বিষয়বস্তুতে চলুন

গ্রহ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

গ্রহ হলো এমন একটি মহাকাশীয় বস্তু যা একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে এবং নিজের মাধ্যাকর্ষণে প্রায় গোলাকার আকার ধারণ করে। সৌরজগতের যেসব জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে, তাকে গ্রহ বলে। সাধারণত গ্রহরা কোন না কোন তারা বা নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তবে এর ব্যতিক্রম থাকার সম্ভাবনাও অনেকে ব্যক্ত করেছেন। প্রাচীনকালের অনেক সংস্কৃতিতেই গ্রহদেরকে স্বর্গীয় বা দেবতাদের দূত ভাবা হতো। বর্তমানে আমরা জানি এরা কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। সৌরজগতে মোট ৮টি গ্রহ আছে। সেগুলি হলো:বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • প্রধান গ্রহের সংখ্যা আটটি; চারিটি বড়ো, আর চারিটি ছোটো। আমাদের পৃথিবী কনিষ্ঠ গ্রহের মধ্যে গণ্য। সূর্যের নিকটতম গ্রহের নাম বুধ, তাহার পর শুক্র, তাহার পরে পৃথিবী, তাহার পরে মঙ্গল—এই চারিটিই ছোটো গ্রহ। ইহার মধ্যে পৃথিবীই সর্বাপেক্ষা বড়ো; শুক্র প্রায় পৃথিবীর সমান, মঙ্গল পৃথিবীর আট ভাগের এক ভাগ এবং বুধ পৃথিবী ও চন্দ্রের মাঝামাঝি। মঙ্গল সকল সময় সূর্যের কাছে কাছেই ফিরে সুতরাং তাহার সাক্ষাৎ পাওয়া সচরাচর ঘটে না। শুক্র অথবা শুকতারা যখন সর্যোদয়ের পর্বে পৰ্বদিকে অথবা সর্যাস্তের পর পশ্চিমদিকে ঝলমল করিতে থাকে তখন তাহার উজ্জ্বল জ্যোতির কাছে সকল গ্রহ নক্ষতই ম্লান বোধ হয়। শুধু চোখে মঙ্গল গ্রহকে একটা লালচে রঙের তারার মতো বোধ হয়। এই গ্রহের সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য কথা জানিবার আছে।
    • সুকুমার রায়, সূর্যের রাজ্য, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • আমাদের সূর্যের চারিধারে যেমন পৃথিবী, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শনি, প্রভৃতি গ্রহ ঘোরে, উহাদের চারিধারেও হয়তো তেমনি অনেক গ্রহ ঘোরে, কিন্তু এত দূরে থাকিয়া সে-সকল গ্রহকে দেখিবার আমাদের কোনো উপায় নাই। যাহা হউক, এইটুকু দেখা গিয়াছে যে, ঐ-সকল সূর্যের কোনো কোনোটার চারিধারে আর-একটা সূর্য ঘুরিতেছে। এমন প্রমাণও পাওয়া গিয়াছে যে, ঐ-সকল তারার কোনো কোনোটার এমন এক-একটি সঙ্গী আছে যে, তাহাদের নিজেদের আলো নাই। নিজেদের আলো নাই বলিয়া তাহারা আমাদিগকে দেখা দিতে পারিতেছে না, কিন্তু অন্য উপায়ে আমরা জানিতে পারিয়াছি যে, তাহারা আছে। উহাদের নিজেদের আলো নাই সুতরাং উহারা সূর্য নহে, গ্রহ, অর্থাৎ, আমাদের পৃথিবী যাহা, তাহাই। আমাদের এই ছোটখাটো সূর্যের সঙ্গে এতগুলি গ্রহ, ঐ-সকল বড়-বড় সূর্যের সঙ্গে গ্রহ নাই? এটা একটা কথাই নহে!
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, আকাশের কথা: ১, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬৩
  • তব নাম লয়ে চন্দ্র তারা অসীম শূন্যে ধাইছে—
    রবি হতে গ্রহে ঝরিছে প্রেম, গ্রহ হতে গ্রহে ছাইছে।
    অসীম আকাশ নীলশতদল তোমার কিরণে সদা ঢলঢল,
    তোমার অমৃতসাগর-মাঝারে ভাসিছে অবিরামে॥
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গীতবিতান- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৪০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৮
  • আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণ এখন যে কক্ষায় সূর্য্য প্রদক্ষিণ করিতেছে, তাহা হইতে কালক্রমে উহাদিগকে অত্যল্প বিচলিত হইতেই হইবে এবং বিচলিত হইলে নিশ্চয়ই ধ্বংসমুখে পড়িতে হইবে। কাজেই দেখা যাইতেছে, গ্রহ-উপগ্রহের মৃত্যুবীজ তাহাদের সঙ্গেই আছে। কিন্তু এই অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুভয়ে মানবজাতির বিচলিত হইবার কারণ নাই। আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণের মৃত্যুর আরও শত শত বীজ প্রোথিত হইয়াছে এবং সেগুলি অঙ্কুরিত হইতেও আরম্ভ করিয়াছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর অনেক পূর্ব্বে এগুলির কুফলেই সৃষ্টিলোপের সম্ভাবনা আছে।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহদিগের কক্ষা, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬০
  • সৌরজগতে আটটি "গ্রহ" রয়েছে। বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। এছাড়াও"বামন গ্রহ" নামে একটি নতুন স্বতন্ত্র শ্রেণী বিদ্যমান। "গ্রহ" এবং "বামন গ্রহ" দুটি পৃথক শ্রেণীর বস্তু। "বামন গ্রহ" বিভাগের প্রথম সদস্যরা হলেন সেরেস , প্লুটো এবং ২০০৩ ইউবি৩১৩ (অস্থায়ী নাম)।
    • ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) প্রদত্ত সংজ্ঞা : আইএইউ০৬০৩— নিউজ রিলিজ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ২০০৬
  • জড় জগতের নিয়ম আকর্ষণ। বৃহৎ গ্রহ, উপগ্রহকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বঁধু এসো।” সৌর পিণ্ড বৃহৎ গ্রহকে ডাকিতেছে, — “এসো এসো বঁধু এসো।” জগৎ জগদন্তরকে ডাকিতেছে; “এসো এসো বঁধু এসো।” পরমাণু পরমাণুকে অবিরত ডাকিতেছে,—“এসো এসো বঁধু এসো।” জড়পিণ্ড সকল, গ্রহ উপগ্রহ ধূমকেতু—সকলেই এই মোহমন্ত্রে বাঁধা পড়িয়া ঘুরিতেছে। প্রকৃতি পুরুষকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বঁধু এসো।” জগতের এই গম্ভীর অবিশ্রান্তধ্বনি—“এসো এসে। বঁধু এসো।” কমলাকান্তের বঁধু কি আসিবে?
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, একটি গীত, কমলাকান্তের দপ্তর, কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৭
  • নারাণ মাস্টার বলচেন—ওই বাঁশঝাড়ের মাথার ওপরে— ঐ দেখো।
    —বেশ বড় নক্ষত্র—
    —ওটিকে নক্ষত্র বলো না। ওটি গ্রহ। সৌর জগতের একটা গ্রহ। অন্য অন্য গ্রহগুলির নাম করো তো? তোরা দেখেচিস্ শুক্র গ্রহ?
    —ঐ বাঁশ ঝাড়ের মাথায়?
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুসন্ধান - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- বিভূতি প্রকাশন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬-৭
  • সৌর রাজ্যস্থিত গ্রহ উপগ্রহের সংখ্যা দুই শতেরও অধিক বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে। গ্রহগণের মধ্যে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেন্‌স্ ও নেপচুন এই আটটি প্রধান। এতদ‍্ভিন্ন আরও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহ আছে। বুধ সর্ব্বাপেক্ষা সূর্য্যের নিকটতম গ্রহ; রবিমণ্ডল হইতে তিন কোটি তিপান্ন লক্ষ নব্বই হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। বুধ ৮৮ দিনে একবার সূর্য্যমণ্ডল প্রদক্ষিণ করিয়া থাকে। পৃথিবী এবং মঙ্গলের পূর্ণাবর্ত্তন ২৪ ঘণ্টায় সম্পাদিত হয়। কিন্তু বুধ গ্রহের পূর্ণাবর্ত্তন কাল ৮৮ দিন বলিয়া নির্ণীত হইয়াছে।
    • কুমুদিনী বসু, সূর্য্য-মণ্ডল, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্‌, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭
  • পৃথিবী স্বয়ং অত্যন্ত প্রখর বেগবিশিষ্টা এবং অনন্তকাল আকাশমার্গে ধাবমানা। অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ প্রভৃতি যাহা সৌর জগতের অন্তর্গত তাহাও পৃথিবীর মত অবস্থাপন্ন সন্দেহ নাই। সেই সকল গ্রহ উপগ্রহে যে সকল পার্থ আছে, তাহাও পার্থিব পদার্থের ন্যায় সর্ব্বদা বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিক গতিবিশিষ্ট। জ্যোতির্ব্বিদ‍্গণের দৌরবীক্ষণিক অনুসন্ধানে সে কথার অনেক প্রমান সংগৃহীত হইয়াছে।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিজ্ঞানরহস্য - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
  • যে দিক্ ধরিয়া এবং যে গতিতে উল্কাপিণ্ডগুলি সৌরজগতে প্রবেশ করে, তাহাদের প্রাত্যকের নির্ব্বাণলাভের কাল সেই দিক্ ও গতির উপরেই নির্ভর করে। সুতরাং দেখা যাইতেছে, যেটি খুব অনুকূল গতি ও দিক্ লইয়া বৃহস্পতি ও সূর্য্যের অধিকারে প্রবেশ করিবে, তাহার জীবনও দীর্ঘ হইবে। সহস্র সহস্র উল্কাপিণ্ড বা ক্ষুদ্র গ্রহের মধ্যে অন্ততঃ দু’চারিটির এইপ্রকার অনুকূল পথে অনুকূল গতি লইয়া প্রবেশ করা একটুও আশ্চর্য্য নয়। কাজেই সূর্য্য বা বৃহস্পতির ক্রোড়ে আশ্রয় গ্রহণ না করিয়া আমাদের সুপরিচিত গ্রহদের ন্যায় ইহাদের নিরাপদে পরিভ্রমণ করাই স্বাভাবিক। জর্জ্জ ডারুইন্‌ বলিতে চাহিতেছেন, সৌরজগতে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল প্রভৃতি যে-সকল গ্রহ নির্দ্দিষ্ট কক্ষায় পরিভ্রমণ করিতেছে, তাহারা সকলেই অনুকূল গতি ও দিক্ লইয়া সৌর অধিকারে প্রবেশ করিয়াছিল, এই কারণেই তাহাদের কক্ষা স্থির রহিয়াছে; যাহারা প্রতিকূল অবস্থায় আসিয়াছিল, তাহারা সূর্য্য বা অপর কোন প্রতাপশালী গ্রহের টানে ঐ সকল জ্যোতিষ্কে পড়িয়া নিজেদের অস্তিত্ব লোপ করিয়াছে; ইহারা এখন সূর্য্য বা অপর কোন বৃহৎ গ্রহের অঙ্গীভূত।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহদিগের কক্ষা, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫৮
  • সূর্যের টানে মঙ্গলগ্রহের ঠিক যে-পথ বেয়ে চলা উচিত ছিল, তার থেকে ওর চাল একটু তফাত। পৃথিবীর টানে ওর এই দশা। ওজন অনুসারে টানের জোরে পৃথিবী মঙ্গলগ্রহকে কতখানি টলিয়েছে সেইটে হিসেব করে পৃথিবীর ওজন ঠিক হয়েছে। এইসূত্রে সূর্যের দূরত্বও ধরা পড়ল। কেননা মঙ্গলকে সূর্যও টানছে পৃথিবীও টানছে, সূর্য কতটা পরিমাণে দূরে থাকলে দুই টানে কাটাকাটি হয়ে মঙ্গলের এইটুকু বিচলিত হওয়া সম্ভব সেটা গণনা করে বের করা যেতে পারে। মঙ্গলগ্রহ বিশেষ বড়ো গ্রহ নয়, তার ওজনও অপেক্ষাকৃত কম সুতরাং সেই অনুসারে টানের জোর বেশি না হওয়াতে তার হাওয়া খোওয়াবার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সূর্য থেকে যথেষ্ট দূরে আছে বলে এতটা তাপ পায় না যাতে হাওয়ার অণু গরমে উধাও হয়ে চলে যেতে পারে। মঙ্গলগ্রহের হাওয়ায় অক্সিজেন সন্ধানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সামান্য কিছু থাকতে পারে। মঙ্গলগ্রহের লাল রঙে অনুমান হয় সেখানকার পাথরগুলো অক্সিজেনের সংযোগে সম্পূর্ণ মরচে-পড়া হয়ে গেছে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্রহলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৯-৯০
  • গ্রহ ছাড়া আকাশে যত ছোট-বড় আলোকের বিন্দু দেখা যায়, তাহারা সকলেই নক্ষত্র বা তারা। ইহাদের সঙ্গে আমাদের সূর্য্যের কোনো সম্বন্ধ নাই। এরা নিজেরাই একটা একটা প্রকাণ্ড সূর্য্য এবং তাহাদের রাজ্য সূর্য্যের রাজ্য হইতে অনেক দূরে। আমাদের সূর্য্য আট্‌টি গ্রহকে আপনার চারিদিকে ঘুরাইয়া লইতেছে। যে-সকল মহাসূর্য্যকে আমরা অতি দূরে ছোট নক্ষত্রের আকারে মিটি-মিটি জ্বলিতে দেখিতেছি, তাহাদের প্রত্যেকটি হয় ত অনেক গ্রহকে এই রকমেই বাঁধিয়া ঘুরাইতেছে। কিন্তু তাহা দেখিবার বা জানিবার উপায় নাই। ইহারা এতদূরে আছে যে, খুব বড় দুরবীণ দিয়াও তাহাদের সন্ধান করা যায় না।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহ-উপগ্রহ, গ্রহ-নক্ষত্র- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
  • ব্রাহে কেপলারের বিশ্বতত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। ব্রাহের আকাশ সম্পর্কে তত্ত্ব সংগ্রহ ছিল অসামান্য ও বিপুল। কেপলার ব্রাহের সংগৃহীত তত্ত্বগুলোকে নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। গ্রহরা আকাশে বৃত্তাকারে ঘুরছে, ধরে নিয়ে কেপলার অঙ্ক কষতে গিয়ে দেখলেন ব্রাহের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে তাঁর অঙ্ক মিলছে না। কোপারনিকাসের তত্ত্ব নিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করলেন। তাতেও মিলল না। এমনি করে কেটে গেল আটটা বছর। কেপলার এক সময় গ্রহদের কক্ষপথকে বৃত্ত না ধরে উপবৃত্ত কল্পনা করে অঙ্ক করতে বসলেন। কেপলারের দীর্ঘ সাধনা সার্থক হল, অঙ্ক মিলল। কেপলার গ্রহদের গতি গাণিতিক সূত্রে প্রমাণ করলেন। তিনি প্রমাণ করলেন পৃথিবীসহ সব গ্রহগুলো উপবৃত্তাকারে ঘুরছে। ফলে গ্রহগুলো বিভিন্ন সময়ে সূর্যের থেকে বিভিন্ন দূরত্বে থাকে। গ্রহগুলো যতই সূর্যের কাছাকাছি হয়, ততই তাদের গতিবেগ বাড়ে। কেপলারের এই মতামত সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বকে পরিবর্তিকালে সর্বজনগ্রাহ্য করায় প্রবল ভূমিকা নিয়েছিল।
  • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৮-১০৯
  • যাত্রায় যেমন সং, আকাশে তেমনি ধূমকেতু। আকাশের গ্রহ নক্ষত্রগুলির সকলেরই এক একটা নিয়মিত কাজ আছে; কিন্তু ধূমকেতুগুলিকে দেখিলে হঠাৎ মনে হইতে পারে, যে ইহাদের কোন বাঁধা কাজ নাই। কোথায় যায় কোথায় থাকে তাহার ঠিক নাই, খালি মাঝে মাঝে এক একবার লেজ পরিয়া আসিয়া, দিন কয়েক তামাসা দেখাইয়া যায়।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শান্তা শ্রীমানি সম্পাদিত, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৯৭-৮৯৮
  • শনিগ্রহের পরের মণ্ডলীতে আছে য়ুরেনস নামক এক নতুন-খবর-পাওয়া গ্রহ।
    এ গ্রহ সম্বন্ধে বিশেষ বিবরণ কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এর আয়তন পৃথিবীর ৬৪ গুণ বেশি। সূর্য থেকে ১৭৮ কোটি ২৮ লক্ষ মাইল দূর থেকে সেকেণ্ডে চার মাইল বেগে ৮৪ বছরে একবার তাকে প্রদক্ষিণ করে। এত বড়ো এর আয়তন কিন্তু খুব দূরে আছে বলে দুরবীন ছাড়া একে দেখা যায় না। যে জিনিসে এ গ্রহ তৈরি তা জলের চেয়ে একটু ঘন, তাই পৃথিবী থেকে বহু গুণ বড়ো হোলেও, এর ওজন পৃথিবীর ১৫ গুণ মাত্র।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্রহলোক, বিশ্বপরিচয়- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০১
  • মহাকাশে পৃথিবী, চন্দ্র প্রভৃতি যে-সব গ্রহ-উপগ্রহ সূর্য্যকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে তাহাদের নিজের আলো নাই। কাজেই সূর্য্যের আলো তাহাদের এক পিঠে পড়িলে, উল্টা দিকে তাহাদের এক একটা প্রকাণ্ড ছায়া আকাশে পড়ে। এই ছায়াকে আমরা অবশ্য সর্ব্বদা দেখিতে পাই না, কারণ ছায়া যতই বড় হউক, কোনো জিনিসের উপরে না পড়িলে তাহা দেখা যায় না। কাজেই সূর্য্যের আলোতে পৃথিবীর ছায়া বা চাঁদের ছায়া সর্ব্বদা আকাশে থাকিলেও তাহা আমাদের নজরে পড়ে না। যখন তাহা আকাশের কোনো বড় জিনিসের উপরে পড়ে তখনই আমরা তাহা দেখিতে পাই।
    • জগদানন্দ রায়, চাঁদের গ্রহণ, গ্রহ-নক্ষত্র- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩
  • য়ুরেনস আবিষ্কারের কিছুকাল পরেই পণ্ডিতেরা য়ুরেনসের বেহিসাবি চলন দেখে স্থির করলেন, এ গ্রহ পথের নিয়ম ভেঙেছে আর একটা কোনো গ্রহের টানে। খুঁজতে খুঁজতে বেরোল সেই গ্রহ। তার নামকরণ হোলে নেপচুন।
    সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২৭৯ কোটি ৩৫ লক্ষ মাইল, প্রায় ১৬৪ বছরে এ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর ব্যাস প্রায় ৩৩,০০০ মাইল, য়ুরেনসের চেয়ে কিছু বড়। দুরবীনে শুধু ছোটো একটি সবুজ থালার মতো দেখায়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্রহলোক, বিশ্বপরিচয়- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০১-১০২
  • জ্যোতিশাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় হলো মানুষের ভাগ্যের ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব। এই শাস্ত্রে গ্রহ-নক্ষত্রের কথা আছে, অংকও আছে। কিন্তু গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে কিছু অংক-টঙ্কের গোঁজামিল দিয়ে দিলেই তা বিজ্ঞান হয়ে যায় না। তবে তো অংকের গোঁজামিল দিয়ে কোনও ভূত গবেষক জাদুকর হয়তো একটা গোটা ভূত-শাস্ত্রই লিখে ফেলবেন। মৃত্যুর মুহূর্তে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করে ভূতের ভবিষ্যৎও বলে দিতে পারবে।
    • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৮
  • বৃহৎ অ্যাস্টারয়েড নিকটে আসায় মঙ্গল গ্রহ আর চন্দ্রের কক্ষ একটু বেঁকে গেছে, আমাদের জোয়ার ভাটায় সময়ও কিছু বদলেছে।
    • রাজশেখর বসু, গগন চটি, আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প-রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯১
  • আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণ এখন যে কক্ষায় সূর্য্য প্রদক্ষিণ করিতেছে, তাহা হইতে কালক্রমে উহাদিগকে অত্যল্প বিচলিত হইতেই হইবে এবং বিচলিত হইলে নিশ্চয়ই ধ্বংসমুখে পড়িতে হইবে। কাজেই দেখা যাইতেছে, গ্রহ-উপগ্রহের মৃত্যুবীজ তাহাদের সঙ্গেই আছে। কিন্তু এই অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুভয়ে মানবজাতির বিচলিত হইবার কারণ নাই। আমাদের গ্রহ-উপগ্রহগণের মৃত্যুর আরও শত শত বীজ প্রোথিত হইয়াছে এবং সেগুলি অঙ্কুরিত হইতেও আরম্ভ করিয়াছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর অনেক পূর্ব্বে এগুলির কুফলেই সৃষ্টিলোপের সম্ভাবনা আছে।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহদিগের কক্ষা, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬০
  • উঠিছে ঢেউ, পড়ে ঢেউ, গণিবে কেবা কত।
    ভাসিছে শত গ্রহ তারা, ডুবিছে শত শত।
    ঢেউয়ের পরে খেলা করে আলোকে আঁধারেতে,
    জলের কোলে লুকোচুরি জীবনে মরণেতে।
    শতেক কোটি গ্রহ তারা যে স্রোতে তৃণপ্রায়,
    সে স্রোতমাঝে অবহেলে ঢালিয়া দিব কায়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্রোত, কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৩
  • বৃহস্পতি অতিকায় গ্রহ, ওর ব্যাস প্রায় নব্বই হাজার মাইল, আয়তনে পৃথিবীর চেয়ে তেরোশোগুণ বড়।
    সূর্য প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির লাগে প্রায় বারো বৎসর। দূরে থাকাতে ওর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে অনেক বড় হয়েছে সন্দেহ নেই কিন্তু ও চলেও যথেষ্ট মন্দ গমনে। পৃথিবী যেখানে উনিশ মাইল চলে এক সেকেণ্ডে, ও চলে আট মাইল মাত্র। কিন্তু ওর স্বাবর্তন অর্থাৎ নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে ঘোরা খুবই দ্রুত বেগে। অত বড়ো বিপুল দেহটাকে পাক খাওয়াতে ওর লাগে দশ ঘণ্টা। আমাদের একদিন একরাত্রি সময়ের মধ্যে ওর দুই দিনরাত্রি শেষ হয়েও উদ্বৃত্ত থাকে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্রহলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬
  • চাঁদের মতোই বুধের ওপরতলে আছে অসংখ্য গর্ত, এটা এক বন্ধুর এলাকা। ৩.৫ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে বুধের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল লাভার প্রবাহ, এবং এটি প্রচণ্ডভাবে আহত হয়েছিলো আন্তগ্রহ বস্তুদের আঘাতে। বুধের ভূভাগ চাঁদের ভূভাগের মত- ধুলোতে আচ্ছন্ন পাহাড় সেখানে আবৃত হয়ে আছে শিলাস্তর। বুধের আকাশ কুষ্ণ; তার দিনের আকাশে জ্বলে পৃথিবীর সূর্যের থেকে ২.৫ গুণ সূর্য; রাতের আকাশে অনেক সময় জ্বলজ্বল করে আমাদের আকাশের যে-কোনো তারার থেকে উজ্জ্বল দুইটি গ্রহ: নীলাভ পৃথিবী আর হলুদাব-শাদা শুক্র। বুধে কোধো বায়ুমণ্ডল নেই; তবে আছে সোডিয়াম অণুর প্রাচুর্য।
  • আমি চাই যে লোকেরা বিশ্বের দিকে তাকাবে এবং এটিতে কী ঘটছে তা দেখবে এবং কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই গ্রহটি সকলেরই খুব প্রিয়। এটি এতই বৈচিত্র্যময় এবং এত প্রেমময়, যার মধ্যে বিশ্বের সমস্ত ধরণের অংশ রয়েছে যা আমি কখনও দেখিনি কিন্তু আমি অধিকাংশ লোকের চেয়ে বেশিই দেখেছি। আপনার চোখ যা দেখছে এবং পৃথিবীতে লোকেরা কীভাবে বাস করে তা সত্যই আশ্চর্যজনক, তবে আমাদের নেতাদের মনোযোগ না দিলে এটি বিনাশ হয়ে যাবে।
  • গ্যালিলিও তাঁহার দূরবীক্ষণ দিয়া দেখিলেন যে চন্দ্রের বড়বড় পর্বত আছেবৃহস্পতি গ্রহের চারিটি চন্দ্র আছে শুক্র গ্রহ্বে হ্রাস বৃদ্ধি হয়; অর্থাৎ আমাদের চন্দ্র যেমন পূর্ণিমার রাত্রিতে ঠিক গোল থাকে, তারপর দিন দিন একটু একটু কমিয়া শেষে অমাবস্যায় একেবারেই মিলাইয়া যায়, তারপর আবার একটু একটু বাড়িয়া আবার পূর্ণিমা ফিরিয়া আসিলে ঠিক গোল চাদটি হয়, শুক্র গ্রহেরও সেইরূপ হইতে দেখা যায়।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, দূরবীন, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৭৪
  • সূর্য নানারকমে আমাদের পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব করে। পৃথিবীর গতির একটা কেমন ঝোঁক আছে, সে যদি কোনোরকম সুবিধা পাইত তবে নিশ্চয়ই ছুটিয়া পথছাড়া হইয়া কোথায় সরিয়া পড়িত। কিন্তু তাহা হইবার জো নাই; সুর্যের আকর্ষণীশক্তি তাহাকে বেশ মজবুত করিয়া টানিয়া রাখিয়াছে এবং পৃথিবীও অগত্যা বাধ্য হইয়া সূর্যের চারিদিকে ঘোরপাক খাইতেছে। পৃথিবী ছাড়া আরো কতকগুলি প্রকাণ্ড গোলক সুর্যের চারিদিকে ঘুরিতেছে। এইগুলিকে গ্রহ বলে। এই গ্রহগুলির মধ্যে আবার কয়েকটির সঙ্গী বা উপগ্রহ আছে। এই উপগ্রহগুলির কাজ গ্রহের চারিদিকে ঘোরা। যেমন পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ। এই-সকল গ্রহ, উপগ্রহ এবং অনেক উল্কা ও ধূমকেতু ইত্যাদি লইয়া সূর্যের রাজ্য।
    • সুকুমার রায়, সূর্যের রাজ্য, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪
  • তোমাদিগকে আগেই বলিয়াছি, এই মহাকাশটি নিতান্ত ছোট জায়গা নয়, তাই তাহাতে যে-সব গ্রহ-নক্ষত্র বাস করে তাহারা খুবই দূরে দূরে থাকে। এই কারণে দু-মাইল দশ মাইল লইয়া ইহাদের দূরত্বের হিসাব করা যায় না, কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ মাইল লইয়া হিসাবে বসিতে হয়। সেই হিসাবে শুক্রকে পৃথিবীর কাছের বস্তুই বলিতে হয়।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহ-নক্ষত্র- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৫
  • প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চার মধ্যে এমন সব উদ্ভট কল্পনা ঢুকে পড়লেও প্রাচীন যুগের মানুষরা জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কিছু কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তারা গ্রহ ও নক্ষত্রে পার্থক্য বুঝতে পেরেছিল। তারামণ্ডল দেখে আগত ঋতু নির্ণয় করতে শিখেছিল। সূর্যের আহ্নিকগতি ধরে রাশিচক্রের আবিষ্কার করেছিল। তখন অবশ্য পৃথিবীকেই বিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করা হত। তারা ভাবত সূর্য, চন্দ্র এবং সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র একদিনের মধ্যে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। ব্যাবিলনীয়রাই সাতদিনে সপ্তাহের প্রচলন করে। আকাশের সাতটি গ্রহ, নক্ষত্র ও উপগ্রহের নামে সাতটি নাম রাখা হয়। তাদের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের থেকে দূরের গ্রহগুলো হলো—চন্দ্র, বুধ, শুক্র, সূর্য, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি। ব্যাবিলনীয়দের এই আবিষ্কারের বহু পরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই সাতটিকেই গ্রহ হিসেবে ধরে নিয়ে চালিয়ে গিয়েছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, হাজির করেছিল নানা জটিল তত্ত্ব। জ্যোতির্বিজ্ঞানের এইসব ধ্যান-ধারণার সূত্র ধরেই ধীরে ধীরে আধুনিক সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব তৈরি হয়।
    • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪
  • ঠিক কোন্ অবস্থায় সৌরজগতে প্রবেশ করিলে নবাগত গ্রহগণ চিরনির্দ্দিষ্ট কক্ষায় ভ্রমণ করিতে পারে, তাহার সূত্র আজও আবিষ্কৃত হয় নাই; তা’ছাড়া কোন্ গ্রহের কক্ষা স্থির এবং কোন্‌টির কক্ষা বিচলনশীল তাহা নির্ণয় করিবার নিয়ম আজও ধরা পড়ে নাই। কিন্তু এই সকল মূল সূত্রগুলি যে শীঘ্রই আবিষ্কৃত হইবে তাহার লক্ষণ দেখা যাইতেছে;—বোড্ সাহেব গ্রহগণের দূরত্বের মধ্যে যে সুশৃঙ্খলা দেখিয়া অবাক্ হইয়াছিলেন, তাহারও কারণ নির্দ্দেশ করা যাইবে বলিয়া আশা হইতেছে।
    • জগদানন্দ রায়, গ্রহদিগের কক্ষা, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬১-২৬২
  • শনিগ্রহের বেষ্টনীর বর্ণচ্ছটা-পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বেষ্টনীর যেসব অংশ গ্রহের কাছাকাছি আছে তাদের চলনবেগ বাইরের দূরবর্তী অংশের চেয়ে অনেক বেশি। বেষ্টনী যদি অখণ্ড চাকার মতো হোত, তাহলে ঘূর্ণিচাকার নিয়মে বেগটা বাইরের দিকে বেশি হোত। কিন্তু শনির বেষ্টনী যদি খণ্ড খণ্ড জিনিস নিয়ে হয় তাহলে তাদের যে দল গ্রহের কাছে, টানের জোরে তারাই ঘুরবে বেশি বেগে। এইসব লক্ষ লক্ষ টুকরো উপগ্রহ ছাড়াও ন’টি বড়ো উপগ্রহ ভিন্ন পথে শনিগ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে।
  • কোন কোন নক্ষত্র যে এ সূর্য্যাপেক্ষা আকারে কিছু ক্ষুদ্রতয়, তাহাও গণনা দ্বারা স্থির হইয়াছে। এইরূপ ছোট বড় মহাভয়ঙ্কর আকারবিশিষ্ট, মহাভয়ঙ্কর তেজোময় কোটি কোটি সূর্য্য অনন্ত আকাশে বিচরণ করিতেছে। যেমন আমাদিগের সৌরজগতের মধ্যবর্ত্তী সূর্য্যকে ঘেরিয়া গ্রহ উপগ্রহাদি বিচরণ করিতেছে, তেমনি ঐ সকল সূর্য্যপার্শ্ব গ্রহ উপগ্রহাদি ভ্রমিতেছে, সন্দেহ নাই। তবে জগতে জগতে কত কোটি কোটি সুর্য্য, কত কোটি কোটি পৃথিবী, তাহা কে ভাবিয়া উঠিতে পারে?
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিজ্ঞানরহস্য - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪-১৫
  • শুক্র গ্রহ সূর্য্য হইতে ছয় কোটি একষট্টি লক্ষ ত্রিশ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করিতেছে। তাহার আবর্ত্তন কাল ২৩ ঘণ্টা ২১ মিনিট মাত্র। শুক্র এবং পৃথিবী এই উভয় গ্রহের মধ্যবর্ত্তী আর কোন গ্রহ নাই। সুতরাং পৃথিবী হইতে শুক্রকে অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখা যায়। সন্ধ্যাকালে যে সন্ধ্যাতারা এবং প্রভাত কালে প্রভাতীতারা আকাশে দর্শন করা যায় তাহা শুক্র গ্রহেরই নামান্তর মাত্র। গ্রহগণের অনেকগুলিই চন্দ্র-সম্পদে সুশোভিত। মঙ্গলগ্রহ এবং পৃথিবীর মধ্যেও অন্য কোন গ্রহের ব্যবধান নাই। পৃথিবী হইতে মঙ্গলগ্রহ চারি কোটি আশি লক্ষ মাইল দূরে অবস্থিত। কখন কখন মঙ্গলগ্রহ ইহা অপেক্ষা নিকটবর্ত্তী হয়। এই গ্রহ দেখিতে অতি সুন্দর, প্রায় দুইবৎসর সময়ে সূর্য্যকে এক বার প্রদক্ষিণ করে। শুক্র এবং মঙ্গল এই উভয় গ্রহই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। এই দুই গ্রহই মনুষ্যের ন্যায় বুদ্ধিমান জীবের আবাসভূমি বলিয়া জ্যোতিষিগণ স্থির করিয়াছেন। শুক্র এবং মঙ্গলের রাজ্যে মেঘ, সমুদ্র, পর্ব্বত বৃক্ষাদির অস্তিত্ব সম্বন্ধে তাঁহারা নাকি নিঃসন্দেহ হইয়াছেন। ঐ দুই গ্রহে যদি সত্যই কোন বুদ্ধিমান জীব বাস করে, তাহারা কি প্রকার, এবং তাহাদের আচার ব্যবহারই বা কি, বিজ্ঞান যদি তাহা জানিতে সমর্থ হন, তবে বড় আনন্দের বিষয় হইবে।
    • কুমুদিনী বসু, সূর্য্য-মণ্ডল, সাহিত্য-চিন্তা - কুমুদিনী বসু, প্রকাশক- শ্রীঅতুলচন্দ্র বসু, ৪নং কোর্টহাউস্ রোড্‌, ঢাকা, প্রকাশস্থান- ঢাকা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭-৫৮
  • আসল কথাটা এই, আমরা অন্তর্জগৎবিহারী। বাহিরের জগৎ আমাদের নিকট প্রবল নহে। আমরা যাহা মনের মধ্যে গড়িয়া তুলি বাহিরের জগৎ তাহার প্রতিবাদ করিলে, সে প্রতিবাদ গ্রাহ্যই করি না। যেমন ধূমকেতুর লঘু পুচ্ছটা কোনো গ্রহের পথে আসিয়া পড়িলে তাহার পুচ্ছেরই ক্ষতি হইতে পারে, কিন্তু গ্রহ অপ্রতিহত ভাবে অনায়াসে চলিয়া যায়, তেমনি বহির্জগতের সহিত আমাদের আন্তর্জগতের রীতিমতো সংঘাত কোনো কালে হয় না— হইলে বহির্জগৎটাই হঠিয়া যায়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌন্দর্য সম্বন্ধে সন্তোষ, পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৯
  • জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র এক নয়। জ্যোতির্বিদ্যার বিষয়, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি নিরূপণ করা। আর জ্যোতিষশাস্ত্রের বিষয় হল মানবদেহে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব নিরূপণ করা। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। বহু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বর্তমানে জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠিত। জ্যোতিষশাস্ত্রকে কিন্তু বিজ্ঞান স্বীকার করে না।
  • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭৪

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]