বিষয়বস্তুতে চলুন

দূরবীক্ষণ যন্ত্র

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দূরবীন বা টেলিস্কোপ হলো এমন একটি যন্ত্র যা দূরবর্তী কোনো বস্তুকে ওই বস্তুটির নির্গমন, শোষণ বা তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের প্রতিফলনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। একেবারে শুরুর দিকে এটি ছিল নিছক একটি আলোকযন্ত্র যা লেন্স, বক্রতল দর্পণ বা উভয়ের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি হতো; আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে, "দূরবীক্ষণ যন্ত্র" বা "টেলিস্কোপ" শব্দটিকে আরও বিস্তৃত অর্থে প্রয়োগ করা হয়; তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন বর্ণাঞ্চল শনাক্তকারী যন্ত্রসহ আরও কয়েক ধরণের শনাক্তকারী যন্ত্রকেও এর দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে বর্ণনা করা হয়।

যতদূর জানা যায় প্রথম দিককার কার্যকরী টেলিস্কোপগুলো ছিল কাঁচের লেন্সযুক্ত প্রতিসরণ দূরবিন এবং ১৭ শতকের শুরুতে নেদারল্যান্ডসে সেগুলো উদ্ভাবিত হয়েছিল। এগুলো পৃথিবীর মধ্যকার এবং বাহিরের তথা জ্যোতির্বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত।

প্রথম প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র দূরবিন তৈরির কয়েক দশকের মধ্যেই প্রতিফলিত টেলিস্কোপ উদ্ভাবিত হয়েছিলো। এগুলো আলো সংগ্রহ এবং ফোকাস করতে দর্পণ ব্যবহার করে।

বিংশ শতাব্দীতে, অনেক নতুন ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়, যার মধ্যে ১৯৩০-এর দশকে বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং ১৯৬০-এর দশকে ইনফ্রারেড দূরবীক্ষণ যন্ত্র অন্যতম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের নিকটবর্তী মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে ১০০ ইঞ্চি (২.৫৪ মি) হুকার প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্রএডউইন হাবল গ্যালাক্সি রেডশিফট পরিমাপ করতে এবং মহাবিশ্বের সাধারণ সম্প্রসারণ আবিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করেছিলেন।

উক্তি

[সম্পাদনা]
জ্যোতির্বিদদের কল্পনায়ও ছিল না যে মহাবিশ্বের আকস্মিক জন্ম—বিগ ব্যাং—একদিন প্রমাণিত হবে। কিন্তু দূরবীনের চোখে দেখা ছায়াপথগুলোর পলায়নপরতা, তাদের সরণপ্রবণতা— এসবই যেন বলছে, "আমারও একটি শুরু ছিল।" বিজ্ঞানকে মাথা নত করতে হয়েছে এই সত্যের কাছে। ~ রবার্ট জ্যাস্ট্রো
চোখ—একটি অলৌকিক নকশা। কোনো দূরবীন প্রস্তুতকারকও এত নিখুঁত যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন না। ~ রবার্ট জ্যাস্ট্রো
  • বাইবেল একটি দূরবীনের সমতুল্য। মানুষ যদি দূরবীন দিয়ে মহাকাশের দিকে তাকায়, তাহলে সে অসীমের গহ্বরে ভাসমান অগণিত নক্ষত্রলোক দেখতে পাবে; কিন্তু যদি শুধু দূরবীনের কাচ আর ধাতব নলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তবে তার চোখে ধরা পড়বে কেবল একটি নিষ্প্রাণ যন্ত্র।
  • দূরবীন এমন একটি যন্ত্র যার সাথে চোখের সম্পর্ক ততটাই গভীর যতটা টেলিফোনের সাথে কানের। এটি চোখের সামনে বসানো এমন এক যান্ত্রিক ফাঁদ, যা দূরের বস্তুকে কৃত্রিমভাবে কাছে এনে আমাদের চোখে অনাবশ্যক খুঁটিনাটির ভিড় চাপিয়ে দেয়। সৌভাগ্যক্রমে, এতে কোনো ঘণ্টা নেই— যে ঘণ্টা বাজালে আমরা জানতাম, এই যন্ত্র আমাদের বলির পাঁঠা বানাতে চায়!
  • যদি আমরা দূরবীনটিকে উল্টো করে ধরে মানুষের দিকে এই সুদীর্ঘ মহাকাশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাকাই, তাহলে হয়তো আমাদের নিজেদের ধ্বংসের পরিকল্পনা করার সময় ও ইচ্ছা দুটোই কমে যাবে।
    • র‍্যাচেল কারসন, নন-ফিকশনের জন্য ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের ভাষণ (১৯৫২); লস্ট উডস: দ্য ডিসকাভার্ড রাইটিংস অব র‍্যাচেল কারসন (১৯৯৯), সম্পাদক: লিন্ডা লিয়ার, পৃ. ৯১।
  • প্রায় দশ মাস আগে [১৬০৯], এক ফ্লেমিশ ব্যক্তির (হ্যান্স লিপারশে) স্পাইগ্লাস আবিষ্কারের কথা শুনি—এক যন্ত্র, যা দূরের বস্তুকেও চোখের সামনে জীবন্ত করে তোলে। কেউ এ কথা বিশ্বাস করল, কেউ হেসে উড়িয়ে দিল। পরে প্যারিসের জ্যাক বাদোভের-এর চিঠিতে সংবাদটি সত্যি জানতে পেরে, আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি এমন এক যন্ত্র বানানোর নেশায়। প্রতিসরণ তত্ত্বকে ভিত্তি করে সীসার নলে বসালাম দুটি লেন্স—একটি উত্তল, অন্যটি অবতল। এভাবেই জন্ম নিল প্রথম দূরবীন, যার মাধ্যমেই মানুষ স্পর্শ করল মহাবিশ্বের গায়ে লেগে থাকা ধূলিকণা!
    • গ্যালিলিও গ্যালিলি, দ্য স্ট্যারি মেসেঞ্জার (১৬১০), অনুবাদ: স্টিলম্যান ড্রেক, ডিসকভারিজ অ্যান্ড অপিনিয়নস অব গ্যালিলিও (১৯৫৭), পৃ. ২৮-২৯।
  • দূরবীনের লেন্সকে পরিণত করেছি আমার চোখে, আর এই যন্ত্রের সাথে লড়াই করেছি বছরের পর বছর। কতবার যেন এরা আমাকে ধোঁকা দিয়েছে—মিথ্যা আলোর খেলা দেখিয়ে, ভুল তারার স্থান নির্দেশ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছি আমি, কারণ যন্ত্রের চোখ ধরা দিয়েছে মানুষের ইচ্ছার কাছে।
    • উইলিয়াম হার্শেল, কনস্ট্যান্স অ্যান লুবক-এর উদ্ধৃতিতে, দ্য হার্শেল ক্রনিকল: দ্য লাইফ-স্টোরি অব উইলিয়াম হার্শেল অ্যান্ড হিজ সিস্টার, ক্যারোলাইন হার্শেল(১৯৩৩), পৃ. ১০২।
  • চোখ—একটি অলৌকিক নকশা। কোনো দূরবীন প্রস্তুতকারকও এত নিখুঁত যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন না।
  • জ্যোতির্বিদদের কল্পনায়ও ছিল না যে মহাবিশ্বের আকস্মিক জন্ম—বিগ ব্যাং—একদিন প্রমাণিত হবে। কিন্তু দূরবীনের চোখে দেখা ছায়াপথগুলোর পলায়নপরতা, তাদের সরণপ্রবণতা— এসবই যেন বলছে, "আমারও একটি শুরু ছিল।" বিজ্ঞানকে মাথা নত করতে হয়েছে এই সত্যের কাছে।

হাবল ট্রাবল—হাউ ডিড ইট টার্ন আউট? নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত, "অ্যাওয়েক! ম্যাগাজিন", ১৯৯৫, ৮ সেপ্টেম্বর।

  • হাবল স্পেস টেলিস্কোপ মানবসৃষ্ট ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল, সবচেয়ে পরিশীলিত মহাকাশযান।
    • বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ আর. ডব্লিউ. স্মিথ, দ্য ইন্টারন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া অব অ্যাস্ট্রোনমি
  • মহাকাশে মোতায়েন করা সর্ববৃহৎ, সবচেয়ে জটিল এবং সবচেয়ে শক্তিশালী মানমন্দির।
    • এরিক চাইসন, দ্য হাবল ওয়ার্স বইয়ে হাবল টেলিস্কোপ সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
  • প্রতিদিন এটিকে চালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় চল্লিশ লক্ষ লাইনের কম্পিউটার কোড, যা বেসামরিক বিশ্বের বৃহত্তম কোডগুলির মধ্যে একটি, হাবলের উচ্চ মাত্রার জটিলতার সাক্ষ্য দেয়।
  • হাবল টেলিস্কোপের স্পষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটিগুলো প্রকৌশলীদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফল, যেখানে বৃহত্তর পরিকল্পনা বা সামগ্রিক চিত্রকে উপেক্ষা করার এক সুস্পষ্ট ধারাবাহিক ব্যর্থতা দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ: গোপনীয়তা অবলম্বনকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অত্যধিক আত্মবিশ্বাসী প্রকৌশলীদের দ্বারা দূরবীনের অপটিক্স ভুলভাবে মেশিনিং করা হয়েছিল এবং অপর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল—যেখানে বাইরে থেকে কোনো প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তিগত বা বৈজ্ঞানিক পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এছাড়াও, হাবলে পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যেমন দশকের পর দশক পুরনো জাইরোস্কোপ [টেলিস্কোপে ব্যবহারের আগে এগুলিকে প্রায় ৭০,০০০ ঘন্টা পরীক্ষা করা হয়েছিল—এক প্রকৌশলীর মন্তব্য অনুযায়ী, "পরীক্ষা করে মরেছে"] এবং প্রাচীন মহাকাশযানের জন্য তৈরি মেমোরি বোর্ড।
  • বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রিয়, কিংবা বিজ্ঞানীরা তাদের কাজে মানবিক আবেগহীন যন্ত্রের মতো—এই ধারণা এক চরম প্রহসন। আজকের বিজ্ঞানও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই মূল্যবোধ, পক্ষপাত ও আবেগে জর্জরিত।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]