নাটক
অবয়ব
নাটক হলো সাহিত্যের একটি বিশেষ রূপ। নাটক হলো অভিনয়ের মাধ্যমে একটি গল্পের উপস্থাপনা, সাধারণত লিখিত বা মৌখিক গল্প অনুসরণ করে নাটকটি অভিনয়ের জন্য তৈরি করা হয়। স্থান, সময় এবং পরিবেশ বর্ণনা করার পাশাপাশি, নাটকে সংলাপ থাকে। সংলাপের মাধ্যমে একজন অভিনেতা নাটকের বিভিন্ন বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। তবে, সংলাপই শেষ কথা নয়। সংলাপ ছাড়া অভিনয়ও নাটকের অংশ। অন্য কথায়, যদি কোনও চরিত্র কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত হয়, যদি তার কোনও সংলাপ না থাকে, তবে সেই চরিত্রটিও নাটকের অভ্যন্তরীণ অংশের মধ্যে পড়ে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বাংলা নাটক রচিত হইবার পূর্বে যে যাত্রা প্রচলিত ছিল, তাহাতে রঙ্গমঞ্চের প্রয়োজন হইত না-ভূমিতেই "আসর” রচনা করা হইত এবং দৃশ্য-পটের ব্যবহার ছিল না। সাধারণতঃ পৌরাণিক ঘটনাবলম্বনেই অভিনয়ের "পালা” রচিত হইত। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোকের মনোরঞ্জনের জন্য যাত্রা গাহনা হইত বলিয়া সময় সময় অকারণ হাস্যোদ্দীপন-জন্য সং আনিতে হইত। সং আসরে আসিয়া যে অভিনয় করিত, তাহা সকল সময় সুরুচি-সঙ্গত হইত না এবং সে সময় সময় অবান্তর উক্তি করিত। সং আসিয়া হয়ত জিজ্ঞাসা করিত, তাহার জাতি নির্ণয় কে করিতে পারেন? এক জন হয়ত তাহার পরিচয় চাহিত এবং সে তাহার উত্তরে বলিত: "আমার ঠাকুরদাদা জাত গোয়ালা, ঠাকরুণদিদি উড়ে, আমার বাপ ছিল সাপুড়ে।” তাহাতে দর্শকদিগের মধ্যে এক দল হাস্য করিত।
- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, উপক্রমণিকা, বাঙ্গালা নাটক- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ বক্তৃতা, প্রকাশক- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ৮-৯
- নাটক যখন পড়া হয় কিম্বা গ্রামোফোনের মধ্য দিয়ে শুনি তখন কান শোনে আর মন সঙ্গে সঙ্গেই নটনটীদের অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি মায় দৃশ্যপটগুলো পর্যন্ত চোখের কোন সাহায্য না নিয়েই কল্পনায় দেখে চলে, ছবির বেলায় এর বিপরীত কাণ্ড ঘটে,—চোখ দেখলে রূপের ছাপগুলো, মন শুনে চল্লো কানের শোনার অপেক্ষা না রেখে ছবি যা বলছে তা; বায়স্কোপের ধরা ছবি, চোখে দেখি শুধু তার চলা ফেরা, ছবি কিন্তু যা বল্লে সেটা মন শুনে নেয়।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর,শিল্প ও ভাষা, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- যিনি যুগের মানুষ, যুগাবতার, তিনি গিরীশ বাবুর ‘চৈতন্য লীলা’ নাটকের অভিনয় দেখে ভাবাবিষ্ট হয়েছিলেন; সংজ্ঞা হ’লে নাটককারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। গিরিশ বাবু তখন জগাইএর ভূমিকা গ্রহণ করে’ জীবন্ত জগাইরূপে গ্রীনরুমে অধিষ্ঠান কচ্চেন।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, খোদার উপর খোদকারী, কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- প্রবর্ত্তক পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬০
- নাটকখানি বামাচরণবাবুকে শুনাইয়া দিবার পরামর্শ আমার কাছে মন্দ লাগিল না; কারণ, সে নাটকে নিন্দাযোগ্য ছিদ্র লেশমাত্র ছিল না এইরূপ আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস। অতএব আর-একদিন তর্কসভার বিশেষ অধিবেশন আহূত হইল, ছাত্রবৃন্দের সমক্ষে আমি আমার নাটকখানি পাঠ করিলাম এবং বামাচরণবাবু তাহার সমালোচনা করিলেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অধ্যাপক, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩৭০
- ক্রমে ধনিগণ অনুভব করিলেন যে ইংরাজী নাটক অভিনয় করিলে সাধারণের প্রীতিকর হয় না। এই জন্য বাঙ্গালা নাটকের অভিনয়ের দিকে তাঁহাদের দৃষ্টি পড়িল। এই সময়ে সংস্কৃত কালেজের অন্যতম অধ্যাপক রামনারায়ণ তর্করত্ন মহাশর কোনও ধনি-প্রদত্ত পারিতোষিক লাভের উদ্দেশে “কুলীনকুল সর্ব্বস্ব” নামক এক নাটক রচনা করিয়াছিলেন। সুপ্রসিদ্ধ যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর মহাশয়ের প্ররোচনায় ওরিয়েণ্টাল থিয়েটারে একবার তাহার অভিনয় হয়। ইহাতেই দেশীর নাটক অভিনয়ের দ্বার খুলিয়া গেল।
- শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৬
- নট-নাট্যকার গিরিশচন্দ্র রাণা প্রতাপসিংহকে অবলম্বন ক’রে একখানি ঐতিহাসিক নাটক লিখতে সুরু করেছিলেন। রচনাকার্য কিছুদূর অগ্রসর হবার পর তিনি খবর পান, দ্বিজেন্দ্রলালও রচনা করেছেন ‘রাণা প্রতাপ’ নাটক। সঙ্গে সঙ্গে গিরিশচন্দ্র লেখনী ত্যাগ করেন। পরে সেই অসমাপ্ত নাটকখানি 'অর্চনা’র কয়েক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
- হেমেন্দ্রকুমার রায়, দিলীপকুমার রায়, এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড , প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮০
- বাল্যকালে বাল্মীকিপ্রতিভা-নামক একটি গীতিনাট্য রচনা করিয়া ‘বিদ্বজ্জনসমাগম’-নামক সম্মিলন উপলক্ষে অভিনয় করিয়াছিলাম। বঙ্কিমচন্দ্র এবং অন্যান্য অনেক রসজ্ঞ লোকের নিকট সেই ক্ষুদ্র নাটকটি প্রীতিপদ হইয়াছিল। সেই নাটকের মূল ভাবটি, এমন-কি, স্থানে স্থানে তাহার ভাষা পর্যন্ত বিহারীলালের সারদামঙ্গলের আরম্ভভাগ হইতে গৃহীত।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫০
- সেক্সপীয়রের সঙ্গে আমার পরিচয় ক্রমে ঘনিষ্ঠ বন্ধত্বে পরিণত হইয়াছিল এবং বাল্যকালে আমি যেটকু পড়িয়াছিলাম, তাহার ফলেই অমর কবির নাটকের প্রতি—বিশেষতঃ, বিয়োগান্ত নাটকের প্রতি—আমার অনুরাগ বৃদ্ধি পাইল।
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আত্মচরিত- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক- ওরিয়েণ্ট বুক কোম্পানি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২
- রঙ্গালয়ের নট-নাট্যকাররা সাধারণতঃ নিজেদের রচনায় বা ভাষায় কাব্যরস বা সাহিত্যরস বিতরণের চেষ্টা করতেন না। কিন্তু ক্ষীরোদপ্রসাদ ও দ্বিজেন্দ্রলাল প্রথমে ছিলেন কবি, পরে তাই নাটকেও উচ্চশ্রেণীর কাব্যরসকে পরিহার করতে পারেন নি এবং এইজন্যে তাঁদের নাটক নট-নাট্যকারদের নাটকের চেয়ে পাঠ ক’রে বেশী আনন্দ পাওয়া যায়।
- হেমেন্দ্রকুমার রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১-৫২
- এইবারে বড়ো বাল্মীকিপ্রতিভার গল্প শোনো। বড়ো বলছি এইজন্য, ও-রকম মহা ধুমধামে বাল্মীকিপ্রতিভা হয় নি আর। রবিকাকা তখন আমাদের দলের হেড, সাজপোশাক স্টেজ আঁকবার ভার আমাদের উপরে। ঐ সেবার থেকেই ও-সব কাজ আমাদের হাতে পেলুম। তার কিছুকাল আগে একবার বাল্মীকিপ্রতিভা নাটক.করে আদিব্রাহ্মসমাজের জন্য এক পত্তন টাকা তোলা হয়ে গেছে। বেশ কয়েক হাজার টাকা উঠেছিল এই নাটক করে।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঘরোয়া, দশম পরিচ্ছেদ, ঘরোয়া-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক-বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৬
- সুমিত্রা তাঁহাকে কখনো তুমি, কখনো আপনি বলিয়া সসম্মানে কথা কহিত, এখন সেইভাবেই কহিল, অধিকাংশের মত যেখানে ব্যক্তিবিশেষের গায়ের জোরে পরাভূত হয়, তাকে আর যাই বলুক সভা বলে না! কিন্তু এই নাটক অভিনয় করবারই যদি আপনার সঙ্কল্প ছিল পূর্ব্বাহ্নে জানাননি কেন?
ডাক্তার কহিলেন, না হলেই ছিল ভাল, কিন্তু অবস্থাবিশেষে নাটক যদি হয়েও থাকে সুমিত্রা, অভিনয়টা যে ভাল হয়েছে, তা তোমাদের স্বীকার করতে হবে।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৮
- রাত্রে গেলেম থিয়েটারে অভিনয় দেখতে। নাটক ও নাট্যাভিনয় পারস্যে হালের আমদানি। এখনো লোকের মনে ভালো করে বসে নি। তাই সমস্ত ব্যাপারটা কাঁচা রকমের ঠেকল। শাহনামা থেকে নাটকের গল্পটি নেওয়া। আমাদের দেশের নাটকের মতো প্রায়ই মাঝে মাঝে গান, এবং বোধ করি দেশাভিমানের উচ্ছ্বাস। মেয়েদের ভূমিকা অধিকাংশই মুসলমান মেয়েরা নিয়েছে দেখে বিস্ময় বোধ হল।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাপানে-পারস্যে, অষ্টম পরিচ্ছেদ, জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৫
- স্বদেশী আন্দোলনের যুগে নাট্যজগৎ থেকে সর্বপ্রথম সাড়া দিয়েছিলেন ক্ষীরোদপ্রসাদ, জাতীয় ভাবদ্যোতক নাটক “প্রতাপাদিত্য” রচনা ক’রে। গত শতাব্দীতে যখন মহাত্মা গান্ধীও অচ্ছূত বা অস্পৃশ্যদের পক্ষাবলম্বন করেন নি, তখন তিনি “কুমারী” নাটকে সেই সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তাঁর “রঘুবীরে”ও হিংসা ও অহিংসা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তাশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর “আলমগীর” নাটকে দেখি, পরস্পরের প্রবল শত্রু হয়েও জাতির ও দেশের কল্যাণের জন্যে হিন্দু ও মুসলমান পরস্পরের প্রেমালিঙ্গনে আবদ্ধ হ’তে পারে।
- হেমেন্দ্রকুমার রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
- এই নাটকের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছিলাম বলেই গ্রামগঞ্জে, সর্বত্র এই নাটক আমাদের করতে হয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই এই নাটককে গণনাট্যের আদর্শে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। যা আমি এখনো আছি। কলকাতা শহরের কয়েকটা হল কেন্দ্রিক নাট্য আন্দোলনে আমার বিশ্বাস কম, ওই কটা জায়গায় কয়জন "গণ" যায়? আজকের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন অনেকটা সেইরকম নাটকবিলাসীদের হাতে পড়েছে।
- ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, আত্মজীবনী, ভানু সমগ্র, পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১১৫
- কল্পনামূলক যা তাকে প্রকৃত ঘটনার নিয়মে গাঁথা চলে না, আর ঘটনামূলক নাটক সেখানেও একেবারে পাত্র-পাত্রীর সঠিক চেহারাটি নিয়ে কায চলে না, কেননা যে ভাব যে রস ধ’রতে চেয়েছেন রচয়িতা, তা রচয়িতার কল্পিত পাত্র-পাত্রীর চেহারার সঙ্গে যতটা পারা যায় মেলাতে হয় বেশ-কারকে। এক-একজন বেশ সুঠাম সুশ্রী, পাঠও করতে পারলে বেশ, কিন্তু তবু নাটকের নায়ক-বিশেষের পার্ট তাকে দেওয়া গেল না, কেননা সেখানে নাটক রচয়িতার কল্পিতের সঙ্গে বিশ্ব-রচয়িতার কল্পিত মানুষটির anatomy গঠন ইত্যাদি মিল্লো না।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্প ও দেহতত্ত্ব, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১০
- গ্রীকরা সর্ব বিষয়ে কতখানি উন্নতিলাভ করেছিল তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। তাদের অপূর্ব ভাস্কর্য এবং স্থাপত্যের নিদর্শনগুলি দেখলে তবেই বোঝা যায়, কতখানি ছিল তাদের ধীশক্তি আর শিল্পচাতুর্য। ফিডিয়াস ছিলেন সে যুগের খ্যাতনামা ভাস্কর—তিনি ছাড়াও আরও অনেকে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। এ ছাড়া গ্রীকদের রচিত নাটক— বিয়োগান্ত মিলনান্ত দুই-ই, এখনও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাটকের মধ্যে স্থান পাবার যোগ্য।
- জওহরলাল নেহেরু, গ্রীসের বিগত গৌরব, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০
- যে-সকল ঘটনা মানবচরিত্রকে আশ্রয় করে ব্যক্ত হতে থাকে তাই নাকি প্রধানত নাটকের উপাদান, এইজন্যেই অন্য দেশের সাহিত্যে দেখতে পাই বিশ্বপ্রকৃতিকে নাটকে কেবল আভাসে রক্ষা করা হয় মাত্র, তার মধ্যে তাকে বেশি জায়গা দেবার অবকাশ থাকে না। আমাদের দেশের প্রাচীন যে নাটকগুলি আজ পর্যন্ত খ্যাতি রক্ষা করে আসছে তাতে দেখতে পাই, প্রকৃতিও নাটকের মধ্যে নিজের অংশ থেকে বঞ্চিত হয় না।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তপোবন, শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৪
- আমাদের দেশে হলিউডের নকলে চলচ্চিত্র-শিল্পের দিনে-দিনে যে কত অধঃপতন হচ্ছে, তা নিয়ে বিলাপ করাও নিষ্ফল। আমি রাষ্ট্রের সাহায্যের কথা বলেছি, কিন্তু এখানে সিনেমা নাটকের ওপর রাষ্ট্র বা কমিউনিস্ট পার্টির দরদ আছে, খবরদারী নেই। চলচ্চিত্র এবং অভিনয়ের গল্প ও নাটক নির্বাচন করেন লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘ। এঁদের ইউনিয়ন থেকেই এগুলো সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়, লোকে পয়সা দিয়ে দেখে এবং যে আয় হয়, তা থেকে শিল্পীরা মজুরী পান এবং তৈরী ও পরিচালনার খরচাও উঠে আসে।
- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, আমার দেখা রাশিয়া - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা২৫-২৬
- একদিন স্বর্গীয় কবিবর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমার হাতে ভিক্টর হিউগোর একখানি নাটক দিয়ে বললেন, ‘প’ড়ে দেখবেন। ভালো লাগে তো বাংলায় তর্জমা করবেন।’
নাটকখানি ভালো লাগল। তাকে অবলম্বন ক’রে বাংলায় একখানি নাটক রচনা ক’রে ফেললুম। কোন রঙ্গালয়ের মুখ তাকিয়ে নয়, খেলাচ্ছলে মনের খেয়ালে। রচনাটি বন্ধুমহলে পাঠ করলুম। সকলে সুখ্যাতি করলেন।
মণিলালের মুখে সেই নাটকের কথা শুনে ম্যাডানদের কর্ণধার (পরে “কালী ফিল্মসে”র মালিক) শ্রীপ্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় নাটকের পাণ্ডুলিপি আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন। দুই-চারদিন পরেই শুনলুম, নাটকখানি কর্ণওয়ালিশ থিয়েটারে অভিনয়ের জন্যে মনোনীত হয়েছে।- হেমেন্দ্রকুমার রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪-৫৫
- নবনাটকখানি রামনারায়ণ তর্করত্ন প্রণীত, বহুবিবাহপ্রথায় পারিবারিক দুঃখজ্বালা অশান্তি প্রকটন সূত্রে লোকশিক্ষা দেওয়া ঐ নাটকের উদ্দেশ্য। আমাদের বাড়ীর ছেলেরা আত্মীয় স্বজন বন্ধু সেই নাটকের পাত্রপাত্রী সেজেছিলেন। মেয়ের পার্ট অবিশ্যি পুরুষের নিতে হয়েছিল।
- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর (মেজদাদা), আমার বাল্যকথা- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বৈতানিক প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১-৫২
- সংস্কৃত নাটক গ্রীক বা অন্য কোন নাটকের প্রভাবে প্রভাবিত নহে। তাহা সর্বতোভাবে ভারতীয়- ভারতীয়ের মনোরঞ্জন-জন্য ভারতীয় কবি কর্তৃক রচিত-ভারতীয় সংস্কৃতির সহিত সামঞ্জস্যসম্পন্ন। ভারতবর্ষের বৈশিষ্ট্য এই যে, একদিকে অভ্রভেদী-শিখরসম্পন্ন হিমাচল-আর অন্য কয় দিকে উত্তুঙ্গতরঙ্গসঙ্কুল সাগর এই দেশকে প্রতিবেশী দেশসমূহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ইহার অধিবাসীদিগকে স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উদ্ভব করিতে প্ররোচিত করিয়াছিল। সেইজন্য ভারতীয় প্রকৃতি, ভারতীয় দর্শন, ভারতীয় সাহিত্য ও ভারতীয় সমাজ-ব্যবস্থা স্বতন্ত্র ও স্বয়ং-সম্পূর্ণ। বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত ভাষা হইতে উদ্ভুত-বাঙ্গালা নাটকও সম্পূর্ণরূপে সংস্কৃত রচনার প্রভাব-মুক্ত হইতে পারে নাই। কিন্তু বাঙ্গালা নাটকের আদর্শ সংস্কৃত নাটক নহে। বাঙ্গালায় রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হইলে সংস্কৃত নাটকের অনুবাদে ও অনুকরণে রচিত অনেক নাটক অভিনীত হইয়াছিল কিন্তু লোকের প্রীতি অর্জন করিতে পারে নাই।
- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, উপক্রমণিকা, বাঙ্গালা নাটক- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ বক্তৃতা, প্রকাশক- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,, পৃষ্ঠা ১০-১১
- বিহারীর মুখের ভাব ক্রমশ অত্যন্ত কঠিন হইয়া আসিল; কহিল, “তুমি অনেক স্পষ্ট কথা বলিবার চেষ্টা করিয়াছ, এবার আমিও একটা স্পষ্ট কথা বলি। তুমি আজ যে কাণ্ডটা করিলে এবং যে কথাগুলা বলিতেছ, ইহার অধিকাংশই তুমি যে সাহিত্য পড়িয়াছ তাহা হইতে চুরি। ইহার বারো-আনাই নাটক এবং নভেল।”
বিনোদিনী। নাটক! নভেল!
বিহারী। হাঁ, নাটক, নভেল। তাও খুব উঁচুদরের নয়। তুমি মনে করিতেছ, এ সমস্ত তোমার নিজের― তাহা নহে। এসবই ছাপাখানার প্রতিধ্বনি। যদি তুমি নিতান্ত নির্বোধ মূর্খ সরলা বালিকা হইতে, তাহা হইলেও সংসারে ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত হইতে না― কিন্তু নাটকের নায়িকা স্টেজের উপরেই শোভা পায়, ঘরে তাহাকে লইয়া চলে না।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চোখের বালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫০-১৫১
- নবনাটক আর মানময়ী নামক একটি গীতিনাট্য সর্বপ্রথম আমাদের বাড়ীতে অভিনীত হয়। পরে অলীকবাবু, হঠাৎ নবাব প্রভৃতি আরো অনেকগুলি নাটকের অভিনয় হয়। ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ আর ‘রাজা ও রাণী’ এই দুই নাট্য আমাদের বাড়ীর মেয়ে পুরুষ সকলে মিলে গড়ে তোলা গিয়েছিল।
- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর (মেজদাদা), আমার বাল্যকথা- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বৈতানিক প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
- প্রতিভাশূন্যের অনুকরণ বড় কদর্য্য হয় বটে। যাহার যে বিষয়ে নৈসর্গিক শক্তি নাই, যে চিরকালই অন্যকারী থাকে তাহার স্বাতন্ত্র কখন দেখা যায় না। ইউরোপীয় নাটক ইহার বিশিষ্ট উদাহরণ। ইউরোপীয় জাতি মাত্রেরই নাটক আদৌ যুনানী নাটকের অনুকরণ। কিন্তু প্রতিভার গুণে স্পেনীয় এবং ইংলণ্ডীয় নাটক শীঘ্রই স্বাতন্ত্র্য লাভ করিল—ইংলণ্ড এ বিষয়ে গ্রীসের সমকক্ষ হইল। এদিকে, এতদ্বিষয়ে স্বাভাবিক শক্তিশূন্য রোমীয়, ইতালীয়, ফরাসি এবং জর্ম্মনীয়গণ, অনুকারীই রহিলেন। অনেকেই বলেন, যে শেষোক্ত জাতি সকলের নাটকের অপেক্ষাকৃত অনুৎকর্ষ তাঁহাদিগের অনুচিকীর্ষার ফল। এটি ভ্রম। ইহা নৈসর্গিক ক্ষমতার অপ্রতুলেরই ফল। অনুচিকীর্ষাও সেই অপ্রতুলের ফল। অনুচিকীর্ষাও কার্য্য, কারণ নহে।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবিধ সমালোচন- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কাঁঠালপাড়া, প্রকাশসাল- ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ (১২৮৩ বঙ্গাব্দ), প্রকাশসাল- ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪০৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৬-১২৭
- বৃশ্চিকের পুচ্ছদেশেই হুল থাকে, বামাচরণবাবুর সমালোচনার উপসংহারেই তীব্রতম বিষ সঞ্চিত ছিল। আসন গ্রহণ করিবার পূর্বে তিনি বলিলেন, আমার এই নাটকের অনেকগুলি দৃশ্য এবং মূলভাবটি গেটে-রচিত টাসো নাটকের অনুকরণ, এমন-কি অনেকস্থলে অনুবাদ।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অধ্যাপক, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩৭০
- আমার ছেলেবেলার নাটকে অভিনীত চরিত্রগুলো আমার খুব পছন্দের থাকত না। কিন্তু রোগা-পটকা চেহারা ও মিহি কণ্ঠস্বরে জন্য নাটকের পরিচালকরা যে চরিত্রের জন্য আমাকে নির্বাচিত করতেন, সেগুলোই আমাকে করতে হতো। 'শাজাহান'-এ জাহানারা 'পথের শেষে' নাটকে সুখদা, 'মেবার পতন'-এ মানসী, সরলা নাটকে সরলা এছাড়াও কুন্তী সীতা প্রভৃতি চরিত্রগুলোয় অভিনয় করতে হতো।
- ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, আত্মজীবনী, ভানু সমগ্র, পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ১৫
- নাটক হিসাবে ভদ্রার্জুন-এর মূল্য যত সামান্যই কেন হউক না, নূতন পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য ইহার গৌরব পথিপ্রদর্শকের।
- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, উপক্রমণিকা, বাঙ্গালা নাটক- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ বক্তৃতা, প্রকাশক- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ১৩
- দেশসুদ্ধ লোেক চটে উঠল। বলতে লাগল, মেয়েদের কাপড়ে আগুন লাগিয়ে মরা একটা ফ্যাশান হয়েছে।
তোমরা বললে, এ-সমস্ত নাটক করা! তা হবে। কিন্তু, নাটকের তামাশাটা কেবল বাঙালি মেয়েদের শাড়ির উপর দিয়েই হয় কেন আর বাঙালি বীরপুরুষদের কোঁচার উপর দিয়ে হয় না কেন, সেটাও তো ভেবে দেখা উচিত।- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্ত্রীর পত্র, গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৭৯
- বিশিষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন নাট্টকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তিনি অনেক বিষয়েই কবিতা, গল্প ও নাটক লিখিয়াছেন। তাঁহার লেখার প্রতিপাদ্য ছিল ধর্ম্ম, সমাজ ও স্বদেশপ্রেমমূলক রাজনীতিক নাটকসমূহ। তাঁহার দীর্ঘ জীবনে নানা ভাব তরঙ্গের ঘাত প্রতিঘাত লাগিয়া ছিল তাই আমরা তাঁহার “বুদ্ধদেব রচিত”, “চৈতন্যলীলা” “বিশ্বমঙ্গল” “শঙ্করাচার্য্য” নামক নাটকসমূহে ধর্ম্মভাব প্রণোদিত চিত্র পাই। অবশ্য অতীত যুগের সংবাদ ও মত নিয়া এই সব নাটক লিখিত হইয়াছিল, এইজন্য তাঁহার ধর্ম্মাত্মক সাহিত্যের মধ্যে আমরা প্রগতির আভাস পাই না। তৎপর, “বেল্লিকবাজার”, “প্রফুল্ল” প্রভৃতি নাটক তাঁহার সমসাময়িক কলিকাতার একদল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবন প্রতিবিম্বিত হইয়াছে।
- ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, সাহিত্যে প্রগতি - ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রকাশক—গিরীন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৯-২১০
- কবির সৃষ্টি যেমন সমগ্র-দৃষ্টির ফল, তেমনই কাব্যরস আস্বাদনে রসিকেরও সেই সমগ্র-দৃষ্টি আবশ্যক। এই রসদৃষ্টি লাভ করিতে হইলে, অর্থাৎ যথার্থ রসিক হইতে হইলে, ‘genuine being’ হইতে হইবে। খণ্ড ক্ষুদ্র সঙ্কীর্ণ সংস্কার বা কতকগুলা অসংলগ্ন চিন্তাপ্রসূত মতবাদের দর্পণে এই বাস্তব-রূপ প্রতিবিম্বিত হয় না। এইরূপ অবাস্তবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের জাতীয় মহাকবি, মহানাট্যকার গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলিতে প্রায়শই দৃষ্টিগোচর হয়। মানব-জীবন বা চরিত্রের যে রূপ তাঁহার নাটকে চিত্রিত হইয়া থাকে, তাহাকে অতিচারী কল্পনার মহামহোৎসব বলা যাইতে পারে। ‘প্রফুল্ল’-নাটক বাঙালী রসিক-সমাজের বড়ই প্রিয়; কিন্তু এই নাটকের অভিনয় দেখিবার কালে যে মানুষের অন্তরতম মনুষ্যত্ব বিদ্রোহী না হয়, সে খাঁটি বাঙালী হইতে পারে, কিন্তু খাঁটি মানুষ নয়।
- মোহিতলাল মজুমদার, অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র, বিবিধ কথা -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৩
- পেট্রোগ্রাডে এবং রাশিয়ার অন্যান্য শহরে ও গ্রামে বিপ্লবের নাটক অভিনীত হয়ে চলল, সে নাটকের দৃশ্যপটের ঘন ঘন পরিবর্তন হচ্ছে। সর্বত্রই দেখা গেল, যুদ্ধের দরুন যে নিদারুণ চাপ দেশের উপরে পড়ছিল তার ফলে আর্থিকব্যবস্থার একটা বিরাট ভাঙন আসন্ন হয়ে উঠেছে। অথচ তখনও ব্যবসাদারেরা তাদের যুদ্ধের বাজারের লাভ ঠিকই গুছিয়ে নিচ্ছে।
- জওহরলাল নেহেরু, বল্শেভিকদের ক্ষমতালাভ, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯৯
- মণিলাল আমার কাছে এসে হাসতে হাসতে বললেন, ‘হেমেন্দ্র, ক্ষীরোদবাবুকে না জানিয়ে তোমার নাটক নেওয়া হয়েছে বলে উনি অভিমান করেছেন। তুমি কাল ওঁর বাড়ীতে গিয়ে নাটকখানি শুনিয়ে এস, তাহ’লেই উনি ঠাণ্ডা হয়ে যাবেন।’
মণিলালের কথামতই কাজ করলুম। আমাকে দেখেই ক্ষীরোদপ্রসাদের মুখ হাস্যোজ্জ্বল হ’য়ে উঠল। সাদরে নীচের একটি ছোট ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে খুব মন দিয়ে নাটকখানি শ্রবণ ক’রে দু-একটি জায়গা একটু বদলে দিতে বললেন। আমিও রাজি হলুম।- হেমেন্দ্রকুমার রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক— নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫
- নয় শতবর্ষ পরে আবার সেই রঙ্গমঞ্চে একটি একটি করিয়া দ্বীপ জ্বলিয়া উঠিতেছে, কালের কৃষ্ণ যবনিকা সরিয়া যাইতেছে। এবার এই পুরাতন রঙ্গমঞ্চে জানিনা কোন মহা নাটকের অভিনয় হইবে!
- শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, তুমি সন্ধ্যার মেঘ, শরদিন্দু অমনিবাস, তৃতীয় খন্ড, আনন্দ পাবলিশার্স, ১৩৮৩, ৪১৬
- মধুসূদন বাংলা নাটক— প্রকৃত বাংলা নাটক প্রথম রচিত করেন, সেজন্য ভাষাকে প্রয়োজনের উপযোগী করেন এবং বাংলায় প্রকৃত নাটকের আদর্শ-প্রতিষ্ঠা করেন-যেন তিনি উপকরণ সংগ্রহ করিয়া নিপুণ শিল্পীর মত প্রতিমা-গঠন করিয়াছিলেন এবং তাহার পরে সেই প্রতিমা শ্রদ্ধার গঙ্গোদকে বিধৌত রত্নবেদীতে প্রতিষ্ঠিত করিয়া-ভক্তির পঞ্চপ্রদীপে তাহার আরতি করিয়াছিলেন এবং আপনার নিষ্ঠায় তাহাতে প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করিতেও সমর্থ হইয়াছিলেন।
- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, মধুসূদন ও দীনবন্ধু, বাঙ্গালা নাটক- হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, গিরিশচন্দ্র ঘোষ বক্তৃতা, প্রকাশক- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,পৃষ্ঠা ৪০
- ১৮৫৭ সালে সিমুলীয়ার বিখ্যাত ধনী অশুতোষ দেব (ছাতু বাবু) উদ্যোগী হইয়া শকুন্তলাকে বাঙ্গালা নাটকাকারে পরিণত করিয়া অভিনর করাইলেন। তৎপরেই মহাভারতের অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ মহোদয় নিজ ভবনে বেণীসংহার নাটকের অভিনয় করাইলেন; এবং কিছু দিন পরে মহাসমারোহে তাহার নিজের অনুবাদিত বিক্রমোর্ব্বশী নাটকের অভিনয় হইল। দেখিতে দেখিতে সহরে বাঙ্গালা নাটক অভিনয়ের প্রথা প্রবর্ত্তিত হইয়া গেল।
- শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৬
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় নাটক সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে নাটক শব্দটি খুঁজুন।