বিপ্লব
অবয়ব
বিপ্লব হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে একটি মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন যা তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে ঘটে যখন জনগণ চলমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জেগে উঠে। এরিস্টটল দুই ধরনের রাজনৈতিক বিপ্লবের বর্ণনা দিয়েছেন। একটি হলো এক সংবিধান থেকে অন্য সংবিধানে পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন আর অন্যটি হলো একটি বিরাজমান সংবিধানের সংস্কার। অন্যদিকে কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস সামাজিক সম্পর্কসমূহের গুণগত পরিবর্তনকেই বিপ্লব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- “বিপ্লব” এই কথাটি শুনিয়া আপনারা চমকিত হইবেন না। বিপ্লবের ধারা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে মতভেদ হইতে পারে। তবে এপর্য্যন্ত আমি এমন লোক একটিও দেখি নাই—যে কখনও বিপ্লবের কথায় বিশ্বাস করে না। মোটের উপর বিবর্ত্তন (Evolution) এবং বিপ্লব (Revolution)—এই দুইয়ের মধ্যে কোনও মজ্জাগত প্রভেদ নাই। অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে, যে বিবর্ত্তন (Evolution) সম্পন্ন হয় তাহাই বিপ্লব (Revolution); পক্ষান্তরে দীর্ঘ সময় ব্যাপিয়া যে বিপ্লব সম্পন্ন হয় তাহাই বিবর্ত্তন। বিবর্ত্তন ও বিপ্লব এই উভয়েরই গোড়ার কথা হইল পরিবর্ত্তন। এই জগতে উভয়েরই স্থান আছে। প্রকৃতপক্ষে বিপ্লব ও বিবর্ত্তনের মধ্যে কোনটিকেই একেবারে বাদ দিয়া চলা যায় না।
- সুভাষচন্দ্র বসু, ছাত্র আন্দোলন, নূতনের সন্ধান - সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬১
- মৃত্যুকে ভুলেছ তুমি তাই,<br/ তোমার অশান্ত মনে বিপ্লব বিরাজে সর্বদাই।
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা মৃত্যুকে স্মরণ ক’রো মনে,
মুহুর্তে মুহূর্তে মিথ্যা জীবন ক্ষরণে,—
তারি তরে পাতা সিংহাসন,
রাত্রি দিন অসাধ্য সাধন।- সুকান্ত ভট্টাচার্য - সুকান্ত সমগ্র, বুদ্বুদ মাত্র ১৯৫৭ (পৃ. ১৫০)
- ভারতী শ্রদ্ধা-বিগলিত চক্ষে তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, কিন্তু তোমার বিপ্লবের গান ত শশীবাবুর মুখে সাজবে না দাদা! তোমার বিদ্রোহের গান, তোমার গুপ্ত সমিতির—
ডাক্তার বাধা দিয়া বলিলেন, না, আমার গুপ্ত সমিতির ভার আমার ’পরেই থাক্ বোন্—ও বোঝা বইবার মত জোর—না না, সে থাক্—সে শুধু আমার! এই বলিয়া তিনি ক্ষণকাল যেন আপনাকে সামলাইয়া লইলেন। কহিলেন, তোমাকে ত বলেচি ভারতী, বিপ্লব মানেই শুধু রক্তারক্তি কাণ্ড নয়,—বিপ্লব মানে অত্যন্ত দ্রুত আমূল পরিবর্ত্তন। রাজনৈতিক বিপ্লব নয়,—সে আমার। কবি, তুমি প্রাণ খুলে শুধু সামাজিক বিপ্লবের গান শুরু করে দাও।- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫৬
- মানুষের গার্হস্থ্যের মধ্যে বা রাজ্যের মধ্যে বিপ্লব বাধে কখন? না, যখন পরস্পরের সহজ সম্বন্ধের বিপর্যয় ঘটে। যখন ভাইদের মধ্যে সন্দেহ বা ঈর্ষা বা লোভ প্রবেশ করে তাদের সম্বন্ধকে পীড়িত করতে থাকে তখন তারা পরস্পরের মধ্যে বাধা পায়, কেবলই ঠোকর খেয়ে খেয়ে পড়ে, তাদের জীবনযাত্রার প্রবাহ পদে পদে প্রতিহত হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখন পরিবারে বিপ্লব ঘটে। রাষ্ট্রবিপ্লবও সম্বন্ধভেদের বিপ্লব। কারণ, সম্বন্ধভেদেই অশান্তি, সেই অশান্তিতেই স্বাধীনতার ক্ষতি।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছােটো ও বড়াে, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২০
- স্পেনে বিপ্লব ঘটতে দেখে অনেকে আশ্চর্য হয়েছেন, কিন্তু বস্তুত আশ্চর্য হবার কিছুই এর মধ্যে ছিল না। এ বিপ্লব ঘটনাচক্রের স্বাভাবিক নিয়ম বশেই ঘটেছে, যাঁরা স্পেনের অবস্থা লক্ষ্য করে দেখছিলেন, তাঁরা জানতেন এ বিপ্লব অপরিহার্য। রাজা-সামন্ত-পাদ্রী নিয়ে যে পুরোনো ব্যবস্থা টিঁকে ছিল তার আগাগোড়াই ঘুণে খেয়েছে, প্রাণশক্তি বলতে কিছুই তার বাকি ছিল না। আধুনিক যুগের সঙ্গে কোনোদিক দিয়েই তার মিল ছিল না, কাজেই পাকা ফলের মতো একটু খানি নাড়া লাগতেই সেটা টুপ্ করে খসে পড়ে গেল।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭৯
- বাংলা সাহিত্যে এই আধুনিকতা একটা বিপ্লবের তোড়জোড় বেঁধেই এসেছিল কিন্তু বিপ্লব হয়নি, হওয়া সম্ভবও ছিল না—সাহিত্যের চলতি সংস্কার ও প্রথার বিরুদ্ধে মধ্যবিত্ত তারুণ্যের বিক্ষোভ বিপ্লব এনে দিতে পারে না। জোরের সঙ্গে দাবি করা হয়েছিল যে, আমরা বস্তুপন্থী সাহিত্য সৃষ্টি করছি, কিন্তু প্রকৃত বস্তুবাদী আদর্শ কল্লোল, কালি-কলমীয় সাহিত্যিক অভিযানের পিছনে ছিল না।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্য করার আগে, লেখকের কথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- নিউ এজ পাবলিশার্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭-২৮
- অনেক ক্ষেত্রে দেখিতে পাওয়া যায় যে, রাষ্ট্রীয় বিপ্লব করা বরং সহজ কিন্তু সামাজিক বিপ্লব বা সংস্কার সাধন করা তদপেক্ষা কঠিন। কারণ রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের সময়ে লড়াই করিতে হয় শত্রুর সঙ্গে এবং এই কার্য্যে পাওয়া যায় জাতি ও মত নির্ব্বিশেষে সমগ্র দেশবাসীর সহানুভূতি। মধ্যে মধ্যে কারাযন্ত্রণা ও অন্যান্য অত্যাচার সহিতে হয় বটে কিন্তু সমগ্র দেশবাসীর ভালবাসা ও সহানুভূতি লাঞ্ছিত সেবককে সঞ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। সামাজিক বিপ্লবের চেষ্টা যাহারা করে তাহাদের বিপদ অন্য প্রকার। তাহাদের লড়াই করিতে হয়—দেশবাসীর সঙ্গে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে, আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে। নিজের ঘরে তাহাদিগকে দিবারাত্রি লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা সহিতে হয় এবং অখণ্ড সমাজের সহানুভূতি তাহারা কোনও দিন পায় না।
- সুভাষচন্দ্র বসু, ছাত্র আন্দোলন, নূতনের সন্ধান - সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮
- সাম্যবাদ যে বিপ্লবে রূপান্তরিত হইয়া প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ইহা লেনিনের প্রতিভার এক অপূর্ব্ব দান। অবশ্য তিনি পূর্ব্ব-নির্দ্দিষ্ট কোন প্রণালীবদ্ধ কর্ম্মপদ্ধতি বলশেভিকদের গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন নাই। দলকে যন্ত্রবং পরিচালনা করিতে তিনি কখনই প্রয়াসী হন নাই। তবে রাজনীতিক্ষেত্রে তথাকথিত শিথিল উদারনীতি সযত্নে পরিহার করিয়া তিনি অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন।
- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-২৩
- কিছু দিন বাঙলা দেশে ব্যর্থ বিপ্লব প্রচেষ্টা করবার পর যতীনদার সঙ্গে গৃহ বিবাদে আমাদের কেন্দ্রটী ভেঙে যাওয়ায় আবার সেই বরোদায় আমি সেজদা’র সঙ্গে ফিরে যাই। সেখানে আবার কিছু কালের জন্যে আরম্ভ হ’লো সেই শান্ত সুখ-নিবিড় নিরালা জীবন, সেই শিকার, কবিতা চর্চ্চা ও সব্জীবাগ। তখন আমি বোধ হয় ‘মিলনের পথে’ লিখছি।
- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- আর্য্য পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৫-১৮৬
- মধ্যশ্রেণী ক্ষমতা অধিকার করিয়া তাহাদের স্বার্থের অনুকূল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করিবে; আমরা চাহি গণবিপ্লব দ্বারা সমাজতন্ত্রসম্মত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্ত্তন করিতে; মধ্যশ্রেণীর বিপ্লব রক্ষণশীল, অর্দ্ধবিপ্লব কার্য্যতঃ প্রতিবিপ্লব।
- জোসেফ স্তালিন, ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৫৩
- ইউরোপের আসন্ন বিপ্লব সম্বন্ধে মার্ক্সের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয় নি। ইউরোপের খানিক অংশে বিপ্লব এসেছে, কিন্তু সে মার্ক্স্ এই কথা যখন লিখেছিলেন তার ষাট বছর পরে, বিশ্বযুদ্ধকে আশ্রয় করে। ১৮৭১ সনে একবার চেষ্টা হয়েছিল, প্যারিসের কমিউন সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে চেষ্টা নির্মম আঘাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তার ইতিহাস আমরা দেখেছি।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮৫
- বস্তুতঃ ১৮৫৭ অব্দের বিপ্লব জাতীয় বিপ্লব; তাতে ভারতীয় সৈন্যরা এবং অসামরিক অধিবাসীরা অংশ গ্রহণ করেছিল। ভারতের দেশীয় নৃপতিদের মধ্যে অনেকে সেই দেশব্যাপী বিপ্লবে যোগ দিয়েছিলেন—যদিও দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁদের কেউ কেউ এর থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়েছিলেনও। সেই যুদ্ধের প্রথম অবস্থায় আমরা বিজয়ের পর বিজয় লাভ করেছিলাম; শুধু শেষের দিকেই আমরা শক্তিহীন হয়ে পরাজিত হয়েছিলাম। বিপ্লবের ইতিহাসে এটা কিছু অস্বাভাবিক নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিপ্লবের উদাহরণ খুব কমই দেখা যায়, যেক্ষেত্রে প্রথম সংগ্রামেই সাফল্য লাভ হয়েছে। “স্বাধীনতার যুদ্ধ একবার সুরু হলে সব সময় পিতার থেকে পুত্রের হাতে তার উত্তরাধিকার চলে আসে।” বিপ্লব সাময়িকভাবে ব্যর্থ ও দমিত হলেও পশ্চাতে সে তার শিক্ষা রেখে যায়।
- সুভাষচন্দ্র বসু, দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৭
- জনশিক্ষা ও যথার্থ বিজ্ঞানচেতনা আজও এ দেশে দুর্লভ। আমরা সেই দুর্লভ কাজই সম্পূর্ণ করতে চাই। আমরা ঘটাতে চাই চিন্তার বিপ্লব, সাংস্কৃতিক বিপ্লব। আমরা জানি, যে দিন বাস্তবিকই কুসংস্কার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন দুর্বার গতি পাবে, সে-দিন দুটি জিনিস ঘটবে। এক: এই আন্দোলন যে শ্রেণিস্বার্থকে আঘাত হানবে সেই শ্রেণি তাদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে তীব্র প্রত্যাঘাত হানবে। এই প্রত্যাঘাতের মুখে কেউ সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, কেউ পিছু হটবে। দুই: যুক্তিবাদী চিন্তা জনসাধারণের চেতনার জগতে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাবে তারই পরিণতিতে গড়ে উঠবে নতুন-নেতৃত্ব, যে নেতৃত্ব থাকবে সমাজ পরিবর্তনের, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের সার্বিক বিপ্লবের অঙ্গীকার।
- প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- প্রকাশসাল ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮
- পুরাতন শক্তিকে ধ্বংস করিতে বিদ্রোহী শ্রমিক ও সৈনিকের সাময়িক ঐক্যই যথেষ্ট; কেননা, সৈনিকের পোষাক পরিহিত রাশিয়ান শ্রমিক ও কৃষকের ঐক্যই যে রুশ-বিপ্লবের ভিত্তি ইহা স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু শ্রমিক এবং সৈনিকের অস্থায়ী মৈত্রী অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা অথবা বিপ্লবকে অধিকতর পরিণতির দিকে অগ্রসর করিবার পক্ষে আদৌ পর্য্যাপ্ত নহে। ইহার জন্য প্রয়োজন—এই মৈত্রীকে সচেতন, নিরাপদ, স্থায়ী এবং দৃঢ় করিতে হইবে। এমন দৃঢ় করিতে হইবে যাহা প্রতিবিপ্লবীদের প্ররোচনাতেও অটল থাকিবে। ইহ। সকলের সম্মুখেই স্পষ্ট যে, রাশিয়ান বিপ্লবকে চরম জয়যুক্ত করিতে হইলে বিপ্লবী শ্রমিক ও বিপ্লবী সৈনিকদের ঐক্যকে দৃঢ়তর করা প্রয়োজন।
- জোসেফ স্তালিন, ১৮ মার্চ ১৯১৭ “প্রাভ্দা” পত্রিকায় প্রকাশিত ষ্ট্যালিনের সম্পাদকীয় প্রবন্ধ থেকে, ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৫০
- ভারতকে জাগাইবার জন্য মনোরাজ্যে যে বিপ্লব রামমোহন প্রবর্ত্তিত করিলেন, পরবর্ত্তী যুগে সে বিপ্লব সমাজের মধ্যে আসিয়া পড়িল। কেশবচন্দ্রের যুগে সমাজ সংস্কারের কাজ দ্রুতগতিতে চলিতে লাগিল।
- সুভাষচন্দ্র বসু, ছাত্র আন্দোলন, নূতনের সন্ধান - সুভাষচন্দ্র বসু, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
- একদল ন্যায্য প্রাপ্য হ’তে বঞ্চিত—সে বঞ্চনাকৌশলের নাম আইন; আর একদল চাহিদার বেশি গ্রাস ক’রে থাকে—সে বুভুক্ষার যুক্তি আভিজাত্য! শুধু রুশে নয়, সর্বদেশেই এবং বাঙলায়ও এই অবস্থা। চাই আজ মার্ক্সের নব-নীতি,—চাই আজ মজুর-বিপ্লব। সেই বিপ্লবেরই অগ্রদূত গৰ্কীর ‘মা’। মা বিপ্লবীদের অগ্নিবেদ। বিপ্লব-আন্দোলনের সমস্ত মনস্তত্ব এতে ফুটে উঠেছে নিখুঁতভাবে এবং অগ্নি-বর্ষী ভাষায়। সমস্ত দেশের সমস্ত বিপ্লবী যেন মা’র মধ্যে এসে ঘনীভূত হ’য়েছে। বছরের পর বছর ‘মা’ সকল দেশের—বিশেষ করে, বাঙ্লার বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত ক’রে এসেছে। ‘মা’ পড়লেই এই কথাটা সবার আগে মনে হবে।
- বিমল সেন, মাক্সিম গোর্কির মা বইয়ের ভূমিকায়, মা - ম্যাক্সিম গোর্কি, অনুবাদক- বিমল সেন, প্রকাশক- বর্মণ পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ)
- বর্ত্তমান কোয়ালিশান গভর্ণমেণ্টের সহিত কর্ণিলভ দলের যে সংগ্রাম তাহা বিপ্লবের সহিত প্রতিবিপ্রবের সংগ্রাম নহে। উহা প্রতিবিপ্লবের দুইটি পৃথক উপায় মাত্র। কর্ণিলভ দল বিপ্লবের শত্রু এবং রীগা শত্রু-হস্তে অর্পণ করিয়া ইহারা পেট্রোগ্রাডে আসিতেছে পুরাতন শাসনবাবস্থা ফিরাইয়া আনিবার জন্য।
- জোসেফ স্তালিন, ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশক- অগ্রণী বুক ক্লাব, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা-৫৯
- বামপন্থী নাৎসীরা বলেছিল, প্রথম বিপ্লব তো সফল, সম্পূর্ণ হল, এবার তাহলে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’টিকে আরম্ভ করা হোক—এই বিপ্লব হবে ধনিকতন্ত্র, ভূস্বামীতন্ত্র, প্রভৃতির বিরুদ্ধে। হিটলার কিন্তু শুনেই হুমকি ছেড়েছেন, এই ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ চেষ্টাকে তিনি নির্মম হস্তে দমন করবেন। অতএব তিনি স্পষ্টভাবেই ধনিকতন্ত্রী দক্ষিণ পন্থীদের পক্ষ অবলম্বন করলেন। তাঁর প্রধান সহকারীদের প্রায় সকলেই এখন বড়ো বড়ো গদি দখল করে বসেছেন।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৮৮
- মার্কসের মতে বিপ্লব বলতে কি বোঝায়? ভারতের (বা বৃহদর্থে এশিয়ার) যা কিছু বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা আছে তার সব কিছুকেই বিসর্জন দিয়ে বা বলপূর্বক ধ্বংস করে সমস্ত ইয়োরোপীয় হালচালকে অন্ধভাবে অনুকরণ করা এবং ভারতের মাটিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার নামই কি বিপ্লব? হ্যাঁ তাই, কারণ এই অসভ্য ভারতীয় সমাজকে সুসভ্য করে গড়ে তুলতে আর কোনো রাস্তাই মার্কস খুঁজে পাচ্ছেন না এবং এইভাবে বিপ্লব রপ্তানী করে ইংরাজরা ভারতের যে মহান উপকার করে চলেছে তার প্রশংসা না করে পারছেন না। তাই লিখছেন, “বৃটিশের যত দোষই থাক না কেন, তবুও সে নিজের অজান্তেই এই বিপ্লবের কাজ করে যাচ্ছে।” তাহলে প্রশ্ন থাকছে যে, এই রকম একটা বিপ্লব ঘটাবার জন্যই কি আমাদের মার্কসবাদীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন? তাহলে তাঁদের এই পরামর্শই দিতে হয় যে, কেন তাঁরা আর বৃথা খাটাখাটি করবেন? তার থেকে বরং বৃটিশদের বা অন্য ইয়োরোপীয়দের ডেকে নিয়ে আসুন। তাঁরা সেই বিপ্লব অনেক ভালভাবে এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে পারবে।
- রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী, মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা - রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১-১২
- এ কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে বাইরের লোকের পক্ষে বাংলাদেশের বিপ্লবের রূপ ও তাৎপর্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের বিপ্লবী বামপন্থীরা যদি বাংলাদেশ বিপ্লবের স্বরুপ বুঝতে পারেন। বিপ্লব যে সামাজিক শক্তিগুলিকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে তাদের গতিপ্রকৃতি যদি তাঁরা তাদের ধরতে পারেন তবেই বাংলাদেশ বিপ্লবের হবে সর্ববৃহৎ সাহায্য। এছাড়া অবশ্য ভৌতিক ও নৈতিক সমর্থন ও সাহায্য করতেই হবে মিথ্যা ভয় ও অপপ্রচারে বামপন্থীদের কোনো লাভ নেই। এ বিপ্লব এক অভূতপূর্ব গণতান্ত্রিক বিপ্লব। চীন বিপ্লবের পর এটাই এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যদি এ বিপ্লবকে সফল করতে হয় তবে একে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে পরিণত করতে হবে আর সে কাজে নেতা হবে বাংলাদেশেরই শ্রমিক শ্রেণী। বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য চাই। ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেনীর বিপ্লবী সংহতি চাই।
- সোশালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি, চতুর্থ কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক ভারতের সংখ্যা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, দ্বাদশ খণ্ড, প্রকাশক- হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, প্রকাশসাল- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১৭-৪১৮
- এই-সব নির্যাতিত জাতির বহু লোক রাশিয়ার বিপ্লব-আন্দোলনে গিয়ে যোগ দিয়েছিল, যদিও এদের প্রধান কাম্য ছিল জাতীয় বিপ্লব, সমাজ-বিপ্লব নয়। ১৯১৭ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের বিপ্লবের পরে যে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করা হল, তাঁরা এই সব ক্ষুদ্র জাতিদের অনেক রকম আশ্বাস এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন, কিন্তু কার্যত এদের জন্য কিছুই করলেন না। ওদিকে লেনিন কিন্তু বলশেভিক দলের প্রথম যুগ থেকে, মানে বিপ্লবের অনেক আগে থেকেই, খুব জোর দিয়ে বলছিলেন, প্রত্যেক জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ অধিকার দিয়ে দিতে হবে, তাতে যদি তারা সম্পূর্ণ ভাবে সম্পর্ক ছেদ করে, স্বাধীন হয়ে চলে যায়, তাতেও আপত্তি নেই। এটা ছিল বলশেভিকদের পুরোনো কর্মসূচীরই একটা অংশ। বিপ্লবের পরই বলশেভিকরা—তখন তারাই দেশের শাসন-কর্তৃপক্ষ—ঘোষণা করল, আত্মনিয়ন্ত্রণের এই নীতিতে তারা এখনও আগের মতোই বিশ্বাসী রয়েছে।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮১৩
- যারা সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ বিপ্লবের গান গেয়েছিলেন তাঁরাই নির্বাচন জিতে সবচেয়ে আগ্ বাড়িয়ে মন্ত্রিত্বের গদি বরণ করলেন এবং এই মন্ত্রিত্ব গ্রহণই যে বিপ্লবের একমাত্র পথ তার জন্য অজস্র লেখা ও বক্তৃতায় সময় ব্যয় করলেন।
- অসীম রায়, অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৭ অসংলগ্ন কাব্য
- আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান হচ্ছে দুটো।একটি সিনেমার জন্ম।অপরটি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম।দুটোই বিপ্লব।একটা চারুকলার ক্ষেত্রে।অন্যটা সমাজ ব্যবস্থা ক্ষেত্রে।
- জহির রায়হান, ‘অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র’ প্রবন্ধে বিডিনিউজ২৪
- ১৮৫৭ অব্দে ভারতীয় জনগণ হঠাৎ একদিন বৃটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র গ্রহণ করল—এমন কথা মনে করলে ভুল করা হবে। এমন আকস্মিক রূপে কোন বিপ্লবই অনুষ্ঠিত হয় না। ১৮৫৭ অব্দে আমাদের নেতারা যুদ্ধের জন্যে সর্ব্বপ্রকার আয়োজন করার প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছিলেন— যদিও পরে দেখা গেল, তাঁদের সে আয়োজন যথেষ্ট ছিল না। উদাহরণস্বরূপ ধরুন, নানা সাহেবের কথা—যিনি সেই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান নায়ক। তিনি বিদেশ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা পাবার আশায় সারা ইউরোপে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ১৮৫৭ অব্দে যখন বিপ্লব আরম্ভ হল, তখন বৃটেনের সঙ্গে পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশের মৈত্রী-সম্পর্ক ছিল এবং বিপ্লবীদের শায়েস্তা করার জন্যে বৃটিশ সমস্ত শক্তি-সামর্থ্য নিয়োগ করতে পেরেছিল।
- সুভাষচন্দ্র বসু, দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৮
- দ্রাবিড় সভ্যতায় আছে শুধু গঠন। কিন্তু ছিল না বিপ্লব এবং এখনও নেই বিপ্লব। আফগানিস্থানে অনেক যুদ্ধের সংবাদ পাওয়া যায়। সিয়া-সুন্নিতে যুদ্ধের ইতিহাস আছে, সুলতান মামুদের সোমনাথ আক্রমণের কথা আছে কিন্তু সামাজিক অন্তর্বিপ্লবের কোন নিদর্শন দেখতে পাই নি।
- রামনাথ বিশ্বাস, গজনী, আফগানিস্থান ভ্রমণ - রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- অশোক পুস্তকালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৬
- কলের কর্মক্ষমতা দিন দিন যতই বেড়ে চলেছে, মানুষের শ্রমের উপরে তাকে ততই কম নির্ভর করতে হচ্ছে। আজকের এই উন্নতি, যন্ত্রশিল্পের এই প্রগতি, এর বেগ বিশেষ করে দ্রুত হয়ে উঠেছে বিংশ শতাব্দীরই এই গত ত্রিশটি বছরে। সম্প্রতি বছর কয়েক ধরে এই পরিবর্তনের বেগ অত্যন্ত প্রবল হয়েছে—আজও সে বেগ থেমে যায় নি; এর ফলে শিল্পে এবং উৎপাদনের প্রণালীতে এমন বিপ্লবই ঘটে যাচ্ছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে যে শিল্প-বিপ্লব ঘটেছিল একমাত্র তারই সঙ্গে এর তুলনা দেওয়া চলে। এই নূতন বিপ্লবের প্রধান কারণ হচ্ছে, উৎপাদনের কাজে বিদ্যুৎশক্তির ক্রমশই অধিকতর ব্যবহার। বিংশ শতাব্দীতে বিরাট একটি বিদ্যুৎ-বিপ্লব পৃথিবীতে, বিশেষ করে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে; এর ফলে জীবনযাত্রার রীতিটাই সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্প-বিপ্লব প্রতিষ্ঠা করেছিল যন্ত্র যুগের; বিদ্যুৎ-বিপ্লবের ফলে আমরা এখন ছুটে চলেছি শক্তি-যুগের দিকে।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩৭
- দেখুন, টাকা পয়সার সঙ্গে যোগ নেই এমন কিছু নেই পৃথিবীতে, ব্যানার্জিবাবু। জন্ম মৃত্যু বিবাহ সবই টাকার জন্যে। টাকার জন্যেই বিপ্লব। মানে, সাধারণ মানুষকে তো খেতে হবে, পরতে হবে।
- অসীম রায়,অসংলগ্ন কাব্য, পৃষ্ঠা ১৪ অসংলগ্ন কাব্য
- ভারতের অভ্যন্তরে জনগণ ও সৈন্যদের মধ্যে কিছুকাল বিচক্ষণতা ও কৌশলের সঙ্গে প্রচারকার্য্য চালানো হয়েছিল। ফলে, বিপ্লবের ইঙ্গিত দেওয়া মাত্রই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হল। বিজয়ের পর বিজয় লাভ করা হল। উত্তর-ভারতের উল্লেখযোগ্য সব সহর বৃটিশদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হল এবং বিপ্লবী সৈন্যদল সগৌরবে ভারতের রাজধানীতে প্রবেশ করল। অভিযানের প্রথম পর্য্যায়ে বিপ্লবীরা প্রায় সর্ব্বত্রই বিজয় লাভ করল। অভিযানের দ্বিতীয় পর্য্যায়ে বৃটিশ যখন প্রত্যাক্রমণ সুরু করল, তখন আমাদের লোকেরা আত্মরক্ষা করতে পারল না। তখন বিপ্লবীদের দেশব্যাপী সমর-কৌশল দেখা গেল; কিন্তু সে সমর কৌশলের সমন্বয়-সাধনের জন্যে তেজস্বী নেতার অভাব হল।
- সুভাষচন্দ্র বসু, দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৮-১০৯
- ১৮১৪-১৫ অব্দ ব্যাপী ভিয়েনার মহাসম্মেলনের বিশেষ লক্ষ্য ছিল, নৃপতিবর্গের নিরাপত্তারক্ষা। ফরাসি বিপ্লব এনে দিয়েছিল তাদের প্রাণের ভয়। রাজারা এবার নির্বোধের মতো ভাবল, বিপ্লবী মতবাদের বিস্তারকে তারা বন্ধ করতে পারবে। রাশিয়ার জার, অস্ট্রিয়ার সম্রাট ও প্রাশিয়ার অধিপতি এক ‘পুণ্য সন্ধি’র প্রতিষ্ঠা করলেন নিজেদের ও অন্যান্য নরপতিদের নিরাপদে রাখবার জন্যে। দেখে মনে হয় যেন চতুর্দশ কি পঞ্চদশ লুইয়ের সময়ে আমরা ফিরে এসেছি। সারা ইউরোপে, এমনকি ইংলণ্ডেও সকল স্বাধীন মতামতের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। ইউরোপের প্রাগ্র্যসর জনগণ কতই-না জানি কষ্ট অনুভব করেছিল জেনে যে, ফরাসি বিপ্লবের এত দুঃখসহন বৃথাই গেছে!
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪০
- মুক্তিফৌজের নেতাদের আজ কাজ হলো গেরিলা আক্রমণের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের সমন্বয় ঘটান। জনগনের সক্রিয় সহযোগ ছাড়া শুধু গেরিলা আক্রমণ মারফত বিপ্লবের বিস্তৃতি ঘটান সম্ভব নয়। জনগণকে এমন কিছু দিতে হবে যার জন্য তারা লড়তে ও মরতে রাজী হয়। শুধু স্বাধীনতার নামে এ কাজ হয় না, হতে পারে না। অন্য কথায় বলতে গেলে বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপ দেবার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।
- সোশালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি, চতুর্থ কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক ভারতের সংখ্যা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, দ্বাদশ খণ্ড, প্রকাশক- হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, প্রকাশসাল- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১৬-৪১৭
- "সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লেও আমি আজও সমাজতন্ত্রকে সর্বোত্তম ব্যবস্থা মনে করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সহিংস বিপ্লব ছাড়া কি এটি সম্ভব?"
- দ্বিজেন শর্মা, সমাজতন্ত্র ও সোভিয়েত অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে, কালি ও কলম মাসিক পত্রিকাতে দেয়া সাক্ষাৎকার, অক্টোবর ২০১৭
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় বিপ্লব সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে বিপ্লব শব্দটি খুঁজুন।