বিষয়বস্তুতে চলুন

টিক্কা খান

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

টিক্কা খান (উর্দু: ٹکا خان) (জন্ম ফেব্রুয়ারি ১০,১৯১৫ - মৃত্যু মার্চ ২৮, ২০০২) মার্চ ১৯৭২ থেকে মার্চ ১৯৭৬ পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন সার্চলাইট চলার সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন। টিক্কা খান ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক একাডেমি, দেহরাদুন থেকে ১৯৩৫ সালে কমিশন লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা ও ভারতের বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধে সক্রিয় হন। এ সময় দুই বছরেরও অধিক সময় টিক্কা খান যুদ্ধবন্দী থাকার পর পলায়নে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টিক্কা খান দেরাদুনে সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত বিভাগের সময় মেজর পদে টিক্কা খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • ১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিই এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।
    • মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা, যিনি অপারেশন সার্চলাইটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। "আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি" নামক আত্মজীবনীতে। [১][২]
  • টিক্কা খান একজন সৈনিক ছিলেন একজন সৈনিকের কাজ করতেন। তিনি সুনির্দিষ্ট নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তান যান এবং সুনির্দিষ্ট আদেশে ফিরে আসেন। তাকে যা করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল তা তিনি করেছিলেন, যদিও তিনি সর্বদা একমত ছিলেন না, এবং আমি তাকে বেছে নিয়েছি কারণ আমি জানি সে একই শৃঙ্খলার সাথে আমার আদেশগুলি অনুসরণ করবে। এবং তিনি রাজনীতিতে নাক আটকানোর চেষ্টা করবেন না। আমি পুরো সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে পারব না, এবং যাইহোক ঢাকায় ঘটনার জন্য তার খারাপ খ্যাতি অতিরঞ্জিত। এই ঘটনার জন্য প্রকৃতপক্ষে একজনই দায়ী- ইয়াহিয়া খান। তিনি এবং তার উপদেষ্টারা উভয়েই ক্ষমতা এবং দুর্নীতি নিয়ে এতটাই মত্ত ছিলেন যে তারা সেনাবাহিনীর সম্মানের কথাও ভুলে গিয়েছিল। তারা সুন্দর [[কার ইয়াহিয়া খান দেশের সরকারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না, তিনি নিজের স্বার্থে ক্ষমতায় আগ্রহী ছিলেন, অন্য কিছু নয়। আপনি একজন নেতা সম্পর্কে কী বলতে পারেন যিনি ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে মদ্যপান শুরু করেন এবং বিছানায় না যাওয়া পর্যন্ত থামেন না? তার সাথে মোকাবিলা করা কতটা বেদনাদায়ক ছিল তা আপনি জানেন না। তিনি সত্যিই জ্যাক দ্য রিপার ছিলেন।
    • জুলফিকার আলী ভুট্টো, এপ্রিল ১৯৭২ ওরিয়ানা ফ্যালাসির সাক্ষাৎকার, যেমনটি "ইতিহাসের সাথে সাক্ষাৎকার এবং ক্ষমতার সাথে কথোপকথন" (২০১১) এ উদ্ধৃত হয়েছে।
  • দেশদ্রোহী অসভ্য বাহিনী: ৩রা মে ১৯৮৪ এর এক পড়ন্ত বিকেলে ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে গল্প করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েক জন। গল্পে গল্পে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী প্রসঙ্গ উঠলো। প্রসঙ্গ উঠলো '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কথা। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বললেন, এটা একটা সেনাবাহিনী হলো? এটা একটা বর্বর, নরপিশাচ, উচ্ছৃঙ্খল, লোভী, বেয়াদব বাহিনী। এই বাহিনীর আনুগত্য নেই, শৃঙ্খলা নেই, মানবিকতা নেই, মান্যগণ্য নেই, নেই দেশপ্রেম। এটা একটা দেশদ্রোহী অসভ্য হায়েনার বাহিনী। তোমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বল। সারা বিশ্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো এত ভদ্র, নম্র, সভ্য, বিনয়ী এবং আনুগত্যশীল বাহিনী খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবিকতা বোধের কোন তুলনাই চলে না। কি অসম্ভব সভ্য আর নম্র তারা! পঁচিশে মার্চ রাতে তারা (পাকিস্তান আর্মি) এলো, এসে আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) সেলুট করলো, মাকে সেলুট করলো, আমাকেও সেলুট করলো। সেলুট করে তারা বলল, স্যার আমরা এসেছি শুধু আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। অন্য কোন কিছুর জন্য নয়। আপনারা যখন খুশি, যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যে কেউ আপনার এখানে আসতে পারবে। আমরা শুধু আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আপনারা বাইরে গেলে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সঙ্গে যাবো। কেউ আপনাদের এখানে এলে আমরা তাকে ভালভাবে তল্লাশি করে তারপর ঢুকতে দিব। এসবই করা হবে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যা করেছে তা সম্পূর্ণ আমাদের নিরাপত্তার জন্যই করেছে। ২৬শে মার্চ দুপুরে আব্বাকে (শেখ মুজিব) যখন পাকিস্তানী আর্মিরা নিয়ে যায়, তখন জেনারেল টিক্কা খান নিজে এসে আব্বাকে ও মাকে সেলুট দিয়ে, আদবের সাথে দাঁড়িয়ে বিনয়ের সাথে (শেখ মুজিবকে) বলে, স্যার আপনাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান তৈরি (স্পেশাল ফ্লাইট রেডি) আপনি তৈরি হয়ে নেন এবং আপনি ইচ্ছে করলে ম্যাডাম (বেগম মুজিব) সহ যে কাউকে সঙ্গে নিতে পারেন। আব্বা-মা'র সঙ্গে আলোচনা করে একাই গেলেন। পাকিস্তান আর্মি যতদিন ডিউটি করেছে এসেই প্রথমে সেলুট দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আমার দাদীর সামান্য জ্বর হলে পাকিস্তানীরা হেলিকপ্টার করে টুঙ্গিপাড়া থেকে দাদীকে ঢাকা এনে পি জি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছে। জয় (শেখ হাসিনার ছেলে) তখন পেটে, আমাকে প্রতি সপ্তাহে সি এম এইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে) নিয়ে চেকআপ করাতো। জয় হওয়ার একমাস আগে আমাকে সি এম এইচ-এ ভর্তি করিয়েছে। '৭১ সালে জয়' জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মিরা খুশিতে মিষ্টি বাঁটোয়ারা করেছে এবং জয় হওয়ার সমস্ত খরচ পাকিস্তানীরাই বহন করেছে। আমরা যেখানে খুশি যেতাম। পাকিস্তানীরা দু'টি জীপ করে আমাদের সাথে যেতো। নিরাপত্তার জন্য পাহারা দিত। আর বাংলাদেশের আর্মিরা! জানোয়ারের দল, অমানুষের দল এই অমানুষ জানোয়ারেরা আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে মেরেছ-এদের যেন ধ্বংস হয়।
    • মতিউর রহমান রেন্টু, আমার ফাঁসি চাই, পৃঃ ৫৩-৫৪
  • ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর থাকা মধ্যপন্থী জেনারেলকে সরিয়ে দেন , তার স্থলাভিষিক্ত হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, যিনি পশ্চিম পাকিস্তানি প্রদেশে বিদ্রোহ দমনের জন্য " বেলুচিস্তানের কসাই" নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। রক্ত জানত যে তিনি সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে চরমপন্থীদের একজন - একজন খুনি।
    • বাস, জিজে (২০১৪) থেকে উদ্ধৃত। The Blood telegram: Nixon, Kissinger, and a forgotten genocide.
  • ভুট্টো কুখ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেন, জোর দিয়ে বলেন যে গণহত্যার সময় "তিনি একজন সৈনিক ছিলেন যিনি একজন সৈনিকের কাজ করছিলেন।" (টিক্কা খান পরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা হন।) তিনি কেবল ত্রিশ লক্ষ নিহতের বাংলাদেশী পরিসংখ্যানকেই অস্বীকার করেননি , বরং এক কোটি শরণার্থীর সংখ্যাও অস্বীকার করেন , জোর দিয়ে বলেন যে ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোক পাঠিয়েছিলেন । ধর্ষিত ও নিহত মহিলাদের বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, "আমি এটা বিশ্বাস করি না।"
    • বাস, জিজে (২০১৪) থেকে উদ্ধৃত। The Blood telegram: Nixon, Kissinger, and a forgotten genocide.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]