উদারনীতিবাদ
অবয়ব
উদারনীতিবাদ বা উদারপন্থী মতবাদ সাম্য ও মুক্তির উপর নির্ভর করে সৃষ্ট একধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক দর্শন। এ দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে উদারতাবাদকে অনেক বিস্তৃত আকার দেওয়া হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, জনগণের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মুক্তবাণিজ্য, ব্যক্তিগত মালিকানা প্রভৃতি ধারণার উদ্ভব ঘটেছে এ দর্শনের উপর ভিত্তি করে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বৌদ্ধধর্ম্মের উদারনীতি ও মৈত্রী একসময়ে যে আলোকছটার বিকাশ করিয়াছিল, সেই আলোকে সমস্ত এশিয়া মহাদেশ আলোকিত হইয়াছিল। এই ধর্ম্ম যে, এশিয়া মহাদেশে সভ্যতার বিকাশে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল তাহাতে অনুমাত্র সন্দেহ নাই।
- শরৎকুমার রায় - বৌদ্ধ-ভারত, ১৯৩১ (পৃষ্ঠা ৩৪-৫১)
- অবশ্য তিনি পূর্ব্ব-নির্দ্দিষ্ট কোন প্রণালীবদ্ধ কর্ম্মপদ্ধতি বলশেভিকদের গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন নাই। দলকে যন্ত্রবং পরিচালনা করিতে তিনি কখনই প্রয়াসী হন নাই। তবে রাজনীতিক্ষেত্রে তথাকথিত শিথিল উদারনীতি সযত্নে পরিহার করিয়া তিনি অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন।
- লেনিনের উদ্দেশ্য, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার - ষ্ট্যালিন ১৯৪৪ (পৃষ্ঠা ২২-৪৫)
- যে অর্থে উদারনীতি রক্ষণশীলতার বিপরীতে ব্যবহৃত হয়, সে অর্থে এদের দুটোই সমানভাবে অমার্জনীয় হতে পারে: উদারনীতি যদি বিশৃঙ্খলার রূপ ধারণ করে, তবে রক্ষণশীলতা জড়তা ও অচলতার প্রতীক হতে পারে। আমরা সবসময় দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি হই—'কী ধ্বংস করা দরকার?' এবং 'কী রক্ষা করা প্রয়োজন?'
এই দুই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুধু উদারনীতি বা রক্ষণশীলতার ওপর ভরসা করা যায় না, কারণ এগুলো কোনো পূর্ণাঙ্গ দার্শনিক চিন্তা নয়, বরং অনেক সময় কেবল অভ্যাসমাত্র। এগুলো আমাদের যথেষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারে না।- টি. এস. এলিয়ট, দি আইডিয়া অফ আ খ্রিস্টিয়ান সোসাইটি (লন্ডন: ফ্যাবার অ্যান্ড ফ্যাবার, ১৯৩৯), পৃষ্ঠা ১৭
- যে উদারনীতি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে সরকারি হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে, তা আসলে মিথ্যা উদারনীতি। আমাদের দেশের ব্যবসায়কে যত বেশি আমলাতান্ত্রিক করা হয়, ততই উদারনীতির মূল ভিত্তিগুলো, যেমন রাজনৈতিক সমতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের অধিকার, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, এবং সুযোগের সমতা—বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
এই পথ আমাদের আরও স্বাধীনতার দিকে নয়, বরং কম স্বাধীনতার দিকেই নিয়ে যায়। উদারনীতির কাজ হওয়া উচিত আমলাতন্ত্রকে বাড়ানোর নয়, বরং তার সীমা নির্ধারণ করার। সত্যিকারের উদারনীতি সব বৈধ স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায় এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যে—এই স্বাধীনতা না থাকলে অন্য সব কল্যাণ ও সুবিধার সাধন বৃথা।- হারবার্ট হুভার, প্রচার ভাষণ, ২২ অক্টোবর ১৯২৮
- কোনো কোনো দেশে চলছিল রাজার অত্যাচার, আবার ইংলণ্ডের মতো কয়েকটিতে ক্ষুদ্র এক ধনীসম্প্রদারই ছিল শক্তির আসনে। আগেই বলেছি, সর্বত্রই উদারপন্থীদের দমন করে রাখা হত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমেরিকা ও ফ্রান্সের বিপ্লবের ফলে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয় উদারপন্থী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের নজরে পড়েছিল, এবং সে সম্বন্ধে যথার্থ ধারণাও জন্মেছিল।
- জওহরলাল নেহরু - বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার অনূদিত, ১৯৫১ (পৃষ্ঠা ৩৪৬-৩৫২)
- আমি এখানে 'উদারনীতি' বলতে বুঝাচ্ছি চিন্তার সেই মিথ্যা স্বাধীনতাকে, যেখানে মানুষ এমন সব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে, যেগুলোর ওপর মানুষের মননশক্তি স্বভাবগতভাবেই সফল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অক্ষম—ফলে সেই চিন্তা সেখানে অপ্রাসঙ্গিক। এই জাতীয় বিষয়ের মধ্যে পড়ে যেকোনো ধরনের মৌলিক নীতিবিচার, আর সেসবের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুতর হলো ঐশী প্রকাশের সত্যগুলি। সুতরাং, উদারনীতির মূল ভুল হলো, এই ধরনের প্রকাশিত ধর্মীয় মতবাদগুলো, যেগুলো স্বভাবগতভাবেই মানববুদ্ধির ঊর্ধ্বে এবং তার বাইরে, সেগুলোকে মানব বিচারের অধীনে আনা; এবং নিজস্ব যুক্তির ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি করা, যেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে একমাত্র ঈশ্বরীয় বাণীর বহির্জাগতিক কর্তৃত্বের ওপর।
- জন হেনরি নিউম্যান, নোট এ, 'লিবারালিজ়ম' (১৮৬৫), আপোলজিয়া প্রো ভিটা সুয়া, সম্পাদনা: মার্টিন জে. স্ভ্যাগলিক (১৯৬৭), পৃ. ২৫৫–৫৬
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় উদারনীতিবাদ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।