বিষয়বস্তুতে চলুন

কল্পনা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

কল্পনা বা কল্পনা করার ক্ষমতা হলো মানসিক চিত্র, সংবেদন এবং ধারণা তৈরি করার ক্ষমতা, এমন এক মুহূর্তে যখন সেগুলি দৃষ্টি, শ্রবণ বা অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভূত হয় না। এটি স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নামেও পরিচিত। সমস্যার সমাধানে জ্ঞানের প্রকৃত প্রয়োগে কল্পনা সাহায্য করে এবং এটি অভিজ্ঞতা ও নিয়মিত শিক্ষা একীভূত করার অবলম্বন। কল্পনাকে সহজাত ক্ষমতা হিসাবেই গ্রহণ করা হয়। কল্পনাকে রূপকথা বা দিবাস্বপ্ন হিসাবেও প্রকাশ করা সম্ভব। স্মৃতি ও কল্পনা একে অপরকে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • কল্পনা এবং কাল্পনিকতা দুইয়ের মধ্যে একটা মস্ত প্রভেদ আছে। যথার্থ কল্পনা, যুক্তি সংযম এবং সত্যের দ্বারা সুনির্দিষ্ট আকারবদ্ধ— কাল্পনিকতার মধ্যে সত্যের ভান আছে মাত্র, কিন্তু তাহা অদ্ভুত আতিশয্যে অসংগতরূপে স্ফীতকায়। তাহার মধ্যে যেটুকু আলোকের লেশ আছে ধুমের অংশ তাহার শতগুণ। যাহাদের ক্ষমতা অল্প তাহারা সাহিত্যের প্রায় এই প্রধুমিত কাল্পনিকতার আশ্রয় লইয়া থাকে; কারণ, ইহা দেখিতে প্রকাণ্ড, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত লঘু। এক শ্রেণীর পাঠকেরা এইরূপ ভূরিপরিমাণ কৃত্রিম কাল্পনিকতার নৈপুণ্যে মুগ্ধ এবং অভিভূত হইয়া পড়েন, এবং দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলায় সেই শ্রেণীর পাঠক বিরল নহে।
    এইরূপ অপরিমিত অসংযত কল্পনার দেশে বঙ্কিমের ন্যায় আদর্শ আমাদের পক্ষে অত্যন্ত মূল্যবান। কৃষ্ণচরিত্রে উদ্দাম ভাবের আবেগে তাঁহার কল্পনা কোথাও উজ্জ্বল হইয়া ছুটিয়া যায় নাই। প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত সর্বত্রই তিনি পদে পদে আত্মসংবরণপূর্বক যুক্তির সুনির্দিষ্ট পথ অবলম্বন করিয়া চলিয়াছেন। যাহা লিখিয়াছেন তাহাতে তাঁহার প্রতিভা প্রকাশ পাইয়াছে, যাহা লিখেন নাই তাহাতেও তাহার অল্প ক্ষমতা প্রকাশ পায় নাই।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫-১৬
  • বঙ্গ ইতিহাস, হায়, মণিপূর্ণ খনি!
    কবির কল্পনালোকে কিন্তু আলোকিত
    নহে যা, কেমনে আমি, বল কুহকিনি!
    মম ক্ষুদ্র কল্পনায় করি প্রকাশিত?
    • নবীনচন্দ্র সেন, পলাশির যুদ্ধ- নবীনচন্দ্র সেন, প্রকাশক- সান্যাল এণ্ড কোম্পানি , প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮
  • যতদিন তুমি পরকালের কল্পনা, আত্মার কল্পনা, ঈশ্বরের কল্পনা, প্রভৃতি জঞ্জালগুলি মনের মধ্যে থেকে পরিষ্কার করে ঝেঁটিয়ে না ফেলতে পারবে, ততদিন সংশয় তোমার থেকেই যাবে। সখেই যে জীবনের শেষ উদ্দেশ্য এবং সুখী হওয়াই যে জীবনের চরম সার্থকতা, এ কথা বঝেও বুঝবে না। কেবলই মনে হতে থাকবে, কে জানে, হয়ত বা আরো কিছু আছে। অথচ এই আরো-কিছুর সাধন কোনদিনই খুঁজে পাবে না। এ তোমাকে ব্যস্ত করে রাখবে, অথচ গতি দেবে না, আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলবে, কিন্তু পরিতৃপ্তি দেবে না। পথের গল্পই বলবে, কিন্তু কোনদিন পথ দেখিয়ে দিতে পারবে না।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চরিত্রহীন - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩৮
  • মানুষের বিদ্যায় যেখানে কুলায় না, কল্পনা সেখানের অভাব পুরাইয়া লয়। প্রাচীন কালের মানুষ যাহারা চন্দ্র সূর্য মেঘ বৃষ্টি আগুন বিদ্যুৎ দেখিয়া অবাক হইত অথচ কোনো ঘটনার কারণ খুঁজিয়া পাইত না, কোনো কিছুর মর্ম বুঝিত না, তাহারাও এই-সব ব্যাপার সম্বন্ধে নানারকম কল্পনা করিতে ছাড়ে নাই। সেই-সব প্রাচীনকালের কল্পনা কিন্তু কত দেশের কত পুরাণে কত গল্পের আকারে এখনো খুঁজিয়া পাওয়া যায়। কেমন করিয়া সৃষ্টি হইল, তাহার কতরকম কাহিনী লোকের মুখে মুখে চলিয়া আসিতেছে, আজও তাহা শুনিলে আমাদের কৌতূহল জাগে। নানান দেশের নানান কাহিনীর মধ্যে সত্য ঘটনা আর কল্পিত কাহিনী এমনভাবে জড়ানো আছে যে, তার কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা তাহা ঠিক করাই কঠিন।
    • সুকুমার রায়, আষাঢ়ে জ্যোতিষ, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৭
  • কল্পনা কাহারও দাসীত্ব করিতে জানে না। কল্পনা কখনও কবিকে মেঘের উপর লইয়া গিয়া সৌদামিনীর বিলাসচঞ্চলা মূর্ত্তি প্রদর্শন করে, কখনও আবার তুষারমণ্ডিত কমলের কেশরের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া কবিকে কত নিভৃত সৌন্দর্য্য দেখায়। উন্মাদিনী চঞ্চলার ন্যায় কবির উন্মাদিনী কল্পনা কাহারও অঙ্গুলিসঙ্কেতে পরিচালিত বা ভ্রূকম্পনে বিকম্পিত হয় না। সে আপনার ভাবেই আপনি বিভোর হইয়া ছুটে, পরের ভাবে ভুলে না। কৃত্তিবাসের স্বৈরচারিণী কল্পনা কোনও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রহে নাই। কোথাও প্রাচীন পথে, কোথাও বা নূতন পথে যেখানে যেমন ইচ্ছা, সে কল্পনা চলিয়া গিয়াছে। তরণীসেন বীরবাহু প্রভৃতির সৃষ্টি এই নূতন পথে যাত্রারই ফল।
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সভাপতির অভিভাষণ, কৃত্তিবাস স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন- আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
  • অনেকে কল্পনা করেন যে, অশিক্ষিত অবস্থায় কবিত্বের বিশেষ স্ফূর্ত্তি হয়; তাহার একটি কারণ এই যে, তাঁহাদের মতে একটি বস্তুর যথার্থ স্বরূপ না জানিলে তাহাতে কল্পনার বিচরণের সহস্র পথ থাকে। সত্য একটি মাত্র, মিথ্যা অগণ্য। অতএব মিথ্যায় কল্পনার যেরূপ উদরপূর্ত্তি হয় সত্যে সেরূপ হয় না। পৃথিবীতে অখাদ্য যত আছে তাহা অপেক্ষা খাদ্য বস্তু অত্যন্ত পরিমিত। একটি খাদ্য যদি থাকে ত সহস্র অখাদ্য আছে। অতএব এমন মত কি কোন পণ্ডিতের মুখে শুনিয়াছ যে, অখাদ্য বস্তু আহার না করিলে মনুষ্য-বংশ ধ্বংস হইবার কথা?
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পিপেলস্ প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮
  • মানুষের সমস্ত কাজে, কর্মে, শিল্পে, সাহিত্যে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে কল্পনাটা প্রথম তারপর বাস্তব,—এই হ’ল রচনার ধারা ও রীতি। কল্পনাটা মানুষের মধ্যে প্রবল শক্তিতে কাজ করে; এই শক্তি সৃষ্টি করার দিকে মানুষের দৈহিক ও মানসিক আর সমস্ত শক্তিকে উদগ্র করে’ দেয়। মাতাল ও পাগলের দেহ বিকল হয়ে গেল, উৎকট কল্পনা তাদের বিকট মূর্তিতে বিদ্যমান হ’ল; কিন্তু যে সুস্থ সাধনের দ্বারায় বিরাট কল্পনা সমস্তকে স্মরণের মধ্যে ধারণ করতে সমর্থ হল সেই বীর হল রূপ ও অরূপ দুই রাজ্যের রাজা, সে হ’ল বীর, সে হ’ল কবি, সে হ’ল শিল্পী, সে হ’ল ঋষি, আবিষ্কর্তা, গুণী, রচয়িতা। কল্পনাপ্রবণতা হ’ল মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা, কেননা দেখি কল্পনা তার আশৈশব সহচরী। খেয়াল জিনিষটা বিশ্বসংসারকে পুরোনো হতে দিচ্ছে না মানুষের কাছে, একই আকাশের তলায় একই ঋতু-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটা পৃথিবীতেই চলি-বলি খাই-দাই ঘুমোই, কিন্তু কল্পনায় গড়ে চলি খেলা করি বিচরণ করি আমরা নতুন নতুন জগতে চিরযৌবন, চিরবসন্তের স্বপ্ন নিয়ে। বস্তুজগতের এইটুকু ঘটনার স্মৃতিগুলো বড় হয়ে ওঠে কল্পনায়। মানুষের এত বড় ঐশ্বর্য এই কল্পনা একে হারালে তার মতো দীন ও অধম কে? কোন দিকে অগ্রসর হবার রাস্তা তার বন্ধ হ’ল, কায়ার মায়াহীন প্রাচীরের সুদৃঢ় বন্ধনে সে বন্দী রইলে। “সশ্বাস ইব” কিন্তু সশ্বাস মোটেই নয়।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্তর বাহির, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩
  • কল্পনারও শিক্ষা আবশ্যক করে। যাহাদের কল্পনা শিক্ষিত নহে, তাহারা অতিশয় অসম্ভব অলৌকিক কল্পনা করিতে ভালবাসে; বক্র দর্পণে মুখ দেখিলে নাসিকা পরিমাণাধিক বৃহৎ এবং কপাল ও চিবুক নিতান্ত হ্রস্ব দেখায়। অশিক্ষিতদের কুগঠিত কল্পনাদর্পণে স্বাভাবিক দ্রব্য যাহা কিছু পড়ে তাহার পরিমাণ ঠিক থাকে না; তাহার নাসা বৃহৎ ও তাহার কপাল খর্ব্ব হইয়া পড়ে। তাহারা অসঙ্গত পদার্থের জোড়াতাড়া দিয়া এক-একটা বিকৃতাকার পদার্থ গড়িয়া তোলে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পিপেলস্ প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭
  • বাঙ্গালীর অনেক দোষ আছে, কিন্তু বাঙ্গালীর একটা গুণ আছে যাতে তার অনেক দোষ ঢাকা পড়েছে এবং যার বলে সে আজ জগতের মধ্যে মানুষ বলে গণ্য। বাঙ্গালীর আত্মবিশ্বাস আছে, বাঙ্গালীর ভাবপ্রবণতা ও কল্পনাশক্তি আছে—তাই বাঙ্গালী বর্ত্তমান বাস্তব জীবনের সকল ত্রুটি, অক্ষমতা, অসাফল্যকে অগ্রাহ্য ক’রে মহান আদর্শ কল্পনা করতে পারে—সেই আদর্শের ধ্যানে ডুবে যেতে পারে এবং আপাতদৃষ্টিতে যাহা অসাধ্য, তাহা সাধন করবার চেষ্টা করতে পারে। এই কল্পনা শক্তি ও আত্মবিশ্বাস আছে বলেই বাঙ্গলা দেশে এত সাধক জন্মেছে এবং এখনও জন্মাবে। এই কারণে দুঃখ কষ্ট ও অত্যাচারের চাপে বাঙ্গালীর মেরুদণ্ড কখনও ভাঙ্গবে না। যে জাতির idealism (আদর্শ-প্রীতি) আছে সে জাতি তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যন্ত্রণাক্লেশ সানন্দে বরণ করে নিতে পারে।
    • সুভাষচন্দ্র বসু, তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩-১৪
  • পৃথিবীটা খুব বড় এবং এখনো মানুষের কাছ থেকে আপনার অনেক রহস্য সে লুকিয়ে রেখেছে, তাই এখনো মানুষ উত্তরমেরু ধবলগিরি অতিক্রম করার কল্পনা করছে, দুদিন পরে যখন এ দুটো জায়গাই মানুষের জানা জগতের মধ্যে ধরা পড়বে তখন মানুষের চাঁদ ধরার কল্পনা সত্য হয়ে উঠবার দিকে যাবে! এমনি বাস্তব এবং কল্পনা, কল্পনা ও বাস্তব এই দুটি পদচিহ্ন রেখে চলেছে ও চলবে মানুষ সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি এবং তার পরেও নতুন যুগে যে সব যুগ এখনো মানুষের কল্পনার মধ্যেই রয়েছে! অঘটিত ঘটনা অবিদ্যমান সমস্ত কল্পনা আজ যেগুলো মানুষের মনোরাজ্যের জিনিষ সেগুলো কালে সম্ভব হয়ে উঠবার প্রতীক্ষা করছে না, জোর করে’ একথা কে বলতে পারে? এক যুগের খেয়ালী যা কল্পনা করলে আর এক যুগে সেটা বাস্তব হয়ে উঠলো, এর প্রমাণ মানুষের ইতিহাসে বড় অল্প নেই, কতযুগ ধরে পাখীদের দেখাদেখি মানুষ শূন্যে ওড়ার কল্পনা করে এল, এতদিনে সেটা সত্যি হয়ে উঠলো কিন্তু এতেও মানুষের কল্পনা শেষ হ’ল না, ওড়ার নানা ফন্দি ডানায় বিনা ডানায়, এমনি নানা কল্পনায় মানুষের মন বিদ্যমানকে ছেড়ে চল্লো অবিদ্যমানের দিকে। হঠযোগ থেকে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, ইষ্টিম গাড়ি, দুচাকার গাড়ি, শেষে হাওয়া গাড়ি এবং উড়োজাহাজে কল্পনা এসে ঠেকেছে কিন্তু ওড়ার কল্পনা এখনো শেষ হয় নি, রাবণের পুষ্পক রথে গিয়ে ঠেকলেও মানুষ আরো অসম্ভব অদ্ভুত রথের কল্পনা করবে না তা কে বলতে পারে?
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্তর বাহির, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২১-১২২
  • প্রাচীনকালে যত তারকামণ্ডলের কল্পনা তাদের মধ্যে একটি, নামে না চিনলেও, উজ্জ্বল তারকায় এমন সুন্দরভাবে এটি গঠন করা হয়েছে যে কারোরই দৃষ্টি এড়ায় না৷
  • এই পৃথিবীর সম্বন্ধেই কত গল্প মানুষে বানাইয়াছে। আমাদের দেশেই এক-এক পুরাণে তার এক-একরকম ঘটনা। এই পৃথিবীকে শূন্যে রাখিবার জন্য বাসুকীর মাথায় তাহাকে বসানো হইল, আবার তাহাতেও লোকের মন ওঠে নাই—মানুষ ক্ষীর সমুদ্রে কচ্ছপের কল্পনা করিয়া সেই কচ্ছপের পিঠে হাতি, হাতির পিঠে বাসুকীসুদ্ধ পৃথিবীকে চাপাইয়াছে। গ্রীস দেশের পুরাণে পৃথিবীটাকে পাতলা চাকতির মতো কল্পনা করা হইয়াছে। সেই অদ্ভুত চাকতি টুকরা টুকরা হইয়া সমুদ্রের মধ্যে ছড়ানো রহিয়াছে-সেই সমুদ্রের আর শেষ নাই, কূলকিনারা কোথাও নাই। কোনো-কোনো দেশে এই জগৎটাকে একটা ঢাকনি-দেওয়া সরার মতো মনে করা হইত। চন্দ্র সূর্যসুদ্ধ আকাশটা ঢাকনি আর পৃথিবীটা সরা। এই পৃথিবীর চেহারার বর্ণনাই কি কম পাওয়া যায়? তিন কোনা, চার কোনা, টাকার মতো, বাটির মতো, পদ্মের মতো, কতরকমের কল্পনা।
    • সুকুমার রায়, আষাঢ়ে জ্যোতিষ, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৭
  • ছায়াপথ সম্বন্ধে নানাদেশে নানাপ্রকার গল্প প্রচলিত আছে। প্রাচীন রোমবাসীগণ উহাকে সৌরজগতের কিরণদাতা সবিতাদেবের পথ বলিয়াছেন, তাহাদের মতে এই পথ দিয়াই গ্রহরাজ সূর্য্য পূর্ব্বাচলে এবং পশ্চিমাঞ্চলে গমনাগমন করেন। প্রাচীনযুগে যে গ্রীকগণ সভ্যতা, শিল্প, বাণিজ্য বিদ্যা বুদ্ধি এবং অন্যান্য গুণ গরিমায় উন্নতির সমুচ্চ শিখরে উত্থিত হইয়াছিলেন, সে সময়ে তাঁহারাও এসম্বন্ধে কুসংস্কার বর্জ্জিত ছিলেন না। তাঁহারা ছায়াপথকে দেহমুক্ত আত্মার স্বর্গগমনের পথ বলিয়াছেন। অথবা সাধারণের মনোরঞ্জনার্থ কবির কি চমৎকার কল্পনা! কবিকল্পনার এমন মনোহর আশ্রয় ছায়াপথের ন্যায় দ্বিতীয় বস্তু আর কি আছে? সকল দেশেই প্রাচীন কবিগণ সত্যের সঙ্গে কল্পনা মিশ্রিত করিয়া যেন এক অপূর্ব্ব আমোদ অনুভব করিতেন। চীনের অধিবাসিগণ কর্তৃক ছায়াপথ মনোহর অমরাপুরীর পুণ্য সলিলাপ্রবাহিনী তরঙ্গিনীরূপে বর্ণিত হইয়াছে। এ সম্বন্ধে ভারত কাহারও পশ্চাৎবর্ত্তী নহে। ভারতবর্ষের অশিক্ষিত লোকদিগের মধ্যে এ সম্বন্ধে নানাপ্রকার কল্পিত ব্যাখ্যা শ্রবণ করা যায়। চিরকল্পনাপ্রিয় ভারতবাসিগণ এমন মাধুর্য্য ও মহিমাপূর্ণ বিষয়ে কেননা কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করিবেন?
    • কুমুদিনী বসু, ছায়া-পথ, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭২-৭৩
  • সে আজকের কথা নয় ৷ প্রাচীন কালে বিভিন্ন দেশের কৌতূহলী মানুষেরা মহাকাশের এই সব তারাদের নিয়ে বিভিন্ন মূর্তির কল্পনা করেছিলেন ৷এদের মধ্যে মানুষের আকৃতি আছে, আছে জঙ্গলের জীবজন্তু আর আছে প্রাণ নেই এমন কিছু চেনা-জানা বস্তু ।
  • দেশলাইয়ের কল্পনা চকমকি থেকে এখন মেঘের কোলের বিদ্যুতে গিয়ে ঠেকেছে কিন্তু এখনো নিষ্প্রভ আলো তাপহীন আগুন এ সমস্তই অবিদ্যমানের কোলে দুলছে একদিন বিদ্যমান হবার প্রতীক্ষায়। অবিদ্যমান হচ্ছে বিদ্যমান সমস্তের জননী, অজানা প্রসব করছে জানা জগৎ, অসম্ভব চলেছে সম্ভব হ’তে কল্পনার সোপান বেয়ে। “অন্ধকারের দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল, সমস্তই চিহ্নবর্জিত ছিল, অবিদ্যমান বস্তুর দ্বারায় সর্বব্যাপী আচ্ছন্ন ছিলেন, বুদ্ধিমানগণ বুদ্ধিদ্বারা আপন হৃদয়ে পর্যালোচনাপূর্বক অবিদ্যমান বস্তুতে বিদ্যমান বস্তুর উৎপত্তিস্থানে নিরূপণ করিলেন।” আগে সৃষ্টির কল্পনা তবে তো সৃষ্টি! ইউরোপের স্বরগ্রামে শুনেছি আগে নিখাদ স্বরটা একেবারে অজ্ঞাত ছিল হঠাৎ এক খেয়ালী সেই অজানা সুরের কল্পনা ধরে বসলে এবং তারি সন্ধানে মরীচিকালুব্ধের মতো ছুটলো অবিদ্যমান যে সুর তাকে বিদ্যমান করতে চেয়ে! সঙ্গীত তখন ইউরোপে পাদ্রীদের হাতে ধর্মের সেবায় বাঁধা রয়েছে, ছয় সুরের বেশী আর একটা সুরের কল্পনা পাদ্রী সঙ্গীতবেত্তার কাছে অমার্জনীয় ছিল, খেয়ালী লোকটার নির্বাসনদণ্ড ব্যবস্থা হয়ে গেল, সে একটা কাল্পনিক সুরের জন্যে ঘর ছাড়লে, দেশ ছাড়লে, নির্যাতন সইলে, তারপর যে সুর কল্পনায় ছিল তাকে বিদিত হ’ল সে নিজে এবং বিদিত করে' গেল বিদ্যমান জগতে। এমনি একটার পর একটা সুরের পাখী ধরে গেছে কল্পনার জালে মানুষ, অনাহতকে ধরে গেছে আহতের মধ্যে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্তর বাহির, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২২-১২৩
  • মাছি উড়িবার সময় প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ছয়শত বার ডানা ঝাপটায়। খুব ব্যস্ত হইলে এক সেকেন্ডে সে প্রায় বিশ পচিশ হাত উড়িয়া যাইতে পারে। অতটুকু প্রাণীর পক্ষে ইহা বড় সামান্য কথা নয়। মাছিটাকে যদি একটা ঘোড়ার মতো কল্পনা করা যায় তাহা হইলে তাহার দৌঁড়টি হয় যেন কামানের গোলার মতো।
    • সুকুমার রায়, মাছি। সুকুমার সাহিত্যসমগ্র (দ্বিতীয় খণ্ড)। সম্পাদক, সত্যজিৎ রায় ও পার্থ বসু। আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১২৯
  • যাহারা প্রকৃতির বহির্‌দ্বারে বসিয়া কবি হইতে যায় তাহারা কতকগুলা বড়ো বড়ো কথা, টানাবোনা তুলনা ও কাল্পনিক ভাব লইয়া ছন্দ নির্মাণ করে। মর্মের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য যে কল্পনা আবশ্যক করে তাহাই কবির কল্পনা; আর গোঁজামিলন দিবার কল্পনা – না পড়িয়া পণ্ডিত হইবার– না অনুভব করিয়া কবি হইবার এক প্রকার গিল্‌‍টি-করা কল্পনা আছে, তাহা জালিয়াতের কল্পনা। যিনি প্রাণের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কবি হইয়াছেন তিনি সহজ কথার কবি, সহজ ভাবের কবি। কারণ, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তাহাকে দশ কথা বলিতে হয়, আর যিনি সত্য বলেন তাঁহাকে এক কথার বেশি বলিতে হয় না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি, সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পিপেলস্ প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০
  • বিভিন্ন মাসের সন্ধের আকাশ তোমরা যদি নিয়মিত লক্ষ্য কর তাহলে সে যুগের মানুষের কল্পনায়-আঁকা সবগুলি আকৃতিই তোমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়বে। তারায় তারায় কল্পিত বলে এক একটি তারকামণ্ডল হিসেবে এদের পরিচয় ৷
  • কল্পনাকে ছেড়ে শুধু ঘটনার মধ্যে বর্তে’ থাকতে পারে না মানুষের রচনা, ঘটনার সঙ্গে কল্পনার মিলন হ’ল তবে হ’ল একটা শিল্প রচনা। গাছ দাঁড়িয়ে রইলো কিন্তু ফুল পাতা এরা দুল্লো, কখনো আলোর দিকে মুখ ফেরালে কখনো অন্ধকারের দিকে হাত বাড়ালে। মানুষ বাঁধা রইলো মাটির সঙ্গে কিন্তু মন তার বিদ্যমান অবিদ্যমান দুই ডানা মেলে উড়লো, মানুষের শিল্প তার মনের পাখীর গতিবিধির চিহ্ন রেখে গেল কালে কালে—পাথরে, কাগজে, মাটিতে, সোণায়, কাঁসায়, কাঠে, কয়লায়। ইতর জীব তার বর্তমানটুকুর ঘেরে বাঁধাই রয়েছে, বিদ্যমানের প্রাচীর ছাড়িয়ে যাওয়া শুধু মানুষেরই সাধ্য হয়েছে—ঘোড়া সে কোনকালে পক্ষিরাজ হবার কল্পনাই করতে পারলে না কিন্তু মানুষ অতিমানুষের কল্পনা অমানুষি সমস্ত রচনার স্বপ্ন দেখলে, বিদ্যমানের মধ্যে মানুষ আপনাকে ইতর জীবের মতো নিঃশেষে ফুরিয়ে দিতে পারলে না; সে কল্পনা ও স্মৃতি এই দুই টানা-পোড়েনে প্রস্তুত করে’ চল্লো বিশ্বজোড়া মায়াজাল।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্তর বাহির, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৭
  • কোনো কল্পনাশক্তিসম্পন্ন লোকের পক্ষে ভবিষ্যতের কিছু কিছু আবিষ্কার সম্বন্ধে আন্দাজ করাটা কোনো অদ্ভুত ব্যাপার নয়। আমরা দেখেছি জুল ভার্নও তাঁর উপন্যাস—‘টোয়েণ্টি থাউজেণ্ড লীগ্‌স্‌ আণ্ডার দ্য সী’তে ডুবোজাহাজ সম্বন্ধে লিখেছেন, ডুবোজাহাজ আবিষ্কৃত হবার বহু আগে। তিনি এটা করেছেন তাঁর কল্পনাশক্তির সাহায্যে; অলৌকিক ক্ষমতায় নয়। একইভাবে নস্ট্রাডামুসও তাঁর কল্পনা শক্তির সাহায্যেই ডুবোজাহাজের কল্পনা করেছেন; অলৌকিক ক্ষমতায় নয়। আমরাও আগামী দিনের সন্বন্ধে কিছু কিছু কল্পনা করে রেখেছি। আগামী দিনে প্রায় সকলের কাছেই থাকবে তার ব্যক্তিগত আকাশযান; চাঁদে মানুষ আগামী দিনে বসতি গাড়বে; এরকম কল্পনা আমার বাবা ছোটোবেলায় করতেন, শুনেছি ঠাকুমার কাছে। থ্রি-ডাইমেনশন ছবিরও কল্পনা করতেন বাবা, বাবার ছোটোবেলাকার গল্প শোনাতে গিয়ে বলেছেন পিসি। এমনই সব চিন্তা বা আরও অনেক উদ্ভট চিন্তা নিশ্চয় বহু মানুষের মাথাতেই এসেছিল, আসছে, আসবে। কিন্তু এইসব কল্পনা বাস্তবের সঙ্গে মিলে যাওয়া কি-নিখুঁৎ ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণযোগ্য? অবশ্যই নয়।
    • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭৩-৩৭৪
  • সুন্দর বস্তু কেন সুন্দর তাহা বুঝিতে পারা, অন্য সমস্ত সুন্দর বস্তুর সহিত তুলনা করিয়া তাহাকে তাহার যথাযোগ্য আসন দেওয়া, একটা সুন্দর বস্তু হইতে দশটা সুন্দর বস্তুর কথা মনে পড়া, অবস্থাবিভেদে একটি সুন্দর বস্তুর সৌন্দর্য্যবিভেদ কল্পনা করিতে পারা কি সকলের সাধ্য? সকল চক্ষুই কি শরীরী পদার্থের মধ্যে অশরীরী কি-একটি দেখিতে পায়? অল্পই হউক আর অধিক হউক কল্পনা ত সকলেরই আছে। উন্মাদগ্রস্ত ব্যক্তির অপেক্ষা কল্পনা কাহার আছে? কল্পনা প্রবল হইলেই কবি হয় না। সুমার্জ্জিত সুশিক্ষিত ও উচ্চ শ্রেণীর কল্পনা থাকা আবশ্যক। কল্পনাকে যথাপথে নিয়োগ করিবার নিমিত্ত বুদ্ধি ও রুচি থাকা আবশ্যক করে। পূর্ণচন্দ্র যে হাসে, বা জ্যোৎস্না যে ঘুমায়, এ কয়জন বালকের কল্পনায় উদিত হয়? একজন বালক যদি অসাধারণ কাল্পনিক হয়, তবে পূর্ণচন্দ্রকে একটি আস্ত লুচি বা অর্দ্ধচন্দ্রকে একটি ক্ষীরপুলি মনে করিতে পারে। তাহাদের কল্পনা সুসংলগ্ন নহে; কাহার সহিত কাহার যোগ হইতে পারে, কোন্‌ কোন্‌ দ্রব্যকে পাশাপাশি বসাইলে পরস্পর পরস্পরের আলোকে অধিকতর পরিস্ফুট হইতে পারে, কোন্‌ দ্রব্যকে কি ভাবে দেখিলে তাহার মর্ম্ম তাহার সৌন্দর্য্য চক্ষে বিকাশ পায়, এ সকল জানা অনেক শিক্ষার কাজ।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পিপেলস্ প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৩
  • ভগিনী নিবেদিতার মতে যে সমাজে নারী অপেক্ষা পুরুষের প্রাধান্য, সেখানে ভগবানকে লোকে পিতৃরূপে কল্পনা করিতে শিখে। অপর দিকে যে সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর প্রাধান্য, সেখানে লোক ভগবানকে মাতৃরূপে কল্পনা করিতে শিখে। সে যাহা হউক, বাঙ্গালী যে ভগবানকে—শুধু ভগবানকে কেন, বাঙ্গলা দেশকে এবং ভারতবর্ষকে মাতৃরূপে কল্পনা করিতে ভালবাসে—এ কথা সর্ব্বজনবিদিত। দেশকে আমরা মাতৃভূমি কল্পনা করিয়া থাকি, কিন্তু মাতৃভূমির ইংরাজী তর্জ্জমা—father land আমরা অবশ্য mother land কথাটি চালাইয়া থাকি কিন্তু ইংরাজী ভাষার দিক হইতে তাহা শুদ্ধ নয়।
    • সুভাষচন্দ্র বসু, তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৫-১২৬
  • চিত্রকর্ম ব্যতিরিক্ত চিত্রকরের স্বতন্ত্র চিত্ত নাই, চিত্রকর যখন চিত্র করেন তখন তাহার চিত্তে এই কল্পনা উদয় হয় যে আমি রূপ নিৰ্মাণ করিব। এই কল্পনাবস্থ চিত্তকে চিত্ত-সঞঞা বলা হয়। চিত্তকেই কল্পনারূপে চিত্রের ক্রিয়ারূপে বিধারণ করা হয়, ইহাকেই রেখাদ্বারা গ্রহণ করিলে ও রঞ্জন উদ্যোতন বর্ত্তনাদি ক্রিয়া দ্বারা চিত্রপটে সুবিন্যস্ত করিলে বাহ্য চিত্তক্রিয়া উৎপন্ন হয়। কিন্তু চিত্ত সদা গতিশীল, এই উৎপন্ন চিত্র তাহার চিত্তের মধ্যে আর একটী নূতন বিচিত্ররূপকে উৎপন্ন করে এবং সেই সঙ্গে তাহার চিত্তে নানাবিধ কল্পনা উপস্থিত হয়। চিত্রী মনে করে, এই চিত্রের উপরে এই রকম দিলে ভাল হইত, এইখানে এইরকম দিলে ভাল হইত, উভয় পার্শ্বে এই রকম দিলে ভাল হইত, এই নূতন নূতন কল্পনা অনুসারে সে আরও নূতন নূতন চিত্র বিন্যাস করে, এবং এইরূপে সমগ্র চিত্ররূপটী বহির্বিন্যস্ত হয়।
    • সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা- সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, প্রকাশক-দাশগুপ্ত এণ্ড কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯২-৯৩
  • কাহিনিতে গ্রহ বৃহস্পতি দেবগুরু। তাঁর স্ত্রী নক্ষত্র তারা। চন্দ্র একবার তারার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে চন্দ্র তারাকে ফিরিয়ে দেন। উপগ্রহ চন্দ্রের ঔরসে তারার গর্ভে গ্রহ বুধের জন্ম। এমনটা কল্পনার কারণ সম্ভবত, বৃহস্পতির কাছের একটি নক্ষত্রকে তারা কল্পনা করা হয়েছিল। কোনও এক সময় চন্দ্রে ঢাকা পড়েছিল তারা। চন্দ্র সরে যেতে চোখে পড়ে বুধ। তারপরই তারাকে আবার দেখা যায় বৃহস্পতির কাছে। অতএব কল্পনা থেকে জন্ম নিল হি-জি-বি-জি গপ্পো।
    • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০২

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]