আহ্লাদ
অবয়ব
আহ্লাদ হলো হাস্যরসাত্মক এবং বিনোদনমূলক ঘটনা বা পরিস্থিতি অনুভব করার অবস্থা যখন ব্যক্তি বা প্রাণী সক্রিয়ভাবে অভিজ্ঞতা বজায় রাখে এবং তা উপভোগ, সুখ, হাসি এবং আনন্দের সাথে যুক্ত হয়। এটি ইতিবাচক বীরত্ব এবং উচ্চ শারীরবৃত্তীয় উত্তেজনার সাথে যুক্ত একটি আবেগ।
উক্তি
[সম্পাদনা]- কত আশা, কত ভয়, কতই আহ্লাদ,
কতই বিষাদ আসি হৃদয় পূরিল,
কত ভাঙি, কত গড়ি, কত করি সাধ,
কত হাসি, কত কাঁদি, প্রাণ জুড়াইল।
রজনীতে কি আহ্লাদ, কি মধুর রসাস্বাদ,
বৃন্তভাঙা মন যার সেই সে বুঝিল!- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, যমুনাতটে, কবিতাবলী- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- এডুকেশন গেজেট ও অবোধবন্ধু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- আহ্লাদে শব্দের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া ইনি বলেন, ‘দশজনের আহ্লাদ পাইয়া অহংকৃত।’ প্রশ্রয়প্রাপ্ত, অহংকৃত এবং ‘আহ্লাদে’-র মধ্যে যে অনেক প্রভেদ এতাে বলাই বাহুল্য।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সংজ্ঞাবিচার, বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৪
- বাঙ্গালা দেশে আমরা বারমাসে তের পার্ব্বণ দেখিয়া আসিতেছি, এখানে ১২ মাসের পূজা পার্ব্বণের সংখ্যা করিয়া উঠাই এক কঠিন ব্যাপার। কি গুর্খা, কি নেওয়ার, নেপালীদিগের ভিতর চির উৎসব চলিয়াছে। এত পূজা পার্ব্বন, আমোদ আহ্লাদ করিয়া কখন যে তাহারা জীবিকা উপার্জ্জনের অবসর পায় তাহাই ত এক সমস্যা। গুর্খাগণ হিন্দু, নেওয়ারগণ পূর্ব্বে বৌদ্ধ ছিল। এই উভয় সম্প্রদায়ের উৎসব এখন নেপালের জাতীয় উৎসব হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই কারণেই নেপালে পূজা পার্ব্বণের এত বাহুল্য দেখা যায়।
- হেমলতা দেবী, নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি,
খাসা তোর চ্যাঁচানি!
শুনে শুনে আন্মন
নাচে মোর প্রাণমন!
মাজা–গলা চাঁচা সুর
আহ্লাদে ভরপুর!- সুকুমার রায়, প্যাঁচা আর প্যাঁচানি, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২৫
- কেষ্ট লজ্জায় আহ্লাদে আরক্ত মুখ হেঁট করিল। যদিও এটা পেয়ারার সময় নয়, হেমাঙ্গিনীও খাইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠেন নাই, তথাপি এই দুটি সংগ্রহ করিয়া আনিতে দুপুরবেলার সমস্ত রোদটা কেষ্টর মাথার উপর দিয়া বাহিয়া গিয়াছিল। হেমাঙ্গিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, হাঁ কেষ্ট, কে তোকে বললে আমার জ্বর হয়েচে।
কেষ্ট জবাব দিল না।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মেজদিদি, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪
- জীবানন্দ আহ্লাদে গদ্গদ হইয়া বলিলেন, “শিখাইলে ত!”
শান্তি প্রফুল্লচিত্তে বলিতে লাগিল, “আরও দেখ গোঁসাই, ইহকালেই কি আমাদের বিবাহ নিষ্ফল? তুমি আমায় ভালবাস, আমি তোমায় ভালবাসি, ইহা অপেক্ষা ইহকালে আর কি গুরুতর ফল আছে? বল ‘বন্দে মাতরম্’।” তখন দুই জনে গলা মিলাইয়া “বন্দে মাতরম্” গায়িল।- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, তৃতীয় খণ্ড — তৃতীয় পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৮৪
- গৃহস্বামিনীর এইরূপ স্নেহবাক্য শ্রবণে ও সদয় ব্যবহার দর্শনে, সেই দীন বালকের আহ্লাদের সীমা রহিল না। তাহার নয়নযুগল হইতে আনন্দাশ্রু নির্গত হইতে লাগিল। সে, পর দিন অবধি, বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইয়া, যার পর নাই যত্ন ও পরিশ্রম করিয়া, শিক্ষা করিতে লাগিল। কালক্রমে সে বিলক্ষণ বিদ্যা উপার্জ্জন করিল, এবং লোকসমাজে বিদ্বান্ ও ধর্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি বলিয়া গণ্য হইয়া, সুখে ও স্বচ্ছন্দে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিতে লাগিল।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লোভসংবরণ, আখ্যানমঞ্জরী (প্রথম ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক-শ্রীকার্ত্তিক চন্দ্র দে, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪-১৫
- রামমােহন মাল যখন অন্তঃপুরে আসিয়া বিভাকে প্রণাম করিয়া কহিল, “মা তােমায় একবার দেখিতে এলাম” তখন বিভার মনে বড় আহ্লাদ হইল। রামমােহনকে সে বড় ভালবাসিত। কুটুম্বিতার নানাবিধ কার্য্যভার বহন করিয়া রামমােহন প্রায় মাঝে মাঝে চন্দ্রদ্বীপ হইতে যশােহরে আসিত। কোন আবশ্যক না থাকিলেও অবসর পাইলে সে এক একবার বিভাকে দেখিতে আসিত।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট, নবম পরিচ্ছেদ, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৩
- ভুবন চৌধুরী নিজেই জমিদারির কাজকর্ম দেখিতেন। তা ছাড়া, স্বহস্তে নিত্য শালগ্রাম-শিলার পূজা করা, ব্রত-নিয়ম-উপবাস, ঠাকুরবাড়ি ও অতিথিশালায় সাধু-সন্ন্যাসীর পরিচর্যা—এইসব কাজে তাঁহার সকাল হইতে রাত্রি দশটা-এগারটা পর্যন্ত কাটিয়া যাইত। নূতন বিবাহ করিয়া কোন প্রকার নূতন আমোদ-আহ্লাদ তাঁহাতে প্রকাশ পাইল না। রাত্রে কোনদিন ভিতরে আসিতেন, কোনদিন বা আসিতে পারিতেন না। আসিলেও অতি সামান্যই কথাবার্তা হইত—শয্যায় শুইয়া পাশবালিশটা টানিয়া লইয়া, চোখ বুজিয়া বড় জোর বলিতেন, তা তুমিই হলে বাড়ির গৃহিণী, সব দেখে-শুনে, বুঝেপড়ে নিজেই নিয়ো—
পার্ব্বতী মাথা নাড়িয়া বলিত,আচ্ছা।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেবদাস, দশম পরিচ্ছেদ, দেবদাস - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ,প্রথম প্রকাশ- মাঘ-১৩৫৪, প্রকাশক- সরকার এ্যাণ্ড কোং, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৬
- নারদের বাণী শুনি অভিমানী
অমর মণ্ডলী বিমর্ষ হয়;
আবার আহ্লাদে গভীর নিনাদে
সঙ্গীত তরঙ্গ বেগেতে বয়!- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, গঙ্গার উৎপত্তি, কবিতাবলী- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- এডুকেশন গেজেট ও অবোধবন্ধু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৭
- দুইজনে দুপুরবেলায় বসিয়া কুকুরটার পিঠে হাত বুলাইয়া তোয়াজ করিত। রামা বলিত, “দেখিস, আমার দিকে হাত বোলাস নে।” ভজু বলিত, “খবরদার, এদিকে হাত আনিস নে। দুইজনে খুব সাবধানে নিজের নিজের ভাগ বাঁচাইয়া চলিত। যখন ভজুর দিকের পা তুলিয়া কুকুরটা রামার দিকে কান চুলকাইত, তখন ভজু খুব উৎসাহ করিয়া বলিত “খুব দে—আচ্ছা করে খামচে দে।” আবার ভজুর দিকে মাছি বসিলে রামার দিকের মুখটা যখন সেখানে কামড়াইতে যাইত, তখন রামা আহ্লাদে আটখানা হইয়া বলিত, “দে কামড়ে! একেবারে দাঁত বসিয়ে দে।”
- সুকুমার রায়, কুকুরের মালিক,সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৭
- জন্মেও বুড়ি এত ধন কোনোদিন দেখে নি— মুখ হাঁ করে সেই রাশি রাশি টাকা মোহরের দিকে বুড়ি খানিকক্ষণ চেয়ে রইল। তারপর বুড়ির আহ্লাদ আর ধরে না। হাঁটু গেড়ে মাটিতে পড়ে দুই হাতে টাকাগুলো ঘাঁটতে লাগল। সময় বুঝে চানুও তার পকেট বোঝাই ত করলেই, তারপর একটা থলে মোহর দিয়ে ভর্তি করে চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাইরের দিকে থেকে দরজায় চাবি লাগিয়ে দিল—বুড়ি সেই টাকার ঘরেই আটকা পড়ে রইল।
বেরিয়ে এসেই চানু সুন্দর একটা পোশাক পরলে, তাবপব সেই ছাগল, ভেড়া আর ষাঁড়টাকে নিয়ে একেবারে সেই কৃষকের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত। কৃষক তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ির দরজায়ই বসে ছিল, তারপর সেই হারানো জন্তুগুলিকে দেখে আহ্লাদে লাফিয়ে উঠল।- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, ঝানু চোর চানু, গল্পমালা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯৭-৩৯৮
- পাছে টাকা ডুবে এই ভয় এ অবস্থায় সকলেরই হইয়া থাকে —হেরম্ব বাবু খল কপট নহেন, সুতরাং বাঞ্ছারামের উক্ত কথা তাঁহার মনে একেবারে চৌচাপটে লেগে গেল, অম্নি “হ্যাঁ” বলিয়া কাগজপত্র তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন। হনূমান যেমন রাবণের মৃত্যুবাণ পাইয়া আহ্লাদে লঙ্কা হইতে মহাবেগে আসিয়াছিল, বাঞ্ছারামও ঐ সকল কাগজপত্র ইষ্ট কবচের ন্যায় বগলে করিয়া সেইরূপ ত্বরায় সহর্ষে বাটী আসিলেন।
- প্যারীচাঁদ মিত্র, আলালের ঘরের দুলাল - প্যারীচাঁদ মিত্র, দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৯-১৮০
- ল্যাজ নেড়ে যেই ঘেউ ঘেউ ঘেউ, লাফিয়ে দাঁড়ায় কোলে,
মনিব আমার বোকচন্দর, আহ্লাদে যান গলে।
আমিও যদি সেয়না হতুম, আরামে চোখ মুদে
রোজ মনিবের মন ভোলাতুম অমনি নেচে কুঁদে!
ঠ্যাং নাচাতুম, ল্যাজ দোলাতুম, গান শোনাতুম সাধা—
এ বুদ্ধিটা হয় নি আমার—সাধে কি বলে গাধা!”
বুদ্ধি এঁটে বসল গাধা আহ্লাদে ল্যাজ নেড়ে।
নাচল কত, গাইল কত, প্রাণের মায়া ছেড়ে।- সুকুমার রায়, সাধে কি বলে গাধা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৫
- অনেক কথাবার্ত্তার পর যামিনী সেইদিনই কানপুর যাত্রা করিলেন। প্রমোদ সমস্ত দিন বিষাদময়-আহ্লাদে অভিভূত হইয়া ভাবিতে লাগিলেন। নীরজা তাঁহার হইবে এই তাঁহার আহ্লাদ; যাহা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নাই, যাহা আশার অতীত সেই বিষয়ে আশার সঞ্চারেই তাঁহার আহ্লাদ। আবার বিষাদ এই, তাঁহার পরম বন্ধু যামিনীকে তাঁহার জন্য নিরাশ হইতে হইল।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, ছিন্নমুকুল, ত্রয়ােবিংশ পরিচ্ছেদ, ছিন্নমুকুল-স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- কান্তিক প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১২
- সিদ্ধেশ্বরী নামেমাত্র আহ্নিক করিতেছিলেন, ছেলের মুখ দেখিয়া ব্যথা পাইলেন। রাগ করিয়া বলিলেন, সত্যিই ত! ওদের প্রাণে কি সাধ-আহ্লাদ থাকতে নেই শৈল? দে না, বাছাদের সব দুটো জামাটামা তৈরী করিয়ে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিষ্কৃতি, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, নিষ্কৃতি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
- আমার বােধ হয়, যে-ব্যক্তি নিজেকে জগতের আদুরে ছেলে মনে করে তাহাকে আহ্লাদে বলে; প্রশ্রয়দাত্রী মায়ের কাছে আদুরে ছেলেরা যেরূপ ব্যবহার করে যে-ব্যক্তি সকল জায়গাতেই কতকটা সেইরূপ ব্যবহার করিতে যায়। অর্থাৎ যে-ব্যক্তি সময়-অসময় পাত্রাপাত্র বিচার না করিয়া সর্বত্র আবদার করিতে যায়, সর্বত্রই দাঁত বাহির করে, মনে করে সকলেই তাহার সকল বাড়াবাড়ি মাপ করিবে সে-ই আহ্লাদে। তাহাকে কে চায় না-চায়, তাহাকে কে কী-ভাবে দেখে, সে-বিষয় বিবেচনা না করিয়া সে দুলিতে দুলিতে গায়ে পড়িয়া সকলের গা ঘেঁষিয়া বসে, সকলের আদর কাড়িতে চেষ্টা করে। সংজ্ঞালেখকগণ অনেকেই আহ্লাদে ব্যক্তির এক-একটি লক্ষণমাত্র নির্দেশ করিয়াছেন, কিন্তু যাহা বলিলে তাহার সকল লক্ষণ ব্যক্ত হয় এমন কোনো কথা বলেন নাই। দশম সংজ্ঞাকে ঠিক সংজ্ঞা বলাই যায় না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সংজ্ঞাবিচার, বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৮-১৬৯
- হেমলতা। আমাদের কাশী বৃন্দাবন যাওয়ার কথা স্থির হইয়াছিল না?
শৈবলিনী। হ্যাঁ, শ্রীশ আমার উপরোধে সম্মত হইয়াছে, বোধ হয় শীঘ্রই যাওয়া হইবে।
হেমলতা। দিদি, তোমার সঙ্গে তীর্থে যাইব, ভাবিলে আমার বড় আহ্লাদ হয়; কত দেশ দেখিব কত তীর্থ করিব। আর শুনিয়াছি নরেন্দ্র নাকি পশ্চিমে আছেন হয়ত তাঁহার সঙ্গেও দেখা হইবে।
শৈবলিনী। হইতে পারে।- রমেশচন্দ্র দত্ত, মাধবীকঙ্কণ, এগার পরিচ্ছেদ, মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশক- পুস্তকালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা,, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০
- এই যে দেখিছ পুরী মনোহর
শতগুণ আরো শোভিত সুন্দর,
এই ভাগীরথী করে থরে থর
ধাইত তখন কতই সাধে!
গাইত তখন কতই সুস্বরে
এই সব পাখী তরু শোভা করে,
কতই কুসুম পরিমল ভরে
ফুটিয়া থাকিত কত আহ্লাদে।- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারত বিলাপ, কবিতাবলী- হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- এডুকেশন গেজেট ও অবোধবন্ধু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৪-৯৫
- বলিতে কি, মহারাজ! এখনও আমার এই সমস্ত ঘটনা স্বপ্নদর্শনবৎ বোধ হইতেছে। যাহা হউক, এক্ষণে, আমার প্রথম প্রার্থনা এই, অনুগ্রহ প্রদর্শন পূর্ব্বক আমায় পতি, পুত্র ও পুত্রবধূ লইয়া দেবালয়ে এই উৎসবরজনী অতিবাহনের অনুমতি প্রদান করেন; দ্বিতীয় প্রার্থনা এই, যে সকল ব্যক্তি আজ এই অদ্ভুত ঘটনার সংস্রবে ছিলেন, তাঁহারা সকলে, দেবালয়ে উপস্থিত থাকিয়া, কিয়ৎ কাল আমোদ আহ্লাদ করেন; তৃতীয় প্রার্থনা এই, মহারাজ নিজে উৎসবসময়ে দেবালয়ে অধিষ্ঠান করেন; চতুর্থ প্রার্থনা এই, আমার তৃতীয় প্রার্থনা যেন ব্যর্থ না হয়।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভ্রান্তিবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৫
- একদিন রজনী সংবাদ পাইল মহেন্দ্র বাড়ি ফিরিয়া আসিতেছে। আহ্লাদে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। কিন্তু তাহার কিসের আহ্লাদ! মহেন্দ্র তো তাহাকে সেই ঘৃণাচক্ষে দেখিবে। তাহা হউক, কিন্তু তাহার জন্য মহেন্দ্র যে গৃহ পরিত্যাগ করিয়া বিদেশে কষ্ট পাইতেছে এ আত্মগ্লানির যন্ত্রণা হইতে অব্যাহতি পাইল—যে কারণেই হউক, মহেন্দ্র যে বিদেশে গিয়া কষ্ট পাইতেছে ইহা রজনীর অতিশয় কষ্টকর হইয়াছিল।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, করুণা, গল্পগুচ্ছ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চতুর্থ খণ্ড, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬৬
- বলিতে লজ্জা করে, কিন্তু এই কথা শুনিয়া বন্ধুর গভীর দুঃখের মধ্যেও প্রমোদের হৃদয় সহসা যেন আহ্লাদে কম্পিত হইয়া উঠিল। কিন্তু আপনাকেই যামিনীর কষ্টের কারণ ভাবিয়া তখনি আবার সে আহ্লাদ থামিয়া আসিল।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, ছিন্নমুকুল, ত্রয়ােবিংশ পরিচ্ছেদ, ছিন্নমুকুল-স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- কান্তিক প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১২
- আমি যদিও বিধবা; কিন্তু পূর্ব্বে স্বামীসহবাস আমার অদৃষ্টে ঘটে নাই। যদিও আমি ধর্ম্মের মস্তকে পদাঘাত করিয়াছিলাম, কিন্তু এ পর্য্যন্ত আমাকে কেহ দ্বিচারিণী বলিতে পারিত না। যদিও আমি অন্য পুরুষের সহিত আমোদ আহ্লাদ করতাম, যদিও তাহাদিগের সহিত কখন সর্ব্বসমক্ষে,কখন বা নির্জ্জনে বসিয়া একত্র সুরাপান ও আমোদ-আহ্লাদ করিতে কোনরূপে কুণ্ঠিত হইতাম না, তথাপি সেই একজন ভিন্ন অন্য কাহাকেও এ পর্য্যন্ত কোন ভাবে আমার হৃদয়ে স্থান প্রদান করি নাই; কিন্তু এখন আমার মহাপাপের পরিণাম স্মরণ করিয়া হৃদয়ে ভয়ানক আতঙ্ক আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে!
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, পাহাড়ে মেয়ে, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, পাহাড়ে মেয়ে - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- দারোগার দপ্তর কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩১২ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৩০
- কোন্ বয়সের কোন্ সুখের স্মৃতি, তাহা প্রথমে কিছুই অনুভব হয় নাই, সে দিকে মনও যায় নাই। পরে তাহা স্পষ্ট স্মরণ হইয়াছিল। অনেকের এইরূপ স্মৃতিবৈকল্য ঘটিয়া থাকে। কোন একটি দ্রব্য দেখিয়া বা কোন একটি সুর শুনিয়া অনেকের মনে হঠাৎ একটা সুখের আলোক আসিয়া উপস্থিত হয়; তখন মন যেন আহ্লাদে কাঁপিয়া উঠে—অথচ কি জন্য এই আহ্লাদ, তাহা বুঝা যায় না। বৃদ্ধেরা বলেন, ইহা জন্মান্তরীণ সুখস্মৃতি।
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পালামৌ, তৃতীয় সংস্করণ, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬
- বসন্তরায় ঘরে প্রবেশ করিয়াই হাসিতে হাসিতে গান ধরিলেন;—
“আজ তােমারে দেখ্তে এলেম অনেক দিনের পরে!
ভয় নাইক, সুখে থাক,
অধিক ক্ষণ থাক্ব নাক’
আসিয়াছি দুদণ্ডেরি তরে!
দেখ্ব শুধু মুখ খানি
শুন্ব দুটি মধুর বাণী
আড়াল থেকে হাসি দেখে চলে যাব দেশান্তরে!”
গান শুনিয়া বিভা মুখ নত করিয়া হাসিল। তাহার বড় আহ্লাদ হইয়াছে। অতটা আহ্লাদ পাছে ধরা পড়ে বলিয়া বিব্রত হইয়া পড়িয়াছে।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬
- এই তিরস্কার বাক্যে কনকের মুখটি যেন আরো ম্লান হইয়া পড়িল; হিরণকুমার বলিলেন—
“কনক, বাড়ী যাবে, আবার তােমার সেই ভালবাসার ভাইটিকে দেখতে পাবে, কতদূর আহ্লাদ হচ্ছে, বল দেখি।”
কনক একটু থামিয়া থামিয়া বলিল “হাঁ আহ্লাদ হচ্ছে বই কি।”- স্বর্ণকুমারী দেবী, ছিন্নমুকুল, সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ, ছিন্নমুকুল-স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- কান্তিক প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৭
- কিছুদিন হইতে মহেন্দ্র দেখিতেছেন বাড়িটা যেন শান্ত হইয়াছে। করুণার আমোদ আহ্লাদ থামিয়াছে। কিন্তু সে শান্তি প্রার্থনীয় নহে— হাস্যময়ী বালিকা হাসিয়া খেলিয়া বাড়ির সর্বত্র যেন উৎসবময় করিয়া রাখিত— সে এক দিনের জন্য নীরব হইলে বাড়িটা যেন শূন্য-শূন্য ঠেকিত, কী যেন অভাব বোধ হইত। কয়দিন হইতে করুণা এমন বিষণ্ণ হইয়া গিয়াছিল— সে এক জায়গায় চুপ করিয়া বসিয়া থাকিত, কাঁদিত, কিছুতেই প্রবোধ মানিত না। করুণা যখন এইরূপ বিষণ্ণ হইয়া থাকে তখন রজনীর বড়ো কষ্ট হয়— সে বালিকার হাসি আহ্লাদ না দেখিতে পাইলে সমস্ত দিন তাহার কেমন কোনো কাজই হয় না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, করুণা, গল্পগুচ্ছ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চতুর্থ খণ্ড, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৭৫
- একদিন দেবযানী রাজার সঙ্গে বনের ভিতরে বেড়াইতে গিয়া সেই ছেলে তিনটিকে দেখিতে পাইলেন। এমন সুন্দর ছেলে তিনটি বনের ভিতরে কোথা হইতে আসিল? দেখিতে রাজপুত্রের মতন অথচ তাহদের সঙ্গে লোক জন নাই। এ-সকল কথা ভাবিতে ভাবিতে সকলেরই আশ্চর্য বোধ হয়, আর তাহদের পরিচয় লইতে ইচ্ছা করে। দেবযানী তাহাদিগকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাছা তোমরা কে? তোমাদের পিতার নাম কি?”
এ কথায় ছেলে তিনটি পরম আহ্লাদের সহিত যযাতিকে আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিল, “এই আমাদের বাবা! আমাদের মার নাম শর্মিষ্ঠা।”- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর কথা, মহাভারতের কথা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২৬
- সম্রাট বহির্গত হইবার অব্যবহিত পরক্ষণেই, সেই দুঃখিনীর জ্যেষ্ঠ পুত্র, চিকিৎসক সঙ্গে লইয়া গৃহপ্রবেশ করিল, এবং আহ্লাদে অধীর হইয়া জননীকে সম্ভাষণ করিয়া বলিতে লাগিল, মা, তুমি আর ভাবনা করিও না, আমি টাকা পাইয়াছি ও চিকিৎসক আনিয়াছি। পুত্রের আহ্লাদ দর্শনে, তাহার নয়নদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হইয়া আসিল। সে, পুত্রকে পার্শ্বে বসাইয়া, তাহার মুখচুম্বন করিল, এবং বলিল, বৎস, তোমার যত্ন ও আগ্রহ দেখিয়া আমার বোধ হইতেছে, তুমি অতিশয় মাতৃবৎসল, জগদীশ্বর তোমায় দীর্ঘজীবী ও নিরাপদ করুন।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দয়ালুতা ও ন্যায়পরতা, আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রকাশক- শ্রীসিদ্ধেশ্বর প্রেস্ ডিপজিটরি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৪-১২৫
- সকলে আশ্চর্য্য ভাবে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, যেন তাঁহার কথার অর্থ বুঝিতে অক্ষম। পিতাকে কথা কহিতে দেখিয়া আহ্লাদে নীরজা তাঁহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিল। সন্ন্যাসীও আহ্লাদে অভিভূত হইয়া পড়িলেন।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, ছিন্নমুকুল, ঊনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ, ছিন্নমুকুল-স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- কান্তিক প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৯-১৯০
- দাসরাজা বললেন, “আচ্ছা বল তো—এর আগে তোমাদের রাজারা কিরকম স্বভাবের লোক ছিলেন?” বুড়ো বলল, “তাঁরা সবাই ছিলেন অসাবধান আর খামখেয়ালি। সারাটি বছর সবাই শুধু জাঁকজমকে আমোদে-আহ্লাদে দিন কাটাতেন—বছর শেষে কি হবে কেউ সে কথা ভাবতেন না।”
- সুকুমার রায়, এক বছরের রাজা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১
- স্নানের পর পরিবার জন্য মেয়েরা যে কাপড় আনিয়াছিল, তাহা এক জায়গায় সাজাইয়া রাখিয়া, তাহারা আমোদ আহ্লাদ করিতেছিল। ইহার মধ্যে কখন বাতাস আসিয়া সেই-সকল কাপড় উল্টোপাল্টা করিয়া দিয়াছে, কেহ তাহা টের পায় নাই। সুতরাং তাহারা নিজের নিজের কাপড় খুঁজতে গিয়া ভুল করিতে লাগিল। শর্মিষ্ঠা যে কাপড়খানি হাতে লইলেন, সেখানি ছিল দেবযানীর আর দেবযানী তাহাতে রাগিয়া গিয়া শর্মিষ্ঠাকে বলিলেন, “হ্যা লো, অসুরের মেয়ে, তুই কোন্ সাহসে আমার কাপড় নিতে গেলি?”
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর কথা, মহাভারতের কথা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২৩
- তিলোত্তম শুনিয়া চমৎকৃত হইলেন; বিস্ময়ে হউক বা আহলাদে হউক, কিয়ৎক্ষণ কথা কহিতে পারিলেন না, পরে কহিলেন, “এ বৃত্তাস্ত কি? এ অঙ্গুরীয় তোমাকে কে দিল?”
বিমল কহিলেন, “সে সকল বিস্তর কথা; অল্প সময়ে অবকাশ-মত কহিব। এক্ষণে নিঃসঙ্কোচচিত্তে, যাহা বলিলাম, তাই। করিও।”- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দুর্গেশনন্দিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮০
- ছেলেটি যে অতিশয় লাজুক ও ভীরু স্বভাব, হেমাঙ্গিনী তাহা পূর্বেই টের পাইয়াছিলেন। তখন তাহার মাথায় মুখে হাত বুলাইয়া দিয়া, আদর করিয়া ‘দাদা’ বলিয়া ডাকিয়া, আর কত কি কৌশলে তাহার ভয় ভাঙ্গাইয়া, অনেক কথা জানিয়া লইলেন। বিস্তর অনুসন্ধানে পেয়ারা সংগ্রহ করিবার কথা হইতে শুরু করিয়া, তাহার দেশের কথা, মায়ের কথা, খাওয়া-দাওয়ার কথা, এখানে দোকানে কি কি কাজ করিতে হয় তাহার কথা, একে একে সমস্ত বিবরণ শুনিয়া লইয়া চোখ মুছিয়া বলিলেন, এই তোর মেজদিকে কখনও কিছু লুকোস নে কেষ্ট, যখন দরকার হবে চুপি চুপি এসে চেয়ে নিস্-নিবি ত?
কেষ্ট আহ্লাদে মাথা নাড়িয়া কহিল, আচ্ছা।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মেজদিদি, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪
- নৌকার দীপালোকে নীরজা সেই যুবাকে চিনিতে পারিল, নীরজা দেখিল—যামিনীনাথ তাহার উদ্ধারকারী। যামিনীনাথ তাহাকে দেখিয়া আশ্চর্য্য ভাবে বলিলেন “তুমি বনবালা! এস আমার সঙ্গে এই বোটে শীঘ্র এস।” দস্যুহস্তমুক্ত হইয়া আহ্লাদে নীরজার কথা কহিবার শক্তি ছিল না, সে নিঃশব্দে যামিনীনাথের সঙ্গে সঙ্গে গিয়া তাঁহার বোটে উঠিল। বোট ছাড়িয়া দিল।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, ছিন্নমুকুল, নবম পরিচ্ছেদ, ছিন্নমুকুল-স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশক- কান্তিক প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৩
- ছোটরাণী কিন্তু মরেনি। তার চিল মা এসে তাকে ভাসিয়ে একটা বনের ধারে নিয়ে গিয়ে, সেই বনের ভিতরে তাকে রেখে দিল। সেইখানে সে তাকে খাবার এনে দিত, একটুও কষ্ট হতে দেয়নি।
এমনি করে সেই বনের ভিতরে ছোটরাণী থাকে। তারপর একদিন রাজা সেই বনে শিকার করতে গেলেন। তখন ছোটরাণীর সঙ্গে তাঁর দেখা হল, আর কোন কথাই তাঁর জানতে বাকি রহিল না। আহ্লাদে তখন তাঁর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, চিল মা, গল্পমালা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭৪
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় আহ্লাদ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে আহ্লাদ শব্দটি খুঁজুন।