ফকির আলমগীর

ফকির আলমগীর (জন্ম: ২৪ জুলাই ১৯৫০ – মৃত্যু: ২৪ জুলাই ২০২১) ছিলেন বাংলাদেশী গণসংগীত শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক সংগীতকার। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তী সামাজিক–রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁর গান ও উক্তি সর্বজনের মনোজগতে অম্লান ছাপ রেখেছে। তিনি বাংলাদেশের গণসংগীতের জনক হিসেবে সমধিক সম্মানিত।

উক্তি

• আমরা সবাই স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলাম; বিপ্লবের জন্য আমরা এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।
  • প্রেক্ষাপট:** মৃত্যুর আগে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ত্যাগের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।

• ১৯৭১ সালে আমাদের রাজনীতি জনগণের সংস্কৃতিতে মিশেছিল, যা আরও বেশি ঐক্য এনেছিল। আমাদের আবারও সেই ঐক্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে হবে।
  • প্রেক্ষাপট:** সহিংসতা বিরোধী সভায় ঐক্য আহ্বান।

• “ও সখিনা গেছস কিনা ভুইলা আমারে”
  • প্রেক্ষাপট:** ১৯৮২ সালে বিটিভির ‘ঈদ আনন্দমেলা’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গানটির প্রথম প্রচার এবং নেপথ্য বিবরণ।

• “সখিনা আবহমান বাংলার প্রেমিকা ও বধূ। কারও কাছে দুঃখিনী পল্লিবালা আবার কারও কাছে আহ্লাদী বোন। কারও কাছে সে বন্যায় ভেসে যাওয়া বিক্ষুব্ধ চিৎকার। এই সখিনা কখনো রিকশাওয়ালার প্রিয়তমা স্ত্রী। কখনো কারখানার শ্রমজীবী নারী, কখনোবা ফুটপাতের ইটভাঙা শ্রমিক।”
  • প্রেক্ষাপট:** ‘ও সখিনা’ গানের চরিত্রের বহুমাত্রিক প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

• “কালো কালো মানুষের দেশে”
  • প্রেক্ষাপট:** নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে উপস্থিত থাকাকালীন গানটি পরিবেশনের সময়কার স্মৃতি।

• “মাতৃপ্রেম বা দেশপ্রেম দুটোই আমাকে বেশ টানে।”
  • প্রেক্ষাপট:** সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাতৃবোধ ও দেশাত্মবোধ নিয়ে ব্যক্ত মতামত।

• “সাভারের রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কান্না আজও থামেনি… মে দিবস এক চেতনার মশাল।”
  • প্রেক্ষাপট:** ২০২১ সালের রানা প্লাজার অগ্নিকাণ্ডের পরে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি ও মে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে মন্তব্য।

• “একুশ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আলোক নির্দেশক… একুশের রক্ত বেয়ে এদেশের গণতন্ত্র এসেছে।”
  • প্রেক্ষাপট:** চট্টগ্রাম একুশ উৎসব পরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণ।

• “যুবক শ্রেণিকে ভ্রান্ত পথে নিতে চায় তারা… দেশের স্বকীয়তা, সংস্কৃতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চায়।”
  • প্রেক্ষাপট:** তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান।

• “তিনি (নেলসন ম্যান্ডেলা) আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলেন… গানটা গাও। আমি গানটা ধরার পর আফ্রিকান ধরণে নাচতে শুরু করলেন, সেটা এখনও চোখে লেগে আছে।”
  • প্রেক্ষাপট:** নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গীতে ‘কালো কালো মানুষের দেশে’ পরিবেশনের স্মৃতি।

• “আমার গানের কোনো ভৌগলিক সীমারেখা নেই। মালালা ইউসুফজাইকে নিয়ে আমি গেয়েছি, দ. আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়েও গেয়েছি।”
  • প্রেক্ষাপট:** নিজের গানের সার্বজনীনতার কথা ব্যাখ্যা।

• “যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে… আমি গণ মানুষের জন্য গেয়ে যাব।”
  • প্রেক্ষাপট:** জীবনের অবসান পর্যন্ত গণগানের অমীমাংসিত অঙ্গীকার।

তাকে নিয়ে উক্তি

• “গানটির প্রসঙ্গ এলে উনি কায়দা করে আমার নামটি বলেন না!”
  • প্রেক্ষাপট:** ‘কালো কালো মানুষের দেশে’ গানের গীতিকার-সুরকারের অস্বীকার নিয়ে নতুন বিতর্ক।

• “এতদিন পরে এই প্রশ্ন ওঠাটাই অপমানজনক… আমি তো টাকা পয়সার হিসাব করছি না; মিনিমাম সম্মানটুকু তো পেতে পারি।”
  • প্রেক্ষাপট:** গীতিকার-সুরকার সেজান মাহমুদ নিজ অবদানের স্বীকৃতির দাবি।

• “ফকির আলমগীরের ছিল সবাইকে আপন করে নেওয়ার বিরাট ক্ষমতা… দেখা হলেই জড়িয়ে ধরে বলত—ভাইডি কেমন আছেন?”
  • প্রেক্ষাপট:** বন্ধু ফেরদৌস ওয়াহিদের স্মৃতিচারণ।

• “ফকির আলমগীর ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীকে একাই ধরে রেখেছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।”
  • প্রেক্ষাপট:** ‘ঋষিজ শিল্পের নান্দনিক ঐক্য রক্ষার বর্ণনা।
• “আমাদের সঙ্গে ফকির আলমগীর ছিল। ও ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো বাঁশি বাজত। আমাদের অনুষ্ঠানে সে বাঁশিই বাজাত।”
  • প্রেক্ষাপট:** বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে বাঁশি প্রতিভার বর্ণনা।

• “বাংলাদেশের এমন একজন গায়ক ছিল, যাকে আমি বাংলার সংগীতের বাঘ বলি।”
  • প্রেক্ষাপট:** মৃত্যু সংবাদে শোক প্রকাশকালে ফেরদৌস ওয়াহিদের স্মৃতিমন্থন।

• “ভাঙা ভাঙা গলা নিয়ে ফকির আলমগীরের আফসোস ছিল। আমাকে বলত, ‘দোস্ত, এই গলায় গান গাইব কী করে?’”
  • প্রেক্ষাপট:** কণ্ঠনৈপুণ্য নিয়ে ব্যক্ত অনুভূতির সংলাপ তিমির নন্দীর সাথে।

• “এ দেশের সংগীতাঙ্গনে, বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
  • প্রেক্ষাপট:** মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোকবার্তায় গণসংগীত জনপ্রিয়করণে অবদান শ্রদ্ধার্ঘ্য ঘোষণা।

বহিঃসংযোগ

উইকিমিডিয়া কমন্সে Fakir Alamgir সম্পর্কিত মিডিয়া