আহমদ ইবনে হাম্বল
অবয়ব


ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (নভেম্বর ৭৮০ – ২ আগস্ট ৮৫৫), পূর্ণ নাম আবু আবদুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হাম্বল আশ-শাইবানী, সংক্ষেপে আহমদ ইবনে হাম্বল বা ইবনে হাম্বল নামে পরিচিত, ছিলেন একজন আরব মুসলিম আইনবিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, পণ্ডিত, হাদিসবিশারদ এবং হাম্বলি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। এটি সুন্নি ইসলামের চারটি প্রধান ও ফিকহী মাযহাবের একটি। তাঁর রচিত মুসনাদে আহমদ হাদিস সংকলনটি প্রায় ২৭ হাজার হাদিস সংবলিত।
উক্তি
[সম্পাদনা]- "যদি আমার রূহ আমার হাতে থাকত, আমি তাকে মুক্তি দিতাম।"
- "সঙ্গীত হৃদয়ে ভণ্ডামি অঙ্কুরিত/বৃদ্ধি করে।"
- আল মুগনী, ইবনু কাদামাহ
- "যদি আলেমরা তাকিয়ার কারণে নীরব থাকেন, আর অজ্ঞরা না জানে, তাহলে সত্য কখন প্রকাশিত হবে?"
- আস শাফেয়ী একদিন আমাকে তার মজলিশে দেখতে পেলেন, আমার জামায় কালির দাগ ছিলো যা আমি তার কাছ থেকে লুকাতে চাইছিলাম। তিনি বললেন, “যুবক, তুমি কী লুকাতে চাইছো? জামায় কালির দাগ তো একটি মহৎ ব্যাপার: সাধারণ দৃষ্টিতে এটি কালো, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিতে তা হলো সাদা (জ্ঞানের আলোময়)”
- আল-খাতিব আল-বাগদাদী, আল-জামি লি’আখলাক আল-রাওয়ি, অনুচ্ছেদ: ৫০৮
- “এগুলো হলো ইসলামের লণ্ঠন।”
- আল-খাতিব আল-বাগদাদী, আল-জামি লি’আখলাক আল-রাওয়ি, অনুচ্ছেদ: ৫১২। ইমাম আহমাদ তার হাদিসের ছাত্রদেরকে তাদের কালির-দোয়াত হাতে আসতে দেখে একথা বলেন।
- "কেমন হবে সেই ব্যক্তির অবস্থা, যার প্রভু ফরজ কাজ পালনের দাবি রাখেন, তাঁর নবী (মুহাম্মাদ) সুন্নাহ অনুসরণের দাবি রাখেন, দুই ফেরেশতা (কিরামান কাতিবিন) তার সংশোধনের দাবি রাখেন, তার নাফস নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার অনুসরণের দাবি রাখে, ইবলিস অশ্লীল কাজের দাবি রাখে, মৃত্যুর ফেরেশতা (আজরাইল) তার রূহ হরণের জন্য অপেক্ষায় থাকে, আর তার পরিবার-পরিজন ভরণপোষণের দাবি রাখে?"
- "সুন্নাহ ছাড়া এবং তা অনুসরণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিয়াস কেবল প্রতিষ্ঠিত নীতির (নবী মুহাম্মাদ সাঃ-এর যুগের উদাহরন) সাথে তুলনার ভিত্তিতেই গঠিত হওয়া উচিত। কিন্তু যদি মূলনীতিকে ধ্বংস করে তারপর কিয়াসের দাবি করা হয়, তবে সেই কিয়াসের ভিত্তি কী?"
- ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলকে একবার বলা হয়েছিলো, “আপনি ইসলামের জন্য যে ভালো কাজগুলো করেছেন তার উত্তম প্রতিদান আল্লাহ আপনাকে দান করুন।” তিনি বললেন, “বরং আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে আমার কল্যাণ করেছেন। আমি আবার কে? আমি আবার কী?”
- ইমাম আয-যাহাবী, সিয়ার আ’লাম আন নুবালা, ১১/২২৫
- “আপনি যদি আকাঙ্ক্ষা করেন আপনি যা ভালোবাসেন তার উপরে যেন আল্লাহ আপনাকে অধিষ্ঠিত রাখেন, তাহলে আল্লাহ যা ভালোবাসেন আপনি তার উপরে অধিষ্ঠিত থাকুন। আর ভালো তো রয়েছে সেই ব্যক্তির মাঝেই যিনি নিজের মাঝে কোন ভালো দেখতে পান না।”
- আল-আদাবুশ-শারি’আহ (২/৩১), ইবনে মুফলিহ।
- ইবরাহিম আল-হারবি বলেন, “আমি আহমাদকে (আহমাদ ইবনে হাম্বল) বলতে শুনেছি।
- “কোন মানুষ যদি নিজের সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, তাহলে অন্যদের প্রশংসা তার কোন উপকারে আসবে না।”
- আনিস আল-ফুদালা, ১১/২১১
- “কোন ব্যক্তি যদি আপনাকে অন্য কারো পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেয়, তাহলে উত্তরে বলা উচিত: ‘আলাইকা ওয়া ‘আলাইহি সালাম।”
- আদাব শারিয়্যাহ, ১/৪৭৫
- “খাবার এবং পানির চাইতেও মানুষের জন্য জ্ঞান বেশি দরকার, কেননা খাবার এবং পানি তাদের দিনে একবার বা দুইবার প্রয়োজন হয়, কিন্তু জ্ঞান প্রয়োজন তাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসেই।”
- মিফতাহ দার আল-সা’আদাহ, ১/৬৫-৬৬
- “সমস্ত কিছুতেই একটি রাহমাত থাকে। অন্তরের উপর রাহমাত হলো সর্বশক্তিমান, সকল ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর উপরে খুশী থাকা।”
- মানাকিব আল ইমাম আহমাদ — ইবনে আল জাওযি, পৃ ২৭৬
- ইবনে তাইমিয়াহ উদ্ধৃত করেছেন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বলেছেন: "এমন কোন মতামত তৈরি করা থেকে সাবধান থাকো যা তুমি কখনও কোন আলেমের কাছ থেকে শোনোনি।" -
- মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া: ২১/২৯১
- বিদআতীদের সমালোচনা করা প্রসঙ্গে ইবন তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) নিম্নোক্ত উক্তিটি বর্ণনা করেছেন:
“কিছু লোক যখন ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ)-কে বলল যে তারা মানুষদের সমালোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করে, তিনি জবাব দিলেন, ‘তুমি যদি চুপ থাকো আর আমিও চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ ব্যক্তিকে সহীহ ও বাতিলের পার্থক্য কে জানাবে?’”- মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া: ২৮/২৩১
- ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) তার স্ত্রী উম্মু সালিহ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পর তার প্রশংসা করে বলেছিলেন, “ওয়াল্লাহি, আমরা ৩০ বছর একইসাথে ছিলাম কিন্তু একটি বারের জন্যও আমাদের মাঝে কোন তর্ক হয়নি।”
তাকে প্রশ্ন করা হলো, “এটা কীভাবে সম্ভব? মানে আমরা বলতে চাচ্ছি, আপনাদের দু’জনের এই শক্তিশালী বন্ধন ও পারস্পরিক সুসম্পর্কের গোপন রহস্য কী ছিলো?”
তিনি খুব সুন্দর করে উত্তরটি দিলেন, “যখন আমার স্ত্রী আমার উপরে অসন্তুষ্ট হতো এবং আমার সাথে তর্ক করতে চাইত, আমি নিশ্চুপ থাকতাম। আবার যখন আমি তার উপরে অসন্তুষ্ট হতাম এবং তর্ক করতে যেতাম, সে নিশ্চুপ থাকত।”- আল-খাতিব আল বাগদাদী, তারিখ বাগদাদ, ১৬/৬২৬
- একদিন ইমাম আহমাদের ছেলে আব্দুল্লাহ তাঁকে বললেন, “আব্বা, আমাকে উপদেশ দিন।”
তিনি উত্তর দিলেন, “বাবা, সবসময় ভালো নিয়্যাত রাখবে। তুমি যতক্ষণ ভালো কাজের নিয়্যাত রাখবে, ততক্ষণ ভালো অবস্থায় থাকবে।”- আল আদাব আশ-শারিয়্যাহ; ১/১০২
- ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.) আস-সুন্নাহ নামক গ্রন্থে বলেন: আমি আমার পিতাকে বিদাতীদের পেছনে সালাত আদায় করার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রতুত্তরে বললেন ‘‘জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলা প্রমুখ বিদাতীদের পেছনে সালাত আদায় করা জায়েয নয়’’। তাকে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল জাহমিয়্যাহদের পেছনে সলাহ আদায় করার বিধান সম্পর্কে। তিনি বলেন: তাদের পেছনে সালাত আদায় করা যাবে না। তাদের কোন মর্যাদা নেই।
- ইবনু হানী, মাসাইলু আহমাদ ১/৬৩ মাসআলা নং ৩১২
- মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আত-ত্বববা’ বলেন, আমি জনৈক ব্যক্তিকে আহমাদ ইবনে হাম্বাল সমীপে আরয করতে শুনলাম, সে বলল, ‘‘হে আবু আব্দুল্লাহ, যে ব্যক্তি মাদক সেবন করে আমি তার পেছনে সালাত আদায় করব কী? তিনি বললেন, না। ঐ ব্যক্তি আবার জিজ্ঞাসা করলো: যারা কুরআনকে মাখলুক (সৃষ্ট) বলে তাদের পেছনে সলাহ আদায় করব কী?
তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি তোমাকে মুসলিম থেকেই মানা করলাম আর তুমি কাফিরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছ?- আশ-শরী‘আহ ৮৯
- “আমাদের দৃষ্টিতে সুন্নাহর মূলনীতি হলো: আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদের পথ অনুসরণ করা, তাদের আদর্শ অনুসরণ করা এবং বিদ’আত ত্যাগ করা, কারণ প্রতিটি বিদ’আতই পথভ্রষ্টতা।”
- শারহুল আহলে সুন্নাহতে আল-লালকাঈ
- “যদি তুমি কাউকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহাবীদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে দেখো, তাহলে তার ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করো।”
- আল-লালিকাঈ, আস-সুন্নাহ, ২৩৫৯
- "আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ তাঁর আরশের উপর আছেন—যেভাবে ইচ্ছা এবং যে পদ্ধতিতে ইচ্ছা, কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা এমন বিবরণ ছাড়া যা মানুষ বুঝতে বা বর্ণনা করতে পারে। আল্লাহর সিফাত (গুণাবলী) সম্পর্কিত জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই এসেছে এবং এগুলো তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি নিজেকে যেমনভাবে বর্ণনা করেছেন, সেভাবেই আছেন: 'কোনো দৃষ্টিই তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না' (সূরা আল-আন‘আম ৬:১০৩)।"
- ইবন তাইমিয়্যাহর 'দারউত তা‘আরুদুল ‘আকল ওয়ান নাক্বল' (২/৩০)
- "যে ব্যক্তি দাবি করে যে আল্লাহ কথা বলেন না, সে কাফির। নিশ্চয়ই আমরা এ হাদীসগুলো এমনভাবে বর্ণনা করি যেভাবে তা আমাদের কাছে পৌঁছেছে।"
- আস-সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৭১
- আল্লাহকে তাঁর নিজে নিজেকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন—পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত—তা ছাড়া অন্য কোনোভাবে বর্ণনা করা কোনোভাবেই বৈধ নয়।"
- কিতাবুল মিহনা, পৃষ্ঠা ৬৮
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাগণ—চার খলিফার পর—মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাদের মধ্যে কারো সমালোচনা করা, ত্রুটি বা অপূর্ণতা আরোপ করা কারো জন্য জায়েজ নয়। নিশ্চয়ই শাসকের দায়িত্ব হলো এমন ব্যক্তিকে সতর্ক করা ও শাস্তি দেওয়া, এবং তাকে ক্ষমা করা উচিত নয়।"
- কিতাবুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮ এবং ইবনুল জাওযীর 'মানাকিবুল ইমাম আহমাদ', পৃষ্ঠা ১৭০
- "যে ব্যক্তি তার নিয়তকে সংশোধন করেছে, তার জন্য জ্ঞানার্জনের কোনো তুলনাই হয় না। তিনি নিজের থেকেও অজ্ঞতা দূর করতে চান এবং অন্যদের থেকেও।"
- মাজমুউল ফাতাওয়া ২৬/৫০
- ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো: একজন রাফেজী প্রতিবেশী যদি তাকে সালাম দেয়, সে কি তার সালামের জবাব দেবে? তিনি উত্তর দিলেন, "না।"
- সুন্নাহ লিল-খল্লাল, ৩/৪৯৩
- "যে ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর সাহাবাগণকে গালি দেয়, আমরা বিশ্বাস করি না যে সে দ্বীন প্রত্যাখ্যান করা থেকে নিরাপদ।"
- সুন্নাহ লিল-খল্লাল, ৩/৪৯৩
- "যে ব্যক্তি বলে, পরাক্রমশালী ও মহিমান্বিত আল্লাহকে আখিরাতে দেখা যাবে না—সে কাফির হয়েছে। তার উপর আল্লাহর লানত ও ক্রোধ বর্তাবে; সে যে কেউই হোক না কেন।"
- আশ-শারী‘আহ, পৃষ্ঠা ২৫৪
- নবীজি (সা.)-এর হাদীস প্রসঙ্গে: "উম্মত ৭০-এর বেশি দলে বিভক্ত হবে, যাদের সবাই জাহান্নামে যাবে কেবল এক দল ব্যতীত..."
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.) বললেন, "যদি তারা হাদীসের লোকেরা না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা!"- শারাফু আসহাবিল হাদীস, ১/৭
- "তোমরা আমার মতের অনুসরণ করো না, মালিক, শাফিঈ, আওযাঈ বা সাওরীর মতেরও অনুসরণ করো না। বরং তাদের যে উৎস থেকে জ্ঞান নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে গ্রহণ করো।"
- ইবনুল কাইয়্যিম, ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ২/৩০২
- ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) মিহনার সময়কালে আল-মু‘তাসিমকে বলেছিলেন: "আমি যুক্তিতর্ক বা দার্শনিক আলোচনার মানুষ নই। আমি কেবল রেওয়ায়েত (হাদীস) ও আসার (সাহাবা-তাবিয়ীদের বর্ণনা) এর মানুষ।"
- হানবাল ইবন ইসহাকের 'আল-মিহনা', পৃষ্ঠা ৫৪। মিহনা হলো আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন ও আল-মু‘তাসিমের সময়ে চালু হওয়া নিপীড়নমূলক কর্মসূচি, যেখানে আল-কুরআন "মাখলুক" (সৃষ্ট) হওয়ার মতবাদ জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়। ইমাম আহমাদ এই মতবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন এবং নির্যাতন সহ্য করেন।
শেষ ধর্মোপদেশ
[সম্পাদনা]- "বিদআতের অনুসারীদের বলুন: আমাদের ও তোমাদের মধ্যে মৃত্যুর দিনই হবে বিচারক।"
তাঁর সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলের পুত্র বলেন: “যখনই কোন ধার্মিক ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীর সৌন্দর্যের দ্বারা প্রলুব্ধ হননি, আমার বাবা আমাকে ডেকে পাঠাতেন যাতে আমি তাদের দেখতে পারি। তিনি আমাকে তাদের মতো হতে ভালোবাসতেন।”
- “আস-সিয়ার” ১২/৫৩০
- "শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলামের চার মাযহাবের আলেমরা পবিত্র মসজিদে শিক্ষাদান করেছেন, আর দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্ররা এসে জমায়েত হত হালাকা বা শিক্ষা চক্রে তাদের পছন্দের শিক্ষকদের ঘিরে। বিশ্বাসীরা তাদের ইমামদের পিছনে কিছুটা ভিন্ন সময়ে নামাজ পড়ত; প্রতিটি মাযহাবের জন্য ছিল আলাদা স্থান: শাফেয়ী, মালিকী, হানাফী, ও হাম্বলী। ১৯২৪ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ যখন মক্কা দখল করলেন, ওয়াহাবি আলেমরা পবিত্র মসজিদের প্রচলিত ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেন। যদি মুসলিম সম্প্রদায় এক হয়, আর আজান এক হয়, তবে এক ইমামের পিছনে নামাজ না পড়ার কারণ কী? ওয়াহাবি আলেমরা বিতর্কে জয়ী হয়ে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করলেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন বা সমঝোতা ছিল না: পবিত্র মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করতেন শুধু ওয়াহাবি ঘরানার ইমাম, যা নিয়ে আসল কট্টর অসহিষ্ণুতা। হালাকার সংখ্যা দ্রুত কমে গেল—কয়েক শত থেকে ১৯৭০-এর দশকে মাত্র ৩৫-এ নেমে এল। সুফি শেখ মোহাম্মদ আলাওয়ী আল-মালিকি, যার সাথে মক্কা হামলার প্রথম দিন সামি পরামর্শ করেছিলেন, তিনি তবুও ভিড় জমাতেন—পবিত্র মসজিদের প্রাঙ্গণের তাঁর কোণায় বাবার কাছ থেকে ১৯৭১ সালে পাওয়া চেয়ারটিতে বসে শিক্ষাদান করতেন। কিন্তু অন্যদের মধ্যে ওয়াহাবি উগ্রতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা ছিল না। সামি ভাবল, শুধুমাত্র ঈশ্বরের ঘরে বৈচিত্র্য ফিরে এলে সম্প্রীতি ফিরতে পারে। কিন্তু আল-সৌদ রাজবংশ এভাবে এগোবে না। বিন বাজের সাথে সিংহাসন রক্ষার যে চুক্তি তারা করেছিল, এটা তার অংশ নয়।"
- "আমার চোখ হাদিসের আলেমদের মধ্যে আহমদ ইবনে হাম্বলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে দেখেনি। আল্লাহর হুদুদ ও তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাঃ-এর সুন্নাহের প্রতি এত গভীর শ্রদ্ধা আর কারও মধ্যে আমি দেখিনি—যদি কোনো বর্ণনা সহিহ প্রমাণিত হয়। তাঁর চেয়ে সুন্নাহ অনুসরণে আর কেউ এতটা আগ্রহীও আমি দেখিনি।"
- আব্দুল-মালিক আল-মাইমুনি, উদ্ধৃত: মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল, ইংরেজি অনুবাদ, খণ্ড ১, পৃ. ১৯
- ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, আমি বাগদাদে আহমদ বিন হাম্বলের চেয়ে অধিক জ্ঞানী, ত্যাগী ও মুত্তাকী আর কাউকে রেখে আসিনি।
- ইবনে খাল্লিকান, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭; সিয়ার আ‘লামিন নুবালা, ১১/১৭৭-৩৫৮
- আব্দুস সালাম নামক এক ব্যক্তি বলেন, একদিন তিনি আমাকে হাসতে দেখেছিলেন। যার কারণে আজ পর্যন্তও লজ্জায় তার সামনে আমার মাথা নিচু হয়ে আসে।
- মানাকিবুল ইমামি আহমদ বিন হাম্বলি
- আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের মজলিস ছিল আখেরাতের মজলিস। সেখানে কখনো তিনি দুনিয়ার আলোচনা করতেন না। আমি কখনো তাকে দুনিয়ার নাম উচ্চারণ করতে শুনিনি। সাধারণ মানুষ যে সকল দুনিয়াবি কথায় লিপ্ত থাকে আমি তাকে কখনো সেসব কথায় লিপ্ত হতে দেখিনি। তবে ইলমী আলোচনার জন্য সব পরিষ্কারভাবে বলে দিতেন।
- তারিখে ইবনে আসাকির, খন্ড-২; সিয়ার আ‘লামিন নুবালা, ১১/১৭৭-৩৫৮
- আলী ইবনুল মাদীনী (মৃত্যু: ২৩৪ হি.) বলেছেন: "নিশ্চয়ই আল্লাহ আবু বকর আস-সিদ্দীক (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর মাধ্যমে মুরতাদ হওয়ার দিনে এই দ্বীনকে সাহায্য করেছেন, আর আহমাদ ইবন হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ)-এর মাধ্যমে ফিতনার দিনে (এই দ্বীনকে সাহায্য করেছেন)।"
- তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৪৩২
- ইব্রাহীম আল-হাত্বী (মৃত্যু: ২৮৫ হি.) বলেছেন: "আমি আবু ‘আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল)-কে দেখেছি। মনে হচ্ছিল যেন আল্লাহ তাঁর জন্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানুষের জ্ঞান একত্রিত করে দিয়েছেন।"
- সিয়ার আ‘লামিন নুবালা, ১১/১৭৭-৩৫৮
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় আহমদ ইবনে হাম্বল সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিমিডিয়া কমন্সে আহমদ ইবনে হাম্বল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।

উইকিসংকলনে আহমদ ইবনে হাম্বল সম্পর্কিত একটি মৌলিক রচনা রয়েছে।