নরম্যান বোরলাউগ

নরম্যান আর্নেস্ট বোরলগ (২৫ মার্চ ১৯১৪ – ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯) একজন আমেরিকান কৃষি বিজ্ঞানী ও মানবতাবাদী ছিলেন। অনেকে তাকে আধুনিক কৃষির জনক এবং সবুজ বিপ্লবের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি আজীবন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

উক্তি

খালি পেটে আর মানব দুঃখ-কষ্টের ওপর দাঁড়িয়ে কখনোই শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলা যায় না।
- উৎস: "Eat This!", Penn and Teller-এর Bullsh#t! অনুষ্ঠানের একটি পর্ব থেকে; উদ্ধৃত: Gary Beene (২০১১), The Seeds We Sow: Kindness that Fed a Hungry World. পৃষ্ঠা ৯

ক্ষুধা মোকাবেলায় স্থায়ী অগ্রগতি সম্ভব নয়, যতক্ষণ না খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর সংস্থাগুলোর সঙ্গে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সংস্থাগুলো একত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করে।
- ১৯৭০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ বক্তৃতা

এ এক দুঃখজনক বাস্তবতা যে এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীতে এখনো দুটি বিশ্ব বিদ্যমান — "সুবিধাভোগী বিশ্ব" আর "ভুলে যাওয়া বিশ্ব"। সুবিধাভোগীরা মূলত উন্নত, ধনী দেশগুলোর নাগরিক, যাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ, যারা এমন বিলাসিতার জীবন যাপন করেন যা আদম-হাওয়ার স্বর্গ ছাড়া ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি। অন্যদিকে, "ভুলে যাওয়া বিশ্ব" হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণ, যাদের সংখ্যা পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি — যেখানে দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাই দৈনন্দিন বাস্তবতা।
- উৎস: ১৯৭০ সালের নোবেল বক্তৃতা

আমি এখন বলতে পারি, আমাদের পৃথিবীর হাতে এমন প্রযুক্তি আছে — যেটা হয় ইতোমধ্যে বিদ্যমান অথবা গবেষণার পর্যায়ে যথেষ্ট অগ্রসর — যার মাধ্যমে টেকসইভাবে ১০ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য জোগান সম্ভব। আসল প্রশ্ন হলো, কৃষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার অনুমতি পাবে কি না। ধনী দেশগুলো চাইলে বেশি দামে অর্গানিক খাবার কিনে ঝুঁকিহীন জীবন বেছে নিতে পারে, কিন্তু যেসব দেশে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ প্রতিনিয়ত পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, তাদের সেই সুযোগ নেই।
- ৩০তম বার্ষিক বক্তৃতা, নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট, অসলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০০০; উদ্ধৃত: Ronald Bailey (২০০২), Global warming and other eco-myths. পৃষ্ঠা ৫৯

পশ্চিমা বিশ্বের কিছু পরিবেশবাদী সত্যিই মহান, তবে অনেকেই আছেন যারা বিশাল শ্রেণিবিভক্ত সমাজের প্রতিনিধি। তারা জীবনে কখনো প্রকৃত ক্ষুধা অনুভব করেননি। তারা ওয়াশিংটন কিংবা ব্রাসেলসের ঝাঁ-চকচকে অফিস থেকে পরিবেশ রক্ষার বুলি আওড়ান। যদি তারা আমার মতো এক মাসের জন্যও উন্নয়নশীল দেশের দুর্দশার মধ্যে কাটাতেন, তাহলে তারা ট্র্যাক্টর, সার আর সেচ ব্যবস্থার জন্য কাঁদতেন — আর তাদের দেশের তথাকথিত ‘ফ্যাশনেবল এলিট’দের এসবের বিরোধিতা দেখে চরম ক্ষুব্ধ হতেন।
- গ্রেগ ইস্টারব্রুক কর্তৃক, The Atlantic Monthly-এর জানুয়ারি ১৯৯৭ সংখ্যার সাক্ষাৎকার

এটা একেবারেই হাস্যকর। এ বিষয়ে কোনো বিতর্কই হওয়া উচিত নয়। এমনকি যদি সব অর্গানিক উপাদান — পশুর গোবর, মানব বর্জ্য, উদ্ভিজ্জ আবর্জনা — জমিতে ফিরিয়ে আনা হয়, তবুও আপনি ৪ বিলিয়নের বেশি মানুষকে খাওয়াতে পারবেন না। আর পুরো কৃষি যদি অর্গানিক হয়, তাহলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বিপুলভাবে বাড়াতে হবে — এমন জমিতেও হস্তক্ষেপ করতে হবে, যেখানে বনভূমি আছে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৮০ মিলিয়ন টন নাইট্রোজেন সার ব্যবহৃত হয়। এটি যদি আপনি শুধু অর্গানিকভাবে উৎপাদন করতে চান, তাহলে অতিরিক্ত ৫-৬ বিলিয়ন গরু দরকার পড়বে গোবর জোগাতে। কেবল এই পশুগুলোর খাদ্য উৎপাদন করতে কতটা বন কেটে ফেলতে হবে ভেবেছেন? এই সব কথাবার্তায় অনেকটাই অবাস্তবতা আছে।

কেউ যদি বিশ্বাস করেন অর্গানিক খাদ্যে পুষ্টি বেশি — সেটা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ। ঈশ্বর তাদের মঙ্গল করুন। তারা চাইলে অর্গানিক খেতে পারেন, কিছুটা বেশি দামও দিতে পারেন। এটা তো মুক্ত সমাজ। কিন্তু দয়া করে গোটা দুনিয়াকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করবেন না যে আমরা এখনকার জনসংখ্যাকে কোনো রাসায়নিক সার ছাড়া খাওয়াতে পারবো। এমন ভুল তথ্য ছড়ানো তখনই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
- Reason Magazine-এ নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাবে: "What do you think of organic farming? A lot of people claim it's better for human health and the environment." [1]

নরম্যান বোরলগ সম্পর্কে উক্তি

অনেকেই বলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষের জীবন বাঁচানোর কৃতিত্ব এই মানুষটির।
- ব্রুস আলবার্টস, সভাপতি, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস, যুক্তরাষ্ট্র; উদ্ধৃত: Beef Today. Vol. 18, (200) পৃষ্ঠা ৫১

External links

[1] https://reason.com/2000/04/01/billions-served-norman-borlaug/

টেমপ্লেট:Commons category