাপিট্যালিজম: দ্য আননোন আইডিয়াল নামক এক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে,যা তিনি র‍্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছিলেন।। খানে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেই দর্শন, যা তিনি সরকারে নিয়ে এসেছিলেন। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের কোনো প্রয়োজন নেই—এমনকি নির্মাণ ব্যবসায়ী বা বড় ওষুধ নির্মাতা ক্ষেত্রেও নয়—কারণ র‍্যান্ডের যুক্তি অনুসারে, ব্যবসায়ীদের আরও বেশি মুনাফা অর্জনের ইচ্ছা আসলে উপভোক্তাদের উপকারই করবে। কোন টাকশাল বা ব্যাংক তাদের উপভক্তাদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে তারা সম্মান এবং সততার সাথে কাজ করবে। তার মতে, অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদ একটি অত্যন্ত নৈতিক ব্যবস্থা
    • পল রায়ানের সবচেয়ে বড় প্রভাব: আইন র‍্যান্ড সম্পর্কে যে দশটি তথ্য আপনার আপনার জানা উচিত, জ্যান ফ্রেল, অল্টারনেট , (১১ এপ্রিল ২০১৮)[১৬]
  • র‍্যান্ড ব্যাক্তিকে ঐশ্বরিকতার কেন্দ্রে রাখেন। এটি আসলে একটি নাস্তিক দর্শন। তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। র‍্যান্ড খুব স্পষ্টভাবে বলেন যে তিনি একজন নাস্তিক। র‍্যান্ডের মূল কথা হলো, তিনি কখনই রক্ষণশীলতার সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন না। নাস্তিকতার অংশটি সর্বদা এমন একটি বিষয় হবে যাকে মানুষ প্রায় সর্বদাই উপেক্ষা করেছে। কিন্তু এটি তার দর্শনের একটি অপরিহার্য অংশ ছিল।
    • মার্কিন রিপাবলিকান নেতারা আইন র‍্যান্ডের বিতর্কিত দর্শন পছন্দ করেন—এবং ক্রমশ এর ভুল ব্যাখ্যা করছেন। থু-হুওং হা, কোয়ার্টজ (প্রকাশনা) (১৯ জানুয়ারী ২০১৭)[১৭]
  • বালিকা হিসাবে র‍্যান্ড বলশেভিকদের দ্বারা অত্যন্ত অপমানিত হয়েছিলেন এবং সে ক্ষত তিনি কখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি ভাবতেন তাঁর দর্শন বলশেভিজমের বিপরীত—আসলে তা ছিল তার যমজ। দুপক্ষই বিশ্বাস করত যে এক বিপ্লবী অভিজাত শ্রেণি, যাদের হাতে যুক্তির একচ্ছত্র মালিকানা আছে, তাদেরই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বাকি জড়বুদ্ধি জনতাকে শাসন করা উচিত। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, লেনিন ধনী শ্রেণিকে পরজীবী ভেবে দমন করতে চেয়েছিলেন, আর র‍্যান্ড দমন করতে চেয়েছিলেন গরিবদের।
    • জোহান হ্যারি , 'কীভাবে আইন র‍্যান্ড আমেরিকায় এত জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন' , স্লেট (২০০৯)[১৮]
  • বস্তুনিষ্ঠবাদ—এ এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা স্বার্থপরতার এক ধর্মীয় প্রতিচ্ছবি অঙ্কন করে এবং পরোপকার ও করুণাকে চরিত্রের ত্রুটি হিসেবে ব্যাখা করে। আর কিছু না হলেও, নীতিশাস্ত্রের এই পদ্ধতিটি ছিল বিপণনের একটি জয়, কারণ বস্তুনিষ্ঠতার মাধ্যমে মূলত বহির্বিমুখিতাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। র‍্যান্ডের এই ভয়াবহ দর্শন থেকে সাহিত্য তৈরির প্রচেষ্টা কিছু তুলনামূলক ভয়াবহ লেখার জন্ম দিয়েছে।
    • স্যাম হ্যারিস , "কীভাবে নিজের পাঠকদের সংখ্যা হ্রাস করা যায় (চেষ্টা না করেও)" স্যাম হ্যারিস (২৫ আগস্ট, ২০১১)[১৯]
  • আমাদের মধ্যে খুব সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা হয়েছিল। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে একপাশে সরে গেলেন, এবং যাওয়ার আগে একমাত্র এই কথাই বলে গেলেন, "তুমি একজন আপোষকারী।"
    • ফ্রিডরিখ হায়েক , থিওডোর জে. লোই-তে উদ্ধৃত, নিউ ইয়র্ক টাইমসকে লেখা চিঠি (১২ নভেম্বর, ২০০৯)[২০]
  • রাজনৈতিক অর্থনীতির উপর র‍্যান্ডের স্বতন্ত্র তত্ত্ব, যা তিনি দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করে, যে উদারনীতির সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা হল দর্শন- এটি অধিবিদ্যা, জ্ঞানতত্ত্ব এবং বিশেষ করে নীতিশাস্ত্রকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার উপর নির্ভরশীল। নীতিশাস্ত্র এবং জ্ঞানতত্ত্বের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি একটি মুক্ত সমাজের দাবিকে দুর্বল করে দেয়। এই বিষয়গুলিতে তার দৃষ্টিভঙ্গির কারনে তিনি প্রায়শই স্মিথের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পরেন (বিশেষ করে নৈতিক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে)। লক্ষ্যনীয় যে র‍্যান্ড এবং স্মিথ তাদের দুজনেরই দৃষ্টিভঙ্গি (বিশেষ করে জ্ঞানতত্ত্বের ক্ষেত্রে) হিউমের দৃষ্টিভঙ্গীর বিরোধীতা করে।
    • স্টিফেন হিকস , স্টিফেন হিকসের সাথে সাক্ষাৎকার (২২ এপ্রিল, ২০১৯)[২১]
  • নীতিশাস্ত্র সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে র‍্যান্ডের ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা ছিলনা বললেই চলে। তার বেশ কিছু কারণ ছিল। এর মধ্যে প্রধান কারণ তিনি আত্মস্বার্থের পক্ষে অত্যন্ত জোরালো ও উচ্চকণ্ঠে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু নৈতিকতার যে ধারা দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে, যার মূল বিশ্বাস হলো—নৈতিকতা মানে আত্মস্বার্থকে দমন করা বা আত্মত্যাগ। সেই বিচারের নিরিখে, র‍্যান্ডের অবস্থান এমন, যেন তিনি শক্তিশালীদের দুর্বলদের উপর যথেচ্ছাচার করতে প্রোতসাহিত করছেন। এই ব্যাখ্যার নিরিখে, র‍্যান্ডের দর্শনকে নীতিশাস্ত্র অনুগামীরা সহজেই বাতিল করে দিতে পারে। তবে এই ব্যাখায় আসলে র‍্যান্ডের দর্শনকে এমন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়, যাকে র‍্যান্ডে নিজেই প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি এই বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করেন যে নীতিশাস্ত্রে পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাতকে মূল ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে শুরু হয়। তিনি এই ধারণাও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন,যে মানুষদের মধ্যে বিরল সম্পদের অধিকারের জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ের মনোভাবকে নিবৃত্ত করতে নৈতিকতার ধারনার জন্ম হয়েছে। তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করেন যে নীতিশাস্ত্রের পত্তন হয়েছে কিছু মানুষের একে অপরের প্রতি নৃশংসতার মনোভাব প্রশমিত করতে। তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গিও প্রত্যাখ্যান করেন যে নীতিশাস্ত্রের উৎপত্তি হয়েছে গরিব ও অক্ষমদের অধিকারের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য।
    • স্টিফেন হিকস , "আইন র‍্যান্ড এবং সমসাময়িক ব্যবসায়িক নীতিশাস্ত্র," জার্নাল অফ অ্যাকাউন্টিং, নীতিশাস্ত্র এবং পাবলিক পলিসিতে , খণ্ড ৩, সংখ্যা ৩ (শীতকালীন ২০০৩), পৃষ্ঠা ১-২৬
  • আমি সাহিত্যকে খুব ভালোবাসি কারণ এর মাধ্যমে নীতিগত দ্বিধার সমাধান করা সম্ভব, তাই অ্যাটলাস শ্রাগড এবং দ্য ফাউন্টেনহেড -এর মতো ভয়ঙ্কর উপন্যাসগুলো আমারকে দুর্বল অনুভূত করায়। যদিও তার লিখিত প্রবন্ধ সংকলন দ্য ভার্চু অফ সেলফিশনেস -এর প্রতি আমার কিছুটা শ্রদ্ধা আছে...কিন্তু আমি মনে করি না স্বার্থপরতার পক্ষে সওয়াল করে প্রবন্ধ লেখার কোন প্রয়োজন আছে।
    • ক্রিস্টোফার হিচেনস , 'নাস্তিকতার নৈতিক প্রয়োজনীয়তা' সেওয়ানি বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০০৪)[২২]
  • অনেক দুর্বল লেখকই আছেন, যাঁরা প্রকৃত সাহিত্যিক গুণে নয়, বরং শিরোনামের কাব্যিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। আইন র‍্যান্ড এমনই একজন, যাঁর লেখা দ্য ফাউন্টেনহেড এবং "অ্যাটলাস শ্রাগড" -শিরোনাম দুটোই শক্তিশালী ও আকর্ষণীয়, যদিও উচ্চারণে কিছুটা ভারী। তবুও, বেশিরভাগ লোকেই এই নামগুলো মুখে আনেনি বা বইয়ের বিষয়বস্তু কি তা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। হয়তো এই বইদুটিকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সাহিত্যকর্ম হিসাবে চিহ্নিত করা যাবেনা- কারন লেখা যদি খুবই খারাপ হত তাহলে বই প্রকাশিতও হত না। তবুও, এগুলো সেই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা যায় যেগুলো বাজে হওয়া সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সাথে বিবেচিত হয়েছে।
    • ক্লাইভ জেমস , কালচারাল অ্যামনেসিয়া (২০০৭), পৃ. ৮০
  • আমি র‍্যান্ডের শিল্প ও দর্শনের উপর লেখা কিছু প্রবন্ধ পড়েছি। শিল্পের দর্শন সম্পর্কে তার একটি বইয়ের পর্যালোচনায় (যা আমার " আর্টস প্রসপেক্ট " বইয়ে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে) আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, তার রচনা আমার বেশ দুর্বল ও অকিঞ্চিৎকর মনে হয়েছে। আমি তাঁর দুটি বিখ্যাত উপন্যাস "দ্য ফাউন্টেনহেড" এবং "অ্যাটলাস শ্রাগড" কোনোটাই শেষ করে উঠতে পারিনি। আমার ধারণা, এই উপন্যাসগুলোকে উপভোগ করতে হলে কিশোর বয়সে এগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া উচিত ছিল—যখন জীবনের অনেক স্থায়ী আবেগ গঠিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকজন বন্ধু আমাকে আবার র‍্যান্ড পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন, আর আমি দায়বদ্ধভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেছি সেই দুই উপন্যাস পড়ার। কিন্তু প্রতিবারই পড়তে গিয়ে আমি একদিকে হাসিতে ফেটে পড়েছি তার দুর্বোধ্য ও দুর্বল গদ্যের কারণে, আর অন্যদিকে বিরক্ত হয়েছি তার অপরিণত ও ছেলেমানুষি দর্শন দেখে।
    • রজার কিমবল , 'আইন র‍্যান্ড সম্পর্কে একটি-দুটি কথা', পিজে মিডিয়া (২০১০)[২৩]
  • তার অন্যান্য কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধগুলোর মতোই আটলাস শ্রাগড উপন্যাসটিও একযোগে ভয়ানক বিপজ্জনক এবং হাস্যকরভাবে অদ্ভুত—যা একসাথে অর্জন করা মোটেই সহজ নয়।
    আজকের দিনে খুবই স্বল্পসংখ্যক অর্থনীতিবিদ রয়েছেন যারা আইন র‍্যান্ডের চিন্তাধারাকে গুরুত্ব সহকারে নেন। জীববিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ, সমাজবিজ্ঞানী, প্রাণীব্যবহার বিশেষজ্ঞ, জিনতত্ত্ববিদ কিংবা বিবর্তনবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে তাঁর দর্শনকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার মতো প্রায় কেউই নেই। কারণ, ব্যক্তিকে ঘিরে র‍্যান্ডের যে দার্শনিক ধারণা, তা বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে একেবারেই মেলে না।
    • আইন র‍্যান্ডের ভয়াবহ মূর্খতা, জেসি লার্নার, হাফপোস্ট (২০ নভেম্বর ২০০৭)[২৪]
  • আইন র‍্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অমানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সহায়তা করেছেন—একটি নতুন-ডিকেন্সীয় সমাজে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র তাদের জন্যই যারা এর মূল্য দিতে পারে, আর তরুণদের বাধ্য করা হয় এমন ছাত্রঋণের বোঝা নিতে যা দেউলিয়া হওয়ার পরেও মাফ করা হবেনা।
  • হ্যারিয়েট বিচার স্টো যখন আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক আচরন এবং তাদের দাসতার জন্য আমেরিকানদের তিরস্কার করেছিলেন, তখন আইন র‍্যান্ড আমেরিকানদের নিজের স্বার্থপরতা ও অন্যের প্রতি উদাসীন থাকার অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ধনীদের কর না দেওয়াকে “নৈতিক” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেই থেমে থাকেননি তিনি, বরঞ্চ লক্ষ লক্ষ অন্যান্য আমেরিকানকে অন্যদের দুঃখ-কষ্ট, এমনকি তাদের নিজস্ব সন্তানদের দুঃখ-কষ্টের চিন্তা করা থেকে "মুক্তি" দিয়েছিলেন তার দর্শনের মাধ্যমে।
    • গাল্টের অধীনে এক জাতি: আইন র‍্যান্ডের বিষাক্ত দর্শন কীভাবে আমেরিকাকে স্থায়ীভাবে রূপান্তরিত করেছিল, স্যালন , ব্রুস ই. লেভাইন , (১৫ ডিসেম্বর ২০১৪)[২৫]
  • আইন র‍্যান্ড যে প্রাথমিক কাঠামোটি উপস্থাপন করেছিলেন, তা থেকে একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দার্শনিক দর্শনের আবির্ভাব ঘটে—যা যেমন বিজ্ঞানের সাথে মুক্ত ইচ্ছা ও নৈতিক দায়িত্বের দ্বন্দ্ব মেটায়, তেমনি জ্ঞানের ধারণার সঙ্গে মানুষের ভুল করার বাস্তবতাকে মিলিয়ে দেয়। শুধুমাত্র এই কারণে যে র‍্যান্ডের চিন্তাধারার কোন শিক্ষাগত ভিত্তি ছিলনা বা তিনি নিজে তার চিন্তাধারার পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করে যাননি, সেজন্য এগুলোকে অযৌক্তিক বা দুর্বল বলা যায় না।
    • টিবোর মাচান , সম্পাদকের কাছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের চিঠি, ৩ আগস্ট, ১৯৮৬।[২৬]
  • আমি মনে করি, কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবাদী আন্দোলন—সম্ভবত আইন র‍্যান্ড এবং কিছু অর্থনীতিবিদের সম্মিলিত প্রভাবের কারণে—এক ধরনের মতাদর্শগত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে, যা ব্যবসা, পুঁজিবাদ বা মানুষের প্রকৃত স্বভাবকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারে না।
    • জন ম্যাকি , টম জি. পামারের উদ্ধৃতি অনুসারে “একজন উদ্যোক্তার সাথে সাক্ষাৎকার: জন ম্যাকির বৈশিষ্ট্য”, দ্য মোরালিটি অফ ক্যাপিটালিজম: হোয়াট ইওর প্রফেসরস ওয়ান্ট টেল ইউ (২০১১), এড. টম জি. পামার, জেমসন বুকস, পৃষ্ঠা ১৬।
  • অনেক বছর আগে, এক দূরবর্তী টেলিভিশন চ্যানেলে আমি স্বাধীনতাবাদী মতবাদকে সমর্থন করেছিলাম, কারণ তখন আমি চাইতাম না যে সরকার আমার জীবনের সমস্ত ব্যাক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। সেইসময়ে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে আমার শোবার ঘরে, ওষুধের বাক্সে, আমার বিছানার বাম পাশের সাইড টেবিলের দ্বিতীয় ড্রয়ার, এইসমস্ত স্থানে আমি যেন এক অদৃশ্য উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। সেই অদৃশ্য উপস্থিতি আর কারোরই না- আমাদের দেশের সরকার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে "স্বাধীনতাবাদ" এক অদ্ভুত রূপ নিয়েছে—এক ধরনের বিকৃত আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে মুক্তবাজার পুঁজিবাদের প্রতি, যার ভিত্তি আইন র‍্যান্ডের লিখিত একটি উপন্যাস আটলাশ শ্রাগড। এ এমন একটি বই যা কোনো প্রেমিক মানুষ কখনোই সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করে না।
    • বিল মাহের , 'বিল মাহের স্বাধীনতাবাদীদের একপ্রকার আবর্জনায় নিক্ষেপ করেছে'।[২৭]
  • র‍্যান্ডের নেতৃত্বদানকারী দর্শনটি স্পষ্টতই সেই পুরনো মানসিক অবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাকে বলা হতো "শৈশবসুলভ সর্বক্ষমতার অনুভব"—অর্থাৎ শিশুসুলভ এক কল্পনা, যেখানে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাঁর মতবাদগুলি ব্যাপক প্রভাবের কারণ হল আমাদের মনের গভীরের আশঙ্কা যা তাঁর মনকেও তাড়িত করেছিল, অন্য কারো কর্তৃত্ব মানা, তার অধীন হওয়ার আশঙ্কা। এই ভয়কে যদি বুদ্ধিমত্তার সাথে সংযত করা যায়, তবে তা স্বাধীনতার প্রতি আমাদের গুরুত্বারোপের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এই ভয়কে আলাদা করে দাঁড় করিয়ে, আত্ম-প্রশংসার নামে এক "বীরোচিত" অবস্থান বানিয়ে তোলার মধ্যে কোনো মহত্ব নেই।
    • মেরি মিডগলি , 'হবস'স লেভিয়াথান, পার্ট ৫' , দ্য গার্ডিয়ান (২০০৯)।[২৮]
  • আপনি সেই সাহস দেখিয়েছেন যা কোনো রাজনীতিক দেখাতে পারেনি—আপনি সাধারণ মানুষকে সেই সত্যটা বলেছেন যা তাদের বলা উচিত, যে: "তোমরা নিকৃষ্ট এবং তোমাদের জীবনের যে সমস্ত উন্নয়নকে তোমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছো, তার সবটাই এসেছে এমন মানুষদের প্রচেষ্টায়, যারা তোমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।" এই কথা যদি অহংকার বলে ধরা হয়—যেমন সমালোচকেরা বলেন—তবুও এটি সেই সত্য, যা বলাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
    • অ্যাটলাস শ্রাগডের প্রশংসা করে আইন র‍্যান্ডকে লেখা মাইসেসের চিঠি , (২৩ জানুয়ারী ১৯৫৮), মাইসেস: দ্য লাস্ট নাইট অফ লিবারেলিজম (২০০৭) -এ উদ্ধৃত।
  • র‍্যান্ড ছিলেন একজন আবেশী "বস্তুনিষ্ঠবাদী" (স্বাধীনতাবাদী-পুঁজিবাদপন্থী ব্যক্তিবাদী) যার সমাজতন্ত্র এবং যেকোনো ধরণের "সমষ্টিবাদের" প্রতি জঘন্য এবং চিন্তাশীল ঘৃণা তার উপন্যাসে প্রকটভাবে দৃশ্যমান।
    • চায়না মিভিল, ৫০টি কল্পবিজ্ঞান ও কল্পকাহিনী যা প্রত্যেক সমাজতান্ত্রিকের পড়া উচিত[২৯]
  • আমি অবশ্যই বলবো যে আইন র‍্যান্ডের দর্শন আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। এটি ছিল "এক শ্রেষ্ঠত্ববাদী শ্বেতাঙ্গ আগ্রাসনকারী জাতির স্বপ্ন" যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের রূপ ধারণ করেছিল। তার ধারণাগুলি আমার কাছে সত্যিই আকর্ষণীয় ছিল না, তবে মনে হয়েছিল যে সেই ধারণাগুলি কিছু বিশেষ শ্রেনীর মাবুষদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, যারা গোপনে নিজেদেরকে অভিজাতদের অংশ বলে বিশ্বাস করে।
    • অ্যালান মুর , কমিক বুক আর্টিস্ট, (৯ আগস্ট ২০০০) "দ্য চার্লটন কমিক্স স্টোরি: ১৯৪৫-১৯৬৮", লেখক: জন বি. কুক
  • র‍্যান্ড প্রায়ই মনে করতেন যে বাস্তবতাসংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর সমাধান করা যায় অস্পষ্ট শব্দের খেলার মাধ্যমে। এই প্রবণতা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় তার তথাকথিত "দর্শনশাস্ত্র সম্বন্ধীয় বাস্তবতা" তত্ত্বে, যেখানে তিনি বাস্তবতার বস্তুগততা এবং কার্যকারণকে প্রমাণ করতে চান এমন কিছু বোধগম্যতাহীন আত্ম-স্পষ্ট বাক্যের মাধ্যমে। এই ধরনের বাক্য বাস্তবিকভাবে কোনো নতুন তথ্য দেয় না, বরং শুধু শব্দের গাণিতিক সত্যতা দেখায়। অথচ র‍্যান্ড এগুলোকেই বাস্তবতার মজবুত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
    • গ্রে নাইকুইস্ট, আয়ন র্যান্ড কনট্রা হিউম্যান নেচার , আইইউনিভার্স, ২০০১।
  • আইন র‍্যান্ড এমন একটি নাম, যার সাথে আমাদের অনেকেরই পরিচয় হয়েছে অপরিনত বয়সে। আমরা বেশিরভাগই সতেরো-আঠারো বছর বয়সে তার রচনা পড়তে শুরু করেছি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেক বুঝতে শিখেছি। আমরা এই সত্য উপলব্ধি করেছি যে, এমন এক দুনিয়া যেখানে আমরা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবি, অন্য কাউকে নিয়ে নয়, যেখানে আত্ম-উন্নয়নকে সমাজের সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়- সেই দৃষ্টিভঙ্গি আসলে খুবই সংকীর্ণ।
    • বারাক ওবামা , "ওবামা অ্যান্ড দ্য রোড অ্যাহেড: দ্য রোলিং স্টোন ইন্টারভিউ" , ২০১২।[৩০]
  • কল্পকাহিনির জগতে আইন র‍্যান্ডের উপন্যাসের মান ততটাই নিম্নমানের, যতটা হওয়া সম্ভব সম্ভব। তাদেরকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে কাছের কোনো আবর্জনার স্তূপেই ফেলে দেওয়া সমিচীন।
    • ফ্ল্যানারি ও'কনর , দ্য হ্যাবিট অফ বিয়িং: লেটার্স অফ ফ্ল্যানারি ও'কনর (১৯৭৯) (সম্পাদনা: স্যালি ফিটজেরাল্ড), পৃ. ৩৯৮
  • কিন্তু র‍্যান্ডের সব তথাকথিত "বীর উদ্যোক্তারা" এমন শিল্পখাতে সফলতার প্রচার করে যেগুলো আজ মৃতপ্রায় বা রক্তাক্ত। যখন চারপাশে কলকারখানা পূর্ন উদ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবং মানুষের সৃষ্টিশীলতা ক্রমাগতই উর্ধমুখী হচ্ছে— তখন নির্মাতা ও ভোক্তা শ্রেনীদের মধ্যে তীব্র নৈতিক বিভাজন তৈরি করে রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখা খুবই সহজ কাজ।
    • লরা পেনি , মোর মানি দ্যান ব্রেনস (২০১০), পৃ. ১৫।
  • আইন র‍্যান্ডের দর্শন হাজার হাজার জীবন বদলে দিয়েছে, যার মধ্যে আমার নিজের জীবনও রয়েছে। তার দর্শন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।
    • লিওনার্ড পিকফ , বস্তুনিষ্ঠতা: আইন র‍্যান্ডের দর্শন (১৯৯১), পৃষ্ঠা ১৩।
  • আইন র‍্যান্ডের দৃষ্টিতে, দর্শন হল প্রতিটি মানুষ এবং মানব-সংস্কৃতি গঠনকারী মৌলিক শক্তি। এটি বিজ্ঞান যা মানুষের ধারণাগত দক্ষতাকে পরিচালনা করে। তাই মানব সমাজ তার প্রতিটি প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কিভাবে উন্নতি করবে তার উপর দর্শনের গভীর প্রভাব আছে।
    • লিওনার্ড পিকফ , বস্তুনিষ্ঠতা: আইন র‍্যান্ডের দর্শন (১৯৯১), পৃ. ১৯।
  • বিদ্রোহের সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ আমাদের তিনজন বিখ্যাত বযাক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তারা হলেন ভ্লাদিমির নাবোকভ, ইশাইয়া বার্লিন এবং আইন র‍্যান্ড। প্রথমজন ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, দ্বিতীয়জন ছিলেন একজন দার্শনিক। তৃতীয়জন না ঔপন্যাসিক না দার্শনিক, কিন্তু তার মধ্যে এই দ্বৈত পেশার গুনই বর্তমান ছিল- অন্তত অনেকে তাই ভেবেছিলেন।
    • কোরি রবিন, "গারবেজ অ্যান্ড গ্র্যাভিটাস"। দ্য নেশন (২০১০)
  • দুইটি উপন্যাস একটি বইপাগল চৌদ্দ বছরের কিশোরের জীবন বদলে দিতে পারে: দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস এবং অ্যাটলাস শ্রাগড। এর একটি হলো একটি শিশুসুলভ কল্পকাহিনি, যা এক অবিশ্বাসনীয় নায়কদের প্রতি আজীবনের মোহ সৃষ্টি করে। পড়ুয়াদের মধ্যে এমন আবেগের সৃষ্টি করে যে সে বাস্তব জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। অন্য কাহিনীটি অর্কস্ কাল্পনিক প্রানীদের নিয়ে রচিত।
    • জন রজার্স , 'আই অ্যাম এলসওয়ার্থ টুহে!' বইতে পল ক্রুগম্যানের উদ্ধৃতি , দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (২০১০)[৩১]
  • এই ঘটনা থেকে জানা যায়, র‍্যান্ডিয়ান আন্দোলনে বুদ্ধি এবং হাস্যরস নিষিদ্ধ ছিল। এর কারন হিসাবে এই দার্শনিক যুক্তি দেখানো হত যে হাস্যরস মানুষকে নিজের মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্বহীন করে তোলে। অবশ্যই, আসলে কোনও সম্প্রদায়ই হাস্যরসের তীব্রতা এবং গুরুতর প্রভাব, অর্থাৎ এর বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি সহ্য করতে পারে না। র‍্যান্ডিয়ান আন্দোলনে শত্রুদের উপহাস করার অনুমতি ছিল। এবার সেটাকে যদি রসিকতা হিসাবে গন্য করা হয় তাহলে এটাই ছিল তাদের আন্দোলনে হাস্যরসের একমাত্র উপাদান।
    • মারে রথবার্ড , 'দ্য সোসিওলজি অফ দ্য আইন র‍্যান্ড কাল্ট' (১৯৭২)[৩২]
  • র‍্যান্ড সম্প্রদায়ের বিশ্লেষণ আমরা এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শেষ করছি যে, এখানে বহিরাগত এবং গুপ্ত বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্বের একটি চরম আভাস লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, যুক্তি এবং স্বাধীনতার নামে র‍্যান্ড সম্প্রদায় কার্যত সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারনার প্রচার করেছিল। র‍্যান্ড সম্প্রদায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না, কেবল র‍্যান্ডের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিল। প্রত্যেক মানুষের সঠিক যুক্তি নিয়ে নয়, কেবল র‍্যান্ডের যুক্তি নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিল। একমাত্র ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য যা অন্য সকলকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তা হল আইন র‍্যান্ডের নিজের স্বাধীনতা। বাকি সকলকে র‍্যান্ডের মন এবং ইচ্ছার অধীনেই চলতে হত।
    • মারে রথবার্ড, "আইন র‍্যান্ড অনুগামীদের সমাজবিজ্ঞান" (১৯৭২)
  • তিনি যেসকল সমস্যার উপর ভিত্তি করে আন্দোলনের অবতারনা করেছিলেন, সেগুলোর অনেকই আজও বিদ্যমান। এখনও মুক্ত বাজারনীতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সমষ্টিবাদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পক্ষে আন্দোলন চলছে। আত্মনির্ভরতা ও আত্মত্যাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব আজও বিদ্যমান। কিন্তু র‍্যান্ড যে পৃথিবী তার গল্পের নায়কদের দিয়ে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, এখনকার সময়ের নিরিখে তাকে খুব একটা যুগান্তকারী হিসাবে মনে হয় না; বরং সেটি কখনও কখনও যেন অতীতমুখী এক কল্পনার মতো মনে হয়। সেটি ছিল এক ধরনের স্বপ্নবিভোর কল্পনা— যেখানে গণতান্ত্রিক জীবনের অন্তর্নিহিত টানাপোড়েন মীমাংসা করা হয়নি, বরং এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
    • এডওয়ার্ড রথস্টেইন , 'কনসাইডারিং দ্য লাস্ট রোমান্টিক, আইন র‍্যান্ড, অ্যাট ১০০' ইন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (২০০৫)[৩৩]
  • এক সময় আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল এ রকমই। মনে হয় আমরা সকলেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এরকম চিন্তাধারা পোষণ করেছি। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ হয়তো কখনোই সেই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসেন না—তাঁরা পুরো প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে অদ্ভুত এক বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থাকেন যে, আইন র‍্যান্ড আসলে সম্পূর্ণ সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত চিন্তার মানুষ ছিলেন।
    • ফিল স্যান্ডিফার, জন গাল্ট হ্যাস বিন কিডন্যাপড্ বাই নিনজাস (ব্যাড ডুডস), ২০১০[৩৪]
  • আইন র‍্যান্ড যে আদর্শিক জগৎ কল্পনা করেছেন তাঁর কামনামূলক মতবাদকে বাস্তবায়ন করার জন্য,যুক্তিসংগতভাবে বাস্তব পৃথিবীর সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই— যেমন কোনো লেখক যদি এমন এক জগত কল্পনা করেন যেখানে মানবজাতির শাসনভার থাকে কোন এক বুদ্ধিমান অপ্রাসঙ্গিক জড়বস্তু(যেমন দইয়ের পাত্র) -এর হাতে, তাহলে তার সাথে বাস্তবের কোনোভাবেই সম্পর্ক নেই। এই বিচ্ছিন্নতা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে এই কথায় যে, র‍্যান্ডের জগতে যে মানুষটি আত্মঘোষিত নৈতিকতার ভিত্তিতে সমাজের পতন ঘটায়—যার ফলে লক্ষ, এমনকি কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়—তাকে একজন ত্রাতা বা উদ্ধারকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ বাস্তব পৃথিবীতে, এমন এক ব্যক্তিকে গণহত্যাকারী বিকৃতচরিত্র বলেই বিবেচনা করা হত।
    • জন স্কালজি , অ্যাটলাস শ্রাগড সম্পর্কে আমার কী মনে হয় , ২০১০[৩৫]
  • আইন র‍্যান্ড বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বেশি পঠিত দার্শনিকদের একজন। ... শিক্ষাবিদরা প্রায়শই তার ধারণাগুলির অবহেলা করেছে। একজন সর্বাধিক বিক্রিত ঔপন্যাসিক, একজন বিতর্কিত, উগ্র বিতর্কবাদী, পুরুষ শাসিত এক পেশাদার জগতে একজন দৃষ্টিকটু মহিলা, এই সমস্ত বৈপরীত্যের নিরিখে র‍্যান্ড সারা জীবন প্রাতিষ্ঠানিক জগৎ থেকে উপেক্ষিত ছিলেন। তার কাজগুলি এমন আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়াকে অনুপ্রাণিত করেছিল যা তার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আপোষহীন। অনেক ক্ষেত্রে, তার শ্রোতারা হয় তার ভক্তিতে অভিভূৎ থাকতেন অথবা তাদের ধারনার প্রতি বিরোধিতা করলে বর্বরের ন্যায় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেন। বামপন্থীরা তার কমিউনিস্ট-বিরোধী, পুঁজিবাদী রাজনীতিতে ক্ষুব্ধ ছিল, যেখানে ডানপন্থীরা তার নাস্তিকতা এবং নাগরিক স্বাধীনতাবাদের ধারনায় বিরক্ত ছিলেন।
    • ক্রিস ম্যাথিউ সিয়াবারা , আইন র‍্যান্ড: দ্য রাশিয়ান র‍্যাডিক্যাল (১৯৯৫) ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১।
  • বস্তুনিষ্ঠবাদীদের দর্শনে আইন র‍্যান্ড যে ধর্মীয় গোঁড়ামির মতো একটি মারাত্মক ত্রুটি রেখে গেছেন, তা যুক্তিবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উপর জোর দেয় এই বিশ্বাসে নিরিখে নয় যে মানুষ আত্মপ্রণোদিত হয় কিংবা পুঁজিবাদই আদর্শ ব্যবস্থা—এই বিষয়গুলো তাদের আসল সমস্যা নয়! আসল সমস্যাটি হলো, অবজেকটিভিজম বা বস্তুনিষ্ঠবাদ এই বিশ্বাসে আস্থাশীল যে যুক্তির মাধ্যমে পরিপূর্ণ জ্ঞান এবং চূড়ান্ত সত্য আবিষ্কার করা সম্ভব; ফলে নৈতিকতা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রেও তারা চূড়ান্ত সঠিক ও চূড়ান্ত ভুলের ধারণা তৈরি করে। বস্তুনিষ্ঠবাদীদের কাছে, যদি কোনো নীতিকে যুক্তির মাধ্যমে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে সেই বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ থাকে না। আপনি যদি সেই নীতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, তবে আপনার যুক্তি ত্রুটিপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হবে। আপনার যুক্তি যদি সংশোধনযোগ্য হয়, তাহলে সংশোধনের চেষ্টা করা হবে—আর যদি তা না হয়, তাহলে আপনার আস্তিত্বকেই ত্রুটি হিসাবে ধরা হবে এবং সেই কারণে এই গোষ্ঠীতে আপনার কোনো স্থান থাকবেনা। যারা এমন "অসংশোধনযোগ্য বিভ্রান্তিকর" ধারনা পোষন করে তাদের চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা উচিত।
    • মাইকেল শেরমার , 'ইতিহাসের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দল' , স্কেপটিক, খণ্ড ২, নং ২। (১৯৯৩) পৃষ্ঠা ৭৪-৮১ [৩৬]
  • অনার্সশিপ সোসাইটি বা মালিকানাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা-এর সম্পূর্ণ ভিত্তি নির্মিত হয়েছে জনগণের সম্পদকে ব্যক্তিমালিকানার আওতায় আনার হেতু এবং এই বিশেষ সমাজব্যাবস্থার ধারনাকে ন্যায্যতা দিতে যে কৃত্রিম আইনপ্রণয়ন করা হয়েছে, রিচার্ড এপস্টিনের মতো চিন্তাবিদদের অনুসারে, তিনটি ইচ্ছাকৃত বিকৃতির ওপর বিদ্যমান রয়েছে... এর মধ্যে তৃতীয় ও অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতি হলো, জনসাধারণ ও তাদের সার্বিক স্বার্থের ধারনাকে সংকুচিত করে কেবল একক ব্যাক্তি বা ব্যক্তিস্বার্থের ধারনায় পরিনত করা। পাবলিক বা জনগণ শব্দটি যেমন রাষ্ট্র বা সরকারকে বোঝায়, তেমনই বোঝায় সম্মিলিত স্বার্থ ও সামাজিক সংগঠনগুলোকেও। কিন্তু 'ব্যাক্তিস্বার্থ নির্ভর পুঁজিবাদ' সমাজকে কেবল ব্যক্তিদের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করে, আর তাতে কমিউনিটি বা সামাজিক সমষ্টির ধারণাটিকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। মার্গারেট থ্যাচার বলেছিলেন, "সমাজ বলে কিছু নেই, আছে কেবল ব্যক্তি।" আইন র‍্যান্ডও বলেছিলেন, "জনগন বলে কোনো সত্তা নেই, কারণ জনগন হল কেবল কয়েকজন ব্যক্তির সমষ্টি মাত্র।"
    • বন্দনা শিব, আর্থ ডেমোক্রেসি: ন্যায়বিচার, স্থায়িত্ব এবং শান্তি (২০০৫)
  • ধনীরা অর্থকে একটি ইতিবাচক হাতিয়ার হিসেবে দেখেন যার মাধ্যমে তারা নিজেদের এবং তাদের পরিবারের জন্য স্বাধীনতা এবং বাড়তি সুযোগ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। ধনী হওয়ার মাধ্যমে তারা অবাধে জীবনযাপন করার সুযোগ দেয়, যাকে লেখক/দার্শনিক আইন র‍্যান্ড অবাধ, অস্তিত্বময় জীবনযাত্রা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। অবাধ, অস্তিত্বময় জীবনযাত্রা, যার অর্থ হল যা খুশি করা, যখন খুশি করা, যার সাথে খুশি থাকা, যতক্ষণ ইচ্ছা থাকা- অর্থাৎ সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সব কিছু করার ক্ষমতা।
    • স্টিভ সিবোল্ড (২০১০)। ধনী ব্যক্তিরা কীভাবে চিন্তা করেন , লন্ডন হাউস, পৃষ্ঠা ৩২।
  • আরও রক্ষণশীল চিন্তাবিদদের কোন আলোচনাতেই স্থান দেওয়া হয় না... আইন র‍্যান্ডের নাম তো একবারও উচ্চারিত হয় না।
    • ক্রিস্টিন স্টলবা, ২০০২ সালে প্রকাশিত লাইং ইন আ রুপ অফ ওয়ান'স ওন: হাউ উইমেন'স স্টাদিস টেক্স্টবুক্স মিসএডুকেটস স্টুডেন্টস প্রবন্ধ থেকে, যেখানে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন যে, আইন র‍্যান্ডের বিশাল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহুল ব্যবহৃত নারী-অধিকার বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে।[৩৭]
  • স্বার্থপর মানুষের যে প্রচলিত ভাবমূর্তি—যেন সে সব নীতিমালা অগ্রাহ্য করে শুধু নিজের ইচ্ছামতো, যখন যা চায় তাই করে চলে—এই ধারণার বিপরীতে আইন র‍্যান্ড একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। তাঁর মতে, এই ধরনের অস্থির, আবেগনির্ভর জীবনযাপন আসলে আত্ম-ধ্বংসের পথ। প্রকৃতপক্ষে, নিজের স্বার্থে কাজ করতে হলে ব্যাক্তিকে অবশ্যই কিছু নিরবচ্ছিন্ন, মৌলিক বাস্তবতার স্বীকৃতির ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হয়। এই বাস্তবতাগুলোই নৈতিক নীতিমালার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
    • তারা স্মিথ , আইন র‍্যান্ডের আদর্শিক নীতিশাস্ত্র: দ্য ভার্চুয়াস ইগোইস্ট (২০০৬)
  • সবকিছু সংক্ষেপে বললে, আইন র‍্যান্ডের বিশ্বাসব্যবস্থাটি এইরকম:
    ১. সত্য মানে সত্যই—যা কিছু একেবারে সঠিক অথবা সম্পূর্ণ ভুল, তা নির্ধারিত হয় যুক্তির মাধ্যমে।
    ২. আমার নিজের যুক্তির ভিত্তিতে, আমি একেবারে সঠিক।
    ৩. দান-ধ্যান অনৈতিক।
    ৪. নিজের চৌদ্দগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক খরচ নিজেই বহন কর।
    • ম্যাট তাইব্বি , গ্রিফটোপিয়া: বাবল মেশিন, ভ্যাম্পায়ার স্কুইডস, এবং লং কন দ্যাট ইজ ব্রেকিং আমেরিকা।
  • এই অদ্ভুত, ক্ষীণকায় নারীটি লোভ ও আত্মস্বার্থকে নৈতিক অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাঁকে মাঝে মাঝে জর্জ অরওয়েলের বিশুদ্ধ ভাষায় আশ্রয় নিয়ে "স্বাধীনতা হল দাসত্ব" -এই ধরনের উদ্ধৃতির প্রচারনা করতে দেখা গিয়েছে। তবে তাঁর তথাকথিত দর্শনের অবাস্তবতার চেয়েও আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে তাঁর বিশাল পাঠক সমাজ (আমি যখন প্রতিনিধিদলের নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন তিনিই ছিলেন সেই একজন লেখক, যাঁর নাম সাধারণ মানুষ জানত এবং আলোচনা করত)। তাঁর প্রতি সাধারণ, সরল মানুষদের গভীর আকর্ষণ আছে—বিশেষ করে তাদের, যারা সংগঠিত সমাজব্যবস্থায় বিভ্রান্ত, কর দিতে চায় না, রাষ্ট্রীয় কল্যাণের ধারণায় যাদের আপত্তি আছে, অন্যদের দুঃখ-ভোগের কথা ভাবলে যারা অপরাধবোধে ভোগে কিন্তু একই সঙ্গে নিজেদের হৃদয় কঠিন রাখতেও চায়। তাঁদের জন্য আইন র‍্যান্ড এক আকর্ষণীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, যেটি হল: পরার্থপরতা বা পরোপকারই সব অশুভের মূল, আত্মস্বার্থই একমাত্র শুভ, আর যদি তুমি বোকার মতো আচরণ করো বা অযোগ্য হও, সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত দায়।
    • গোর ভিদাল , "কমেন্ট", এসকোয়ার (জুলাই ১৯৬১)[৩৮]
  • কারণ মানুষের লোভ এবং অহংকারকে ন্যায্যতা দেওয়া এবং প্রশংসা করা আমার মতে কেবল অনৈতিকই নয়, বরং অশুভ।
  • প্রথমত, একজন মানুষকে নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উপদেশ দেওয়া একেবারেই অপ্রয়োজনীয়— কারন সে তা করবেই। এই ব্যাপারে যে কেউ নিশ্চিত থাকতে পারেন। বরং কোন ব্যাক্তিকে তার স্বার্থের উর্ধে দেখার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো অনেক কঠিন। কোন কল্যানকর কার্যে তার প্রতিবেশীর সঙ্গ দেওয়া, বাঁধ নির্মাণে সাহায্য করা বা একটি শহর রক্ষায় অংশ নেওয়া কিংবা দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য নিজের সঞ্চিত খাদ্য দান করা- এই সমস্ত কাজের যৌক্তিকতা কোন ব্যাক্তিকে বোঝানো সহজ নয়। কিন্তু যেহেতু আমাদের একত্রে বসবাস করতে হয়, এবং পরস্পরের ওপর বহু বিষয়ে নির্ভর করতে হয়—তাই পরার্থপরতা হলো বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। মানুষের দ্বারা প্রয়োজনীয় কাজগুলো করিয়ে নেওয়াই হলো সরকারের চিরন্তন কঠিন দায়িত্ব—ধর্ম ও দর্শনও এই বিপরীতমুখী ধারনার মুখোমুখি হয়।
  • কোন দুর্ভাগা মানুষের সাহায্য করা একটি নৈতিক কর্তব্য—এই ধারণাটি মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকেই প্রায় সকল নৈতিক আচরণব্যবস্থার নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু আমরা প্রায়ই এই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হই কারণ আমাদের অন্তর্নিহিত সেই স্বার্থপর, ভোগবিলাসী সত্তা—আমি —কে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তবুও, এখন পর্যন্ত আমরা সকলেই একমত ছিলাম যে, অন্যের পাশে দাঁড়ানো একটি সঠিক কাজ।
  • আইন র‍্যান্ডের "দর্শন" প্রায় নিখুঁতভাবে অনৈতিক—এবং এই কারণেই তার বিপুল পাঠকগোষ্ঠীর উপস্থিতি আরও বেশি আশঙ্কাজনক ও তাৎপর্যপূর্ণ, বিশেষ করে যখন আমরা আমাদের সমাজের এক অদ্ভুত নতুন পর্বে প্রবেশ করছি। মানুষের লোভ ও আত্মকেন্দ্রিকতাকে যুক্তিযুক্ত এবং প্রশংসনীয় বলে উপস্থাপন করা আমার দৃষ্টিতে শুধু অনৈতিক নয়, বরং তা অশুভের প্রতীক।
    • গোর ভিদাল , "কমেন্ট", এসকোয়ার (জুলাই ১৯৬১)[৩৯]
  • ডানপন্থী চিন্তাবিদরা র‍্যান্ডের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে দর্শনকে করতে পারে (যদিও তার কাছে সেই দার্শনিক ধারনার তেমন কোন ব্যবহার ছিল না)। ব্যক্তি হিসেবে তিনি এককথায় ব্যক্তিত্বহীন। তার তত্ত্বগুলি কল্পকাহিনীর মতো এবং একইসাথে নিম্নমানের। যদি রিপাবলিকানরা সত্যিই ২০১২ সালে জয়ী হয়, তাহলে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক জগতে র‍্যান্ডের দর্শন অধ্যয়ন করার প্রয়োজন হতে পারে এবং একই কারণের হেতু আমাদের মাঝে মাঝে সৃষ্টিবাদও অধ্যয়ন করার প্রয়োজন হবে।
    • অ্যালান উলফ , 'দ্য রিডিকুলাস রাইজ অফ আইন র‍্যান্ড' , দ্য ক্রনিকল অফ হায়ার এডুকেশন (২০১২)[৪০]
  • আইন র‍্যান্ড যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন, কিন্তু ততটাই তিক্তও, যা তাঁকে যুক্তির বদ্ধচক্র এবং পুনর্লিখিত ইতিহাসের এক অবরূদ্ধ কোণে নিজেকে আটক করতে বাধ্য করেছিল।
  • তার দার্শনিক ব্যবস্থা এমনভাবে গঠিত ছিল যে, যেকোনো প্রমাণ বা যুক্তি—যা সেই ব্যবস্থা সম্পর্কে আপত্তি জানাতে বা সংশোধন করার পক্ষে সওয়াল করত—তা পূর্বেই বর্জিত হয়ে যেত। সেই দার্শনিক কাঠামো এক প্রকার স্থবির অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। বাইরে থেকে তার কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না, কিংবা তাকে সেই কাঠামোর বাইরে আনাও ছিল অসম্ভব—কারণ তার চিন্তাব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্ভেদ্য ও কঠোর।
    • জন সি. রাইট, "অবজেক্টিভিজম অ্যান্ড অল্ট-রাইট" (২০১৭)[৪১]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]