ভাগ্য
অবয়ব
ভাগ্য হলো এমন একটি সুযোগ যা ঘটে, অথবা যা একজন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে, এবং একে "সৌভাগ্য" বা "দুর্ভাগ্য" হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। ভাগ্য-এর সংজ্ঞা দার্শনিক, ধর্মীয়, রহস্যময়তা ও আবেগের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- জীবনটা যদি একটা যুদ্ধই হয়, তবে সে-যুদ্ধের জয়মাল্য শুধু বলশালী জয়ীর জন্যেই নয়... আজকের নতুন পৃথিবী চায় সেই যোদ্ধাকে, হেরে গিয়েও শেষ পর্যন্ত যে যুজেছিল, হেরে গিয়েছিল বলে হাতিয়ারের যে নিন্দা করে নি, জয়ীকে ছোট করে নি, নিজের ভাগ্যকে ধিক্কার দেয় নি......
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, নতুন পৃথিবীর নতুন মানুষ - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রথম প্রকাশ- আষাঢ় ১৩৬৪, প্রকাশক-রাইটার্স সিণ্ডিকেট প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
- মানবের ভাগ্যটা যেন নদীর মত জোয়ার ভাঁটার নিয়মের অধীন।
- হরিসাধন মুখোপাধ্যায়, দেওয়ানা, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২
- শাস্ত্রে যে ব্যবস্থা আছে তা পালন করলে ভগবানের বিধান লঙ্ঘন করা হয় না, তার বাইরে গেলেই মহাপাপ। এইটে জেনে রেখো যে ভাগ্যের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। তোমার সন্তানভাগ্য মন্দ ছিল তাই এত দিন দুঃখ পেয়েছ, ভাগ্য পালটালেই তুমি সুখী হবে। যা বিধিলিপি তা মাথা পেতে মেনে নিতে হয়।
- রাজশেখর বসু, ষষ্ঠীর কৃপা, ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬২
- স্ত্রীলোকদিগকে লৌকিক কথায় কলা গাছের সহিত তুলনা করিয়া থাকে। কিন্তু সে গেছো কথা। কদলী ফলের সঙ্গে ভুবনমোহিনী জাতির আমি সৌসাদৃশ্য দেখি না। স্ত্রীলোক কি কাঁদি কাঁদি ফলে? যাহার ভাগ্যে ফলে ফলুক—কমলাকান্তের ভাগ্যে ত নয়। কদলীর সঙ্গে কামিনীগণের এই পর্য্যন্ত সাদৃশ্য আছে যে, উভয়েই বানরের প্রিয়। কামিনীগণের এ গুণ থাকিলেও কদলীর সঙ্গে তাঁহাদিগের তুলনা করিতে পারি না।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মনুষ্য ফল, কমলাকান্তের দপ্তর, কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫-১৬
- একদিন ভাগ্য দেবী মনুষ্যের ভাগ্য মাপিতেছেন—এবং আপনার ক্ষমতায় মনে মনে গর্ব্ব অনুভব করিতেছেন এমন সময় গোলাপদলের পরিচ্ছদ পরিয়া প্রজাপতিতে চড়িয়া একটি ক্ষুদ্র পরী সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া ভাগ্যদেবী সহাস্য-মুখে জিজ্ঞাসা করিলেন—“কোথা হইতে আসিতেছ? দেখিয়া ত বোধ হইতেছে পৃথিবী হইতে। সেখানকার খবর কি?” পরী বলিল—“খবর বড় ভাল নহে। লোকে কেবল সেখানে নিজের ভাগ্যের আর তোমার নিন্দা করিতেছে। বাস্তবিক তোমার ভাণ্ডারে ধন মান যশ প্রভৃতি মানবের প্রার্থনীয় বস্তুর কিছুরই অভাব নাই—তুমি ইচ্ছা করিলেই লোককে সুখী করিতে পার, তবে কেন কর না? আমি যদি তোমার কাজে থাকিতাম— তাহা হইলে কেহ দুঃখ পাইত না।” ভাগ্য দেবী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন—“বেশ ত তুমি কিছু দিন আমার কাজ করিয়া দেখ না মানুষকে সুখী করা কেমন সহজ।” এই বলিয়া ভাগ্য দেবী তাঁহার ধন ভাণ্ডারের চাবি পরীর হাতে দিলেন। পরী ভাগ্যদেবীর ভাণ্ডার খুলিয়া তাহার শোভায় মোহিত হইয়া গেল।
- স্বর্ণকুমারী দেবী, সাররত্ন, গল্পস্বল্প- স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭
- ভাগ্যে মামার হাবড়া-মাঠে সময় হ’ল যাবার
নইলে পরে একটি চড়ে হরির দফা সাবাড়!
ভাগ্যে মামা গেলেন চ’লে—
রক্ষে ছিল আজ না-হ’লে?
হাঁফটি ছেড়ে আমরা খেলাম বিকেল বেলার খাবার।- ঈস্—!, সুনির্মল বসু, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮২
- ভাগ্য সুযোগ নয়, এটি পরিশ্রম; ভাগ্যের ব্যয়বহুল হাসি অর্জিত হয়।
- এমিলি ডিকিনসন, দ্যি কমপ্লিট পোয়েমস অফ এমিলি ডিকিনসন। টমাস এইচ. জনসন (সম্পাদিত)। লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি, দ্বিতীয় মুদ্রণ। পৃষ্ঠা ৫৮৩
- বাংলা নদীবহুল দেশ। নদী বাংলার প্রাণ। নদীপথে বাঙালী বাণিজ্যের, পসরা ভাসিয়ে বিদেশে যাত্রা করে, নদীর জলে সিঞ্চিত মাটির ব্যকে ফসল ফলায় । বলতে গেলে এই নদীই বাংলাকে গড়ে তুলেছে, বাঙালীর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেই জন্যই তো নদীর সাথে বাঙালীর নাড়ীর টান।
- অজয় রায়, বাংলা ও বাঙালী পৃষ্ঠা, অধ্যায় এক, পৃষ্ঠা ৫। বাংলা ও বাঙালী, অজয় রায়।
- নানা আশু ও সুদূর কারণে, অনেক দিনের পুঞ্জিত অপরাধে হিন্দু-মূসলমানের মিলনসমস্যা কঠিন হয়েছে, সেইজন্যেই অবিলম্বে এবং দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে তার সমাধানে প্রবৃত্ত হতে হবে। অপ্রসন্ন ভাগ্যের উপর রাগ করে তাকে দ্বিগুণ হন্যে করে তোলা চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কালান্তর, হিন্দুমুসলমান। শ্রাবণ, ১৩৩৮
- আমরা গুরুমশায়ের কাছে ক খ, বানান নামতা, কড়াঙ্কে, ষটকে —এই সব শিখতুম, তাছাড়া চিঠিপত্র লেখা অভ্যাস করতুম। যত ওঁচা ফ্যালা, জিনিষ মোড়বার মত ব্রাউন কাগজ আনা হত, —শ্রীরামপুরের সাদা কাগজ যেদিন আসত খুব ভাগ্যি মনে করতুম। এই কাগজের উপর বাঙলা কলম দিয়ে আঁচড়কাটা— সেই আমাদের পত্রলেখা।
- আমার বাল্যকথা- সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বৈতানিক প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৭
- মানব ইতিহাসে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আমরা বেশি করে এক অভিন্ন ভাগ্য বহন করছি। আমরা কেবল তখনই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব যদি আমরা একসাথে এর মুখোমুখি হই। আর একারণেই, আমার বন্ধুরা, আমাদের জাতিসংঘ রয়েছে।
- নতুন সহস্রাব্দের জন্য বার্তা (৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯)
- দেখো কেউ যেন এই বিষয়ে তোমাদের কোনভাবে প্রতারিত করতে না পারে সেই দিন আসার আগে পৃথিবীতে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দিবে।সেই পাপ পুরুষ ধ্বংস হওয়া যার ভাগ্যে লেখা সে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত সেদিন আসবে না।
- বাইবেল, থেসালোনিকীয় ২য় পত্র ২:৩
- জীবনের অর্থ জিজ্ঞাসা করা কোনও ভাগ্যবিধাতার চা পাতা, মুরগির হাড় বা ট্যারোট কার্ড নিক্ষেপ করার চেয়ে আলাদা নয়, তারপরে তারা যে এলোমেলো জগাখিচুড়ি তৈরি করেছে তা দেখে এবং এর অর্থ কী তা ভাবছে। আব্রাহামিক ধর্মও স্টকহোম সিনড্রোম ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য রাখে না, কারণ আপনি সর্বোত্তম যা আশা করতে পারেন তা হ'ল একজন অদম্য স্বৈরাচারের দ্বারা বন্দী হওয়া এবং অনন্তকালের জন্য আপনার ঠোঁট তার কোলনে চেপে ধরতে হবে - অন্যথায় মৃত্যুর চেয়েও খারাপ ভাগ্য ভোগ করতে হবে। আপনি যদি করেন তবে আপনি অভিশপ্ত, আপনি যদি না করেন তবে অভিশপ্ত।
- অ্যারন রা, খ্রিস্টান প্রশ্নে আস্তিক-বিরোধী উত্তর (২২ নভেম্বর, ২০১৫)
- আমরা পছন্দ করি বা না করি, আমরা এখন একটি ভারতীয় জাতিতে পরিণত হয়েছি, ঐক্যবদ্ধ এবং অবিভাজ্য। বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত করার কোনো কল্পনা বা কৃত্রিম চক্রান্ত এই ঐক্যকে ভাঙতে পারে না। আমাদের অবশ্যই সত্য ও ইতিহাসের যুক্তি মেনে নিতে হবে এবং আমাদের ভবিষ্যত ভাগ্যের রূপরেখায় নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে।
- আবুল কালাম আজাদ, ১৯৪০ সালে রাষ্ট্রপতির ভাষণে, দক্ষিণ এশিয়ার ধর্ম একটি ভূমিকা (২০০৬), পৃষ্ঠা ২৩৯
- ‘বুশ্ ক্র্যাফ্ট্’ বলে একটা জিনিষ আছে। সুবিস্তীর্ণ, বিজন, গহন অরণ্যানীর মধ্যে ভ্রমণ করবার সময়ে এ বিদ্যা জানা না থাকলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। আলভারেজের সঙ্গে এতদিন ঘোরাঘুরি করার ফলে, শঙ্কর কিছু কিছু ‘বুশ্ ক্র্যাফ্ট্’ শিখে নিয়েছিল, তবুও তার মনে সন্দেহ হোল যে, এই বন একা পাড়ি দেবার যোগ্যতা সে কি অর্জ্জন করেচে? শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে তাকে চলতে হবে, ভাগ্য ভাল হয় বন পার হতে পারবে, ভাগ্য প্রসন্ন না হয়—মৃত্যু।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দশম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮
- পৃথিবীর ভাগ্যবান লোকেরা শুন, শুনিয়া ঘৃণায় মুখ ফিরাইও। আর ওগো অনাথিনীর আশ্রয়-তরু, স্বর্গের দেবতা, তুমিও শুন গো শুন! দেবতাই হোক, আর মানুষই হোক্; মুখে যাহা বলা যায় কার্য্যে করা বড়ই দুষ্কর! ভালবাসায় ভাগ্য ফেরেনা গো, ভাগ্য ফেরেনা!! ঐ দেখ আবার চিতাভস্মগুলি দূরে দূরে চলে যাচ্ছে, আর হায় হায় করিতেছে। এই আমার পরিচয়। এখন আমি আমার ভাগ্য লইয়া শ্মশানের যাতনাময় চিতাভস্মের উপর পড়িয়া আছি! এখন যেমন একটা অযাত্রার জিনিস দেখিলে কেহ রাম, রাম, কেহ কেহ শিব, শিব, কেহ বা দুর্গা, দুর্গা বলেন, আবার কেহ মুখ ঘুরাইয়া লইয়া হরি, হরি বলিয়া পবিত্র হয়েন। যাঁহার যে দেবতা আশ্রয়, তিনি তাঁহাকে স্মরণ করিয়া এই মহা পাতকীর পাপ কথাকে বিস্মৃত হউন। ভাগ্যহীনা, পতিতা কাঙ্গালিনীর এই নিবেদন।
- আমার কথা (প্রথম খণ্ড) - বিনোদিনী দাসী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪
- ভাগ্য যখন পূর্বনির্ধারিত, তখন যে কোনও প্রচেষ্টাই তো অর্থহীন। প্রধানমন্ত্রী হওয়া যদি ভাগ্যে নির্ধারিতই থাকে, তবে কে তাকে খণ্ডাবে? এ তো অমোঘ, অব্যর্থ। আর ভাগ্যে যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়া লেখা না থাকে, তবে অবশ্যই ভাগ্য; যে ভাগ্য জন্মকালীন গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে গেছে।
- প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
- দায়িত্বের অনুভূতি ত্যাগ করুন, আপনার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিন, আপনার ভাগ্যের যত্ন উচ্চতর শক্তিগুলির কাছে ছেড়ে দিন, এই সমস্ত কিছুর কী হবে সে সম্পর্কে সত্যই উদাসীন হন এবং আপনি কেবল একটি নিখুঁত অভ্যন্তরীণ স্বস্তিই পাবেন না, বরং প্রায়শই সেই নির্দিষ্ট পণ্যগুলিও পাবেন যা আপনি আন্তরিকভাবে ভেবেছিলেন যে আপনি ত্যাগ করছেন।
- উইলিয়াম জেমস (১৯৮৫), ধর্মীয় অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ৯৫
- যেটি বিজয়ীদেরকে পরাজিতদের থেকে আলাদা করে তা হল একজন ব্যক্তি কীভাবে ভাগ্যের প্রতিটি নতুন মোড়কে প্রতিক্রিয়া জানায়।
- ডোনাল্ড ট্রাম্প, ট্রাম্প: সারভাইভিং অ্যাট দ্য টপ (১৯৯০), পৃষ্ঠা ৩
- ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত জ্যোতিষীরা কিন্তু তাঁদের এই তত্ত্বে সামান্যতম আস্থা রাখেন না, তা তাঁদের জীবনচর্যাতেই প্রকট। জ্যোতিষীরা খদ্দের ধরতে বিজ্ঞাপন দেন কেন? ভাগ্যে যা হবার তা যখন হবেই, অপ্রতিরোধ্য, তখন বিজ্ঞাপনে কি একটিও বাড়তি খদ্দের আসতে পারে? গ্রহরত্ন-ব্যবসায়ী ও তথাকথিত জ্যোতিষগবেষণা- কেন্দ্রগুলো মাঝে-মধ্যে যখন তাঁদের দোকানের জন্য জ্যোতিষী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন, তখন তাঁদের বজ্জাতি দেখে তাজ্জব বনে যাই। ওঁরা নিজেরাই ‘ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত’ কথাটায় আদৌ বিশ্বাস করেন না। আর তাই ‘দোকানে বসাতে জ্যোতিষী যখন পাবার তখন ঠিকই পেয়ে যাবে’ এই ভেবে হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে জ্যোতিষী খুঁজতে সচেষ্ট হন। আর লোকের কাছে গ্রহরত্ন বেচার তাগিদে নিখুঁত ভাগ্য-গণনার (অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য) ঢাউস ঢাউস বিজ্ঞাপন দেন।
- প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, সংস্করণ-১৩, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৫
- অমরমাণিক্য ধর্ম্মকর্ম্মে তৎপর হইয়া সুখে দিন কাটাইতে লাগিলেন কিন্তু রাজাদের ভাগ্য প্রজার ভাগ্যের সহিত জড়িত, তাই ধর্ম্মকার্য্য লইয়া নিরবচ্ছিন্ন শান্তিভোগ ঘটিয়া উঠে না।
- ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী, রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- টিচার্স এণ্ড কোম্পানি, প্রকাশস্থান- আগরতলা, প্রকাশসাল- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৭
- ভারতবর্ষ যেমন ভাগ্য নিয়ে মাথা ঘামায় আমেরিকার লোক বিজ্ঞানের এত উন্নত স্তরে উঠেও তেমনি সেই ভাগ্যের কথা ভুলে নি। যেখানে ভাগ্যের দৌরাত্ম্য সেখানে জুয়া খেলার প্রাবল্য। বিশ্বমেলাও সে দোষ থেকে বন্চিত হয় নি দেখলাম। ছোট ছোট ঘর বেঁধে জুয়ার সব আডডা হয়েছে। লোকের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য মাইক্রোফোনের সাহায্যে বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে।
- রামনাথ বিশ্বাস, আজকের আমেরিকা- রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পর্যটক প্রকাশনা ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৭
- সেই দেবতার সাহায্যেই তিনি সংরক্ষিত; সুখ তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারে না, দুঃখ তাঁহার হৃদয়কে ভেদ করিতে পারে না, তিনি সুখের স্পর্শে অনাকৃষ্ট, দুঃখের বাণে দুর্ভেদ্য, তাঁহার কেহই অনিষ্ট করিতে পারে না, তিনি দুষ্ট লোকের দ্বেষ হিংসার বহু ঊৰ্দ্ধে অবস্থিত। এইরূপে অন্তরের রিপুগণকে দমন করিবার জন্য তিনি নিয়তই ধর্ম্মযুদ্ধে প্রবৃত্ত রহিয়াছেন; এবং ন্যায়ের ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া, তাঁহার ভাগ্যে যাহা কিছু ঘটিতেছে তিনি তাহা অম্লান বদনে গ্রহণ করিতেছেন। সাধারণের প্রয়োজন ও হিতের জন্য আবশ্যক না হইলে, তিনি অন্যের বাক্য চিন্তা ও কার্য্যের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেন না। তিনি আপনার কাজ লইয়াই ব্যাপৃত থাকেন, এবং বিধাতা তাঁহাকে যেরূপ অবস্থায় স্থাপন করিয়াছেন তিনি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকেন এবং সন্তুষ্টচিত্তে তাঁহার নির্দ্দিষ্ট কর্ত্তব্য সকল পালন করেন। তিনি ভাবেন তাঁহার ভাগ্য যখন তাঁহার উপযোগী, তখন প্রত্যেক ব্যক্তিরই ভাগ্য প্রত্যেক ব্যক্তিরই উপযোগী।
- মার্কাস্ অরিলিয়সের আত্মচিন্তা - মার্কাস অরিলিয়স, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, প্রকাশস্থান- হুগলি, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮
- যদি কোনো প্রবল শয়তান সরীসৃপের মতো লুকাইয়া মাটির নিচে প্রবেশ করিয়া শত লক্ষ আঁকাবাঁকা শিকড়ের ভিতর দিয়া পৃথিবীর সমস্ত তরুলতা-তৃণগুল্মের মধ্যে মনঃসঞ্চার করিয়া দেয় তাহা হইলে পৃথিবীতে কোথায় জুড়াইবার স্থান থাকে! ভাগ্যে বাগানে আসিয়া পাখির গানের মধ্যে কোনো অর্থ পাওয়া যায় না এবং অক্ষরহীন সবুজ পত্রের পরিবর্তে শাখায় শাখায় শুষ্ক শ্বেতবর্ণ মাসিকপত্র সংবাদপত্র এবং বিজ্ঞাপন ঝুলিতে দেখা যায় না! ভাগ্যে গাছেদের মধ্যে চিন্তাশীলতা নাই। ভাগ্যে ধুতুরাগাছ কামিনীগাছকে সমালোচনা করিয়া বলে না ‘তোমার ফুলের কোমলতা আছে কিন্তু ওজস্বিতা নাই’ এবং কুলফল কাঁঠালকে বলে না ‘তুমি আপনাকে বড়ো মনে করো কিন্তু আমি তোমা অপেক্ষা কুষ্মাণ্ডকে ঢের উচ্চ আসন দিই’। কদলী বলে না ‘আমি সর্বাপেক্ষা অল্পমূল্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ পত্র প্রচার করি’ এবং কচু তাহার প্রতিযোগিতা করিয়া তদপেক্ষা মূলত মূল্যে তদপেক্ষা বৃহৎ পত্রের আয়োজন করে না!
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মন, সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫১ - ১৫২
- ভাগ্যের কথা কে বলিতে পারে? ভাগ্য যে কখন কাহার উপর প্রসন্ন ও কখন কাহার উপর অপ্রসন্ন তাহা বুঝিয়া উঠা মনুষ্যের সাধ্য নহে। তাহা না হইলে, পুরাকালে কত রাজাই প্রবল ছিলেন তাহা বলিয়া উঠা যায় না; এখন চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিলে তাঁহাদের কাহাকেও দেখিতে পাইবে না। প্রবল প্রতাপান্বিত পরাক্রমশালী বীর্য্যবান রাজা সকল কোথায় গেলেন। রে ভাগ্য তোমাকে ধন্য! তুমি যে কখন কাহার উপর ধাবিত হইতেছ বুঝিতে পারিতেছি না। তুমি যখন যাহার অনুকূল থাক তখন সেই ধন্য। তাহা না হইলে রাজা যুধিষ্টির কেন বনগামী হইলেন। তুমি যদি তাঁহাদের উপর সুপ্রসন্ন থাকিতে তাহা হইলে তাঁহারা কখন বনগামী হইতেন না, অনেক দুর্লঙ্ঘ্য কষ্টও ভোগ করিতেন না। যখন তুমি সদয় হইলে তখন তাঁহাদের আবার সেই হস্তিনায় একাধিপত্য স্থাপন করাইলে। তোমাকে ধন্য! তোমারই নির্দ্দয় দৃষ্টিপাতে সুরতনের রাজলক্ষ্মী তাঁহাকে পরিত্যাগ করিলেন।
- তারাচরিত- সুরঙ্গিণী দেবী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৮১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২
- বোধ হয়, কাশীনাথ কেবল মাত্র আপনার ভাগ্যের উপর নির্ভর না করিয়া, চারিজনের নামে টীকিট ক্রয় করিয়াছিলেন। ইহার মধ্যে একজনের ভাগ্য অবশ্য প্রসন্ন হইবে, তাঁহার মনে এরূপ বিশ্বাস ছিল। রামদুলাল কাশীনাথের সত্যানুরাগ দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। এই সকল প্রাচীন বাঙ্গালিদিগের চরিত্র সর্ব্বদা সকলেরই অনুকরণীয়। যে জলমগ্ন জাহাজ ক্রয় হইতে রামদুলালের ঐশ্বর্য্য হইতে আরম্ভ হয়, সেই, জাহাজ ক্রয়ের কয়েক মাস পূর্ব্বে মূলা যোড়ের কোন সর্ব্বলক্ষণ সম্পন্না রমণীর সহিত তাঁহার বিবাহ হয়। বঙ্গদেশে ‘‘স্ত্রী ভাগ্যে ঐশ্বর্য্য ও স্বামী ভাগ্যে পুত্র লাভ হয়।” এইরূপ একটি প্রবাদ আছে। বিবাহের পর হইতেই রামদুলালের অনবরত ঐশ্বর্য্য লাভ হুইতে দেখিয়া ঐ প্রবাদের সত্যতায় লোকের বিশ্বাস হইল। রামদুলাল যেমন অপরিমিত অর্থ উপার্জ্জন করতে লাগিলেন, গৃহিণী সেই রূপ পরিমিত ভাবেই ব্যয় করিতে আরম্ভ করিলেন।
- কালীময় ঘটক, দ্বিতীয় চরিতাষ্টক - কালীময় ঘটক, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ (১২৮০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২
- কথাটার মধ্যে সত্যের অপলাপ ছিল। বৃদ্ধ খুব খুশি হ’ল, মনে হ’ল প্রশংসা জিনিসটা বেচারীর ভাগ্যে অনেক দিন জোটেনি। আসরে কাল যখন তরুণ অভিনেতাদের বেলায় ঘন ঘন হাততালি পড়েছে, যদু হাজরার ভাগ্যে সে জায়গায় বিদ্রূপ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২
- প্রজার ভাগ্য আর রাষ্ট্রের ভাগ্য এক সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রের সংস্কার না হলে প্রজার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হতে পারে না। অতএব রাষ্ট্র আর প্রজা দুইএরই মঙ্গলকামনায় আমি বলছি—এই সদ্যোজাত ভারতসন্তান যেন এমন শাসনতন্ত্রের আশ্রয় পায় যা তাকে সর্বাত্মক শিক্ষা দেবে, তার সামর্থের উপযুক্ত কর্ম দেবে, তার প্রয়োজনের উপযুক্ত জীবিকার ব্যবস্থা করবে, সে যেন কায়মনোবাক্যে রাষ্ট্রবিধির বশবর্তী হয়, তার চিত্ত পরব্রহ্মে লীন না হয়ে যেন রাষ্ট্রেই লীন হয়।
- রাজশেখর বসু, নবজাতক, আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প-রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩১
- আমেরিকার যুবকগণ যখন কাজ পায় না তখন তারা গলায় দড়ি দিয়ে গংগায় ডুবতে যায় না। ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়ে পথে বসে না। তাদের দেশে এখনও ভাগ্য এবং ভগবানের স্থান নাই। তাদের আছে পুরুষত্ব। কাপুরুষ, ধূর্ত, এবং ইতরগণই ভাগ্য এবং ভগবানের কথা বলে সকল অন্যায় কাজই করে।
- ** রামনাথ বিশ্বাস, আজকের আমেরিকা- রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পর্যটক প্রকাশনা ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯০
- ইতিমধ্যে ব্রিটিশরা জেনে ফেলেছে যে, ব্রহ্মের সরকার ও তার সেনার শক্তি বিশেষ কিছু নেই। সমস্ত দেশটাকেই জয় করে নেবার ইচ্ছে তাদের জেগে উঠল। অদ্ভূত সব ছুতোনাতা ধরে ব্রহ্মের সঙ্গে পর পর আরও দুবার যুদ্ধ বাধানো হল; ১৮৮৫ সনের মধ্যে সমস্ত রাজ্যটাই ব্রিটিশরা জয় করে ফেলল এবং ব্রিটিশ-ভারতীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নিল। তখন থেকেই ব্রহ্মের ভাগ্য ভারতের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে; এখন আমরা বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচব, মরলেও একসঙ্গেই মরব।
- জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪১৬
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় ভাগ্য সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে ভাগ্য শব্দটি খুঁজুন।