বিষয়বস্তুতে চলুন

কিম দায়ে জং

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
১৯৯৮ সালে কিম দায়ে জং

কিম দায়ে জং (৬ জানুয়ারি ১৯২৪ – ১৮ আগস্ট ২০০৯) ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার অষ্টম রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন, যা তাঁর উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য দেওয়া হয়। কিম দে-জুং তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বকালে "সানশাইন নীতি" প্রবর্তন করেন, যা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে পুনর্মিলন এবং সহযোগিতার লক্ষ্যে গৃহীত একটি কূটনৈতিক কৌশল ছিল। এই নীতির মাধ্যমে তিনি দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করেন। তাঁর নেতৃত্ব দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিকীকরণ এবং মানবাধিকারের প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • আমি উত্তর কোরিয়ার জনগণের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে গভীরভাবে ভাবি। প্রতিবার যখন খাওয়ার সময় কোন খাবার নষ্ট হয়, তখন মনে হয়—এই সামান্য খাবারটাও দুর্ভিক্ষে থাকা উত্তর কোরিয়ার শিশুদের জন্য কত বড় উপকারে আসতে পারত। আমি সত্যিই তাদের সাহায্য করতে চাই, কিন্তু আমাদের দেশে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে যে নেতিবাচক জনমত আছে, তার কারণে সাহায্যের উদ্যোগ নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
  • আমি চেবোল নেতাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি তারা আমাকে বিশ্বাস করে কারণ আমি তাদের কাছে কিছুই চাইনি। আগের রাষ্ট্রপতিদের মতো আমি তাদের কাছ থেকে অর্থ বা রাজনৈতিক অনুদান চাইনি—একটুও না। আমি কোনও বিশেষ চেবোলকে বিশেষ সুবিধাও দিইনি। তারা জানে, আমি ন্যায়পরায়ণ।
  • আমি বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রই সুস্থ অর্থনীতির ভিত্তি। প্রকৃত গণতন্ত্র ছাড়া প্রকৃত বাজার অর্থনীতি সম্ভব নয়। আর বাজার অর্থনীতিতে মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথ পুরোপুরি খুলে দিতে হয়।
  • এশীয় সমাজের অনেক নেতাই বলতেন, সামরিক একনায়কতন্ত্রই সঠিক পথ এবং গণতন্ত্র তাদের দেশের জন্য ভালো নয়। তারা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছেন। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গণতন্ত্রের আগে স্থান দেওয়াই—বিশেষ করে কোরিয়াসহ এশীয় আর্থিক সংকটের—মূল কারণ।
  • যদি মা-বানা তাদের সন্তানদের বলতে পারেন, "দেখো কিম দে জুংকে সৎভাবে জীবন যাপন করো, ন্যায়ের পক্ষে কাজ করো, তাহলে সফলতা আসবে"—তাহলে আমি মনে করব, আমার জীবন সার্থক।
  • যদি কোরিয়ায় প্রকৃত গণতন্ত্র থাকত, তবে সরকার ও ব্যবসার মধ্যে এই গোপন আঁতাত এবং দুর্নীতি এতটা প্রকট হত না। সম্পদও কেবল গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। সাধারণত স্বৈরাচারী বা একনায়কতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী জনগণকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করে।
  • যখন জাতিসংঘ পূর্ব তিমুরে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা সেই দায়িত্ব কাঁধে নেওয়াকে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে দেখেছিলাম। তারা অতীতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এখন তাদের প্রতিদান দেওয়া আমাদের কর্তব্য। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন—যদি মানবাধিকার ও সার্বভৌম অধিকারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তাহলে মানবাধিকারেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। আমি মনে করি, এই নীতিগত বক্তব্য ঠিক—কারণ রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার আগেই মানুষের অধিকার ছিল; যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত।
  • মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাইরের বিশ্বের সহায়তা ও হস্তক্ষেপ যেমন জরুরি, তেমনি দেশের মানুষের ভেতর থেকে আত্মত্যাগের মানসিকতাও জরুরি। কোরিয়ায় গণতন্ত্র এসেছে কয়েক দশকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে, শত শত মানুষ কারাবরণ করেছে। আর বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ ও জনগণের সমর্থনও আমাদের এই সংগ্রামে সহায়ক হয়েছে—যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র।
  • শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া সংলাপে আসবেই। যদিও তারা তা অনেক দেরিতে করবে, তবু আমরা যদি দীর্ঘ সময় ধরে তাদের উসকানি সহ্য করি, তবে পরে যখন তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অনেক বেশি।
  • এই বিশ্বায়নের যুগে বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে—বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে হবে।
  • চীন ও কোরিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব যুগেই সামন্ততন্ত্র ভেঙে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সরকারি কর্মচারী নিয়োগে পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছিল হাজার বছর আগে। রাজা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষমতার ওপর তদারকির জন্যও শক্তিশালী ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ, এশিয়ায় এমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য ছিল যা গণতন্ত্রের জন্য উপযোগী ভূমি তৈরি করেছিল। তবে, এশিয়ায় যে জিনিসটি ছিল না, তা হলো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের কাঠামো। পশ্চিমা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অবদান হলো—তারা এই কাঠামো সৃষ্টি করেছে, যা মানব ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়েছে অসাধারণভাবে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]