ইউভেরি মুসেভেনি


ইউভেরি মুসেভেনি (ইংরেজি: Yoweri Museveni; জন্ম: ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪) উগান্ডার একজন রাজনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, যিনি ১৯৮৬ সাল থেকে উগান্ডার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উগান্ডার তৎকালীন নেতা ইদি আমিন (১৯৭১–৭৯) ও মিল্টন ওবোতেকে (১৯৮০–৮৫) ক্ষমতাচ্যুত করার বিদ্রোহে জড়িত থাকার পর ১৯৮৬ সালে তিনি ক্ষমতা দখল করেন।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্ব তাঁকে আফ্রিকান নেতাদের নতুন প্রজন্মের অংশ হিসেবে প্রশংসা করেছিল। তবে মুসেভেনির শাসনামল কঙ্গো যুদ্ধ, রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধ এবং গ্রেট লেকস অঞ্চলের অন্যান্য সংঘাতে জড়িত থাকার কারণে; উত্তর উগান্ডায় লর্ডস রেজিস্ট্যান্স আর্মির বিদ্রোহ, যা মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছিল; এবং রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন ও সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ সীমা (২০০৫) ও বয়স সীমা (২০১৭) প্রত্যাহারের ঘটনায় বিতর্কিত হয়েছে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- "সুদান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমরা একাকী যুদ্ধ করেছি এবং তা পরাজিত করেছি। কোনো শক্তিই আমাদের ভীত করতে পারবে না। আমাদের জন্য মূলনীতি হলো উগান্ডার সংবিধান এবং এর অধীনস্থ আইনসমূহ।"
১৯৮০-এর দশক
[সম্পাদনা]- "এটি কেবল প্রহরী পরিবর্তন নয়, আমার মতে এটি আমাদের সরকারের রাজনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন।"
- ইউভেরি মুসেভেনি, "উগান্ডার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিদ্রোহী" (৩০ জানুয়ারি ১৯৮৬), শিলা রুল, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ উদ্ধৃত; উগান্ডার রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম জনসমাবেশে ভাষণ (২৬ জানুয়ারি ১৯৮৬)
২০০০-এর দশক
[সম্পাদনা]- ‘‘কেউ কেউ এটাকে দুর্ঘটনা বলে; হতে পারে সেটা দুর্ঘটনা। আবার অন্য কিছুও হতে পারে। [হেলিকপ্টার]টি অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত ছিল, এটা আমার নিজস্ব [হেলিকপ্টার] যেটা দিয়ে আমি নিয়মিত উড়ে থাকি। কোনো সম্ভাবনাই আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। হয় পাইলট আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন... নয়তো পার্শ্ববর্তী বাতাসের ঝাপটা ছিল, যন্ত্রপাতি বিকল হয়েছিল, অথবা কোনো বাহ্যিক কারণ কাজ করেছিল।’’
- ‘‘জেনারেল ওমর আল-বশিরের সরকার যদি আমাকে লাল রেখার ওপারে জোসেফ কোনিকে তাড়া করার অনুমতি দেয়, তাহলে তাঁকে ও তাঁর যোদ্ধাদের খতম করতে আমার মাত্র ৩০ মিনিট লাগবে।’’
- ‘‘আমরা যখন ইদি আমিন ও মিল্টন ওবোতের নিপীড়নমূলক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম, তখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামগুলোর কমিটিগুলোতে নির্বাচনের প্রচলন করেছিলাম।’’
- ‘‘১৯৭২ সালে ইদি আমিন ৮০,০০০ [উগান্ডান] ভারতীয়দের বিতাড়িত করেছিলেন এবং তাদের ৪,০০০ জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। এখন, সেই সম্পত্তিগুলো যথাযথ মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমরা নিশ্চিত করেছি যে ব্যক্তি ও সম্পত্তির নিরাপত্তা উগান্ডার সংবিধানের অধীন নিশ্চিত।’’
- ‘‘আফ্রিকা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ; সমস্যা হলো এগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে না।’’
- ‘‘উগান্ডায় যখন আমরা এক কিলো কফি বিক্রি করি, তখন প্রতি কিলোতে এক ডলার পাই। একই কিলো কফি প্রক্রিয়াকরণের পর [যুক্তরাজ্যে বিক্রি করলে] প্রতি কিলোতে ১০ বা ১১ ডলার পর্যন্ত আয় হয়। কাঁচামালের ক্ষেত্রেও মূল্যের এই বৈষম্য একই রকম।’’
- ‘‘আমি কখনও কোনো সংস্থাকে বলতে শুনিনি: ‘তুমি যদি শিল্পায়ন না করো, তাহলে আমি তোমাকে সমর্থন দেব না।’’’
- ‘‘আফ্রিকার ভবিষ্যৎ কোথায় তা যারা বুঝতে পারে না, তাদের দ্বারা আমি বিচলিত হব না। স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্নরাই তাদের মতামত লিখিতভাবে প্রকাশ করে। তারা বুঝে না যে সকল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে প্রক্রিয়াকরণের উপর।’’
- ইউভেরি মুসেভেনি, মাবিরা বনভূমি একটি চিনি কোম্পানিকে হস্তান্তরের পক্ষে যুক্তি দিতে (১৩ এপ্রিল ২০০৭), "উগান্ডার নেতার বনভূমি পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি"—বিবিসি নিউজ, ১৩ এপ্রিল ২০০৭
- ‘‘বন সংরক্ষণাঞ্চলে অনুপ্রবেশের দিকে পরিচালিত আদিম কৃষিপদ্ধতিতে যদি জনগণের বড় অংশ জড়িত থাকে, তবে পরিবেশের সুরক্ষা টেকসইভাবে নিশ্চিত করা অসম্ভব।’’
- ইউভেরি মুসেভেনি, কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে বক্তব্য (২৩ নভেম্বর ২০০৭), "তরুণদের কথা শুনুন, রানি পরামর্শ দিলেন"—বিবিসি নিউজ, ২৩ নভেম্বর ২০০৭
- ‘‘কাঁচামালের বদলে যদি আমরা বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারি, তাহলে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব।’’
- ইউভেরি মুসেভেনি, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন-এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর তাগিদ (২৫ নভেম্বর ২০০৭), "মুসেভেনি সম্মেলনের আলোচনায় মুখর"—পিটার বাইলস, বিবিসি নিউজ, ২৫ নভেম্বর ২০০৭
- ‘‘দ্বীপটি কেনিয়ার, কিন্তু জলসীমা উগান্ডার... [লুও সম্প্রদায়, কেনিয়ার একটি জাতিগোষ্ঠী] পাগল হয়ে গেছে, তারা এখানে মাছ ধরতে চায় অথচ এটি উগান্ডার অঞ্চল।’’
- ইউভেরি মুসেভেনি, মাইজিঙ্গো দ্বীপের মালিকানা বিতর্ক প্রসঙ্গে, "দ্বীপ বিরোধে কেনিয়ার সংসদ সদস্যদের রাগ"—বিবিসি নিউজ, ১৩ মে ২০০৯
২০১০-এর দশক
[সম্পাদনা]- "অনেকে মনে করেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা খারাপ। কিন্তু যতদিন থাকবেন, তত শিখবেন। এখন আমি শাসনব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ।"
- ইউভেরি মুসেভেনি, "পরিবর্তনের চাপ বাড়ছে" (এপ্রিল ২০১২), বেনন হার্বার্ট ওলুকা, গ্লোবাল: দ্য ইন্টারন্যাশনাল ব্রিফিং-এ উদ্ধৃত
- "নিশ্চয়ই। তারা ঘৃণ্য। এরা কী ধরনের মানুষ? আমি জানতাম না তারা কী করছে। সম্প্রতি শুনেছি তাদের কাজ ভয়াবহ। ঘৃণ্য।"
- ইউভেরি মুসেভেনি, "উগান্ডার রাষ্ট্রপতি: সমকামীরা 'ঘৃণ্য'" (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪), এলিজাবেথ ল্যান্ডাউ, জাইন ভের্জি ও অ্যান্টোনিয়া মর্টেনসেন, সিএনএন-এ উদ্ধৃত; "আপনি কি ব্যক্তিগতভাবে সমকামীদের অপছন্দ করেন?"—প্রশ্নের উত্তরে
২০২০-এর দশক
[সম্পাদনা]- "রুটি না থাকলে মেওগো (কাসাভা) খাও। আফ্রিকানরা নিজেদেরই বিভ্রান্ত করে। রুটি বা গম নেই বলে অভিযোগ করছ? দয়া করে মেওগো খাও। আমি নিজেও রুটি খাই না..."
- ইউভেরি মুসেভেনি, "রুটির অভাবে কাসাভা খাও—উগান্ডাবাসীকে মুসেভেনির পরামর্শ" (১ মে ২০২২), জব বায়ার, ডেইলি মনিটর-এ উদ্ধৃত
- "পশ্চিমা দেশগুলো অন্য জাতির ওপর তাদের চর্চা চাপিয়ে দিয়ে মানবতার সময় নষ্ট করা বন্ধ করুক। সমকামিতা স্বাভাবিকতা থেকে বিচ্যুতি। কেন? প্রকৃতিগত নাকি পরিবেশগত? আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এ বিষয়ে চিকিৎসকদের মতামত প্রয়োজন।"
- ইউভেরি মুসেভেনি, "সমকামিতার শাস্তিতে মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস করল উগান্ডার সংসদ" (২১ মার্চ ২০২৩), দ্য গার্ডিয়ান-এ উদ্ধৃত; সংসদে টেলিভিশন ভাষণ (১৬ মার্চ ২০২৩)
- ২১ মার্চ রাতে, ৩৮৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩৮৭ জন সমকামিতার সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপে মৃত্যুদণ্ডের বিধানসংবলিত বিলের পক্ষে ভোট দেন।
তার সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- "মুসেভেনির প্রাথমিক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বক্তব্য ছিল আফ্রিকার সমস্যার বিশ্লেষণ। তার মতে, আফ্রিকার মূল সমস্যা হলো ক্ষমতা ছাড়তে অনিচ্ছুক নেতৃত্ব।"
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
