ইচ্ছা
অবয়ব
ইচ্ছা বা ইচ্ছে হলো কোনো কিছুর জন্য আশা বা আকাঙ্ক্ষা।
উক্তি
[সম্পাদনা]- মানুষের হৃদয়ে একদিকে যেমন সুখলাভের ইচ্ছা তেমনি আর একদিকে আত্মত্যাগের ইচ্ছাও আছে; সুখের ইচ্ছা যখন নিষ্ফল হয় তখন আত্মত্যাগের ইচ্ছা বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সেই ইচ্ছা চরিতার্থতা সাধন করবার অবসর পেয়ে মনের ভিতরে একটা উদার উৎসাহসঞ্চার হয়। ছোট দুঃখের কাছে আমরা কাপুরুষ কিন্তু বড় দুঃখ আমাদের বীর করে তোলে, আমাদের যথার্থ মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে দেয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশস্থান- শিলাইদহ, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৭
- যদি দেশবাসীর প্রকৃত কল্যাণ ইচ্ছা কর, তবে প্রেম চাই; প্রেম বিশ্ববিজয়ী জানিবে। প্রেমের নিকট মস্তক অবনত করিতে, একদিন সকলেই বাধ্য হইবে।
- কুমুদিনী বসু, সার্ব্বভৌমিক প্রেম, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০
- তুমি যাকে পছন্দ করো, তাকে হেদায়াত করতে পারবে না, তবে আল্লাহ্ তা‘আলাই যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই অধিক অবগত আছেন।
- যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে আনুষ্ঠানিক ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সংগীত-চিন্তা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩
- কহিতাম, “যীশু, তব ইচ্ছামত হ’ক”,
প্রাণ খানি আকুলতাময়।
“মিশে যাক্ ইচ্ছা মম তব ইচ্ছা সাথে,
চিরাশ্রয়, চির দয়াময়॥”
তা’র(ই) ইচ্ছামত তিনি দিয়াছেন ফিরে,
নিবু নিবু প্রাণ এক খানি।
তাঁহার(ই) কৃপায় আজি পেয়েছি তোমারে,
স্নেহময় প্রাণের ভগিনি॥- জ্ঞানেন্দ্রমোহিনী দত্ত, ভগিনীর প্রতি।-জন্মদিন উপলক্ষে, ধূলারাশি - জ্ঞানেন্দ্রমোহিনী দত্ত, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩০১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮
- ভালো মানুষ হওয়া মানেই দার্শনিক হওয়া। যদি তুমি তোমার পিতার আদেশ মেনে চল, তবে তুমি একজন মানুষের ইচ্ছা অনুসরণ করবে; আর যদি তুমি দার্শনিকের জীবন বেছে নাও, তবে তা হবে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ। সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে তোমার কর্তব্য দার্শনিকতার সাধনায় নিবিষ্ট থাকা।
- গাইয়াস মুসোনিয়াস রুফাস, খন্ড ১৬ "বৃদ্ধ বয়সের জন্য সেরা ব্যবস্থা কী," মোরাল এক্সহরটেশন (১৯৮৬), পৃষ্ঠা ৩২
- রাজার ইচ্ছা কেবল যদি শাসনের ইচ্ছা হয়, শোষণের ইচ্ছা না হয়, তবে তাকে স্বীকার করেও মােটের উপর সমস্ত দেশ আপন স্বাতন্ত্র্য ও আত্মসম্মান রাখতে পারে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৬
- আমরা এখানে এসে কয়েকদিন সূতা কাটি। তারপর চরকাটা ভেঙ্গে যায় এবং যাঁর খুব বেশী উৎসাহ ছিল তিনি এখান থেকে বদলী হয়ে যান। তাই এখন ভাঙ্গা চরকাটা আলমারীর উপর তোলা আছে। একবার ইচ্ছা হয়েছিল কলকাতায় ডাক্তার পি. সি. রায়কে লিখি একটা চরকা পাঠাতে। তারপর ভাবলাম যে হয়তো পথে আসতে ২ ভেঙ্গে যাবে, তাই লেখা হ’ল না।
- সুভাষচন্দ্র বসু, বিভাবতী বসুকে লিখিত সুভাষচন্দ্র বসুর পত্র, মান্দালয় জেল, ইং ১৬ই ডিসেম্বর (১৯২৫), পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৭
- বিষয়-সুখের সঙ্গে ধর্ম্মের বিরোধ থাকাতেই ধর্ম্মের যথার্থ মাহাত্ম্য প্রকাশ পাইতেছে। আমাদের যা ইচ্ছা, তাহাই যদি ধর্ম্ম হইত; আমাদের স্বেচ্ছাচার তার কর্ত্তব্যে যদি কোন প্রভেদ না থাকিত; তবে ধর্ম্ম-কার্য্যের মূল্য কি থাকিত? আমরা, আপনা হইতে ধর্ম্ম পথে যাই ঈশ্বরের ইচ্ছা এই; এবং এই হেতু তিনি আমাদিগকে স্বাধীন করিয়া দিয়াছেন। আমাদের সম্মুখে সৎপথ অসৎ পথ দুইই রহিয়াছে এবং এই দুয়ের মধ্যে যাহা ইচ্ছা আমরা বাছিয়া লইতে পারি, এই কর্ত্তৃত্ব ভারও রহিয়াছে। যখন ইচ্ছা পূর্ব্বক সৎকে অবলম্বন করাতেই ধর্ম্ম, তখন যদি ধর্ম্মের বিরোধী ইচ্ছা আমাদের কিছুই না থাকিত, তাহা হইলে আমাদের ধর্ম্মের উপার্জন কি হইত?
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২-৬৩
- ইচ্ছা ছিল, যখন লোকে আসিয়া আমাকে দেখিবে তখন এই হাসিটুকু যেন রঙিন নেশার মতো আমার ঠোঁটের কাছে লাগিয়া থাকে। ইচ্ছা ছিল, যখন আমার অনন্তরাত্রির বাসর-ঘরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করিব তখন এই হাসিটুকু এখান হইতেই মুখে করিয়া লইয়া যাইব। কোথায় বাসর-ঘর! আমার সে বিবাহের বেশ কোথায়! নিজের ভিতর হইতে একটা খট্খট শব্দে জাগিয়া দেখিলাম, আমাকে লইয়া তিনটি বালক অস্থিবিদ্যা শিখিতেছে!
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কঙ্কাল, গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড)- প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০০
- শিব বলিলেন, “দেবি, তুমি নিশ্চয়ই যাইবে?” সতী বলিলেন, “প্রভুর ইচ্ছা হইলে আমি যাইতে এখনই প্রস্তুত হইব।” শিব পুনরায় বলিলেন, “দেবি, আমি তোমাকে ছাড়িয়া দিতে ইচ্ছা করি না। কিন্তু তুমি নিরানন্দ হইলে কৈলাসপুরীর তপস্যা বৃথা হইয়া যায়। ঐ দেখ জবা-কুসুম শাখা-মলিন হইয়া গিয়াছে। বিল্বদল শুষ্কপ্রায়। পক্ষিগণ কাকলী বন্ধ করিয়াছে। তোমার ইচ্ছায় বাধা দেওয়ার শক্তি আমার নাই। নন্দী সিংহকে সাজাইয়া আন। দেবী পিতৃগৃহে যাইবেন। তুমি ইঁহার সঙ্গে থাকিও, তুমি থাকিতে ইহার অনিষ্ট ঘটবে না, আমি এই ভরসায় পাঠাইতেছি।”
- দীনেশচন্দ্র সেন, সতী-দীনেশচন্দ্র সেন, প্রকাশক- জিজ্ঞাসা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭-২৮
- ক্ষণকালের জন্য আমি এইরূপ ভাবিতেছি, এমন সময় সাহেব আমাকে কহিলেন,—“আমিও এই অনুসন্ধানে বহির্গত হইতেছি। যদি তুমি ইচ্ছা কর, তাহা হইলে আমার সহিত যাইতে পার, কিম্বা যদি তুমি একাকী তোমার ইচ্ছানুযায়ী অন্য কোন স্থানে গমন করিতে ইচ্ছা কর, সেখানেও যাইতে পার। স্থূল কথা, পলাতকদিগের সন্ধান করা চাই।” এই কথা শুনিয়া আমি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলাম,—“কয়েদীদ্বয় যে স্থান হইতে, এবং যে প্রকারে পলায়ন করিয়াছে, সেইস্থান আপনি দেখিয়াছেন কি?” উত্তরে সাহেব কহিলেন,—“না, কিন্তু আমি এখনই সেইস্থানে গমন করিতেছি।” সাহেবের এই কথা শুনিয়া, আমিও তাঁহার সহিত গমন করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলাম; তিনিও সম্মত হইলেন।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, ইংরেজ ডাকাত, প্রথম পরিচ্ছেদ, ইংরেজ ডাকাত - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক-সিক্দার বাগান বান্ধব পুস্তকালয় ও সাধারণ পাঠাগার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩০১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬-৭
- যে সকল বিষয়ে আমার আত্মা পরিতৃপ্ত হয়, আমি সেই সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করিয়া স্থায়ী ভাবে এ পৃথিবীতে রাখিয়া যাইতে চাই। কখন কখন আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি যেন এমন কিছু রাখিয়া যাইতে পারি, যাহা আমার মৃত্যুর পর চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে। এবং ভবিষ্যদ্বংশীয়গণ তাহা স্মরণ করিবে। কিন্তু, আমার এই শেষ ইচ্ছা, আমার শক্তির অতীত বলিয়া মনে হয়।
- কুমুদিনী বসু, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
- আমার তখন বিদ্যাসুন্দর যাত্রার একটি গান মনে পড়িল।
বোবার ইচ্ছা কথা ফুটে,
খোঁড়ার ইচ্ছা বেড়ায় ছুটে,
তোমার ইচ্ছা বিদ্যা ঘটে
ইচ্ছা বটে— ইত্যাদি
আমাদের ইচ্ছা পলিটিক্স্—হপ্তায় হস্তায় রোজ রোজ, পলিটিক্স্;কিন্তু বোবার বাক্চাতুরীর কামনার মত, খঞ্জের দ্রুতগমনের আকাঙ্ক্ষার মত, অন্ধের চিত্রদর্শনলালসার মত, হিন্দু বিধবার স্বামিপ্রণয়াকাঙ্ক্ষার মত, আমার মনে আদরের আদরিণী গৃহিণীর আদরের সাধের মত, হাস্যাস্পদ, ফলিবার নহে।- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পলিটিক্স্, কমলাকান্তের পত্র, কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংখ্যা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৭-১৮৮
- ইচ্ছা করিলে এখনই যাওয়া যায়, ইহাই মনে করিয়া বিনোদিনী ইচ্ছাকে বক্ষে তুলিয়া লইয়া খেলা করিতে লাগিল। আগে হইলে হয়তো সেই ইচ্ছা পূর্ণ করিতে সে অগ্রসর হইত; কিন্তু এখন অনেক কথা ভাবিতে হয়। এখন শুধু বাসনা চরিতার্থ করা নয়, উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিতে হইবে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭১
- কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, "ইচ্ছে" কবিতার অংশ[১]
- দাও প্রেম—আরো প্রেম, চির-প্রেমময়!
আরো জ্ঞান, আরো ভক্তি,
আরো আত্মজয়-শক্তি—
তোমার ইচ্ছায় কর মোর ইচ্ছা লয়।
জীবন—মরণ-পানে
বহে যাক্ সুরে গানে,
হোক্ প্রেমামৃত-পানে অমর হৃদয়!- অক্ষয়কুমার বড়াল, সান্ত্বনা, এষা গীতিকাব্য- অক্ষয়কুমার বড়াল, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলিকাতা, প্রকাশকাল- ১৩১৯ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭
- কি করব এখনও ঠিক করতে পারি নি। একবার ইচ্ছে হচ্ছে রামকৃষ্ণ মিশনে যােগ দেবো। একবার ইচ্ছা হচ্ছে—বােলপুরে যাব। আবার ইচ্ছে হচ্ছে সাংবাদিক হব। দেখা যাক কি হয়।
- সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রী চারুচন্দ্র গাঙ্গুলীকেকে লিখিত সুভাষচন্দ্র বসুর পত্র, ফিটজ্ উইলিয়াম হল, কেম্ব্রিজ, ২২শে এপ্রিল, ১৯২১, পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৫
- যখন শরীর আত্মা এত পৃথক্; তখন মৃত্যুর পরেই আত্মার কি প্রকারে বিনাশ হইতে পারে। আমরা কোন বস্তুরই বিনাশ কল্পনা করিতে পারি না। যাঁহার সৃজন শক্তিতে এ সমুদয় সৃষ্ট হইয়াছে, তাঁহারই সংহার—শক্তিতে এ সমুদয় ধ্বংস হইতে পারে। ঈশ্বরের পালনী ইচ্ছার বিরাম ব্যতীত সৃষ্টির কণামাত্রও ধংস হইতে পারে না। কিন্তু ঈশ্বরের সে ইচ্ছার বিরাম হইয়াছে কি না; এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জড় বস্তু হইতেই প্রাপ্ত হইতেছি। জড় বস্তু মধ্যে কোন বস্তুরই বিনাশ হইতেছে না। জল বাষ্প রূপে উত্থিত হইয়া শুষ্ক হইয়া যাইতেছে; কিন্তু সেই বাষ্প আবার জল মূর্ত্তি ধারণ করিতেছে। শুষ্ক বৃক্ষ-পত্র-সকল ভূমিতলে পতিত হইয়া অদৃশ্য হইতেছে; কিন্তু তাহাই আবার বাষ্পীয় পদার্থ বিশেষে পরিণত হইয়া উদ্ভিজ্জের বুদ্ধি বিষয়ে সাহায্য করিতেছে। মৃত দেহের প্রত্যেক অঙ্গ, প্রত্যেক অস্থি, প্রত্যেক পরমাণু বিচ্ছিন্ন হইতেছে; কিন্তু তাহার কিছুই বিনষ্ট হইতেছে। অতএব কোন্ উপমিতি দ্বারা ইহা সপ্রমাণ হয় যে মৃত্যুর পরে আত্মারই বিনাশ হইবে। যখন একটি জড়ীয় পরমাণু বিনষ্ট হইতে পারে না, তখন কি ঈশ্বর আত্মার বিনাশই ইচ্ছা করিবেন।
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃ. ৫০-৫১
- আমি মরিব না, পরলোক আমি চাহি না। চাহি না বা কেন বলি, মরণ আছেই; মৃত্যু অলঙ্ঘনীয়, অপরিহার্য্য, যে জন্মিয়াছে সেই মরিয়াছে অথবা মরিবে। তুমি নিশ্চয় মরিবে। আমিও নিশ্চয় মরিব। সময় উপস্থিত হইলে যত্নে কি ঔষধে রক্ষা করিতে পারিবে না। অতএব আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা বৃথা।
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কণ্ঠমালা (উপন্যাস)- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চতুর্দশ পরিচ্ছেদ, বঙ্গদর্শন যন্ত্রে শ্রীরাধানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত, প্রকাশকাল - ১৮৭৭, পৃষ্ঠা ৫৭
- কোরাস’ আমাদের ছবিতে শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় একটি ব্যাপক অর্থে — বিশাল মানুষের এক বিশাল ইচ্ছা — বিস্তর মানুষ, অনেক কথা, বহু লড়াই, সব যখন একীভূত হয়ে যায়, একটা সাংগীতিক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ একটা collective আবেগ বা ইচ্ছা — তারই নাম ‘কোরাস’।
- একটা কাচের আলমারির মধ্যে নানারকমের ভাল ভাল পুতুল সাজান রহিয়াছে। প্রায় আধ ঘণ্টাকাল পুতুলগুলি অতি মনোযোগের সহিত দেখিলাম, যতবার দেখি, আশ যেন আর মেটে না। যে পুতুলের দিকে চাই, চক্ষু যেন আর নাড়িতে ইচ্ছা করে না। শুনিলাম, পুতুলগুলি কাঁচা মাটীর। কাঁচা মাটীর উপর তেমন সুন্দর রং আর কখনও দেখি নাই। নফরের কাজ দেখিয়া তাহার সুখ্যাতি না করিয়া থাকিতে পারিলাম না। বলিলাম, “এই সকল পুতুল কি তুমি নিজে গড়িয়াছ?”
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, চূর্ণ প্রতিমা, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, চূর্ণ প্রতিমা - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- দারোগার দপ্তর কার্য্যালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- এখন ইঁইতে আর কোনো কাজে মনঃসংযোগ করিতে পারি না। দুপুরবেলায় ক্লাসে যখন ছাত্রেরা গুন্গুন্ করিতে থাকিত, বাহিরে সমস্ত ঝাঁ ঝাঁ করিত, ঈষৎ উত্তপ্ত বাতাসে নিম গাছের পুষ্পমঞ্জরির সুগন্ধ বহন করিয়া আনিত, তখন ইচ্ছা করিত— কী ইচ্ছা করিত জানি না— এই পর্যন্ত বলিতে পারি, ভারতবর্ষের এই-সমস্ত ভাবী আশাস্পদদিগের ব্যাকরণের ভ্রম সংশোধন করিয়া জীবনযাপন করিতে ইচ্ছা করিত না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, একরাত্রি, পূর্ব-বাংলার গল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
- আমরা এখানে এসে কয়েকদিন সূতা কাটি। তারপর চরকাটা ভেঙ্গে যায় এবং যাঁর খুব বেশী উৎসাহ ছিল তিনি এখান থেকে বদলী হয়ে যান। তাই এখন ভাঙ্গা চরকাটা আলমারীর উপর তোলা আছে। একবার ইচ্ছা হয়েছিল কলকাতায় ডাক্তার পি. সি. রায়কে লিখি একটা চরকা পাঠাতে। তারপর ভাবলাম যে হয়তো পথে আসতে ২ ভেঙ্গে যাবে, তাই লেখা হ’ল না।
- সুভাষচন্দ্র বসু, বিভাবতী বসুকে লিখিত সুভাষচন্দ্র বসুর পত্র, মান্দালয় জেল, ইং ১৬ই ডিসেম্বর (১৯২৫), পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৭
- আমরা বড় লোক হইতে ইচ্ছা করি কিন্তু যতদিন আমাদের সত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগ হইবে—ততদিন আমাদের সে আশা বৃথা। তুমি যদি বড় লোক হইতে চাও কখনো মিথ্যা বলিও না। দৈবাৎ অন্যায় কার্য্য করিলে পিতা মাতার ভয়ে মিথ্যা বলিয়া তাহা লুকাইবার চেষ্টা করিও না।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, সত্য, গল্পস্বল্প- স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪
- বাঘ, শুনিয়া, চমকিয়া উঠিল, এবং কহিল, শিকলিতে বাঁধিয়া রাখে। তবে তুমি, যখন যেখানে ইচ্ছা, যাইতে পার না। কুকুর কহিল, তা কেন, দিনের বেলায় বাঁধা থাকি বটে; কিন্তু, রাত্রিতে যখন ছাড়িয়া দেয়, তখন আমি, যেখানে ইচ্ছা, যাইতে পারি। তদ্ভিন্ন, প্রভুর ভৃত্যেরা কত আদর ও কত যত্ন করে, ভাল আহার দেয়, স্নান করাইয়া দেয়। প্রভুও, কখনও কখনও, আদর করিয়া, আমার গায় হাত বুলাইয়া দেন। দেখ দেখি, কেমন সুখে থাকি। বাঘ কহিল, ভাই হে! তোমার সুখ তোমারই থাকুক, আমার অমন সুখে কাজ নাই। নিতান্ত পরাধীন হইয়া, রাজভোগে থাকা অপেক্ষা, স্বাধীন থাকিয়া, আহারের ক্লেশ পাওয়া সহস্র গুণে ভাল। আর আমি তোমার সঙ্গে যাইব না। এই বলিয়া বাঘ চলিয়া গেল।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ব্যাঘ্র ও পালিত কুকুর, কথামালা- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চতুশ্চত্বারিংশ সংস্করণ, প্রকাশক- সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
- ক্ষুধিতের অন্নই অভাব, তৃষ্ণার্ত্তের পানীয়ই অভাব, আর রোগীর স্বাস্থ্যপ্রদ ঔষধই অভাব। যখনই এই অভাব উপস্থিত হয়, তখনই অভাবমোচনের ইচ্ছাও জাগরিত হয়; প্রকৃতি এবিষয়ে শিক্ষয়িত্রী।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, সাধন, ধর্ম্মপ্রবন্ধ - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৯ বঙ্গাব্দ)), পৃষ্ঠা ৫৭
- একটা ইচ্ছার সঙ্গে আরেকটা ইচ্ছা কেন যে ঠিকঠাক মিলতে চায় না! দুটো চাওয়া যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে তবে মাঝের মানুষটা শুধুই পুড়তে থাকে। এ এক অসহায় দহন।
- সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কাঁচের দেওয়াল, আনন্দ পাবলিশার্স, আষাঢ় ১৪২২, পৃষ্ঠা ১৩৪
- নদীতে খুব স্রোত, সেখানে মাছ ধরা শক্ত, আর যেখানে কম জল, সেখানে মাছও কম। সেইজন্য মাছরাঙ্গা বুদ্ধি করিয়া এই জলটুকু বাহির করিয়াছে, আর নিজে মাছ আনিয়া তাহাতে ছাড়িয়াছে। প্রথম শিখিবার সময়ে মরা মাছ ছিল, কিন্তু এবারের মাছ জীয়ন্ত। তাহাদের নদীতে পলাইবার পথ নাই, চারিদিক বন্ধ। কাজেই বাচ্চাদের মাছ ধরিবার সুবিধা, কারণ যত ইচ্ছা সময় লইতে পারে।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, মাছরাঙ্গার স্কুল, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৫৬
- এই জাতীয় একনায়কতন্ত্রের উপন্যাসে উপকাহিনী-শাখাকাহিনীর বিন্যাস সম্ভব হয় না, বলতে গেলে সব মিলে একটিই কাহিনী মোটা রেখায় এগিয়ে চলে । তার রাস্তাটা একমুখী, ইচ্ছে মত কলমটাকে ঘোরাবার উপায় নেই। তাই শুরু এবং শেষের মধ্যে হয়ত কোন মসৃণ সামঞ্জস্য রাখা হয়নি, বরং রুক্ষ, অসমান, অসমতল প্রতিবিন্যাসের দ্বারা একটি যৌগিক একাগ্রতাকে ফুটিয়ে তোলবার চেষ্টা করা হয়েছে। সমগ্র কাহিনীর ফলশ্রুতিতে গিয়ে তবেই সেটি বোঝা যাবে ৷
- আনন্দ বাগচী, চকখড়ি, মুখবন্ধ চকখড়ি
- অচলা দীপ্তস্বরে কহিল, নেমকহারাম উনি। তাই বটে! কিন্তু যাকে এক সময়ে বাঁচানো যায়, আর এক সময়ে ইচ্ছে করলে বুঝি তাকে খুন করা যায়?
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, একাদশ পরিচ্ছেদ, গৃহদাহ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১-৫২
- সেই অতীত কালের স্মৃতি আজও যেন আমার প্রত্যক্ষ বোধ হইতেছে। ভবিষ্যৎ তুমি যদি বর্ত্তমানে পরিণত না হইতে, তবে অতীতের স্মৃতির মর্ম্ম পীড়া আমাকে ভোগ করিতে হইত না। স্মৃতির তীব্র বেদনায় যখন প্রাণে জ্বালা আসে তখন বিস্মৃতির সলিলে তাহা নিবারণ করিতে ইচ্ছা হয় না বিস্মৃতির অতলসলিলে ডোবা, এবং স্মৃতির মর্ম্ম জ্বালা সহ্য করা এই দুয়ের মধ্যবর্ত্তী পথ আর নাই; এই দুয়ের অতীত পথ আছে, তাহা ভগবান।
- ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, আমার খাতা - ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, প্রকাশক-শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৬
- একশ্রেণীর লোক আছে, তাহাদিগকে দেখিলেই চোখ বুজিতে ইচ্ছা করে, তাহারা যদি কথা কয় তবে কানে হাত দিতে ইচ্ছা হয়। অনেক ঘরের কোণে অতিশয় কদাকার একপ্রকার ব্যাঙ বাস করে, তাহারা যখন মাঝে মাঝে কট্কট্ শব্দ করিয়া উঠে তখন প্রাণ চমকিয়া যায়, হঠাৎ যদি খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে চোখের সামনে আসিয়া উপস্থিত হয়, তবে ছুটিয়া পলাইতে ইচ্ছা করে। জানোয়ারের মধ্যে এগুলি যেমন, মানুষের মধ্যে জ্যেষ্ঠতাত মহাশয়েরা ততোধিক। ইহাদের সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ হইলে আর জীবনে ইহাদিগকে ভুলিতে পারা যায় না।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, জ্যেষ্ঠতাত, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৫১
- কল্পনা কাহারও দাসীত্ব করিতে জানে না। কল্পনা কখনও কবিকে মেঘের উপর লইয়া গিয়া সৌদামিনীর বিলাসচঞ্চলা মূর্ত্তি প্রদর্শন করে, কখনও আবার তুষারমণ্ডিত কমলের কেশরের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া কবিকে কত নিভৃত সৌন্দর্য্য দেখায়। উন্মাদিনী চঞ্চলার ন্যায় কবির উন্মাদিনী কল্পনা কাহারও অঙ্গুলিসঙ্কেতে পরিচালিত বা ভ্রূকম্পনে বিকম্পিত হয় না। সে আপনার ভাবেই আপনি বিভোর হইয়া ছুটে, পরের ভাবে ভুলে না। কৃত্তিবাসের স্বৈরচারিণী কল্পনা কোনও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রহে নাই। কোথাও প্রাচীন পথে, কোথাও বা নূতন পথে যেখানে যেমন ইচ্ছা, সে কল্পনা চলিয়া গিয়াছে। তরণীসেন বীরবাহু প্রভৃতির সৃষ্টি এই নূতন পথে যাত্রারই ফল।
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সভাপতির অভিভাষণ, কৃত্তিবাস স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- হে মনুষ্য! আর কিছুতেই উন্মত্ত হইও না;—শুধু শান্তির জন্য, মুক্তির জন্য, মহত্ত্বের জন্য উন্মত্ত হও। দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া উন্নত মস্তকে দণ্ডায়মান হও। ঊর্দ্ধে ঈশ্বরের দিকে তাকাইয়া, সাহস পূর্ব্বক এই কথা বল:—“এখন হইতে প্রভো, তোমার যাহা ইচ্ছা, তাহাই আমার প্রতি বিধান কর; তোমার যাহা ইচ্ছ, আমারও তাহাই ইচ্ছা;—আমি তোমারি। তোমার যাহা ভাল মনে হয় আমি তাহা কখনই পরিত্যাগ করিব না; যেখানে ইচ্ছা তুমি আমাকে লইয়া যাও, যে রূপ সজ্জায় আমাকে সজ্জিত করিতে চাহ, সেইরূপ সজ্জাতেই আমাকে সজ্জিত কর। তোমার কি ইচ্ছা,—আমি প্রভুত্ব করি, কিংবা সামান্য লোকের মত থাকি, কিংবা গৃহে অবস্থান করি, কিংবা নির্ব্বাসিত হই, কিংবা দারিদ্র্য ভোগ করি, কিংবা ঐশ্বর্য্য সম্ভোগ করি? যাহা তুমি বিধান করিবে, তাহাই আমি লোকের নিকট সমর্থন করিব, তাহাই উপাদেয় বলিয়া সর্ব্ব-সমক্ষে প্রতিপাদন করিব।”
- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কোন পথে সুখ?, এপিক্টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮
- ওরা আমার চোখে-মুখে দেহে-মনে কথায়-ভাবে একটা প্রবল ইচ্ছা দেখতে পায়। সেই ইচ্ছা কোনো তপস্যার দ্বারা শুকিয়ে ফেলা নয়, কোনো তর্কের দ্বারা পিছন দিকে মুখ-ফেরানো নয়, সে একেবারে ভরপুর ইচ্ছা— চাই-চাই খাই-খাই করতে করতে কোটালের বানের মতো গর্জে চলেছে। মেয়েরা আপনার ভিতর থেকে জানে, এই দুর্দম ইচ্ছাই হচ্ছে জগতের প্রাণ। সেই প্রাণ আপনাকে ছাড়া আর-কাউকে মানতে চায় না বলেই চার দিকে জয়ী হচ্ছে। বার বার দেখলুম, আমার সেই ইচ্ছার কাছে মেয়েরা আপনাকে ভাসিয়ে দিয়েছে; তারা মরবে কি বাঁচবে তার আর হুঁশ থাকে নি। যে শক্তিতে এই মেয়েদের পাওয়া যায় সেইটেই হচ্ছে বীরের শক্তি অর্থাৎ বাস্তব জগৎকে পাবার শক্তি। যারা আর-কোনো জগৎ পাবার আছে বলে কল্পনা করে তারা তাদের ইচ্ছার ধারাকে মাটির দিক থেকে সরিয়ে আসমানের দিকেই নিয়ে যাক দেখি, তাদের সেই ফোয়ারা কত দূরে ওঠে আর কত দিন চলে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২-৪৩
- যেন একটি প্রভাত প্রফুল্লপদ্ম, দলগুলির দ্বারা আমার প্রকোষ্ঠ বেড়িয়া ধরিল—যেন গোলাবের মালা গাঁথিয়া কে আমার হাতে বেড়িয়া দিল! আমার আর কিছু মনে নাই। বুঝি, সেই সময়ে, ইচ্ছা হইয়াছিল—এখন মরি না কেন? বুঝি তখন গলিয়া জল হইয়া যাইতে ইচ্ছা করিয়াছিল—বুঝি ইচ্ছা করিয়াছিল শচীন্দ্র আর আমি, দুইটি ফুল হইয়া এইরূপ সংস্পৃষ্ট হইয়া, কোন বন্য বৃক্ষে গিয়া এক বোঁটায়, ঝুলিয়া থাকি। আর কি মনে হইয়াছিল—তাহা মনে নাই। যখন সিঁড়ির উপরে উঠিয়া, ছোটবাবু হাত ছাড়িয়া দিলেন—তখন দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলাম—এ সংসার আবার মনে পড়িল— সেই সঙ্গে মনে পড়িল— “কি করিলে প্রাণেশ্বর! না বুঝিয়া কি করিলে। তুমি আমার পাণিগ্রহণ করিয়াছ। এখন তুমি আমায় গ্রহণ কর না কর—তুমি আমার স্বামী—আমি তোমার পত্নী—ইহজন্মে অন্ধ ফুলওয়ালীর আর কেহ স্বামী হইবে না।”
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রজনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩০২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
- নম্রতা মনে জন্মিলে রাগ, দ্বেষ, হিংসা ও অহঙ্কারের খর্ব্বতা হইয়া আসে, তখন অন্য সমন্ধে শুদ্ধ চিত্ত হয় —তখন আপন বিদ্যা, বুদ্ধি, ঐশ্বর্য্য ও পদের অহঙ্কার প্রকাশ করত পরকে বিরক্ত করিতে ইচ্ছা যায় না —তখন পরের সম্পদ দেখিয়া হিংসা হয় না —তখন পরনিন্দা করিতে ও অন্যকে মন্দ ভাবিতে ইচ্ছা যায় না —তখন অন্যদ্বারা অপকৃত হইলেও তাহার প্রতি রাগ বা দ্বেষ উপস্থিত হয় না—তখন কেবল আপন চিত্ত শোধনে ও পরহিত সাধনে মন রত হয়, কিন্তু এরূপ হওয়া ভারি অভ্যাস ভিন্ন হয় না —এক্ষণে অল্প জ্ঞানযোগ হইলেই বিজাতীয় মাৎসর্য্য জন্মে —আমি যা বলি —আমি যা করি কেবল তাহাই সর্ব্বোত্তম —অন্যে যা বলে বা করে তাহা অগ্রাহ্য।
- প্যারীচাঁদ মিত্র, আলালের ঘরের দুলাল - প্যারীচাঁদ মিত্র, দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৬
- হায়! কি ভ্রান্তিমূলক বাক্য, আমাদিগের বঙ্গদেশীয় মহাত্মাগণের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি বলেন; ‘‘অবলাগণকে বিদ্যাভ্যাস করাইলে, তাহারা আর অন্তঃপুররূপ পিঞ্জর বদ্ধ হইয়া থাকিতে ইচ্ছা করিবে না, এবং অন্যান্য দেশীয় যোবাগণের ন্যায় স্বেচ্ছা-মত সর্ব্বত্র গমনাগমন করিতে ইচ্ছুক হইবে, ও ইউরোপীয় বর-বর্ণিনীগণের তুল্য ভাব ধারণ করিয়া সকল পুরুষের সহিত বাক্যালাপ করণে প্রবৃত্ত হইবে। এইরূপে তাহারা সর্ব্বত্র গতায়াত ও সর্ব্ব বিষয়ে দৃষ্টিপাত করিয়া আপনাপন অবস্থার প্রতি বিরক্ত হইবে, এবং অধীনতা-শৃঙ্খল হইতে মুক্ত হইতে ইচ্ছা করিবে। অতএব নারীগণকে বিদ্যা শিক্ষা করান কোন ক্রমেই যুক্তি সিদ্ধ নহে।” আহা! হিন্দুধর্ম্মাভিমানী মহদাশয়গণ কি যুক্তিই করিয়া থাকেন; বিদ্যার কি আকর্ষণী শক্তি আছে যে তদ্দ্বারা নারীগণকে বাহির করিবে; আর নারীগণ যে স্বাধীনতা ইচ্ছা করিবে, তাহারই বা প্রমাণ কি? একাল পর্য্যন্ত ত কোন দেশীয় কামিনীগণ স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয় নাই, তবে বঙ্গদেশীয় মহিলাগণ কি প্রকারে স্বাধীনতা ইচ্ছা করিবে।
- কৈলাসবাসিনী দেবী, হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা - কৈলাসবাসিনী দেবী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৭০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৬
- শশ প্রভৃতি পঞ্চানখ জন্তুর মাংসভক্ষণও লোকের সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন; ইচ্ছা হয় ভক্ষণ করিবেক, ইচ্ছা না হয় ভক্ষণ করিবেক না। সেইরূপ, যদৃচ্ছাক্রমে অধিক বিবাহে উদ্যত পুৰুষ সবর্ণা অসবর্ণা উভয়বিধ স্ত্রীরই পাণিগ্রহণ করিতে পারিত; কিন্তু, যদৃচ্ছাক্রমে বিবাহে প্রবৃত্তি হইলে অসবর্ণাবিবাহ করিবেক, এই বিধি প্রদর্শিত হওয়াতে, যদৃচ্ছাস্থলে অসবর্ণাব্যতিরিক্তস্ত্রীবিবাহনিষেধ সিদ্ধ হইতেছে। অসবর্ণাবিবাহও লোকের ইচ্ছাধীন, ইচ্ছা হয় তাদৃশ বিবাহ করিবেক, ইচ্ছা না হয় করিবেক না; কিন্তু যদৃচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া বিবাহ করিতে হইলে, অসবর্ণাব্যতিরিক্ত বিবাহ করিতে পারিবেক না, ইহাই বিবাহবিষয়ক চতুর্থ বিধির উদ্দেশ্য।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯
- বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা থাকিলেই কিন্তু বড়লোক হয় না; তাহা হইলে অত কম লোক বড়লোক হইতে দেখিতাম না। ইচ্ছা ত সকলেরই আছে, তোমার আমার নাই? কিন্তু আমি যে আজিও ছোট লোকই রহিয়াছি! শুধু ইচ্ছা থাকিলেই বড়লোক হয় না,ইচ্ছার খুব দরকার, কিন্তু আরো কিছু চাই। গিরিশের ইচ্ছা যথেষ্ট ছিল। তাহার পক্ষে যতটুকু কুলাইয়াছিল সে ত চেষ্টার ত্রুটি করে নাই। কিন্তু তবুও যে সে বড় লোক হইল না? হইবে কেমন করিয়া? কিরূপে কি করিতে হইবে তাহা যদি না জানিলাম, তবে ত সেই গাধা রামকান্তের মতই রহিলাম।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বড়লোক কিসে হয়?, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫৮
- একবার ভাবিলাম, যাহা করিবার করিয়াছি, আর এরূপ দুকর্ম্ম করিব না; কিন্তু পর মুহূর্ত্তেই তাহা ভুলিয়া গেলাম, গোলাপের বাড়ীতে যাইয়া উপস্থিত হইলাম। এখন আর আমার লজ্জা সরম নাই, হৃদয় কঠিন হইয়া গিয়াছে। এখন যখন ইচ্ছা, তখনই গোলাপের বাড়ীতে যাই, যখন ইচ্ছা, তখনই সে স্থান হইতে চলিয়া আসি। কাহাকেও ভয় বা লজ্জা করিতে ইচ্ছা হয় না, ইহা যেন কোন প্রকার দুষ্কর্ম্ম বলিয়া বিবেচনা হয় না।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, ডাক্তার বাবু, ডিটেক্টিভ পুলিস (প্রথম কাণ্ড) - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭
- ধর্ম্ম-রত্ন লাভ করিবার আন্তরিক ইচ্ছা চাই। আন্তরিক ইচ্ছা থাকিলে দুর্ব্বলতার অনেক পরিহার হয়। আমাদের অসৎ ইচ্ছা এক, আর দুর্ব্বলতা এক, দুই পৃথক্ বিষয়। যাহাদের সাধু ইচ্ছা, সাধু ব্যবহার, তাহাদের দুর্ব্বলতা জনিত পতন এক প্রকার; আর যাহাদের লোক রক্ষাই সর্ব্বস্ব এবং কপট ব্যবহারই পৃথিবীতে চলিবার উপায়, তাহাদের পাপ-প্রকাশ-জনিত পতন অন্য প্রকার। সাধু ব্যক্তি এক বার পতিত হইলে ঈশ্বরের প্রসাদে আবার উদ্ধার হইয়া আত্ম-প্রসাদ লাভ করেন। তাঁহার পাপজনিত অনুশোচনা এবং অনুশোচনা-জনিত ঈশ্বরের প্রকাশ, এই উভয় প্রকারেই তিনি পাপ হইতে মুক্ত হয়েন। পাপ হইতে মুক্ত হইলে ঈশ্বরের সহিত সহবাসের প্রার্থনা জন্মে, সেই প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে আত্মস্পৃহা সমধিক উজ্জ্বল হয় এবং তৎপরে ঈশ্বর স্বীয় সন্তাপহারিণী মূর্ত্তি প্রকাশ করিয়া সকল সন্তাপ হরণ করেন। ঈশ্বরম্পৃহা সঞ্চারের পূর্ব্বে এই উপদেশ; পাপের সহিত যেন সংস্পর্শ না হয়। ঈশ্বর-স্পৃহার উদ্দীপন হইলে এই উপদেশ; পা পর সহিত যেন সংস্পর্শ না হয় এবং ঈশ্বরের প্রকাশ কালেও এই উপদেশ; পাপের সহিত যেন সংস্পর্শ না হয়। এই প্রকার পাপ হইতে দূরে থাকিবার যাহার আন্তরিক ইচ্ছা, ঈশ্বর তাহার সহায়। ঈশ্বরই দুর্ব্বলের বল—ঈশ্বরই পাপীর পরিত্রাতা।
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩-২৪
- আমার এক-এক সময় ইচ্ছা করিত, বৃদ্ধ যে মিথ্যা দুর্গ অবলম্বন করিয়া বাস করিতেছে এবং মনে করিতেছে ইহা চিরস্থায়ী, সেই দুর্গটি দুই তোপে সর্বসমক্ষে উড়াইয়া দিই। একটা পাখিকে সুবিধামত ডালের উপর বসিয়া থাকিতে দেখিলেই শিকারির ইচ্ছা করে তাহাকে গুলি বসাইয়া দিতে, পাহাড়ের গায়ে একটা প্রস্তর পতনোন্মুখ থাকিতে দেখিলেই বালকের ইচ্ছা করে এক লাথি মারিয়া তাহাকে গড়াইয়া ফেলিতে—যে জিনিসটা প্রতি মুহূর্তে পড়ি-পড়ি করিতেছে, অথচ কোনো একটা-কিছুতে সংলগ্ন হইয়া আছে, তাহাকে ফেলিয়া দিলেই তবে যেন তাহার সম্পূর্ণতা-সাধন এবং দর্শকের মনে তৃপ্তিলাভ হয়। কৈলাসবাবুর মিথ্যাগুলি এতই সরল, তাহার ভিত্তি এতই দুর্বল, তাহা ঠিক সত্য-বন্দুকের লক্ষ্যের সামনে এমনি বুক ফুলাইয়া নৃত্য করিত যে, তাহাকে মুহূর্তের মধ্যে বিনাশ করিবার জন্য একটি আবেগ উপস্থিত হইত—কেবল নিতান্ত আলস্যবশত এবং সর্বজনসম্মত প্রথার অনুসরণ করিয়া সে কার্যে হস্তক্ষেপ করিতাম না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঠাকুরদা, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড)- প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩০২
- কবীরের কাজ ছিল সারাদিন তাঁত-বোনা, আফিসে বসে কলম পেশার কিম্বা পাঠশালে বসে পড়া মুখস্তর সঙ্গে তার কমই তফাৎ। তাঁত-বোনা মাকু-ঠেলার কাজ ছাড়লে কবীরের পেট চলা দায় হতো। আমাদের সংসার চালাতে হচ্ছে কলম ঠেলে। রসের সম্পর্ক মাকু-ঠেলার সঙ্গে যত, কলম-ঠেলার সঙ্গেও তত, শুধু কবীর স্বাধীন জীবিকার দ্বারা অর্জন করতেন টাকা, ইচ্ছাসুখে ঠেলতেন মাকু, আনন্দের সঙ্গে কাজ বাজিয়ে চলতেন, আর এখনকার আমরা কাজ বাজিয়ে বাজিয়ে কুঁজো হয়ে পড়লেম তবু কাজি বলছে ঘাড়ে ধরে বাজা, বাজা, আরো কাজ বাজা, না হলে বরখাস্ত। কবীরের তাঁত কবীরকে ‘বরখাস্ত’ এ কথা বলতে পারেনি। ঐ যে কবীরের ইচ্ছাসুখে তাঁত-বোনার রাস্তা তারি ধারে তাঁর কল্পবৃক্ষ ফুল ফুটিয়েছিল। এই ইচ্ছাসুখটুকুর মুক্তি কবি, শিল্পী, গাইয়ে, গুণী সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে—পয়সার সুখ নয়, কিম্বা কাজ ছেড়ে ভরপুর আরামও নয়।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পে অধিকার, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১
- উহাদিগের কর্ত্তার নাম ক্লাইব। সে ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা এবং তেজস্বিতা অসাধারণ। তাহার কোন মতেই ইচ্ছা ছিল না যে, জায়গীর পরিত্যাগ করে। কলিকাতার দুর্গটীও পুনর্নির্মাণ করিতে তাহার একান্ত ইচ্ছা। কিন্তু তাহারও সকল ইচ্ছা পূর্ণ করিতে দিতে পারিলাম না। আমাদিগের সৈন্যে তাহাদিগের বাণিজ্য কুঠীর রক্ষা করিবে, অতএব দুর্গ নির্ম্মাণে তাহাদের প্রয়োজন নাই —আর তাহারা বাণিজ্য করিতে আসিয়াছে, বাণিজ্য করুক, এদেশে ভূমি সম্পত্তি লওয়া তাহদের অনাবশ্যক, এই সকল যুক্তি প্রদর্শনে তাহাকে নিরস্ত করি।
- ভূদেব মুখোপাধ্যায়, স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস- ভূদেব মুখোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান-হুগলি, প্রকাশসাল- ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩০২ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২০
- প্রায় আধমিনিটখানেক কাহারো মুখে আর কথা নাই। তার পর পণ্ডিতমহাশয় ঘাড় বাঁকাইয়া গভীর গলায় হুংকার দিয়া বলিলেন, “কেন পটকায় আগুন দিচ্ছিলে?” দাশু ভয় পাইবার ছেলেই নয়, সে রামদপকে দেখাইয়া বলিল, “ও কেন আমায় মিহিদানা দিতে চাচ্ছিল না?” এরূপ অদ্ভুত যুক্তি শুনিয়া রামপদ বলিল, “আমার মিহিদানা আমি যা ইচ্ছা তাই করব।” দাশু তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিল, “তা হলে, আমার পটকা, আমিও যা ইচ্ছা তাই করব।” এরূপ পাগলের সঙ্গে আর তর্ক করা চলে না। কাজেই মাস্টারেরা সকলেই কিছু কিছু ধমকধামক করিয়া যে যার ক্লাশে চলিয়া গেলেন। সে ‘পাগলা’ বলিয়া তাহার কোনো শাস্তি হইল না।
- সুকুমার রায়, চীনে পটকা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১২
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় ইচ্ছা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে ইচ্ছা শব্দটি খুঁজুন।