বিষয়বস্তুতে চলুন

ঋতু

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ঋতু বা মৌসুম বছরের একটি খণ্ডবিশেষ যা নির্দিষ্ট সার্বজনীন কোন সূত্রের ভিত্তিতে স্থির করা হয়। সচরাচর স্থানীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বৎসরের ঋতু বিভাজন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত ও শীত- এই চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়। কিছু দেশের জনগণ ঋতুকে আরো কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে ৬টি ঋতু বিদ্যমান। সাধারণত পৃৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তিত হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • হে কবীন্দ্র কালিদাস, কল্পকুঞ্জবনে
    নিভৃতে বসিয়া আছ প্রেয়সীর সনে
    যৌবনের যৌবরাজ্যসিংহাসন-’পরে।
    মরকতপাদপীঠ-বহনের তরে
    রয়েছে সমস্ত ধরা, সমস্ত গগন
    স্বর্ণরাজছত্র ঊর্ধ্বে করেছে ধারণ
    শুধু তোমাদের-’পরে; ছয় সেবাদাসী
    ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি;
    নব নব পাত্র ভরি ঢালি দেয় তারা
    নব নব বর্ণময়ী মদিরার ধারা
    তোমাদের তৃষিত যৌবনে; ত্রিভুবন
    একখানি অন্তঃপুর, বাসরভবন।
    নাই দুঃখ, নাই দৈন্য, নাই জনপ্রাণী—
    তুমি শুধু আছ রাজা, আছে তব রানী।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ঋতুসংহার থেকে উদ্ধ্ৃত
  • যেদিন আমি হারিয়ে যাবো, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
    অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
    বুঝবে সেইদিন বুঝবে!
    ছবি আমার বুকে বেঁধে
    পাগল হ’লে কেঁদে-কেঁদে
    ফিরবে মরু কানন গিরি,
    সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
    যেদিন আমায় খুঁজবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!

    স্বপন ভেঙে নিশুত্‌ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে
    কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,
    জাগবে হঠাৎ চমকে!
    ভাববে বুঝি আমিই এসে
    ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
    ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
    শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
    বেদ্‌নাতে চোখ বুঁজবে-
    বুঝবে সেদিন বুজবে।

    গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্‌বে যখন কান্না,
    ব’লবে সবাই-“সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
    আস্‌বে ভেঙে কান্না!
    প’ড়বে মনে আমার সোহাগ
    কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
    প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
    অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
    ঘন-ঘন মুছবে-
    বুঝ্‌বে সেদিন বুঝবে!

    আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
    তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
    কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
    শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
    প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
    বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
    চোখের জলে সেদিন বালা
    মুখের হাসি ঘুচবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!

    আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
    থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
    আসবে শিশির-রাত্রি!
    থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
    থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
    বঁধুর বুকের পরশনে
    আমার পরশ আনবে মনে-
    বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!

    আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-
    তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
    আসবে না ক’ আর সে!
    প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
    মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
    মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
    সেই স্মৃতি নিতো ঐ বিছানায়
    কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!

    আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
    সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
    দুলবে তরী রঙ্গে,
    প’ড়বে মনে সে কোন্‌ রাতে
    এক তরীতে ছিলে সাথে,
    এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
    নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
    তেম্‌নি তরী ছুটবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!

    তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
    আমার মতন কেঁদে-কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
    সখার কারা-বন্ধ!
    বন্ধু তোমার হান্‌বে হেলা
    ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
    দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
    বইতে প্রাণের শান্ত-এ ভার
    মরণ-সনে যুঝ্‌বে-
    বুঝবে সেদিন বুঝ্‌বে!

    ফুট্‌বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
    আকাশ-ছাওয়া তারায়-তারায় বাজবে আমার কাঁদ্‌নী-
    চৈতী-রাতের চাঁদ্‌নী।
    ঋতুর পরে ফির্‌বে ঋতু,
    সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
    চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
    আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
    যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
    বুঝ্‌বে সেদিন বুঝ্‌বে!

    আস্‌বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
    কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
    টুটবে যবে বন্ধন!
    পড়বে মনে, নেই সে সাথে
    বাঁধতে বুকে দুঃখ-রাতে-
    আপনি গালে যাচবে চুমা
    চাইবে আদর, মাগ্‌বে ছোঁওয়া,
    আপনি যেচে চুমবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে।

    আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্‌ত,
    সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান্ত–
    আসবো তখন পান্ত’।
    হয়ত তখন আমার কোলে
    সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
    আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
    চাপ্‌বে বুকে বাহু বেঁধে,
    চরণ চুমে পূজবে-
    বুঝবে সেদিন বুঝবে!
    • কবি কাজী নজরুল ইসলামের লিখা অভিশাপ কবিতা থেকে উদ্ধ্ৃত

  • মেনা শেখের খবর জান?-সাত গাঁয়ে তার নাম,
    ছেলে বুড়ো যাকেই শুধাও, কোন খানে তার ধাম?
    আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, আলীপুরের মোড়ে,
    আকাশ ছোঁয়া খড়ের পালা চোখের পাতা পড়ে।
    দুপুর রোদে ধাঁধিয়ে দেওয়া টিনের ঘরের চাল,
    গগন-গাঙে উড়ছে যেন সাদা পাখির পাল।
    সাত গাঁর লোক গর্ব করে ফুলিয়ে বুকের ছাতা,
    মেনা শেখের গাঁয়ের মানুষ নইক মোরা যাতা।

    জানিসনে ভাই! সেবার যে ওই দিগ-নগরের হাট।
    দবির ছেলে শোকের মামুদ কিনতে গিয়ে পাট।
    বরই ডাঙার সাদের সাথে লাগল মারামারি,
    মেনা শেখের নাম শুনে সব তুলেই পালা দাড়ি,
    -দে ছুট সেই বন-বাদাড়ে যেথায় চলে পাও,
    একলা মেনা হারিয়ে দিল একশ জনা সাও।
    কথা যাদের টাকায় বিকায় সেই যে উকিল বাবু।
    মেনা শেখের রাখতে খাতির সে-ও হয়ে যায় কাবু,
    সদর থানার বড় বাবু-যম কাঁপে যার ডরে,
    শালার চেয়ে ইতরামি গাল মুখে সদাই ঝরে।
    তারেও মেনা-কান-কথাতে করতে পারে গুণ।
    মনে নেই সেই দবির জোলার পুতের বৌ-এর খুন?

    লেখা পড়া জানে না সে? সিটকিও না দাঁত ;
    না পড়েছে আজি ক খ দুখান কলার পাত।
    পড়েছে ত সাতটি গাঁয়ের সাতশ বাড়ির লোক,
    কেমন করে ব্যথায়-গানে লয়ে হাজার শোক।
    মেঠো মায়ের অবোধ ছেলে মাটির সাথে মিশে,
    কোলখানি তার সোনায় সাজায় সোনা ধানের শীষে।
    সে ত জানে সাত ঋতুতে সাতটি রঙের আলা,
    ছবির পরে ছবি এঁকে সাজায় মাঠের থালা।
    তারি সাথে হাজার চাষীর কি কাজ হবে রোজ,
    কোন মাঠে কে করবে বা কি-জানে সে তার খোঁজ।
    বানে ফসল ডোবার আগে ডোবে তাহার চোখ,
    মায়ের ছেলে মরার আগে তাহার বুকে শোক।
    বিয়ের বেলায় কলমা পড়ায়, মরলে সে দ্যা্য় গোর
    সুখের বেলা সাথের সাথী, দুখীর দুখে ভোর।
    কেতাব পড়ে পায়নি খেতাব ? পেয়েছে এক ডাকে,
    হাজার চাষীর হাজার লাঠি উঠবস তার হাঁকে।

    তোমরা বল অত্যাচারী ?-জিভ কাটিব চুপ করে থাক,
    শেখের পোরে ডাক দিয়ে তোর পিঠেতে নয় পিটাব ঢাক।
    দোষে গুণে পয়দা মানুষ চাঁদের বুকে রয়েছে দাগ,
    যেই মেঘেতে বর্ষে বাদল সেই মেঘেতেই ঝড়েরি রাগ।
    মানি আমি, আছে তাহার অনেক রকম অত্যাচারও,
    তবু সে কেন মোড়ল মোদের ভেবেছ কি কেউ একবারও?
    খুন করিলে বুক দিয়ে সে আগে দাঁড়ায় খুনীর হয়ে,
    চোর-ধরিবাজ সবার কুনাম লয় সে আপন মাথায় বয়ে।

    একটি ভিটেয় চরছে ঘুঘু তাহার নাকি অত্যাচারে।
    জানি আমি কলম-পেষা। এই নিয়ে আজ দুষছ তারে।
    হাজার ভিটের চরত ঘুঘু সে না থাকলে মোদের গাঁয়ে,
    হাজার চালের খসত ছানি তোমাদের ওই কলম ঘায়ে।
    লাঠি তাহার মারে যদি মাথায় তাহা বইতে পারি।
    কলম দিয়ে যে মার মারো ব্যথা তাহার বুঝতে নারি।
    লাঠির আঘাত সারবে জানি দুদিন কিবা ছদিন পরে,
    কলম দিয়ে কর আঘাত সারবে না সে গেলেও গোরে।
    জানিনে ওই ছাতার কলম কি দিয়ে বা লও গড়িয়ে,
    খোদার কলম রদ করেছো ওরই একটা আঁচড় দিয়ে।
    মাঠে মাঠে জমি মোদের খোদ জমিদার খোদার লেখায়,
    আলের পরে আল গাঁথিয়া সীমানা তার যায় দেখা যায়।
    তোমরা লেখ কাগজে আল, সীমানা তার বুঝতে নারি।
    খোদার দেওয়া খাস মহালের তারি মায়ায় দখল ছাড়ি।
    সেই কলমের খোরাক দিতে মাঠে মাঠে লাঙল ঠেলি,
    মাটি খুঁড়ে যে সোনা পাই চরণতলে দেই যে মেলি।
    তবু তাহার মেটে না ভুখ ইচ্ছে করে দনে- পিষে
    কলমগুলো দিই জ্বালিয়ে জাহান্নামের আগুন শীষে।

    আমরা মাঠের মুক্ত শিশু ভয় করি না ঝঞঝা বাদল,
    জাহান্নামের মতন জ্বালা চৈত্র রোদে বাজাই লাঙল।
    শুনো মাঠও মন্ত্র শুনে দোলায় তরুণ তৃণের আঁচল,
    কচি গায়ে পুলক দিতে কাজলী মেঘও হয়রে সজল।
    বর্ষা বুকে ভাসাই মোরা সবুজ ধানের মাদুরখানি,
    ছল ছল জলের উপর অন্ন মায়ের আসন টানি।

    বাঁশীর সুরে শরৎ-চাঁদের কুচি কুচি সোনার হাসি,
    কাঁচা ধানের পাতায় পাতায় মেলতে পারি রাশি রাশি।
    মাঠে যে ধান ধরেই নাক, পারি সে ধান ভরতে ডোলে,
    এটা কেবল জানিনে ওই কলম ধরে সে কোন কলে।
    ঝড় এসে ঘর উড়িয়ে নিলে ঝড়েই ঘরে দেই যে ছানি,
    ভয় করিনে বৃষ্টি শীলা- শীরালীদের মন্ত্র জানি।
    ভয় করিনে হাঙর কুমীর- দেবতা আছেন খোয়াজ খিজির,
    বনের বাঘে ভয় করিনে গাজী মাদার হাঁকছে জিকির।
    ভয় শুধু ওই কলমটারে, আঘাত তাহার গায় না লাগে,
    শেলের মত বক্ষখানির ব্যথার জাগায় ভীষণ দাগে।
    মেনা শেখের হাতের লাঠি ভাঙতে পারে সবার মাথা,
    কি দিয়ে ওই গড়ছ কলম, হাজার মারে ভাঙে না তা।
    • কবি জসীমউদ্দিনের লিখা মেনা শেখ কবিতা থেকে উদ্ধৃত

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]