বিষয়বস্তুতে চলুন

বার্নি স্যান্ডার্স

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

বার্নার্ড স্যান্ডার্স (জন্ম: ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪১) একজন আমেরিকান রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০৭ সাল থেকে ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের জুনিয়র মার্কিন সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই রাজ্যের একমাত্র কংগ্রেসনাল জেলার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্যান্ডার্স মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তিনি স্বতন্ত্র রাজনীতিক, তবে তিনি ডেমোক্রেটিক ককাসের সদস্য। স্যান্ডার্স ২০১৬ এবং ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তবে সফল হননি।

উক্তি

[সম্পাদনা]

১৯৭০-এর দশক

[সম্পাদনা]
  • বিপ্লব তখনই আসে যখন দুই অপরিচিত মানুষ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে। যখন কোনো বাবা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ স্কুল শিশুদের ধ্বংস করে দেয়। যখন একটি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে এবং মানুষ পরস্পরের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করে। যখন এক তরুণ যুদ্ধ করতে যেতে অস্বীকার করে। যখন কোনো মেয়ে মায়ের শেখানো সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে এবং নিজের প্রেমিকের ভালোবাসাকে গ্রহণ করে—সেখানেই বিপ্লবের শুরু।
  • কোনো মানব দমনকারী নেই। যারা দমন করে, তারা ইতোমধ্যেই তাদের মানবতা হারিয়েছে। একদিকে পরাধীনতা, অন্যদিকে পশুবৃত্তি—দুটোই এক বিষয়ের ভিন্ন রূপ। তাহলে জয়ী হয় কে? অনেক নারী এখন যেন এক সূক্ষ্ম দড়ির ওপর হাঁটছে। ভালোবাসা, উন্মুক্ততা, কোমলতা—এই গুণগুলো তাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, কিন্তু একই সঙ্গে তা নির্ভরতা, বশ্যতা ও আত্মত্যাগের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। কিন্তু ভালোবাসতে হলে কি বাধ্যতামূলকভাবে বশীভূত হতে হবে? সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে কি নিজের পরিচয় হারাতেই হবে? কীভাবে নিজের আত্মাকে অটুট রেখে কাউকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা যায়?
    • "ম্যান — অ্যান্ড ওম্যান", ভারমোন্ট ফ্রিম্যান (ফেব্রুয়ারি ১৯৭২)।
  • ওয়ালেস সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে আমি মূলত দুটি বিষয় উপলব্ধি করলাম। প্রথমত, আমেরিকায় গণতন্ত্র (যেকোনো অর্থেই) টিকে থাকতে পারবে কিনা, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ জাগল। আমার মনে ভেসে উঠল ১৯২০-এর দশকের শেষের জার্মানির দৃশ্যপট—বিশৃঙ্খলা, বিদ্রোহ, হতাশা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ভঙ্গুর জাতীয় গৌরব, অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব—আর সেই সঙ্গে এক প্রবল নেতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা, যে বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। এটা কি এখানে ঘটতে পারে? জাতীয় নেতৃত্ব যদি দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কি কৃষ্ণাঙ্গরা, লম্বা চুলওয়ালা তরুণরা, কল্যাণ সুবিধা নিয়ে প্রতারণাকারীরা এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরা নাৎসি জার্মানির ইহুদি ও সমাজতান্ত্রিকদের মতো শত্রুতে পরিণত হবে? এটা কি এখানে ঘটতে পারে? আমি এমন কোনো কারণ দেখি না, যার ভিত্তিকে এটাকে অসম্ভব বলা যায়।
    • বার্নি স্যান্ডার্স (জুন ১৯৭২)। Wallace in St. Albans: some interviews/some thoughts (সেন্ট আলবানসে ওয়ালেস: কিছু সাক্ষাৎকার/কিছু চিন্তা), মুভমেন্ট ১ (২)

১৯৮০-এর দশক

[সম্পাদনা]
  • আমাদের বুঝতে হবে যে নিকারাগুয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা শুধু তাদের নিজস্ব নয়; এটি পুরো মধ্য আমেরিকা ও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেরই বাস্তবতা। আসলে, নিকারাগুয়া যতই দরিদ্র হোক, সেখানে আমি একটি ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করেছি—সরকারের সরাসরি নীতির ফলে বেশিরভাগ মানুষ খাবার পাচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো অনেক সময় আমেরিকান সাংবাদিকরা কোনো দেশ সম্পর্কে বলার সময় এটিকে খারাপভাবে উপস্থাপন করেন—যেন খাবারের জন্য লাইন দেওয়া একটা সংকটের লক্ষণ। অথচ এটা তো ভালো ব্যাপার! অনেক দেশে খাবারের জন্য কোনো লাইনই নেই—সেখানে ধনীরা খাবার পায় আর গরিবরা অনাহারে মারা যায়।
  • আমি অবশ্য এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, তবে আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে দেখি সেটাই বলছি। প্রথমত, আমরা চাই যে সকল মানুষ স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পাক। এটা কানাডায় হয়। কিন্তু যেটা বোঝা জরুরি, তা হলো—আমেরিকায় যদি আমরা এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই দেশের অর্থায়ন পদ্ধতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করি এবং সবাইকে এর আওতায় আনি, তাহলে স্বাস্থ্যসেবায় এত বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে যে দেশটাই অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহলে প্রশ্ন আসে—কানাডার মতো একটি দেশে তাদের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধীনে সবাই স্বাস্থ্যসেবা পায়, অথচ সেখানে মাথাপিছু ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম কেন? আপনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন।
  • প্রকৃত বিষয়টি হলো, আপনি কৃষ্ণাঙ্গ না শ্বেতাঙ্গ, নারী না পুরুষ—সেটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার দৃষ্টিতে, একজন নারীও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো—আপনি কার পক্ষে? আপনি কি শ্রমিকদের ও গরিব মানুষের পক্ষে, না কি বিশাল অঙ্কের অর্থ ও কর্পোরেট স্বার্থের পক্ষে?

১৯৯০-এর দশক

[সম্পাদনা]
  • আমি কানে হয়তো ভুল শুনেছি, কিন্তু আমি একটু আগে ভদ্রলোককে সেনাবাহিনীর সমকামীদের নিয়ে কিছু একটা বলতে শুনেছি বলে মনে হলো। আমি কি ঠিক শুনেছি? ভদ্রলোক কি সেই হাজার-হাজার সমকামী সৈন্যদের কথা বলছিলেন যারা অসংখ্য যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে এই দেশকে রক্ষা করেছেন? সেই সাহসী মানুষগুলোর কথাই কি তিনি উল্লেখ করছিলেন? আপনি এমন হাজারো নারী-পুরুষকে অপমান করেছেন, যারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হননি। আমি মনে করি, তাদের কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
    • রিপ্রেজেনটেটিভ ডিউক কানিংহামের সাথে হাইজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ-এ সংলাপ (১১ মে ১৯৯৫)। উক্তিটি উল্লেখ করেছেন দ্য হাফিংটন পোস্টের জ্যাক কার্টার তার প্রতিবেদন Watch Bernie Sanders Demolish A Republican Over ‘Homos In The Military’-এ (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)।
  • আমি সবসময়ই জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সমর্থক ছিলাম। এটিকে ন্যায়সঙ্গত এবং যথার্থ বলেই মনে হয়েছে। আমরা কীভাবে নিজেদের সভ্য সমাজ বলে দাবি করতে পারি, যখন ধনী পরিবারের শিশু বা অভিভাবকরা সহজেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়, কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের পরিবারের সদস্যরা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবিমার অভাবে মারা যায়, অপ্রয়োজনে কষ্ট ভোগ করে বা চরম ঋণের বোঝা মাথায় নিতে বাধ্য হয়? এটি চূড়ান্ত অবিচার এবং কোনো যুক্তিতেই এটিকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।
    • আউটসাইডার ইন দ্য হাউজ, ১৯৯৭, পৃ. ১৭৫।
  • আমি এটা বলছি পারমাণবিক শক্তির বিরোধী হিসেবে। যদি আমার হাতে ক্ষমতা থাকত, তবে আমি যত দ্রুত সম্ভব, নিরাপদ উপায়ে এই দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতাম। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের কাছে নিম্ন-স্তরের পারমাণবিক বর্জ্য রয়েছে। এই সমস্যাকে উপেক্ষা করা বা এটা মনে করা যে সমস্যা নিজে থেকে দূর হয়ে যাবে—এটা ভুল হবে। আজকের পরিবেশগত বিতর্ক হওয়া উচিত কীভাবে সবচেয়ে নিরাপদ উপায়ে এই নিম্ন-স্তরের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অপসারণ করা যায় তা নিয়ে। আমি জোর দিয়ে বলব, এই আইন পাস করা এবং এই বর্জ্যকে তুলনামূলক নিরাপদ কোনো স্থানে সংরক্ষণ করা—এটাই আমাদের করণীয়।
    • টেক্সাস লো-লেভেল রেডিওঅ্যাক্টিভ ওয়েস্ট ডিসপোজাল কমপ্যাক্ট বিষয়ে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে প্রদত্ত বক্তব্য (৭ অক্টোবর ১৯৯৭)।
  • "কিছু না করা" নীতিটা কখনোই শক্তিশালী পরিবেশগত অবস্থান হতে পারে না। আর সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতাও গ্রহণযোগ্য নয়। যদি টেক্সাস, ভারমন্ট, মেইন বা অন্য কোনো রাজ্যে নিম্ন-স্তরের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য না থাকত, তাহলে সেটা অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বর্জ্য রয়েছে। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো এটি নিরাপদে কীভাবে অপসারণ করা যায়। যে জায়গাগুলোতে এই বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে সেগুলো বর্জ্যের দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত নয় এবং কখনোই এ উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি। সেখানেই এই বর্জ্য ফেলে রাখা—এটা ভয়ানক পরিবেশগত নীতি। বর্জ্য যেখানে রয়েছে, সেখানেই রাখতে হবে, এমন নীতি গ্রহণ করা আদৌ কোনো অর্থবোধক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কোনো স্বীকৃত বিজ্ঞানী বা পরিবেশবিদ মনে করেন না যে ভারমন্ট বা মেইনের ভূতাত্ত্বিক গঠন এ ধরনের বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত। এই রাজ্যগুলোর আর্দ্র জলবায়ুর কারণে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলো ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে টেক্সাসের এমন কিছু অঞ্চল যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র ১২ ইঞ্চিরও কম এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভূমি থেকে ৭০০ ফুট নিচে সেই স্থানগুলো এই বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ স্থান। এটি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটি ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত বাস্তবতা। তাই পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এই আইনটির দৃঢ় সমর্থন জানাই।
    • টেক্সাস লো-লেভেল রেডিওঅ্যাক্টিভ ওয়েস্ট ডিসপোজাল কমপ্যাক্ট বিষয়ে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে প্রদত্ত বক্তব্য (৭ অক্টোবর ১৯৯৭)।

আউটসাইডারস ইন দ্য হাউজ (১৯৯৮)

[সম্পাদনা]
  • কেন আমরা ও. জে. সিম্পসন, সুপারবোল বা কোনো বিমান দুর্ঘটনার খবর বেশি শুনি, অথচ বড় বড় মার্কিন কর্পোরেশনের গড় সিইওরা বছরে ৩০ লাখের বেশি আয় করা সত্ত্বেও শ্রমজীবী মানুষের মজুরি কমছে এটা নিয়ে আলোচনা শোনা যায় না? আমরা এবিসি ইভনিং নিউজে কী দেখছি আর সেই চ্যানেলটির মালিকানা কাদের হাতে এটার সঙ্গে কি উক্ত বিষয়ের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে? যেমন, মাইকেল আইজনার ডিজনি পরিচালনা করেন এবং ডিজনি আবার এবিসি-এর মালিক। এই যোগসূত্রটা কি কাকতালীয় না কি এর পেছনে গভীর কোনো বিষয় আছে?
  • এই সমস্যাগুলোর মাত্রা যতই বড় হোক, প্রতিটিই সমাধানযোগ্য। আমাদের জাতীয় আইনপ্রণয়নের ভিত্তি এটিই হওয়া উচিত—সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজা। এর পরিবর্তে নিউট গিংরিচের কনট্রাক্ট উইথ আমেরিকা-এর মতো প্রতিশোধমূলক এবং বিভাজনমূলক প্রচারণাকে আইনপ্রণয়নের ভিত্তি বানানো ঠিক হবে না।
  • চরম ডানপন্থীরা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। কিন্তু প্রায় কোনো প্রগতিশীল কণ্ঠই প্রাইম-টাইম টিভিতে শোনা যায় না। গত বিশ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হলো আমেরিকার শ্রমজীবী পরিবারের জীবনমানের নাটকীয় পতন। কিন্তু যে টেলিভিশন যা হাজার মাইল দূরের ভূমিকম্পের খবর মুহূর্তের মধ্যে প্রচার করতে পারে সেই টেলিভিশন যেন এই বিষয়টি একেবারেই "মিস" করে গেছে।
  • আমি এতটাই বয়স্ক যে লিন্ডন জনসনের প্রেসিডেন্সি আমার মনে আছে, যখন সরকার "দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" চালিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সেই যুদ্ধকে "গরিবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ"-তে রূপান্তরিত করেছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম আলোচিত বিষয় হলো এই সত্য যে রোনাল্ড রিগানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে কর্পোরেট আমেরিকা এই দেশের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এক নিরব কিন্তু ধারাবাহিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
  • আমি সরাসরি বলছি—সরকারকে এই দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে যে তারা এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে যা সকল নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
  • প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ঠিক তার পূর্বসূরি বুশ ও রিগানের মতোই এমন বাণিজ্য নীতি সমর্থন করছেন যা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্বার্থ ও মুনাফা রক্ষা করে কিন্তু আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থকে বিপদে ফেলে।
  • যদি আমরা সামরিক খরচ ও কর্পোরেট ভর্তুকি কমাই তাহলে আমেরিকার প্রকৃত চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আমাদের হাতে থাকবে।
  • ক্লিনটনের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারের ব্যর্থতার পর আমরা এমন এক জটিল, মুনাফাকেন্দ্রিক, ভোক্তাবিরোধী ও অকার্যকর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মধ্যে আটকে গেছি যা পুরোপুরি বীমা কোম্পানিগুলোর দখলে।
  • আমাদের দেশ থেকে বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য এবং সমকামবিদ্বেষের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সবার জন্য ভালো চাকরি ও তরুণদের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করাই এই প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি হবে। অনেক সময় উদারপন্থীরা মনে করেন যে, কেবল বৈষম্যের বিরুদ্ধে থাকাই যথেষ্ট—এতেই সমাজ আরও ন্যায়সঙ্গত ও সমতা ভিত্তিক হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই আসবে, যখন প্রতিটি নারী ও পুরুষ আমেরিকান সমাজে তাদের স্বীকৃত স্থান পাবে—এবং এর মানে হলো, সবার জন্য ন্যায্য মজুরির কাজ নিশ্চিত করা।
  • ঈর্ষা ও অনিশ্চয়তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ঘৃণার মূলোৎপাটন তখনই শুরু হবে, যখন প্রত্যেক আমেরিকান অর্থনৈতিকভাবে এতটাই নিরাপদ থাকবে যে, তারা যে কোনো অবমাননার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। শুধুমাত্র তখনই আমরা সেই সমাজ গড়তে পারব, যেখানে কোনো বৈষম্য কাউকে সংজ্ঞায়িত করতে পারবে না। আমি নিশ্চিত, যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করার সাহস দেখাতে পারি, তাহলে আমরা যা করা দরকার, তা করতে পারব। একটি প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ গড়তে হলে, আমাদের অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রগতিশীল আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
  • যখন লক্ষ লক্ষ আমেরিকান সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে, নিজেদের ও তাদের সন্তানের অধিকারের জন্য দাঁড়াবে, তখন কংগ্রেসের বেশিরভাগ সদস্য শুধু ধনীদের নয় বরং সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। যেদিন এটা হবে সেদিন আমরা কংগ্রেসে আর বহিরাগত থাকব না। তখন সেই হাউস, এই দেশ—সবাই মিলে গড়ে তুলবে, সবার জন্য। আর সেটাই হওয়া উচিত।

২০০০-এর দশক

[সম্পাদনা]
  • মাননীয় স্পিকার, কেন আমি প্রেসিডেন্টকে ইরাকে একতরফাভাবে আগ্রাসন ও দখল চালানোর জন্য অবাধ ক্ষমতা দেওয়ার বিপক্ষে এবং কেন আমি এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেব, আমার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সে বিষয়েআমি পাঁচটি কারণ তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, আমি এখনো কোনো সুস্পষ্ট অনুমান শুনিনি যে এই যুদ্ধে কতজন তরুণ মার্কিন নারী ও পুরুষ প্রাণ হারাতে পারে বা ইরাকে কত হাজার নারী ও শিশুর মৃত্যু হতে পারে। একটি মানবিক জাতি হিসেবে যুদ্ধের ভয়াবহ কষ্ট ও ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, তা আমাদের করা উচিত। যুদ্ধ কখনোই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে না, এটি সর্বশেষ অবলম্বন হওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, ইরাকে একতরফা আগ্রাসন চালানো আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের ভূমিকার জন্য কী ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যদি প্রেসিডেন্ট বুশ মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো সময় যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে পারে, তাহলে অন্য কোনো দেশ একই কাজ করলে আমাদের সরকার নৈতিক বা আইনি ভিত্তিতে কীভাবে তার বিরোধিতা করবে? তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত, যা আমরা ১১ই সেপ্টেম্বরের মর্মান্তিক ঘটনার মাধ্যমে উপলব্ধি করেছি। আমাদের বিরোধিতায় রয়েছে ওসামা বিন লাদেন ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, যারা এমন এক যুদ্ধ পদ্ধতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত, যা আমাদের জন্য নতুন ও ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়রের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কোক্রফটের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে ইরাকে আক্রমণ চালানো আমাদের বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী প্রচেষ্টাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে অথবা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। চতুর্থত, যখন আমাদের দেশে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের জাতীয় ঋণ এবং ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি রয়েছে, তখন আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে যুদ্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন দখলদারিত্ব অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে। পঞ্চমত, আমি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদি সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতাচ্যুত হন, তাহলে ইরাক কে শাসন করবে? ওই দেশে যদি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে? মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপে রয়েছে, তারা কি আরও চরমপন্থীদের কাছে ক্ষমতা হারাবে? ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘাত কি আরও বেড়ে যাবে? এসব প্রশ্নের এখনো কোনো সুস্পষ্ট উত্তর নেই এবং এটি আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

২০১০-এর দশক

[সম্পাদনা]
  • নিঃসন্দেহে, রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক নিরাপত্তার বেসরকারিকরণের চেষ্টা করে আসছে এবং তারা এটিকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সামাজিক কর্মসূচি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
  • আজকের দিনে মার্কিন স্বপ্ন দক্ষিণ আমেরিকায়—একুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোতে—বেশি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেখানে আয় এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি সমানভাবে বণ্টিত হচ্ছে, সেই দেশ যেখানে হোরাশিও আলজারের গল্প একসময় সাফল্যের প্রতীক ছিল। তাহলে এখন কে আসল 'বানানা রিপাবলিক'?
  • * দেখে মনে হচ্ছে, সাউথ ব্রঙ্কসের মানুষ বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা সব কিছু নিজের করে নিতে পারবে না। সাউথ ব্রঙ্কস এমন এক অর্থনীতি গড়তে চায় যা কেবল ১% ধনীদের জন্য নয় বরং আমাদের সবার জন্য কাজ করবে। এই প্রচারের মূল লক্ষ্যই হলো রাজনৈতিক বিপ্লব গড়ে তোলা। আমি সারা দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেখছি, যারা উঠে দাঁড়াচ্ছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং বলছে—"এবার যথেষ্ট হয়েছে!"
  • যথেষ্ট হয়েছে! [...] একজনের কয়টা বাড়ি লাগে?
  • আসল কথা হলো যখন সিনেটর ইনহফ বলেন যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মিথ্যা বিষয় তখন তিনি সম্পূর্ণ ভুল বলছেন। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা এটিকে একটি বাস্তব এবং গুরুতর সংকট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
  • যদি আপনি কোচ ব্রাদার্সের এজেন্ডার দিকে তাকান তাহলে মূল সমস্যা আসলে কী তা দেখবেন। তা হো চরম ডানপন্থী অনেকেই কী বিশ্বাস করে সেটা। ওবামাকেয়ার তো কেবলমাত্র হিমশৈলের চূড়া। এরা ন্যূনতম মজুরির ধারণাটাই বিলুপ্ত করতে চায়। তারা চায় ভেটেরান্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে বেসরকারিকরণ করতে, সামাজিক নিরাপত্তাকে বেসরকারিকরণ করতে, স্বাস্থ্যসেবার প্রচলিত রূপ শেষ করে দিতে। তারা স্বাস্থ্যসেবা বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট চায়। পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা পুরোপুরি তুলে দিতে চায়, যেন এমন কোনো সংস্থার অস্তিত্বই না থাকে। জ্বালানি বিভাগ থাকবে না, শিক্ষা বিভাগও থাকবে না। এটাই তাদের লক্ষ্য। অনেক মানুষ বোঝেই না যে কোচ ব্রাদার্স এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চা পার্টিতে ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে শত শত মিলিয়ন ডলার ঢেলেছে।
    • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধ নিয়ে বক্তব্য, বার্নি স্যান্ডার্স, ৭ অক্টোবর ২০১৩।
  • মার্কিনীদের বাকস্বাধীনতার অধিকার তাদের ব্যাংক হিসাবের পরিমাণের সাথে আনুপাতিক হওয়া সমীচীন নয়।
    • টম ইউডাল এবং বার্নি স্যান্ডার্স (৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪), "The Threat to American Democracy" (মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি), পলিটিকো
  • আমি অবাক হই যে ইরাকের পার্শ্ববর্তী একটি দেশ একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের মালিক এক পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন সৌদি আরব কেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে স্থলসেনা পাঠানোর দাবি করছে। তাহলে সৌদি সেনারা কোথায়? বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাজেট থাকায় এবং আইএসআইএসের তুলনায় অনেক বড় একটি সেনাবাহিনী থাকায় সৌদি সরকারকেই তাদের নিজস্ব অঞ্চলের স্থিতিশীলতার সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে। দিনশেষে, এটি ইসলামের জন্য একটি গভীর লড়াই। তাই, আইএসআইএস-বিরোধী মুসলিম দেশগুলোকেই এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো সহায়তা করতে পারে, তবে নেতৃত্ব অবশ্যই মুসলিম দেশগুলোর হাতে থাকা উচিত।
  • আমরা দেখেছি যে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ সময় কাজ করছে, কিন্তু তাদের মজুরি কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, আয় ও সম্পদের বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, যা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি একটি পক্ষপাতদুষ্ট অর্থনীতি, যা শুধু ধনী ও ক্ষমতাশালীদের স্বার্থে কাজ করছে— সাধারণ আমেরিকানদের জন্য কাজ করছে না। আপনারা জানেন, এই দেশ মাত্র কয়েকজন বিলিয়নিয়ারদের সম্পত্তি নয়।
  • কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান এত বড় হওয়া উচিত নয় যে, তার ব্যর্থতা বিশ্ব অর্থনীতিকে আরেকটি আর্থিক সংকটে ফেলে দিতে পারে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এত বড় হয় যে তা ভেঙে পড়লে পুরো অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়ে, তাহলে সেটি টিকে থাকার মতো বড় নয়।
  • আজ উচ্চশিক্ষায় আমরা একটি গুরুতর সংকটের মুখোমুখি। আমাদের অনেক তরুণ-তরুণী কলেজে পড়ার সামর্থ্য রাখে না, আর যারা কলেজ শেষ করছে, তারা বিশাল ঋণের বোঝায় জর্জরিত। এটা আমাদের জাতীয় লজ্জার বিষয় যে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান আজ কলেজে ভর্তি হতে পারছে না—শুধু যোগ্যতার অভাবে নয়, বরং টাকার অভাবে। এটি সম্পূর্ণ আনপ্রোডাক্টিভ, কারণ আমরা যদি একটি শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি ও প্রাণবন্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে তুলতে চাই, তাহলে সবার জন্য উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই লজ্জার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের তরুণদের এখন বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। তাই আমাদের প্রয়োজন সবচেয়ে দক্ষ ও শিক্ষিত কর্মশক্তি। এর অর্থ হলো, আমাদের অবশ্যই কলেজের শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, এই দেশে কোনো যোগ্য ব্যক্তি যার কলেজে পড়ার ইচ্ছা আছে, সে যেন কেবল অর্থের অভাবে পিছিয়ে না পড়ে। এছাড়া, এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যে ৪০ মিলিয়ন আমেরিকান ছাত্রঋণের বোঝায় ডুবে আছে। এই ঋণের পরিমাণ ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এটি অগ্রহণযোগ্য যে, উচ্চ সুদের কারণে লাখো স্নাতক শিক্ষার্থী তাদের প্রথম বাড়ি বা প্রথম গাড়ি কিনতে পারছে না। আরও অগ্রহণযোগ্য হলো, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাঋণের সুদের হার গাড়ির ঋণের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি।
  • একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা দরকার: এই প্রচারণা কোনো ব্যক্তির জন্য নয়—এটি বার্নি স্যান্ডার্স, হিলারি ক্লিনটন, জেব বুশ বা অন্য কাউকে নিয়ে নয়। এই প্রচারণা আমেরিকার জনগণের চাহিদা ও অধিকার নিয়ে। আমি জীবনে কখনো কোনো নেতিবাচক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন চালাইনি। তাই আমার প্রচারণা ভিত্তিহীন গসিপ, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা চরিত্র হননের ওপর নয়—এটি গঠিত হবে বাস্তব ইস্যু ও গঠনমূলক বিতর্কের ওপর। আমি বিশ্বাস করি, আমেরিকার জনগণ এটাই চায় এবং এটাই তাদের প্রাপ্য।
  • নতুন আয়ের ৯৯% চলে যাচ্ছে শীর্ষ ১% মানুষের কাছে তা নিয়ে আমরা কি খুশি? এই দেশের একটি মাত্র পরিবার নিন্ম আয়ের ১৩ কোটি সাধারণ মানুষের সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক তা নিয়ে আমরা কি খুশি?
    • লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স (২ জুন ২০১৫)।
  • বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছেন যে তার কার্যকর করহার তার সেক্রেটারির চেয়েও কম। এখন সময় এসেছে ধনকুবের শ্রেণিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়ার যে—যদি তারা আমেরিকার সুবিধা ভোগ করতে চায়, তাহলে তাদের দায়িত্বও নিতে হবে। আর এর অংশ হিসেবে ন্যায্য পরিমাণ কর দেওয়া শুরু করতে হবে।
    • লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স (২ জুন ২০১৫)।
  • গত তিরিশ বছরে সম্পদের ব্যাপক পুনর্বিতরণ ঘটেছে। দুর্ভাগ্যবশত, তা ভুল পথে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে শীর্ষ এক শতাংশের কাছে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে গেছে, আমি মনে করি এখন তা ফিরে আসা উচিত মধ্যবিত্তের কাছে। কারণ মধ্যবিত্তদের এটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
    • লেট নাইট উইথ সেথ মেয়ার্স (২ জুন ২০১৫)।
  • লাখ লাখ মানুষ প্রচলিত রাজনীতিতে ক্লান্ত। তারা কর্পোরেট লোভের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তারা এমন একজন নেতাকে চায়, যিনি এই দেশে একটি গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারেন। মানুষ স্পষ্টভাবে বলছে, "যথেষ্ট হয়েছে! ধনকুবের শ্রেণি সবকিছু নিজেদের দখলে রাখতে পারে না।"
  • এই দেশে ডানপন্থীরা উন্মুক্ত সীমান্ত নীতিতে আগ্রহী। তারা চায় বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসুক, ঘণ্টায় ২ বা ৩ ডলারে কাজ করুক—এটাই তাদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু আমি এতে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আমাদের দেশে মজুরি বাড়াতে হবে এবং যতটা সম্ভব নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের বেকারত্বের হার কত তা কি আপনি জানেন? যদি আপনি একজন শ্বেতাঙ্গ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই হার ৩৩%। হিস্পানিকদের জন্য ৩৬% এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের জন্য ৫১%। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কি মনে করেন আমাদের সীমান্ত খুলে কম মজুরির শ্রমিকদের আরও বেশি দেশে আনা উচিত? নাকি বরং আমরা এই তরুণদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা নিয়ে ভাবা উচিত? নৈতিক দিক থেকে আমাদের অবশ্যই শিল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। তবে সেটা এভাবে করা যাবে না যেন এই দেশের মানুষকে গরিব বানিয়ে ফেলা হয়।
  • উন্মুক্ত সীমান্ত? এটা আসলে ডানপন্থী একটি প্রস্তাব। এটি মূলত বলে যে, "যুক্তরাষ্ট্র বলে কিছু থাকবে না।" এতে আমেরিকার সবাই আরও গরিব হয়ে যাবে। এর অর্থ হবে জাতিরাষ্ট্রের ধারণাকেই বাতিল করে দেওয়া—এবং আমি মনে করি না যে বিশ্বের কোনো দেশই এতে বিশ্বাস করে। যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য যে কোনো দেশকে সত্যিকারের দেশ বলে মনে করেন, তাহলে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। ডানপন্থীরা চায় উন্মুক্ত সীমান্ত নীতি—যাতে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসবে, ঘণ্টায় ২-৩ ডলারে কাজ করবে, আর এতে তাদের (ডানপন্থীদের) সুবিধা হবে। কিন্তু আমি এতে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আমাদের দেশে মজুরি বাড়ানো দরকার এবং যতটা সম্ভব নতুন চাকরি তৈরি করতে হবে।
  • বন্ধুগণ, রিপাবলিকান পার্টি গত নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন জেতেনি— আসলে আমরাই সেই নির্বাচন হেরেছি। আমরা হেরেছি কারণ ভোটার উপস্থিতি ছিল আশঙ্কাজনকভাবে কম, যা লজ্জাজনকও বটে। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ, তরুণ প্রজন্ম এবং অশেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অনেকে প্রচলিত রাজনীতিতে আস্থা হারিয়ে ভোট দিতেই আসেননি। এটাই সত্য। আমার মতে, যদি ডেমোক্র্যাটরা হোয়াইট হাউস ধরে রাখতে চায়, যদি তারা সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ পুনরুদ্ধার করতে চায়, যদি তারা সারা দেশে গভর্নর নির্বাচনে সফল হতে চায়—তাহলে অবশ্যই ভোটারদের মাঝে উদ্দীপনা ও আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে এবং বিপুল ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সম্মানের সঙ্গে বলছি—এবং কাউকে অপমান করার জন্য বলছি না—কিন্তু প্রচলিত রাজনীতির মাধ্যমে এই ভোটারদের আগ্রহ ফেরানো সম্ভব নয়। আমাদের দেশের মানুষ বুঝতে পারছে যে আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণির পতন এবং ভয়াবহ আয় ও সম্পদ বৈষম্যের এই সময়ে আমরা আর প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা কিংবা অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতা চাই না।
  • আমি মনে করি, এটা স্পষ্ট যে টিকা সত্যিই কার্যকর। বহু বছর ধরে টিকাদান কাজ করছে এবং মানুষের জীবন রক্ষা করছে। আমি বুঝতে পারছি কিছু পরিবার এ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে। তবে সমস্যাটা হলো—যদি আমার কোনো শিশু কোনো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয় এবং সে টিকা না নেওয়া কোনো শিশুর সংস্পর্শে আসে এবং সে কারণে তার জীবন যদি ঝুঁকিতে পড়ে তাহলে সেটা অন্যায়।
    • FeelTheBern.org, "ইস্যু", ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
  • অনেক দিক থেকেই দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই দেশ প্রাথমিকভাবে বর্ণবাদী নীতির ওপর গড়ে উঠেছিল। এটি একটি বাস্তব সত্য। তবে আমরা একটি দেশ হিসেবে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেছি।
  • না, আমার ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। আমি একজন আমেরিকান। আমি জানি না এই প্রশ্ন কোথা থেকে এলো। আমি একজন আমেরিকান নাগরিক তবে আমি কয়েকবার ইসরায়েল সফর করেছি। কিন্তু স্পষ্ট করে বলছি—আমি শুধুই একজন আমেরিকান নাগরিক।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সন্ত্রাসবাদের উত্থানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
  • সিরিয়ায় যা ঘটছে তার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তন। যখন খরা হয় এবং কৃষকরা ফসল ফলাতে পারে না তখন তারা শহরে পাড়ি জমায়। কিন্তু শহরে যখন কাজের সুযোগ থাকে না তখন বেকারত্ব ও অস্থিরতা বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে আল-কায়েদা এবং আইএসের মতো সংগঠনগুলোর প্রচারণায় মানুষ সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। যেখানে অসন্তোষ রয়েছে, সেখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। আর এটাই সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিঃসন্দেহে জলবায়ু পরিবর্তন ভবিষ্যতে আরও বেশি এমন সংকট তৈরি করতে পারে।
  • গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের অর্থ হলো—একটি গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজ যেখানে সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ও বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর ন্যায্য পরিমাণ কর প্রদান করবে।
  • গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বলতে আমি কী বুঝি তা সহজভাবে ব্যাখ্যা করছি। এটি ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্টের সেই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেখানে তিনি প্রত্যেক আমেরিকানের জন্য অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করেছিলেন। এটি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ১৯৬৮ সালের সেই বক্তব্যের ভিত্তিতেও গড়ে উঠেছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন— "এই দেশে ধনীদের জন্য সমাজতন্ত্র আছে, আর গরিবদের জন্য কঠোর ব্যক্তিত্ববাদের শিক্ষা"। এটি সেইসব দেশের সাফল্যের ওপরও দাঁড়িয়ে আছে যারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালোভাবে শ্রমজীবী পরিবার, প্রবীণ, শিশু, অসুস্থ ও দরিদ্রদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের অর্থ হলো—আমাদের এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যা সবার মঙ্গলে কাজ করবে, শুধু ধনীদের মঙ্গলে নয়। এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আমেরিকার মারাত্মকভাবে অন্যায্য এবং অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও সংস্কার করার কথা বলে। দেখুন, ওয়াল স্ট্রিটের সিইওরা যখন অর্থনীতি ধ্বংস করে, তখন তারা বেতন বৃদ্ধি পায়! এটাই মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সেই কথা—"ধনীদের জন্য সমাজতন্ত্র, আর সবার জন্য কঠোর ব্যক্তিত্ববাদ"। আমরা কর্পোরেট সুবিধা, ধনীদের জন্য বিশাল কর ছাড় এবং এমন বাণিজ্যনীতি চাই না যাতে শুধু বড় কোম্পানির মুনাফা বাড়ায় কিন্তু শ্রমিকতা চাকরি হারায়। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের অর্থ হলো—একটি সরকার যা কেবল ক্ষমতাশালী লবির জন্য নয় বরং সবার জন্য কাজ করবে।
  • আমি বিশ্বাস করি না যে সরকারকে রাস্তার পাশের মুদি দোকান বা উৎপাদন ব্যবস্থা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে আমেরিকার সম্পদ সৃষ্টিকারী মধ্যবিত্ত এবং শ্রমজীবী পরিবারগুলো যেন সম্মানজনক জীবনযাত্রার মান পায়। তাদের আয় কমার বদলে বাড়তে হবে। আমি এমন বেসরকারি কোম্পানিতে বিশ্বাস করি যারা আমেরিকায় উন্নতি করে। আমি এমন কোম্পানিতে বিশ্বাস করি না, যারা আমেরিকায় কারখানা বন্ধ করে বা কম মজুরির বিদেশি শ্রমিকদের শোষণ করে মুনাফা বাড়ায়।
আউটসাইডার ইন দ্য হোয়াইট হাউজ (২০১৫) বইয়ের মুখবন্ধ
[সম্পাদনা]
  • যখন মানুষ বলে যে আমি অতিরিক্ত সিরিয়াস, আমি সেটাকে প্রশংসা হিসেবেই নিই। আমি সবসময়ই রাজনীতিকে একটি গুরুতর বিষয় হিসেবে দেখেছি।রাজনীতি শুধু ক্ষমতার খেলা নয় বরং জাতির ভবিষ্যৎ, আদর্শ এবং মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এসব মানুষকে খেলার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার মোটেও সমীচীন নয়। সম্ভবত এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই আমি আধুনিক মার্কিন রাজনীতিতে এক প্রকার বহিরাগত। যারা একটার পর একটা ফান্ডরেইজারে ছুটে বেড়ায় বা কোচ ব্রাদার্সের অর্থায়নে পরিচালিত সম্মেলন থেকে শেলডন অ্যাডেলসনের "প্রাইমারি" অনুষ্ঠানে যোগ দেয়, আমি যদি রাজনীতিতে সেই সব প্রার্থীদের চেয়ে বেশি সিরিয়াস হই, তাহলে আমি মনে করি না যে আমি আমেরিকান জনগণের চেয়ে বেশি সিরিয়াস। মার্কিন জনগণ চায় যে নির্বাচনী প্রচারণা হোক প্রার্থীদের নীতিগত অবস্থান নিয়ে— তারা কত টাকা তুলতে পারল, কে কোন জরিপে এগিয়ে আছে বা কার নেতিবাচক বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে এসব নিয়ে না। নির্বাচন প্রভাবিত হওয়া উচিত কেবল সাধারণ মানুষের আন্দোলন ও অপ্রত্যাশিত জোট দ্বারা— কোনো ব্যক্তিপূজা বা কোনো ধনকুবেরের চেকবই দ্বারা নয়। আমি যখন প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হই—শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে, ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সাধারণ মানুষের সংগ্রামের সমর্থক হিসেবে—তখন থেকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি যা আমাকে হতাশ করেছিল তা হলো এর ক্ষুদ্রতা ও হালকাভাব। আমার মনে হতো যে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের আদতে তুচ্ছ বিষয়ের ওপর সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করছে। তারা একজন প্রার্থীর হাসি কত উজ্জ্বল বা সে কতটা চতুরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীকে খাটো করতে পারল এসবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে— বিকল্প রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ কিংবা নীতির ভিত্তিতে নয়। আমি কখনোই এমন আত্মাহীন রাজনীতির অংশ হতে চাইনি। আর বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত থাকার পর আমি মনে করি আমি এই ধরনের রাজনীতি থেকে নিজেকে যথেষ্ট দূরে রাখতে পেরেছি।
  • সংগ্রামের রাজনীতি গড়ে ওঠে মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বোপরি পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর।
  • আমি নির্বাচনী রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম, কারণ আমি বিশ্বাস করতাম যে নাগরিক অধিকার, নারী অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং শান্তির জন্য চলমান আন্দোলন শুধু রাস্তায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না—এগুলোর প্রতিফলন আমাদের ব্যালটেও থাকতে হবে, ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোতেও পৌঁছাতে হবে।
  • যখন প্রতিকূলতা প্রবল তখনও পরিবর্তন আসে। আর আমরা ইতিমধ্যে যে পরিবর্তন এনেছি, যে অর্জনগুলো ছিনিয়ে নিয়েছি—সেগুলোর স্বীকৃতি আমাদেরকে আরও শক্তিশালী লড়াইয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করে।
  • আজকের আমেরিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বহিরাগত। বিশেষ করে ক্ষমতার মাঠে যেখানে আমাদের অর্থনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে তাদের অন্তর্ভুক্তি নেই। আর যতদিন রাজনৈতিক ভারসাম্য সাধারণ আমেরিকানদের বিপক্ষে থাকবে, যতদিন স্থিতাবস্থা বৈষম্য ও অবিচারের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে, ততদিন আমরা বহিরাগতই থাকব। এই সময়ের নতুন আন্দোলনগুলোর সমস্ত শক্তি নিয়েই আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হবে।
  • এখনই সময় এসেছে আমেরিকাকে সেই দেশ হিসেবে গড়ে তোলার, যা আমাদের জনগণের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের আকাঙ্ক্ষা। এই পরিবর্তন আনতে হলে একটি রাজনৈতিক বিপ্লবের প্রয়োজন।
লিবার্টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বক্তব্য (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫)
[সম্পাদনা]
  • "অন্যরা তোমাদের সঙ্গে যা করুক বলে তুমি চাও, তুমিও তাদের সঙ্গে তাই করো," এটাই হলো সুবর্ণ নীতি। অন্যের প্রতি সে আচরণ করো, যা তুমি নিজের জন্য প্রত্যাশা করো। এটি খুবই সহজ একটি নীতি।
  • এখন আমি যা বলতে চাই তা হলো—আপনারা কেউ আমার সঙ্গে একমত হতে পারেন, কেউ নাও হতে পারেন, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রকে—আমাদের মহান দেশ যে দেশকে আমরা সবাই ভালোবাসি—একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ বলা কঠিন। বরং ন্যায়বিচারের কাছাকাছিও আছি কি না সেটাই প্রশ্নসাপেক্ষ।
  • আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যেখানে আজ আমেরিকায় শীর্ষ ০.১ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে নিম্নবিত্ত ৯০ শতাংশ মানুষের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, সেই আমেরিকায় কোনো ন্যায়বিচার নেই। আর এই বাস্তবতাকে আপনি কতটা নৈতিক বা ন্যায়সঙ্গত মনে করেন, সেটার উত্তর আপনাকে আপনার নিজের হৃদয়ের কাছে থেকে খুঁজে নিতে হবে।
  • আপনারা কি মনে করেন এটা নৈতিক, যখন এই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী দেশটিতে ২০ শতাংশ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হচ্ছে? আপনি কি মেনে নিতে পারেন যে আমেরিকায় ৪০ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে?
  • আমার মতে, যখন নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মায়েরা সন্তান জন্মদানের মাত্র এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই কেবল রোজগারের উদ্দেশ্য কাজের জন্য তাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হন, তখনও ন্যায়বিচার থাকে না। আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে হলেও কিন্তু সকলেই পরিবারকে মূল্য দিই, পরিবারিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি।
  • যদি আপনি পৃথিবীর দিকে তাকান, তখন দেখবেন যে বিশ্বের প্রতিটি বড় দেশ তাদের জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে, কারণ তারা এটিকে একটি অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সেটা হয়নি। আপনি দেখবেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের মায়েদের বলছে যে, "যখন তোমার সন্তান জন্মাবে, তখন আমরা তোমাকে তোমার নবজাতকের কাছ থেকে আলাদা করব না। কারণ আমরা মাতৃত্বকালীন ও পারিবারিক ছুটির ব্যবস্থা রেখেছি, যা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রয়েছে।" এই নীতিগুলোতেই আমি বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, আমাদের ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ের মতো দেশগুলোর দিকে তাকানো উচিত এবং তারা কীভাবে তাদের শ্রমজীবী মানুষের উন্নতি করেছে, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
    • ক্লেয়ার জিলম্যান, "Bernie Sanders Was Right: Denmark Is the Best Nation for Working People" (বার্নি স্যান্ডার্স সঠিক বলেছিল: শ্রমজীবী মানুষের জন্য ডেনমার্ক শ্রেষ্ঠ দেশ), ফরচুন ম্যাগাজিন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
  • কু ক্লাক্স ক্ল্যান-কে নিন্দা করতেও অস্বীকার করে এমন কোনো বিদ্বেষপ্রচারক ব্যক্তি আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতির উত্তরসূরি হতে পারে না এবং হবেও না।
  • যদি আপনি শ্বেতাঙ্গ হন, তাহলে বস্তিতে বসবাস করার অভিজ্ঞতা কেমন তা আপনি জানবেন না। আপনি জানবেন না দরিদ্র থাকার বাস্তবতা কেমন, আপনি জানবেন না রাস্তায় হাঁটার সময় হয়রানির শিকার হওয়া বা গাড়ি থেকে টেনে বের করে নেওয়ার ভয় কেমন অনুভূত হয়। আমি বিশ্বাস করি, ২০১৬ সালে আমাদের দেশের হয়ে স্পষ্টভাবে বলতে হবে—আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদের অবসান ঘটাব এবং ভঙ্গুর বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করব।
    • আমান্ডা টারকেল, "Sanders: If You're White You Don't Know What It's Like To Be Poor" (যদি আপনি শেতাঙ্গ হন, তাহলে দরিদ্র হওয়ার অভিজ্ঞতা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন না), হাফিংটন পোস্ট, ৬ মার্চ ২০১৬।
  • না, আমি ইহুদি হওয়া নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। আর আমার ইহুদি পরিচয় আমার অস্তিত্বের একটি গভীর অংশ। শুনুন, আমার বাবার পরিবারকে হিটলার হলোকাস্টে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। আমি জানি উন্মাদ, চরমপন্থী ও বিদ্বেষমূলক রাজনীতির অর্থ কী। আমি সেই শিক্ষা পেয়েছিলাম একদম ছোটবেলায়, যখন আমার মা আমাকে বাজারে নিয়ে যেতেন, আর আমরা দোকানে এমন মানুষদের দেখতাম যাদের হাতে নম্বর খোদাই করা ছিল—কারণ তারা হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দি ছিলেন। আমি ইহুদি পরিচয় নিয়ে গর্বিত এবং এটি আমার মানবসত্তার অপরিহার্য অংশ।
  • কেউ আমাকে সাহায্য করতে করুন কারণ আমি সঠিক সংখ্যা মনে করতে পারছি না। কিন্তু আমার যতটুকু মনে আছে, গাজায় ১০,০০০-এর বেশি নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল। এটা কি ঠিক শোনাচ্ছে? নির্দিষ্ট সংখ্যা আমার জানা নেই কিন্তু আমার ধারণা নিহতের সংখ্যা ১০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। আমার জানা মতে, অসংখ্য ভবন ধ্বংস করা হয়েছিল। হাসপাতালও সম্ভবত বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছিল। তাই হ্যাঁ, আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে ইসরায়েল তার সামরিক শক্তির ব্যবহার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বেপরোয়াভাবে করেছে আর মনে করি না যে এই বিশ্বাস কেবল আমার একার।
  • আমরা এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করছি যেখানে লোভ ধনী শ্রেণির জন্য এক ধরণের ধর্মে পরিণত হয়েছে এবং তারা এর জন্য কোনো অনুশোচনা অনুভব করে না।
    • থমাস রোজিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকার, ১৫ এপ্রিল ২০১৬।
  • কে রাষ্ট্রপতি হবে এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এজেন্ডা কী হবে সে বিষয়ে এই দেশের প্রতিটি রাজ্যের মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। এ কারণেই আমরা শেষ ভোট পর্যন্ত এই লড়াইয়ে আছি। এ কারণেই আমাদের প্রচার অভিযান যত বেশি সম্ভব প্রতিনিধিসহ ফিলাডেলফিয়ার ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে যাচ্ছে, যাতে আমরা একটি প্রকৃত প্রগতিশীল নীতি গ্রহণের জন্য লড়াই করতে পারি। এই নীতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নূন্যতম মজুরি ১৫ ডলার করা, আমাদের বিপর্যয়কর বাণিজ্য নীতির অবসান, সবার জন্য মেডিকেয়ার-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, ওয়াল স্ট্রিটের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া, দেশে ফ্র্যাকিং বন্ধ করা, সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে টিউশন-ফ্রি করা এবং কার্বন কর চালু করা যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করা যায়।
  • আমি আপনাকে বলতে চাই, ২৫ বছর আগেও আমি বিশ্বাস করতাম যে এই দেশে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বিক্রি করা উচিত নয়, কারণ এগুলো মূলত মানুষ হত্যার জন্যই তৈরি। এছাড়াও, অস্ত্র যেন অপরাধী ও মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের মতো ভুল মানুষের হাতে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমাদের যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করতে হবে। এই লড়াই এখনো চলছে এবং তা চালিয়ে যেতে হবে।
    • মিট দ্য প্রেস, এনবিসি, ১২ জুন ২০১৬।
  • রাজনৈতিক বিপ্লব কোনো একটি নির্বাচন বা একজন প্রার্থীর ব্যাপার নয়। এটি আমেরিকাকে বদলে দেওয়ার আন্দোলন আর অর্থনৈতিক, সামাজিক, বর্ণগত ও পরিবেশগত ন্যায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপার। আমাদের একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হবে যাতে আমরা সেই প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি যা আমরা সবাই বিশ্বাস ও সমর্থন করি।
  • বিপর্যয়কর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রেসিডেন্ট যে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে আমি হতাশ। এই চুক্তি আমেরিকার মানুষের চাকরি কেড়ে নেবে, পরিবেশের ক্ষতি করবে, জরুরি ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেবে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। দেশের প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রায় সকল তৃণমূল স্তরের মানুষই এই চুক্তির বিরোধিতা করছে। সেক্রেটারি ক্লিনটন এই চুক্তির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। আমার মতে, এখন সিনেট ও হাউসের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদেরও সেক্রেটারি ক্লিনটনের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কংগ্রেসের ক্ষমতা হস্তান্তরের অন্তর্বর্তীকালীন অধিবেশনে বা তার পরেও যেন এই চাকরি ধ্বংসকারী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কোনো ভোটাভুটি না হয়, সেই বিষয়ে তাদের স্পষ্টভাবে নিজেদের বিরোধিতার কথা জানানো প্রয়োজন। আমাদের এই চুক্তিকে প্রতিহত করতে হবে এবং আমাদের বাণিজ্য নীতিগুলোকে একেবারে নতুন করে সাজাতে হবে। এর লক্ষ্য হবে আমাদের দেশে এবং সারা বিশ্বে ভালো বেতনের চাকরি তৈরি করা এবং মানের ক্রমাবনতি বা নিম্নমুখী প্রতিযোগিতা বন্ধ করা। টিপিপি চুক্তি যাতে কোনোভাবেই বাস্তবায়িত না হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবকিছু করে যাব।
  • এটা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই লজ্জার বিষয় যে আমরা পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দী করে রাখি। এর একটা বড় কারণ হলো বেসরকারি কারাগার। এর ফলে কারাবাস বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য বিপুল মুনাফা অর্জনের উৎসে পরিণত হয়েছে। একের পর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেসরকারি কারাগারগুলো খরচ কমায় না, এগুলো বেশি নিরাপদও নয়, এমনকি বন্দী বা রাষ্ট্র—কারোর জন্যই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। আমেরিকায় বেসরকারি কারাগারের এই লাভজনক ব্যবসা যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে হবে। কীভাবে মানুষকে জেলের বাইরে রাখা যায় এবং যারা মুক্তি পায় তারা যেন আবার জেলে ফিরে না আসে, তা নিশ্চিত করার দিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। এর জন্য প্রয়োজন চাকরি ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা— আরও জেলখানা তৈরি বা কারাবাস বাড়ানো নয়।
  • ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসার মূল ভিত্তিই হলো জালিয়াতি। আমার মতে, ওয়েলস ফার্গোতে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া অবৈধ কার্যকলাপের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর নেই।
  • আমাদের অবশ্যই এই দ্বিস্তর বিচার ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে – যেখানে গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক রকম বিচার, আর ওয়াল স্ট্রিট ও ধনীদের জন্য আরেক রকম। এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে অনেক দিন ধরে চলে আসছে।
  • ওয়াল স্ট্রিট ততক্ষণ বদলাবে না, যতক্ষণ না আমরা এটা পরিষ্কার করে দিচ্ছি যে – কোনো ব্যাংকই ব্যর্থ হওয়ার ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো সিইও জেলবন্দী ঊর্ধ্বে নন।
  • গণমাধ্যম শুধু প্রার্থীদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমেরিকার জনগণ চান আমরা যেন এখন আর প্রার্থীদের নিয়ে নয়, বরং তাদের নিয়ে ভাবি।
    • এমি গুডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকার, Bernie Sanders Warns That Corporate Media Threatens Democracy" (বার্নি স্যান্ডার্স সতর্ক করলেন যে কর্পোরেট মিডিয়া গণতন্ত্রের জিন্য হুমকি), অল্টারনেট, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
উইসকনসিনের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)
[সম্পাদনা]
  • নয় মাস আগে আমাদের এই প্রচারণা শুরু হয়েছিল। যখন শুরু হয়, তখন আমাদের কোনো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না, অর্থ ছিল না এবং ভারমন্ট রাজ্যের বাইরে আমাদের নামও তেমন কেউ জানত না। এই নয় মাসে অনেক কিছুই ঘটেছে। আর যা ঘটেছে, আমার মনে হয় তা হলো আমেরিকার জনগণ কিছু মৌলিক সত্যের প্রতি সাড়া দিয়েছেন। সেই সত্যগুলো হলো আমাদের বর্তমানে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাচনী তহবিল ব্যবস্থা রয়েছে যা আমেরিকার গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই ব্যবস্থা ওয়াল স্ট্রিট এবং বিলিয়নিয়ারদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করার সুযোগ করে দেয়। আর এই দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাচনী তহবিল ব্যবস্থার সাথে যুক্ত রয়েছে একটি কারচুপিপূর্ণ অর্থনীতি। এটি এমন এক অর্থনীতি যেখানে সাধারণ আমেরিকানরা অল্প মজুরিতে লম্বা সময় ধরে কাজ করছেন। তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। অথচ তাঁরা দেখছেন যে প্রায় সমস্ত নতুন আয় ও সম্পদ চলে যাচ্ছে সমাজের সবচেয়ে উপরের ১ শতাংশ মানুষের কাছে। এর পাশাপাশি, আমেরিকার মানুষ চারপাশে তাকিয়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা দেখছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি মানুষ কারাগারে বন্দী – প্রায় ২২ লক্ষ। আমরা প্রতি বছর ৮ হাজার কোটি ডলার খরচ করছি নিজেদের দেশের মানুষদের কারাগারে বন্দী করে রাখার জন্য।
  • দেখুন, সেক্রেটারি ক্লিনটন, আপনি এখনও হোয়াইট হাউজে যাননি। আর একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমি যতগুলো প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলোর খরচের সংস্থান করা আছে। উদাহরণস্বরূপ, বলুন তো, আমেরিকায় এমন কে আছেন যিনি অস্বীকার করবেন যে আমাদের দেশের অবকাঠামো ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে? রাস্তাঘাট, সেতু, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে তা কে অস্বীকার করবে? কে অস্বীকার করবে যে আজকে প্রকৃত বেকারত্বের হার প্রায় ১০ শতাংশ? এর মধ্যে তাঁরাও অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা কাজ খোঁজা ছেড়ে দিয়েছেন বা কেবল খণ্ডকালীন কাজ করছেন। কে অস্বীকার করবে যে আফ্রিকান-আমেরিকান তরুণদের মধ্যে প্রকৃত বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশেরও বেশি?
  • হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি, যেহেতু আমেরিকার জনগণ ওয়াল স্ট্রিটকে বাঁচিয়েছে, তাই এখন ওয়াল স্ট্রিটের উচিত এক ধরণের কর দেওয়া যাতে আমরা সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টিউশন ফি-মুক্ত করতে পারি।
  • কিন্তু, এই প্রচারণার পুরোটা সময় জুড়ে আমি একটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি, আর সত্যি বলতে এটা খুব বেশি বৈপ্লবিক কোনো প্রতিশ্রুতি নয়। আমরা চীনের চেয়েও বেশি মানুষকে জেলে বন্দী করে রেখেছি। অথচ চীন একটি সমাজতান্ত্রিক স্বৈরাচারী দেশ এবং আমাদের চেয়ে চারগুণ বড়। আর এই বন্দীদের মধ্যে আফ্রিকান আমেরিকান ও ল্যাটিনোদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাই, আমার প্রতিশ্রুতি হলো প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার প্রথম মেয়াদের শেষে, আমাদের দেশে বন্দীর সংখ্যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের চেয়ে বেশি থাকবে না।
  • আজ আমেরিকায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই। আমরা প্রেসক্রিপশনের ওষুধের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দাম দিই, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে একজন তাদের ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধের খরচও বহন করতে পারেন না। লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনেক বেশি ডিডাক্টিবল এবং কো-পেমেন্ট বহন করতে হয়। আমি জানি না সেক্রেটারি ক্লিনটন কোন অর্থনীতিবিদদের সাথে কথা বলছেন। কিন্তু আমি যা বলেছি তা হলো একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে বছরে ৫০০ ডলারের মতো বেশি কর দিতে হতে পারে, কিন্তু এর বিনিময়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বছরে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত কমে যাবে। আমার মতে, স্বাস্থ্যসেবা সকল মানুষের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা নয় বরং একটি অধিকার। আর আমি এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই করে যাব।
  • পৃথিবীতে এমন একটিই প্রধান দেশ আছে, যারা তাদের সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেয় না। সেই একটি প্রধান দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – যারা মাথাপিছু স্বাস্থ্যসেবার পেছনে যুক্তরাজ্যের প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ করে, অথচ যুক্তরাজ্য তার সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। এদেশ ফ্রান্সের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি খরচ করে, যেখানে ফ্রান্সও সকলের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেয়। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ কানাডার চেয়েও অনেক বেশি খরচ করে, তারাও তাদের সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে।
মাইয়ামির ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট (মার্চ ২০১৬)
[সম্পাদনা]
  • আজকের আমেরিকায় মধ্যবৃত্ত শ্রেণি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
  • আমার মনে হয়, আমেরিকার মানুষ এমন কোনো রাষ্ট্রপতিকে কখনো নির্বাচিত করবে না যিনি মেক্সিকান, মুসলিম, মহিলা এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের অপমান করেন। আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে কয়েক বছর আগে ট্রাম্প তথাকথিত ‘বার্থার’ আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলেন এবং আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতির পদের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছিলেন। কারেন, আমার কাছে ব্যাপারটা বেশ আকর্ষণীয় মনে হয় যে আমার বাবা পোল্যান্ডে জন্মেছিলেন। অভিবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমার কিছুটা ধারণা আছে। আজ পর্যন্ত কেউ কখনো আমার কাছে আমার জন্মসনদ দেখতে চায়নি। হয়তো এর সাথে আমার গায়ের রঙের কোনো সম্পর্ক আছে।
  • দারিদ্র্য বাড়ছে। আর যদি মজুরি কমতে থাকে, তাহলে কেন লক্ষ লক্ষ অতিথি কর্মীর এ দেশে আসার প্রয়োজন আছে, আমি বুঝতে পারছি না; এরা মার্কিন কর্মীদের চেয়ে কম মজুরিতে কাজ করবে এবং মজুরি বর্তমানের চেয়ে আরও কমিয়ে দেবে। এমনও অতিথি কর্মী কর্মসূচি রয়েছে যেগুলোকে সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার দাসত্বের সাথে তুলনা করেছে; যেখানে মানুষ এসে প্রতারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, অপমানিত হয়েছে। আর যদি তারা তাদের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ করত, তবে তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হতো। আমি ২০১৩ সালের অভিবাসন সংস্কার আইন সমর্থন করেছিলাম। আর আমি এখন যা বিশ্বাস করি তা হলো আমাদের শুধু অভিবাসনের ব্যাপক সংস্কারই প্রয়োজন নয়। এই দেশে অভিবাসন সংস্কার একটি অত্যন্ত উত্তপ্ত বিতর্কের বিষয়; এটি দেশকে বিভক্ত করেছে। কিন্তু আমি খুব আশা করব যে আমরা যখন এই বিতর্ক করব, তখন যেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যদের মতো বর্ণবাদ, বিদেশি-বিদ্বেষ এবং গোঁড়ামির আশ্রয় না নিই। হঠাৎ করে একদিনে বা এক রাতে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষকে ধরে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার এই ধারণাটি একটি কুরুচিপূর্ণ, উদ্ভট চিন্তা যা আমেরিকার খুব কম মানুষই সমর্থন করবে বলে আমি আশা করি।
  • আমি ডাপা (DAPA) এবং ডাকা’র (DACA) বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ওবামার প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। আর আমি মনে করি আমাদের এই প্রচেষ্টাগুলো আরও বাড়াতে হবে। এখন আমি বহু বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ওবামার সাথে একমত। আমি মনে করি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে খুব ভালো কাজ করেছেন। তবে, নির্বাসনের এই বিষয়ে তিনি ভুল করছেন। আমি এই ব্যাপারে তার সাথে একমত নই।
আওয়ার রিভোলুশন
[সম্পাদনা]
  • ২০১৫ সালের এপ্রিলে যখন আমরা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আমাদের প্রচারণা শুরু করি, তখন দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এবং সংবাদমাধ্যমগুলো আমাদের তেমন গুরুত্ব দেয়নি; তারা এটিকে একটি প্রান্তিক বা অগুরুত্বপূর্ণ প্রচারণা হিসেবেই দেখেছিল। কারণ, আমি ছিলাম ছোট একটি রাজ্যের সিনেটর যাকে খুব কম মানুষই চিনত। আমাদের প্রচারণার জন্য কোনো অর্থ ছিল না, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনও ছিল না। আর আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম পুরো ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আর এটাও বলার মতো যে আমরা দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক চক্রের বিরুদ্ধেও লড়ছিলাম। ক্লিনটন গোষ্ঠী বিল ক্লিনটনকে দুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিতিয়েছিল এবং ২০০৮ সালে হিলারি ক্লিনটনকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন প্রায় পাইয়েই দিয়েছিল। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে যখন আমাদের প্রচার অভিযান অবশেষে শেষ হলো, তখন দেখা গেল যে বিশেষজ্ঞরা একেবারেই ভুল ছিলেন। আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলাম এবং দেশের আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রচার অভিযান চালিয়েছিলাম – এমন একটি অভিযান যা আমেরিকাকে অত্যন্ত গভীরভাবে বদলে দেবে।
  • প্রচারণার সময় আমরা এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করেছিলাম যা প্রতিষ্ঠিত মহল অনেক দিন ধরে এড়িয়ে চলছিল। আমরা এই দেশে আয় ও সম্পদের ভয়াবহ বৈষম্য এবং সেই বৃহৎ ব্যাংকগুলোকে ভেঙে ফেলার গুরুত্বের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলাম, যারা আমাদের অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আমাদের ক্ষতিকর বাণিজ্য নীতি, ভেঙে পড়া বিচার ব্যবস্থা এবং জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চশিক্ষা পাওয়ার সুযোগের অভাবকে সবার সামনে তুলে ধরেছিলাম। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সংকট, সত্যিকারের ব্যাপক অভিবাসন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, যুদ্ধের চেয়ে কূটনীতিকে প্রাধান্য দেয় এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলার গুরুত্ব এবং আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম।
  • প্রচারণার পনেরো মাস ধরে একটি মূল কথা আমি বারবার বলেছি এবং সেটা আমি এখানে আবারও বলছি: এই প্রচারণাটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার বিষয় ছিল না – যদিও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রচারণা ছিল আমেরিকাকে বদলে দেওয়ার। এটা ছিল এই উপলব্ধি নিয়ে যে প্রকৃত পরিবর্তন কখনো উপর থেকে নিচে আসে না; এটা সবসময় নিচ থেকে উপরে ঘটে। যখন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ ন্যায়ের জন্য রুখে দাঁড়াতে এবং লড়াই করতে প্রস্তুত হয় তখনই তা ঘটে। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস এটাই বলে। নারী আন্দোলনের ইতিহাস এটাই বলে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ইতিহাস এটাই বলে। সমকামী অধিকার আন্দোলনের ইতিহাস এটাই বলে। পরিবেশ আন্দোলনের ইতিহাস এটাই বলে। ন্যায়ের জন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মূল কথাই এটা। এটাই হলো রাজনৈতিক বিপ্লব।
  • নিজের বক্তব্য আমি নিজেই লিখি।
  • আমেরিকাকে বদলে দেওয়ার অর্থ শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়া বদলানো নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা।
  • মানবতা আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা লোভ, ভোগবাদ, ধনিকতন্ত্র, দারিদ্র্য, যুদ্ধ, বর্ণবাদ এবং পরিবেশ ধ্বংসের বর্তমান পথেই চলতে পারি। অথবা আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারি।
  • আজকের দিনে গণতন্ত্রের মানে কী? আমার মতে এর অর্থ হওয়া উচিত এক ব্যক্তি-এক ভোট। এর অর্থ হওয়া উচিত যারা জনপ্রতিনিধি হতে চান তাদের সকলের জন্য সমান সুযোগ। এর অর্থ হওয়া উচিত নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর ধনীদের অন্যায্য প্রভাব থাকবে না। এর অর্থ হওয়া উচিত ভোট দেওয়া এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা যতটা সম্ভব সহজ ও সুবিধাজনক হবে এবং নাগরিকদের কোনো গোষ্ঠীকে তাদের অংশগ্রহণের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়ার জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে না। এর অর্থ হওয়া উচিত যে দরিদ্র মানুষ, বয়স্ক মানুষ, তরুণ প্রজন্ম এবং ভিন্ন বর্ণের মানুষ যখন ভোট দিতে চায়, তখন তাদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হবে না। এর অর্থ হওয়া উচিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভোটদানের হারগুলোর মধ্যে একটি থাকবে, সর্বনিম্নগুলোর মধ্যে একটি নয়। এর অর্থ হওয়া উচিত যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেশি থাকবে এবং আমাদের দেশ যেসব বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষ সচেতন ও ভালোভাবে অবগত থাকবে।
  • মূল কথা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করি, যার কার্যক্ষমতা খুবই দুর্বল। এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের – একটি প্রকৃত পরিবর্তনের।
  • স্নাতক হওয়া উচিত একটি আনন্দময় নতুন জীবনের সূচনা— উদ্বেগে ভরা ও দশকব্যাপী আর্থিক বোঝার সূচনা নয়।
  • আজও আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে ১৯৩০-এর দশকের পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস ধনীদের জন্য আরও কর ছাড় দিয়েছিল।
  • আমার রাষ্ট্রপতি পদের প্রচারণার যদি কোনো মূল উদ্দেশ্য থেকে থাকে তবে তা ছিল সকলের জন্য একটি উন্নত জীবন দাবি করার লক্ষ্যে এক জাতি হিসেবে আমাদের সকলের একত্রিত হওয়া।
  • আমার মতে এই গ্রহের জন্য একমাত্র বড় হুমকি হলো বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন। এটি আমাদের দেশ এবং আমাদের বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য একটি প্রকৃত সংকট।
  • আমাকে এইমাত্র জানানো হয়েছে যে রিপাবলিকানদের বেসবল অনুশীলনের সময় যিনি গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তিনি সম্ভবত আমার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই জঘন্য ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত এবং আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আমাদের সমাজে কোনো ধরনের সহিংসতাই গ্রহণযোগ্য নয় এবং আমি এই কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। প্রকৃত পরিবর্তন কেবল অহিংস কাজের মাধ্যমেই আসতে পারে; এর বাইরে অন্য কিছু আমাদের আমেরিকানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের পরিপন্থী। আমি আশা করি এবং প্রার্থনা করি আহত প্রতিনিধি স্ক্যালিস, কংগ্রেসের কর্মী এবং ক্যাপিটল পুলিশ অফিসাররা যেন দ্রুত ও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। আমি ক্যাপিটল পুলিশকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য, যা আরও বড় ক্ষতি রুখে দিয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকার (মার্চ ২০১৭)
[সম্পাদনা]

দ্য গার্ডিয়ান-এর এড পিলকিংটন লিখিত ট্রান্সক্রিপ্ট (১০ মার্চ ২০১৭)।

  • স্পষ্টতই এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য এবং যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ, তাই পুরো বিশ্বের জন্যই খুব ভীতিকর সময়। খারাপ খবরটা হলো, খুবই খারাপ খবরটা হলো যে, আমাদের এমন একজন রাষ্ট্রপতি আছেন যিনি একজন স্বভাবগত মিথ্যুক। আমি এটা কোনো দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি না। কারণ আমার অনেক রক্ষণশীল বন্ধু আছেন যাদের সাথে প্রায় প্রতিটি বিষয়েই আমার মতপার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তারা মিথ্যুক নন; তারা যা বিশ্বাস করেন সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু ট্রাম্প সারাক্ষণ মিথ্যা বলেন। আর আমার মনে হয় এটা এমনি এমনি নয়, এর পেছনে কারণ আছে। তিনি আমেরিকান গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলেন। আমার উদ্বেগের কারণ শুধু ধনকুবেরদের কর ছাড় দেওয়া এবং মধ্যবিত্ত, কর্মজীবী পরিবার, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিশু, বয়স্ক ও দরিদ্রদের প্রভাবিত করে এমন সব কর্মসূচিতে মারাত্মক কাটছাঁট করার মতো প্রতিক্রিয়াশীল অর্থনৈতিক কর্মসূচিই নয়, বরং আমেরিকান গণতন্ত্রকে দুর্বল করার তার প্রচেষ্টাও উদ্বেগের বিষয়। এর অংশ হিসেবে তিনি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে লাগামহীন আক্রমণ করছেন, বলছেন যে মূলধারার গণমাধ্যম যা কিছু বলে তার প্রায় সবই মিথ্যা। আর আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে টেক্সাসের ল্যামার স্মিথ নামে একজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান – আমি তার কথার ভাবার্থ বলছি, তবে আপনারা মূল উক্তিটি খুঁজে দেখতে পারেন – বলেছেন, ‘আসলে, আমেরিকায় সত্যিটা জানতে হলে, তা জানার একমাত্র উপায় হলো সরাসরি রাষ্ট্রপতির মুখ থেকে শোনা।’
  • আর এমন একজন রাষ্ট্রপতি আছেন যিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের মনোনীত একজন বিচারপতিকে 'তথাকথিত' বিচারপতি বলেছেন, কারণ তিনি রাষ্ট্রপতির সাথে ভিন্নমত পোষণ করে একটি রায় দিয়েছিলেন। তিনি নির্বাচনে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ অবৈধ লোক ভোট দিয়েছে বলে উদ্ভট অভিযোগ তুলেছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নির্বাচন কর্মকর্তার উপর একটি আক্রমণ এবং যা কার্যত মার্কিন জনগণকে এটাই বোঝায় যে নির্বাচন বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না, নির্বাচনগুলো প্রতারণাপূর্ণ। সুতরাং, আপনার এমন একজন রাষ্ট্রপতি আছেন যিনি বলেন, আপনি যা পড়েন ও দেখেন তা ভুয়া, বিচারপতিরা যদি তার থেকে ভিন্ন মত দেন তবে তারা আসল বিচারপতি নন এবং নির্বাচনগুলো আসল ভোটের গণনার উপর ভিত্তি করে নয় বরং সেগুলোও প্রতারণাপূর্ণ। এই সবকিছু এবং আরও অনেক কিছুই ঘটছে, যা কেবল একটি উপসংহারের দিকেই নিয়ে যায়। আর তা হলো আমেরিকায় একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমেরিকান জনগণের পক্ষে দাঁড়ান, আমেরিকায় একমাত্র ব্যক্তি যিনি সত্য বলেন, আমেরিকায় একমাত্র ব্যক্তি যিনি সঠিক কাজটি করেন, তিনি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এটি মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। জর্জ বুশ একজন খুবই রক্ষণশীল রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমি প্রতিদিন তার বিরোধিতা করতাম। কিন্তু জর্জ বুশ আমেরিকার মূলধারার রাজনৈতিক মূল্যবোধের বাইরে গিয়ে কাজ করেননি।
  • আমার মনে হয় তিনি এমন একটি দেশের নেতা হতে চান যা উল্লেখযোগ্যভাবে কর্তৃত্ববাদের দিকে এগিয়ে গেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাতে অসাধারণ ক্ষমতা থাকবে – যা আমাদের সংবিধান বা আমেরিকান জনগণের মূল্যবোধের সমর্থনের চেয়ে অনেক বেশি। স্পষ্টতই সেই প্রবণতাকে এবং বাকি সবার বিনিময়ে ১ শতাংশকে লাভবান করবে এমন সব অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে পরাজিত করার একমাত্র উপায় হলো ব্যাপক তৃণমূল প্রতিরোধ; আর পরিষ্কারভাবেই আমরা এখনই তা দেখতে পাচ্ছি। এর অনেক উদাহরণও রয়েছে। আমি শুধু উইমেন্স মার্চের কথাই বলছি না বা সেই হাজার হাজার মানুষের কথাও নয় যারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিলের বিরোধিতা জানাতে টাউন মিটিংগুলোতে এসেছেন; কিংবা গত সপ্তাহান্তে আমরা সারা দেশে যেসব র‍্যালি আয়োজন করেছিলাম তার কথাও নয় – প্রায় ১৩০টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে ১৫০টির মতো র‍্যালি যেখানে হাজার হাজার মানুষ তাদের কংগ্রেস সদস্যদের সাথে দেখা করার দাবি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিলের প্রতিবাদে।
  • অন্যান্য অনেক বক্তব্যের পাশাপাশি ইনি এমন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি নিঃসন্দেহে এই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিবেশবিরোধী। ইনি এমন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন একটি ধাপ্পাবাজি, যদিও প্রায় সমগ্র বিজ্ঞানী সম্প্রদায় যা বলছে, তা এর বিপরীত। ইনি এমন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি স্কট প্রুইট নামের একজনকে ইপিএ-র (পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যার কাজ হবে এই সংস্থাকে ভেঙে ফেলা। যিনি টেক্সাসের গভর্নর পেরিকে জ্বালানি সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এমন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি ঠিক যেদিন ভাষণ দিলেন, সেদিনই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন যা আমেরিকায় বিশুদ্ধ জল রক্ষার নিয়মকানুনকে বেশ দুর্বল করে দেয়। সুতরাং, ঠিক সেই দিনেই যেদিন আপনি বাতাস ও জলের দূষণ বাড়ানোর মতো একটি নিয়ম জারি করছেন, সেদিনই বিশুদ্ধ বাতাস ও জল রক্ষার কথা বলাটা অবিশ্বাস্য রকমের ভণ্ডামি। সত্যি বলতে, হাসি চেপে রাখা কঠিন ছিল; ভণ্ডামিটা ছিল কল্পনাতীত।
  • আমার অনেক খুবই রক্ষণশীল রিপাবলিকান সহকর্মী আছেন যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, যারা তাদের প্রতিক্রিয়াশীল অর্থনৈতিক মতামতের জন্য লড়াই করবেন, কিন্তু তারা কর্তৃত্ববাদে বিশ্বাস করেন না। ইতিহাসের এই মুহূর্তে তাদের রুখে দাঁড়ানো এবং বলা কর্তব্য যে ট্রাম্প যা করছেন তা আমেরিকার মূল আদর্শ নয়, এটা আমাদের সংবিধানের মূল কথা নয়। প্রতিরোধে তাদের আমাদের সাথে যোগ দিতে হবে। সত্যি বলতে আমি আশা করি আগামী মাসগুলোতে এমন কিছু রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের সাথে কাজ করব, যাদের সাথে প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত বিষয়ে আমার মতবিরোধ আছে যা আপনি কল্পনা করতে পারেন, কিন্তু এই রাষ্ট্রপতিকে এটা বলার জন্য যে আপনি মার্কিন গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে পারবেন না। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বলেন যে গত নির্বাচনে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ অবৈধভাবে ভোট দিয়েছে, যখন তার একজন মুখপাত্র বলেন যে সেই নির্বাচনে ম্যাসাচুসেটস থেকে বাস ভর্তি লোক নিউ হ্যাম্পশায়ারে অবৈধভাবে ভোট দিতে এসেছিল – এগুলি ১০০% সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বিভ্রম এবং মিথ্যা। কিন্তু এটি যা করে তা হলো এটি সারা দেশের রিপাবলিকান গভর্নরদের কাছে একটি বার্তা পাঠায় যাতে তারা ভোট দমনের প্রচেষ্টা আরও বাড়িয়ে তোলে। এটা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ অবৈধভাবে ভোট দিয়েছে এটা যদি সত্যি হতো তবে তা একটি সত্যিকারের সংকট হতো এবং আমাদের এ বিষয়ে কিছু করতে হতো। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এটি সত্যি নয়, সুতরাং যতক্ষণ আপনি এই বিভ্রমটি বজায় রাখবেন, ততক্ষণ আপনি রিপাবলিকান গভর্নরদের ভোট দমনের জন্য উস্কানি দিচ্ছেন যা খুবই, খুবই ভীতিজনক।
  • শুরুতেই যেটা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি তা হলো রাশিয়া আমাদের নির্বাচনে প্রভাব ফেলার চেষ্টায় – আমার মনে হয় সফলভাবেই – খুব জোরালো ভূমিকা রেখেছিল। এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রমাণ আছে যে তারা আগেও এটা করেছে এবং তারা আবার করবে। বিশ্বের সব গণতন্ত্রের জন্য এটা মেনে নেওয়ার মতো নয় যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি স্বৈরাচারী সরকার দ্বারা দুর্বল হচ্ছে এবং কীভাবে আমরা এর মোকাবিলা করব, কীভাবে আমরা আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করব এবং একই সাথে নিশ্চিত করব যাতে রাশিয়া যা করছে তা বন্ধ করে তা আমাদের বের করতে হবে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমার মনে হয় সম্ভবত ওবামা পুতিনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটা কঠোর হওয়া উচিত ছিল, ততটা ছিলেন না। সুতরাং, প্রথম বিষয় হলো তারা যে এটা করেছিল তাতে কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের অনেক, শত শত বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল। আসল কৌশলটা কী ছিল, কে তাদের অর্থ দিয়েছিল তা হয়তো স্পষ্ট নয়, কিন্তু এমন লোক ছিল যারা রুশ সরকারের অনুমোদন নিয়ে মার্কিন গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করছিল। দ্বিতীয় বিষয় হলো যা আমরা জানি না এবং যা অবশ্যই তদন্ত করা দরকার তা হলো ট্রাম্পের প্রচারণা এবং এই রুশদের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসাজশ ছিল কিনা। তৃতীয় বিষয় হলো আমাদের যা জানা দরকার তা হলো ট্রাম্পের উপর রুশ ধনিকগোষ্ঠীর কী ধরনের প্রভাব রয়েছে। অনেকেই বেশ হতবাক। দেখা যাচ্ছে তিনি আপাতদৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, দীর্ঘদিনের মিত্রদের সাথে তীব্র মতবিরোধে লিপ্ত, কিন্তু পুতিন সম্পর্কে তার শুধু ভালো কথাই বলার আছে। অথচ পুতিন একজন স্বৈরাচারী নেতা, যিনি রাশিয়ায় প্রতিদিন গণতন্ত্রকে দুর্বল করছেন।
  • ব্রেক্সিট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিজয় এবং ইউরোপ জুড়ে উগ্র-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী প্রার্থীদের উত্থানের অন্যতম কারণ হলো বিশ্ব অর্থনীতি বৃহৎ বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর জন্য খুব লাভজনক হয়েছে এবং এটি নানাভাবে উচ্চশিক্ষিত মানুষের জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই দেশে এবং সারা বিশ্বে এমন কোটি কোটি মানুষ রয়েছেন যারা বিশ্বায়নের ফলে পিছিয়ে পড়েছেন। এই দেশে ট্রাম্প তার ভাষণে একটি বাস্তব সত্য উল্লেখ করেছিলেন। তা হলো ২০০০ সাল থেকে আমরা প্রায় ৬০,০০০ কারখানা হারিয়েছি। লক্ষ লক্ষ ভালো বেতনের উৎপাদন খাতের চাকরি হারিয়ে গেছে। এর কিছুটা অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয়তার কারণে আর অনেকটাই সেইসব ক্ষতিকর বাণিজ্য নীতির কারণে যা মার্কিন শ্রমিকদের ক্ষতি করে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর প্রধান নির্বাহীদের লাভবান করেছে। বিশ্বের অনেক অংশেই এটা সত্যি। ট্রাম্প সেইসব মানুষের সমর্থন পেয়েছিলেন যারা মনে করত যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি তাদের ভুলে গেছে। আর সত্যিটা হলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অভিজাতরা আসলেই তাদের ভুলে গিয়েছিল। আমরা এই দেশে দেখেছি, যা হয়তো ইউরোপে তেমনভাবে জানা নেই যে, লক্ষ লক্ষ কর্মীর জন্য মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য করার পর আজকের মজুরি ৪০ বছর আগের তুলনায়ও কম। ফলে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ দুটি বা তিনটি চাকুরি করছে, মানুষ কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে। আমেরিকায় ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী বয়স্ক কর্মীদের অর্ধেক এমন আছেন, যাদের অবসরের দ্বারপ্রান্তে এসেও ব্যাংকে বলতে গেলে কিছুই জমা নেই। পৃথিবীর প্রায় যেকোনো বড় দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শিশু দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ। আমাদের রয়েছে ব্যাপক আয় বৈষম্য। সুতরাং, আমেরিকা এবং বিশ্বের অনেক অংশে যা ঘটেছে তা হলো বিশ্বায়ন সেইসব মানুষদের জন্য ভালো ফল বয়ে এনেছে যারা দাভোসে মিলিত হন, অর্থাৎ বিশ্বের শাসক অর্থনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। শুধু এই দেশেই ধনকুবেরদের সংখ্যা দশগুণ বেড়েছে।
  • এটা খুবই ভালো একটা প্রশ্ন। আর এর উত্তরটা হলো যে আমার মনে হয় এদেশের অনেকেই নিশ্চিতভাবে বোঝেন গত ৩০ বা ৪০ বছরে আমরা দেখেছি যে ডেমোক্রেটিক পার্টি শ্রমিক শ্রেণীর (সেটা শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক হোক, কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিক হোক বা অভিবাসী শ্রমিক হোক) দল থেকে পরিবর্তিত হয়ে এমন একটি দলে পরিণত হয়েছে যা অনেকাংশে এক উদারপন্থী অভিজাত শ্রেণীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই শ্রেণীটি এদেশের মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবারগুলোর চাহিদা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তাই, আপনি যদি আজ এদেশের যেকোনো জায়গায় রাস্তায় নেমে সাধারণ মেহনতি মানুষকে জিজ্ঞেস করেন যে তারা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আমেরিকান শ্রমিক শ্রেণীর দল বলে মনে করে কিনা, খুব কম লোকই হ্যাঁ বলবেন। অথচ, আপনি যদি ১৯৩০-এর দশকে ফ্র্যাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্টের সময়ে এই একই প্রশ্ন করতেন, তারা অবশ্যই হ্যাঁ বলতেন, তখন একটা স্পষ্ট পার্থক্য ছিল। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনই ওয়াল স্ট্রিটের নিয়মকানুন শিথিল করেছিলেন; ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনই নাফটা চুক্তির পক্ষে জোর দিয়েছিলেন; আবার ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি)-র জন্য তাঁর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন। এখন আমার মতে ক্লিনটন কিছু খুব ভালো কাজ করেছেন, ওবামাও অনেক ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু এটাই হলো বাস্তবতা। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন পুরোপুরি ভণ্ড ব্যক্তির জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। অথচ তিনি নিজের অনেক পণ্য বিদেশে—চীন, মেক্সিকো আর তুরস্কে—কম মজুরির কারখানায় তৈরি করান এবং এখানে এসে মার্কিন শ্রমিকদের রক্ষাকর্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন।
  • সমস্যাটা হলো কিছু উদারপন্থী মানুষের জন্য ব্যাপারটা অন্যরকম আর ঠিক এই কারণেই আমি নিজেকে উদারপন্থী না বলে প্রগতিশীল মনে করি। আপনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একশ ভাগ সমর্থক হতে পারেন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার চাইতে পারেন, ব্যাপক অভিবাসন সংস্কার চাইতে পারেন, নারী অধিকারের পক্ষে থাকতে পারেন, পরিবেশ রক্ষার কথা বলতে পারেন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমাদের জ্বালানি ব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত জোরালোভাবে কাজ করতে পারেন এবং একই সাথে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক, কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিক, লাতিনো শ্রমিক এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জোরালো সমর্থকও হতে পারেন – এই দুইয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকা উচিত নয়। কিন্তু যা হয়েছে তা হলো ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই বলেছেন, ‘আচ্ছা, আমি নারী অধিকারে বিশ্বাস করি, নাগরিক অধিকারে বিশ্বাস করি, অভিবাসন সংস্কারে বিশ্বাস করি, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে বিশ্বাস করি,’ এবং এগুলোর উপরই জোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার ফলে সংকুচিত হতে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাহিদা এবং আয় ও সম্পদের বিশাল বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। সত্যিটা হলো আমরা দুটোই করতে পারি এবং আমাদের দুটোই করা উচিত; এটা এমন নয় যে কোনো একটা বেছে নিতে হবে। বরং দুটোই একসাথে করতে হবে।
  • আমি এমনটা আশা করিনি, তবে খুব একটা অবাকও হইনি। নির্বাচনের আগের রাতে যখন ঘুমাতে যাই, তখনও ভাবছিলাম ক্লিনটনের জেতার সম্ভাবনা ট্রাম্পের চেয়ে দুই বা তিনগুণ বেশি। আমার মনে হয়েছিল ক্লিনটনই জিতবেন। কিন্তু এমনটা কখনোই ভাবিনি যে, 'ওহ, ট্রাম্পের জেতার কোনো সুযোগই নেই'। আমার মনে হয়েছিল তারও একটা জেতার সুযোগ আছে – যদিও ক্লিনটনের সম্ভাবনা দুই বা তিনগুণ বেশি ধরেছিলাম, তবুও ফল দেখে আমি হতবাক হইনি।
  • উত্তরটা হলো, আমরা খুব শীঘ্রই তা জানতে পারব। আসল পরীক্ষা তো কাজেই হবে। অর্থাৎ টম পেরেজ [ডিএনসি-র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান] শেষ পর্যন্ত কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দেন তার ওপরই সব নির্ভর করছে। আমি ওই পদের জন্য কিথ এলিসনকে সমর্থন করেছিলাম। কারণ কিথ মনে-প্রাণে একজন তৃণমূল সংগঠক এবং তিনি তৃণমূল স্তরের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তিনি আমার মতোই ডেমোক্রেটিক পার্টিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করে একটি উপর থেকে চাপানো দলের বদলে নিচ থেকে গড়ে ওঠা দলে পরিণত করার প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাস করেন। টম পেরেজ চেয়ারম্যান হওয়ার প্রচারণার সময় বলেছিলেন যে তিনি কিথের সাথে একমত এবং এই ভাবনার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু আসল প্রমাণ পাওয়া যাবে টম ডেমোক্রেটিক পার্টিকে কোন পথে চালিত করেন তার মাধ্যমে। একটা বিষয় মৌলিকভাবে স্বীকার করতে হবে যে ডেমোক্রেটিক পার্টির বর্তমান মডেলটি একটি ভয়াবহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, এতে কোনো যদি-কিন্তু নেই। এটা শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হারার বিষয় নয়, শুধু সিনেট বা ইউএস হাউস হারানোর বিষয় নয় বা দেশজুড়ে শুধু গভর্নরের পদ হারানোর বিষয়ও নয় – রিপাবলিকানরা এখন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ গভর্নরের পদ নিয়ন্ত্রণ করে। ডেমোক্র্যাটরা সারাদেশে রাজ্যগুলোর আইনসভায় ৯০০টিরও বেশি আসন হারিয়েছে। এমন অনেক রাজ্য আছে যেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকি নির্বাচন হলে ডেমোক্র্যাটরা ইউএস সিনেটের জন্য প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারে না। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয়। সুতরাং, অতীতে যা করা হয়েছে তা ব্যর্থ হয়েছে এবং দলের একটি মৌলিক পুনর্গঠন প্রয়োজন এই উপলব্ধিটা অত্যন্ত জরুরি।
  • গরসাচের অবস্থানটা ঠিক কোথায় সেটা আমাদের বোঝা দরকার এবং তিনি কোন জায়গা থেকে কথা বলছেন সেটা আমেরিকান জনগণকে পরিষ্কারভাবে বোঝানো দরকার। তারপর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। আমি মনে করি, সিটিজেনস ইউনাইটেড (নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থায়ন সংক্রান্ত রায়) এই দেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটা; আমাদের সাধারণভাবে জানা দরকার গরসাচের অবস্থানটা কী। আমি এটাও মনে করি যে নারীদের নিজেদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অধিকার আছে এবং এই বিষয়ে গরসাচের অবস্থান কী তা আমাদের জানতে হবে। ভোটারদের অধিকার খর্ব করে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার যে রিপাবলিকান প্রচেষ্টা, তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন; এই বিষয়ে তার অবস্থানটা কী? এটা স্পষ্ট যে সুপ্রিম কোর্টকে শ্রমিকদের অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে, শুধু বারবার বড় কর্পোরেশনগুলোর পক্ষে রায় দিলেই চলবে না। এই ব্যাপারে গরসাচের অবস্থান কী? আমার মনে হয় এই সমস্ত বিষয়ে বিচারপতি গরসাচের অবস্থান কী তা আমরা ইতিমধ্যেই জানি। আগামী এক-দুমাসে আমাদের কাজ হবে এই তথ্যগুলো আমেরিকান জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
  • ট্রাম্পের নির্বাচনের আগে এবং পরে রিপাবলিকানরা বারবার বলেছে যে তারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা আইন) বাতিল করে দেবে; তাদের মতে এটা আমেরিকান জনগণের জন্য সবচেয়ে খারাপ বিষয় এবং এটা বাতিল হয়ে গেছে, এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। কিন্তু এরপর একটা মজার ব্যাপার ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে বলেছে, ‘শুনুন, আপনারা যদি অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্টকে উন্নত করতে চান, তবে আসুন সেটা করি। কিন্তু আপনারা স্রেফ এটা বাতিল করে ২ কোটি মানুষকে কোনো স্বাস্থ্যবিমা ছাড়া রাস্তায় ফেলে দিতে পারেন না, তাদের বর্তমানে যে স্বাস্থ্যবিমা আছে বা আগে থেকে থাকা অসুস্থতার (প্রি-এক্সিস্টিং কন্ডিশন) ক্ষেত্রে যে সুরক্ষা আছে, অথবা গুরুতর অসুস্থ হলে বিমার জন্য যা দিতে হয়, সেইসব সুবিধা কেড়ে নিতে পারেন না।’ এখন দেখা যাচ্ছে যে আমেরিকান জনগণের বিশাল অংশ বলছে, ‘আপনারা এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প না আনা পর্যন্ত অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বাতিল করতে পারবেন না।’ আর এখন রিপাবলিকানরা দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করছে, তারা বেশ বিব্রত, আর এতেই আমি বুঝতে পারছি যে এই বিষয়ে তারা এখন রক্ষণাত্মক অবস্থানে চলে গেছে।
  • তাদের এটাই করা উচিত। তাদের উচিত এদেশের ইতিহাস নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং তাদের বোঝা উচিত যে এটা নিঃসন্দেহে খুবই কঠিন ও ভীতিকর সময়। এক মুহূর্তের জন্যও আমি তা অস্বীকার করব না। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে এই দেশটির পথচলা খুবই বন্ধুর ছিল। সংকটের মুহূর্তে বারবার যা ঘটেছে তা হলো মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিরোধ করেছে। তাই, হতাশ হওয়াটা একেবারেই কোনো বিকল্প নয়। আমি শ্বেতাঙ্গ মানুষদের বলব গভীরভাবে ভাবতে যে ৪০ ও ৫০-এর দশকে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে একজন আফ্রিকান আমেরিকান হওয়ার অর্থ কী ছিল। যেখানে মানুষের সাথে কল্পনাতীত অসম্মানজনক আচরণ করা হতো, যেখানে তাদের অপমানিত করা হতো, আক্রমণ করা হতো, গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হতো; তবুও মানুষ হাল ছাড়েনি, তারা সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আমি মানুষকে মনে করতে বলব যে একশ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারত না, নিজেদের পছন্দের চাকরি করতে পারত না – কিন্তু তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং লড়াই করেছিল। একশ বছর আগে শিশুরা কারখানায় কাজ করত, সরকারি স্কুল বলে কিছু ছিল না, তবুও শ্রমজীবী মানুষ অত্যন্ত সাহসের সাথে লড়াই করে এমন আন্দোলন গড়ে তুলেছিল যা তাদের জীবনযাত্রার মান ও মর্যাদা রক্ষা করেছিল। আর সাম্প্রতিক সময়ের এদেশে সমকামী অধিকার আন্দোলনের ইতিহাসের কথা ভাবুন, যেখানে ১৫-২০ বছর আগেও একের পর এক রাজ্য মানুষকে তাদের যৌন অভিমুখিতার কারণে আক্রমণ করত; তবুও অত্যন্ত সাহসের সাথে সমকামী সম্প্রদায় রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং প্রতিরোধ করেছিল। আর এখন রিপাবলিকানরা ওইসব বিষয়ে একেবারেই রক্ষণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং, ঐতিহাসিকভাবেই আমেরিকান জনগণ কঠিন সময়ে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিরোধ করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি ঠিক এটাই আমরা এখন দেখতে চলেছি। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় যদি কোনো আশার আলো থেকে থাকে তা হলো এই যে আমেরিকান জনগণ বুঝবে যে তারা গণতন্ত্রকে হালকাভাবে নিতে পারে না, পৃথিবীর যেকোনো বড় দেশের তুলনায় অন্যতম সর্বনিম্ন ভোটদানের হার নিয়ে আমরা চলতে পারি না এবং মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে যুক্ত হতে হবে যাতে আমরা আর কোনো ট্রাম্পকে দেখতে না পাই।
  • আবার বলছি, আমি বিস্তারিত জানি না কিন্তু করবিন এটা খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে লেবার পার্টির নেতৃত্ব এবং দলের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে একটা বিশাল ব্যবধান রয়েছে। তিনি সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় যুক্তরাজ্যের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণ প্রজন্ম যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, নেতৃত্বকে তারই প্রতিফলন ঘটাতে হবে; আর এই কথাটা এদেশের সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনের ক্ষেত্রেই সত্যি। প্রায়শই দেখা যায় যে রাজনৈতিক মহল সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে এবং এই অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই হতে হবে।
ডেমোক্রেটিক পার্টি সংস্কারের উপায় (নভেম্বর ২০১৭)
[সম্পাদনা]
পলিটিকো সম্পাদকীয় (১০ নভেম্বর ২০১৭)
  • ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি আমাদের দেশের জন্য এক অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছে। তার নির্বাচনী প্রচারণা এবং এখন তার হোয়াইট হাউজ বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য, সমকামবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ এবং বিদেশবিদ্বেষ ব্যবহার করে আমাদের বিভক্ত করতে চাইছে। তার অর্থনৈতিক কর্মসূচি হলো ধনকুবের শ্রেণীর কর্মসূচি। তিনি ধনীদের জন্য আরও বেশি কর ছাড় দিতে চান কিন্তু শ্রমজীবী পরিবারগুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা, পুষ্টি, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন এবং অন্যান্য কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমাতে চান। আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরাট বিপদকে স্বীকার করতে তার অস্বীকৃতি পুরো গ্রহের জন্যই একটা হুমকি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার চরম ডানপন্থী কর্মসূচিকে পরাজিত করার চেয়ে জরুরি আর কিছুই নেই। কিন্তু একটি কার্যকর বিরোধী দল ছাড়া এটা সম্ভব হবে না।
  • মঙ্গলবারে ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন, মেইন এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যের বিজয়গুলো ট্রাম্পের চরমপন্থী কর্মসূচির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছে, মানুষের দরজায় দরজায় গেছে এবং রাজ্য আইনসভা, সিটি কাউন্সিল ও স্কুল বোর্ডের নির্বাচনে জয়লাভ করেছে এটা দেখা বিশেষভাবে তৃপ্তিদায়ক। কিন্তু ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিত্রটা বেশ উদ্বেগজনক। ২০০৯ সাল থেকে দলটি দেশজুড়ে রাজ্য আইনসভাগুলোতে ১০০০টিরও বেশি আসন হারিয়েছে। রিপাবলিকানরা এখন হোয়াইট হাউজ, ৫০টির মধ্যে ৩৪টি গভর্নরের পদ (শীঘ্রই যা ৩৩টি হবে) এবং সেইসাথে মার্কিন হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও মার্কিন সিনেট নিয়ন্ত্রণ করে। ২৬টি রাজ্যে রিপাবলিকানরা গভর্নরের পদসহ পুরো রাজ্য আইনসভাই নিয়ন্ত্রণ করছে। এই পরিস্থিতি শুধু তথাকথিত কট্টর রিপাবলিকান রাজ্যগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। উইসকনসিন, মিশিগান, ওহাইও, ফ্লোরিডা এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের মতো রাজ্যগুলোতেও এটাই সত্যি। এই রাজ্যগুলো ২০২০ সালে ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য এবং ঐ বছরের আদমশুমারির পর কংগ্রেসীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই পরিস্থিতির সবচেয়ে অদ্ভুত দিক হলো মার্কিন জনগণ ট্রাম্প-রিপাবলিকান কর্মসূচির প্রায় সবকিছুরই তীব্র বিরোধিতা করে। এক-তৃতীয়াংশের কম মার্কিনী ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের ধনীদের জন্য কর ছাড় নীতির সমর্থন করে এবং মাত্র ১২ শতাংশ লোক লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের স্বাস্থ্যবীমা থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা সমর্থন করেছিল। অধিকাংশ আমেরিকানই বোঝেন যে জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তব। ডোনা ব্রাজিলের সাম্প্রতিক বইটি খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে মৌলিক সংস্কার আনা কতটা জরুরি। দলটি মূলত ধনী এবং ওয়াশিংটন কেন্দ্রিক পরামর্শকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকতে পারে না। এর দরজা অবশ্যই খুলতে হবে এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অংশ নিতে অত্যন্ত আগ্রহী লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ ও তরুণ প্রজন্মকে স্বাগত জানাতে হবে।
  • গত বছর সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটন এবং আমি দলটিকে একটি নতুন ও আরও গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ইউনিটি রিফর্ম কমিশনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই গোষ্ঠী ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের চূড়ান্ত বৈঠকে বসবে এবং সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে যে আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাব, নাকি বর্তমান ব্যর্থ পদ্ধতিই অনুসরণ করব। এটা কোনো তত্ত্বকথা বা বিচ্ছিন্ন বিতর্ক নয়। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাতিষ্ঠানিক ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নির্ভর করছে এর ওপর যে ডেমোক্র্যাটদের তৃণমূল স্তরে ট্রাম্প, রিপাবলিকান পার্টি ও তাদের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসূচির কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার মতো শক্তি আছে কিনা—নাকি আমরা সংখ্যালঘু হিসেবেই থেকে যাব। প্রথমত, এটা খুবই অযৌক্তিক যে ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন ৭০০-এরও বেশি সুপারডেলিগেটকে মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার এবং ভোটারদের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা দিয়েছে। ৭০০ সংখ্যাটা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মনোনয়ন জেতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দ্বিতীয়ত, রিপাবলিকানদের বিপরীতে ডেমোক্র্যাটরা ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজ করার পক্ষে, কঠিন করার পক্ষে নয়। আমরা সার্বজনীন ও একই দিনে ভোটার নিবন্ধনের এবং পুরনো, খামখেয়ালি ও বৈষম্যমূলক ভোটার নিবন্ধন আইনের অবসানের পক্ষে। এই একই নীতিগুলো আমাদের প্রাইমারি নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে হবে। আমাদের কাজ হবে নিরপেক্ষ ভোটার ও তরুণদের কাছে পৌঁছানো এবং তাদের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা। সাধারণ নির্বাচনে জয়ের জন্য নিরপেক্ষ ভোটাররা খুবই জরুরি। প্রাইমারি থেকে তাদের দূরে রাখা মানে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে, এটা খুবই অদ্ভুত বিষয় যে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে অংশ নিতে হলে ছয় মাস আগেই তাদের দলীয় নিবন্ধন বদলাতে হয়। অন্যান্য রাজ্যেও এতটা কঠিন না হলেও একই ধরনের নিয়মকানুন রয়েছে। তৃতীয়ত, যেসব রাজ্যে ককাস পদ্ধতি চালু আছে, সেখানে কর্মজীবী মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ আরও সহজ করতে হবে। যদিও পছন্দের প্রার্থীর সমর্থনে মানুষকে একত্রিত করে মুখোমুখি আলোচনার অনেক ভালো দিক আছে; তবুও কাজ, সন্তানের দেখাশোনা বা অন্যান্য দায়িত্বের কারণে সবাই এতে অংশ নিতে পারে না। এমন একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে যাতে প্রত্যেকেই ভোট দেওয়ার অধিকার পায়। এমনকি যদি তারা সশরীরে ককাসে যোগ দিতে না-ও পারে তবুও যেন ভোট দিতে পারে। সবশেষে, যদি আমরা সফল হতে চাই, তাহলে ডোনা ব্রাজিলের ফাঁস করা তথ্যের গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝতে হবে এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির আর্থিক লেনদেন ও নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যে আরও অনেক বেশি স্বচ্ছতার প্রয়োজন, তা উপলব্ধি করতে হবে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার আসা-যাওয়া করে, যার কোনো জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
  • এখন যখন আমাদের এমন একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এবং একটা রিপাবলিকান পার্টি রয়েছে যাদের নেতৃত্ব ও কর্মসূচির তীব্র বিরোধিতা করছে আমেরিকান জনগণ, এখনই প্রকৃত পরিবর্তনের সময়। এটা অত্যন্ত জরুরি যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সংস্কার করি। যখন আমরা তা করব তখন আমরা স্থানীয়, রাজ্য এবং জাতীয় নির্বাচনে জিতব এবং আমাদের দেশকে রূপান্তরিত করব।
উই মাস্ট এন্ড গ্লোবাল অলিগার্কি (নভেম্বর ২০১৭)
[সম্পাদনা]
সিএনএন সম্পাদকীয় (১৩ নভেম্বর ২০১৭)
  • আমাদের সময়ের একটি প্রধান অথচ না-বলা গল্প হলো বিশ্বজুড়ে গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের (অলিগার্কি) দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়া। মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন বিলিয়নিয়ার এখন বিশ্ব অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর মালিকানা ভোগ করে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ০.১% মানুষ দেশের নিচের ৯০% মানুষের প্রায় সমান সম্পদের মালিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী আমেরিকার তিনজন সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি – বিল গেটস, জেফ বেজোস এবং ওয়ারেন বাফেট – বর্তমানে আমাদের দেশের নিচের দিকের ১৬ কোটি মানুষের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক। কিন্তু এটা পরিষ্কারভাবেই শুধু আমেরিকার বিষয় নয়। এটি একটি বৈশ্বিক বিষয়। সারা বিশ্বে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে; বিশুদ্ধ পানীয় জল, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, উপযুক্ত বাসস্থান বা সন্তানদের জন্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; তখন ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ছয়জন ব্যক্তি, অক্সফামের তথ্যমতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার নিচের অর্ধেক তথা ৩৬০ কোটি মানুষের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক। সম্পদ ও আয়ের এই বিশাল বৈষম্য এবং এই সম্পদের সাথে যুক্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা এমন একটি বিষয় যা আর উপেক্ষা করা যায় না। আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
  • তথাকথিত প্যারাডাইস পেপার্স নামের লক্ষ লক্ষ গোপন নথি যা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ও এর সহযোগী সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্লেষণ করেছে তার কল্যাণে আমরা এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি কীভাবে বিশ্বের বৃহত্তম কর্পোরেশন ও সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দেয় এবং সম্পদের মালিকানা গোপন করে। এটা বলাই বাহুল্য যে এই বিলিয়নিয়ারগণ সবাই আমাদের সামরিক বাহিনী, প্রবীণ যোদ্ধা, পরিকাঠামো, বিদ্যালয় এবং অন্যান্য সরকারি পরিষেবার কট্টর সমর্থক। তারা শুধু এটাই পছন্দ করে যে এই সমস্ত কিছুর খরচ সাধারণ মানুষ দিক, তারা নিজেরা নয়। আইসিআইজে-র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যারাডাইস পেপার্সে যেসব আমেরিকানদের অফশোর অ্যাকাউন্টের তালিকা রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রিপাবলিকান কর পরিকল্পনার পক্ষে প্রচার চালানো কর্মকর্তা। রিপাবলিকান কর পরিকল্পনা অতি ধনীদের কর ফাঁকি দেওয়ার আরও সুযোগ করে দেবে। এই তথ্য প্রকাশের আগেও আমরা জানতাম যে ধনী ব্যক্তি ও বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর কর ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয় বরং বিশ্বজুড়েই ব্যাপক হারে ঘটছিল। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক নামের একটি ব্রিটিশ অধিকার রক্ষা গোষ্ঠী ২০১২ সালে অনুমান করেছিল যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অফশোর ট্যাক্স হ্যাভেনে (কর ফাঁকি দেওয়ার নিরাপদ স্থান) অন্তত ২১ ট্রিলিয়ন ডলার লুকিয়ে রাখা আছে। অন্য কথায়, সরকার যখন ব্যয়সংকোচন নীতি গ্রহণ করে, তখন শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়, আর তখনও অতি ধনীরা কর ফাঁকি দিয়ে যায়।
  • বার্কলির অর্থনীতিবিদ গ্যাব্রিয়েল জুকম্যানের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লোকজন অফশোর কৌশলে ৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং মার্কিন কর্পোরেশনগুলো এই একই কৌশলের মাধ্যমে ১৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কর ফাঁকি দিচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই অযৌক্তিক হয়ে উঠেছে যে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের একটি পাঁচতলা অফিস ভবন এখন প্রায় ২০,০০০ কর্পোরেশনের "ঠিকানা" হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি বিশ্বজুড়ে চালু থাকা অনেক কর ফাঁকির নিরাপদ আশ্রয়স্থলের মধ্যে মাত্র একটি। গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের মূল কথাই হলো বিলিয়নিয়ার শ্রেণী তাদের যা আছে তাতে কখনোই সন্তুষ্ট নয়। তারা আরও, আরও এবং আরও চায়। শ্রমজীবী মানুষ, বয়স্ক, শিশু, অসুস্থ ও দরিদ্রদের ওপর তাদের এই প্রচেষ্টার কী প্রভাব পড়ছে, তা তারা গ্রাহ্য করে না। লোভই তাদের ধর্ম। একদিকে যখন এই ধনীরা কর ফাঁকি দিচ্ছে, তখন ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান সহকর্মীরা আপাতদৃষ্টিতে সরকারি অর্থ বাঁচানোর নামে লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে তাদের স্বাস্থ্যবিমা থেকে বঞ্চিত করার এবং শিক্ষা, পুষ্টি সহায়তা ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনে ব্যাপক হারে বরাদ্দ কমানোর চেষ্টা করছে।
  • রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি এদেশের শ্রমজীবী শ্রেণীর পাশে দাঁড়াবেন। বলাই বাহুল্য সেটা একটা মিথ্যা কথা ছিল। সেন্টার ফর বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজের তথ্য অনুযায়ী ট্রাম্প/রিপাবলিকান কর পরিকল্পনার সুবিধার প্রায় অর্ধেকই চলে যাবে শীর্ষ ১ শতাংশের কাছে। তাছাড়া, তারা কর্পোরেট করের হার ৩৫% থেকে কমিয়ে ২০% করতে চায়। অথচ ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচটি বৃহৎ লাভজনক কর্পোরেশনের মধ্যে একটি কোনো ফেডারেল আয়করই দেয়নি এবং ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৮টি কর্পোরেশনের কর হার ছিল ০%-এরও কম। রিপাবলিকানরা কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশে মুনাফা লুকিয়ে রাখা এবং কোনো কর না দেওয়ার সুযোগ আরও সহজ করে দিতে চায়। তারা যে ‘টেরিটোরিয়াল ট্যাক্স সিস্টেম’ প্রস্তাব করছে, তার মানে হলো কোম্পানিগুলোর ওপর কর ধার্য হবে শুধু দেশের সীমানার মধ্যে অর্জিত আয়ের ওপর। অর্থাৎ, আমেরিকান কর্পোরেশনগুলোর বিদেশে অর্জিত মুনাফাকে মার্কিন কর থেকে অব্যাহতি দেবে এবং বিদেশে থাকা নগদ মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার সময় এককালীন ১২% কর দেওয়ার সুযোগ দেবে। অন্যদিকে, ধনী ও বৃহৎ কর্পোরেশনগুলো যখন বিশাল কর ছাড় পাচ্ছে, তখন চিকিৎসা খরচ, ছাত্র ঋণের সুদ, রাজ্য ও স্থানীয় আয়কর ও বিক্রয় কর এবং আত্মকর্মসংস্থানকারীদের স্বাস্থ্যবিমার খরচের উপর করছাড় বাতিলের ফলে দশকের শেষ নাগাদ প্রায় অর্ধেক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর বাস্তবে বেড়ে যাবে।
  • স্যান্ডার্স: ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের মূল্যায়নে আমার ভোটদানের রেকর্ড ডি মাইনাস, অর্থাৎ খুবই খারাপ। আমি সম্ভবত ১৯৮৮ সালে ভারমন্টে কংগ্রেসের নির্বাচনে হেরেছিলাম। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে এই দেশে অ্যাসল্ট অস্ত্র (মারাত্মক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র) বিক্রি বা বিতরণ করা উচিত নয়। আমি বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে বলে আসছি যে আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক (অতীত রেকর্ড যাচাই) আরও অনেক কঠোর করতে হবে। ‘গান শো’ (বন্দুক মেলা) আইনের যে হাস্যকর ফাঁকফোকর রয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। এই দেশে চল্লিশ শতাংশ বন্দুক কোনো রকম ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ছাড়াই বিক্রি হয়। আমাদের মধ্যস্থতাকারী ক্রেতা ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। কারণ এর মাধ্যমে কিছু লোক আইনত বন্দুক কিনে পরে তা অন্যদের হাতে তুলে দেয়। আমাদের এনআরএ-এর মোকাবিলা করতে হবে। এটাই আমার মতামত। পার্কল্যান্ডে যে মর্মান্তিক ঘটনা আমরা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সারাদেশ জুড়ে বাবা-মায়েরা সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সময় আতঙ্কে থাকেন যে না জানি কী হয়। এই সমস্যার সহজে সমাধান হবে না। কারও কাছে কোনো জাদুকরী সমাধান নেই। কিন্তু আমাদের শিশুদের রক্ষা করার জন্য যা যা করা সম্ভব, তার সবকিছুই করতে হবে।
    টড: এর মানে কী? আপনি যে বলছেন সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। তার মানে কি এআর-১৫ কেনার বয়স বাড়ানো? তার মানে কি এআর-১৫ কেনা সীমিত করা?
    স্যান্ডার্স: হ্যাঁ! দেখুন, আমি আপনাকে এইমাত্র যা বললাম তা হলো আমি ৩০ বছর ধরে বিশ্বাস করি যে এই দেশে অ্যাসল্ট অস্ত্র (মারাত্মক স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র) বিক্রি করা উচিত নয়। এই অস্ত্রগুলো শিকার করার জন্য নয়, এগুলো মানুষ মারার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এগুলো সামরিক অস্ত্র। আমি জানি না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের পঞ্চাশ লক্ষ অস্ত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই অবশ্যই আমাদের তা (অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) করতে হবে। অবশ্যই মানুষের পক্ষে অস্ত্র কেনা আরও কঠিন করতে হবে। এখন এমন লোকও আছে যারা সন্ত্রাসী সন্দেহে নজরদারির তালিকায় আছে, তারাও অস্ত্র কিনতে পারে। এটা কি কারও কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়? আসল কথা হলো রিপাবলিকানদের বলতে হবে যে এনআরএ-কে চটানোর চেয়ে এই দেশের শিশুদের রক্ষা করাটা বেশি জরুরি। তারা কি এটা করতে প্রস্তুত? আমি সত্যিই আশা করি তারা প্রস্তুত।
    • স্টোনম্যান ডগলাস হাই স্কুলে গোলাগুলির ঘটনার পর ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে এনবিসি নিউজের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে চাক টডকে দেওয়া সাক্ষাৎকার। (মিট দ্য প্রেস - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮মিট দ্য প্রেস। এনবিসি নিউজ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
  • আমি মনে করি অভিবাসন বিষয়টিকে যুক্তিসঙ্গত উপায়ে সামলাবে এমন নীতি তৈরি করা দরকার আমাদের। আর শিশুদের আটক কেন্দ্রে আটকে রাখা বা তাদের মায়েদের থেকে আলাদা করে দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত উপায় নয়। ট্রাম্পের দরকার কংগ্রেস সদস্যদের সাথে বসে একটি যুক্তিসঙ্গত কর্মসূচী নিয়ে কাজ করা যা এই গুরুতর বিষয়টিকে সামাল দেবে।
    • বার্নি স্যান্ডার্স কি ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট সংস্থা বিলুপ্ত করার পক্ষে কিনা, জেইক ট্যাপারের এই প্রশ্নের উত্তরে। মিরকিনসন, জ্যাক (২৬ জুন ২০১৮)। "Not Good Enough, Bernie Sandars"। স্প্লিন্টার নিউজ।
  • আমি কাউকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া বা কারো সাথে অভদ্র আচরণ করার খুব একটা পক্ষপাতী নই। আমি মনে করি আমাদের এমন একটা পরিস্থিতি এবং এমন একটা কংগ্রেস রয়েছে যা আমেরিকার সাধারণ মানুষের অবস্থা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। যখন কংগ্রেস কোটিপতিদের কর ছাড় দেয় এবং স্বল্প আয়ের গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টি কর্মসূচী কাটছাঁট করতে চায়, তখন মানুষের রাগ করার অধিকার আছে। আপনারও রাগ করার অধিকার আছে। সেই রাগ গঠনমূলক উপায়ে প্রকাশ করুন। আমি মনে করি মানুষের রেস্তোরাঁয় গিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার অধিকার আছে। সেখানে আমাদের সেই শক্তিটা প্রয়োগ করতে হবে। আমি জানি যে মানুষ রেগে আছে। তারা এই অত্যন্ত অমানবিক অভিবাসন নীতিগুলো নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা ক্ষুব্ধ কারণ তাদের প্রেসক্রিপশনের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। কোটিপতিরা যে কর ছাড় পাচ্ছে তা নিয়েও তারা ক্ষুব্ধ। এর মোকাবিলা করার উপায় হলো আলেকজান্দ্রিয়া যা করেছেন সেটা করা: তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়ে তুলুন, নির্বাচনে জিতুন এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হোন।
    • রেড হেন রেস্তোরাঁর বিতর্ক সম্পর্কে। ভিডিও অনলাইন, মিডিআইট, ২৭শে জুন ২০১৮।
  • বিশ্বজুড়ে বছরে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার একে অপরকে মারার উদ্দেশ্যে বিধ্বংসী অস্ত্রের পিছনে খরচ না করে হয়তো আমাদের উচিত নিজেদের সম্পদ একত্রিত করে আমাদের সকলের সাধারণ শত্রু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে এটা (জলবায়ু পরিবর্তন) আমাদের অস্তিত্বের জন্য সংকট। আসলে, আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা না করি, তাহলে অশ্বেতাঙ্গ মানুষরাই সবচেয়ে বেশি ভুগবেন।
    • "Sanders takes aim at Biden, Buttigieg in heated debate" (উত্তপ্ত বিতর্কে বাইডেন ও বুটিগিগকে লক্ষ্যবস্তু করলেন স্যান্ডার্স), ভিটিডিগার-এ প্রকাশিত (১৯শে ডিসেম্বর, ২০১৯)
  • আমাদের পরিষ্কার করে বলতে হবে যে ইহুদি-বিদ্বেষ শুধু সবখানে ইহুদিদের জন্যই হুমকি নয়, এটি স্বয়ং গণতান্ত্রিক শাসনের জন্যও একটি হুমকি। শার্লটসভিলে যে ইহুদি-বিদ্বেষীরা মিছিল করেছিল, তারা শুধু ইহুদিদেরই ঘৃণা করে না— তারা বহুজাতিক গণতন্ত্রের ধারণাকে ঘৃণা করে। তারা রাজনৈতিক সমতার ধারণাকেও ঘৃণা করে। তারা অভিবাসী, অশ্বেতাঙ্গ মানুষ, এলজিবিটিকিউ মানুষ, নারী এবং এমন অন্য যে কাউকে ঘৃণা করে যারা কেবল শ্বেতাঙ্গ-শাসিত আমেরিকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে ইহুদিরা বিশ্বজুড়ে শ্বেতাঙ্গদের উপর একটি বিশাল আক্রমণের চক্রান্ত করছে এবং এই নোংরা কাজটি করার জন্য তারা অশ্বেতাঙ্গ মানুষ ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করছে।
  • যারা ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, সেই শক্তিগুলোই ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে; ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম একইসাথে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ইসরায়েলে, ফিলিস্তিনে এবং বিশ্বজুড়ে যারা সংঘাতের সমাধান করতে, ঘৃণা কমাতে এবং সংলাপ, সহযোগিতা ও বোঝাপড়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন আমি আমার সেই বন্ধুদের পাশে আছি।
  • কানাডা এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে যা করা হয় তার সাথে আমি একমত: তারা মানবাধিকার হিসেবে সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। আমি বিশ্বাস করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পৃথিবীর একমাত্র প্রধান দেশ হওয়া উচিত নয়, যেখানে বেতনসহ পারিবারিক ও চিকিৎসা ছুটির ব্যবস্থা নেই। আমি বিশ্বাস করি যে এই দেশের প্রতিটি কর্মীর একটি জীবনধারণোপযোগী মজুরি প্রাপ্য এবং আমাদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে প্রসারিত করতে হবে।
  • আমার আরও মনে হয় যে আমার কাছে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের অর্থ হলো এমন একটি বিষয়কে তুলে ধরা যা নিয়ে আমরা যথেষ্ট আলোচনা করি না— না সংবাদমাধ্যমে, না কংগ্রেসে। আমেরিকায় মাত্র তিনজন মানুষের কাছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ আছে। মুষ্টিমেয় কিছু বিলিয়নিয়ার ওয়াল স্ট্রিট, বীমা কোম্পানি এবং সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। হয়তোবা আমাদের এমন এক অর্থনীতি গড়া উচিত যা শুধু ১ শতাংশ মানুষের নয়, বরং আমাদের সকলের উপকারে আসে। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বলতে আমি এটাই বুঝি।
  • লাগামহীন পুঁজিবাদের ফলে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে এবং বাকি প্রায় সকলেই আরও গরিব হয়ে পড়ছে। আমাদের লাগামহীন পুঁজিবাদের বিকল্প হিসেবে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি মনে করি এই বার্তা তরুণ প্রজন্ম গ্রহণ করবে এবং আমার মনে হয় কর্মজীবী মানুষও এই বার্তা গ্রহণ করবে।
  • প্রযুক্তি এবং শ্রমিকের উৎপাদনশীলতায় ব্যাপক বৃদ্ধি সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ধরলে এই মুহূর্তে আমেরিকার একজন গড়পড়তা কর্মী ঠিক ততটাই আয় করছেন যা তিনি ৪৩ বছর আগে করতেন। এটা ভাবাই যায় না।
  • এই দেশের শ্রমিক শ্রেণী থেকে ধনীদের শীর্ষ ১ শতাংশের হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে গেছে। আর শেষ কথা হলো, জন— সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে কথা বলে না, কর্পোরেট সংবাদমাধ্যম এটা নিয়ে কথা বলে না—এই দেশে তিনটি পরিবারের হাতে যে আমেরিকান জনগণের অর্ধেকেরও বেশি সম্পদের সমান সম্পদ রয়েছে, তা কেউ সমর্থন করতে পারে না। অথবা আজকের দিনে মোট নতুন আয়ের ৪৯ শতাংশই যে শীর্ষ ১ শতাংশের কাছে যাচ্ছে তা-ও সমর্থনযোগ্য নয়। এটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এটা চরম অন্যায়। এটা অনৈতিক। আর আমি মনে করি আমেরিকার জনগণ বোঝে যে এর বদল হওয়া দরকার।
  • আজ আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বলছি, পরিবারের আয় যাই হোক না কেন, আমরা চাই তোমরা সম্ভাব্য সেরা শিক্ষা পাও। ভালো চাকরি পেতে হলে ভালো শিক্ষা দরকার। এজন্যই আমরা সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেতন-মুক্ত করব, আর সব ছাত্র ঋণ মওকুফ করে দেবো।
  • মার্কিন সামরিক বাহিনী বিশ্বব্যাপী শক্তি প্রদর্শনের একটি নীতি অনুসরণ করে যা আর কোনো দেশ করে না। আর তা হলো বিশ্বজুড়ে থাকা প্রায় ৮০০টি বিদেশি সামরিক ঘাঁটির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে তারা মারাত্মক শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে। তবে একদিক থেকে দেখলে স্থলবাহিনী এখানে গৌণ; অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন সামরিক নীতির মূল ভিত্তিই হলো বিমান শক্তির উপর নির্ভরতা। আমেরিকা যত যুদ্ধ লড়েছে, সবখানে তারা আকাশপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং অন্য যেকোনো সামরিক বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি ইরাক দখলের সময় তারা এমনকী নিজেদের আপাত নিয়ন্ত্রণে থাকা শহরের আবাসিক এলাকাতেও বোমা ফেলেছে। বিশ্বে মার্কিন সামরিক আধিপত্যের মূল কথাই হলো, তারা চাইলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বোমাবর্ষণ করতে পারে। অন্য কোনো সরকারের কখনও এর ধারেকাছে কোনো ক্ষমতা ছিল না। সত্যি বলতে, এমন যুক্তিও দেওয়া যেতে পারে যে এই ক্ষমতাই ডলার-কেন্দ্রিক পুরো বিশ্ব মুদ্রা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে।
  • ওমান উপসাগরে তেল ট্যাংকারের উপর হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হতে হবে। কিন্তু এই ঘটনাকে ইরানের সাথে যুদ্ধের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এই যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, মধ্যপ্রাচ্য এবং পুরো বিশ্বের জন্য এক চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব দেওয়ার এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোকে একত্রিত করে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি কূটনৈতিক সমাধান তৈরি করার এখনই সময়। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই যে ইরানের সাথে যুদ্ধের জন্য কংগ্রেসের কোনো অনুমোদন নেই। ইরানের উপর একতরফা মার্কিন হামলা অবৈধ এবং অসাংবিধানিক হবে।
  • তিনি [ডোনাল্ড ট্রাম্প] আমেরিকান জনগণকে বিভক্ত করে ফেলেছেন আর এটাই তার পুরো রাজনৈতিক কৌশল। তো, আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট আছেন যিনি কোটিপতিদের কর ছাড় দেন এবং মেডিকেয়ার, মেডিকেইড ও সোশ্যাল সিকিউরিটি কাটছাঁট করতে চান। তিনি এটা নিয়ে নির্বাচনে জিতবেন না। আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট আছেন যিনি ৩ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি সেটা নিয়েও নির্বাচনে যাবেন না। আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট আছেন যিনি কর সুবিধার ৮৩ শতাংশ ধনীদের শীর্ষ ১ শতাংশকে দিয়েছেন, তিনি সেটাও প্রচারে ব্যবহার করবেন না। তাহলে আপনি নির্বাচন জিতবেন কীভাবে? আপনি কী বলবেন — "ওই যে অনথিভুক্ত মানুষগুলো দেখছো, ওরাই তোমাদের শত্রু। আমার পাশে দাঁড়াও। ওদের ঘৃণা করো। চলো এই দেশকে ভাগ করে ফেলি।" আমি মনে করি এটা এক অত্যন্ত কদর্য এবং বিপজ্জনক কাজ। আর আমি এটা বন্ধ করার জন্য আমার সাধ্যমত সবকিছু করব।
  • বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী দেশে কেউ যখন কল খুলবে তখন তারা নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পাবে এই দাবি করাটা মোটেই বাড়াবাড়ি কিছু নয়। ফ্লিন্টের পানির সংকটের ৫ বছর হয়ে গেছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
  • যদি কেউ গুরুতর অপরাধ করে – যেমন যৌন নির্যাতন বা খুন – তাহলে তার শাস্তি হবে। সে হয়তো ১০ বছর, ২০ বছর, ৫০ বছর বা সারা জীবনের জন্য জেলে থাকবে। গুরুতর অপরাধ করলে এটাই হয়। কিন্তু আমি মনে করি ভোটাধিকার আমাদের গণতন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হ্যাঁ, এমনকি ভয়ঙ্কর অপরাধীদেরও ভোটাধিকার আছে। কারণ একবার যদি আপনি এই অধিকার কেড়ে নিতে শুরু করেন এবং বলেন, 'আচ্ছা, ওই লোকটা একটা ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে; তাকে ভোট দিতে দেব না', তাহলে আপনি এক বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছেন।
  • ছেলেবেলায় অভিবাসন সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জেনেছি। কারণ আমার বাবা ১৭ বছর বয়সে পোল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। তখন তাঁর পকেটে একটি পয়সাও ছিল না এবং তিনি একটি ইংরেজি শব্দও জানতেন না। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তাঁর সম্প্রদায়ের চরম দারিদ্র্য এবং ব্যাপক ইহুদি-বিদ্বেষ থেকে বাঁচতে। আর তাঁর এই দেশে আসাটা ভালোই হয়েছিল, কারণ তাঁর প্রায় পুরো পরিবারই হিটলার ও নাৎসি বর্বরতায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য, বিদেশি-বিদ্বেষ, সমকামী-বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি— এসব আমাদের সরকারের মূলনীতি হবে না। আমি এমন পরিবার থেকে আসিনি যারা আমাকে আবাসনে বৈষম্য করে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়তে শিখিয়েছে। আমি আবাসনে বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছি, বিদ্যালয়ে বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছি, আর আমার জীবনের অন্যতম গর্বের দিন ছিল ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নেতৃত্বে চাকরি ও স্বাধীনতার জন্য ওয়াশিংটন পদযাত্রায় অংশ নেওয়া।
  • আমার আশঙ্কা, এখন হাউজে কংগ্রেস সদস্য ওমরকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বিতর্কটা থামিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা চলছে। এটা অন্যায়। ইহুদি-বিদ্বেষ একটি ঘৃণ্য ও বিপজ্জনক মতাদর্শ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বজুড়ে এর তীব্র বিরোধিতা অবশ্যই করতে হবে। তবে, ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের বৈধ সমালোচনার সাথে ইহুদি-বিদ্বেষকে গুলিয়ে ফেলা আমাদের উচিত নয়।
  • নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসায় আমি কখনোই ভুলব না যে টাকা, বা বলা ভালো, টাকার অভাব আমাদের পরিবারে সবসময় একটা উদ্বেগের কারণ ছিল। আর্থিকভাবে সংগ্রাম করা পরিবারে বড় হওয়ার শৈশবের অভিজ্ঞতা আমার মূল্যবোধকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।.... ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার বন্ধ করে দিয়ে ৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে তাদের খরচ চালানোর মতো আয় থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। আমি তার মতো নই। আমি জানি দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারে থাকাটা কেমন লাগে। আমার এমন বাবা আমাকে বিলাসবহুল আকাশচুম্বী ভবন, ক্যাসিনো আর কান্ট্রি ক্লাব কেনার জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার দেননি। আমি এমন পরিবার থেকে আসিনি যারা আমাকে ৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে প্রতি বছর ২ লক্ষ ডলার হাতখরচ দিত। আমার যতদূর মনে পড়ে, আমার হাতখরচ ছিল সপ্তাহে ২৫ সেন্ট। আমি এমন পরিবার থেকে আসিনি যারা আমাকে আবাসনে বৈষম্য করে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়তে শিখিয়েছে। আমি আবাসনে বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছি, বিদ্যালয়ে বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছি, আর আমার জীবনের অন্যতম গর্বের দিন ছিল ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের নেতৃত্বে চাকরি ও স্বাধীনতার জন্য ওয়াশিংটন পদযাত্রায় অংশ নেওয়া।
  • আমরা এই দেশের রূপান্তর ঘটাবো এবং এমন এক অর্থনীতি ও সরকার গঠন করব যা শুধু শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর জন্য নয়, বরং আমাদের সকলের জন্য কাজ করবে। লোভ, ঘৃণা আর মিথ্যা আমাদের সরকারের মূল ভিত্তি হবে না। এর ভিত্তি বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য, বিদেশি-বিদ্বেষ, সমকামী-বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি হবে না। এই আন্দোলন ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে চলবে—অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতিগত ন্যায়বিচার এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচারের উপর।
  • Bernie Sanders kicks off 2020 campaign in Brooklyn, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ২ মার্চ ২০১৯।
  • যখন দেশে সম্পদ ও আয়ের ব্যাপক বৈষম্য চলছে, যখন মাত্র তিনজন ধনী আমেরিকানের কাছে ১৬ কোটি গরীব আমেরিকানের সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ রয়েছে, তখন রিপাবলিকান নেতৃত্ব যে শীর্ষ ০.২ শতাংশকে শত শত বিলিয়ন ডলারের কর ছাড় দিতে চাইছে। এটা কল্পনাই করা যায় না।
  • আমাদের বিলটি আমেরিকান জনগণের ইচ্ছাকেই প্রতিফলিত করে। কারণ এটি দেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর উপর এস্টেট ট্যাক্স যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াবে এবং সম্পদের বৈষম্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস করবে। নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক—সব দৃষ্টিকোণ থেকেই বলা যায়, যতক্ষণ মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে এত বেশি সম্পদ থাকবে আর এত বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে এত কম থাকবে, আমাদের দেশ ততক্ষণ উন্নতি করতে পারবে না।
ফক্স নিউজ সম্পাদকীয় (৫ এপ্রিল ২০১৯
[সম্পাদনা]
ফক্স নিউজ সম্পাদকীয় (১৫ এপ্রিল ২০১৯)
  • আজ আমেরিকায় পৃথিবীর অন্য যেকোনও বড় দেশের চেয়ে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য অনেক বেশি। ১৯২০-এর দশকের পর থেকে পরিস্থিতি এত খারাপ আর কখনও হয়নি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে যখন লক্ষ লক্ষ আমেরিকান কর্মীকে খরচ চালানোর জন্য দুটো বা তিনটে কাজ করতে হচ্ছে এবং আমাদের দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দিন এনে দিন খায়, সেখানে আমাদের দেশের সবচেয়ে ধনী তিনটি পরিবারের কাছে এখন দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের - অর্থাৎ ১৬ কোটি মানুষের - সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ রয়েছে।
  • আজ যখন লক্ষ লক্ষ মেধাবী তরুণ-তরুণীর কলেজে পড়ার সামর্থ্য নেই এবং আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপুল ছাত্র-ঋণের বোঝায় জর্জরিত, তখন শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাছে দেশের নীচের ৯২ শতাংশের সম্মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ রয়েছে। আজ যখন বড় বড় কর্পোরেশনের সিইওরা তাদের সাধারণ কর্মীদের চেয়ে ৩০০ গুণেরও বেশি আয় করেন, তখন হাজার হাজার প্রাক্তন সৈনিক রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন এবং ২০ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক বছরে ১৩,৫০০ ডলার বা তার চেয়েও কম যৎসামান্য আয় দিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। গত ৪০ বছর ধরে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনের আমলেই আমরা দেখেছি কীভাবে এই দেশের শ্রমজীবী ​​শ্রেণীর কাছ থেকে সম্পদ ও আয় ব্যাপকভাবে শীর্ষ এক শতাংশের হাতে চলে গেছে। প্রকৃতপক্ষে আয়ের বণ্টন যদি ৪০ বছর আগের মতোই থাকত তাহলে আজ আমেরিকার গড় পরিবারের আয় প্রায় ১১,০০০ ডলার বেশি হতো। আপনারা কি জানতে চান আমেরিকার জনগণ কেন ক্ষুব্ধ? আজ প্রযুক্তি এবং শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতায় অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও, মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ধরলে গত ৪৩ বছরে একজন গড়পড়তা কর্মীর আয় ঘণ্টায় মাত্র ৫ সেন্ট বেড়েছে। আর, আমরা যদি অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে না পারি, তাহলে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে পরবর্তী প্রজন্মের জীবনযাত্রার মান তাদের বাবা-মায়ের চেয়েও নিচে নেমে যাবে। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের এমন এক অর্থনীতি দরকার যা মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে প্রসারিত করে এবং দারিদ্র্য কমায়; এমন অর্থনীতির প্রয়োজন নেই যা শুধু অতি ধনীদের আরও অনেক বেশি ধনী করে তোলে।
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়েছিলেন, তখন তিনি কর্মজীবী পরিবারগুলোকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন যে তিনি তাদের স্বার্থ রক্ষা করবেন এবং একই সাথে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি সত্যি কথা বলেননি। তার প্রচারণার সময়, ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি সবাইকে স্বাস্থ্য বীমা দেবেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা আইন) বাতিল করতে এবং ৩ কোটি ২০ লক্ষ আমেরিকানকে তাদের বর্তমান স্বাস্থ্য বীমা থেকে বঞ্চিত করতে চাপ দিয়েছেন। তার এই প্রচেষ্টা আগে থেকে থাকা অসুস্থতার (pre-existing conditions) জন্য বর্তমানে বিদ্যমান সুরক্ষাগুলোও শেষ করে দেবে এবং ২৬ বছরের কম বয়সীদের তাদের বাবা-মায়ের বীমা পরিকল্পনায় থাকার সুযোগও বন্ধ করে দেবে। এদিকে, যখন বর্তমানে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ আমেরিকানের কোনো স্বাস্থ্য বীমা নেই এবং আরও অনেকে উচ্চ ডিডাক্টিবল ও কো-পেমেন্টের কারণে অপর্যাপ্ত বীমার আওতায় রয়েছে, তখন মুষ্টিমেয় কিছু স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার সিইও গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বেতন কামিয়েছেন। আমার মতে, যখন আমরা স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্য যেকোনো দেশের মানুষের তুলনায় মাথাপিছু প্রায় দ্বিগুণ খরচ করছি, তখন লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে তাদের থাকা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা আমাদের উচিত নয়। বরং উল্টোটাই করা উচিত! আমাদের পৃথিবীর অন্য সব বড় দেশের মতো সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে একটি অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা উচিত।। মেডিকেয়ার আজ প্রবীণদের জন্য একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকর স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচী। ৪ বছরের মধ্যে এটিকে দেশের প্রতিটি পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত ও উন্নত করা উচিত। আর যখন আমরা তা করব, তখন আমরা গড় আমেরিকান পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনব।
  • নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি ওষুধ কোম্পানিগুলোকে “মানুষ মেরে ছাড় পেতে” দেবেন না। কিন্তু তা হয়নি। তারা আগের চেয়েও বেশি লাভ করছে। গত বছরের প্রথমার্ধে ওষুধের দাম একবার কমানোর বিপরীতে ৯৬ বার বাড়ানো হয়েছে। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা প্রেসক্রিপশনের ওষুধের জন্য বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি দাম দিই, অথচ শীর্ষ দশটি ওষুধ কোম্পানি শুধুমাত্র গত বছরই ৬৯ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের মধ্যে একজনের পক্ষে ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আমার আনা আইন কার্যকর করব। আমি প্রেসক্রিপশনের ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেব যাতে আমেরিকানদের তাদের ওষুধের জন্য অন্য দেশের মানুষের চেয়ে বেশি দাম দিতে না হয়। প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি মেডিকেয়ার, মেডিকেইড এবং সোশ্যাল সিকিউরিটিতে কাটছাঁট করবেন না। কিন্তু মার্চ মাসে তিনি যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে মেডিকেইড থেকে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, মেডিকেয়ার থেকে ৮৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার কমানোর কথা বলা হয়েছে। যখন বহু প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী মানুষ কষ্টে আছেন, সেই সময়ে প্রেসিডেন্ট হলে আমি সোশ্যাল সিকিউরিটি কাটছাঁট করব না। আসলে আমি যে আইন এনেছি তা সোশ্যাল সিকিউরিটির সুবিধা বাড়াবে এবং এর আর্থিক সক্ষমতা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকিয়ে রাখবে। প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তার কর পরিকল্পনায় ধনীরা মোটেও লাভবান হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি যে পরিকল্পনা পাশ করাতে সাহায্য করেছেন, তার ফলে দশকের শেষ নাগাদ ৮৩ শতাংশ সুবিধাই পাবে শীর্ষ এক শতাংশ ধনীরা। উপরন্তু, তার কর পরিকল্পনার ফলে অ্যামাজন, জেনারেল মোটরস, শেভরন, আইবিএম ও এলি লিলির মতো বড় লাভজনক কর্পোরেশন এবং আরও কয়েক ডজন বড় কোম্পানি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করার পরেও কোনো ফেডারেল আয়কর দেয়নি। এটি একটি বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য কর ব্যবস্থা যা আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। যখন অতি ধনীরা আরও অনেক বেশি ধনী হচ্ছে এবং কর্পোরেশনগুলো রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করছে, এমন এক সময়ে আমি বিশ্বাস করি যে এই দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তাদের ন্যায্য কর প্রদান শুরু করতে হবে এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের মতো জায়গায় যে ট্যাক্স হেভেনগুলো (কর ফাঁকি দেওয়ার নিরাপদ স্থান) রয়েছে যেখানে কর্পোরেশন এবং ধনীরা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার জমা করে রাখে, সেগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
  • নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি বাণিজ্য ঘাটতি যথেষ্ট পরিমাণে কমাবেন, আমেরিকান চাকরি বিদেশে চলে যাওয়া রোধ করবেন এবং দেশের ভেতরে ভালো বেতনের চাকরি চালু রাখবেন। যাইহোক, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে পণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড ৮৯১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং তার নিজের শ্রম দপ্তর বলছে যে তার আমলে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার আমেরিকান চাকরি বিদেশে চলে গেছে। তিনি কোম্পানিগুলোকে আমেরিকান কর্মীদের রোবট দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য পুরস্কৃত হিসেবে দেওয়া কর ছাড় বাড়িয়েছেন; তার কর্পোরেট মিত্রদের বিদেশে চাকরি সরিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন কর প্রণোদনা তৈরি করেছেন; এবং যেসব কোম্পানি চাকরি বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছে তাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের সরকারি চুক্তি দিয়েছেন। আমরা মার্কিন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে বাস করছি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের ভেঙে পড়া পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে ভালো বেতনের চাকরি তৈরি করা। যাদের কর ছাড় প্রয়োজন নেই তাদের বিশাল কর ছাড় দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। আমাদের কাজ হওয়া উচিত সরকারি শিক্ষায় বিনিয়োগ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা, অন্তহীন যুদ্ধের পিছনে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করা নয়। আমাদের কাজ হওয়া উচিত সমস্ত আমেরিকানকে – কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, ল্যাটিনো, আদিবাসী আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকান, সমকামী ও বিষমকামী, জন্মসূত্রে নাগরিক ও অভিবাসী – সবাইকে একত্রিত করা এবং নিজেদের বিভক্ত হতে না দেওয়া। একসাথে আমরা এমন এক অর্থনীতি ও সরকার তৈরি করতে পারি যা শুধু ১ শতাংশের জন্য নয়, সমস্ত আমেরিকানের জন্য কাজ করে এবং আমরা অবশ্যই তা করব।

বার্নি স্যান্ডার্স সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]