নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী
অবয়ব
নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী (৬ ডিসেম্বর ১৮৪৬ – ২ নভেম্বর ১৯২৬), যিনি ভাদুড়ী মহাশয় নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় সিদ্ধ যোগী। আধ্যাত্মিক উপাধি - 'মহাশয়' মহান যোগী শ্যামাচরণ লাহিড়ীর মতো নগেন্দ্রনাথের নামের সঙ্গেও সংযুক্ত। পরমহংস যোগানন্দ তাঁকে "ভাদুড়ী মহাশয়" হিসেবেই অভিহিত করেছেন। নগেন্দ্রনাথ 'মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ' নামেও অভিহিত হন। কাশীর সুমেরু মঠাধীশ শংকরাচার্য প্রমুখ ধর্মপ্রচারকরা তাঁকে 'মহর্ষি' উপাধিতে ভূষিত করেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- ধর্ম তো কতকগুলি আচার-আচরণের সমষ্টি নয়। ভগবান্ই ধর্ম। আচার-আচরণগুলি তাঁকে সদাসর্বদা স্মরণ করিয়ে দেয় বলেই গৌণভাবে, আচার-আচরণকে ধর্ম বলে। ভগবান্ সর্বব্যাপী, সর্বান্তর্যামী, কোনও সময়ে তাঁর থেকে আমাদের বিচ্ছেদ নাই। কিন্তু হাতে বালা থাকলেও যদি সে বিষয়ে খেয়াল না থাকে, তবে তাকে খুঁজতে হয়, যতক্ষণ কেউ দেখিয়ে না দেয় খোঁজার অন্ত থাকে না, দেখিয়ে দিলে তখন নিজের অজ্ঞানতা ধরা পড়ে, পাবার যা তা পেয়ে সুখী হয়। তেমনি হারানিধি পাবার জন্য ভক্তের আকূতি জাগে, ব্যাকুলতা বাড়ে; তখন দয়ালু ভগবান্ কৃপা করে গুরুমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে কৃপা করে নিজেকে নিজে দেখান।
- শ্রীশ্রী নগেন্দ্র উপদেশামৃত, দ্বিতীয় খণ্ড, শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী, আগস্ট ২০১৪, প্রকাশক - অধ্যাপক মনোরঞ্জন ঘোষ, শ্রী সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ২ বি রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯, পৃষ্ঠা ৫৯
- বাহ্যপূজাই অনেকে করেন। কদাচিৎ কেউ আন্তর পূজার অধিকারী। বাহ্য পূজায় আড়ম্বর থাকে। লোক সংঘট হয়। হৈ-চৈ হৈ-হৈ রৈ-রৈ চলে, দেবতার সঙ্গে মনের যোগ ঘটে কম, কেবল ফুল ছোঁড়াছুড়ি, ঢাক, ঢোল, বাদ্য ও আলোকসজ্জার ঘটা। কিন্তু আন্তর পূজায় এসবের কোনও বালাই নেই। একমাত্র সুস্থ শরীরে থেকে পূজা করার জন্য একটা পরিবেশ দরকার। সেখানে মনই ফুল, ভক্তিই চন্দন, অশ্রু পাদ্য, শ্রদ্ধা অর্ঘ্য, বলির দ্রব্য সাধকের ইন্দ্রিয়নিচয়, একাগ্রতাই হ'ল অনুষ্ঠানের দ্রব্য।
- শ্রীশ্রী নগেন্দ্র উপদেশামৃত, দ্বিতীয় খণ্ড, শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী, আগস্ট ২০১৪, প্রকাশক - অধ্যাপক মনোরঞ্জন ঘোষ, শ্রী সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ২ বি রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯, পৃষ্ঠা ১৭৮
- সিদ্ধি অর্থাৎ কোনও বিষয়ে পারগতা। আপাততঃ দৃষ্টিতে কারু কারু সিদ্ধি জন্মের সঙ্গে দেখা যায়—যেমন পাখী প্রভৃতির আকাশে উড়বার ক্ষমতা, যেমন কপিল, শুকদেব প্রভৃতির জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান, বৈরাগ্য, ঐশ্বর্যাদি। ওষধিবিশেষের সেবা করে শরীরের ও মনের পরিবর্তন হয়েছিল এবং অশেষবিধ ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন মাণ্ডব্যাদি ঋষি। আবার মন্ত্র জপের দ্বারা গালব প্রভৃতি ঋষি এবং তপস্যার দ্বারা বিশ্বামিত্রাদির সিদ্ধির কথা শুনা যায়। আবার কেহ বা সমাধিমাত্র অবলম্বন করে সিদ্ধ হন। কিন্তু মনে রেখো বিনা সাধনে কোনকিছুই সিদ্ধ হয় না। সিদ্ধিলাভ করতে হ'লে চাই নিত্য নিরন্তর আন্তরিকভাবে অনন্যচিন্ত হওয়া। অন্য সকল বিষয় থেকে মনকে ফিরিয়ে এনে অভীপ্সিত বিষয়ে লাগান। সিদ্ধিলাভ সহজে হয় না। তার জন্য প্রাণপাত করতে হয়। যেখানে ইহজন্মের বিনা চেষ্টায় কারু কিছু সহজাত ক্ষমতা বা ঐশ্বর্য দেখা যায়, জানবে তা তার জন্মান্তরীণ নিত্য নিরন্তর ভাবনা বা একাগ্র সাধনার ফলোন্মুখ হয়েছিল কিন্তু সময়াভাবে ফলেনি, এ জীবনে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে। মনে রেখো—
- হাসি খেল কিষন্ ন পায়া যিন্ পায় সো রোয়।
- হাসি খেল কিষন্ পায়া তো কোন্ দোহাগিনী হোয়।।
- এ জগতে যেখানে যাকে কৃতকার্য হতে দেখেছ তা কি বৈষয়িক কি আধ্যাত্মিক সেখানেই অনুসন্ধান করলে দেখবে কারু কারু জন্মান্তরীণ সুকৃতির ফলে এবং কারু বা এ জীবনে ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে হয়েছে, আর যেখানে এ জন্মের চেষ্টা করতে দেখ না অথচ কারু কারু কিছু বিভূতি দেখতে পাও, সে জানবে জন্মান্তরের সাধনার ফল। যাদের তেমন ভাগ্য নাই তারাও হতাশ হ’য়ো না। প্রথম থেকেই হবে না ব'লে বসে থেকো না, পথ চলা শুরু কর। তোমাদের আগ্রহ দেখলেই সেই করুণাময় তোমাদের যেখানে যে অবস্থায় যেমন প্রয়োজন সেখানে সেই অবস্থায় তোমাদের সাহায্যকারী হবেন।
- বিভূতি বা অঘটন ঘটাবার ক্ষমতাকেও সিদ্ধি বলে লোকে। তাকে সিদ্ধি না ব’লে সিদ্ধাই বলাই ভাল। তার জন্যও সাধনা করতে হয়। কিন্তু তা ধানের তুষ থেকে চাল পাবার চেষ্টার ন্যায় বৃথা শ্রম। কেননা ঐসব সিদ্ধির জন্য এই জগতে কিন্তু সুখ-সুবিধা পেলেও তাতে জন্ম ও মরণ নিবারণ হয় না।
- শ্রীশ্রী নগেন্দ্র উপদেশামৃত, দ্বিতীয় খণ্ড, শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী, আগস্ট ২০১৪, প্রকাশক - অধ্যাপক মনোরঞ্জন ঘোষ, শ্রী সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ২ বি রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯, পৃষ্ঠা ১৭৮ - ১৭৯
- পুকুরের জলের ওপরে যখন থাকা যায়, তখন নানা জনের নানা কথা, মানের জন্য জলের শব্দ কানে আসে, জলের ওপর নড়ানড়ির জন্য নানা প্রকার ঢেউ চোখে পড়ে, কিন্তু সেই জলে ডুব দিয়ে যত গভীরে যাওয়া যায়, ততই শব্দ বা কলকলানি আর শোনা যায় না। আর যখন একদম গভীর জলের নিম্নতম প্রদেশে পৌঁছান যায়, তখন আর কোনও শব্দ থাকে না, কোনও ঢেউ থাকে না, শান্ত সমরস ভাসে, তেমনি যখন মনকে সকল দিক থেকে গুটিয়ে নিয়ে অসীম ভাববৈচিত্র্যের আকর ভগবানে ডুবাতে পারবে, তখনই সব বৈচিত্র্যের, সব ভেদের শেষ হবে, সকল ক্ষোভের অবসান হবে।
- শ্রীশ্রী নগেন্দ্র উপদেশামৃত, দ্বিতীয় খণ্ড, শ্রীমদ্ ভক্তিপ্রকাশ ব্রহ্মচারী, আগস্ট ২০১৪, প্রকাশক - অধ্যাপক মনোরঞ্জন ঘোষ, শ্রী সবিতাদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ২ বি রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯, পৃষ্ঠা ২০৫
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।