বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রসন্নময়ী দেবী

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
একটী জীবন যন্ত্র বিকল হইলে
মিলিত ললিত তান
নীরব হয় সে গান,
জীবন বীণার তার বাজে নাগো আর,
ভগ্নস্বরে একা করি মৃদুল ঝঙ্কার।
―প্রসন্নময়ী দেবী

প্রসন্নময়ী দেবী (২৯ সেপ্টেম্বর ১৮৫৬ - ২৫ নভেম্বর ১৯৩৯) ছিলেন একজন বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক ও ভ্রমণকাহিনী লেখিকা। বারো বছর বয়সে প্রসন্নময়ী দেবীর কবিতার বই 'আধ আধ ভাষিণী' প্রকাশিত হয়। এই বইটিতে সতেরটি ছোট ছোট কবিতা ছিল। প্রসন্নময়ীর দ্বিতীয় কবিতার বই ‘বনলতা’। ১২৮৭ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। এই বইটিতে পঁচিশটি খণ্ড কবিতা ছিল। বনলতা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রসন্নময়ী সাহিত্য সমাজে পরিচিত হন। সেই আমলের সাহিত্য সমালোচক রাজনারায়ণ বসু যেমন এর প্রশংসা করেন তেমনই ‘আর্য্যদর্শন’, ‘ইন্ডিয়ান নেশন’, ‘দ্য ইন্ডিয়ান মিরর’, ‘ব্রাহ্ম পাবলিক ওপিনিয়ন’, ‘ক্যালকাটা রিভিউ’ প্রভৃতি পত্রিকায় এই বইয়ের উৎসাহব্যঞ্জক সমালোচনা প্রকাশিত হয়। প্রসন্নময়ীর তৃতীয় গ্রন্থ ‘নীহারিকা’। এর প্রথম ভাগ ১২৯০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। আর দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮১৮ শকাব্দে। তার অন্যান্য রচনা গুলির মধ্যে ‘অশোকা’((উপন্যাস―সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনা অবলম্বনে), ‘পূর্বকথা’, ‘আর্যাবর্ত্ত’(উত্তর ভারত ভ্রমণ-কাহিনী) উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘ভারতবর্ষ’, ‘মানসী ও মর্ম্মবাণী’ ও ‘মাতৃমন্দির’ প্রভৃতি পত্রিকাতে রচনা প্রকাশ করেন। প্রসন্নময়ীর একমাত্র কন্যা প্রিয়ম্বদা দেবীর নাম বাংলা সাহিত্যে সুপরিচিত। তিনিও বিখ্যাত কবি ছিলেন।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • স্মৃতি না থাকিলে আমরা কিরূপে বাঁচিতে পারি? সুখের স্মৃতি যেমন সুখাবহ, দুঃখের স্মৃতিও তেমন দুঃখজনক, তথাপি অতীত কখন ভুলিতে চাহি না। একদিন যাহা অত্যন্ত সুখের ছিল আজ তাহা নাই বলিয়া কাঁদিব তবুও সেই পবিত্র স্মৃতি বিস্তৃত হইতে চাহিব না। জগতের নিয়মই এই।
    • পূর্ব্বকথা- প্রসন্নময়ী দেবী, সম্পাদনা- নির্মাল্য আচার্য, প্রথম প্রকাশ- ১৯১৭, প্রকাশক-সুবর্ণরেখা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, পৃষ্ঠা ২২
  • কুসুমে শোভিত চিত—
    বনভূমি, হরষিত—
    ললিত লতিকা দোলে তরুর গলায়,
    গুণ গুণ সুধা স্বরে―
    মধুকর প্রীতিভরে―
    প্রত্যেক কুসুম প্রাণে অমিয় মাখায়।
    • জীবন কাহিনী, নীহারিকা - প্রসন্নময়ী দেবী, প্রকাশক- এস্ কে্ লাহিড়ী কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪১
  • তখনকার দিনে রাজসাহী হইতে নৌকা যোগে কলিকাতা গমনাগমন যে কত বিপদসঙ্কুল তাহা এদিনে বুঝান বড় শক্ত। পথে পদে পদে লুটেরা ডাকাত, রাহাগির ও ঠগী জীবন হাতে করিয়া পথ চলিতে হইত। পিতৃদেব যখন যাওয়া আইসা করিতেন, পান‍্সীর মাঝি মাল্লারা সম্মুখে চিড়ে গুড় ও পিত্তল কলসীতে জল লইয়া দিবারাত্রি অবিশ্রান্ত নৌকা বাহিয়া যাইত এবং ক্ষুধা পাইলে ঐ সব খাইত মাত্র। আর ভৃত্য কিশোর বন্দুকে গুলি পুরিয়া বসিয়া পাহারা দিত।
    • পূর্ব্বকথা- প্রসন্নময়ী দেবী, সম্পাদনা- নির্মাল্য আচার্য, প্রথম প্রকাশ- ১৯১৭, প্রকাশক-সুবর্ণরেখা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, পৃষ্ঠা ৬
  • একটী জীবন যন্ত্র বিকল হইলে
    মিলিত ললিত তান
    নীরব হয় সে গান,
    জীবন বীণার তার বাজে নাগো আর,
    ভগ্নস্বরে একা করি মৃদুল ঝঙ্কার।
    • স্নেহোপহার, নীহারিকা - প্রসন্নময়ী দেবী, প্রকাশক- এস্ কে্ লাহিড়ী কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
  • কাল পূর্ণ না হইতেই কত জন অকালে চলিয়া যায়, আর সময়ে ডাক আসিলে ত সকলেরই যাইতে হয়।
    • পূর্ব্বকথা- প্রসন্নময়ী দেবী, সম্পাদনা- নির্মাল্য আচার্য, প্রথম প্রকাশ- ১৯১৭, প্রকাশক-সুবর্ণরেখা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, পৃষ্ঠা ১৫
  • রমণীর স্নিগ্ধ প্রেমে পুরুষ সকল,
    আজিও সজীব প্রায়,
    আজিও হাসিছে তায়,
    প্রণয় বিমুগ্ধ প্রাণে রয়েছে সংসারে
    মুছিয়া বিষাদময় নয়নের নীরে।
    • আর্য্যনারী, নীহারিকা - প্রসন্নময়ী দেবী, প্রকাশক- এস্ কে্ লাহিড়ী কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৯০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১০

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]