কারাগার
অবয়ব
কারাগার বা জেল হলো একটি বিশেষ আবাসস্থল, যেখানে আসামীরা অবস্থান করেন। কারাগার বা জেলে অবস্থান কালে অপরাধীরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বাধাপ্রাপ্ত হন। তারা মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। কারাগার সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- রাত্রি উপস্থিত। কারাগার মধ্যে বদ্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বদ্ধ হইয়াছি। বল হরে মুরারে!” মহেন্দ্র কাতরস্বরে বলিল, “হরে মুরারে!”
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫২
- রাজা, তত্ত্বাবধায়কের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন, এবং লোক নির্দ্দিষ্ট করিবার নিমিত্ত তত্ত্বাবধাযকের সমভিব্যাহারে কারাগারে প্রবেশ করিলেন। তিনি একে একে প্রত্যেক কয়েদীর নিকটে উপস্থিত হইলেন, এবং কি কারণে তুমি কারাগারে রুদ্ধ হইয়াছ, এই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। প্রত্যেক কয়েদী বলিল, মহারাজ, আমার কোন অপবাধ নাই, বিনা অপরাধে আমি কারাগারে রুদ্ধ হইয়াছি। মহারাজ, অবিচার, অত্যাচার ও মিথ্যাভিযোগের জ্বালায় এ দেশে বাস করা ভার হইয়া উঠিযাছে।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দোষস্বীকারের ফল, আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রকাশক- শ্রীসিদ্ধেশ্বর প্রেস্ ডিপজিটরি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৯
- আজ ভারতে কত সহস্র লোক কারাগারে রুদ্ধ, বন্দী। মানুষ হয়ে পশুর মতো তারা পীড়িত, অবমানিত। মানুষের এই পুঞ্জীভূত অবমাননা সমস্ত রাজ্যশাসনতন্ত্রকে অপমানিত করছে, তাকে গুরুভারে দুরূহ করছে। তেমনি আমরাও অসম্মানের বেড়ার মধ্যে বন্দী করে রেখেছি সমাজের বৃহৎ এক দলকে। তাদের হীনতার ভার বহন করে আমরা এগোতে পারছি নে। বন্দীদশা শুধু তো কারাপ্রাচীরের মধ্যে নয়। মানুষের অধিকারসংক্ষেপ করাই তো বন্ধন। সম্মানের খর্বতার মতো কারাগার তো নেই। ভারতবর্ষে সেই সামাজিক কারাগারকে আমরা খণ্ডে খণ্ডে বড়ো করেছি। এই বন্দীর দেশে আমরা মুক্তি পাব কী করে। যারা মুক্তি দেয় তারাই তো মুক্ত হয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯
- অসহযোগ আন্দোলনের মুখে গভর্ণমেণ্ট নির্বিচারে দলে দলে লোককে কারারুদ্ধ করিয়াছিল। কিন্তু তাহার ফলে কারাগার সব ভরিয়া উঠিল—কারাগার নিয়ন্ত্রণের নানা সমস্যা জাগিয়া উঠিল। তখন গভর্ণমেণ্ট দলশুদ্ধ লোককে এক সঙ্গে কারারুদ্ধ করার নীতি পরিত্যাগ করিয়া বাছিয়া বাছিয়া “মাথা”গুলিকে ধারয়া রাখিতে লাগিল। এই নীতির ফলে কংগ্রেসের বড় বড় নেতারা একে একে সবাই তখন কারাগারে গিয়ে উঠিতে লাগিলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০
- বঙ্কিমবাবুর “মৃণালিনীতে” মনোরমা অভিনয়ই করিতাম এবং “দুর্গেশনন্দিনীতে” আয়েষা ও তিলোত্তমা এই দুইটী ভূমিকা প্রয়োজন হইলে দুইটীই একরাত্রি একসঙ্গে অভিনয় করিয়াছি। কারাগারের ভিতর ব্যতীত আয়েষা ও তিলোত্তমার দেখা নাই! কারাগারে তিলোত্তমার কথাও ছিলনা, অন্য একজন তিলোত্তমার কাপড় পরিয়া কারাগারে গিয়া “কেও—বীরেন্দ্র সিংহের কন্যা? জগৎসিংহের মুখে এইমাত্র কথা শুনিয়া মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িত।” আর সেই সময়েই আয়েষার ভূমিকার শ্রেষ্ঠ অংশ ওস্মানের সহিত অভিনয়!
- বিনোদিনী দাসী, আমার কথা (প্রথম খণ্ড) - বিনোদিনী দাসী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
- বসন্তরায়—“তাহা হইলে দাদা এখন কোথায়?”
সীতারাম—“আজ্ঞা তিনি কারাগারে!”
বসন্তরায় মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। উদয়াদিত্য কারাগারে, এ কথাটা বুঝি তাঁহার মাথায় ভাল করিয়া বসিতেছে না, কিছুতেই কল্পনা করিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। আবার কিছুক্ষণ বাদে সীতারামের হাত ধরিয়া কহিলেন—“সীতারাম!”
সীতারাম—“আজ্ঞা মহারাজ!”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট, ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮
- নগরে পৌঁছিলে তাহারা কোতয়ালের নিকট নীত হইল। কোতয়াল রাজসরকারে এতালা পাঠাইয়া দিয়া ব্রহ্মচারী ও মহেন্দ্রকে সম্প্রতি ফাটকে রাখিলেন। সে কারাগার অতি ভয়ঙ্কর, যে যাইত, সে প্রায় বাহির হইত না; কেন না, বিচার করিবার লোক ছিল না। ইংরেজের জেল নয়— তখন ইংরেজের বিচার ছিল না। আজ নিয়মের দিন—তখন অনিয়মের দিন। নিয়মের দিনে আর অনিয়মের দিনে তুলনা কর।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫২
- আমাদের জেলের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে মনে করার আমি পক্ষপাতী। যেখানে অত্যাচার ও অপমানের আঘাত যথাসম্ভব কমে আসে, সেখানে বন্দী-জীবনটা ততটা যন্ত্রণাদায়ক হয় না। এই সমস্ত সূক্ষ্মধরণের আঘাত উপর থেকেই আসে, জেলের কর্ত্তাদের এ বিষয়ে কিছু হাত থাকে না। আমার অন্ততঃ এই রকমই অভিজ্ঞতা।
- সুভাষচন্দ্র বসু, তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
- প্রাচীরবেষ্টিত স্বল্প স্থানের মধ্যে কয়েক শত মনুষ্য—সকলের এক বেশ, মোটা কাপড়ের হাঁটু পর্য্যন্ত পায়জামা, গায়ে সেই কাপড়ের পিরাণ, মাথায় সেই রকম টুপী। মোটা কাপড়, তাহাতে নীল ডোরা। সকলের গলায় একটা টিনের চাক্তি, তাহাতে একটা নম্বর খোদা। এই সকল লোকদের নাম নাই, শুধু নম্বর। যাহার যে নম্বর তাহাকে সেই নম্বর বলিয়া ডাকে।
ইহারা বন্দী, ইহাদের বাসস্থান কারাগার।- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৮৯
- মনে হয় আমরা যেন সেই পুরোনো ঐতিহ্যের কবলে পড়ে বন্দী হয়ে আছি। অতীতের সঙ্গে আমাদের যোগ রক্ষা করতেই হবে, কিন্তু সেই অতীত যদি কারাগার হয়ে আমাদের অগ্রগতিতে বাধা দেয় তবে আবার কারাগার ভেঙে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে।
- জওহরলাল নেহেরু, ঐতিহ্যের বোঝা, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- তিন দিবস ভিনিস্ নগরে অবস্থান করিয়া তথাকার দর্শনযোগ্য সামগ্রী সমগ্র অর্থাৎ রাজপ্রাসাদ ও সভাগৃহ প্রভৃতি সন্দর্শন করিলাম। সভামন্দিরটী অতি বৃহৎ এবং উত্তম উত্তম ছবিদ্বারা সুশোভিত। এখানে যে সকল ভয়ানক কারাগার আছে, তাহা সম্যক রূপে বর্ণনা করা সাধ্যাতীত। এই স্থান ও কারাগারের নিকটে একটা বৃহৎ গির্জা ঘর আছে, তাহার বহির্ভাগে পিত্তলনির্ম্মিত কয়েকটা অশ্বমূর্ত্তি আছে।
- রমেশচন্দ্র দত্ত, ইয়ুরোপে তিন বৎসর, সপ্তম অধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬-৯৭
- কলম্বাস মহাবিপদে পড়লেন এই অনিচ্ছুক এবং ভীত লোকদের নিয়ে তিনি কি করে এই দুরূহ ব্রত উদ্যাপন করবেন? কিন্তু তিনি বিচলিত হলেন না। তিনি বুঝলেন যে, এই সব কাতরতায় কর্ণপাত করলে, তাঁর আর অভিযানে যাত্রা করা সম্ভব হবে না...তখন তিনি নির্ম্মম হয়ে উঠলেন এবং কৌশলে সব লোককে জাহাজে আটক করলেন··. তার মধ্যে থেকেও কতক লোক পালিয়ে গেল...
সেই সময় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কয়েকজন বে-পরোয়া লোক তিলে তিলে কারাগারে মরার চেয়ে কলম্বাসের সঙ্গে যেতে সম্মত হলে।···কলম্বাস তাদের আদর করে সঙ্গে নিলেন...- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯-৩০
- বড়-বড়-ছুঁচাল-খিলান-সমন্বিত দিল্লির এই প্রাসাদটি একটা অদৃশ্য পুরাতন উদ্যানের মধ্যে অধিষ্ঠিত; চারিদিক্ রুদ্ধ; উহার দস্তুর অত্যুচ্চ প্রাকারাবলী দর্শকের মনে বিষাদময় ঘোর কারাগারের ভাব আনিয়া দেয়।
কিন্তু উহা যে-সে কারাগার নহে—উহা দৈত্যদানবের কিংবা পরীদিগের কারাগার; সুকুমার শিল্পগরিমায় কোন মানবপ্রাসাদ উহার সমকক্ষ হইতে পারে না।- পিয়ের-লোটি, মোগলবিভবের ধবল প্রভা, ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, পিয়ের-লোটির ফরাসী থেকে অনুবাদ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩১১
- তুমি ত আমাদের মত সোজা মানুষ নও—তুমি দেশের জন্য সমস্ত দিয়াছ, তাই ত দেশের খেয়া-তরী তোমাকে বহিতে পারে না, সাঁতার দিয়া তোমাকে পদ্মা পার হইতে হয়, তাই ত দেশের রাজপথ তোমার কাছে রুদ্ধ, দুর্গম পাহাড়-পর্ব্বত তোমাকে ডিঙাইয়া চলিতে হয়; কোন বিস্মৃত অতীতে তোমারই জন্য ত প্রথম শৃঙ্খল রচিত হইয়াছিল, কারাগার ত শুধু তোমাকে মনে করিয়াই প্রথম নির্ম্মিত হইয়াছিল সেই ত তোমার গৌরব! তোমাকে অবহেলা করিবে সাধ্য কার!
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮
- যতদিন জেলের মধ্যে বেশ স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক বিধিব্যবস্থার বন্দোবস্ত না হয়, ততদিন কয়েদীর সংস্কার হওয়া অসম্ভব এবং ততদিন জেলগুলি আজকালকার মত নৈতিক উন্নতির পথে অগ্রসর না হয়ে অবনতির কেন্দ্র হয়েই থাকবে।
- সুভাষচন্দ্র বসু, তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
- এক জন মাত্র স্ত্রীলোককে ধরিবার আদেশ ছিল—যে গাছে চড়িয়া “মার! মার!” শব্দে হুকুম দিয়াছিল, তাহাকে। একের স্থানে শত জনে শত জন স্ত্রীলোককে ধরিয়া আনিল। কেহ শুনিয়াছিল সে বিধবা, অতএব সে বিধবা দেখিয়াই ধরিল, কেহ শুনিয়াছিল সে সুন্দরী, সে সুন্দরী দেখিয়াই ধৃত করিল। কেহ শুনিয়াছিল, সে যুবতী; এজন্য অনেক যুবতী এক কালে বন্ধন ও পূজা প্রাপ্ত হইল। কেহ কেহ শুনিয়াছিল যে, বৃক্ষবিহারিণী মুক্তকুন্তলা ছিল; অতএব স্ত্রীলোকের এলো চুল দেখিলেই তাহাদের হজুরে আনিয়া সিপাহীরা হাজির করিতে লাগিল।
এইরূপে ফৌজদারী কারাগার স্ত্রীপুরুষে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল—আর ধরে না। তখন সে দিনের মত কারাগার বন্ধ হইল। সে দিন কয়েদীরা বন্ধ রহিল—তাহাদের নিস্বতে পর দিন যাহা হয় হুকুম হইবে।- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সীতারাম, সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৭১
- সমাজ যখন নিজের চতুর্দিগ্বর্তী বেষ্টনের মধ্যে, নিজের বর্তমান অবস্থার মধ্যেই সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ থাকে, তখনো সে বসিয়া বসিয়া আপনার সেই অবস্থাকে কল্পনার দ্বারা দেবত্ব দিয়া মণ্ডিত করিতে চেষ্টা করে। সে যেন কারাগারের ভিত্তিতে ছবি আঁকিয়া কারাগারকে প্রাসাদের মতো সাজাইতে চেষ্টা পায়। সেই চেষ্টার মধ্যে মানবচিত্তের যে বেদনা যে ব্যাকুলতা আছে তাহা বড়ো সকরুণ।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৪
- পিতা আর পুত্রে আবার দেখা হইল—কারাগারে। পণ্ডিত মতিলালের স্বাস্থ্যের দরুণ, জেলকর্তৃপক্ষ তাঁহাকে জওহরলালের কাছে কাছেই রাখিলেন। সৈয়দ মাহমুদ এবং জওহরলাল দুইজনে মিলিয়া পণ্ডিত মতিলালের সেবা করিতে পাইয়া, সেই কারাজীবনের একঘেয়েমীর হাত হইতে বাঁচিলেন। এই সময় জেলের বাহিরে স্যার তেজ বাহাদুর সাপ্রু যাহাতে কংগ্রেসের সহিত গভর্ণমেণ্টের একটা আপোষনিষ্পত্তি হইয়া যায়, তাহার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছিলেন। কংগ্রেসপক্ষের তখন অধিকাংশ নেতাই কারাগারে। স্যার তেজ-বাহাদুর এবং মিঃ জয়াকর বড়লাটের নিকট অনুমতি লইয়া কারাগারের মধ্যেই কংগ্রেস-নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করিতেছিলেন। হঠাৎ গান্ধীজির নিকট হইতে এক পত্র পাইয়া তাঁহারা দুইজনে নয়নী-জেলে কারারুদ্ধ পিতা পুত্রের নিকট উপস্থিত হইলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮০-৮১
- সত্বর তুমি বাটী যাও, এই চাবিটি চন্দ্রপ্রভার হস্তে দিয়া বল, পাঁচ শত টাকার জন্য আমি পথে অবরুদ্ধ হইয়াছি; আমার বাক্সের ভিতরে যে স্বর্ণমুদ্রার থলী আছে, তাহা তোমা দ্বারা অবিলম্বে পাঠাইয়া দেন, তাহা হইলে আমি অবরোধ হইতে মুক্ত হইব। আর দাঁড়াইও না, শীঘ্র চলিয়া যাও। এই বলিয়া, কিঙ্করকে বিদায় করিয়া, তিনি রাজপুরুষকে কহিলেন, অহে রাজপুরুষ! যত ক্ষণ টাকা না আসিতেছে, আমায় কারাগারে লইয়া চল। অনস্তর, তাঁহারা তিন জনে কারাগার অভিমুখে প্রস্থান করিলেন।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভ্রান্তিবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২
- চুপ করো, ইয়েগর।
একটু সবুর কর, মা, শীগগিরই চুপ করবো, চিরদিনের মতো চুপ করবো।···
তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আস্ছে। তবু...ধীরে ধীরে, একটু একটু করে বলতে লাগলো সে,···তোমার সঙ্গ চমৎকার লাগছে, মা···তোমার চোথ, তোমার মুখ, তোমায় ভাবভঙ্গি অতি সুন্দর...কিন্তু এর পরিণাম?—অন্তরকে প্রশ্ন করি।—ভাবতে দুঃখ লাগে—কারাগার, নির্বাসন, নিষ্ঠুর অত্যাচার অন্যান্য সবাইর মতো তোমারও অপেক্ষা করছে।···মা তুমি কারাগারকে ভয় কর?
না।
কর না? কিন্তু কারাগার সত্যিই নরক। এই কারাগারই আমায় মরণ-আঘাত দিয়েছে, মা।···সত্যি কথা বলতে কি, আমি মরতে চাইনে, মা—আমি মরতে চাইনে।
মা সান্ত্বনা দিতে গেলেন, এখনই মরার কি হয়েছে; কিন্তু ইয়েগরের মুখের দিকে চেয়ে কথাগুলো যেন জমে গেলো মুখে।- মাক্সিম গোর্কি, মা, মা - ম্যাক্সিম গোর্কি, অনুবাদক- বিমল সেন, প্রকাশক- বর্মণ পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৪-১৫৫
- কারাগারে আজ আমার পুরো তিন মাস কাটল। তিন মাস আগে ঠিক এমনি দিনে—২৬শে ডিসেম্বরে—আমাকে ষষ্ঠবার গ্রেফ্তার করা হয়। বহুদিন পরে আবার তোমাকে চিঠি লিখছি—কিন্তু তুমি তো জানো, বর্তমানেই যখন চিত্ত পরিপূর্ণ, অতীতের কথা চিন্তা করা তখন কত কঠিন। বাইরের ঘটনাতে মনকে আর বিক্ষিপ্ত হতে না দিয়ে কারাগারের মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে বসতে কিছু সময় লাগে। এবার থেকে ঠিকমতো তোমার কাছে লিখতে চেষ্টা করব। এখন আমি অন্য একটা কারাগারে।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
- সমাজের মধ্যে যে উপদ্রব-উৎপীড়ন, আকস্মিক উৎপাত, যে অন্যায় যে অনিশ্চয়তা ছিল, মঙ্গলকাব্য তাহাকেই দেবমর্যাদা দিয়া সমস্ত দুঃখ-অবমাননাকে ভীষণ দেবতার অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছার সহিত সংযুক্ত করিয়া কথঞ্চিৎ সান্ত্বনালাভ করিতেছিল এবং দুঃখক্লেশকে ভাঙাইয়া ভক্তির স্বর্ণমুদ্রা গড়িতেছিল। এই চেষ্টা কারাগারের মধ্যে কিছু আনন্দ কিছু সান্ত্বনা আনে বটে, কিন্তু কারাগারকে প্রাসাদ করিয়া তুলিতে পারে না। এই চেষ্টা সাহিত্যকে তাহার বিশেষ দেশকালের বাহিরে লইয়া যাইতে পারে না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৪
- অন্ধকারে ঘরের দেয়াল যেমন মাথায় লাগে, প্রভাত-আলোকে মুক্ত আকাশ যেন সেই রকম কালীচরণের মাথায় লাগিল। তাহার হাঁপ ধরিল, বৃহৎ সংসার-অরণ্যে দিশেহারা হইয়া পড়িল। সে কোথায় যাইবে? তাহার গন্তব্য স্থান কোথায়? কে তাহার পথ চাহিয়া আছে? সে কাহার কাছে গিয়া দাঁড়াইবে? কারাগারের চারিটা প্রাচীরের গণ্ডী বরং ছিল ভাল। সংসার যে বৃহৎ কারাগার, ইহাতে পথহারা হইয়া ঘুরিতে হয়। এ মেয়াদ কবে ফুরাইবে, এ কারাগার হইতে কবে মুক্তি হইবে?
- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২০৬
- আফগানিস্থানের জেলে খাদ্যের সুবন্দোবস্ত নাই। এখনও আফগান কারাগার আদিম অবস্থাতেই আছে। অনেক কারাগারে খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। বাইরে থেকে কয়েদীকেই খাদ্য যোগাড় করে আনতে হয়। সেজন্য অনেক কয়েদীকে ডাণ্ডা বেড়ি পায়ে পথে ঘাটে দেখা যায়। বর্তমানে যদি কারাগারের পুরাতন প্রথা উঠে গিয়ে নতুন নিয়মের প্রবর্তন হয়ে থাকে ভালই। আমি কাবুলে থাকার সময় আব্দুল্লা নামে এক ভদ্রলোক বলেছিলেন যে আফগানিস্থানে অনেক আইনকানুন সত্বরই রদবদল হবে। তাঁকে শুভস্য শীঘ্রং করতে বলেছিলাম। তিনি হেসে বলেছিলেন, এদেশের কারাগারে আপনার আগমনের সম্ভবনা আছে নাকি? তাঁকে বলেছিলাম, আমার শত্রুও যেন এরূপ কষ্টে না পড়ে।
- রামনাথ বিশ্বাস, কাবুলের পথে, আফগানিস্থান ভ্রমণ - রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- অশোক পুস্তকালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১
- হেষ্টিংসের অভিযোগের কিছুদিন পরেই কামালউদ্দীন নামে এক জন মুসলমান এই অভিযোগ উপস্থিত করিল যে নন্দকুমার এক কাগজে আমার নাম জাল করিয়াছে। সুপ্রীমকোর্টের জজের এই অভিযোগ গ্রাহ্য করিয়া নন্দকুমারকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করিলেন। ফ্রান্সিস ও তৎপক্ষীয়েরা জজদিগের নিকট বারম্বার প্রস্তাব করিয়া পাঠাইলেন যে জামীন লইয়া নন্দকুমারকে কারাগার হইতে মুক্ত করিতে হইবেক। কিন্তু জজেরা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন পুর্ব্বক তাহা অস্বীকার করিলেন।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাঙ্গালার ইতিহাস, ষষ্ঠ অধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৮
- জেলে আর সব কয়েদী খাটে, খায়, কঠিন প্রাণ আরও কঠিন করিয়া পাপাচরণ করে, আর নরকে বসিয়া নির্লজ্জ হাসি হাসে। সে ব্যর্থতার অবনতি কি করুণ! মনের দুয়ার দিয়া সে কি মর্ম্মস্পর্শী আত্মঘাত!! সেখানে আমিই একা বিদ্রোহী। কাজ করি না, প্রায় খাই না, কেবল বেত, বেড়ি, হাতকড়ি, একান্তবাস, এমনি সাজার পর সাজা ভোগ করি, আর মানুষ দেখিলে অভিসম্পাত করি।
- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, সঙ্গম তাঁর্থ, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, মুক্তির দিশা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, প্রকাশক- ডি. এম. লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৪
- মেরী কার্পেণ্টার্ দরিদ্রবিদ্যালয়ের বালক-বালিকাদিগের মধ্যে কার্য্য করিতে করিতে, দেখিতে পাইলেন যে—অনেক বালক এই বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইবার সময়েই বিখ্যাত চোর হইয়া আসিয়াছে। তখন অল্পবয়স্ক বালকবালিকা চৌর্য্য প্রভৃতি অপরাধে অপরাধী হইলে, তাহাদিগকে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদিগের সহিত একই কারাগারে বাস করিতে হইত। শাস্তি দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য—চরিত্র সংশােধন। কিন্তু ক্রমাগত দণ্ডিত হইয়া, বার বার জেলখানায় বাস করিয়া ইহাদের চরিত্র আরও কঠিন এবং দূষিত হইত। অধিকন্তু যেরূপ ভাবে পূর্ণবয়স্ক ও অল্পবয়স্ক বালকবালিকাদিগকে শাস্তি পাইয়া একই কারাগৃহে বাস করিতে হইত, তাহাতে বালকবালিকাদিগের চরিত্র সংশােধিত না হইয়া বরং উত্তরােত্তর অধধাগতি প্রাপ্ত হইত।
- কুমুদিনী বসু, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩-২৪
- বাংলার নিরুদ্ধ-কণ্ঠ আত্মা দেশবন্ধুর বাণীতে অমর ভাষা পাইল, ‘আমার দুই হাতে মনে হইতেছে লৌহশৃঙ্খলের দাগ পড়িয়া গিয়াছে, সারা দেহে শৃঙ্খলের বোঝা-বন্ধনের জ্বালায় দেহমন অগ্নিময়—সারা ভারত আজ বন্ধনশালা - এক বিরাট কারাগারযদি আমি কারাগারে যাই বা তাহার বাহিরে থাকি, তাহাতে কি যায় আসে? যদি আমি এই পৃথিবীতেই না থাকি, তাহা হইলেই বা কি যায় আসে?'
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১
- কারাগারে এই আমার পর পর তৃতীয়বার নববর্ষের দিন এল; মাঝখানে একবার অবশ্য বেশ কয়েকটা মাস বাইরের মুক্ত পৃথিবীতে যেতে পেরেছিলাম। আরও বেশি আগের কথা যদি বলি, দেখা যাচ্ছে গেল এগারো বছরের মধ্যে আমার পাঁচটি নববর্ষের দিনই কেটেছে কারাগারে। আরও কত দিন, আরও কত নববর্ষের দিন এমনি করে কারাগারে আমার কাটাতে হবে, বসে বসে তাই ভাবছি।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১৯
- আমি নগরে আসিয়া আপনারা এই কারাগারে আছেন শুনিয়া এখানে কিছু ধুতুরা মিশান সিদ্ধি লইয়া আসিয়াছিলাম। যে খাঁ সাহেব পাহারায় ছিলেন, তিনি তাহা সেবন করিয়া ভূমিশয্যায় নিদ্রিত আছেন। এই জামাজোড়া পাগড়ি বর্শা যাহা আমি পরিয়া আছি, সে তাঁহারই।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫৪
- বিচারে এবার সব অপরাধ মিলাইয়া দীর্ঘ দুই বৎসব গাঁচ মাস সশ্রম কারাদণ্ড হইল - ইহা হইল কারাগারের সহিত তাঁহার পঞ্চম মিলন—মিলনের কাল ক্রমশ দীর্ঘতর হইয়া উঠিতে লাগিল—বাহিরে তখন স্যার তেজবাহাদুর সাপ্রুর চেষ্টায় রাউণ্ড টেবিল কন্ফারেন্সের আয়োজন চলিতেছিল-১৯৩১ সালের ২৬শে জানুয়ারী জওহরলাল আবার কারাগার হইতে বাহির হইলেন — বাহির হইয়াই শুনিলেন যে, কমলা কারাগারে—এবং পিতা মৃত্যুশয্যায়। তাড়াতাড়ি তিনি পিতার মৃত্যুশয্যার পাশে চলিয়া আসিলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৪-৮৫
- কবিরা সাধারণত কোমল ও ভীরু, কিন্তু নজরুল তা নন। কারাগারে শৃঙ্খল পরে বুকের রক্ত দিয়ে তিনি যা লিখেছেন, তা বাঙালীর প্রাণে এক নৃতন স্পন্দন জাগিয়ে তুলেছে।
- প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, নজরুল স্মৃতি- বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত, প্রকাশক- সাহিত্যম্, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ৪
- মহেন্দ্র বিস্মিত হইল, বড় বিশ্বাস করিল না; বলিল “আপনি কি প্রকারে জানিলেন? আপনি ত বরাবর আমার সঙ্গে।”
সত্য। আমরা মহাব্রতে দীক্ষিত। দেবতা আমাদিগের প্রতি দয়া করেন। আজি রাত্রেই তুমি এ সংবাদ পাইবে, আজি রাত্রেই তুমি কারাগার হইতে মুক্ত হইবে।
মহেন্দ্র কোন কথা কহিল না। সত্যানন্দ বুঝিলেন যে, মহেন্দ্র বিশ্বাস করিতেছেন না। তখন সত্যানন্দ বলিলেন, “বিশ্বাস করিতেছ না—পরীক্ষা করিয়া দেখ।” এই বলিয়া সত্যানন্দ কারাগারের দ্বার পর্য্যন্ত আসিলেন। কি করিলেন, অন্ধকারে মহেন্দ্র কিছু দেখিতে পাইলেন না। কিন্তু কাহারও সঙ্গে কথা কহিলেন ইহা বুঝিলেন। ফিরিয়া আসিলে, মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল “কি পরীক্ষা?”
সত্য। তুমি এখনই কারাগার হইতে মুক্তিলাভ করিবে।
এই কথা বলিতে বলিতে কারাগারের দ্বার উদ্ঘাটিত হইল। এক ব্যক্তি ঘরের ভিতর আসিয়া বলিল,
“মহেন্দ্র সিংহ কাহার নাম?”
মহেন্দ্র বলিল, “আমার নাম।”- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫৩
- ১৮৭২ খৃষ্টাব্দে কারাগার সমূহের উন্নতি বিধান সম্বন্ধে আলোচনা করিবার জন্য ইংলণ্ডে এক অন্তর্জাতিক কংগ্রেস বসে। মেরী কার্পেণ্টার্ কারাগারের উন্নতি বিধান সম্বন্ধে তাঁহার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করিয়া এই কংগ্রেসে এক প্রবন্ধ পাঠ করেন। এই বিষয় লইয়া যে সকল জনহিতৈষী মহাত্মাগণের সহিত তাঁহার পত্রালাপ হইয়াছিল, তাঁহাদের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। তাঁহারা সকলে মেরী কার্পেণ্টারকে সাদর অভ্যর্থনা করেন, এবং তাঁহার প্রস্তাবিত কারা-সংস্কারের বিষয় সমর্থন করেন। ইহার কিছুকাল পরে আমেরিকার কারাগারের অবস্থা পরিদর্শন করিতে তথায় গমন করেন।
- কুমুদিনী বসু, মেরী কার্পেন্টার - কুমুদিনী বসু, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
- তিন মাস কারাবাসের পর, জওহরলাল জানিতে পারিলেন যে, পুলিস বুঝিতে পারিয়াছে যে, তাঁহাকে ভুল করিয়া ধরা হইয়াছিল, সুতরাং কারাগারে থাকিবার আর তাঁহার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু মাস দেড়েক কারাগারের বাহিরে থাকিতেই পুলিশ আবার বুঝিল যে, তাহারা ভুল করিয়াছে— জওহরলালের স্থান কারাগারের ভিতরেই হওয়া উচিত। তিনি পুনরায় গ্রেফতার হইলেন এবং একরাশ অভিযোগের ফলে, সব মিলাইয়া এক বৎসর নয় মাস কারাদণ্ড লাভ করিলেন। যেখান হইতে আসিয়াছিলেন, আবার সেখানে ফিরিয়া যাইতে হইল।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
- কুতবউদ্দীন কহিলেন, “তোমার যে পরিচয় দিতেছ এবং তোমার যেরূপ স্পর্দ্ধা তাহাতে তোমাকে ছাড়িয়া দিতে পারি না। তুমি এক্ষণে কারাগারে বাস করিবে। পশ্চাৎ তোমার প্রতি দণ্ডাজ্ঞা প্রচার হইবে। রক্ষিগণ, এখন ইহাকে কারাগারে লইয়া যাও।” রক্ষিগণ হেমচন্দ্রকে বেষ্টিত করিয়া লইয়া চলিল।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তৃতীয় সংস্করণ, বঙ্গদর্শন যন্ত্রালয়ে শ্রী হারাণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কর্ত্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত, কাঁঠালপাড়া, প্রকাশসাল- ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৮১ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১২
- সুপ্রসিদ্ধ নাবিক কলম্বস্ আমেরিকা মহাদ্বীপ আবিষ্কৃত করিলে, সর্ব্বপ্রথম তথায় স্পানিয়ার্ডদিগের অধিকার ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁহারা, অর্থলালসা চরিতার্থ করিবার নিমিত্ত, দুর্বল নিরপরাধ আদিমনিবাসী লোকদিগের উপর, যৎপরোনাস্তি অত্যাচার করেন। কেয়নাবো নামে এক ব্যক্তি কোনও প্রদেশের অধিপতি ছিলেন। স্পানিয়ার্ডেরা, তাঁহাকে অধিকারচ্যুত ও কারাগারে রুদ্ধ করিয়া রাখেন। তিনি কারাগারে থাকিয়া, অশেষবিধ কষ্ট ও যাতনা ভোগ করিয়া, প্রাণত্যাগ করেন।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দয়ালুতা ও ন্যায়পরতা, আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রকাশক- শ্রীসিদ্ধেশ্বর প্রেস্ ডিপজিটরি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫
- জেলের ভিতরেই কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি বসিল! তিনদিন ধরিয়া এই আলোচনা চলে। তাহার পরে আবার প্রত্যেকে যে যাহার কারাগারে ফিরিয়া গেল। যাতায়াত এবং পরিশ্রমের ফলে পণ্ডিত মতিলালের শরীর আবার ভাঙ্গিয়া পড়িল। কারাগারের সেই বাধ্যতামূলক জীবনের পঙ্গুতা, সেই অমোঘ সীমাবদ্ধতা, তাহার রাজ-চিত্তে তীব্র আঘাত করিত, তিনি সহ্য করিতে পারিতেন না— সহ্য অবশ্য তিনি করিতেন, কিন্তু তাহা করিতে গিয়া আত্মজ্বালা ও নিষ্পেষণে তাঁহার শরীর ও মন জ্বলিয়া যাইত। অবশেষে তাঁহার স্বাস্থ্যের দুর্ল্লক্ষণ দেখিয়া তারত সরকার ৮ই সেপ্টেম্বর তাহাকে কারামুক্ত করিয়া দিলেন। ইহার প্রায় একমাস পরে ছয়মাস কারাগারের পর জওহরলালও মুক্ত হইলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮১-৮২
- বাবা আমাকে পাশে বসিয়ে টমটম্ হাঁকিয়ে কাজে বের হতেন আর দেখতুম দু’ধারে মানুষ শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ছে, সমস্ত পথ তিনি যেতেন মাথার টুপি তুলতে তুলতে সেই মুহুর্মুহু নমস্কার, সেলাম ও প্রণামের প্রত্যভিবাদন দিতে দিতে। এজলাসে বসে মাজিষ্ট্রেট যখন বিচার করতেন তখনও বাবা থাকতেন চেয়ার নিয়ে তাঁর ডান পাশে বসে—পরামর্শ দাতা রূপে। জেলে সিভিল সার্জ্জনরূপে বাবাই ছিলেন হর্ত্তা কর্ত্তা বিধাতা, জেলার সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট আদি কর্ম্মচারীরা ছিল নামকাওয়াস্তে। পি ডবলিউ ডি, স্কুল, ডিস্পেন্সারী যা’ কিছু খুলনার ছিল সর্ব্বই সর্ব্বঘটেই এই মুকুটহীন রাজার ছিল দোর্দ্দণ্ড প্রতাপ—অদ্ভুত একাধিপত্য।
- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
- ধীর। ভবানন্দ আমাকে পাঠাইয়াছেন। আমি নগরে আসিয়া আপনারা এই কারাগারে আছেন শুনিয়া এখানে কিছু ধুতুরা মিশান সিদ্ধি লইয়া আসিয়াছিলাম। যে খাঁ সাহেব পাহারায় ছিলেন, তিনি তাহা সেবন করিয়া ভূমিশয্যায় নিদ্রিত আছেন। এই জামাজোড়া পাগড়ি বর্শা যাহা আমি পরিয়া আছি, সে তাঁহারই।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫৪
- বহুদিনের বহু পরিশ্রমের ফলে জওহরলালের স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া পড়িল। ডাক্তারেরা বিশ্রামের পরামর্শ দিলেন— কারাগারে গিয়া বিশ্রাম নয়-কারাগারের বাহিরে বিশ্রাম— ভারতের বাহিরে এবং ভারতের নিকটেই সিংহলেই বিশ্রামের জন্য যাওয়ার ব্যবস্থা হইল। প্রিয় কন্যা ইন্দিরাকে সঙ্গে লইয়া সস্ত্রীক তিনি সিংহলে যাত্রা করিলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭
- যশোহরে ফিরিয়া যাইবার কথা দাদা মহাশয়কে বলা বৃথা; তিনি স্থির করিলেন একদিন লুকাইয়া যশোহরে পালাইয়া যাইব। আবার সেই কারাগার মনে পড়িল। কোথায় এই আনন্দের স্বাধীনতা, আর কোথায় সেই সঙ্কীর্ণ ক্ষুদ্র কারাগারের একঘেয়ে জীবন! কারাগারের সেই প্রতি-মুহূর্ত্তকে এক এক বৎসর রূপে মনে পড়িতে লাগিল। সেই নিরালােক, নির্জ্জন, বায়ুহীন, বদ্ধ ঘরটি কল্পনায় স্পষ্ট দেখিতে পাইলেন, শরীর শিহরিয়া উঠিল। তবুও স্থির করিলেন, এখান হইতে একদিন সেই কারাগারের অভিমুখে পালাইতে হইবে। আজই পালাইব, এমন কথা মনে করিতে পারিলেন না—“একদিন পালাইব” মনে করিয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত হইলেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট, ত্রয়স্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ, বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৬-১৭৭
- সমতাই আত্ম জয়ের পথ। যখন আমি আলিপুর জেলে বন্দী তখন শ্রীঅরবিন্দ প্রথম আমায় এই সাম্যের কথা বোঝান, তখন থেকে আজ অবধি কিন্তু এই সাম্যে আমার সিদ্ধি এলো না। যোগীর কাছে সবই একই আনন্দের খেলা— এই বৃহৎ শান্ত সমতার চোখে কামকে আজও ঠিক দেখতে পারি নি, তাই সেও আজও একেবারে আমার পিছু ছাড়েনি। এই ঐশী শক্তি জীব-জগতের সর্ব্বত্র মানুষ থেকে কীট পতঙ্গের অবধি কেশাকর্ষণ করে ভোগ করাচ্ছে, নইলে জীব জগৎ চলে না, সব species গুলি ধ্বংস হয়ে যায়।
- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২০-১২১
- রাত্রি উপস্থিত। কারাগারের একটি মাত্র দ্বার, প্রহরীরা সেই দ্বার বাহির হইতে রুদ্ধ করিয়া, প্রহরায় নিযুক্ত রহিল।
কেহ কিছু খাইতে পায় নাই। সন্ধ্যার পর যে যেখানে পাইল, কাপড় পাতিয়া শুইতে লাগিল। সীতারাম তখন সকলের কাছে কাছে গিয়া বলিতে লাগিলেন, “তোমরা কেহ ঘুমাইও না, ঘুমাইলে রক্ষা নাই।”- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সীতারাম, সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৭১
- কারাগারে থাকিয়া জওহরলাল শুনিলেন যে, গান্ধীজির দেশে ফিরিয়া আসিবার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস আন্দোলন আবার পূর্ব্বেকার রূপ গ্রহণ করে এবং তাহার ফলে নূতন বড়লাট নূতন পব অর্ডিনান্স জারী করিয়াছেন এবং গান্ধীজি ও সর্দার বল্লভভাই পুনরায় কারারুদ্ধ হইয়াছেন—সারা দেশের মধ্যে অর্ডিনান্সের বেড়াজাল পড়িয়া গিয়াছে—এবং কংগ্রেসকে বে-আইনী সঙ্ঘ বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে—আবার দলে দলে কংগ্রেস নেতারা কারাগারে আসিয়া ভর্ত্তি হইতে লাগিলেন।
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, জওহরলাল - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় কারাগার সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে কারাগার শব্দটি খুঁজুন।