বিষয়বস্তুতে চলুন

ত্রৈলক্যনাথ মুখোপাধ্যায়

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (২২ জুলাই ১৮৪৭ – ৩ নভেম্বর ১৯১৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক, যিনি বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গ ও কৌতুক রচনার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তাঁর রচনায় উদ্ভট হাস্যরসের প্রবর্তন ঘটেছে, যা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার সূচনা করে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে 'ডমরু চরিত', 'কঙ্কাবতী', 'ভূত ও মানুষ' ইত্যাদি। তিনি ইংরেজি ভাষাতেও প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন।

উক্তি

[সম্পাদনা]

ডুমরু-চরিত

[সম্পাদনা]

মূল : ডুমরু চরিত

  • যিনি মাইকেলের জীবনচরিত লিখিয়াছেন, তিনি যদি আমার বিষয়ে সেইরূপ একখানি পুস্তক লেখেন, তাহা হইলে তাহাকে আমি তের পণ কাঁচকলা দিতে সম্মত আছি।
  • আমাকে পুলীশে দিবার নিমিত্ত তাঁহারা স্থির করিলেন। আমি মনে মনে ভাবিলাম,—"তাহাতে ক্ষতি কি? এক বৎসর কি দুই বৎসর যদি আমার জেল হয়, তাহা হইলে মেয়াদ খাটিয়া পরে সেই টাকা লইয়া কোনরূপ ব্যবসা করিব।
  • ইংরেজি পড়িয়া তাহাদের মেজাজ আগুন হইয়া গিয়াছে। তাই বলি যে, চিত্রগুপ্ত! তুমিও ইংরেজি পড়। ইংরেজি পড়িয়া তোমার হেড্‌টী গরম কর। হেড্‌টী গরম করিয়া তুমিও গলায় দড়ি দাও। মোটা দড়ি নয়। বুঝিয়াছ তো?
  • একটা হুজুগ লইয়া বাঙ্গালী অধিক দিন থাকিতে পারে না। হুজুগ একটু পুরাতন হইলেই বাঙ্গালী পুনরায় নূতন হুজুগের সৃষ্টি করে। অথবা এই বঙ্গভূমির মাটির গুণে আপনা হইতেই নূতন হুজুগের উৎপত্তি হয়।
  • মুখ বন্ধ গুড়ের কলসীর নিকট কত মাছি থাকে। তাহারা এক ফোঁটাও গুড় খাইতে পায় না, তথাপি আশে পাশে ভ্যান্‌ ভ্যান্‌ করে। সেইরূপ যদি লোকে শুনিতে পায় যে, অমুকের অনেক টাকা আছে, তাহা হইলে দেশ শুদ্ধ লোক তাহার আশে পাশে আসিয়া ভ্যান্‌ ভ্যান্‌ করে, সে হাই তুলিলে তুড়ি দেয়।
  • "আমি আলাদিনকে ও প্রদীপের প্রদীপের জিনকে খুঁজিয়া বাহির করিব। কিন্তু প্রথম আমি তোমার উপকার করিব। কারণ, তুমি আমাকে জল হইতে তুলিয়াছ;"
  • "মনে কর শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর।

অন্যে বাক্য কবে কিন্তু তুমি রবে নিরুত্তর।"

  • "অতি চমৎকার ! বন্ধুদিগের পুস্তক সমালোচনা করিবার সময় কোন কোন লেখক যেরূপ প্রেমে মজিয়া রসে ভিজিয়া ভাবে গেঁজিয়া বলেন,— মরি মরি! আহা মরি! এও সেই আহা মরি।"

তাঁর সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]
  • এইরূপ অদ্ভুত রূপকথা ভাল করিয়া লেখা বিশেষ ক্ষমতার কাজ। ...এতদিন পরে বাঙ্গালায় এমন লেখকের অভ্যুদয়...যাঁহার লেখা আমাদের দেশের বালক বালিকাদের এবং তাঁদের পিতামাতার মনোরঞ্জন করিতে পারিবে।
  • রচনার বিষয় বাহ্যতঃ যতই অসঙ্গত ও অদ্ভুত হউক না কেন, রসের অবতারণা করিতে হইলে তাহাকে সাহিত্যের নিয়মবন্ধনে বাঁধিতে হইবে। রূপকথার ঠিক স্বরূপটি, তাহার বাল্য-সারল্য, তাহার অসন্দিগ্ধ বিশ্বস্ত ভাবটুকু লেখক যে রক্ষা করিতে পারিয়াছেন, ইহা তাঁহার পক্ষে অল্প প্রশংসার বিষয় নহে।'
  • 'ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় বাংলা ভাষার এই অমর গল্পকার তাঁর মহাপ্রয়াণের শতবর্ষ পার না হতেই আজ মৃতপ্রায়, বিস্মৃত তো তিনি অনেককাল থেকেই। অমর লেখকের এই অকালমৃত্যু কিন্তু লেখকের দোষে নয়। তাহলে কার দোষে? অধ্যাপকের? অধ্যাপিতের? প্রকাশকের? পাঠকের? যার দোষেই হোক, দোষটা দূর করতে হবে।
    • আবদুশ শাকুর[]
  • ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের (১৮৪৭-১৯১৯) অবিস্মরণীয় কৃতি চিরস্থায়ী হয়ে আছে কঙ্কাবতী উপন্যাসে, ভূত ও মানুষের বিচিত্র আখ্যানে মুক্তা-মালার সূচনায় এবং ডমরু-চরিত-এর অনবদ্য গল্পমালায়। রূপকথা এদের মধ্যে রূপক হয়ে দেখা দিয়েছে। চরিত্রগুলো এক-একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। কৌতুক রূপ নিয়েছে সমসাময়িক জাতীয় জীবনাচরণের তির্যক সমালোচনার।'
    • আবদুশ শাকুর []
  • পূর্বগামী লেখকদের সম্পর্কে আমাদের এক ধরনের উদাসীনতা'কে দায়ী করেছেন। তবে এখন সময় এসেছে নতুন করে অনুসন্ধানের, যখন নতুন যুগের পাঠক আমোস টুটুওয়ালা, মার্কেস বা নাগিব মাহফুজের লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।
    • অধ্যাপক আনিসুজ্জামান []

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃ সংযোগ

[সম্পাদনা]