বলিভিয়া
অবয়ব
বলিভিয়া যা আনুষ্ঠানিকভাবে বলিভিয়া বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত, এটি দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম-মধ্য অংশে অবস্থিত একটি স্থলভূমি বেষ্টিত দেশ। দেশের রাজধানী সুক্রে। তবে দেশের সরকারী কার্যকলাপ এবং অর্থব্যাবস্থার কেন্দ্র হল লা পাজে। প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার এই দেশে বহুজাতিক সমাজের অবস্থান যেখানে আমেরিন্ডিয়ান, মেস্তিজো, ইউরোপীয়, এশীয় এবং আফ্রিকান জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। বলিভিয়ার ভৌগোলিক সীমা পশ্চিমের আন্দিজ পর্বতমালা থেকে শুরু করে পূর্বের সমতল ভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত, যা অ্যামাজন নদী অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। দেশটি টিন, রূপা, লিথিয়াম এবং তামাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
উক্তি
[সম্পাদনা]- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের চাপে নতিস্বীকার করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বলিভিয়ার। এইকারনেই তারা তাদের বিদ্যুৎ কোম্পানি ও জল সরবরাহকারী সংস্থার বেসরকারিকরণ করেছিলেন। বলিভিয়ার জনগণ এতে সম্পূর্ণভাবে বিরক্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাই ইভো মোরালেস একটি ইশতেহার নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন যেখানে তিনি বলেন, “আমি আর এটা সহ্য করব না”। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন মূলত বলিভিয়ার জনগণের চরম হতাশা ও ক্ষোভের কারণে—এই অনুভূতি থেকে যে তারা দীর্ঘদিন ধরে শোষিত হয়েছে এবং আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক তাদের সম্পদ বিদেশি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বারবার চাপ দিয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার অংশ হিসেবে উন্নত দেশগুলো বলেছে যে বলিভিয়ার মতো দেশগুলো যেন তাদের স্থানীয় শিল্প ও পণ্যের জন্য কোনো ভর্তুকি না দেয় অথচ তারা যেন উন্নত দেশগুলোর ভর্তুকিপ্রাপ্ত পণ্য গ্রহণ করে। একইভাবে তারা যেন উন্নত দেশগুলোর পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক বা প্রতিবন্ধকতা আরোপ না করে কিন্তু উন্নত দেশগুলো তাদের পণ্যের ওপর যেসব প্রতিবন্ধকতা আরোপন করে সেগুলো যেন মেনে নেওয়া হয়। সারা বিশ্বের মানুষ এই ধরনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় বিরক্ত হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৩৬ কোটির মধ্যে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ অর্থাৎ ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এই ধরনের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ইভো মোরালেসের মতো রাজনীতিকরা হুগো চাভেজকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখেন—যিনি সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের অবস্থানে টিকে থাকতে পেরেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল এবং তিনি চরমভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
- জন পারকিন্স, উৎস:"নিজেকে অর্থনৈতিক হিটম্যান হিসেবে বর্ণনাকারী জন পারকিন্স: আমরাই গড়ে তুলেছি বিশ্বের প্রথম সত্যিকারের বৈশ্বিক সাম্রাজ্য" (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সাল)
- আমার কোনো সন্দেহ নেই যে এভো মোরালেস এইসকল ব্যক্তিদের দ্বারা সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হয়েছেন যারা তার অফিসে ঢুকে তার সাথে করমর্দন করে তাকে বলেছেন, "অভিনন্দন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনি জিতেছেন। আমরা আপনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রচার চালিয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনিই জয়ী হয়েছেন। এখন আমি আপনাকে বাস্তবতার কথা বলতে চাই এবং আপনাকে বোঝাতে চাই"... মোরালেস পুরো বিষয়টিকে অত্যন্ত কূটনৈতিকভাবে সামাল দেন, কিন্তু তিনি দৃঢ় অবস্থানে অটল থাকেন এবং বলেন, "আমার জনগণ আমাকে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্বাচিত করেছে এবং আমি তা সম্মানের সাথে পালন করব।" এটাই ছিল তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। আমরা কল্পনাও করতে পারি না কী ধরনের চাপ এখন মোরালেসের ওপর সৃষ্টি হচ্ছে — যেমনটি অন্য সব প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তারা জানেন তাদের আগেও কী ঘটেছে এবং... তাদের ওপর চাপ আরও কঠোরভাবে এবং আরও জোরালোভাবে ক্রমাগতভাবে বাড়তেই থাকবে...। এখন কল্পনা করুন আপনি একজন সৎ ও নীতিবান ব্যক্তি যিনি সত্যিই নিজের দেশকে সাহায্য করতে চান এবং স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহ নির্বাচিত হন। মোরালেস ৫৪% ভোট পেয়েছিলেন, যা বলিভিয়ার প্রেক্ষাপটে প্রায় অবিশ্বাস্য। তিনি বহু প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হয়েছিলেন। যখন তিনি তার নীতিগুলির বাস্তবায়ন করতে চান তখন কেউ তাকে তার অফিসে ঢুকে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
- জন পারকিন্স, উৎস:"নিজেকে অর্থনৈতিক হিটম্যান হিসেবে বর্ণনাকারী জন পারকিন্স: আমরাই গড়ে তুলেছি বিশ্বের প্রথম সত্যিকারের বৈশ্বিক সাম্রাজ্য" (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সাল)
- বিশ শতকে প্রবেশ করার পরেও মেক্সিকো ও লাতিন আমেরিকায় একটি নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর স্থায়িত্ব ছিল যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিরূপ। এই উক্তির বাস্তবতায স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় এই ঘটনার মাধ্যমে যে উনবিংশ শতাব্দীর মতোই এই পুরাতন কাঠামো অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল—গৃহযুদ্ধ ও গণ অভ্যুত্থান ঘটেছিল, কারণ বিভিন্ন গোষ্ঠী ক্ষমতার সুবিধার জন্য লড়াই করছিল। ১৯১০ সালে অবশেষে দিয়াস বিপ্লবী শক্তির কাছে ক্ষমতা হারান। মেক্সিকান বিপ্লবের পর বলিভিয়ায় ১৯৫২ সালে, কিউবায় ১৯৫৯ সালে এবং নিকারাগুয়ায় ১৯৭৯ সালে বিপ্লব সংঘটিত হয়। এদিকে, কলম্বিয়া, এল সালভাদোর, গুয়াতেমালা এবং পেরুতে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। সম্পদের জাতীয়করণ বা জাতীয়করণের হুমকি অব্যাহত থাকে। বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, পেরু ও ভেনেজুয়েলায় ব্যাপক কৃষি সংস্কার (বা সংস্কারের প্রচেষ্টা) চালানো হয়। বিপ্লব, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি সামরিক সরকার এবং বিভিন্ন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ঘটে। যদিও ধীরে ধীরে রাজনৈতিক অধিকারের প্রসার ঘটতে থাকে, অধিকাংশ লাতিন আমেরিকান দেশেই প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম হয় কেবল ১৯৯০-এর দশকে এবং তাতেও দেশগুলো স্থায়ী অস্থিরতার মধ্যেই রয়ে যায়।
- দারন আসেমোগলু ও জেমস এ. রবিনসন। উতসঃ হোয়াই নেশনস ফেইল: দ্য অরিজিনস অব পাওয়ার, পোভার্টি, অ্যান্ড প্রসপারিটি (২০১২ সাল)
- সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে, ইভো মোরালেস বলিভিয়ার একজন সফল নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী সংগঠনের নেতা, যার পারিবারিক শিকড় দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিহিত। ২০০৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দুইবার পুনর্নির্বাচিত হন। মোরালেসকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কৃষক ও কোকা চাষিদের মধ্যে দারিদ্র্যের নাটকীয় হ্রাস এবং একটি সামাজিক বিপ্লবের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছে, যা বলিভিয়ার অসংখ্য জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মর্যাদার আমূল পরিবর্তন ঘটায়। তিনি এক বহুজাতীয় সংবিধানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন, যা সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত বলিভিয়ানদের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটে। তাঁর শাসনামলে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
- "দ্য অবজারভার ভিউ অন ইভো মোরালেস অ্যান্ড বলিভিয়া", সম্পাদকীয়ঃ দ্য গার্ডিয়ান -(১৭ নভেম্বর ২০১৯ সাল)
- ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো বলিভিয়ায় বৈধ রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে সংঘটিত অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, "ইভোই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বলিভিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন,"—বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পর যে পুলিশি দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। মাদুরো আরও জানান, "ইভোকে গ্রেপ্তার এবং তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সান্তা ক্রুজ এবং পোটোসি-ভিত্তিক দুটি প্যারামিলিটারি গোষ্ঠীকে—এটি আমাদের কাছে পৌঁছানো গোয়েন্দা তথ্য।" তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান ওয়াশিংটনের অর্থায়নে পরিচালিত হয় এবং লা পাজে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে সংগঠিত হয়।
- "ভেনেজুয়েলা: সেনা কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়ে মাদুরোর অভিযোগ", টেলিসার (১৭ নভেম্বর ২০১৯ সাল)
- বলিভিয়ার সাকাবা শহরে শুক্রবার যখন নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যুত্থানবিহীনভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন তখন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসের সমর্থকদের ওপর গুলি চালানোয় অন্তত আটজন নিহত ও ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে—এ তথ্য জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
- গত রবিবার ইভো মোরালেসের পদত্যাগের পর দেশজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে, বিক্ষোভকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি জেনিন আনিয়েজ-এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। এই বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই বলিভিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্য, যারা আনিয়েজের শাসনকে অবৈধ বলে মনে করেন এবং মোরালেসের প্রত্যাবর্তনের দাবি জানান।
- সূত্র: "৮ জন নিহত বলিভিয়ায়, ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসের প্রত্যাবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ", এনপিআর, (১৬ নভেম্বর ২০১৯ সাল)।
- বলিভিয়ায় এখন একজন নতুন মার্কিন-সমর্থিত পুতুল নেত্রী রয়েছেন এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম এই নিয়ে তাদের উচ্ছ্বাস কোনমতেই গোপন রাখতে পারছে না। ১২ নভেম্বর, জেনিন আনিয়েজ একটি প্রায় ফাঁকা সিনেট চেম্বারে নিজেকে "অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি" ঘোষণা করেন... যদিও কোরামের অভাবে এই পদক্ষেপটি স্পষ্টভাবেই অসাংবিধানিক ছিল, তবুও ট্রাম্প প্রশাসন এবং টেন ডাউনিং স্ট্রিট তৎক্ষণাৎ তাকে স্বীকৃতি দেয়... ঘটনাটি জানুয়ারিতে ভেনেজুয়েলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি প্রহসনের মতো মনে হয়।
- সূত্র:"পশ্চিমা গণমাধ্যম বলিভিয়ার কট্টর-ডানপন্থী অভ্যুত্থানকে গোপন করার প্রচেষ্টা করছে", ফেয়ারনেস অ্যান্ড অ্যাক্যুরেসি ইন রিপোর্টিং, (১৫ নভেম্বর ২০১৯ সাল)।
- বলিভিয়ায় স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি জেনিন আনিয়েজ একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন যেখানে কোনো আদিবাসী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তারপর বৃহস্পতিবার রাজধানী লা পাজে আদিবাসী-নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদ চলতে থাকে। আনিয়েজ একজন ডানপন্থী খ্রিস্টান যিনি পূর্বে আদিবাসী সম্প্রদায়কে "শয়তানি" বলে অভিহিত করেছিলেন টুইটে, যদিও পরে সেই টুইটগুলি মুছে ফেলেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, নির্বাসিত সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস — যিনি রোববার সামরিক বাহিনীর দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে মেক্সিকোতে পালিয়ে যান — তাকে নতুন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হবে না।
- সূত্র:"আদিবাসী বলিভিয়ানদের প্রতিবাদ, অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতির ইভো মোরালেসকে স্তব্ধ করার নির্দেশ", ডেমোক্র্যাসি নাও, ১৫ নভেম্বর ২০১৯ সাল।
- মোরালেস বলিভিয়ার রাজনীতিকে আমূল পাল্টে দেন। এ এমন এক দেশ ছিল যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত সাদা চামড়ার মানুষেরা শাসন করেছিল। তিনি এই গভীর প্রোথিত বৈষম্যকে উল্টে দেন। পণ্যদ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বগতির ফলে অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তিনি একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে এমন একটি কংগ্রেস গঠন করেন, যেখানে বলিভিয়ার ছোট ছোট আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য আসন সংরক্ষিত ছিল এবং একইসাথে সব আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য স্বশাসনের সুযোগও নিশ্চিত করা হয়।
- সূত্র:"আনিয়েজ এবং নির্বাসিত মোরালেসের মধ্যে বলিভিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াই", পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ সাল"।
- আনিয়েজ কংগ্রেসেও তার বৈধতা নিয়ে প্রতিবন্ধক্তার সম্মুখীন হয়েছেন, যেখানে মোরালেসের অনুগত আইনপ্রণেতারা নতুন অধিবেশন আহ্বান করার চেষ্টা করেন, যা আনিয়েজের রাষ্ট্রপতির পদাসীন হওয়ার দাবিকে খণ্ডন করতে পারত... কংগ্রেসে মোরালেসপন্থীরা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রেখেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে আনিয়েজ যে অধিবেশন আহ্বান করেন মোরালেসপন্থীরা তা বর্জন করার ফলে, ফলে কোরাম পূর্ণ হয়নি। তবুও আনিয়েজ ক্ষমতা গ্রহণ করে দাবি করে বলেন যে সংবিধানে কংগ্রেসের অনুমোদন নির্দিষ্টভাবে আবশ্যক বলা নেই।
- সূত্র:সূত্র:"আনিয়েজ এবং নির্বাসিত মোরালেসের মধ্যে বলিভিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াই", পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ সাল"।
- "আমরা অন্তর্ভুক্তি ও ঐক্যের জন্য একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম হতে চাই।" বাহান্ন বছর বয়সী ধর্মীয় রক্ষণশীল নেতা মন্তব্য রাখলেন। তিনি একটি টেবিলের সামনে বসেছিলেন যেখানে একটি বিশাল খোলা বাইবেল ও একটি ক্রশ রাখা ছিল। কিন্তু বুধবার রাতে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় একজনও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিও অন্তর্ভুক্ত ছিল না অথচ দেশে জনসংখ্যার অন্তত চল্লিশ শতাংশ মানুষ ছত্রিশটি আদিবাসী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
- সূত্র:"বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের আদিবাসী-বিহীন প্রাথমিক মন্ত্রিসভা মেরুকরণের ইংগিত দিচ্ছে", দ্য গার্ডিয়ান, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ সাল।
- বলিভিয়ার মূল খনিজ সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লিথিয়াম, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য অত্যাবশ্যক। বলিভিয়া দাবি করে যে বিশ্বের প্রায় সত্তর শতাংশ লিথিয়াম তাদের দেশের মধ্যে রয়েছে। মোরালেস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে লিথিয়াম সংক্রান্ত সকল উন্নয়ন ব্যাবস্থা অবশ্যই বলিভিয়ার জাতীয় খনিশিল্প সংস্থা কোমিবল এবং জাতীয় লিথিয়াম সংস্থা ইয়াসিমিয়েন্তোস দে লিথিও বলিভিয়ানোস-এর সমান অংশীদারিত্বে পরিচালিত হবে। টেসলা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং পিউর এনার্জি মিনারেলস (কানাডা) — উভয়ই বলিভিয়ার লিথিয়াম সম্পদের সরাসরি অংশীদারিত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তারা মোরালেস সরকারের নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। মোরালেস ছিলেন বহুজাতিক সংস্থাগুলোর লিথিয়াম দখলের পথে একটি সরাসরি বাধা। তাই তাকে সরানো আবশ্যক হয়ে উঠেছিল।
- বিজয় প্রসাদ, "বলিভিয়ার উন্নতি এক মূল্যবান খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল", ট্রুথডিগ, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
- শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর, নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন প্রতিবেদক দেখেন যে প্রায় কুড়ি জন মোটরসাইকেলচালক, যাদের হাতে ধাতব পাইপ ও শিকলসহ বিবিধ সরঞ্জাম ছিল, তারা কোচাবাম্বার প্রধান পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশ অফিসাররা তাদের অভিবাদন জানিয়ে বিদায় দেন। এই মোটরসাইকেলচালকদের কোনো স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না, কিন্তু কোচাবাম্বার পুলিশ সদর দপ্তর গত শনিবার বিরোধী পক্ষের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, যা একটি জাতীয় পর্যায়ের পুলিশ বিদ্রোহ সৃষ্টি করে এবং সেই পরিস্থিতিই মিসেস আনিয়েজকে ক্ষমতায় আনা হয়।
- ক্লিফোর্ড ক্রাউস, "আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করছি": বলিভিয়ার আইনপ্রণেতা নিজেকে নেতা ঘোষণা করলেন, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১২ নভেম্বর ২০১৯ সাল।
- সোমবার যখন লুটপাট ও সহিংসতা বেশ কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন প্রথমে মিসেস আনিয়েজকে কিছুটা ভীত ও অস্থির মনে হচ্ছিল। শান্তির আহ্বান জানাতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে তিনি দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করেন এবং লা পাজ শহরে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনীকে যৌথ টহলের আহ্বান জানান।
- ক্লিফোর্ড ক্রাউস, "আমি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করছি": বলিভিয়ার আইনপ্রণেতা নিজেকে নেতা ঘোষণা করলেন, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১২ নভেম্বর ২০১৯ সাল।
- রবিবার বলিভিয়ায় সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি সরকার গঠিত হয়েছে, যা সদ্য পদত্যাগকারী রাষ্ট্রপতি এভো মোরালেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে বদল করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সিদ্ধান্তটি ছিল একটি জার্মান সংস্থার সঙ্গে বলিভিয়ার লিথিয়াম খনি উন্নয়নের চুক্তি বাতিল করার, যা মূলত বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির মতো প্রযুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- "বলিভিয়ান অভ্যুত্থান এলো মোরালেসের লিথিয়াম চুক্তি বাতিলের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে", কমন ড্রিমস, ইউইন হিগিন্স, স্টাফ লেখক, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সাল।
- লবণ মরুভূমিতে লিথিয়াম উত্তোলনের জন্য ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতি এভো মোরালেসের সরকার ইয়াসিমিয়েন্তোস দে লিথিও বলিভিয়ানোস নামক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রতিষ্ঠা করে যা ২০২১ সালের মধ্যে বলিভিয়াকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম লিথিয়াম উৎপাদক দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বামপন্থী ও সাবেক কোকা চাষি মোরালেস লিথিয়ামকে বলিভিয়ার দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
- "বলিভিয়া, বিশাল অনাবিষ্কৃত মজুত নিয়ে, বেড়ে চলা লিথিয়ামের চাহিদা পূরণের প্রস্তুতিতে", ফ্রান্স ২৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল।
- গত বছরের ১০ নভেম্বর সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এভো মোরালেসের সরকার উৎখাতের পর থেকে বলিভিয়া রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও বর্ণবাদী রাষ্ট্রীয় সহিংসতার এক দুঃস্বপ্নময় পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছে। বলিভিয়ায় প্রায় ৪০ বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা বেসামরিক প্রাণহানির নিরিখে এই মাস ছিল দেশের অন্যুতম এক রক্তাক্ত সময়। মোরালেসের সরকার দারিদ্র্যতার হার কমাতে সক্ষম হয়েছিল। নভেম্বরের এই অভ্যুত্থান পরিচালিত হয় শ্বেতাঙ্গ ও মেস্তিজো অভিজাত শ্রেণির দ্বারা যাদের বর্ণবাদী ইতিহাস রয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুনরায় নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল; যা তারা ২০০৫ সালে মোরালেসের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত একচেটিয়াভাবে ভোগ করত। রাষ্ট্রীয় সহিংসতার অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত দুটি বৃহত্তম হত্যাকাণ্ডের বেশিরবাগ দুর্ভোগী ছিলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ।
- মার্ক ওয়েইসব্রট,"মার্কিন-সমর্থিত বলিভিয়ার অভ্যুত্থান নিয়ে নীরবতা বিরাজ করছে", দ্য গার্ডিয়ান, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল।
- গত নভেম্বর মাসে বলিভিয়ার গণতন্ত্র ধ্বংসে আমেরিকান রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি বিশেষত যাদের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে, তাদের ভূমিকা প্রায় অলক্ষ্যে থেকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই অভ্যুত্থানের পর বিচারপ্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলে। এই অভ্যুত্থানে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন ছিল একেবারে প্রকাশ্য। হোয়াইট হাউজ ভোট জালিয়াতির তথাকথিত বর্ণনাকে প্রচার করে। বলিভিয়ার রাজনীতিতে পরিবর্তনের পর তাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, "মোরালেসের পদত্যাগ গণতন্ত্র রক্ষা এবং বলিভিয়ার জনগণের কণ্ঠস্বর শোনার পথ সুগম করেছে।" লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী; যুক্তরাষ্ট্রের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কার্লোস ট্রুজিলো সংস্থার নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দলকে ব্যাপক জালিয়াতির প্রতিবেদন দিতে উৎসাহিত করেন এবং মোরালেসকে অপসারণে ট্রাম্প প্রশাসনকে সমর্থন দিতে চাপ দেন।
- মার্ক ওয়েইসব্রট,"বলিভিয়ায় ইভো মোরালেসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত অভ্যুত্থানের বিষয়ে নীরবতা বজায় রাখা হচ্ছে", দ্য গার্ডিয়ান, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল।
- ২০১০ সালে বলিভিয়ায় একটি আইন রাষ্ট্রকে শিক্ষক গঠনের উপর একচেটিয়া অধিকার প্রদান করে। এর ফলে, ধীরে ধীরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যার মধ্যে ছিল ক্যাথলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেদেস সাপিয়েন্তিয়ে এবং একটি সমান্তরাল অ্যাডভেন্টিস্ট কলেজ।
- মাস্সিমো ইনত্রোভিনে, "কেন ক্যাথলিক চার্চ বলিভিয়ার বিরুদ্ধে ইন্টার-আমেরিকান মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ করল?", বিটার উইন্টার, ১০ এপ্রিল, ২০২৪ সাল।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় বলিভিয়া সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিমিডিয়া কমন্সে বলিভিয়া সম্পর্কিত মিডিয়া

উইকিভ্রমণে বলিভিয়া সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।