আবুল আসাদ
অবয়ব
আবুল আসাদ (জন্ম: ৫ আগস্ট ১৯৪২) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক। তিনি কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিকে রাজশাহী সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৭০ সালে ১৭ই জানুয়ারী দৈনিক সংগ্রামে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিক জীবনের শুরু করেন। ১৯৮১ সালে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তার গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস গ্রন্থ 'কাল পঁচিশের আগে ও পরে' এবং 'একশ' বছরের রাজনীতি', ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রধর্মী গল্প 'আমরা সেই সে জাতি' (তিন খন্ড) এবং প্রবন্ধ সংকলন 'একুশ শতকের এজেন্ডা'। তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম হলো সাইমুম সিরিজ। এ পর্যন্ত এই সিরিজের ৬৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]সময়ের সাক্ষী
[সম্পাদনা]- আবুল আসাদ, সময়ের সাক্ষী, সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, ঢাকা, জুন ২০০৬।
- গঙ্গা একটা আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীর গতি ও পানি নিয়ে যথেচ্ছাচার চালাবার কোন বৈধ অধিকার ভারতের নেই।
- "ফারাক্কা পাপের প্রায়শ্চিত্ত" (১০ আগস্ট ১৯৮০)।
- অতীতের দিকে নজর করলে দেখা যাবে, ভারত আলোচনার ছাতা ফুটিয়ে রেখে তার ছায়ায় নিরাপদে তার সব কাজটা সে সমাধা করে নিয়েছে।
- "ভারতের গঙ্গা চুরি" (১৮ মে ১৯৮৩)
- ১৯৭৪ সালে যেদিন ফারাক্কা চুক্তি সম্পাদিত হলো, সেদিন ভারত শুধু বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধকেই বিতর্কের ঊর্ধ্বে তুলে নেয়নি, গোটা ‘গঙ্গা’কে চুরি করে নেবারও বীজ সে ঐ চুক্তিতে বপন করে।
- "ভারতের গঙ্গা চুরি" (১৮ মে ১৯৮৩)
- আমাদের সদিচ্ছা ও সারল্য যত বেড়েছে তাদের (ভারতের) ষড়যন্ত্রের পরিধি তত বেড়ে গেছে।
- "ভারতের গঙ্গা চুরি" (১৮ মে ১৯৮৩)
- পদ্মাকে মেরে হুগলী নদীর মেয়াদ বাড়ানোর জন্যই ফারাক্কার সৃষ্টি হয়েছিল হয়তো, কিন্তু আজ ভারত ফারাক্কাকে ব্রহ্মপুত্রের পানি চুরির হাতিয়ার হিসেবে মনে করছে। কে জানে এটাই তাদের মূল প্লান ছিল কিনা।
- "ভারতের গঙ্গা চুরি" (১৪ আগস্ট ১৯৮৪)
- ফারাক্কা বাঁধ আমাদের পদ্মা এবং তার শাখা নদীগুলোকে যে মেরে ফেলছে, তা বুঝার জন্যেও কোন ভূগোল জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। যে কেউ আজ শুকনো মওসুমে পদ্মার তীরে গিয়ে একবার দাঁড়াতে পারেন। তিনি যদি অন্তত ষাটের দশকের পদ্মাকেও দেখে থাকেন, তাহলে আজকের পদ্মার ভয়াবহ রূপ দেখে তিনি চমকে উঠবেন। তিনি দেখবেন, আজকের পদ্মা অতীতের পদ্মার একটা লাশ মাত্র।
- "পদ্মার লাশ" (২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮)।
- ষাটের দশকের শেষের দিকের কথা। তখন আমাদের বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ। ফারাক্কা বাঁধ তৈরীর কাজ ভারত পুরোদমে চালাচ্ছে তখন। প্রতিবাদের কোনই তোয়াক্কা করছে না ভারত। ঢাকার দেয়ালে তখন বড় বড় অক্ষরে লেখা একটা শ্লোগান সকলেরই চোখে পড়তো। 'মরণবাঁধ ফারাক্কা ভেংগে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'- এই শ্লোগানের কথা বলছি আমি। শ্লোগানটি খুব পপুলার ছিল, কিন্তু রাজ্জাক সাহেবরা পছন্দ করতেন না এই শ্লোগান। ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে এই শ্লোগান বা কোন শ্লোগানই তারা কখনও দেননি। এই প্রতিবাদকে তারা মনে করতেন রাজনীতি। তাদের এই আচরণের কারণে আমার এবং সকলের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ ফারাক্কা বাঁধকে বাংলাদেশের জন্য 'মরণ ফাঁদ' মনে করে না। মনে হতো, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের কোন ক্ষতি করবে না, নিছক ভারত বিরোধিতার কারণেই ফারাক্কার বিরুদ্ধে আবেগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশ্য অনেকে মনে করতো ভারত যাই করুক তার 'বিরোধিতা' করার সাধ্য আওয়ামী লীগের নেই।
- "ভারতের গঙ্গা চুরি" (১৯ আগস্ট ১৯৯৬)
- ইতিহাস সাক্ষী, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সূর্যসেনের যে স্বাধীনতা সংগ্রামের ফল, সে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, মুসলমানরা নয়, মুসলিম লীগ নয়। বরং মুসলমানদের বঞ্চিত করে একতরফাভাবে স্বাধীনতা কুক্ষিগত করারই একটা কৌশল ছিল এটা।
- "প্রীতিলতারা, ইতিহাস ও বাংলাদেশ", (১৮ অক্টোবর ১৯৯৬)
- গান্ধী তথা কংগ্রেসের আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে তখন মুসলিম লীগ তথা মুসলমানদের চরম প্রতিপক্ষ হিসেবেই তৎপর ছিল। প্রীতিলতা আমাদের তৎকালীন চরম প্রতিপক্ষ সূর্যসেনের, অন্যকথায় হিন্দু কংগ্রেসের ছিলেন সৈনিক। হিন্দু কংগ্রেসের লক্ষ্য অর্জনের জন্যই প্রীতিলতা সংগ্রাম করেছেন এবং আত্মদানও করেছেন। প্রীতিলতাদের সংগ্রাম সফল হলে, প্রীতিলতারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে মুসলমানরা স্বাধীন হতে পারতো না, স্বাধীন আবাসভূমি তাদের হতো না এবং আজকের বাংলাদেশও আমরা পেতাম না। সুতরাং প্রীতিলতা নিঃসন্দেহে বিপ্লবী, নিঃসন্দেহে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং নিঃসন্দেহে তিনি একজন মহান আত্মত্যাগীও। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নন। তার ত্যাগ তার সংগ্রাম বাংলাদেশের জন্য ছিল না। বরং তার সংগ্রাম ছিল আমাদের বাংলাদেশের স্বতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অস্তিত্বের বিরোধী।
- "প্রীতিলতারা, ইতিহাস ও বাংলাদেশ", (১৮ অক্টোবর ১৯৯৬)
- কোপেনহেগেনে চলমান সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলনে কি ঘটতে যাচ্ছে আমি জানি না। একশ পৃষ্ঠার একটা খসড়া ঘোষণা প্রণীত হয়েছে, কিন্তু তার প্রকৃতি-প্রবণতা সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় থেকে বুঝা গেছে, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর, বিশ্বের মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা ইত্যাদি বিষয় ঘোষণায় প্রাধান্য পাবে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনে এইসব জটিল অর্থনৈতিক বিষয়ের সমাধান কিভাবে হবে।
- "পাশ্চাত্যকরণের সম্মেলন" (১১ মার্চ ১৯৯৫)
- বস্তুত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কিছু মোটিভেশন ছাড়া কোপেনহেগেন সম্মেলনের করণীয় কিছুই নেই। দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকারত্ব দূর করার ব্যাপারটা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে জড়িত। আর কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জাতীয় ও দ্বিপাক্ষিক ধরনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এবং এ ধরনের অর্থনেতিক উন্নয়ন তৎপরতা সবদেশেই চলছে। সামনেও চলবে। কোপেনহেগেনের সামাজিক শীর্ষ সম্মেলন সাহায্য বা ঋণ প্রদান ও গ্রহণভিত্তিক উন্নয়ন পদ্ধতির কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। শোনা যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণভার মওকুফের একটা প্রয়াস কোপেনেহেগেন সম্মেলন করতে পারে। ঋণ কিছু মওকুফ হয়েও যেতে পারে। কিন্তু তাতে পশ্চিমী সাহায্যদাতাদের দ্বারা পরিচালিত উন্নয়ন মডেলের কোন পরিবর্তন হবে না। ঋণ মওকুফের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপকার অবশ্যই হবে, কিন্তু নতুন ঋণ আবার এসে তাদের ঘাড়ে চাপবে। কয়েক বছর পর অবস্থা আবারো তথৈবচ হয়ে দাঁড়াবে।
- "পাশ্চাত্যকরণের সম্মেলন" (১১ মার্চ ১৯৯৫)
- কোপেনহেগেনে চারটি মুসলিম দেশের ভূমিকা মুসলিম উম্মাকে আনন্দিত করবে। তারা যথার্থভাবে ষড়যন্ত্র ধরতে পেরেছেন এবং উপযুক্তভাবে তার প্রতিবাদও করেছেন। তারা সম্মেলন এবং দুনিয়াকে এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্তকে অবশ্যই জাতীয় আদর্শ ও নীতিবোধের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, সামঞ্জস্যশীল হতে হবে।
ঐ চারটি মুসলিম দেশের ভূমিকায় যতখানি খুশী হয়েছি, তার চেয়ে বেশী আহত বোধ করছি সম্মেলনে আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের ব্যর্থতায়। গত শুক্রবার প্রস্তুতিমূলক যে সম্মেলনে দশ দফা নীতিমালা এবং ৬৫ পাতার কর্মপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত হয়, সে সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলও সশরীরে বর্তমান ছিল। কিন্তু প্রতিনিধিদলের সদস্যরা নিজেরা আপত্তি তোলেননি কিংবা চারটি দেশের উত্থাপিত আপত্তির সাথে নিজেদের শামিলও করেননি। অন্য কথায় তারা বিনা আপত্তিতে খসড়া ঘোষণাকে পাস করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের প্রতিনিধিদলও চান, তথাকথিত সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত নীতিবোধ সংশোধিত বা পরিবর্তিত হোক। এই চাওয়া শুধু আপত্তিকর নয়, দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগজনক।- "পাশ্চাত্যকরণের সম্মেলন" (১৫ মার্চ ১৯৯৫)
- নারীর নারীচিত অধিকার ইসলামই প্রথম নিশ্চিত করেছে। আজ নারী-অধিকারের নামে নারী-সত্তা ধ্বংসের এবং সেই সাথে জাতি-সত্তার বিলোপ ঘটাবার যে মহা আয়োজন কেন, কোন দেশেরই হওয়া উচিত নয়।
- "পাশ্চাত্যকরণের সম্মেলন" (২৯ জুলাই ১৯৯৫)
- তবে পশ্চিমী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের দুর্ভাগ্য যে, মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা দূরীকরণে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের ব্যর্থতার পর আজ নতুন করে প্রমাণ হচ্ছে যে, মানবজীবনের অন্যান্য সমস্যার। ন্যায় অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। এই বিশ্বাস। বিশ্বের সব শ্রেণীর মানুষকেই আজ উদ্দীপ্ত করছে- তরুণদেরকে বেশী। প্রকৃতপক্ষে এরই কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে তুরস্কের নির্বাচনে।
- "তুরস্কের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি" (২১ জানুয়ারি ১৯৯৬)
- সুতরাং ঘটনা হলো, বিশ্বের মুসলমানদের আজ স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন শুরু হয়েছে। বস্তুবাদ, পুঁজিবাদ ও সমাজবাদের সৃষ্ট বিভ্রান্তির কুয়াশা তাদের সামনে। থেকে কেটে যাচ্ছে। ইসলামের সত্য ও সুন্দর রূপ তাদের সামনে সূর্যের আলোর মতই দেদীপ্যমান হয়ে উঠছে। ইসলামকে তারা ভালবাসছে পরকালীন মুক্তি এবং সকল সমস্যামুক্ত ইহকালীন কল্যাণের জন্যে।
- "তুরস্কের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি" (২১ জানুয়ারি ১৯৯৬)
- মাদার তেরেসার মানবপ্রেম মানবিক নয়, তারও দৃষ্টান্ত মাদার তেরেসা দেখিয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ একজন মুসলিম মহিলা মাদার তেরেসার চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি। কলকাতার একটি বাংলা দৈনিক মুসলিম মহিলাটির ছবি ছেপে লিখে, অগ্নিদগ্ধ মুসলিম মহিলাটিকে নিয়ে সর্বত্র ছুটোছুটি করার পর শেষ ভরসা হিসেবে মাদার তেরেসার চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। ফলে মহিলাটি পড়ে থাকে রাস্তাতেই। অভিযোগ উঠে মুসলিম বলেই তাকে গ্রহণ করা হয়নি।
- "একজন ‘পবিত্র মাতা’ প্রসঙ্গ" (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬)
- পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নটি আজ পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। সম্ভবতঃ পরমাণু যুদ্ধের ভয়-পীড়িত ঠাণ্ডা যুদ্ধের আগে এবং পরে এত বড় আলোচনা কোন কিছুকে নিয়ে আর হয়নি। পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সেজন্যেই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সবার কাছেই। গাছ-গাছড়ার বিনাশ বৃষ্টিপাত কমায়, মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত করে। শিল্পের বর্জ্য পানি দূষণ ঘটিয়ে রোগ-ব্যাধি ছড়ায় এবং মৎস্য সম্পদ বিলয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিল্প-কারখানা থেকে উৎসারিত ধোঁয়া চারদিকের বাতাসকে দূষিত করে। মানুষের জীবন ধারণের জন্যে ক্ষতিকর এবং পরিবেশ নষ্টকারী এসব বিষয় মানুষ খালি চোখেই দেখতে পায়। বুঝতে পারে তারা গাছ-পালা রক্ষা ও বনায়ন, শিল্পের বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সুফলের কথা। মানুষের এ সচেতনতার কারণেই পরিবেশের প্রশ্নটি আজ জগৎজোড়া আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই আলোচনাটি কোন কোন ক্ষেত্রে আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা পরিষ্কার বাড়াবাড়ি বা উদ্দেশ্যমূলক কোন কিছু বলে প্রমাণিত হচ্ছে।
- "পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হুজুগ" (১০ মার্চ ১৯৯৬)
- কার্বন-ডাই-অক্সাইডজনিত উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টা পুরোপুরি বিজ্ঞাননির্ভর নয় এবং ভবিষ্যতই প্রমাণ করবে এই ধরনের চিন্তাধারা একটা বড় ধরনের বাড়াবাড়ি। কোন এক নির্দিষ্ট সময়ের সমীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে এবং স্রষ্টা পরিকল্পিত জীবন চক্রের দু-একটা উপাত্তের সাময়িক হ্রাস-বৃদ্ধি দেখে খোদার উপর খোদকারী হয় এমন উপসংহারে পৌঁছা ঠিক নয়। এক কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধি দেখে সমুদ্র পৃষ্ঠের বৃদ্ধি কল্পনা করে দেশ ও দ্বীপাঞ্চলের ধ্বংস কল্পনা করা যায় না। নানা সৃষ্টি ও নানা উৎপাদনের চক্রাকার আবর্তনের মধ্য দিয়ে স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে আসছেন। পরিবেশের ক্ষেত্রেও মৌলিকভাবে এ কথা সত্য।
- "পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হুজুগ" (১০ মার্চ ১৯৯৬)
- ঘরে-বাইরে উপন্যাসের নাট্যরূপ বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচার করেছে। গত ২২শে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু দিবসে। বলার আর অপেক্ষা রাখে না, ঘরে-বাইরে উপন্যাস বিশ শতকের তৃতীয় দশকের হিন্দু রাজনীতির একটা দর্পণ। এই দর্পণে পরোক্ষে মুসলমানদের 'স্বাধীনতা বিরোধী কুৎসিত চরিত্র' ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তাদের কথা বলার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে। অথচ ইতিহাস হলো বৃটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম মুসলমানরাই করেছে, অন্যদিকে বৃটিশের পদলেহন করেছে বাবু শ্রেণীই । তাদের স্বরাজ, স্বদেশী আন্দোলনও মূলত বৃটিশবিরোধী ছিল না, ছিল মুসলিমবিরোধী। যার দ্বারা বাবুরা বৃটিশকে পক্ষে এনে মুসলমানদের মার দিতে চেয়েছিল। ঘরে-বাইরে উপন্যাসভিত্তিক নাটক বাংলাদেশ টেলিভিশন কোন যুক্তিতে প্রচার করল তা আমার বুদ্ধির অগম্য।
- "এক ‘ঘরে-বাইরে’ নাটক" (১৫ এপ্রিল ১৯৯৬)
- গরীব দেশের স্বাধীনতার কোন মূল্য নেই। তবু মনটা যেহেতু গরীব হতে চায় না, তাই স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে মন চায়।
- "নির্বাচন ও দাদাগিরী" (৬ জুন ১৯৯৬)
- এই নির্বাচন পদ্ধতির সবচেয়ে বড় কল্যাণ হলো, পার্লামেন্টে রাজনৈতির প্রতিনিধিত্ব ব্যাপক হয়। এমনকি ছোট ছোট রাজনৈতিক দলও পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেয়ে থাকে। তার ফলে পার্লামেন্টে জনমতের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সংখ্যাগুরু পোশাকে সংখ্যালঘুর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কোন সুযোগ এতে থাকে না। সবশ্রেণীর ভোটারের মূল্যায়ন এখানে হতে পারে।
- সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রসঙ্গে। "নির্বাচন ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব" (২৯ জুন ১৯৯৬)
- আমাদের মত উন্নয়নশীল ও রাজনৈতিক অস্থিরতাযুক্ত দেশের জন্যে 'আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' পদ্ধতির নির্বাচন সবদিক দিয়েই কল্যাণকর হতে পারে। ছোট-বড় উল্লেখযোগ্য সকল দল পার্লামেন্টে থাকায় পার্লামেন্ট হয়ে উঠবে সকল সমস্যা আলোচনা ও সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু। তাছাড়া সব দলের বাছাই করা ও যোগ্যতর লোকরা পার্লামেন্টে আসার ফলে পার্লামেন্টের মান বাড়বে এবং পার্লামেন্ট হতে পারবে অনেক বেশী কার্যকর। এই সুবিধার কারণেই বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, ইসরাইল প্রভৃতির মত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচনের এই পদ্ধতিটি সাদরে গৃহীত হয়েছে। সকল বিচারে পদ্ধতিটি আমাদের মত দেশে আরও সাদরে গৃহীত হওয়ার মতো।
- "নির্বাচন ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব" (২৯ জুন ১৯৯৬)
- দেশের রাজনীতিতে বিদেশী টাকার এই অনুপ্রবেশ ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্যে বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়াবে। দুঃখের বিষয়, কুম্ভকর্ণের মত আমাদের সরকারকে কোন সময়ই এটা বুঝানো যায়নি। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সাবেক কেয়ারটেকার সরকারকেও নয়।
- "এনজিওকরণ" (১৭ জুলাই ১৯৯৬)
- অসময়ের প্রয়াস অধিকাংশ সময়েই শুভ হয় না।
- "একটি ‘সবিনয়ে জিজ্ঞাসা’ (৫ অক্টোবর ১৯৯৬)
- প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের নির্বাহী কমিটির মিটিং-এ ভারতকে ট্রানজিট দেয়া সম্পর্কিত অভিযোগ খণ্ডাতে গিয়ে বলেছেন, ভারত তার আসাম প্রদেশসহ অন্যান্য রাজ্যের মধ্য দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে ও রেলওয়ে করতে চাচ্ছে। এইভাবে ভারত এড়াতে চাচ্ছে বাংলাদেশকে। আর তার ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশকে আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য আমি প্রথমে টেলিভিশনে শুনলাম। শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে তাঁর কথার অর্থ দাঁড়ালো, ট্রানজিটের কোন গরজ ভারতের নেই। এশিয়ান হাইওয়ে নামক ট্রানজিট আসাম তথা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে নিয়ে যাবার মধ্যেই ভারতের স্বার্থ। আর বাংলাদেশের স্বার্থেই প্রয়োজন এশিয়ান হাইওয়েজ নামক ট্রানজিট বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া। ভারতকে ট্রানজিট দেয়া, না দেয়া প্রশ্নের চিত্র যদি এটাই হয়, তাহলে তো ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিরুদ্ধে লড়াই না করে বরং ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্যেই লড়াই-এ নামতে হয়। এমনকি দরকার হলে ভারতের হাতে-পায়ে ধরে হলেও এশিয়ান হাইওয়ে নামক ট্রানজিট বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নেবার ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু ভারতকে ট্রানজিট দেয়া না দেয়ার এই কাহিনী সত্য নয়। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ট্রানজিট নেয়ার জন্যে পাগল। অর্থনৈতিক ও সামরিক দুই কারণেই সে ট্রানজিট নেয়ার জন্যে ব্যস্ত।
- "এশিয়ান হাইওয়ের মোড়কে ট্রানজিট" (১৪ অক্টোবর ১৯৯৬)
- সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে যে রেল ও সড়ক ট্রানজিটের কথা বলছে, তা আসলে ভারতের সার্বিক সমর পরিকল্পনার একটি অংশ। ভারত বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ ও আণবিক সাবমেরিন যোগাড় করা এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরীর মাধ্যমে যে আঞ্চলিক যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে, বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ভারতের প্রার্থীত ট্রানজিট রুটগুলো হবে তারই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
- "এশিয়ান হাইওয়ের মোড়কে ট্রানজিট" (১৪ অক্টোবর ১৯৯৬)
- সন্দেহ নেই, এই সামরিক প্রয়োজনেই ভারত তার পশ্চিমাঞ্চল থেকে তার পূর্বাঞ্চলে যাবার ট্রানজিট চাইছে মানবিক পণ্য সরবরাহ-সুযোগের অজুহাতে।
- "এশিয়ান হাইওয়ের মোড়কে ট্রানজিট" (১৪ অক্টোবর ১৯৯৬)
- বস্তুতঃ আমাদের অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার পেছনে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবই মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।
- "আসল ক্রাইসিস" (২৯ আগস্ট ১৯৯৫)
- শুধু তো অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, দেশের সার্বিক পরিচালনার সাথেও যোগ্য নেতৃত্বের প্রশ্ন জড়িত। সচেতন কারোই আজ একথা অজানা নয় যে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে সমস্যা-সংকটের মধ্যে আমরা রয়েছি, তারও মূলে রয়েছে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। সুতরাং যোগ্য নেতৃত্বের অভাবই আজ মূল ক্রাইসিস।
তবে নেতৃত্ব শুধু যোগ্য হওয়াকেই যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে না। একজন মিথ্যাবাদী, চরিত্রহীন কিংবা লুটপাটকারীও দক্ষ এবং যোগ্য শাসক হতে পারেন কিন্তু তাদের হাতে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। অতীতে দক্ষ ও যোগ্য শাসকের খুব অভাব ছিল তা নয়, কিন্তু অভাব ছিল চরিত্রের এবং এই অভাবের কারণেই আমাদের উন্নয়ন হয়নি। অসৎ চরিত্রের লোকের লোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন-পুঁজি। সুতরাং ক্রাইসিস দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের নয়, আসল ক্রাইসিস হলো সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের।- "আসল ক্রাইসিস" (২৯ আগস্ট ১৯৯৫)
- শত সমস্যা, শত অসুবিধা এবং শত প্রতিকূলতার মধ্যে বাংলাদেশের পাটশিল্পের এই শক্তিমত্তা প্রমাণ করে, আল্লাহ আমাদেরকে পাট নামক এমন একটা সম্পদ দিয়েছেন, যা প্রতিকূলতার পর্বত প্রমাণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিশ্ব বাজারে আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু কেউ যদি তার নিজের সর্বনাশ নিজেই করে চলতে চায়, তাহলে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন না। সুতরাং পাটশিল্পের উপর অতীতে আমরা যে অবিচার করেছি, ঢালাও বাজার অর্থনীতির নামে আজ তার উপর অবিচারের বোঝা আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি তাতে পাটশিল্প আমাদের রক্ষা পাবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটশিল্প আজ যে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন, সে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পাটশিল্পকে বিজয়ী করতে হলে সরকারী ও বেসরকারী দুই খাতেই বিশেষ সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ সহযোগিতা সরকারকেই করতে হবে সাবসিডি, প্রাইস সাপোর্ট ইত্যাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে। ভারত সরকার এটা বিভিন্ন নামে বিভিন্নভাবে করছে। আমাদের সরকারকেও এটা করতে হবে। বাজার অর্থনীতির লালন ভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমী দেশগুলোতে প্রাইস-সাপোর্ট ও অন্যান্য নামে ভর্তুকি পূর্ণভাবে সক্রিয়। আমরা মাসিরা যদি মায়ের চেয়ে বড় হতে চাই, তাহলে তার মূল্য আমাদের দিতে হবে পাটশিল্পের মত শিল্পসমূহের ধ্বংসের মাধ্যমে।
- "পাট তামা নয়, সোনা-ই" (৩০ এপ্রিল ১৯৯৫)
- ছোট দেশ হিসেবে দুর্বলতা আমাদের আছে। কিন্তু মনে হয় এই দুর্বলতার চেয়ে ব্যক্তি গ্রুপ ও দলীয় স্বার্থ দুষ্টতাই আমাদের মধ্যে মুখ্য, যা আমাদের দৃষ্টিকে গদির দিকে আকৃষ্ট রাখে বেশী, জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থের দিকে নয়। পাটশিল্পসহ আমাদের অর্থনীতির মূল সমস্যা এখানেই।
- "পাট তামা নয়, সোনা-ই" (৩০ এপ্রিল ১৯৯৫)
- আজ অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে দল থেকে নেতৃ পর্যায়ের লোক ভাগানো, কোন স্বার্থ বা মন্ত্রিত্বের লোভে একেবারে মেরু পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বৈরিতায় রূপান্তরিত করা একদম সাধরণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই লজ্জাজনক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধমূলক এই প্রবণতার সূত্রপাত ঘটেছে সত্তর দশকের শেষের দিকে সামরিক শাসনাধীনের নতুন দল গড়ার সময় থেকে।
- "যখন অসবর্ণ রাজনীতি" (১৬ জুলাই ১৯৯৫)
- যত্র-তত্র থেকে যে কোন মূল্যে লোক কিনে বা কুড়িয়ে সংক্ষিপ্ত পথে ক্ষমতায় যাবার বা থাকার এই রাজনীতি বন্ধ করতে না পারলে জাতিকে বিক্রীত বা বিক্রয়যোগ্য রাজনীতিকদের অসবর্ণ গিল্ডের কাছে পণবন্দী হয়েই থাকতে হবে।
- "যখন অসবর্ণ রাজনীতি" (১৬ জুলাই ১৯৯৫)
- জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল বিশ্বের সার্বিক নিরাপত্তার একটা অস্ত্র হিসেবে। কিন্তু জাতিসংঘ এই ক্ষেত্রে তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে কারণ, বড় শক্তি ও শক্তিমান গ্রুপগুলো তাদের মধ্যেকার বিরোধে জাতিসংঘকে কানাকড়ি মূল্যও দেয়নি। যেমন রুশ-মার্কিন বিরোধ এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার সমস্যার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। 'ভেটো' শক্তির অধিকারী কোন রাষ্ট্র যখনই কোন সমস্যায় পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই জাতিসংঘ অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এই কারণেই কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, ও দীর্ঘ ভিয়েতনাম যুদ্ধে জাতিসংঘের কোন ভূমিকা আমরা দেখিনি।
- "জাতিসংঘের জন্মদিনে" (১৬ অক্টোবর ১৯৯৫)
- জাতিসংঘ বিশ্বের শান্তিকামী জনগণের সংগঠন। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছে জাতিসংঘের খুব বেশী প্রয়োজন নেই। জাতিসংঘ দুর্বল হলে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু শান্তি সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘকে সংস্কার ও শক্তিশালী করে বাঁচিয়ে রাখতে হবে বিশ্বের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোকে তদের নিজেদের স্বার্থেই।
- "জাতিসংঘের জন্মদিনে" (১৬ অক্টোবর ১৯৯৫)
- সব মিলিয়ে বসনিয়ার মুসলমানরা আজ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা যদি কার্যকর হয়, তাহলে বসনিয়া-হারজেগোভিনায় হয়তো শান্তি আসবে, কিন্তু মুসলমানদের স্বার্থ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না। এই অনিশ্চিতের চেয়ে মুসলমানদের ভূ-খণ্ডগত অংশ যদি শান্তি চুক্তিতে নির্দিষ্ট হতো, তাহলে সেটাই ছিল মন্দের ভাল। ভবিষ্যতে ক্রোটদের সাথে ঝগড়ার কোন সম্ভাবনা সেক্ষেত্রে থাকতো না।
মুসলমানরা বসনিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হওয়ার পরও তাদের ন্যায্য দাবী এইভাবে পদদলিত হয়েছে। সংখ্যালঘুরা বিজয়ী হয়েছে সংখ্যাগুরুর উপর। এর ফলে সার্ব ও ক্রোটরা তাদের পশ্চিমী স্বজাতীয়দের কাছ থেকে যে সহায়তা পেয়েছে মুসলমানরা তা তাদের স্ব-জাতীয়দের কাছ থেকে পায়নি। ওআইসি এবং মুসলিম দেশগুলো বসনিয়াকে অবশ্যই আর্থিক সহায়তা অনেক করেছে, কিন্তু সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক সহায়তা দিতে ষোলআনাই ব্যর্থ হয়েছে। অর্ধশতেরও বেশী মুসলিম দেশের জন্যে। এটা একেবারেই অস্বাভাবিক।
অস্বাভাবিক হলেও মুসলিম বিশ্বের জন্যে এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কার্যত কোন ঐক্য নেই। নেই কারণ তারা প্রকৃতই স্বাধীন নয়।- "বসনিয়ায় শান্তি" (৩ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ঘরে-বাইরে একশ্রেণীর শক্তি যেভাবে মাথা তুলেছে, তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটা স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে আমাদের দেখতে হবে। একমাত্র কূটনীতিক ও বিদেশের বৈধ কোন প্রতিনিধি ছাড়া মিশনারী ও বিদেশী সাহায্য সংস্থার সকল বিজাতীয় বিদেশীর পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। ভারতও বাধ্য হয়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আমি মনে করি এর শুভ ফল ভারত পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আমরা অনেক বিলম্ব করেছি, আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না। আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কারও সাথে সুসম্পর্কের চাইতে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডার মূল্য অনেক বেশী।
- "পাহাড়ে অদূরদর্শী রাজনীতি" (১০ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- বাংলাতেও একটা প্রবাদ আছে 'চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।' এর প্রমাণ আমরা সর্বত্রই দেখি। ইসলামের যারা বৈরি, ইসলামকে যারা পছন্দ করে না, ইসলামের উত্থান যারা বরদাশত করতে পারে না, তাদের সবাইকে আমরা এক কাতারে দেখছি।
- "পথ-বিপথের সংঘাত" (১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- 'রাহে হক' বা সত্যপথে চলা সব সময়ই কঠিন। বাঁকা পথ বা জাহেলিয়াতের পথ এক লক্ষ্যে চলে না। সুবিধাবাদ এ পথের লক্ষ্য। সুতরাং যেদিকে সুবিধা সেদিকেই এ পথযাত্রীরা পথ চলে। যেখানে যেমন তারা সেখানে তেমন বলে তাদের পথ চলায় কোন বিপদ নেই। কিন্তু সিরাতুল মুস্তাকিম বা রাহে হক সরল-সোজা বলে পথে হাজারো বাধা একে ডিঙাতে হয়। এই পথকে কখনও মরুভূমি অতিক্রম করতে হয়, কখনও সাগর পাড়ি দিতে হয় এবং কখনও ডিঙাতে হয় পাহাড়ের দুর্লংঘ্য বাধা। সিরাতুল মুস্তাকিম ইতিহাসের এটাই ইতিহাস।
- "পথ-বিপথের সংঘাত" (১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- খালেদা জিয়ার সরকারের গত সাড়ে চার বছরে শুধু ইসলামী ছাত্র শিবিরেরই ৪০ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছে। অধিকাংশ খুনই আবার হয়েছে, রিপোর্ট অনুসারে, সরকারী ছাত্র সংগঠনের হাতে, যার দায় সরকারের উপরই বর্তায়। রক্ষক হয়ে এইভাবে রক্ষক সাজার কি জবাব সরকার দেবেন আল্লাহর কাছে? আমলাদের দায় এসে পড়েছে সরকারের কাঁধে। সরকার তার দায় কার ঘাড়ে চাপাবেন? চাপাতে পারেন জনগণের ঘাড়ে। বলতে পারেন, জনগণ তাদেরকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় পাঠাল কেন? জনগণ যখন তাদের মত লোককে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে, তখন তারা যেমন, তেমন কাজ করার অধিকার রাখেন। সরকার জানেন কিনা জানি না, তবে সরকারের এই জবাবের স্পষ্ট উত্তর জনগণের কাছে আছে। জনগণের এই উত্তর আসে নির্বাচনের মাধ্যমে। বিএনপি সরকার এই উত্তর পেতে পারেন আগামী নির্বাচনে।
- "পথ-বিপথের সংঘাত" (১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- একমাত্র ইসলামের পথে চলছে বলেই জামায়াত শিবির আজ ইসলামে বৈরি শক্তির বিরোধিতা ও সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই বিরোধিতা না হলেই বরং জামায়াত-শিবির ইসলামের পথে চলছে কিনা তাতে সন্দেহ জাগত। তারা যে সরকার এবং সরকারী পোষ্য দলের জুলুম নির্যাতনের সম্মুখীন, তাও স্বাভাবিক। ইমাম হোসাইন (রাঃ), ইমাম আবু হানিফা (রঃ), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ), ইমাম তাইমিয়া (রঃ), হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ), মুজাদ্দেদে আলফেসানি (রঃ) প্রমুখদের সংগ্রাম ও সংস্কারের পথে তারা চলবে, অথচ ইসলামী সরকার এখনও হয়নি এমন সরকার তাদের স্বাগত জানাবে এটা ঠিক নয়।
- "পথ-বিপথের সংঘাত" (১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং পথ-বিপথের এই দ্বন্দ্ব অতিতে চলেছে, এখন চলছে, ভবিষ্যতে চলবে। কিন্তু দুঃখ হয় তখন, যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীন সরকার অন্যায়, অসত্য ও বিপথের যাত্রী হন। অবশ্য সান্ত্বনা এই যে, গণতন্ত্রের কথা বললেই কিংবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শামিল হবার দাবী করলেই কেউ গণতন্ত্রী হয়ে যায় না। প্রশাসন ও পুলিশকে যে সরকার জাতির না ভেবে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করে, সে সরকার কোন নীতি, নিয়ম ও যুক্তির পথে চলতে পারে না। আর সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে থাকে যোজন দূরে। সত্যপথ যাত্রীদের বৈরি তো তারা ভাববেই।
- "পথ-বিপথের সংঘাত" (১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫)
- আধিপত্য অভিলাষী ইহুদি জাতির একটা বড় কৌশল আধিপত্য হলো মানুষের মধ্য থেকে 'জাতীয়তাবোধ'-এর বিলোপ ঘটানো। 'জাতীয়তাবোধ' মানুষের আত্মরক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র, সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি। যা দিয়ে মানুষ তার স্বাধীনতা, তার দেশকে রক্ষা করে। জাতীয়তাবোধ বিস্মৃত হলে ঐক্য শেষ হয়, তার সাথে শেষ হয় শক্তি। ফল স্বাধীনতার বিলুপ্তি। ইহুদি জাতি নাকি তার রক্তকে অবিমিশ্র রেখে, তার জাতীয়তাবোধকে আরও শক্তিশালী করে জাতীয় পরিচয়হারা সুতা-ছেঁড়া তসবিহদানার মত বিশৃঙ্খল মানুষের উপর তার আধিপত্য কায়েম করতে চায়। ধর্মনিরপেক্ষতার শ্লোগান ইহুদিদের একটা অস্ত্র যা দিয়ে তারা অন্যান্য ধর্মের মুন্ডুপাত করতে চায়। ধর্মের মুন্ডুপাত করলে জাতীয়তাবোধের ভূমিশয্যা অবশ্যম্ভাবী।
- "পুতুলরা মঞ্চে" (২০ জুলাই ১৯৯১)
- ইহুদিরা তাদের বিজাতীয়করণ কৌশল কিভাবে প্রয়োগ করছে তার কোন বাস্তব জ্ঞান আমার নেই। তবে এর একটা প্রতিচ্ছবি আমি দেখেছি ভারতের কংগ্রেস এবং তার নেতা মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীদের রাজনীতিতে। ওঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার শ্লোগান তুলেছিলেন এবং ভারতের মুসলমান, শিখ, হরিজন ও উপজাতিদের ধর্ম-পরিচয় মুছে ফেলতে বলেছিলেন। এই চেষ্টায় গান্ধী গা থেকে কাপড় খুলেছিলেন, নগ্নপদ হয়েছিলেন, টিকিও কেটেছিলেন, পৈতাও সরিয়েছিলেন যাতে বোঝা যায় ব্রাহ্মণ গান্ধী আর সেই ব্রাহ্মণ নেই। গান্ধীর ভেক এবং কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার শ্লোগান হরিজন নেতা ডঃ অম্বেদকরকে বিভ্রান্ত করেছিল, শিখরাও বিভ্রান্ত হয়েছিল। যার ফলে হিন্দুদের সাথে এক হয়ে এক রাষ্ট্র গঠন শুধু নয়, শাসনতান্ত্রিকভাবে তাদের ধর্মের অস্তিত্বও গৌণ হয়ে গিয়েছিল। ফল হয়েছিল তাদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার অবলুপ্তি। সব হারাবার পর অবশ্য এখন তাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে। এ কারণেই হরিজনরা এখন তাদের মুক্তির জন্যে আন্দোলন করছে এবং শিখরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করছে। মুসলমানরাও যদি গান্ধী-নেহেরুদের ধমরিপেক্ষতার টোপ গিলে ধর্ম-পরিচয়কে বর্জন করতে রাজী হতো, তাহলে মুসলমানদেরকেও আজ সব হারাবার পর স্বাধীনতার জন্যে দিল্লীর বিরুদ্ধে লড়াই-এ নামতে হতো। ধন্যবাদ জিন্নাহ এবং শেরেবাংলার মত নেতাদের। তাঁরা মুসলিম পরিচয় গৌণ করতে রাজী হননি, বরং এই পরিচয়কেই বাঁচার শক্তি হিসেবে আঁকড়ে ধরেছিলেন। তারই ফলশ্রুতি আমাদের স্বাধীনতা।
- "পুতুলরা মঞ্চে" (২০ জুলাই ১৯৯১)
- মুসলমান জাতীয় পরিচয় ধ্বংস করার এই ইঙ্গিত কোথেকে আসছে? এর উত্তরে বলা যায়, গান্ধী-নেহেরুর প্রেতাত্মারা নেপথ্যে আজ খুবই সক্রিয়। মুসলিম পরিচয়ের উজ্জ্বল অস্তিত্বই যেহেতু একদিন মুসলমানদের স্বাধীন করেছিল, তাই এ পরিচয় মুছে ফেলার জন্যে ঐ প্রেতাত্মারা আজ মাঠে নেমেছে। তারাই নাচাচ্ছে রং-বেরং-এর পুতুল। তবে ঐ প্রেতাত্মারা ছাড়াও এই পুতুলদের পেছনে ইহুদি লবিও কাজ করছে বলে মনে হয়। কারণ ইসলাম, মুসলমান ও তাদের রেনেসাঁ আন্দোলন ইহুদিদেরও ঘোরতর শত্রু। ইহুদিরাও চায় মুসলমানদের জাতীয় পরিচয় মুছে ফেলতে।
- "পুতুলরা মঞ্চে" (২০ জুলাই ১৯৯১)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় আবুল আসাদ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।