বিষয়বস্তুতে চলুন

ক্রীড়া

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ক্রীড়া হচ্ছে একটি সংগঠিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদনধর্মী এবং দক্ষতাসূচক শারীরিক কার্যকলাপ প্রদর্শনের উত্তম ক্ষেত্র। শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা, কলা-কৌশল এবং সুস্থ ক্রীড়া প্রদর্শন করে একজন বিজয়ী তার অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর নিদর্শন রাখতে পারেন। এটি পরিচালিত হয় একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন বা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মাধ্যম। খেলার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শারীরিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও মর্যাদা যাতে বিজয়ী এবং বিজিত পক্ষ নির্ধারিত হয়। শারীরিক সক্ষমতা হিসেবে মানুষ, প্রাণীসহ বল, যন্ত্র ইত্যাদি সরঞ্জামাদি জড়িত। এছাড়াও মনঃস্তাত্তিক খেলাধুলা হিসেবে কার্ড গেম এবং বোর্ড গেম রয়েছে। এগুলোর কিছু আবার আন্তর্জাতিক অলিম্পিক ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • মহারাজ! আপনার এ সংকল্পের অনুমোদন করিতে পারিতেছি না। এই ক্রীড়া উপলক্ষে আপনার পুত্রগণের মধ্যে ঘোর বৈরানল প্রজ্বলিত হইবার সম্ভাবনা, এখনও সময় থাকিতে উহা নিবারণ করুন।
  • “কোন স্থানে শুক ও ময়ূরগণ ক্রীড়া করিতেছে, কোন স্থানে বক ও হংসগণ শব্দ করিতেছে, কোন স্থান নানাপ্রকার লতা দ্বারা পরিশোভিত হইয়াছে, কোন স্থান চম্পক ও অশোক প্রভূতি মনোহর বৃক্ষ দ্বারা স্থশোভিত হইতেছে, কোন স্থান বা নানা বর্ণরঞ্জিত চিত্র দ্বারা দীপ্তি পাইতেছে, কোন স্থান বা উৎকৃষ্ট গজদন্ত রজত ও সুবর্ণময় বেদি দ্বারা সুশোভিত হইতেছে, কোন স্থানে বা সতত বিরাজমান পুষ্পফল পরিশোভিত বৃক্ষ সকল ও মনোহর সরোবর সকল শোভা পাইতেছে, কোন স্থান বা পরমোৎকৃষ্ট হস্তিদন্ত রজত ও স্বর্ণময় আসনে এবং উত্তম উত্তম উপাদেয় অন্ন পানীয়ে সুশোভিত হইয়াছে।”
  • বাল্যকালের ক্রীড়া, কিশোর-বয়সের প্রথম ভালবাসা, কত কথা, কত কৌতুক একে একে জাগরিত হইয়া বালিকায় দলিত করিতে লাগিল। এক একটি কথা মনে হয়, আর হৃদয়ে দুঃখ উথলিয়া উঠে, অবিরল অশ্রুধারায় চক্ষু ও বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যায়।
  • সুরেশের খ্যাতি ভাল কুস্তিবাজ ৰা জিম্‌নাষ্টিককারী বলিয়া নহে। দুর্দ্দমনীয় হিংস্র পশু বশীভূত করিবার ক্ষমতার জন্যই তিনি বিখ্যাত। মহাদুর্দ্দান্ত ভয়ানক ভয়ানক আফ্রিকাদেশীয় সিংহসিংহনিকে তিনি কুকুরের ন্যায় বশ করিতেন,—অবলীলাক্রমে তাহাদের পিঞ্জরে প্রবিষ্ট হইয়া তাহাদের সহিত ক্রীড়া করিতেন। তাঁহার অত্যদ্ভুত সাহসে দর্শকমণ্ডলী স্তম্ভিত ও বিস্মিত হইয়া থাকিতেন। নিশ্বাস ফেলিতে সাহস করিতেন না। আমেরিকা-দেশীয় অসভ্যজাতির সহিত তিনি যে পরে বিপুল সাহসে ঘোর যুদ্ধ করিয়াছিলেন,—তাহাপেক্ষা এই সকল হিংস্র পশুর সহিত ক্রীড়া কম সাহসের কার্য্য নহে।
    • উপেন্দ্রকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় - লেফ্‌টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস (পৃ.১৫৫-১৫৯)।
  • এইরূপ ঘুরিতে ঘুরিতে সুরেশ একদিন কেণ্ট প্রদেশের একটী ক্ষুদ্র সহরে উপস্থিত হইলেন। সেই সময়ে সেই সহরে একদল সারকাসওয়ালা ক্রীড়া প্রদর্শন করিতেছিলেন,—এ সারকাস খুব ভাল বা বড় সারকাস নহে,—ইহারা পল্লিগ্রামে খেলা দেখাইয়া দুই পয়সা রোজকার করিতেন। এইরূপে ঘুরিতে ঘুরিতে ইহারা এ সহরে আসিয়াছিলেন। সন্ধ্যার পর সারকাস দলের ক্রীড়কগণ সকলেই সুরেশ যে হোটেলে বাস করিতেছিলেন, সেইখানে আমোদ প্রমোদ ও কথাবার্ত্তা কহিতে আসিলেন। ক্রমে সুরেশের সহিত ইহাদের আলাপ পরিচয় হইল, উভয় পক্ষেই নানা কথাবার্ত্তা হইতে লাগিল। তাঁহাদের প্রশ্নের উত্তরে সুরেশ ভারতবর্ষের অনেক কথা তাঁহাদিগকে বলিলেন, এবং তাঁহারাও সুরেশের প্রশ্নে সুরেশকে সারকাসের অনেক কথা কহিলেন। সারকাসে যে কত আমোদ, কত উৎসাহ, কত প্রশংসা, কত যশ, কত খ্যাতি তাহা মহোৎসাহে তাঁহারা সুরেশকে বলিতে লাগিলেন, শুনিয়া সুরেশের মন তাঁহাদের কথায় বিশেষরূপে আকৃষ্ট হইল। তিনি সে রাত্রি নিদ্রা যাইতে পারিলেন না, নানা চিন্তার হৃদয় উদ্বেলিত হইতে লাগিল, সারকাসের দলে মিশিতে তাঁহার প্রাণ ব্যাকুল হইয়া পড়িল। তিনি ফিরিওয়ালা বৃত্তি পরিত্যাগ করিতে স্থির সঙ্কল্প করিলেন, ভাবিলেন যদি এই সারকাস দলে মিশেতে পারি, তাহা হইলে ভবিষ্যতে খ্যাতিলাভত হইবেই, সঙ্গে সঙ্গে বিপুল অর্থও উপার্জ্জন হইবে,—আর আমোদ প্রমোদে ও সুখ সচ্ছন্দের কথাইত নাই। এই রূপ নানা চিন্তায় তাঁহার নিদ্রা হইল না। ভোর হইতে না হইতে তিনি সেই সারকাস দলের ম্যানেজার সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে চলিলেন। সাক্ষাৎ হইলে তিনি বলিলেন “যদি আপনি আমাকে সারকাসদলে গ্রহণ করেন, তাহা হইলে আমি কুস্তি, জিম‌্নাষ্টিক প্রভৃতির খেলা দেখাইতে পারি।”
    • উপেন্দ্রকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় - লেফ্‌টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস (পৃ.১৪৩-১৪৭)।
  • ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে ওয়েল সাহেবের সুবিখ্যাত হিংস্র পশুপ্রদর্শনী দলে সুরেশ কার্য্য গ্রহণ করিলেন। ঐ বৎসরেই তিনি ঐ দলের সহিত আমেরিকায় গমন করিয়া নানাস্থানে নানা ক্রীড়া দেখাইতে লাগিলেন। ইউনাইটেড ষ্টেটের সমস্ত প্রধান প্রধান স্থানে ক্রীড়া প্রদর্শিত হইল, সর্বত্রই সুরেশ বিশেষ প্রশংসা লাভ করিলেন।

    ইয়োরোপ ও ইংলও হইতে এক্ষণে মার্কিন দেশ অনেক বিষয়ে শ্রেষ্ট। মার্কিনের নিউইয়র্ক নগর এক্ষণে লণ্ডনের নিয়েই শোভা সমৃদ্ধির জন্য পরিগণিত; এরূপ সহর জগতে আয় নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না;—সভ্যতার বলে, জ্ঞানে, বিদ্যায় নিউইয়র্কবাসীদিগের সমকক্ষ আর কোথাও দেখিতে পাওয়া যায় না। এই সুবিখ্যাত নিউইয়র্ক নগরেও সুরেশ ব্যঘ্র সিংহের সহিত অদ্ভুত ক্রীড়া দেখাইয়া সকলকে মুগ্ধ করিয়াছিলেন, চারিদিকে তাঁহার প্রশংসা হইতে লাগিল, বড় বড় সম্বাদ পত্রে তাঁহার প্রতিমূর্তি প্রকাশিত হইতে লাগিল, নিউইয়র্কের আবাল বৃদ্ধ বণিতার মুখে কেবল তাহার কথা লইয়া আন্দোলন হইতে লাগিল।
    • উপেন্দ্রকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় - লেফ্‌টেন্যাণ্ট সুরেশ বিশ্বাস (পৃ.১৬৪-১৬৮)।
  • হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ,
    তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
    ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
    কল কল শব্দ করি সবে ক্রীড়া করে,
    নদী বেঁকে চুরে যায় দেশে দেশে,
    সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
    • নদী, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৯
  • রাজ মহাশয়েয় মুখ হইতে এই কথা বহির্গত হইবামাত্র একজন অনুচর একজোড়া তাস আনিয়া রাজা মহাশয়ের সম্মুখে রাখিয়া দিল। আগন্তুক কয়েক ব্যক্তিও তাঁহার নিকটে গমন করিয়া উপবেশন করিল। খেলা আরম্ভ হইল। ক্থায় কথায় হাজার দু হাজার টাকায় হার-জিত হইতে লাগিল। দরবারস্থ সমস্ত লোক অতীব, মনোযোগের সহিত ক্রীড়া দেখিতে লাগিলেন। দাওয়ানজী মহাশয় আগন্তুক দিগের নিকট বসিয়া ইঙ্গিতে দুই এক কথা তাহাদিগকে বলিয়া দিতে লাগিলেন। তাহারাও সেই অনুযায়ী কার্য্য করিয়া কেবল জিতিতে লাগিল, এবং রাজা মহাশয় ক্রমে হারিতে লাগিলেন।

    এই সময় রাজা মহাশয় এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারীর দিকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “কেমন মহাশয়! আপনার এইরূপ একটু আধটু ক্রীড়া করা অভ্যাস আছে কি?”

    উত্তরে সেক্রেটারী মহাশয় কহিলেন, “না মহাশয়। ইতিপূর্ব্বে এরূপ ক্রীড়ায় হস্তক্ষেপ করা দুরে থাকুক, অপর কাহাকেও এরূপ ক্রীড়া করিতে দেখি নাই।”

    প্রত্যুত্তরে রাজা মহাশয় কহিলেন, “এ অতি সামান্য খেলা। যে কোন ব্যক্তি একটু মনোযোগের সহিত দেখিলেই তখনই শিখিতে পারেন। তাহার দৃষ্টান্ত দেখুন; ইহারা এ ক্রীড়া আদৌ জানিতেন না। আমার নিকট শিক্ষা করিলেন; আশ্চর্য্য দেখুন, এখন আমাকেই ইহাদিগের নিকট পরাস্ত হইতেই হইতেছে!”

    এই বলিয়া ক্রীড়ায় পুনরায় মনঃসংযোগ করিলেন। দুই একবার জিতিতেও লাগিলেন, কিন্তু প্রায়ই হারিতে লাগিলেন। সেই সময় মন্ত্রী মহাশয়ের দিকে একবার লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “পাট ক্রয় করিতে পারদর্শী লোকের কোনরূপ বন্দোবস্ত করিতে পারিয়াছেন কি?”

    মন্ত্রী। বিশেষরূপ চেষ্টা দেখিতেছি। কিন্তু সেরূপ উপযুক্ত লোক এখনও স্থির করিয়া উঠিতে পারি নাই। লোকের অভাব কি? দুই এক দিবসের মধ্যে সমস্ত ঠিক করিয়া লইব। পুনরায় ক্রীড়া চলিতে লাগিল। পুনরায় রাজা মহাশয় পরাভূত হইতে লাগিলেন। এইরূপে প্রায় দুই ঘণ্টা কাল ক্রীড়া হইবার পর হার-জিতের হিসাব হইল। সেই সময় জানিতে পারা গেল যে, রাজা মহাশয় পঁচিশ হাজার টাকা জিতিয়াছেন। কিন্তু এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা হারিয়া গিয়াছেন; সুতরাং হিসাবে রাজা মহাশয় লক্ষ টাকার জন্য দায়ী হইলেন।

    এইরূপে অনেকগুলি টাকা একবারে হারিয়া যাওয়ায় তিনি একটু দুঃখিত হইলেন সত্য; কিন্তু ক্যাসবাক্স খুলিয়া একতাড়া নোট বাহির করিয়া উহাদিগের হস্তে প্রদান করিলেন। কারেন্সি অফিস হইতে নূতন নেটের তাড়া বাহির হইবার সময় যেরূপভাবে লাল সূতার দ্বারা উহা বাঁধা থাকে, এ নোটগুলিও সেইরূপভাবে বাঁধা। এই তাড়ার উপরিস্থিত একখানি নোটের উপর সকলের দৃষ্টি পড়িল; উহা একখানি হাজার টাকার নোট। সুতরাং সকলেই তখন অনুমান করিল যে, এ নোটের তাড়ায় একশত নোট আছে, এবং প্রত্যেক নোট এক হাজার টাকার। যাহার হস্তে রাজা মহাশয় সেই নোটের তাড়া অপর্ণ করিলেন, তিনি উহা, না গণিয়া আপনার পকেটেই রাখিয়া দিলেন।

    ইহার পরই সে দিবসের নিমিত্ত ক্রীড়া শেষ হইয়া গেল। পরদিবস এই সময়ে পুনরায় ক্রীড়া আরম্ভ করিবেন, এইরূপ স্থির করিয়া রাজা মহাশয় গাত্রোখান করিবার উদ্যোগ করিলেন। সেই দিবস অনেকগুলি টাকা তিনি হারিলেন বলিয়া, হার মনে একটু অশান্তির উদয় হইয়াছে, ইহাই সকলে অনুমান হইল।
  • হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ,
    তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
    ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
    কল কল শব্দ করি সবে ক্রীড়া করে,
    নদী বেঁকে চুরে যায় দেশে দেশে,
    সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
    পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
    কি সুন্দর সেই-সব, কি-বা মনোলোভা।
    • সুকুমার রায় - নদী কবিতা, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড), (পৃ. ১৪৯)
  • (আমার) চিত্ত স্বভাবতই (সর্ব্বক্ষণ ষোড়শী) শূন্যতায় সংপূর্ণ। [সুতরাং] (ওহে জনগণ! আমার) স্কন্ধবিয়োগে [রূপাদি পঞ্চ স্কন্ধরূপ বাহ্য বিজ্ঞানের সহিত বিচ্ছিন্নতায়, আমি মরিয়া গিয়াছি বলিয়া তোমরা] বিষণ্ণ হইও না। (ওহে বালযোগি!) কাহ্নু নাই, [এ কথা তুমি] কিরূপে বল? [সে ত] ত্রৈলোক্য প্রমাপিত করিয়া [ব্যাপ্ত করিয়া] অনুদিন (পরমার্থসমুদ্রে) ক্রীড়া করিতেছে। মূঢ়েরা দৃষ্ট [বস্তুকে] নষ্ট [হইতে] দেখিয়া কাতর হয়। [কিন্তু তাহারা এই কথা বুঝে না যে], (সমুদ্রের যে) তরঙ্গটি ভগ্ন [হইয়া গেল, সে] কি [তাহার উৎপত্তিস্থল] সাগরকে শোষণ করিয়া ফেলিল? দুগ্ধের মাঝে মাখম আছে, [ইহা যেমন] দেখা যায় না, মূর্খেরা [তেমনি সূক্ষ্মরূপে বিদ্যমান] লোক-[সকল] প্রত্যক্ষ করে না। [এই] ভব-[সংসার হইতে] কেহ চলিয়াও যায় না, এখানে কেহ আসেও না, এইরূপ ভাবে (ভবস্বভাব পরিজ্ঞাত হইয়া) কাহ্নিল যোগী ক্রীড়া করিতেছেন।
    • কৃষ্ণাচার্য - হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১) , (পৃ. ৬৫-৬৬)
  • এইরূপে প্রায় দুই সপ্তাহ অতীত হইলে, একদিন গোকুলজী তারাকে নির্জ্জনে পাইয়া কহিল, তুমি একদিন তোমার বাড়ীর সম্মুখে একটা উৎসব করিয়া গ্রামের লোককে নিমন্ত্রিত কর। যুবকেরা ব্যায়াম ক্রীড়া প্রদর্শন করিবে, আমিও তাহাদের সঙ্গে যোগ দিব।
    • নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত - পর্ব্বতবাসিনী (পৃ. ১৫৯-১৬২)
  • গণেশায় নমঃ নমঃ আদিব্রহ্ম নিরুপম
    পরমপুরুষ পরাৎপর।
    খর্ব্ব স্থূল-কলেবর গজমুখ লম্বোদর
    মহাযোগী পরমসুন্দর॥
    বিঘ্ন নাশ কর বিঘ্নরাজ।
    পূজা হোম যোগ যাগে তোমার অর্চ্চনা আগে
    তব নামে সিদ্ধ সর্ব্ব কাজ॥
    স্বরগ পাতাল ভূমি বিশ্বের জনক তুমি
    সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের মূল।
    শিবের তনয় হয়ে দুর্গারে জননী কয়ে
    ক্রীড়া কর হয়ে অনুকূল॥
    • ভারতচন্দ্র রায় - অন্নদামঙ্গল (পৃ. ১-২)
  • কিন্তু ওবেণ্ডো, যে অমূলক সংস্কারের অনুবর্ত্তী হইয়া আসিয়াছিলেন, জারাগুয়াবাসীদিগের ঈদৃশ সৌজন্য ও সদ্ব্যবহার দর্শনেও তাহা অপসারিত হইল না। তাঁহারা, তাঁহার ও তদীয় সহচরবর্গের প্রাণবিনাশের মন্ত্রণা করিতেছেন, এই সিদ্ধান্ত করিয়া, তিনি মনে মনে স্থির করিলেন, অবিলম্বে তাঁহাদের উপর বিলক্ষণরূপ বৈরসাধন করিবেন। তদনুসারে, তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা এতদিন, আমাদিগকে সন্তুষ্ট করিবার নিমিত্ত, কত ক্রীড়া কৌতুক দেখাইলে, এক্ষণে, আমি একদিন তোমাদিগকে আমাদের দেশের ক্রীড়া কৌতুক দেখাইব। তোমরা অমুক দিন, অমুক সময়ে, অমুক ভবনে উপস্থিত হইবে। তাঁহারা শুনিয়া অতিশয় সন্তুষ্ট ও তৎক্ষণাৎ সম্মত হইলেন। তদনন্তর, তিনি স্পানিয়ার্ডদিগকে গোপনে এই উপদেশ দিলেন, তোমরা স্ব স্ব অস্ত্রশস্ত্র লইয়া, এরূপে প্রস্তুত হইয়া থাকিবে, যেন আমি ইঙ্গিত করিবামাত্র, আমার ইচ্ছানুরূপ কার্য্যসম্পাদন করিতে পার।

    ক্রীড়াকৌতুকপ্রদর্শনের নিরূপিত সময় উপস্থিত হইল। এনাকেয়োনা, স্বীয় কন্যা, অমাত্যগণ, পারিষদবর্গ ও করদ কাসীকদিগের সমভিব্যাহারে, নির্দ্ধারিত আগারে প্রবেশ করিলেন। সকলে যথাযোগ্য স্থানে উপবিষ্ট হইলেন, এবং উৎসুকচিত্তে কৌতুকদর্শনের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। ওবেণ্ডো, স্পানিয়ার্ডদিগকে যেরূপ আদেশ ও উপদেশ দিয়া রাখিয়াছিলেন, তদনুযায়ী যাবতীয় কার্য্য সুন্দররূপে সম্পাদিত হইয়াছে দেখিয়া, অভিপ্রেত কার্য্যানুষ্ঠানের সঙ্কেত করিলেন। তদনুসারে, তাঁহার সৈন্যগণ সেই ভবনের চতুর্দ্দিক্‌ বেষ্টিত করিল এবং কোনও ব্যক্তিকে তথা হইতে বহির্গত হইতে দিল না, অনন্তর, ভবনের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ পূর্ব্বক, কাসীকদিগকে স্তম্ভে বদ্ধ করিয়া, এনাকেয়োনাকে নিরুদ্ধ করিল, এবং তোমরা ও তোমাদের রাজ্ঞী আমাদের প্রাণবধের চেষ্টায় ছিলে, এই বলিয়া কাসীকদিগকে যৎপরোনাস্তি যন্ত্রণা দিতে লাগিল, যাবৎ, অন্ততঃ দুই চারি জন আর সহ্য করিতে না পারিয়া, রাজ্ঞী ও তাঁহারা অপরাধী বলিয়া স্বীকার না করিলেন, তাবৎকাল পর্য্যন্ত ক্ষান্ত হইল না।
  • প্রধান বংশীয়দিগের সহিত আমাদিগের কোন বিষয়েরই সাদৃশ্য নাই, সুতরাং তদ্বংশীয় কামিনীগণও আমাদিগের তুল্য নহে। এই নিমিত্ত তাহাদিগের আচার ব্যবহারাদি পৃথক করিয়া প্রকাশ করিতে বাধ্য হইলাম। এই প্রধান বংশীয় বরবর্ণিনীগণ মধ্যবিধ ও সামান্য বংশস্থ ভামিনীগণাপেক্ষা অনেক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিয়াছেন যথার্থ বটে, কিন্তু এখনও সম্পূর্ণরূপে পারেন নাই। তাঁহাদিগের মধ্যে প্রায় অনেকেই শুদ্ধ বস্ত্রালঙ্কারাদিতেই প্রধানত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন, কিন্তু আমাদিগের ন্যায় বিদ্যাধনে বঞ্চিত হইয়া তাঁহারাও বৃথা ধনে অভিমানিনী হইয়া জীবন শেষ করিতেছেন। ইহাঁদিগকে আমাদিগের ন্যায় সাংসারিক কার্য্যে বিবৃত থাকিতে হয় না, এবং কেহ প্রতিবাদী হইয়া কোন বিষয়ে কিছুমাত্র ব্যাঘাত ঘটাইতে সক্ষম হয় না, অতএব ইহাঁরা বিদ্যাবতী ও অনায়াসে গুণবতী হইতে পারেন। দুঃখের বিষয় এই যে, ইহাঁরা স্বভাবতই আলস্য-পরায়ণা হইয়া নিদ্রা ও বৃথা গল্প ও তাসাদি ক্রীড়া দ্বারা কাল যাপন করেন।
    • কৈলাসবাসিনী দেবী- হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা (পৃ. ৫৯-৬০)
  • নির্দ্দোষ ক্রীড়া সর্ব্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আমােদ; বিশেষতঃ চতুরঙ্গ তাহার শিরঃস্থানীয়। ইহা যেরূপ চিন্তা ও বুদ্ধি শক্তির উত্তেজক, তাহা কাহারও অবিদিত নাই। এই ক্রীড়া ভারতবর্ষ জাত; কিন্তু সুসভ্য ইউরােপীয়েরাই ইহার উন্নতির গৌরব ভাজন হইতেছেন। ঐ সকল দেশে ইহার ভূরি ভূরি পুস্তক ও পত্রিকা হইতেছে; ইহার শিক্ষার্থিগণের সুবিধার জন্য ইহার শিক্ষক ও শিক্ষালয় সংখ্যা দিন দিন বর্দ্ধিত হইতেছে এবং ইহা লইয়া বিভিন্ন দেশীয় অধিবাসিরা পরস্পরের সহিত দীর্ঘ কাল ব্যাপী সংগ্রাম করিতেছেন। কিন্তু এ পুস্তকে নিতান্ত অনিচ্ছার সহিতই ঐ সমস্তের উল্লেখ করা হইল। এই পুস্তক শিক্ষার্থীর জন্য নহে, ইহার আকারও অদৃশ্য; তবে ক্রীড়াকারিরা অবসর কালে নানা প্রকার নূতন ও কৌশলময় চাল দেখিয়া আমোদিত হইতে পারিবেন, এই আশয়ে কতকগুলি উত্তম উত্তম চাল সংগ্রহ করিয়া ইহাতে সন্নিবিষ্ট করিলাম। আলােচনাকারিরা কোন সময় ইহা দ্বারা স্বল্প পরিমাণে আমােদিত হইলেও আমি বহু পরিমাণে তৃপ্তি লাভ করিব।
    • হরিলাল সরকার - চতুরঙ্গ (পৃ. ৩)
  • ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে বীরনগর গ্রামে গ্রীষ্মঋতুর একদিন সায়ংকালে গঙ্গাসৈকতে দুইটি বালক ও একটি বালিকা ক্রীড়া করিতেছে। সন্ধ্যার ছায়া ক্রমে গাঢ়তর হইয়া গঙ্গানদী আচ্ছাদন করিতেছে। জলের উপর কয়েকখানি পোত ভাসিতেছে, দিনের পরিশ্রমের পর নাবিকেরা ব্যস্ত রহিয়াছে, পোত হইতে দীপালোক নদীর চঞ্চল বক্ষে বড় সুন্দর নৃত্য করিতেছে। বীরনগরের নদীকূলস্থ আম্রকানন অন্ধকার হইয়া ক্রমে নিস্তব্ধ ভাব ধারণ করিতেছে। কেবল বৃক্ষের মধ্য হইতে স্থানে স্থানে এক-একটি দীপশিখা দেখা যাইতেছে, আর সময়ে সময়ে পর্ণকুটীরাবলী হইতে রন্ধনাদি সংসারকার্য সম্বন্ধীয় কৃষক-পত্নীদিগের করব শুনা যাইতেছে, কৃষকগণ লাঙ্গল লইয়া ও গরুর পাল হাম্বারব করিতে করিতে স্ব স্ব স্থানে প্রত্যাবর্তন করিতেছে। ঘাট হইতে স্ত্রীলোকেরা একে একে সকলেই কলস লইয়া চলিয়া গিয়াছে নিস্তব্ধ অন্ধকারে বিশাল শান্ত-প্রবাহিনী ভাগীরথী সমুদ্রের দিকে বহিয়া যাইতেছে। অপর পাশ্বে প্রশস্ত বালুকাট ও অসীম কান্তার অন্ধকারে ঈষৎ দৃষ্ট হইতেছে। গ্রীষ্ম-পীড়িত ক্লান্ত জগৎ সুস্নিগ্ধ সায়ংকালে নিস্তব্ধ ও শান্ত।
    • রমেশচন্দ্র দত্ত - মাধবীকঙ্কণ (পৃ. ৫-৭)
  • চিনিব না কেন—হায়! কিন্তু কেন আর
    শৈশবের সেই চিত্র নয়নে আমার!
    ওযে সেই সরোবর
    সেই তরু মনোহর,
    সেই তীর—সে সোপান, বাল্য-ক্রীড়া স্থল,
    চির পরিচিত মম ওই সে হিল্লোল।
  • হিরণ্ময়ী বিবাহের বয়স অতিক্রম করিয়াছিলেন। তিনি ঈপ্সিত স্বামীর কামনায় একাদশ বৎসরে আরম্ভ করিয়া ক্রমাগত পঞ্চবৎসর, এই সমুদ্রতীরবাসিনী সাগরেশ্বরী নাম্নী দেবীর পূজা করিয়াছিলেন, কিন্তু মনোরথ সফল হয় নাই। প্রাপ্তযৌবনা কুমারী কেন যে এই যুবার সঙ্গে একা কথা কহেন, তাহা সকলেই জানিত। হিরণ্ময়ী যখন চারি বৎসরের বালিকা, তখন এই যুবার বয়ঃক্রম আট বৎসর। ইহাঁর পিতা শচীসূত শ্রেষ্ঠী ধনদাসের প্রতিবাসী, এজন্য উভয়ে একত্র বাল্যক্রীড়া করিতেন। হয় শচীসূতের গৃহে, নয় ধনদাসের গৃহে, সর্ব্বদা একত্র সহবাস করিতেন। এক্ষণে যুবতীর বয়স ষোড়শ, যুবার বয়স বিংশতি বৎসর, তথাপি উভয়ের সেই বালসখিত্ব সম্বন্ধ‍ই ছিল। একটু মাত্র বিঘ্ন ঘটিয়াছিল। যথাবিহিত কালে উভয়ের পিতা, এই যুবক যুবতীর পরস্পরের সঙ্গে বিবাহসম্বন্ধ করিয়াছিলেন। বিবাহের দিন স্থির পর্য্যন্ত হইয়াছিল। অকস্মাৎ হিরণ্ময়ীর পিতা বলিলেন, “আমি বিবাহ দিব না।” সেই অবধি হিরণ্ময়ী আর পুরন্দরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতেন না। অদ্য পুরন্দর অনেক বিনয় করিয়া, বিশেষ কথা আছে বলিয়া, তাঁহাকে ডাকিয়া আনিয়াছিলেন। লতামণ্ডপতলে আসিয়া হিরণ্ময়ী কহিল, “আমাকে কেন ডাকিয়া আনিলে? আমি এক্ষণে আর বালিকা নহি, এখন আর তোমার সঙ্গে এমত স্থানে একা সাক্ষাৎ করা ভাল দেখায় না। আর ডাকিলে আমি আসিব না।”
  • সঙ্গীত চর্চ্চা এবং অশ্বারোহণ ও পলো ক্রীড়ায় গ্রাম্য কৃষকগণ পর্য্যন্ত পটু ছিল। পোষাক পরিচ্ছদের পারিপাট্য এবং বাহুল্যের দরুণ সূচীশিল্প এবং সল্‌মা চুমকী ও জরীর কার্য্য এখানে চরম উন্নতি লাভ করিয়াছিল। গ্রাণাডার অধিবাসিগণ সত্যবাদিতা ও প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। সৌজন্য এবং আতিথেয়তা তাঁহদের স্বভাবগত গুণ ছিল।
    • সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী- স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা (পৃ. ৫৫-৬০)
  • অনেক দিনের কথা! সেই আনারউন্নিসা, সেই বাল্য ক্রীড়া, সেই দিবারাত্রব্যাপী সাহচর্য্যও আসক্তি—সেই আসক্তিতে প্রেমের মধুর বিকাশ। তার পর দারুণ নিরাশাময় যবনিকার পতনে, মিলনের পরিবর্ত্তে চিরদিনের বিরহ। হায়! সেই রূপসম্পদময়ী, স্নেহময়ী, সহাস্যমুখী, আনারউন্নিসাকে যে কত দিন দেখি নাই! দুঃখের দিনে যাহার দুঃখ কষ্টে দুঃখ ভোগ করিয়া আসিয়াছি, আজ তাহার সুখের দিনে—একটু আনন্দিত হইব না কেন? দেখায় একবার দোষ কি?
    • হরিসাধন মুখোপাধ্যায়- দেওয়ানা (পৃ. ১৫৬-১৬০)
  • পরন্তু পার করণ কালে টমকে অতি ধীর অবরোধে তাহার করদ্বয়ের বন্ধন পাশ ছেদন করত নাবিকগণকে সাহায্য করিতে তাহার প্রতি আদেশ দিলেন। তাহাতে তিনি সকল কর্ম্মে নিপুণতা থাকাতে তাহাদিগকে সাহায্য করণে প্রবৃত্ত হইলেন। তৎকালে বাষ্পীয় যানে কাফ্রি ক্রীতদাস ব্যতীত আরো অনেকানেক লোক পার হইতেছিল, তন্মধ্যে নব ইংলণ্ডনিবাসী মেষ্টর সেণ্টক্লেয়র নামক এক জন ভদ্রলোক, যিনি তাঁহার আত্ম কুটুম্বের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, তৎকালে তিনিও পার হইতেছিলেন। এবং তাঁহার সমভিব্যাহারে ফ্লি নামা একটী সম্পর্কীয় ভগ্নী ও ইভা নাম্নী পরমাসুন্দরী এক কন্যা ছিল। ঐ কন্যাটী অতি ধর্ম্মপরায়ণা ও সুধীর বলিয়া সকলেই তাহাকে সাতিশয় ভাল বাসিত এবং তাহার কন্যাটী ব্যতীত আর কোন সন্তান না থাকাতে তিনিও বিস্তর স্নেহ করিতেন। যাহা হউক, বাষ্পীয় যানারোহণ করিয়া দিনযামিনী যাইতে হইবে। তন্নিমিত্তে ঐ কন্যাটী অনেক সময় পাইয়া আনন্দচিত্তে ক্রীড়া করিতে করিতে টমের নিকট গমন করিলেন।
    • হ্যারিয়েট বিচার স্টো - টম্‌ খুড়ো (তারিণীচরণ চক্রবর্তী অনূদিত)- (পৃ. ৩৪-৩৮)
  • তৎপরে যে বৈঠকখানা ঘরে আমার খুড়া মহাশয় হরিহর বসু বসিতেন সে ঘরে আসিলাম। পূর্ব্বে এই ঘরে ঢুকিবামাত্র মধ্যম নারায়ণ তৈল ও আয়ুর্বেদোক্ত ঔষধের কত বিচিত্র গন্ধ অনুভব করা যাইত; তিনি এই ঘরে বসিয়া শাস্ত্রের কত শ্লোক আবৃত্তি করিতেন ও সে কালের গল্প করিতেন। এই ঘরে প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্য্যন্ত কত লোকের সমাগম হইত। এই ঘরে কত শাস্ত্রালাপ কত ক্রীড়া কৌতুক হইত। ইহা গ্রামের ক্লব স্বরূপ ছিল। কেবল প্রত্যহ দুই তাল তামাক খরচ করিতে হইত মাত্র তাহাতেই গ্রামের সকল লোক বশীভূত। তাহাদিগের সরলাত্মাকে বশ করিবার জন্য বেশী কিছু আবশ্যক হইত না। সদর বাটী পরিত্যাগ করিয়া বাটীর ভিতর প্রবেশ করিলাম। এই বাটীর ভিতরের পূবের ঘর খড়ো ও দক্ষিণের দীর্ঘ ঘর পাকা, তাহাতে অনেক কুঠরী আছে। এই পূবের ঘরের দাওয়াতে গ্রামের ভঞ্জ বংশের কন্যা আমার বৃদ্ধ অন্ধ পিতামহী (আমার ঠাকুরের জেঠাই) বসিয়া আমাদিগের নিকট সিংহির মামা ভম্বোল দাসের গল্প করিতেন এবং আমরা তাহা হাঁ করিয়া শুনিতাম। তিনি এই পূবের ঘরে শেষ রাত্রিতে জাগিয়া বিছানায় শুইয়া শুইয়া আমাদিগকে
    • রাজনারায়ণ বসু-গ্রাম্য উপাখ্যান (পৃ. ৮৩-৯৩)
  • প্রভাতে জো ফার্গুসনের হস্তমুক্ত কুঠার-খানি খুঁজিয়া বাহির করিল। ফার্গু সন্ বেলুন ছাড়িলেন। উহা ঘণ্টায় ১৮ মাইল বেগে চলিতে লাগিল। তিনি আজ বড় চঞ্চল হইলেন। ক্ষণে ক্ষণেই দূরবীক্ষণ দ্বারা চতুদিক্ দেখিতে লাগিলেন। ভিক্টোরিয়া রুবেমি-পর্ব্বত-শৃঙ্গ অতিক্রম করিয়া কারাগোয়া শৈলমালার প্রথম পর্ব্বত টেঙ্গার সমীপবর্ত্তী হইল। প্রাচীন কাহিনী পাঠে ফার্গুসন্ জানিয়াছিলেন যে, কারাগোয়া শৈলমালাই নীল নদীর প্রথম ক্রীড়া-ক্ষেত্র। তাঁহার মনে হইতে লাগিল এ কাহিনী সত্য, কারণ এই সকল পর্ব্বতই ইউকেরিউ হ্রদ পরিবেষ্টিত করিয়া রাখিয়াছে। আরো কিছুদূর অগ্রসর হইতেই ফার্গুসনের বোধ হইল যেন দূরে দিগ্বলয়ের নিকটে সেই বিশ্ববিশ্রুত হ্রদের উজ্জল বারিরাশি দেখা যাইতেছে!
    • জুল ভার্ন- বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ- রাজেন্দ্রলাল আচার্য অনূদিত - (পৃ. ৮০-৮৬)
  • কিন্তু এই অৰ্দ্ধেক পথ অতিবাহিত করিয়া, প্রথম চস‍্মাখানি হাতে করিয়া রুমাল দিয়া মুছিতে মুছিতে ঠিক বলা দায় যে, আমি বুড়া হইয়াছি কি না। বুঝি বা হইয়াছি। বুঝি হই নাই। মনে মনে ভরসা আছে, একটু চক্ষুর দোষ হৌক, দুই এক গাছা চুল পাকুক, আজিও প্রাচীন হই নাই। কই, কিছু ত প্রাচীন হয় নাই? এই চিরপ্রাচীন ভুবনমণ্ডল ত আজিও নবীন; আমার প্রিয় কোকিলের স্বর প্রাচীন হয় নাই; আমার সৌন্দর্য্য-মাখা, হীরাবসান, গঙ্গার ক্ষুদ্র তরঙ্গভঙ্গ ত প্রাচীন হয় নাই; প্রভাতের বায়ু, বকুল কামিনীর গন্ধ, বৃক্ষের শ্যামলতা, এবং নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা, কেহ ত প্রাচীন হয় নাই— তেমনই সুন্দর আছে। আমি কেবল প্রাচীন হইলাম? আমি এ কথায় বিশ্বাস করিব না। পৃথি— বীতে উচ্চ হাসি ত আজিও আছে, কেবল আমার হাসির দিন গেল? পৃথিবীতে উৎসাহ, ক্রীড়া, রঙ্গ, আজিও তেমনি অপর্য্যাপ্ত, কেবল আমারই পক্ষে নাই? জগৎ আলোকময়, কেবল আমারই রাত্রি আসিতেছে? সলমন কোম্পানির দোকানে বজ্রাঘাত হউক, আমি এ চসমা ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আমি বুড়া বয়স স্বীকার করিব না।
  • এক দিন নোয়াগেস যে প্রাসাদতলে
    গায়িকার গীত সুধাপানে, নেত্রজলে,

    ভাসিয়া আবদ্ধচিত, প্রেমের বন্ধনে!
    রসাতলে সে ভবন দেখে সর্ব্বজনে!
    নোয়াগেস্‌ প্রণয়িনী ঘেসেটী বেগম,
    একদা রহিত যথা পারিজাত সম,
    কি যাতনা আজি তথা শৃগাল বানর!
    অনায়াসে ক্রীড়া করে বাঁধি নিজঘর!
    • ঐতিহাসিক চিত্র, ১৩১২, আষাঢ়-শ্রাবণ , সম্পাদনা করেছেন নিখিলনাথ রায় এবং এই অংশ (মতিঝিল) লিখেছেন শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • রাজা ব্রাহ্মণের স্থানে এই কথা শুনিয়া তাহা কাহারও সাক্ষাতে প্রকাশ না করিয়া, ব্রাহ্মণকে কিছু অর্থ প্রদানপূর্বক বিদায় করিলেন। পরে তাল বেতালকে স্মরণ করিলেন। তাহারা উপস্থিত হইয়া কহিল মহারাজ কিঙ্করেরা উপস্থিত, আমাদিগের প্রতি কি আজ্ঞা হয়। স্বর্গ পাতাল বা সমুদ্র-পার যেখানে ইচ্ছা হয়, আজ্ঞা করুন, আমরা সেই খানে আপনাকে লইয়া যাইতেছি। রাজা ঈষদ, হাস্য পূর্বক বলিলেন এক কৌতুক দর্শনে উত্তর খণ্ডে গমন করিতে হইবে, তথায় তােমরা আমাকে লইয়া চল। ইহা বলিয়া রাজা তাহাদিগের স্কন্ধে আরােহণ করিলেন। তাল বেতাল তাহাকে স্কন্ধে লইয়া শূন্য দিয়া মুহু ত্তেকের মধ্যে সেই স্থানে উপস্থিত হইল। দেখিলেন সরােবরের চারি দিকে চারি পাষাণময় ঘাট আছে, হংস ও বক প্রভৃতি নানা জাতীয় জলচর পক্ষিগণ আনন্দে ক্রীড়া করিতেছে, ডাহুক চকোর প্রভৃতি অন্যান্য বিহঙ্গমেরা নানাবিধ মধুর ধ্বনি করিতেছে, প্রফুল্ল কমল দল মধ্যে ভ্রমরগণ ভ্রমণ করিতেছে, কোকিলগণ কুহু কুহু ধ্বনি করিতেছে, আর আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মধুরালাপী পক্ষিগণ নানা প্রকার গান করিতেছে, গন্ধবহ কুসুম সমূহের সুগন্ধ বহন পূর্ব্বক চারি দিক আমােদিত করিয়াছে, সরােবর-তীরস্থ তরুগণ ফলভরে অবনত হইয়া আছে, এবং নানা জাতীয় পক্ষী তাহাতে বসিয়া কৌতুকে আহার বিহার করিতেছে।
    • লাল্লু লাল- বত্রিশ সিংহাসন, নীলমণি বসাক অনূদিত, (পৃ. ৫৫-৬০)
  • গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “তবে যুদ্ধ অনিবার্য্য। যেখানে বাধা সেই খানেই সমর, এ ত বিষম ব্যাপার! অলীদ চতুরতা করিয়া এমন কোন স্থানে যদি শিবির নির্ম্মাণ করিয়া থাকে যে, সম্মুখে সুপ্রশস্ত সমতল ক্ষেত্র নাই, শিবির নির্ম্মাণের উপযুক্ত স্থান নাই, জলের সুযোগ নাই, সৈনিক দিগের দৈনিক ক্রীড়া করিবার উপযুক্ত প্রাঙ্গন নাই, তবে ত মহাবিপদ! তাই অগ্রেই গুপ্তচর, চিত্রকর এবং কুঠারধারিগণকে ছদ্মবেশে প্রেরণ করিতে হইতেছে।”
    • মীর মশাররফ হোসেন - বিষাদ-সিন্ধু (পৃ. ২৮৮-২৯১)
  • দুর্দ্ধৰ্ষ মুসোলিনীর সহিত আবিসিনীয় সমরের অনেক পূর্ব্বে ১৯৩০ খৃষ্টাব্দে মহারাজের সাক্ষাৎ হয়। মুসোলিনী তাঁহার সহিত ইংরাজিতে আলাপ করেন। ইতালীয় বিমান সম্ভার যাহাতে মহারাজের দেখিবার সুযোগ ঘটে তজ্জন্য মুসোলিনী তদীয় জেনারেল বেল্‌বোকে (Balbo) বিমান ক্রীড়া প্রদর্শনের ব্যবস্থা করিতে আদেশ দেন। ইহাতে মহারাজের পরিদর্শনের বিশেষ সুবিধা হইয়াছিল। এতদুদ্দেশ্যে মুসোলিনী তাঁহার স্বীয় বিমান মহারাজের ব্যবহারের জন্য রাখিয়া দিয়াছিলেন। রোমের শিক্ষাকেন্দ্র প্রদর্শনের ব্যবস্থাও তিনি করিয়াছিলেন। মহারাজ যখন রোম দর্শনান্তে মিলান সহরে ভ্রমণরত তখন মুসোলিনীর ভ্রাতা অল্ডার মুসোলিনী (Popolo de Italia কাগজের সম্পাদক) মহারাজের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া ফ্যাসিষ্ট নেতার আবক্ষ মর্ম্মর মূর্ত্তি মহারাজকে উপহার প্রদান করেন। ইহাতে মহারাজের কথা যেমন দৈনিক কাগজে বাহির হইতে লাগিল, ফোটো প্রার্থী দলও তেমনি বাড়িয়া গেল। সেই সময়ই মহারাজ ফন হিণ্ডেনবার্গের সহিত পরিচিত হন, জার্ম্মাণ প্রেসিডেণ্ট মহারাজকে তাঁহার অটোগ্রাফ সহ চিত্র উপহার দেন। অলিম্পিক ক্রীড়া দর্শনকালে পরবর্ত্তী সময়ে ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে মহারাজ হের হিটলারের সহিত অর্দ্ধঘণ্টার ঊর্দ্ধকাল আলাপের সৌভাগ্য লাভ করেন, ফুরারেরও চিত্র অটোগ্রাফ্‌সহ জার্ম্মান কন্সাল কর্ত্তৃক মহারাজের নিকট উপহার স্বরূপ প্রেরিত হয়। মহারাজের সহিত আলাপকালে ফুরার ভারতীয় খেলোয়াড়ের সাফল্য কামনা করেন।
    • ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী- রাজমালা (পৃ. ২৬০-২৭৮)
  • একদিন অপরাহ্ণসময়ে, তাঁহাদের পুত্রটি ক্রীড়া করিতেছে, এবং তাঁহারা উভয়ে প্রফুল্লচিত্তে ও উৎসুকনয়নে, তাহার ক্রীড়ানিরীক্ষণ করিতেছেন, এমন সময়ে, সহসা এক ব্যক্তি তাঁহাদের সম্মুখবর্ত্তী হইল, এবং অনুচ্চস্বরে তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিল, অদ্য দুই দিবস হইল এরিয়ানার মৃত্যু হইয়াছে, মৃত্যুকালে তিনি বিনিযোগপত্র দ্বারা, আপন সর্বস্ব এক আত্মীয় ব্যক্তিকে দান করিয়া গিয়াছেন। ঐ আত্মীয় ব্যক্তি এক্ষণে উপস্থিত নাই, কার্য্যোপলক্ষে দূরদেশে আছেন। কিঞ্চিৎ ব্যয় করিলে, ঐ বিনিযোগপত্র অনায়াসে আপনাদের হস্তগত ও অগ্নিসাৎ হইতে পারে, তাহা হইলে আপনারা তাঁহার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হইতে পারেন, কারণ, ঐ বিনিযোগপত্রের অসদ্ভাব ঘটিলে, আপনারাই সর্ব্বাগ্রে অধিকারী।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - আখ্যানমঞ্জরী (পৃ. ৭৮-৮৫)
  • দীঘির ঘাটে-বটতলায় আমার পাল্কী নামাইল। আমি ক্ষণেক পরে, অনুভবে বুঝিলাম যে লোক জন তফাতে গিয়াছে। আমি তখন সাহস পাইয়। অল্প দ্বার খুলিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম, বাহকেরা সকলে দোকানের সম্মুখে, এক বটবৃক্ষ তলে বসিয়া জলপান খাইতেছে। সে স্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা। দেখিলাম যে, সম্মুখে অতি নিবিড় মেঘের ন্যায়, বিশাল দীর্ঘিকা বিস্তৃত রহিয়াছে, চারিপার্শ্বে পর্ব্বতশ্রেণীবৎ উচ্চ অথচ সুকোমল শ্যামল তৃণাবরণ-শোভিত “পাহাড়;”— পাহাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীর্ঘ বৃক্ষশ্রেণী; পাহাড়ে অনেক গোবৎস চরিতেছে—জলের উপরে জলচর পক্ষিগণ ক্রীড়া করিতেছে—মৃদু পবনের মৃদু ২ তরঙ্গ হিল্লোলে স্ফটিক ভঙ্গ হইতেছে—ক্ষুদ্রোর্ম্মিপ্রতিঘাতে কদাচিৎ জলজ পুষ্পপত্র এবং শৈবাল দুলিতেছে। দেখিতে পাইলাম যে আমার দ্বারবানেরা জলে নামিয়া স্নান করিতেছে—তাহাদের অঙ্গচালনে তাড়িত হইয়া শ্যামসলিলে শ্বেত মুক্তাহার বিক্ষিপ্ত হইতেছে। দেখিলাম যে বাহকেরা ভিন্ন আমার সঙ্গের লোক সকলেই এক কালে স্নানে নামিরাছে। সঙ্গে দুইজন স্ত্রীলোক—একজন শ্বশুর বাড়ীর, একজন বাপের বাড়ীর, উভয়েই জলে। আমার মনে একটু ভয় হইল—কেহ নিকটে নাই—স্থান মন্দ, ভাল করে নাই। কি করি,আমি কুলবধু মুখ ফুটিয়া কাহাকে ডাকিতে পারিলাম না।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় - ইন্দিরা (পৃ. ১-৯)
  • শিল্পের ইতিহাসের আদি কথা শিল্পক্রিয়ার দ্বারা মানুষ শিল্পের নানা দিকের নানা সন্ধান নিয়ে চলেছে ভাঙ্তে‌ গড়তে, মধ্য যুগের কথা নানা শাস্ত্রে নানা কথার সঙ্গে শিল্পের কথাও মানুষ যতটা পারছে লিখে লিখে সংগ্রহ করছে, এবং খুব আধুনিক কথা হচ্ছে যখন রাজাদের সভায় পণ্ডিত এবং কবি ও শিল্পী দুজনেই এসে পড়েছে এবং বিশেষ বিশেষ কলার উন্নতির বা অবনতির সূত্রপাত হচ্ছে লোকমতের গতি বশে। শিল্পীর অভিমতের উপরে এই সময় শাস্ত্রমত লোকমত প্রাধান্য লাভ করে' এই ভাল এই মন্দ এমনি একটা করে’ গণ্ডি টেনে দিলে এবং শিল্পের ক্রমবিকাশ বিচিত্র গতি বন্ধ হ’য়ে জড়তা উপস্থিত হ’ল শিল্পের ধারায়। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ সব দেশের সব শিল্পের মধ্যে কিছু কিছু বর্তমান আছে। যে মূর্তি গড়বে সে একই ছাঁদে একই প্রক্রিয়ায় মূর্তি গড়ে চল্লো। পুরুষানুক্রমে একই জিনিষে বুদ্ধিবৃত্তি চালিত হ’তে হ'তে শিল্পীরা এ সময়ে একটা অত্যাশ্চর্য দক্ষতা পেলে এক এক কলায়। কিন্তু এ ভাবে তো জগৎ চলে না। স্থিরতা যেখানে নেই, যাদের জন্য বহুকাল ধরে' শিল্পী হাত পাকালে কাযে তারা কোথায় চলে' গেল, তার জায়গায় হঠাৎ-নবাব শাস্ত্রঘাঁটা রসিক এবং পুঁথি ধরে' ব্যবস্থা এল দেশে। তখন কবিতা গণেশবন্দনা এবং রাজ-প্রশস্তি এই দুই জাঁতিকলের মধ্যে পেষা হয়ে শুকনো ছাতু হয়ে গেল এমন যে মানুষের কাজে এল না—সরস্বতী পোকার পেট ভরাবার কাজেই লাগলো। ছবি মূর্তি এরাও রইলো নোড়ানুড়ি চুন সুরকীর কায করে' দেবায়তন রাজপ্রাসাদ এমনি সব বড় বড় কারাগারের প্রকাণ্ড প্রাকার খাড়া করে' তুলতে এবং রসের শতমুখী ধারার ক্রিয়া ও ক্রীড়ার মুখে ভীষণ শক্ত বাঁধ বাঁধতে। এই নিরেট বাঁধ যদি কোনদিন ভাঙলো তো রস আবার ছুটলো, নয়ত নিষ্ক্রিয় শিল্পকুণ্ডের জলের মতো কিছুদিন থাকলো এবং অবশেষে একদিন শুকিয়ে গেল, —কেবল বাঁধগুলো পড়ে' রইলো এক ফোঁটা রসের শোচনীয় অবসানের সাক্ষী দিয়ে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর - বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী (পৃ. ১৫৮-১৭২)
  • রাজপ্রতিনিধি স্বদলে সমাগত হইয়া রঙ্গাঙ্গনের শিরোভাগে দণ্ডায়মান হইলেন। তখন রহস্য আরম্ভ হইল। প্রথমে মল্লদিগের যুদ্ধ, পরে খড়্গী, শূলী, ধানুষ্কী, সশস্ত্র অশ্বারোহীর যুদ্ধ, হইতে লাগিল। পরে মত্ত সেনামাতঙ্গ সকল মাহুত সহিত আনীত হইয়া নানাবিধ ক্রীড়াকৌশল দেখাইতে লাগিল। দর্শকেরা মধ্যে মধ্যে একতানমনে ক্রীড়া সন্দর্শন করিতে লাগিলেন, মধ্যে মধ্যে আপন আপন মন্তব্য সকল পরস্পরের নিকট ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। এক স্থানে কয়েকটী বর্ষীয়ান্ মুসলমান একত্র হইয়া বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিতেছিলেন।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]