তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া
অবয়ব

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ( ১৯১১ - ১ জুন, ১৯৬৯) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ও রাজনীতিক। তিনি মানিক মিয়া নামেই সমধিক পরিচিত। বঙ্গবন্ধু তাঁকে 'মানিক ভাই' নামে ডাকতেন এবং তার অবদানের কথা স্বীকার করতেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয় এবং একাধারে প্রকাশক, মুদ্রাকর হিসেবে মানিক মিয়ার নামই ছাপানো হয়। ষাটের দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলন ও ছয় দফার আন্দলনকে গণআন্দোলনে রুপ দেওয়ার পেছনে মানিক মিয়া ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশক্রমে ১৯৭৪ সালের জুনে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের রাস্তাটির নামকরণ 'মানিক মিয়া এভিনিউ' করা হয়েছিল তাঁরই নামানুসারে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- আপনি সাংবাদিকতার জন্য রাজনীতি করেন আর আমি রাজনীতির জন্য সাংবাদিকতা করি।
- পাকিস্তানের টাইমসের সাংবাদিক জেড এ সুলেরীকে লক্ষ্য করে মানিক ভাই একবার লিখেছিলেন বলে সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী একটি সাক্ষাৎকারে ইত্তেফাকে বলেন।
- দেশ বড়, না সংসার বড়। সংসার নিয়ে তোমরা থাক, আমাকে দেশের ব্যাপারে চিন্তা করতে দাও।
- তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সহধর্মিণী বেগম তফাজ্জল হোসেনের লেখা আমি তাঁর পাশে থাকতে পারিনি। প্রকাশকাল: ৯ জুন ১৯৬৯
- ইত্তেফাকের ঘাড় হইতে দলীয় রাজনীতির ভূত নামিয়া গেলে ইত্তেফাকের পক্ষে সত্যিকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ সহজ হইবে। ইত্তেফাক যদি প্রতিযোগিতায় টিকিয়া থাকিতে না পারে তাহা হইলে কোনো দলের মুখপত্র হিসেবে বা পৃষ্ঠপোষকতায় টিকিয়া থাকিতে পারিবে না।
- দৈনিক ইত্তেফাকের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও দলীয়ভাবে পত্রিকাটি বর্জনের হুমকির জবাবে মোসাফির ছদ্মনামে দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনৈতিক মঞ্চ কলামে লিখেছিলেন বলে উদ্ধৃত কলাম।
- ...হিংসা ও রক্তারক্তিতে আমি বিশ্বাস করি না। শান্তিপূর্ণ পথে আলাপ-আলোচনা ও লেনদেনের ভিত্তিতে আমি সমস্যার সমাধান কামনা করি।
- সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এর রচিত দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া: বিবেকী সাংবাদিকতা ও রাজনীতির পথিকৃৎ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে।
- শাহ আজিজের ওপর আস্থা রাখা যায় না; সে কয়দিন আগে মুসলিম লীগ করত, আওয়ামী লীগে নতুন। তুমিই যাও; যা বলার তা একটু নোট করে নিয়ে।
- সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রচিত দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া: বিবেকী সাংবাদিকতা ও রাজনীতির পথিকৃৎ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে।
তার সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- ব্যক্তিগতভাবে আমি আগে কখনো মানিক মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি, কিন্তু তাঁর নাম আমার কাছে অচেনা ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের সুবিধা নিয়ে তিনি দ্য ডেইলি ইত্তেফাক-এ বাংলায় যে সুচিন্তিত ও বিতর্কিত রাজনৈতিক কলামগুলো লিখতেন, সেগুলো পড়া আমি কখনও মিস করতাম না। আমি টের পেয়েছিলাম যে, তিনি খুব কৌশলে “স্বায়ত্তশাসন” শব্দটিকে একটা ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহার করছিলেন; তবে বাস্তবে তিনি স্বাধীনতার পক্ষেই যুক্তি গড়ে তুলছিলেন।
- ০৫ জুন ২০২৩-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে শশাঙ্ক ব্যানার্জী, উদ্ধৃত: ইত্তেফাক
- ব্যক্তিজীবনের নির্ভীকতা ও সততা তার রচনাগুলোকে প্রভাবিত করেছে, জীবনের ন্যায় লেখার মধ্যেও তিনি কোনো দিন মিথ্যার প্রশ্রয় দেননি। তার দৃষ্টি ছিল গণমুখী। জনগণের কথা বলার জন্যই তিনি লেখনী হাতে নিয়েছিলেন। জনগণের ভাষায় তিনি কথা বলতেন। মানিক ভাই ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন সাদাসিধে। বিলাস ও বাহুল্যকে তিনি কোনো দিন কাছে ঘেঁষতে দেননি। সামান্য আসবাবে সজ্জিত ছিল ‘ইত্তেফাক’ অফিসে তার ব্যক্তিগত বসবার ঘরখানি।
- ১৯৬৯-এর ৯ জুন ইত্তেফাক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলার সবচাইতে জনপ্রিয় সাংবাদিক’ শিরোনামে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (মানিক মিয়া) সম্পর্কে লিখেছিলেন বলে রচিত সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রচিত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া: আজকের প্রাসঙ্গিকতা।
- ‘রাজনীতি সম্পর্কে মানিক ভাই’র ধারণা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন মানুষের অধিকারের বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তখন মানিক ভাই’র মাঝে এদেশ এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি যে ভালবাসা লক্ষ্য করেছি, তা আমাকে অভিভূত করেছে। মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা এবং অনুভূতির প্রখরতা এত সুগভীর ছিল যে, মানুষ কি চায়, কি ভাবে- সহজেই তিনি তা বুঝতে পারতেন এবং তা’ তুলে ধরতেন লেখনীর মাধ্যমে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত আমার মানিক ভাই নিবন্ধ: বই অবিস্মরণীয় মানিক মিয়া,পৃষ্ঠা ৯।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।