ইসলামী সঙ্গীত
ইসলামি সঙ্গীত হলো ইসলাম সম্বন্ধীয় ইসলাম ধর্মীয় সঙ্গীত। ইসলামি সঙ্গীতকে মুসলিমরা গজল / নাশিদ বলে থাকে। সাধারণত এই ধরনের সঙ্গীতে আল্লাহ ও রাসুল (ﷺ)-এর প্রশংসাসূচক বর্ণনা করা হয়। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধীয় বিভিন্ন বিষয়াদি তুলে ধরা হয়। বাংলা ভাষায় ইসলামি সংগীতের জনক কাজী নজরুল ইসলাম বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার নিয়ে যেহেতু ইসলামে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে, তাই ইসলামি সঙ্গীতও বাদ্যহীন এবং বাদ্যযুক্ত হয়ে থাকে।
" এই উইকি টি আরো লেখা যুক্ত ও সংশোধণ করা হবে " - Arafatul Islam Akan Robi (আলাপ)
ইসলামী আইনে সঙ্গীত সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]ইসলামী সংগীতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার
[সম্পাদনা]1. "এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।"
— লুকমান ৬
2. "আমার উম্মাতের কিছু লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে, তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গান গাইবে। আল্লাহ তাআলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেবেন এবং তাদের কিছু কিছু বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করবেন।"
— আবু মালিক আল-আশআরী (রাঃ), সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০২০
3. "এই উম্মতের জন্য ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আযাব রয়েছে। একজন মুসলিম তখন বললেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ, কখন হবে তা?' তিনি বললেন, 'যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দিবে।'"
— ইমরান ইবন হুসাইন (রাঃ), তিরমিযী ২২১৫
4. "অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।"
— রাসূল (ছাঃ), বুখারী হা/৫৫৯০
5. "তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি?" আমি বললাম, "না।" তিনি বললেন, "আমি একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা থেকে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম।"
— নাফে‘ (রাঃ), ছহীহ আবূদাঊদ হা/ ৪৯২৪
6. "যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে, তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে, (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে, (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে।"
— আনাস (রা.), তিরমিযী
7. "অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত্রী অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন আনন্দ প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে শুকুর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে।"
— ইবনে আব্বাস (রা.), সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪/২৬৯৯
যে সমস্ত গান শ্রবণ করা জায়েয
[সম্পাদনা]১. ঈদের গান শ্রবণ করা:
"একদিন রাসূল সা. তার ঘরে প্রবেশ করেন এবং দেখতে পান যে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছে বা গান গাইছে। আবু বকর (রাঃ) তাদের ধমক দেন, কিন্তু রাসূল সা. বলেন, 'তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।"
— বুখারী: ৯৪৪, মুসলিম: ৮৯২
২. বিয়ের সময় দফ বাজানো:
"হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।"
— তিরমিজী: ১০০৮, ইবনে মাজাহ: ১৮৮৬
৩. কাজ করার সময় ইসলামী গান শ্রবণ করা:
"যে গান কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিশেষ করে যেগুলিতে দুয়া থাকে। রাসূল সা. পর্যন্ত ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) নামক সাহাবীর কবিতা আবৃত্তি করতেন, যাতে সাহাবীরা খন্দকের যুদ্ধের সময় পরিখা খননে উৎসাহিত হতো। আল-বারাআ’হ (রাঃ) বলেন, 'রাসূল সা. সাহাবীদের নিয়ে যখন খন্দক (গর্ত) খনন করছিলেন, তখন ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) এই কবিতা আবৃত্তি করছিলেন: 'আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ না থাকতেন, তবে আমরা হেদায়েত পেতাম না, সিয়ামও পালন করতাম না, সালাতও আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর সাকিনা (শান্তি) নাযিল করুন।'"
— সহীহ আল-বুখারী: ৩০৩৪
৪. ধর্মীয় উদ্দেশ্যবিশিষ্ট গান: "যে গান আল্লাহর তাওহীদের কথা বলে, রাসূল (সা.) এর মহব্বত ও শামায়েল বর্ণনা করে, বা জিহাদে উৎসাহিত করে। এছাড়া, যে গান সমাজের মধ্যে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে অথবা মুসলিমদের মধ্যে মহব্বত ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে, তা শ্রবণ করা জায়েয।"
বিশেষ দ্রষ্টব্য
[সম্পাদনা]ঈদের সময় এবং বিয়ের সময় শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। যিকরের সময় এই দফ বাজানো ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল সা. কখনো যিকরের সময় দফ বাজাননি, এবং তার সাহাবিরাও তা করেননি। বরং কিছু ভণ্ড সুফি পীররা এটি মুবাহ করেছে, কিন্তু এটি বিদআত হিসেবে বিবেচিত। রাসূল (সা.) বলেছেন: "তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন সংযোজন করা হতে বিরত থেক। কারণ, প্রতিটি নতুন সংযোজনই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।" — মুসলিম: ৮৬৭, নাসায়ি: ১৫৭৮
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]