বিষয়বস্তুতে চলুন

পৌত্তলিকতাবাদ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

পৌত্তলিকতাবাদ বা প্যাগানবাদ (ইংরেজি: Paganism) লাতিন শব্দ pāgānus থেকে এসেছে, যার অর্থ 'গ্রামীণ' বা 'পল্লীবাসী', পরবর্তীতে যার অর্থ দাঁড়ায় 'সাধারণ জনগণ'। এটি মুলত চতুর্থ শতাব্দীতে প্রারম্ভিক খ্রিস্টানদের দ্বারা রোমান সাম্রাজ্যের সেই সকল মানুষদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত যারা বহুঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ইহুদি ধর্মের বাইরে অবস্থিত জাতিগত ধর্মবিশ্বাস পালন করতেন। রোমান সাম্রাজ্যের সময়কালে, কোনো ব্যক্তি প্যাগান শ্রেণিভুক্ত হতেন হয় ক্রমবর্ধমান খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর তুলনায় গ্রামীণ ও প্রাদেশিক হওয়ার কারণে, অথবা খ্রিস্টের সৈনিক না হওয়ার কারণে। খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থে এই শ্রেণির জন্য বিকল্প পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হেলেন (গ্রিক পৌত্তলিক), জেন্টাইল (অইহুদী) এবং হিদেন (অসভ্য/পৌত্তলিক)। প্রাচীন গ্রিক-রোমান ধর্মে আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাণী উৎসর্গ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, এবং এটি কোনো ব্যক্তির প্যাগান বা খ্রিস্টান পরিচয় নির্দেশ করত। ব্যাপকভাবে পৌত্তলিকতাবাদকে কৃষক সম্প্রদায়ের ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

থরের হাতুড়িখ্যাত "মিওলনিয়ার" জার্মানিক নব্যপৌত্তলিকতার অন্যতম প্রধান প্রতীক।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • তিনি বাড়িয়ে দেন এক হাত, বাঁকানো পাঁচটা আঙুল,
    সৃষ্টি হয় এক বন্ধন — যা আজও অপরুপ।
    ঊর্ধ্বে ভাসে সরলতা,
    তবু আমার অন্তরের গভীরতম অন্ধকারই হলো পৌত্তলিক কবিতা।
  • অতিনৈতিকতাবাদ ও পৌত্তলিকতাবাদ—ইন্দ্রিয় ও আকাঙ্ক্ষার দমন এবং প্রকাশ - ইতিহাসে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ঘটে। সাধারণত, ধর্ম ও অতিনৈতিকতাবাদ তখনই প্রাধান্য পায় যখন আইন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নৈতিকতাকে বহন করতে হয়। অন্যদিকে, সংশয়বাদ ও পৌত্তলিকতাবাদ (অন্যান্য বিষয় অভিন্ন থাকলে) অগ্রগতি লাভ করে যখন আইন ও সরকারের শক্তি বাড়তে থাকে, যার ফলে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট না করেই গির্জা, পরিবার ও নৈতিকতার প্রভাব হ্রাস পায়।
  • "প্যাগানবাদ" ছিল একটি তাচ্ছিল্যপূর্ণ পরিভাষা, যা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রামীণ প্রকৃতিনির্ভর মানুষের প্রতি উদ্ভাবন করেছিল। তারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে ও সাযুজ্যে বাস করত, আর তাদের উপাসনা-পদ্ধতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত—বিপরীতে শহুরে খ্রিস্টান ধর্মব্যবস্থার পরিকল্পিত চিন্তাকাঠামো, যা মানবমনের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে সচেষ্ট ছিল। কালক্রমে, এই শব্দটি বিশ্বের সমস্ত আধ্যাত্মিক স্বতঃস্ফূর্ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করে: গ্রিক, রোমান, ইরানীয়, ভারতীয়, চীনা, আদিবাসী আমেরিকান—সবাই এর আওতায় আসে। আধুনিক পাশ্চাত্যে খ্রিস্টীয় ধর্মের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী, তাদের জন্য এটি একটি সম্মানিত পরিচয় হয়ে ওঠে। তবে এর আধ্যাত্মিক মাত্রা—যা খ্রিস্টীয় ধর্মের প্রভাবে ঢাকা পড়েছিল—এখনো পূর্ণভাবে উদ্ধার হয়নি। আমার মতে, হিন্দুধর্মই প্রাচীন প্যাগানবাদকে তার সমস্ত মাত্রায় ধারণ করে আছে। সেই অর্থে, আমি একজন প্যাগান। "বহুঈশ্বরবাদ" শব্দটি বাইবেল কেন্দ্রিক আলোচনা থেকে এসেছে, যার ভিত্তি "আস্তিকতা" ধারণায় প্রোথিত। আমার কাছে এই পরিভাষাগুলি অপ্রাসঙ্গিক। এগুলি শুধু বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমার চিন্তাজগৎ ভিন্ন এক মহাকাশে বিচরণ করে, যার সূচনা "নিজেকে জানো" দিয়ে এবং সমাপ্তি "তুমিই সেই"—এই উপলব্ধির মাধ্যমে।
  • পৌত্তলিকতায় যেসব বীরের উপাখ্যান রয়েছে, তাদেরই যথাযথ প্রতিরূপ হল রোমান ক্যাথলিক মতবাদের সাধু-সন্তরা এবং ইসলামের দরবেশ-পীরগণ। একসময়ের হেরাক্লিস, থিসিউস, হেক্টর কিংবা রোমুলাসের গৌরবগাথাকে মুছে দিয়ে এখন সমাদৃত হয় ডোমিনিক, ফ্রান্সিস, অ্যান্থনি আর বেনেডিক্টের নাম। দানবের সংহার, অত্যাচারীর পরাজয়, স্বদেশের শৌর্যবান রক্ষাকবচ—এসব বীরত্বের স্থান দখল করেছে নতুন যুগের 'পুণ্যকর্ম': চাবুকের ফটাক শব্দে আত্মপ্রহার, অনাহারে ক্ষীণকায় দেহ, ভীরুতাকে ঢাকার আড়ালে নম্রতার মুখোশ, অন্ধ আনুগত্যের নতজানু সমর্পণ। মানবমহিমা এখন স্বর্গীয় স্বীকৃতি পায় না বীরত্বে, বরং স্বীকৃতি পায় আত্মদমনের নামে আত্মবিলোপের নিঃশব্দ নাট্যে।
    • ডেভিড হিউম, দ্যা ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব রিলিজিয়ন (১৭৫৭), দশম পর্ব - "উইথ রিগার্ডস টু কারেজ আবেইজমেন্ট"।
  • একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য উপেক্ষিত থেকেছে: পাপের বিপরীত শব্দ কোনোভাবেই পুণ্য নয়। পুণ্যের এই ধারণা আংশিকভাবে একটি পৌত্তলিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা কেবল মানবিক মাপকাঠিতে সন্তুষ্ট থাকে। আর ঠিক সেই কারণেই এটি পাপের প্রকৃত অর্থ বোঝে না—এই সত্য যে সকল পাপই ঈশ্বরের সম্মুখে সংঘটিত। না, পাপের প্রকৃত বিপরীত হলো বিশ্বাস।
  • খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে এর চাইতে ভয়ঙ্কর আপত্তি আর কী হতে পারতো! যদি পৌত্তলিকতার দেওয়া পাপের সংজ্ঞাকেই খ্রিস্টধর্মকে সঠিক বলে স্বীকার করতে হতো!
  • দেবতাদের উৎপত্তিকথা নিয়ে রচিত প্রাচীনতম গ্রন্থের লেখক হেসিয়ডের দাবি ছিল—অজানা প্রাকৃতিক শক্তিই দেবতা ও মানবের স্রষ্টা। এই যুক্তির নিরিখে বলা চলে, পৌত্তলিকতা নাস্তিক্যবাদেরই এক অন্ধবিশ্বাসী রূপ।
    • পিয়ের-সাইমন ল্যাপ্লেস, অন কেজুয়ালিটি (পাণ্ডুলিপি), রজার হ্যান, "পিয়ের-সাইমন ল্যাপ্লেস, ১৭৪৯–১৮২৭: একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিজ্ঞানী"। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০৫, পৃ. ২৩২।
  • আমি নিজেকে সর্বদা পৌত্তলিক হিসেবেই দেখেছি—যেদিন থেকে এই শব্দটির গভীর অর্থ উপলব্ধি করেছি, সেদিন থেকেই এই পরিচয় আমার অস্তিত্বের সঙ্গে একীভূত হয়ে গেছে।
  • আমরা নিজেদেরকে একবিংশ শতাব্দীর নৃবিজ্ঞানী হিসেবে দেখেছি যারা ১৯৬০-এর দশকের অন্ধকার যুগে কোথাও একটি সময় কাঠামোয় বাস করছিল। এই মহাকাশীয় উপনিবেশে আমরা চেষ্টা করছিলাম এক নতুন পৌত্তলিকতার জন্ম দিতে, শিল্পরূপে জীবনের প্রতি এক নবীন নিষ্ঠা জাগিয়ে তুলতে।
  • আমি শুনেছি, পৌত্তলিকতা ভগ্নহৃদয় মানুষের ধর্ম। কিন্তু সবারই প্রাণে কাঁটার আঁচর তো জীবন কেটে যায়। আমরা এমন এক ধর্মের মানুষ, যারা ক্ষত শুকোতে শেখায়, আত্মার ফাটলে অমৃতের স্রোত বয়ে আনে।"
  • সারা জীবন ক্যাথলিক ধর্মের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেছি। কিন্তু সেই টানের উৎস খ্রিস্টধর্মে নয়, বরং এর পৌত্তলিক সত্তায়। পণ্ডিত দার্শনিকরা আমাকে মুগ্ধ করেন — যিশুর পক্ষালম্বনকারী হিসেবে নয়, বরং এরিস্টটলের চিন্তার পরিশীলিত রূপদাতা হিসেবে। গির্জার ধর্মতাত্ত্বিক জীবন আমাকে নাড়া দেয়—কারণ তা বছরের আবর্তনে, ঋতুচক্রে, প্রাণী ও মানুষের জীবনতালে প্রাচীনতম সাড়াগুলোর অনুরণন বহন করে। আমার কাছে শেখা বার্তাগুলো হলো 'পথের আর্চনা'-এর রহস্যোন্মোচন—জন্ম, কৈশোর, যৌনমিলন, পেশা, রোগ-মৃত্যু, সম্মিলন, প্রায়শ্চিত্তের মতো মানবীয় দৈহিক বাস্তবতাকে অতীন্দ্রিয় রূপদান। ক্যাথলিকবাদ আজও জীবন-প্রতিক্রিয়ার একটি কাঠামো প্রদান করে, যা একইসাথে ব্যক্তিগত ও সামূহিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক।
  • তবুও যীশুর শিষ্যরা, প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত যোহন ব্যতীত, অপমানজনক মৃত্যু ভোগ করেছিলেন, তারা সুসমাচারের বীজ বপন করেছিলেন এবং মানুষের উপর যাজকত্ব অর্পণ করেছিলেন, যা পৃথিবীতে কয়েক প্রজন্ম ধরে স্থায়ী ছিল, কিন্তু একটা সময় এসেছিল যখন পৌত্তলিকতা খ্রিস্টধর্মে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং অবশেষে খ্রিস্টধর্ম পৌত্তলিকদের ধর্মান্তরিত করার পরিবর্তে পৌত্তলিকতায় রূপান্তরিত হয়েছিল। এবং পরবর্তীকালে মানুষের মধ্য থেকে যাজকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, এই কর্তৃত্বকে স্বর্গে পুনঃআহরণ করা হয়েছিল এবং পৃথিবীকে যাজকত্ব ছাড়াই - ঈশ্বরের শক্তি ছাড়াই - গির্জা এবং ঈশ্বরের রাজ্য ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
  • ইউরোপের জন্য পৌত্তলিক পুনর্জাগরণ অত্যন্ত জরুরি। এই মহাদেশের মানসিক সুস্থতা ফিরে পেতে এর আধ্যাত্মিক অতীতের সঙ্গে পুনর্মিলন আবশ্যক। খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের ছায়ায় ইউরোপ নিজ পূর্বপুরুষদের, নিজ ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করতে শিখেছে—যা এর ভবিষ্যতের জন্যও অমঙ্গলকর। নিজ ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলেই ইউরোপ আত্মিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে; শিকড় ছিন্ন করে ফেলার অভিশাপ এখনও বহন করছে। আধ্যাত্মিকভাবে সুস্থ হতে গেলে ইউরোপকে অবশ্যই তার পৌত্তলিক অতীতকে সম্মানের সঙ্গে পুনরুদ্ধার করতে হবে, অন্তত তাকে আর অবজ্ঞার চোখে দেখা চলবে না... আত্মসন্ধানের এই পথে ইউরোপীয় দেশগুলিকে তাদের প্রাচীন দেবদেবীদের পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তবে এটি যান্ত্রিকভাবে সম্ভব নয়। তাদের সেই চেতনাকে পুনরায় ধারণ করতে হবে, যা বহু দেবতার ভাষায় একদিন নিজেকে প্রকাশ করেছিল। আমার বই দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ রেভেলেশন: নেমস অফ গডস-এ আমি এক নতুন ধরনের তীর্থযাত্রার কথা বলেছি—প্রাচীন দেবযুগে প্রত্যাবর্তনের যাত্রা। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় পণ্ডিতেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের উচিত পৌত্তলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরোপের ইতিহাস পুনর্লিখন, যেখানে উঠে আসবে কী নির্মমভাবে পৌত্তলিক বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে দমন করা হয়েছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত পৌত্তলিক মন্দির, অশুচি করা পবিত্র বনভূমি ও তীর্থস্থানগুলির একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা প্রয়োজন। ইউরোপের পৌত্তলিকদেরও উচিত এগুলির কিছুকে পুনরায় তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা—যেন সেগুলো হয়ে ওঠে আত্মানুসন্ধানের নতুন মেরুকেন্দ্র।
  • হিন্দু দেবমণ্ডলী সময়ের সাথে কিছুটা রূপান্তরিত হলেও প্রাচীন দেবতাদের প্রাণস্পন্দন এখনও সক্রিয়, যদিও তাদের নামকরণে এসেছে পরিবর্তন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভারতের মধ্যে রয়েছে এক অনন্য ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার বোধ—যা পরবর্তী সময়ে ধর্ম পরিবর্তন করা অন্যান্য জাতির মধ্যে অনুপস্থিত। এও স্বীকৃত যে হিন্দু ধর্মে সংরক্ষিত হয়েছে প্রাচীন বিশ্বাসের স্তর ও রূপের এক জটিল স্তরভিত্তিক সমাহার। ফলে এর অধ্যয়ন কেবল ভারতীয় উপমহাদেশেরই নয়, ইউরোপ, গ্রিস, রোম, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ও বাল্টিক অঞ্চল, জার্মানিক ও স্লাভিক জনগোষ্ঠী, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের প্রাচীন ধর্মীয় চেতনা, অন্তর্দৃষ্টি ও আচার-প্রথার সাথেও আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে পারে। সংক্ষেপে, এই গবেষণা আধ্যাত্মিক চেতনার এক সর্বজনীন রূপ উদ্ঘাটিত করতে পারে—যা হিন্দুধর্মের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বমানবের সম্মিলিত আত্মিক সত্তার প্রতিধ্বনি।
  • এটা স্বীকার করতেই হবে, পৌত্তলিক আন্দোলনের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিরোধী শক্তি অত্যন্ত প্রভাবশালী, যাদের বলপ্রয়োগ ও দমনপীড়নের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটি নতুন চেতনার উত্থান ঘটছে। পৌত্তলিকরা যখন কথা বলতে শুরু করবে, তাদের কণ্ঠস্বর পৃথিবীর প্রান্তে পৌঁছাবে—নিরবতা ভেঙে যাবে ইতিহাসের প্রস্তরগাত্রে।
  • যারা খ্রিস্টধর্মকে বিশ্বাস করা খুব কঠিন বলে মনে করেন, তাদের পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করা উচিত, এটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু অবিশ্বাসেরই যে এক অপ্রতিরোধ্য বিশ্বাসপ্রবণতা রয়েছে!
    • ফ্রান্সিস থম্পসন, "পৌত্তলিকতা: প্রাচীন ও নবীন",এ রিনেগেড পোয়েট অ্যান্ড আদার এসেজ (বোস্টন: দ্য বল পাবলিশিং কোং, ১৯১০), পৃ. ৪৮
  • আমাদের দেশপ্রেমের ধারণা সরাসরি রোমানদের কাছ থেকে এসেছে।... এটি এক ধরনের পৌত্তলিক গুণ—যদিও 'পৌত্তলিক' ও 'গুণ' শব্দ দুটি পরস্পরবিরোধী মনে হতে পারে। রোমানদের প্রসঙ্গে 'পৌত্তলিক' শব্দটি প্রাথমিক খ্রিস্টান সমালোচকদের দেওয়া ভীতিসঞ্চারী অর্থই ধারণ করে। রোমানরা প্রকৃতপক্ষেই নাস্তিকতা ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল; কিন্তু তাদের মূর্তিপূজা ছিল পাথর বা ব্রোঞ্জের মূর্তির প্রতি নয়, বরং নিজেদের প্রতিই। এই আত্ম-পূজাই তারা দেশপ্রেমের আকারে আমাদের কাছে দান করেছে।
  • ভারত, রোম, আয়ারল্যান্ডইরান—এসব অঞ্চলে পুরোহিততন্ত্রের প্রভাব ছিল গভীর ও সুস্পষ্ট।... ইন্দো-ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর বিস্তারের বহু শতাব্দী পরেও আমরা পশ্চিমে ব্রিটেন, দক্ষিণে ইতালি, পূর্বে ভারত ও ইরানে পুরোহিত সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। যদিও এই সংস্কৃতিগুলো ভৌগোলিকভাবে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন, তবু পুরোহিতদের আচার-অনুষ্ঠান, এমনকি ধর্মীয় পরিভাষাতেও লক্ষ্যণীয় সাদৃশ্য বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, রোমান 'ফ্লামেন' (পুরোহিত) সংশ্লিষ্ট ট্যাবু বা নিষেধাবলির সঙ্গে ভারতের ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের পালনীয় বিধিনিষেধের আশ্চর্য মিল রয়েছে।
    ভারতীয় পুরোহিততন্ত্রের মতোই সেল্টিক ড্রুইডদের শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল বছরের পর বছর ধরে প্রশিক্ষণ এবং অগণিত শ্লোকের মৌখিক স্মৃতিধারণ—কারণ তাদের পবিত্র জ্ঞানকাণ্ড মুখে মুখে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হতো।... সেল্টিক, রোমান ও ইন্দো-ইরানীয়রা সকলেই একই ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশীদার ছিল, যার শিকড় প্রোথিত আছে প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় যুগের গর্ভে।
    • শান এম.এম. উইন, স্বর্গ, বীর এবং সুখ: পশ্চিমা ভাবাদর্শের ইন্দো-ইউরোপীয় শেকড়, ইউনিভার্সিটি প্রেস অব আমেরিকা, ল্যানহ্যাম-নিউ ইয়র্ক-লন্ডন, ১৯৯৫।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]