কাপড়
অবয়ব
কাপড় হলো একটি নমনীয় উপাদান যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সুতা বা তন্তুর দিয়ে তৈরি হয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক:
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?- উলঙ্গ রাজা, ৩ জানুয়ারী ১৯৭০ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ও উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা। [১]
- কাপড় কাচা শেখা হয়ে গেলে পর সে যখন চলে আস্বে তখন ধােপা তাকে একটা গাধা দিয়ে বল্ল, “এই গাধাটা নাও, তােমার অনেক কাজে আস্বে। তােমার যখনি টাকার দরকার হবে, গাধাকে বল্বে ‘থু-থু!’ অমনি দেখ্বে গাধার মুখ দিয়ে মােহর পড়্বে।’ গাধা পেয়ে দরজীর ছেলের খুবই সুবিধা হল। টাকার দরকার হলেই সে বলে “গাধা! থু-থু!” আর অমনি গাধা মেলাই মােহর বার করে দেয়। তখন সে ভাব্ল, “এইবার বাবার কাছে ফিরে যাই।”
- সুখলতা রাও, দরজী আর তার ছাগল, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৬
- মানুষ বানিয়েছে আপনার গায়ের কাপড়। বয়স বাড়তে বাড়তে তার দেহের মাপের বদল হয়। বারবার পুরোনো কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন কাপড় না বানালে তার চলে না। জাতির মন কখনো বাড়ে, আবার রুগী উপবাসীর যেরকম দশা হয় তেমনি কখনো বা সে কমেও বটে। কিন্তু পুরোনো জামার মতো ভাষাটাকে ফেলে দিয়ে দর্জির দোকানে নতুন ভাষার ফরমাশ দিতে হয় না। মনের গড়নের সঙ্গেই চলেছে তার গড়ন, মনের বাড়নের সঙ্গেই তার বাড়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩২-৩৩
- তমলুকে দেখিলাম কত সুন্দর স্বন্দর চরকার সূতার কাপড় হইয়াছে। আমি বিশ্বাস করিতে পারি নাই যে সেগুলি চরকার সূতার কাপড়। ক্রমশঃ তাঁতির হাত আরও পাকিবে। ঢাকাই কাপড় কত ভাল ছিল। যে দেশে এমন সূক্ষ্ম কাপড় হইত, যে দেশের মসলিন রোম হইতে সারা ইউরোপ হইতে টাকা লুটিয়া আনিত আজ সে দেশের লোক দিগম্বর সাজিয়াছে।
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০০
- জীবানন্দ আর কথা কহিল না, একপাশে উঠিয়া দাঁড়াইয়া নিঃশব্দে চোখ মেলিয়া তাহার কাজ-করা দেখিতে লাগিল। ষোড়শী ঝাঁটা দিয়া প্রথমে সমস্ত ঘরখানি পরিষ্কার করিল, পরে কম্বলখানি দু’পুরু করিয়া বিছাইয়া চাদরের অভাবে নিজের একখানি কাচা কাপড় সযত্নে পাতিয়া দিয়া কহিল বসুন। আমার কিন্তু বালিশ নেই―
দরকার হলেই পাবো গো―অভাব থাকবে না। এই বলিয়া সে কাছে আসিয়া হেঁট হইয়া কাপড়খানি তুলিয়া যথাস্থানে রাখিয়া দিতেই ষোড়শী মনে মনে অত্যন্ত লজ্জা পাইয়া আরক্তমুখে কহিল, কিন্তু ওটা তুলে ফেললেন কেন, শুধু কম্বল ফুটবে যে!- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেনা পাওনা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ); পৃষ্ঠা ১১১
- বাহির থেকে মস্কৌ শহর যখন চোখে পড়ল দেখলুম য়ুরোপের অন্য সমস্ত ধনী শহরের তুলনায় অত্যন্ত মলিন। রাস্তায় যারা চলেছে তারা একজনও শৌখিন নয়,সমস্ত শহর আটপৌরে কাপড়-পরা। আটপৌরে কাপড়ে শ্রেণীভেদ থাকে না, শ্রেণীভেদ পোশকী কাপড়ে। এখানে সাজে পরিচ্ছদে সবাই এক।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২
- খুব ভোরে উঠে দুজনে গলা ধরাধরি করে বাড়ির ভিতরের বাগানে গিয়ে শিউলিফুল কুড়িয়ে আনতুম। শুকিয়ে গেলে তার বোঁটা জলে সিদ্ধ করে কাপড় ছোপান হত। সুপ্রভাদিদি ও ঊষাদিদি পরতেন শাড়ি—আমার পরিধান তখনও ইজের জামা। কাপড় রঙাবার জন্যে আর একটি জিনিসও পাওয়া যেত কখনো কখনো বাগানে—নটকানে। কিন্তু তাতে বড়রা দখল জমিয়ে রাখতেন—আমাদের তোলা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল।
- সরলা দেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা- সরলা দেবী চৌধুরানী, পরিচ্ছেদ আট, প্রকাশক- শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
- বিদ্যাসাগর মহাশয়, যখন বাড়ী যাইতেন, তখন প্রায় তাঁহার সঙ্গে ৫০০।৬০০ (পাঁচ শত কি ছয় শত) টাকা থাকিত। এতদ্ব্যতীত তিনি প্রায় ৪০০ ৫০০ চারি পাঁচ শত টাকার বস্ত্র লইতেন। টাকা ও কাপড় দীনদুঃখীকে বিতরিত হইত। তাঁহার কলিকাতার বাটীতও বিবিধ প্রকারের অনেক টাকার কাপড় মজুত থাকিত। তিনি যথাপাত্রে যথাযোগ্য বস্ত্র বিতরণ করিতেন।
- বিহারীলাল সরকার, গুরুভক্তি, বিদ্যাসাগর- বিহারীলাল সরকার, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭১
- এখানে মেয়েদের কাপড়ের মধ্যে নিজেকে স্ত্রীলোক বলে বিজ্ঞাপন দেবার কিছুমাত্র চেষ্টা নেই। প্রায় সর্ব্বত্রই মেয়েদের বেশের মধ্যে এমন কিছু ভঙ্গী থাকে, যাতে বোঝা যায় তারা বিশেষভাবে পুরুষের মোহদৃষ্টির প্রতি দারী রেখেচে। এখানকার মেয়েদের কাপড় সুন্দর, কিন্তু সে কাপড়ে দেহের পরিচয়কে ইঙ্গিতের দ্বারা দেখাবার কোনো চেষ্টা নেই।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০
- একদিন রাত্রিতে আমি ঘরে শুইয়াছিলাম। শেষ রাত্রিতে ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। আর নিদ্রা হইল না। এ-পাশ ও-পাশ করিতে লাগিলাম। চঞ্চলার জন্য একখানি নয়হাতি কাপড় কিনিয়াছিলাম। মনে করিলাম, বিছানায় আর বৃথা পড়িয়া থাকিব না। কাপড়খানি তাহাকে দিয়া আসি। এলোকেশীর ভয়ে কাপড়খানি এক স্থানে লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম। কাপড়খানি লইয়া চঞ্চলাদের গ্রাম অভিমুখে আমি হাঁটিয়া চলিলাম। যাইতে যাইতে সকাল হইয়া গেল। সূর্য্যোদয়ের পরে বড় রাস্তায় গিয়া উঠিলাম।
- ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ডমরু-চরিত - ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৭-১৩৮
- সুরবালা ত্রস্তপদে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি গা?”
“কাপড়, কাপড়, আমার কাপড়!”
সুরবালা জিভ্ কাটিয়া বলিল, “ঐ যাঃ! তোমায় বল্তে ভুলে গেচি তোমার কাপড়ে যে খোকা মুতে দিয়েছে, এখনো শুকোয় নি।”
প্রিয়নাথ কর্কশকণ্ঠে কহিল, “আমার চাক্রিটি তোমরা খাবার ফিকিরে আছ? তার চেয়ে আমায় খাওনা কেন, একদম সব ন্যাটা চুকে যাক্।”- হেমেন্দ্রকুমার রায়, কেরাণী, পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রকাশক- বৈদ্যবাটী-যুবক-সমিতি, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২
- ওদের বেশ-ভূষা চাহিয়া দেখিতে শ্যামার চোখে জল আসে। বাড়িবার মুখে বছর বছর ওদের পোষাক বদলানো দরকার, পুরানো সেলাই-করা আঁটো জামা পরিয়া ওদের ভিখারির সন্তানের মত দেখায়, শুধু সাবান দিয়া জামাকাপড়গুলি আর যেন সাফ হইতে চায় না, কেমন লালচে রঙ ধরিয়া যায়। পূজার সময় রাখাল ওদের একখানি করিয়া তাঁতের কাপড় দিয়াছিল, মানাইয়া পরা চলে এমন জামা নাই বলিয়া বিধান লজ্জায় সে কাপড় একদিনও পরে নাই।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জননী, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিঃ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৪
- খুঁঁজিতে খুঁঁজিতে বালিশের নীচে হইতে রিং-সমেত এক চাবি বাহির হইল। সেই চাবি দিয়া টিনের বাক্সটা খুলিতেই কয়েকটা ময়লা-কাপড় বই খাতা কাঁচি ছুরি কলম ইত্যাদি চোখে পড়িল। বাক্স বন্ধ করিয়া তাহারা চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময়ে সমস্ত কাপড়-চোপড়ের নীচে রুমালে মোড়া একটা কী পদার্থ বাহির হইল। রুমাল খুলিতেই ছেঁড়া কাপড়ের মোড়ক দেখা দিল। সেই মোড়কটি খোলা হইলে একটির পর আর-একটি প্রায় তিন-চারখানা কাগজের আবরণ ছাড়াইয়া ফেলিয়া একখানি পঞ্চাশ টাকার নোট বাহির হইয়া পড়িল।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাসমণির ছেলে, গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০১
- বর্ম্মা দেশের লোক ভাল কারিগর। ঘরে ঘরে রেশমের কাপড় বোনা হয়,—কিন্তু বাড়িতে ছাড়া তাহারা সে মোটা রেশমের কাপড় ব্যবহার করে না। যে দেশে রেশমের কাপড়ই সাধারণের পরিধেয়, সে দেশে সাজ-সজ্জায় স্পৃহা কত বেশী তা সহজেই বুঝা যায়। মিহি রেশমের কাপড় চীন হইতে আমদানী হয়,—তার দামও অনেক। সাজ-সজ্জার বিষয়ে তাহাদের এত বাড়াবাড়ি যে, কাপড় একবার কাচাইলে আর সে কাপড় তাহারা বাহির হইবার কালে পরিবে না,—কেবল বাড়ীতেই পরিবে।
- ইন্দুমাধব মল্লিক, সিঙ্গাপুর, চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫-২৬
- ভারতীয় কলগুলোতে উৎপন্ন কাপড়ের উপরে একটা কর বা শুল্ক বসানো হল, নাম দেওয়া হল ‘তুলোর উপরে ধার্য উৎপাদন-শুল্ক’। এর উদ্দেশ্য ছিল ল্যাঙ্কাশায়ার থেকে বিলাতি কাপড়ের আমদানি-ব্যবসায়ে সাহায্য করা, যেন সে কাপড় ভারতীয় কাপড়ের চেয়ে শস্তায় বিকোতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশই শুল্ক বসায় বিদেশী জিনিষের উপরে, বসিয়ে তার নিজের শিল্পকে রক্ষা করে বা রাজস্বের আয় বাড়ায়। কিন্তু ভারতবর্ষে ব্রিটিশরা করতে লাগলেন একটি অসাধারণ এবং আশ্চর্য কাজ—তাঁরা শুল্ক বসালেন ভারতের নিজের তৈরি জিনিষের উপরেই। তুলোর কাপড়ের উপরে এই উৎপাদন-শুল্কের বিরুদ্ধে প্রচুর পরিমাণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন করা হয়েছে; তবুও এটাকে এই দীর্ঘকাল ধরেই টিঁকিয়ে রাখা হয়েছিল। মাত্র কয়েক বছর হল একে তুলে দেওয়া হয়েছে।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭৫
- বালক বিদ্যাসাগর বাল্যকালে পাড়ার লোকের বাগানের ফল পাড়িয়া চুপে চুপে খাইতেন; কেহ কাপড় শুখাইতে দিয়াছে দেখিলে, তাহার উপর মলমূত্র ত্যাগ করিতেন। প্রত্যহ পাঠশালায় যাইবার সময় মথুুর মণ্ডল নামক একজন প্রতিবেশীর দ্বারদেশে মলত্যাগ করিতেন। সকল সংবাদ মাতার কর্ণে প্রবেশ করিলে, তিনি বিদ্যাসাগরকে বলিলেন,—'বাপু, তুমি লোকের ছেঁড়া কাপড় দেখিলে, আপনার ভাল কাপড় তাহাকে পরাইয়া, নিজে সেই ছেঁড়া কাপড় পরিয়া বাটিতে আইস, লোকের দুঃখ দেখিলে তুমি মনে এত দুঃখ পাও, আর এরূপ করিয়া লোকের মনে ব্যথা দাও কেন? কোন খাদ্যদ্রব্য হস্তে তাহারা তোমার বিষ্ঠা স্পর্শ করিলে, সেই দ্রব্যগুলি তাহাদিগকে ফেলিয়া দিতে হয়, পুনরায় স্নান করিতে হয়। আহা, তাহাদের কত কষ্ট দেখ দেখি।” শুনা যায়, মাতার এরূপ শিক্ষায় সন্তানের সুফল ফলিয়াছিল।
- প্রিয়দর্শন হালদার, বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী - প্রিয়দর্শন হালদার, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
- এই ভাবিয়া তিনি লতা পাতায় শরীর উত্তমরূপে ঢাকিয়া, নিজের কাপড় খানি দিয়া সেই পাখি ধরিতে গেলেন, অমনি দুষ্ট পাখির দল খিল খিল করিয়া হাসিতে হাসিতে কাপড়খানি লইয়া উড়িয়া পলাইল। যাইবার সময় বলিয়া গেল, “হাঃহাঃ! মহারাজ, চিনিতে পারিলে না? আমরা সেই পাশা! সব হারিয়া মনে করিয়াছিলে, বুঝি কাপড়খানি লইয়া পলাইবে? তা আমরা কাপড়খানি ছাড়িব কেন?”
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, নল ও দময়ন্তীর কথা, মহাভারতের কথা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪৮-৫৪৯
- বর্ষার পর থেকেই এই হাট বেশি করে জমে। তখন নদীর সঙ্গে জোলার যােগ হয়ে যাতায়াতের পথ সহজ হয়ে যায়। তখন সুতাে এবং আগামী শীতের জন্যে গরম কাপড়ের আমদানি খুব বেড়ে ওঠে।
সেই সময়টাতে দিশি কাপড় আর দিশি নুন-চিনির বিরােধ নিয়ে বাংলাদেশের হাটে হাটে তুমুল গণ্ডগােল বেধেছে। আমাদের সকলেরই খুব একটা জেদ চড়ে গেছে। আমাকে সন্দীপ এসে বললেন, এত বড়াে হাট-বাজার আমাদের হাতে আছে, এইটাকে আগাগােড়া স্বদেশী করে তুলতে হবে। এই এলাকা থেকে বিলিতি অলক্ষ্মীকে কুলাের হাওয়া দিয়ে বিদায় করা চাই।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিমলার আত্মকথা, ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০০
- তারপর কী কলহই দুজনে বাঁধিয়া গেল। প্রতিবেশীরা ছুটিয়া আসিল, দাঁড়াইয়া দেখিতে লাগিল মজা। শেষে রাগের মাথায় কুবের হঠাৎ কলিকাটা মালার গায়ে ছুঁড়িয়া মারিল। কলিকার আগুনে মালা ও তাহার কোলের শিশুটির গা স্থানে স্থানে পুড়িয়া গেল, কাপড়েও আগুন ধরিয়া গেল মালার। সিধুর বােন ছুটিয়া আসিয়া কাপড়খানা টানিয়া খুলিয়া লইল, নিজের কাপড়ের আঁচল দিয়া লজ্জা নিবারণ করিল মালার। দুঃখিনী সে, বড়াে ছেঁড়া তাহার কাপড়খানা।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্মানদীর মাঝি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সংস্করণ- ৩৫, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স , প্রকাশস্থান- কলকাতা, পৃষ্ঠা ৯৯
- যে লোক গায়ে কাপড় দেয় না, তাহাকে সকলে নির্লজ্জ বলিয়া থাকে, কিন্তু যে ব্যক্তি গায়ে অত্যন্ত কাপড় দেয়, তাহাকে কেন সকলে নির্লজ্জ বলে না? যে ব্যক্তি রংচঙে কাপড় পরিয়া হীরা জহরতের ভার বহন করিয়া বেড়ায়, তাহাকে লোকে অহঙ্কারী বলে। কিন্তু তাহার মত দীনহীনের আবার অহঙ্কার কিসের? যত লোকের চক্ষে সে পড়িতেছে, তত লোকের কাছেই সে ভিক্ষুক। সে সকলের কাছে মিনতি করিয়া বলিতেছে, “ওগো এই দিকে! এই দিকে। আমার দিকে একবার চাহিয়া দেখ!” তাহার রঙচোঙে কাপড় গলবস্ত্রের চাদরের অপেক্ষা অধিক অহঙ্কারের সামগ্রী নহে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লজ্জা ভূষণ, বিবিধ প্রসঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্র, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৯-১১০
- পরদিন রাজামশাই আবার তাঁর তিন ছেলেকে ডেকে বল্লেন, “এসত দেখি, তোমরা কে কি কাপড় এনেছ।” ছেলেরা একে একে তাদের কাপড় এনে দেখাতে লাগ্ল। বড় ছেলে যে কাপড় এনেছে সেখানা একটা আংটির ভিতর দিয়ে ঢুকে গেল, কিন্তু ছুঁচের ভিতর ঢুক্ল না। মেঝ ছেলের কাপড় খানা একটা মোটা চট সেলাই কর্বার ছুঁচের ভিতর দিয়ে গেল। সকলে ভাব্ল মেঝ ছেলেই রাজা হবে। কিন্তু রাজামশাই কর্লেন কি, তাঁর বাড়ীতে সকলের চেয়ে যে সরু ছুঁচ, সেই ছুঁচ খুঁজে আন্তে বল্লেন। সে ছুঁচের ভিতর দিয়ে আর সে-কাপড় গল্ল না।
- সুখলতা রাও, বিড়াল রাণী, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০১
- ঐ যে জামাটা তুমি গায়ে দিয়েছ, ওর কাপড়টা তৈরি করতে কত লোককে কত হাঙ্গাম করতে হয়েছে, তুমি কি একবার ভেবে দেখেছ? তুলার ক্ষেতে যখন তুলা হল, তখন কত লোকে এসে সেই-সব তুলা গাছ থেকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় জড় করল। কলে সেই তুলার বীচি পরিষ্কার করে তাকে গাঁটে বেঁধে ফেলল। তার পর সেই তুলা কত দেশবিদেশে ঘুরে, কাপড়ের কলে এসে হাজির হল।
- সুকুমার রায়, কাপড়ের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৫
- ঝুপ্ ঝুপ্ শব্দে দাপিয়া বৃষ্টি আসিল। বিনোদিনী তাহার ঘরে মেঝের উপর বসিয়া। সম্মুখে কাপড় স্তূপাকার। খেমি দাসী এক-একখানি কাপড় অগ্রসর করিয়া দিতেছে, আর বিনোদিনী মার্কা দিবার কালি দিয়া তাহাতে অক্ষর মুদ্রিত করিতেছে।
মহেন্দ্র কোনো সাড়া না দিয়া দরজা খুলিয়া একেবারে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। খেমি দাসী কাজ ফেলিয়া মাথায় কাপড় দিয়া ঘর ছাড়িয়া ছুট দিল।
বিনোদিনী কোলের কাপড় মাটিতে ফেলিয়া দিয়া বিদ্যুদ্বেগে উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “যাও, আমার এ ঘর হইতে চলিয়া যাও।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৫
- বাংলা দেশে হাতে বোনা মোটা কাপড়ের শিল্প আমদানী বিদেশী কাপড়ের প্রতিযোগিতায় বহু দিন পর্বেই লুপ্ত হইয়াছে। অন্যান্য প্রদেশও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়াছে। কেন লোকে দিনের পর দিন কষ্ট করিয়া সূতা বুনিবে ও কাপড় তৈরী করিবে,—ল্যাঙ্কাশায়ার ও জাপান ত তাহাদের কলে তৈরী সূক্ষ্ম বস্ত্রজাত লইয়া, ঘরের দরজায় সর্বদাই হাজির আছে! বাংলার ঋণগ্রস্ত অনশনক্লিষ্ট কৃষকগণ, তোমরা তোমাদের দেশের ভদ্রলোকদের অনুসরণ করিয়া নিজেদের দুঃখকষ্ট বিস্মৃত হও!
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আত্মচরিত- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক- ওরিয়েণ্ট বুক কোম্পানি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৫
- একদিন হয়েছে কি, রাজার বাড়ীর অনেক কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। সেই সব কাপড়ের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট বারোটি জামাও শুকাচ্ছে। রাজার মেয়ে সেই বারোটি ছোট্ট ছোট্ট জামা দেখতে পেয়ে তার মার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর্ল, “মা, ছোট্ট ছোট্ট জামাগুলি কার? বাবার ত এতটুকু জামা নয়?”
তার মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ও জামা তোমার দাদাদের।” মেয়েটি বল্ল, “আমার দাদাদের! কই মা, তাদের ত আমি কখনো দেখিনি? তারা কোথায়?”- সুখলতা রাও, বারো ভাই, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- নয়তো লক্ষ্মীছাড়া নোটোর দোষেই নূূতন-কেনা কাপড়টা খোওয়া গিয়াছে বলিয়া তাহার বুদ্ধির প্রতি প্রচুর অশ্রদ্ধা প্রকাশ করিতেন—ভবানীচরণ তখন তাঁহার প্রিয় ভৃত্যটির পক্ষাবলম্বন করিয়া গৃহিণীর ক্রোধ হইতে তাহাকে বাঁচাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিতেন। এমন-কি, কখনো এমনও ঘটিয়াছে, যে কাপড় গৃহিণী কেনেন নাই, এবং ভবানীচরণ চক্ষেও দেখেন নাই এবং যে কাল্পনিক কাপড়খানা হারাইয়া ফেলিয়াছে বলিয়া নটবিহারী অভিযুক্ত—ভবানীচরণ অম্লানমুখে স্বীকার করিয়াছেন যে, সেই কাপড় নোটো তাঁহাকে কোঁচাইয়া দিয়াছে, তিনি তাহা পরিয়াছেন এবং তাহার পর—তাহার পর কী হইল সেটা হঠাৎ তাঁহার কল্পনাশক্তিতে জোগাইয়া উঠে নাই—রাসমণি নিজেই সেটুকু পূরণ করিয়া বলিয়াছেন—“নিশ্চয়ই তুমি তোমার বাহিরের বৈঠকখানার ঘরে ছাড়িয়া রাখিয়াছিলে, সেখানে যে খুশি আসে যায়, কে চুরি করিয়া লইয়াছে।”
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাসমণির ছেলে, গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯০
- গ্রামের বাংলো থেকে রোজ তাসকেণ্ট সহরে দু’বার যাতায়াত করছি। কিণ্ডারগার্টেন, ম্যুজিয়ম, রাষ্ট্রের বৃহৎ গ্রন্থাগার, পাঠভবন দেখে মনে হচ্ছে এ এশিয়ার অনগ্রসর দেশ নয়, আধুনিক বিজ্ঞানের সমৃদ্ধি এর সর্বাঙ্গে ঝলমল করছে। এই বৃহৎ সহরের চারদিকে বহু শিল্প কেন্দ্র রয়েছে। তুলোর দেশ বলে, কয়েকটি কাপড়ের কল আছে। একটি বৃহৎ কাপড়ের কল দেখলাম, নাম “টেক্সটাইল কম্বাইন”। বোম্বাই বা আমেদাবাদের আট দশটা কারখানা একত্র করলেও এর সমান হবে না। সাদা রঙ্গীন এবং নক্সাদার ছিট তৈরী হচ্ছে। সমস্ত মধ্য এশিয়ার কাপড়ের চাহিদা এখান থেকেই জোগান দেওয়া হয়।
- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৩
- সূতাকাটা ও বস্ত্রবয়নের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। পূর্ণিয়া জেলার সম্বন্ধে বলা হইয়াছে,— “কার্পাস বস্ত্র বয়নকারীর সংখ্যা বিস্তর এবং তাহারা গ্রামের লোকদের ব্যবহারের জন্য মোটা কাপড় বুনে। সূক্ষ্ম বস্ত্র বুনিবার জন্য সাড়ে তিন হাজার তাঁত আছে। তাহাতে ৫,০৬,০০০ টাকা মূল্যের বস্ত্র উৎপন্ন হয় এবং মোট ১,৪৯,০০০ টাকা লাভ হয় অর্থাৎ প্রত্যেক তাঁতে বার্ষিক গড়ে ৮৬ শিলিং লাভ হয়। মোটা কাপড় বুনিবার জন্য ১০ হাজার তাঁত নিযুক্ত আছে এবং তাহাদের উৎপন্ন কাপড়ের মোট মূল্য ১০,৮৯,৫০০ এবং মোট ৩,২৪,০০০ টাকা লাভ হয়; অর্থাৎ প্রত্যেক তাঁতে বার্ষিক গড়ে ৬৫ শিলিং লাভ হয়।”
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আত্মচরিত- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক- ওরিয়েণ্ট বুক কোম্পানি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৪
- প্রাচীরবেষ্টিত স্বল্প স্থানের মধ্যে কয়েক শত মনুষ্য—সকলের এক বেশ, মোটা কাপড়ের হাঁটু পর্য্যন্ত পায়জামা, গায়ে সেই কাপড়ের পিরাণ, মাথায় সেই রকম টুপী। মোটা কাপড়, তাহাতে নীল ডোরা। সকলের গলায় একটা টিনের চাক্তি, তাহাতে একটা নম্বর খোদা। এই সকল লোকদের নাম নাই, শুধু নম্বর। যাহার যে নম্বর তাহাকে সেই নম্বর বলিয়া ডাকে।
- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৮৯
- মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়
মাথায় তু’লে নেরে ভাই;
দীন-দুখিনী মা যে তোদের
তার বেশি আর সাধ্য নাই।- রজনীকান্ত সেন, সংকল্প, বাণী - রজনীকান্ত সেন, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩
- স্নানের পর পরিবার জন্য মেয়েরা যে কাপড় আনিয়াছিল, তাহা এক জায়গায় সাজাইয়া রাখিয়া, তাহারা আমোদ আহ্লাদ করিতেছিল। ইহার মধ্যে কখন বাতাস আসিয়া সেই-সকল কাপড় উল্টোপাল্টা করিয়া দিয়াছে, কেহ তাহা টের পায় নাই। সুতরাং তাহারা নিজের নিজের কাপড় খুঁজতে গিয়া ভুল করিতে লাগিল। শর্মিষ্ঠা যে কাপড়খানি হাতে লইলেন, সেখানি ছিল দেবযানীর আর দেবযানী তাহাতে রাগিয়া গিয়া শর্মিষ্ঠাকে বলিলেন, “হ্যা লো, অসুরের মেয়ে, তুই কোন্ সাহসে আমার কাপড় নিতে গেলি?”
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর কথা, মহাভারতের কথা, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২৩
- সূতা কাটা হয়ে গেলে, তৈরি সূতার 'নলি'গুলো আর-একটা কলের কাছে নিয়ে যায়। এটা হচ্ছে কাপড়ের টানা দেবার কল। টানা কাকে বলে জান? কাপড়ে লম্বালম্বিভাবে যে-সূতা থাকে তাকে ‘টানা' বলে, আর চওড়াভাবে যে সুতা থাকে তাকে ‘পড়েন' বলে। এই টানা দেবার কল বড়ো আশ্চর্য। হাজার হাজার নলি থেকে সূতা টেনে একটা চিরুনির মতো জিনিসের ভিতর দিয়ে গলিয়ে নিয়ে একটা রোলারে জড়ায়।
- সুকুমার রায়, কাপড়ের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৫
- ভিজিতে ভিজিতে রঘুপতি আসিয়া উপস্থিত হইলেন। জয়সিংহ তাড়াতাড়ি উঠিয়া পা ধুইবার জল ও শুকনো কাপড় আনিয়া দিলেন।
রঘুপতি বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “তোমাকে কাপড় আনিতে কে বলিল?” বলিয়া কাপড়গুলা লইয়া ঘরের মধ্যে ফেলিয়া দিলেন।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজর্ষি, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
- মিহি কাপড় না হইলে পরিতে পারি না। ইঁহারা বলেন খদ্দর খুব ভারী। ইঁহাদের ফিন্ফিনে ধুতি চাই। আমি জিজ্ঞাসা করি মা লক্ষ্মীদের গহনার ওজন কত? কেরাণীবাবুদের ধড়াচূড়া হ্যাট কোট ইত্যাদির ওজনই বা কত? যত দোষ এই খদ্দরের বেলায়। বিলাতী কাপড় পরিলে টাকাটা জন্মের মত দেশ হইতে বিদায় দিলাম। হাতের সূতা গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় যে তন্তুবায় আছে, জোলা আছে, তাহারা বুনিবে। গ্রামের টাকা গ্রামেই থাকিয়া যাইবে। অনেকে বলেন মিলের কাপড় পরিলেই ত হইল। কিন্তু তাহাতে কি হইবে? টাকাটা বোম্বাই কি আমেদাবাদে চলিয়া গেল। ঠিক মহাজনের নিকট নিজের বাস্তুভিটা বন্ধক দেওয়ার মত হইল। আমি এ বিশ্বপ্রেম চাই না।
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৯-৩০০
- হে সূর্য। শীতের সূর্য!
হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তােমার প্রতীক্ষায়
আমরা থাকি
যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকদের চঞ্চল চোখ,
ধানকাটার রােমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
হে সূর্য, তুমি তাে জানাে,
আমাদের গরম কাপড়ের কতাে অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,
এক টুকরাে কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।- সুকান্ত ভট্টাচার্য - ছাড়পত্র, প্রার্থী (১৯৪৭)।
- গোয়ালিয়ার আসলে হিন্দুনগর; কিন্তু এখানকার লোকের পাগ্ড়ীগুলা মুসলমানীধরণের। তবে একরকম বিশেষধরণের পাগ্ড়ী আছে—যাহা খুব আঁটসাঁট করিয়া জড়াইয়া বাঁধা; বর্ণভেদ অনুসারে এই সকল পাগ্ড়ী অসংখ্যরকমের। কোনটার শাঁখের মত গড়ন, কোনটার বা একাদশ-লুইরাজার আমলের টুপির মত গড়ন। আবার একরকম পাগ্ড়ী আছে—যাহার লম্বা দুই পাশ উর্দ্ধে উত্তোলিত ও দুইদিকে সিং-বাহিরকরা। এই পাগ্ড়ীগুলা,—লালরঙের কিংবা পীচফল-রঙের, কিংবা ফিঁকা-সবুজ-রঙের রেশমী কাপড়ের।
- পিয়ের-লোটি, জালিকাটা বেলে-পাথরের নগর, ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, পিয়ের-লোটির ফরাসী থেকে অনুবাদ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬৮
- তাঁত যখন চলে তখন বড় মজার দেখায়। টানার সুতা উঠছে আর নামছে, আর তার ফাঁকের ভিতর দিয়ে পড়েনের সূতার ‘মাকু ঠকঠক করে ছুটে যাচ্ছে আর আসছে, —ঠিক যেন একটা ইদুর দৌড়াচ্ছে। কাপড় বোনা হয়ে গেলে, তাকে মেজে ঘসে মোলায়েম করে, সুন্দর করে ভাঁজ করে, ছাপ লাগিয়ে, তার পর তাকে বাজারে পাঠানো হয়।
- সুকুমার রায়, কাপড়ের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৬
- জয়সিংহ সহসা এরূপ ব্যবহারের কারণ বুঝিতে না পারিয়া অবাক্ হইলেন—কাপড় ভূমি হইতে তুলিয়া যথাস্থানে রাখিতে উদ্যত হইলেন, রঘুপতি পুনশ্চ বিরক্তভাবে কহিলেন, “থাক্ থাক্, ও কাপড়ে তোমার হাত দিতে হইবে না।”—বলিয়া নিজে গিয়া কাপড় ছাড়িয়া আসিলেন। জল লইয়া পা ধুইলেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজর্ষি, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
- ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন সাহাবি বলেন, মানুষ তো চায় যে তার কাপড় সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক (এটা কি অহংকার বলে গণ্য হবে?) রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। অতএব তিনি সুন্দর পছন্দ করেন। তবে অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান ও মানব অবমূল্যায়ন।’
- হাদিস, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন (মুসলিম, হাদিস : ৯১)
- গয়ামেম সকালে সামনের উঠোনে ঘুঁটে দিচ্ছিল, এমন সময়ে দূরে প্রসন্ন আমীনকে আসতে দেখে গোবরের ঝুড়ি ফেলে কাপড় ঠিকঠাক করে নিয়ে উঠে দাড়ালো। প্রসন্ন চক্কত্তি কাছে এসে বললে, কি হচ্চে? বলে দিইচি না, এসব কোরো না গয়া। আমার দেখলি কষ্ট হয়। রাজরাণী কিনা আজ ঘুঁটেকুড়ুনি।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সপ্তম পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০৪
- আমাদের ডানদিকের বালুকারাশির মধ্যে দিয়ে একদল আরব শ্রেণীবদ্ধ উট বোঝাই করে নিয়ে চলেছে। প্রখর সূর্যালোক এবং ধূসর মরুভূমির মধ্যে তাদের নীল কাপড় এবং সাদা পাগড়ি দেখা যাচ্ছে। কেউ-বা এক জায়গায় বালুকাগহ্বরের ছায়ায় পা ছড়িয়ে অলসভাবে শুয়ে আছে, কেউ-বা নমাজ পড়ছে, কেউ-বা নাসারজ্জু ধরে অনিচ্ছুক উটকে টানাটানি করছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, য়ুরোপযাত্রী, সংকলন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯১
- মোলায়েম করার কলটি বড়ো মজার। দুটো ফাঁপা রোলার গায়ে গায়ে লাগানো রয়েছে, তার মাঝখান দিয়ে কাপড়টা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফাঁপা রোলারের ভিতর ফুটন্ত জলের বাষ্প চালিয়ে দিয়ে রোলার দুটোকে খুব গরম করা হয়, তার পর আস্তে আস্তে সে দুটিকে ঘোরানো হয়। তখন কাপড়টাও গরমে আর চাপে খুব মোলায়েম হয়ে বেরিয়ে আসে। তার পর সেই কাপড় ভজি করার কলে নিয়ে যায়। সেই কলের দুটো হাত আছে, তা দিয়ে কাপড়টাকে চটপট ভাঁজ করে ফেলে। তার পর প্যাক করার ঘরে সেই কাপড়ে ছাপ মেরে, তাকে বেঁধে, কাগজ মুড়ে বাজারে পাঠাবার জন্য তৈরি করে রাখে।
- সুকুমার রায়, কাপড়ের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৬
- কালীচরণের ক্রমে উন্নতি হইতে লাগিল। শুধু গায় নিতান্ত অসভ্য দেখায় বলিয়া বাবুরা তাহাকে পিরাণ কিনিয়া দিল, পায়ের জন্য পুরাতন জুতা দিল। সেই সঙ্গে বাজারের মাত্রাও বাড়িতে লাগিল। কোন দিন এক বাবু তাহার হাতে চারিখানা নোট গুঁজিয়া দিয়া, কাপড়ের দোকান দেখাইয়া দিয়া বলিত, ‘কালীচরণ, দশ টাকা জোড়া দু-জোড়া লালপেড়ে আর দু-জোড়া কালা পেড়ে দেশী ধুতি কিনে তুমি এই সামনের মোড়ে গিয়ে দাঁড়াও, আমি এই এলাম বলে।’
কালীচরণ কাপড় কিনিয়া মোড়ে আসিয়া দেখে বাবুর কোন চিহ্ন নাই। সে ধুতি কয়জোড়া বগল দাবা করিয়া বাসায় ফিরিয়া আসে।- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৯৩
- কেউ সারাদিনে এক টুকরা রুটি খেয়েছে, আর কেউ অভুক্ত অবস্থায়ই পথের দিকে চেয়ে বসে আছে। আমেরিকার ব্যাংকে প্রচুর স্বর্ণ আছে, বাগানে ফল আছে, মাঠে প্রচুর গম আছে, নদীতে জল আছে, দোকানে কাপড় জুতা সবই আছে কিন্তু ঐ ভিখারীদের কিছুই নাই। পরনে ছেঁড়া ট্রাউজার, গায়ে ছেঁড়া কোট, কারও গায়ে শার্ট আছে, কারও গায়ে তাও নেই! নেকটাই কিন্তু তবুও ঝুলছে।
- রামনাথ বিশ্বাস, আজকের আমেরিকা ,১৯৪৫ (পৃ. ৬৫)
- মাতৃভাষা নামটা আজকাল আমরা ব্যবহার করে থাকি, এ নামও পেয়েছি আমাদের নতুন শিক্ষা থাকে। ইংরেজিতে আপন ভাষাকে বলে মাদার টাঙ্গ্, মাতৃভাষা তারই তর্জমা। এমন দিন ছিল যখন বাঙালি বিদেশে গিয়ে আপন ভাষাকে অনায়াসেই পুরোনো কাপড়ের মতো ছেড়ে ফেলতে পারত; বিলেতে গিয়ে ভাষাকে সে দিয়ে আসত সমুদ্রে জলাঞ্জলি, ইংরেজভাষিণী অনুচরীদের সঙ্গে রেখে ছেলেমেয়েদের মুখে বাংলা চাপা দিয়ে তার উপরে ইংরেজির জয়পতাকা দিত সগর্বে উড়িয়ে। আজ আমাদের ভাষা এই অপমান থেকে উদ্ধার পেয়েছে, তার গৌরব আজ সমস্ত বাংলাভাষীকে মাহাত্ম্য দিয়েছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
- সিঙ্গাপুরে জিনিষপত্রের দাম চড়িয়াছে অসম্ভবভাবে। এখানকার ডলার ভারতবর্ষের দেড় টাকার সমান। চাউল কাট্টি হিসাবে বিক্রয় হয়; ১ কাট্টি আমাদের এক পোয়ার কিছু বেশী (১ ১/৩ পাউণ্ড)। চাউলের দাম প্রতি পাউণ্ড আধ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬০ টাকা মণ। শুনিতেছি আরও চড়িবে। অথচ বার্মায় চাউল রহিয়াছে প্রচুর এবং দামও খুব সস্তা। কাপড় প্রায় দুষ্প্রাপ্য। নারিকেলের দেশে একটা নারিকেল কিনিতে লাগে প্রায় এক টাকা! রোগ হইলে ঔষধ পাওয়া যায় না।
- এম. জি. মুলকর ,আজাদী সৈনিকের ডায়েরী ,১৯৪৫ (পৃ. ৪৪)
- বাক্স খুলিয়া দেখে, তাহার কাপড়-চোপড় সমস্ত উলট-পালট। তাহার বুক দমিয়া গেল। তাড়াতাড়ি সমস্ত জিনিসপত্র বাহির করিয়া দেখিল, তাহার সেই মাতৃদত্ত নোটখানি নাই। কাগজ ও কাপড়ের মোড়কগুলা আছে। বার বার করিয়া কালীপদ সমস্ত কাপড় সবলে ঝাড়া দিতে লাগিল, নোট বাহির হইল না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাসমণির ছেলে, গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০২
- ছোটকাকার কাছে আমরা অনেক সময় যেতুম। তিনি গৌরবর্ণ তেজীয়ান্ সুশ্রী পুরুষ ছিলেন কিন্তু কড়া মেজাজের লোক বলে মনে হত, আমরা তাঁকে ভয় করে চলতুম। তাঁর বৈঠকখানায় নানা রকম লোভনীয় জিনিস ছড়ান থাকত। একবার মনে আছে ছোট ছোট ছর্রা-ভরা মকমলের কাপড় মোড়া একরকম সর্পাকৃতি কাগজ চাপা তাঁর লেখবার টেবিলে ছিল, তার উপর আমার দৃষ্টি পড়ল। কাপড় ঢাকার ছিদ্র দিয়ে গুলিগুলো ঝরে পড়ছে, তাই এক মুঠা কুড়িয়ে নিয়েছিলুম।
- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ছোটকাকা), আমার বাল্যকথা- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বৈতানিক প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩
- ভারতবর্ষে আজ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের পরবার কাপড়টুকুও জুটছে না; অথচ শুনছি ভারতবর্ষের কাপড়ের কলগুলোতে, খাদি-ভাণ্ডারগুলোতে নাকি প্রচুর কাপড় জমে গেছে, কাপড়ের নাকি উৎপাদন-বাহুল্য ঘটেছে এদেশে। আসল কথা হচ্ছে, লোকেরা এত গরিব হয়ে গেছে যে কাপড় কেনবার সামর্থ্যই তাদের নেই—কাপড়ের প্রয়োজন তাদের নেই একথা ভুল। মানুষের অভাব হয়েছে টাকার।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৪৯
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় কাপড় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে কাপড় শব্দটি খুঁজুন।

উইকিমিডিয়া কমন্সে কাপড় সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।