নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
অবয়ব

নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৮৬১ - ২৮ ডিসেম্বর ১৯৪০) ছিলেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং পত্রিকা সম্পাদক। তিনি লাহোরের ট্রিবিউন ও এলাহাবাদের ইন্ডিয়ান পিপল নামক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। কিছুদিন প্রদীপ এবং প্রভাত পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। প্রথম জীবনে স্বপন সঙ্গীত গীতিকাব্য (১৮৮২) এবং পরে সাহিত্য ও ভারতী পত্রিকার জন্য অনেক ছোটগল্প এবং কয়েকটি উপন্যাস রচনা করেন। তার অমর কীর্তি হলো দ্বারভাঙা মহারাজের অর্থসাহায্যে বিদ্যাপতি ও গোবিন্দদাস ঝার পদাবলীর সম্পাদনা ও সঙ্কলন প্রকাশ। নগেন্দ্রনাথের রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো পর্বতবাসিনী, অমরসিংহ, লীলা, জীবন ও মৃত্যূ প্রভৃতি।
উক্তি
[সম্পাদনা]- তারার মস্তকে, হৃদয়ে সহস্র নরকজ্বালা, চক্ষের সম্মুখে নরক নৃত্য করিতেছিল। নরক হইতে কে আসিয়া তাহার কাণে কাণে কহিল, এ অপমানের একমাত্র প্রতিবিধান আছে। শম্ভূজীকে দেখিয়া তারার শিরার মধ্যে রক্তস্রোত বেগে প্রবাহিত হইয়া তাহার মুখ অন্ধকার করিয়া তুলিল। চক্ষে একবার মাত্র লোহিত বিদ্যুৎ জ্বলিয়া উঠিল।
- পর্ব্বতবাসিনী - নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত, প্রকাশক- শ্রী রাখাল চন্দ্র ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০১ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৩-১৬৪
- পুরাতন কয়েদীরা জানিত যে, জেলারের তর্জ্জন-গর্জ্জনকে যত না ভয়, সে চিবাইয়া চিবাইয়া মৃদু মৃদু কথা কহিলে তাহার অপেক্ষা অধিক ভয়। এই দুইজন কয়েদী সবে শ্রীঘরে শুভাগমন করিয়াছে, তাহারা সে-কথা কেমন করিয়া জানিবে? একজন দাঁত বাহির করিয়া রহস্য করিয়া বলিল,—এমন হয়েই থাকে, উদোর বোঝা অনেক সময় বুদোর ঘাড়ে পড়ে।
জেলার আরও মৃদুস্বরে বলিল,—নরকে যাবার আগেই নরক কাকে বলে তোমরা জান্তে পারবে।
জেলার চলিয়া গেল, কালীচরণও সেই সঙ্গে গেল।- বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২০১
- সাধে কি বাঙ্গালীর মেয়েরা মৃত্যুর নাম করে না, কাহাকেও করিতে দেয় না, ছেলেপুলে মরণের কথা বলিলে তাহাদের মুখে হাত দেয়, মৃত্যুর নাম শুনিলে আতঙ্কে আকুল হয়? সহজ মানুষের স্বভাবই এই। মৃত্যুর ভয়াল মূর্ত্তি দেখিতে কেমন কেহ জানে না, কেহ দেখিতে চায় না, দেখিলে হৃৎকম্প হয়। জীবিত আছ, জীবিত থাক, চিরজীবী হও, সহস্র বৎসর পরমায়ু হউক। সহস্র বৎসর—সেই কি চিরজীবন হইল? শতবর্ষজীবী মনুষ্যের পক্ষে সহস্র বর্ষ প্রায় অনন্ত জীবন।
- জীবন ও মৃত্যু- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কাইসর যন্ত্রে শ্রীসুবলচন্দ্র দাস দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৫
- বসতবাড়ী নয়, একজন বড় মহাজনের কুঠি। দোতালায় উঠিয় নসীর খাঁ দেখিলেন, একটা বড় ঘরে মেঝের উপর তাকিয়া ঠেসান দিয়া একজন প্রৌঢ়বয়স্ক ব্যক্তি বসিয়া আছে, মাথায় পাগ্ড়ী, কপালে ফোঁটা। ইনি গদিওয়ালা মহাজন বংশীলাল আগরওয়ালা। সামনে একটা কাঠের বড় বাক্স, পাশে হিসাবের খাতাপত্র। নসীর খাঁকে দেখিয়া বলিলেন,—আসুন খাঁসাহেব, বসুন।
- নিষ্কণ্টক, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১ত১
- তারা হস্তোত্তলন করিয়া কহিল, আমার হৃদয়ের মধ্যে যে নরক জ্বলিতেছে, সেই নরক সাক্ষী করিয়া কহিতেছি, আমি তোমায় বিবাহ করিব। পূর্ব্বে আমার ভ্রম হইয়াছিল, নহিলে এতদিন তোমাকে বিবাহ করিতাম। আমার এ নরকাগ্নি কোন দিন আমাকেই ভস্মীভূত করিত। এখন আমরা দুইজনে মিলিত হইয়া এ অগ্নিতে হবিঃপ্রদান করিব। গোকুলজী মরুক, তাহার শোণিতে এ অনল নিভাইব।
- পর্ব্বতবাসিনী - নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত, প্রকাশক- শ্রী রাখাল চন্দ্র ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০১ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৫
- বনের পাখীকে খাঁচার ভিতর পূরলে কি রকম ছট্ফট্ করে দেখেচ? খাঁচার শিকে পাখা-ঝাপটা মারে, কেবল এদিক-ওদিক ঘোরে। খাঁচা খুলে দিলে উড়ে যায়, আর ধড়ফড় করে না। আমার বুকের পাঁজরাগুলো লোহার গরাদে, তার ভিতর থেকে পাখী বেরুবার জন্য ও-রকম করচে।
- রথযাত্রা, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১২
- আকাশে যেমন নক্ষত্র, মৃত্যুতে সেইরূপ জীবন। আকাশের যেমন সীমা নাই, মৃত্যুর সেইরূপ সীমা নাই, আকাশ যেরূপ অন্ধকার, মৃত্যু সেইরূপ অন্ধকার—অর্থাৎ অজানিত, অদৃষ্ট। সর্ব্বব্যাপী আকাশ, মৃত্যু সর্ব্বব্যাপী। আকাশ যেমন নিজগর্ভে চন্দ্রসূর্য্য ধারণ করে, মৃত্যু সেইরূপ নিজগর্ভে জীব সঞ্চলাক ধারণ করে। নক্ষত্র যেমন জ্যোতির্ম্ময়, জীবন সেইরূপ জ্যোতির্ম্ময়। মরিয়া মানুষ নক্ষত্র হয়, এ রকম বিশ্বাস নিতান্ত অমূলক নহে। আলোকের সঙ্গে জীবনের এবং মৃত্যুর সঙ্গে অন্ধকারের সাদৃশ্য আমাদের মনে সহজেই আসে। আলোকে আমরা দেখিতে পাই, অন্ধকারে দেখিতে পাই না, জীবনকে আমরা জানি, মৃত্যুকে আমরা জানি না।
- জীবন ও মৃত্যু- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কাইসর যন্ত্রে শ্রীসুবলচন্দ্র দাস দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮
- পেন্সন আর পিঞ্জরাপোল দুইটা জিনিষ একই, তফাৎ এই যে, একটা দ্বিপদের জন্য, অপরটা চতুষ্পদের জন্য। বৃদ্ধ বয়সে সকল জানোয়ারের পিঞ্জরাপোলে স্থান হয় না, বুড়া হ’লে সব মানুষের ভাগ্যে পেন্সন জোটে না। সে হিসাবে যদি ধর তা হ’লে আমি ভাগ্যবান, কেন-না আমি যে জলজীয়ন্ত বেঁচে আছি, মাসে মাসে তার একখানা সার্টিফিকেট যোগাড় করে’ পেন্সনের টাকা নিয়ে আসি। কিন্তু তার থেকে যখন ইন্কাম ট্যাক্স কেটে নিত, তখন আমার মনে হ’ত আমার উপর এটা ভারি জুলুম হচ্চে।
- না জলে, না স্থলে, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৭৪
- আবিদার মা বল্লে,—এখানে রাজসভায় দু’জন সর্ব্বজ্ঞ আছেন, তাঁদের মতেই সব হয়। তাঁরা বলেন,—পাখীর কি দরকার? হয় বধ, না হয় বন্ধন, এই দুইয়ের জন্য পাখীর সৃষ্টি। পাখীর ডাক বড় অশুড়, শেষ রাত্রিতে পাখীর ডাকের জ্বালায় কেউ ঘুমোতে পায় না এমন কি, কারুর সর্ব্বনাশ কামনা করলে তাকে বলে, তোর ভিটেয় ঘুঘু চরবে! সহরের ত্রিসীমায় পাখী নেই। ব্যাধরা সব রকম পাখী ধ’রে এনে সর্ব্বজ্ঞদের সাম্নে মেরে ফেলে। বন্ধ ক’রে রাখলে খাওয়াবার খরচ, আবার খাঁচার ভিতরও পাখী ডাকে। তোমরা খাঁচায় ক’রে পাখী এনেছ শুনতে পেলে আমাদের সুদ্ধ ধ’রে নিয়ে যাবে।
- যে দেশে পাখী নেই, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১০৪
- যমুনার কালো জলে অস্তমান সূর্য্যের রশ্মি জ্বলিতেছিল, সিতাসিত সঙ্গমে গঙ্গার শুভ্র, তীব্র স্রোত ও যমুনার অলস, মন্থর, কৃষ্ণ প্রবাহ লক্ষিত হইতেছিল। পূর্ব্বদিকের বাতাস, তাহা জলে ঠেকিয়া ছোট ছোট তরঙ্গ রচনা করিতেছে, যমুনার পারে হরিদ্-বর্ণ ক্ষেত্র। কিছু দূরে ঘাটে কয়েকটি নৌকা বাঁধা, নাবিকেরা নৌকায় কিংবা তীরে বসিয়া গল্প করিতেছে, গ্রামের বালক বালিকা বালুকায় খেলা করিতেছে।
- রাজরোষ, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৩৭
- চারিদিকে প্রাচীর, প্রাচীরের বাহিরে কিছু দেখিতে পাওয়া যায় না। মাথার উপর একখণ্ড আকাশ, আকাশে কখন পাখী উড়িয়া যায়, কখন মেঘ ভাসিয়া যায়, দিনের বেলা কিছুক্ষণ সূর্য্য দেখা দেয়, রাত্রে কিছু নক্ষত্র, জ্যোৎস্না রাত্রে কিছুক্ষণ চন্দ্র দেখিতে পাওয়া যায়। প্রাচীরবেষ্টিত স্বল্প স্থানের মধ্যে কয়েক শত মনুষ্য—সকলের এক বেশ, মোটা কাপড়ের হাঁটু পর্য্যন্ত পায়জামা, গায়ে সেই কাপড়ের পিরাণ, মাথায় সেই রকম টুপী। মোটা কাপড়, তাহাতে নীল ডোরা। সকলের গলায় একটা টিনের চাক্তি, তাহাতে একটা নম্বর খোদা। এই সকল লোকদের নাম নাই, শুধু নম্বর। যাহার যে নম্বর তাহাকে সেই নম্বর বলিয়া ডাকে।
ইহারা বন্দী, ইহাদের বাসস্থান কারাগার।- বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৮৯
- তারা শম্ভূজীকে দেখিতে পাইল। শম্ভূজী দেখিল, তারার মুখ পাংশুবর্ণ, চক্ষের জ্যোতি নিভিয়া গিয়াছে। তারা তাহার কথা শুনিতে পাইল না, দেখিয়া শম্ভূজী আবার কহিল, এ অপমানের কি প্রতিশোধ নাই?
তারার মস্তকে, হৃদয়ে সহস্র নরকজ্বালা, চক্ষের সম্মুখে নরক নৃত্য করিতেছিল। নরক হইতে কে আসিয়া তাহার কাণে কাণে কহিল, এ অপমানের একমাত্র প্রতিবিধান আছে। শম্ভূজীকে দেখিয়া তারার শিরার মধ্যে রক্তস্রোত বেগে প্রবাহিত হইয়া তাহার মুখ অন্ধকার করিয়া তুলিল। চক্ষে একবার মাত্র লোহিত বিদ্যুৎ জ্বলিয়া উঠিল।- পর্ব্বতবাসিনী - নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত, প্রকাশক- শ্রী রাখাল চন্দ্র ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০১ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৩-১৬৪
- যদি জগৎসুদ্ধ লোক স্বীকার করে যে, জীবনের বহির্দেশ হইতে কখন কিছু আসে না, তাহা হইলে মানবজাতির উন্নতির পথ ঘুচিয়া যায়। জীবনের ক্ষুদ্র সীমার আমাদের চিন্তা অথবা বিশ্বাস আবদ্ধ হইলেই আমাদেৱ দ্রুত অবনতি হইবে। আমাদের বল অলক্ষিতে আইসে, বিশ্বাস যেন অন্য লোক হইতে আইসে, তিতিক্ষা, ক্ষমা, ঔদার্য্য প্রভৃতি গুণ অন্য কোন জীবন হইতে আইসে।
- জীবন ও মৃত্যু- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কাইসর যন্ত্রে শ্রীসুবলচন্দ্র দাস দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮
- কালীচরণের ক্রমে উন্নতি হইতে লাগিল। শুধু গায় নিতান্ত অসভ্য দেখায় বলিয়া বাবুরা তাহাকে পিরাণ কিনিয়া দিল, পায়ের জন্য পুরাতন জুতা দিল। সেই সঙ্গে বাজারের মাত্রাও বাড়িতে লাগিল। কোন দিন এক বাবু তাহার হাতে চারিখানা নোট গুঁজিয়া দিয়া, কাপড়ের দোকান দেখাইয়া দিয়া বলিত, ‘কালীচরণ, দশ টাকা জোড়া দু-জোড়া লালপেড়ে আর দু-জোড়া কালা পেড়ে দেশী ধুতি কিনে তুমি এই সামনের মোড়ে গিয়ে দাঁড়াও, আমি এই এলাম বলে।’
কালীচরণ কাপড় কিনিয়া মোড়ে আসিয়া দেখে বাবুর কোন চিহ্ন নাই। সে ধুতি কয়জোড়া বগল দাবা করিয়া বাসায় ফিরিয়া আসে।- বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৯৩
- কিছুকাল বিশ্রামের পর তারা আবার কহিল, আমার এই গৃহে আজ তোমার নিমন্ত্রণ। একদিন তুমি এখানে আহার কর নাই। আজ খাইতে হইবে। আমি ফল আহরণ করিব।
গোকুলজী তারার হাত ধরিয়া কহিল, সে সময়ের অপরাধ কি এখনো ভুলিতে পার নাই?
তারা। তুমি আমার সর্ব্বস্ব। পূর্ব্ব কথা তুলিলে তুমি আপনাকে অপরাধী মনে করিও না। তোমাকে পাইয়াই আমার সুখ। আমার নিকটে তুমি অপরাধী?- পর্ব্বতবাসিনী, একত্রিংশ পরিচ্ছেদ, পর্ব্বতবাসিনী - নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত, প্রকাশক- শ্রী রাখাল চন্দ্র ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯০১ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৫
- অন্ধকারে ঘরের দেয়াল যেমন মাথায় লাগে, প্রভাত-আলোকে মুক্ত আকাশ যেন সেই রকম কালীচরণের মাথায় লাগিল। তাহার হাঁপ ধরিল, বৃহৎ সংসার-অরণ্যে দিশেহারা হইয়া পড়িল। সে কোথায় যাইবে? তাহার গন্তব্য স্থান কোথায়? কে তাহার পথ চাহিয়া আছে? সে কাহার কাছে গিয়া দাঁড়াইবে? কারাগারের চারিটা প্রাচীরের গণ্ডী বরং ছিল ভাল। সংসার যে বৃহৎ কারাগার, ইহাতে পথহারা হইয়া ঘুরিতে হয়। এ মেয়াদ কবে ফুরাইবে, এ কারাগার হইতে কবে মুক্তি হইবে?
- বন্দী, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ২০৬
- ঋষিগণ জীবনের বহির্দেশে সুখের অন্বেষণ করিতেন। তাঁহারা বুঝিয়াছিলেন যে, ভোগপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করিলে কেবল লালসা বৃদ্ধি হয় মাত্র, সুখ পাওয়া যায় না। দুরন্ত আকাঙ্ক্ষাকে নিগ্রহ করাই সুখের একমাত্র উপায়। শরীর নশ্বর, শরীর যাহা কিছু সুখভোগ করিতে চায় তাহাও নশ্বর, অতএব শারীরিক সুখভোগে জীবন অতিবাহিত করা অকর্ত্তব্য। শরীরের সুস্থতা ও স্বচ্ছন্দতা যে নিষ্প্রয়োজন, এ কথা তাঁহারা বলিতেন না, কিন্তু শরীরের প্রাধান্য তাঁহারা স্বীকার করিতেন না। আত্মার আশ্রয় স্থান বলিয়াই শরীরের যত্ন করা কর্ত্তব্য, কিন্তু শরীরকে স্বেচ্ছাধীন হইতে দেওয়া কর্ত্তব্য নহে।
- জীবন ও মৃত্যু- নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কাইসর যন্ত্রে শ্রীসুবলচন্দ্র দাস দ্বারা মুদ্রিত ও প্রকাশিত, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৯৯-২০০
- পণ্ডিত কহিলেন,—আমি নিজেই দিতেছি। এই বলিয়া উন্নত মস্তক আরও উন্নত করিয়া, সভাস্থল ধ্বনিত করিয়া কহিলেন, আমার নাম দীপঙ্কর পণ্ডিত। এরূপ নাম কেন? আমি মস্তকে দীপ ধারণ করি বলিয়া। কেন মস্তকে দীপ ধারণ করি? এই জগতে লোক অজ্ঞানান্ধকারে পথহারা হইয়া ঘুরিতেছে,—তাহাদের প্রতি অহেতুকী কৃপাপরবশ হইয়া, তাহাদিগকে পথ প্রদর্শন করিবার জন্য মস্তকে আলোক ধারণ করিয়াছি। উদরে কেন বর্ম্মধারণ করিয়াছি? আমার পেটে এত বিদ্যা, এত জ্ঞান যে, পাছে পেট ফাটিয়া যায় এই আশঙ্কায় আমি কঠিন তাম্রফলক দ্বারা সর্ব্বদা পেট বাঁধিয়া রাখি। আমি সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞ, অনেক দেশে অনেক পণ্ডিতকে বিচারে পরাজিত করিয়াছি। এ দেশে যে আমার যশ প্রথিত হয় নাই তাহার কারণ এ দেশে পণ্ডিতের অভাব।
- পণ্ডিতের পরাজয়, রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড , প্রকাশস্থান- প্রয়াগরাজ, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১২৫
নগেন্দ্রনাথ গুপ্তকে নিয়ে উক্তি
[সম্পাদনা]- কবিবর বিহারীলাল চক্রবর্তীর কাছে যাঁরা শিষ্যত্ব স্বীকার করেছিলেন তাঁদের মধ্যে তিন জনের নাম হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার বড়াল ও নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত।
নগেন্দ্রনাথ পরে ছোটগল্পলেখক, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিকরূপে সমধিক খ্যাতি লাভ ক’রে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন বটে, কিন্তু পুরাতন “ভারতী” প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কবিতাগুলি পড়লেই বেশ বোঝা যায়, কাব্যচর্চা না ছাড়লে কবিরূপেও তিনি নিজের পথ কেটে নিতে পারতেন।- হেমেন্দ্রকুমার রায়, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিসংকলনে নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত রচিত অথবা সম্পর্কিত রচনা রয়েছে।