বিষয়বস্তুতে চলুন

আজারবাইজান

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

আজারবাইজান যা আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র হিসাবে পরিচিত, এটি ইউরেশিয়ার ককেশাস অঞ্চলের একটি দেশ। এর রাজধানী বাকু ক্যাসপিয়ান সাগরের উপকূলবর্তী একটি শহর। পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দেশটি পূর্বে ক্যাসপিয়ান সাগর, উত্তরে রাশিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া, পশ্চিমে আর্মেনিয়া এবং দক্ষিণে ইরান দ্বারা বেষ্টিত।

আজারবাইজানের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ নাখিচেভানে স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র বর্তমান। এই অঞ্চলের উত্তর ও পূর্বে আর্মেনিয়া, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ইরান এবং উত্তর-পশ্চিমে তুরস্ক অবস্থিত। আজারবাইজানের দক্ষিণ-পশ্চিমে স্থিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি ১৯৯১ সালে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছে কিন্তু কোনো দেশই তার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এখনো এটিকে আইনিভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ২০২৩ সালে আজারবাইজান অঞ্চলটি পুনর্দখল করে।

আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং ২০০১ সাল থেকে ইউরোপ কাউন্সিলের সদস্য। আজারবাইজানি জনগণদের সংক্ষেপে আজারিরা হিসাবে উল্লেখ করা হয়। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৮৫% ঐতিহ্যগতভাবে শিয়া মুসলিম। দেশের বাকি মুসলিমরা সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত। দেশে বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মের মানুষদের মধ্যে রয়েছে প্রাচীনপন্থী রুশ (২.৫%) এবং আর্মেনীয় খ্রীস্টান (২.৩%)। অন্যান্য বাকি ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছয় শতাংশ। দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি উদীয়মান গণতন্ত্রিক দেশ হলেও বাস্তবে একটি কঠোর কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • আজারবাইজান এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করেছে যা কেবল স্থানীয় অঞ্চল নয়, ইউরোপীয় মহাদেশেরও জ্বালানি চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। এই ক্ষেত্রে দেশটি সম্পূর্ণ স্বনির্ভর। আমরা অন্যান্য দেশকে জ্বালানি ও জ্বালানি বাহক বিক্রি করি। একই সময়ে, আজারবাইজান তেলের উপর তাদের জ্বালানির নির্ভরতা হ্রাস করছে এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি ভবিষ্যতে বিকাশ লাভ করবে।



  • আমি আজারিদের অর্ধ-মুসলিম বা অপ্রকৃত মুসলিম হিসেবে ভাবতে রাজি নই। এমনকি ৭৩ বছরের ধর্মনিরপেক্ষ সোভিয়েত শাসনের পরও, তারা মুসলিম হিসাবে গর্বিত।


  • ১৯২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে, রেড আর্মি ককেশাস ও মধ্য এশিয়ায় বিরোধিতা দমন করতে সক্ষম হয়, যদিও ১৯২০ সালে পোল্যান্ডে তাদের আক্রমণ প্রতিহত হয়েছিল। এই সংঘর্ষগুলো বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ককেশাস অঞ্চলের সংঘর্ষ আংশিকভাবে ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সংগ্রামী প্রভাব বিস্তার একটি উদাহরণ ছিল। ব্রিটিশরা আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও জর্জিয়া, যারা রাশিয়ান গৃহযুদ্ধের সময় স্বল্প সময়ের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এই তিন দেশের অধিকৃত অঞ্চলকে ইরাক, পারস্য (ইরান) ও ভারতের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত। একই সঙ্গে এই তিন দেশ ছিল শিল্পের কাঁচামালের উৎস। বিশেষত আজারবাইজান থেকে তেল আমদানী করা হত এবং জর্জিয়া হয়ে সেই তেলে নিয়ে আসা হত। ১৯১৮ সালের শেষ দিকে, ব্রিটিশ বাহিনী কৃষ্ণসাগরের বন্দর বাটুমিতে অবতরণ করে, যা ক্যাস্পিয়ান সাগর সংলগ্ন তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল বাকুর সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। ব্রিটিশরা টর্পেডো-সজ্জিত উপকূলীয় মোটরবোট স্থলপথে ক্যাস্পিয়ান সাগরে পাঠানো হয়। তবে, অতিরিক্ত সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতির চাপে পড়ে ব্রিটিশরা ১৯১৯ সালের শেষ দিকে এই অঞ্চল থেকে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এরপর ককেশাস অঞ্চলের প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে বিভাজনের সুযোগ নিয়ে সোভিয়েতরা অগ্রসর হয় এবং ১৯২০–২১ সালের মধ্যে অঞ্চলগুলো দখল করে নেয়।
    • জেরেমি ব্ল্যাক, দ্য কোল্ড ওয়ার: আ মিলিটারি হিস্ট্রি (২০১৫)


  • যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতীয়তাবাদ বিকাশ লাভ করে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে প্রকাশ পায়, তখন সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিস্তৃত সামরিক সম্পদ ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রচেষ্টা ছিল না। ইতিমধ্যে ১৯৮৬–৮৭ সালে, সরকার বাল্টিক প্রজাতন্ত্রগুলিতে পার্টি নেতাদের সমর্থনে বলপ্রয়োগ করতে অস্বীকার করেছিল। যখন সংকট চরমে পৌঁছায়, তখন সোভিয়েত সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষায় আগ্রহী হয়ে জর্জিয়া (১৯৮৯), আজারবাইজান (১৯৯০), লিথুয়ানিয়া (১৯৯১), লাটভিয়া (১৯৯১), এবং মলডোভা (১৯৯২)-তে প্রভাব বিস্তারকারী জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। তবে, এই পদক্ষেপগুলি ক্ষুদ্র পরিসরের আবদ্ধ ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে বসবাসকারী এবং রাশিয়ার বাইরের বসবাসকারী ২৫ মিলিয়ন রাশিয়ান নাগরিকের পক্ষ থেকেও কোনো উল্লেখযোগ্য সহিংস সহায়তা দেখা যায়নি; অথচ ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের সংকটে এই রাশিয়ানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
    • জেরেমি ব্ল্যাক, দ্য কোল্ড ওয়ার: আ মিলিটারি হিস্ট্রি (২০১৫)


  • সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নিয়ে অধিকাংশ বিবরণ বাল্টিক, জর্জিয়ান ও ইউক্রেনীয় সক্রিয়তার উপর কেন্দ্রীভূত হলেও একটি তথ্য অনুসারে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে বাকুর রাস্তায় সোভিয়েত সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে আজারবাইজানি জনগণের স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা দমন করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এই পদক্ষেপ ইউএসএসআর-এর সামগ্রিক পতনের কারণ হয়ে ওঠে।



  • আমার মনে হয়, আমেরিকান রাজনীতিবিদরা যে বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তা হলো—আজকের আজারবাইজান সেই বিশৃঙ্খল, যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাধীনতার শুরুর বছরগুলোতে মোকাবিলা করতে হয়েছিল।


  • আমরা আশা করি আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে এই পারস্পরিক উত্তেজনা (তুরস্কের প্রতি ইঙ্গিত করে) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবেনা। আমরা রাশিয়ার সঙ্গেও খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখি এবং তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে আমরা আমাদের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।


  • ইউরোপীয় সংস্থাগুলি এখানে কাজ করছে, যাতে তারা তাদের অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারে এবং আজারবাইজান সেই অভিজ্ঞতা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে। আজারবাইজান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রতি বছর আরও গভীরতর হচ্ছে। আমরা আশা করছি যে ২০২০ সালে আজারবাইজান থেকে গ্যাস সরবরাহ পেতে সক্ষম হব। এছাড়াও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, টানাপ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ের আগেই হতে চলেছে।



  • যদিও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিকাংশ রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে কমিউনিজম ত্যাগ করেছিল কিন্তু কিছু ভয়াবহ ব্যতিক্রমী উদাহরনও আছে। রাশিয়ান ও মলদোভান অভিজাতরা মলদোভায় আধিপত্যের জন্য লড়াই করেছিল (মলদোভার অধিবাসীরা সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা উল্লিখিত নাম মলদাভিয়া পরিত্যাগ করেছিল)। গোত্রীয় ও ধর্মীয় বিরোধ তাজিকিস্তানে, আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এক নিষ্ঠুর গৃহযুদ্ধের জন্ম দেয়। চেচনিয়া রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কারাবাখে আর্মেনিয়ান-অধ্যুষিত একটি অঞ্চলের অধিকার নিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশ অন্তত রক্তপাত ছাড়াই স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
    • রবার্ট সার্ভিস, কমরেডস!: এ হিস্টরি অব ওয়ার্ল্ড কমিউনিজম (২০১০)


বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

উইকিমিডিয়া কমন্সে আজারবাইজান সম্পর্কিত মিডিয়া