বিষয়বস্তুতে চলুন

বদরুদ্দীন উমর

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর (২০ ডিসেম্বর ১৯৩১ – ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (উমর)-এর নেতা। ২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা স্টুপিডিটি ছাড়া আর কিছু না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করা সম্ভব? যা ঘটে গেছে তাকে কোনোভাবে অস্বীকার করা সম্ভব না।
    • ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেওয়া সাক্ষাৎকারে
  • যুক্ত বাংলার পক্ষে আন্দোলন হলে, সেটা সফল হতো। কিন্তু সেই সময়টা ইংরেজরা দেয়নি। ১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারি মাসে এলেন মাউন্টব্যাটেন। আর ৩ জুনের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে গেল। কাউকে তো চিন্তা করার সময় দেওয়া হলো না। হুড়মুড় করে সব হয়ে গেল। মিছিল–আন্দোলনের সুযোগ থাকলে দেশভাগ হতো না।
  • ভারত ভাগ জিন্নাহ করেননি। ভারত ভাগ করেছে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা। ভারতের সব গ্রহণযোগ্য ইতিহাস এটা এখন স্বীকার করে। দ্বিজাতিতত্ত্ব এসেছে উনিশ শতকে, হিন্দু মেলার মাধ্যমে। নবকুমার মিত্র, রাজ নারায়ণ রায় এর প্রবক্তা। মুসলমানরা পিছিয়ে, এখন তাঁরা যদি হিন্দুদের ধরে ফেলে—সেই চিন্তা থেকেই এই দ্বিজাতিতত্ত্ব। আমি সম্প্রতি একটা লেখায় লিখেছি, হিন্দুদের দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল অফেনসিভ। আর মুসলমানদের যে দ্বিজাতিতত্ত্ব, সেটা ডিফেন্সিভ। গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারক। সে কারণেই ভারত ভাগের পর মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের গভর্নর জেনারেল করা হয়েছিল। এর থেকে বড় কেলেঙ্কারি কি হতে পারে।
  • আমি যে ধর্মের উপর আস্থা হারালাম, ঈশ্বরের উপর, আল্লাহর উপর যে বিশ্বাসটা হারালাম এটা কোনো তত্ত্বগত চিন্তা থেকে না। এই যে মানুষের এত দুঃখ দুর্দশা... এদিকে আবার বলা হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না ইত্যাদি। তা এখন আল্লাহর গুণ হিসেবে যা বলা হয় তিনি অত্যন্ত দয়ালু, সবজান্তা, সর্বক্ষমতাময়... এই তিনটি গুণ যদি একজনের থাকে তাহলে দুনিয়ার এই জিনিসটা ব্যাখ্যা করা যায় না। মানুষ যে এত দুঃখ দুর্দশার মধ্যে আছে... অনেকে বলেন আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহর এই পরীক্ষা করার তো কোন দরকার ছিল না! তিনি মজা করার জন্য মানুষকে এই দুর্দশার মাঝে ফেলছেন এটার কী কারণ থাকতে পারে? ধরেন একজন মা তার বাচ্চাকে বাইরে রেখে হাসপাতালে গেছেন চিকিৎসা করার জন্য, এসে দেখলেন তার বাচ্চা মারা গিয়েছে। আল্লাহর যদি এই তিনটা গুণ থাকে তাহলে তিনি বাচ্চাটাকে মেরে কী পরীক্ষা করলেন, কী খেলা করলেন? আর পরীক্ষা যত হচ্ছে গরীবের উপর দিয়েই হচ্ছে। আল্লাহ বড়লোকদের যা দেয়ার তা ইহলোকেই দেন, আর গরীবদের যা দেয়ার তা বাকির খাতায় রেখে দেন। আমার এই চিন্তা থেকেই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছি।
  • বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নেই। আছে জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু। কিন্তু সংখ্যালঘু বলতে এখন শুধু হিন্দুদেরই বোঝানো হয়ে থাকে।...বাংলাদেশে সাঁওতাল, গারো, হাজং, রাখাইন, উর্দুভাষী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি জাতিগত সংখ্যালঘুর ওপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতন হয়, তার কথা সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে বিশেষ পাওয়া যায় না। অথচ নীরবে তাদের ওপর নির্যাতনের শেষ থাকে না। জমি-ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত নিয়মিত হচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো উচ্চবাচ্য নেই। এর অন্যতম প্রধান কারণ তারা অবাঙালি এবং তুলনায় অনেক গরিব। এছাড়া হিন্দুদের বিরুদ্ধে সামান্য কিছু হলেও যেমন তা নিয়ে ভারতের মতো পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী রাষ্ট্রে উত্তাপ সৃষ্টি ও প্রচারণা হয়, সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারকে হুমকি দেয়া হয়, সে রকম কিছু জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে হয় না। করণ তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনো বাইরের রাষ্ট্র নেই।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]