বিষয়বস্তুতে চলুন

ভারত বিভাজন

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ভারত বিভাজন ছিল ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তি। এই ঘটনার মাধ্যমে দুটি স্বাধীন দেশ গঠিত হয়—ভারতপাকিস্তান। যে অধিরাজ্য তখন "ভারত" নামে পরিচিত ছিল, সেটাই বর্তমানে ভারত প্রজাতন্ত্র। আর যে অধিরাজ্য ছিল পাকিস্তান, সেটি আজ দুটি দেশে পরিণত হয়েছে—ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এই বিভাজনের সময় দুটি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছিল—বাংলাপাঞ্জাব। এই ভাগ করা হয়েছিল প্রতি জেলার হিন্দু বা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সীমারেখা নির্ধারিত হয়, সেটাই র‍্যাডক্লিফ রেখা নামে পরিচিত। এই বিভাজনের সঙ্গে আরও অনেক কিছু ভাগ করা হয়েছিল। যেমন—ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, রাজকীয় ভারতীয় নৌবাহিনী, ভারতীয় সিভিল সার্ভিস, ভারতীয় রেল এবং কেন্দ্রীয় কোষাগার। এগুলোর সম্পদ দুইটি নতুন দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এই বিভাজনের পরিকল্পনা ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭-এর মাধ্যমে করা হয়। এর ফলে ব্রিটিশ রাজের অবসান ঘটে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এর মধ্যরাতে আইনতভাবে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বশাসিত দেশ গঠিত হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • ভারতের বিভাজনের ফলে ভারত তার প্রাচীন সীমান্ত হারায়, যা এক সময় আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে 'সপ্তসিন্ধুুর দেশ'—অর্থাৎ সিন্ধুু উপত্যকা—ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই উপত্যকাই ছিল ভারতীয় সভ্যতার ঐতিহাসিক কেন্দ্র। এক সময় মুসলিম আক্রমণকারীরা একটু একটু করে তাদের চরমপন্থী মনোভাব থেকে সরে আসছিল। তারা ভারতের অন্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই, ইউরোপীয় (ব্রিটিশ) শাসকরা, দেশ ছাড়ার আগে, আবার সেই হিন্দু সভ্যতার জন্মভূমিকে ইসলাম ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের হাতে তুলে দেয়।
    • আলাঁ দানিয়েলু, ভারতের ইতিহাস (Histoire de l'Inde), পৃষ্ঠা ৩৫৫
  • ভারত স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু সে ঐক্য অর্জন করতে পারেনি; এই স্বাধীনতা আসলে খণ্ডিত। পুরনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন—হিন্দু-মুসলমান বিভাজন—তা এখন যেন স্থায়ী রাজনৈতিক বিভাজনে রূপ নিয়েছে। আশা করা যায়, কংগ্রেস এবং জাতি এই বিভাজনকে চিরস্থায়ী বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেবে না। এটিকে শুধুই সাময়িক একটি উপায় হিসেবে দেখবে। কারণ যদি এই বিভাজন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ভারত মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, এমনকি দেশ ভেঙ্গে পড়তে পারে। তখন গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা থেকেই যাবে। এমনকি নতুন করে বিদেশি আক্রমণের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। দেশের এই বিভাজন দূর করতেই হবে। উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যমেই এই বিভাজন দূর হবে। শান্তি ও সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে মানুষ বুঝবে। যৌথ ও সমন্বিত কার্যকলাপের প্রয়োজনে একতা গঠনের কোনো উপায় বা সংগঠন তৈরি হবে। এইভাবেই একতা আসতে পারে—তা যে রূপেই আসুক না কেন। তার নির্দিষ্ট রূপটি বাস্তবিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু মূল বিষয় নয়। তবে যেভাবেই হোক, এই বিভাজন দূর হতেই হবে। এবং হবেই। কারণ এই বিভাজন থেকে মুক্ত না হলে ভারতের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তা যেন না হয়।
    • শ্রী অরবিন্দ, ঘোষ, এ., নাহার, এস., এবং বিবর্তনমূলক গবেষণা ইনস্টিটিউট (Institut de recherches évolutives). (২০০০). ইন্ডিয়া'জ রিবার্থ: এ সিলেকশন ফ্রম শ্রী অরবিন্দ'জ রাইটিং, টাক্স এন্ড স্পিচেস. প্যারিস: বিবর্তনমূলক গবেষণা ইনস্টিটিউট।
  • স্নায়ু যুদ্ধের সময় নির্ধারিত নিয়তিবাদের ধারণা থেকে সবচেয়ে বড় বিচ্যুতি ঘটেছিল, একেই স্পষ্টভাবে বলা যায়, "উষ্ণ" বা সরাসরি যুদ্ধে। ১৯৪৫ সালের আগে, পরাশক্তিরা এত ঘন ঘন বড় যুদ্ধে লিপ্ত হতো যে এগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতির চিরন্তন বাস্তবতা বলেই মনে হতো। লেনিন তো এই যুদ্ধগুলোর ওপরই নির্ভর করে ছিলেন—তার মতে, এই যুদ্ধই পুঁজিবাদকে ধ্বংস করবে। কিন্তু ১৯৪৫ সালের পর, যুদ্ধ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শুধু পরাশক্তি ও অপেক্ষাকৃত ছোট শক্তিগুলোর মধ্যে। যেমন কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তান। অথবা ছোট ছোট শক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ, যেমন ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যেকার চারটি যুদ্ধ। আর ছিল ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। তার পাশাপাশি ছিল ইরান ও ইরাকের মধ্যে ১৯৮০-এর দশকজুড়ে চলা দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী এবং নিষ্পত্তিহীন সংঘর্ষ।
  • ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি—তাদের অধিবাসীদের জন্য—এক ধরনের ক্ষয়িষ্ণু বিজয় ছিল। কারণ, এই ঐতিহাসিক ঘটনার ফলে যে রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে, তার প্রতিফলন দেখা যায়— পগরোম (জাতিগত নিধনযজ্ঞ), পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার, দারিদ্র্য এবং দাঙ্গার মধ্যে। এইসব ধ্বংসাত্মক প্রভাব এখনো ভারতীয় উপমহাদেশে ভূকম্পনের মতো প্রতিধ্বনি তুলছে।
  • ভারত বিভাজনের বিরোধিতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আপত্তি ছিল অসংগতিপূর্ণ। আসলে, এই উগ্র হিন্দুত্ববাদই ছিল দেশ বিভাজনের অন্যতম প্রধান কারণ। এটি যেন - যে খুন করে, সেই খুনি নিজেই তার কুকর্ম দেখে ভীত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। যারা "অখণ্ড ভারত" নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিৎকার করেছেন—বর্তমান জনসংঘ ও তাদের পূর্বসূরিরা, যাদের হিন্দুত্বের চেতনা প্রকৃত হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্যুত— তারাই ব্রিটিশ এবং মুসলিম লীগের সঙ্গে মিলে দেশভাগে সহায়তা করেছিলেন। তারা কখনোই মুসলিম এবং হিন্দুদের একটি জাতির মধ্যে মিলিয়ে আনার কোনো কাজ করেননি। বরং তারা এমন সবকিছু করেছেন যাতে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ে। এই বিভাজন এবং বিচ্ছিন্নতার মনোভাবই দেশভাগের মূল কারণ। যারা একদিকে হিন্দু-মুসলিম দূরত্বকে প্রশ্রয় দেন, আবার একই সঙ্গে অখণ্ড ভারতের কথা বলেন, তারা হয় আত্মপ্রতারণা করছেন, নয়তো তারা সৎ নন।
  • ভারতে ১৯৪৭ সালে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘাত হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ ধর্মীয় ভিত্তিতে সংঘটিত। এই সংঘাতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এর আগে যখন মুসলমানরা হিন্দু-বৌদ্ধ প্রভাবাধীন অঞ্চলে বাস করতেন, তখন এই ধরনের গণহত্যা কখনো হয়নি। তাই অনুমান করা যায়, এই যুদ্ধের কারণ ছিল একটি স্বাধীন ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
  • ধর্মীয় নির্মূলীকরণের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৪৭ সালে। সেই সময় পশ্চিম পাঞ্জাব, পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানসিন্ধুু প্রদেশের কিছু অংশ থেকে হিন্দুদের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছিল। সরকারি হিসেবে হিন্দু ও মুসলমান—দুই পক্ষ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা সাধারণত ৬ লক্ষ বলা হয়। তবে অনুমান করা যায়, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ যেন আর না বাড়ে সেই কারণে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার প্রকৃত সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেখিয়েছিল। আসল সংখ্যা সম্ভবত এক থেকে দুই মিলিয়ন (১০ থেকে ২০ লক্ষ) হতে পারে। এই ঘটনার পরে, সাহিত্য ও ইতিহাস চর্চায় দেশভাগের হত্যাকাণ্ডগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক সময় দুই পক্ষের মধ্যে সমান দোষারোপের প্রবণতা দেখা গেছে। অবশ্য, আপনি নিদর্শন হিসেবে মুসলিমদের নিষ্ঠুরতার বিপরীতে হিন্দু বা শিখদের দ্বারা মুসলিমদের ওপর সংঘটিত সহিংসতার উদাহরণও দেখতে পাবেন। তবুও সামগ্রিক সত্য হলো— দেশভাগ এবং তার সঙ্গে জড়িত সকল ভয়াবহতা মূলত মুসলিম লীগের একতরফা সিদ্ধান্তেই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল অবাঞ্ছিত হিন্দু ও শিখদের ওপর। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— যেসব অঞ্চল পাকিস্তান হওয়ার কথা ছিল, সেখানে হিন্দুদের ওপর হত্যাকাণ্ড বা জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো নৃশংসতা শুরু হয়েছিল বহু আগেই। তখনও ভারতের দিক থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পাল্টা সহিংসতা শুরু হয়নি।
    • কোয়েনরাড এলস্ট: "রিলিজিয়াস ক্লিনজিং অফ হিন্দুজ", অগ্নি কনফারেন্স, দি হেগ এবং দি প্রব্লেম উইথ সেকুলারিজম (২০০৭) থেকে উদ্ধৃত।
  • তবে ইতিহাস কখনো কখনো অদ্ভুত পথে চলে। গতকালের ধ্বংসলীলাই আজকের আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। হিন্দুধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে, দেশভাগ শেষ পর্যন্ত এক প্রকার আশীর্বাদই প্রমাণিত হয়েছে— এটি যেন হিন্দুধর্মের টিকে থাকার জন্য শেষ সুযোগ ছিল।
    • কোয়েনরাড এলস্ট, বিজেপি বনাম হিন্দু পুনরুত্থান (BJP vis-à-vis Hindu Resurgence) (১৯৯৭)
  • ব্রিটেনের লেবার সরকার তখন তাদের বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের দায়ভার ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু তারা যেভাবে তাড়াহুড়ো করে এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় এই অঞ্চলগুলো ছেড়েছিল, তা দক্ষিণ এশিয়ামধ্যপ্রাচ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার সূচনা ঘটায়। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের পর হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে এক বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই সহিংসতা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে বা উদ্বাস্তুতে পরিণত করে। এবং এর ফলে গড়ে ওঠে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তরসূরি রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান। এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ, বিশেষ করে কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব,এই অঞ্চলটিকে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার মধ্যে ফেলে রাখে।
    • ক্যারোল সি. ফিঙ্ক, দি কোল্ড ওয়ার: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল হিস্ট্রি (২০১৭)
  • ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কিছুদিন পরই গান্ধী কার্যত দেশভাগ মেনে নেন, এমনকি তাঁর নিজ সমর্থকদের সামনেও। নিজের সম্পাদিত পত্রিকায় তিনি লেখেন: “যদি মুসলমানদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করে যে তারা এক পৃথক জাতি, যাদের হিন্দু ও অন্যান্যদের সঙ্গে কোনো মিল নেই— তাহলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাদের অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করতে পারবে না। আর যদি তারা এই ভিত্তিতে ভারতের বিভাজন চায়, তবে দেশভাগ অনিবার্য— যদি না হিন্দুরা এই বিভাজনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।”
    • মহাত্মা গান্ধী, উদ্ধৃত: কোয়েনরাড এলস্ট, হোয়াই আই কিলড মহাত্মা: আনকভারিং গডসে'জ ডিফেন্স, ২০১৮, নিউ দিল্লী: রুপা, ২০১৮ ।
  • [দেশভাগের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখদের ওপর সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গান্ধী এই ভাষণে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে বলেন:] “যদি মুসলমানরা হিন্দুদের হত্যা করতে চায়, তাহলে আমি হিন্দুদের বলব—হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করো। যদি আমি ছুরিকাঘাতে মারা যাই এবং মৃত্যুর আগে আমার মনে হয় আমার ছেলে প্রতিশোধ নিক— তাহলে আমি প্রকৃতই পাপী হব। আমাকে মরতে হবে—বিদ্বেষহীন মনে। তোমরা হয়তো বলবে—তাহলে কি সব হিন্দু ও শিখ মারা যাবে? আমি বলব—হ্যাঁ, তবে সেই শহীদত্ব ব্যর্থ হবে না।”
    • মহাত্মা গান্ধী. (দি কালেক্টেড ওয়ার্কস অফ মহাত্মা গান্ধী, খণ্ড ৮৭, পৃ. ৩৯৪–৩৯৫) উদ্ধৃত: কোয়েনরাড এলস্ট, (২০১৮). হোয়াই আই কিলড মহাত্মা: আনকভারিং গডসে'জ ডিফেন্স, ৪ এপ্রিল ২০১৮
  • আমি এটা জেনে খুবই দুঃখিত যে মানুষ পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, লাহোরে অমুসলিমরা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই—এরকম হওয়া উচিত নয়। যদি তোমরা মনে করো লাহোর মৃত অথবা মরতে বসেছে, তাহলে পালিও না— বরং সেই মরতে থাকা লাহোরের সঙ্গে মরো। ভয় পাওয়া মানে মৃত্যুর আগেই মরে যাওয়া। এটা কোনো বীরত্বের নিদর্শন নয়। যদি আমি শুনি পাঞ্জাবে মানুষ মরেছে বীরের মতো, কাপুরুষের মত নয়— তাহলে আমি দুঃখ পাব না।… আমি কোনো পতাকাকে জোর করে সম্মান জানাতে বাধ্য নই। যদি সেই কারণে কেউ আমাকে হত্যা করে— তাহলে আমি তার প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করব না।বরং প্রার্থনা করব—যাতে তার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়।”
    • মহাত্মা গান্ধী. ৬ আগস্ট ১৯৪৭,. (হিন্দুস্তান টাইমস, ৮ আগস্ট ১৯৪৭, মহাত্মা গান্ধীর সংগৃহীত কাজ, খণ্ড ৮৯, পৃ. ১১) উদ্ধৃত: কোয়েনরাড এলস্ট (২০১৮). হোয়াই আই কিলড মহাত্মা: আনকভারিং গডসে'জ ডিফেন্স, ২০১৮, নিউ দিল্লী: রুপা, ২০১৮ ।
  • যদি পাঞ্জাবের সমস্ত মানুষ, এমনকী শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত কাউকে না মেরে মারা যায়, তাহলে পাঞ্জাব অমর হয়ে থাকবে।… নিজেদেরকে অহিংস, স্বেচ্ছাপ্রদত্ত আত্মবলিদান হিসেবে অর্পণ করো।”
    • মহাত্মা গান্ধী। উদ্ধৃত: ল্যারি কলিন্স ও ডমিনিক লাপিয়ের, ফ্রিডম এট মিডনাইট
  • পাকিস্তানের জন্ম হয় ভয়াবহ হিংসা ও বর্ণনাতীত বাস্তুচ্যুতির মধ্যে দিয়ে। প্রায় ৬৫ লক্ষ মুসলমান ভারত থেকে পাকিস্তানে যায়, অন্যদিকে ৪৭ লক্ষ হিন্দুশিখ পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে আসে। ব্রিটিশ শাসনের প্রতিক্রিয়ায়, আবার হিন্দু সংখ্যাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও, ভারতে সক্রিয় ও পুনর্জাগরণমূলক ইসলামের উত্থান ঘটে। “পাকিস্তান” নামটি নতুন রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে তৈরি হলেও, উর্দু ভাষায় এর অর্থ “পবিত্র ভূমি।” অনেকেই চেয়েছিল এ দেশকে আরও “বিশুদ্ধ” করতে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান দেশটিকে একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং অমুসলিমদের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অধিকার নিষিদ্ধ করে। ১৯৬০-এর দশকে শাসকেরা ভারতবিরোধী আবেগ জাগাতে ধর্মকে ব্যবহার করে, যার ফলে হিন্দুদের প্রতি অসহিষ্ণুতা আরও বেড়ে যায় এবং মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও, পাকিস্তানকে তখন অনেকেই ইসলাম ধর্মের দুর্গ বা ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরতে থাকে।
    • কিম ঘাত্তাস, ব্ল্যাক ওয়েভ: সৌদি আরাবিয়া, ইরান, এন্ড দি ফর্টি ইয়ার রাইভালরি দ্যাট আনরেভেল্ড কালচার, রিলিজিওন এন্ড কালেকটিভ মেমোরি ইন দি মিডিল ইস্ট। (২০২)
  • হিন্দুরাই সবসময় দোষী— যে-ই আগ্রাসন করুক না কেন, যে-ই আসল অপরাধী হোক না কেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে, হিন্দুদেরই দোষী বানানো হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের (১৮৮৫–১৯৪৭) ইতিহাসকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে হিন্দুদের সেই 'ট্র্যাজেডির' মূল কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ভারতের তথাকথিত 'ধর্মনিরপেক্ষ' চিন্তাবিদদের এতে কিছুই এসে যায়নি— যদিও হিন্দুরা, এবং তাদের সংগঠনগুলি যেমন হিন্দু মহাসভা, আর্য সমাজ, আর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আর.এস.এস), পাকিস্তানের দাবির বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের সঙ্গে প্রাণপণে লড়াই করেছিল। এই সত্যও তাদের কাছে গুরুত্বহীন ছিল যে— ১৯৪৬ সালে, ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের ৯৭% মুসলমান দেশ ভাগের পক্ষে মত দিয়েছিল। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি মুসলিম লীগের দাবির পক্ষে তাত্ত্বিক ও পরিসংখ্যানভিত্তিক সমর্থন জুগিয়েছিল। মুসলমানদের বা ইসলামকে সমালোচনা করলে সমাজতন্ত্রীরা তখন হিন্দুদেরই আক্রমণ করত। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসই ১৯৪৭ সালের জুন মাসে মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশভাগ মেনে নিয়েছিল। আর মহাত্মা গান্ধী, যিনি দীর্ঘদিন হিন্দুদের আশ্বস্ত করে এসেছিলেন— যে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আর বঙ্গভূমির মতো অঞ্চল ভাগ হবে তার মৃতদেহের উপর দিয়েই— শেষ মুহূর্তে হতাশায় হাত তুলে দিয়েছিলেন। এই সমস্ত ঘটনার বর্ণনায় নাৎসিদের সেই যুক্তির মতো ধাঁচ ছিল— যেখানে ভেড়ার ওপরই দোষ চাপানো হয়, যে সে নিজেই নেকড়েকে উসকে দিয়েছে!
    • এস. আর. গোয়েল, সীতা রাম (সম্পাদনা) (১৯৯৮). ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন: সেকুলার থিওক্রেসি ভার্সেস লিবারাল ডেমোক্রেসি-এর ভূমিকায়।
  • এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে, মহাত্মা গান্ধী না থাকলেও হিন্দু সমাজ দেশভাগ ঠেকাতে পারত। অন্যদিকে, প্রচুর প্রমাণ আছে যে— হিন্দু সমাজ যেভাবেই হোক ব্যর্থ হতোই।
    • এস. আর. গোয়েল: পার্ভার্শন অফ ইন্ডিয়া’জ পলিটিকাল পারল্যান্স, উদ্ধৃত: কুয়েনরাড এলস্ট (২০১৮). হোয়াই আই কিলড মহাত্মা: আনকভারিং গডসে'জ ডিফেন্স, ২০১৮, নিউ দিল্লী: রুপা, ২০১৮।
  • গত এক হাজার বছরে, ভারতের বহু অংশ মুসলমানদের এবং পরে ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের জাতি মূলনীতির ক্ষেত্রে কখনও মাতৃভূমির কোনও অংশের উপর সার্বভৌম অধিকারে আপোস করেনি। ফলে, আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে গেছি—আগ্রাসীদের তাড়িয়ে সেই সমস্ত অঞ্চল মুক্ত করতে। ইতিহাস আমাদের বলে, শেষ পর্যন্ত আমরা বিদেশি দখলদারদের হাত থেকে সমস্ত ভূখণ্ডই মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু দেশভাগ এই ধারাবাহিক সংগ্রামের এক বিপরীত রূপ এনে দিল। প্রথমবারের মতো, দেশভাগ আমাদের পক্ষ থেকে বিদেশি শক্তিকে নৈতিক ও আইনগত স্বীকৃতি দিয়ে দিল দেশের একটি অংশের উপর অধিকার স্থাপনের। এর মাধ্যমে এক হাজার বছরের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিসংগ্রামের এক লজ্জাজনক, অপমানজনক পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হলো। এইভাবে দেশভাগ হয়ে দাঁড়াল একটি নীতিগত আত্মসমর্পণ। কিন্তু দেশভাগ নিয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যাগুলিতে এই দিকটির একটিও উল্লেখ থাকে না। বরং, দেশভাগকে সাধারণত একটি দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে স্বীকার করলেও, একে তখনকার বাস্তবতায় অবশ্যম্ভাবী ও স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র উপায় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
    • এইচ. ভি. শেশাদ্রি। দ্য ট্র্যাজিক স্টোরি অফ পার্টিশন, ব্যাঙ্গালুরু জাগরণ প্রকাশনা ১৯৮২, পৃ. ১২
  • বিশ্বের অনেক দেশের ইতিহাস আমাদের এই বেদনাদায়ক শিক্ষা দিয়েছে যে—দেশের অভ্যন্তরের শত্রুদের দ্বারা জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হুমকি বহিরাগত আক্রমণকারীদের তুলনায় অনেক বেশি ভয়ানক হতে পারে। আমরা কি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, সব পাকিস্তানপন্থী মানুষ দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে গেছে? প্রথম থেকেই পাকিস্তানের দাবি তোলার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মুসলমানরা, বিশেষত উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু দেশভাগের পরও তারা এই দেশেই রয়ে গেছে। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ তার নির্বাচনী প্রচারে স্পষ্টভাবে পাকিস্তান সৃষ্টির কথা বলেছিল। কংগ্রেসও সর্বভারতীয় পর্যায়ে কিছু মুসলিম প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই মুসলিমরা কংগ্রেস প্রার্থীদের বাদ দিয়ে মুসলিম লীগের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিল। শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছিল একটি ব্যতিক্রম। এই তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট, যারা এখনো ভারতে আছে, সেই কোটি কোটি মুসলমানও তখন পাকিস্তানের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো—তারা কি পরবর্তীতে নিজেদের মানসিকতা বদলেছে? ১৯৪৬–৪৭ সালে ঘটে যাওয়া যে ভয়াবহ দাঙ্গা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য তাদের মনোভাব দায়ী ছিল, সেই শত্রুতা কি আজ থেমে গেছে? আমরা যদি ভেবে নিই যে পাকিস্তান তৈরি হওয়ার পর হঠাৎ করেই তারা দেশপ্রেমিক হয়ে উঠেছে—তবে সেটা হবে আত্মঘাতী ভ্রান্তি। উল্টোভাবে, পাকিস্তান তৈরি হওয়াতে এই আশঙ্কা শতগুণ বেড়ে গেছে। কারণ পাকিস্তান এখন হয়ে উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের জন্য একটি ঘাঁটি।
    • এম. এস. গোলওয়ালকর, বাঞ্চ অফ থটস
  • এতে কোনও সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্যে সহিংসতারই বিজয় ঘটেছিল...
    • আর. সি. মজুমদার। হিস্ট্রি অফ দ্য ফ্রিডম মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া: খণ্ড ৩-এর ভূমিকায়: আর. সি. মজুমদার, ফার্মা কে. এল. মুখোপাধ্যায়, কলকাতা. উদ্ধৃত: এস. বালাকৃষ্ণ, সেভেন্টি ইয়ার্স অফ সেকুলারিজম
  • ১৯৬০ সালে আর. সি. মজুমদার লেখেন: “ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্যায়ে ভারতীয়দের রাজনৈতিক প্রয়োজন ছিল হিন্দু ও মুসলিম—এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরি করা। এই লক্ষ্যে ইতিহাসের প্রকৃত পার্থক্যগুলোকে আড়াল করে, একটি কল্পিত ইতিহাস রচনা করা হয় যাতে দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্ককে বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ বলে দেখানো যায়। ...কিন্তু ইতিহাস ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের খুশির তোয়াক্কা করে না। ইতিহাসের সর্বোচ্চ নীতি হলো—বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ থেকে যা পাওয়া যায়, তা যথাসম্ভব সত্যের ভিত্তিতে তুলে ধরা। এই নীতির বাস্তব জীবনে গভীর প্রভাব রয়েছে, কারণ অজ্ঞানতা কখনও প্রকৃত আনন্দ বা শান্তি আনে না—না ব্যক্তির জন্য, না জাতির জন্য। এই নির্দিষ্ট বিষয়ে, ইতিহাসে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতা—যা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু মানুষ ছড়িয়েছে—সম্ভবত ভারত বিভাগের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। কোনও সমস্যার কার্যকর সমাধান তখনই সম্ভব, যখন তার পেছনের প্রকৃত ঘটনাগুলি জানা ও বোঝা যায়। সেটিকে অবহেলা করে যদি আমরা পাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে কল্পনার আশ্রয় নিই—তবে সেটা হবে আত্মপ্রবঞ্চনা।”
    • আর. সি. মজুমদার, সীতারাম গোয়েল, দ্য ক্যালকাটা কুরআন পিটিশন (১৯৮৬)
  • “পাকিস্তান সৃষ্টি এই সমস্যার শেষ নয়,” ১৯৪৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন যে পাকিস্তান ছিল 'শেষ নয়, বরং ভারতীয় মুসলমানদের সাম্প্রতিকতম দাবি মাত্র’। তিনি ভারতের ভেতরে একাধিক 'মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল' গঠনের সুপারিশ করেন। মালাপ্পুরাম জেলার জন্ম, সেই ধারাবাহিক দাবিরই একটি চিহ্ন... একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রাক্কালে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি যাদের ধর্মে অনুমোদিত, তাদের জন্য এক-পত্নীত্বের নিয়ম শিথিল করা হয়কিছু সংগঠনের চাপের ফলে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।
    • হামিদ দালওয়াই, উদ্ধৃত: বি. মাধোক, ইন্ডিয়ানাইজেশন, এবং কোয়েনরাড এলস্ট, ডিকলোনাইজিঙ দি হিন্দু মাইন্ড: আইডিওলজিক্যাল ডেভলপমেন্ট ইফ হিন্দু রিভাইভ্যালিজম। নতুন দিল্লি: রুপা.পৃ. ৩৬৪-৩৬৬
  • এটি নিঃসন্দেহে সত্য যে, পার্থক্য না মিটলেও, বরং পাকিস্তান সৃষ্টি মুসলিম সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল যে, যদি দেশ ভাগ না হতো, তাহলে খুব সহজে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কারণ, মুসলিমরা চেয়েছিল একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতের মধ্যে থেকেও হিন্দুদের সমান রাজনৈতিক ক্ষমতা (প্যারিটি)। আর এ দাবিটি ছিল সম্পূর্ণ অবাস্তব।
    • হামিদ দালওয়াই, মুসলিম পলিটিক্স, পৃ. ১১৩, কোয়েনরাড এলস্ট, ডিকলোনাইজিঙ দি হিন্দু মাইন্ড: আইডিওলজিক্যাল ডেভলপমেন্ট ইফ হিন্দু রিভাইভ্যালিজম। নতুন দিল্লি: রুপা.পৃ. ৩৬৮
  • তখন নতুন মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখ সংখ্যালঘুদের থাকার কোনও অধিকার ছিল না। এই ‘সংখ্যালঘুত্ববাদ’—মানে হিন্দু ও শিখদের অস্তিত্ব—ছিল ‘মিল্লতের প্রধান শত্রু’, যেমনটা বলেছিলেন পাকিস্তান শব্দের জনক এবং মুসলিম লীগের এক প্রাথমিক বুদ্ধিজীবী ও নেতা রেহমত আলি। পাকিস্তান গঠনের মূল ধারণা অনুযায়ী, এটি বাস্তবের চেয়ে অনেক বড় হবার কথা ছিল—এতে কাশ্মীর, আসামপূর্ব বাংলার পাশাপাশি ক্ষিণে হায়দ্রাবাদমালাবার অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। ভারতের যা কিছু অবশিষ্ট থাকত, তাকেই বলা হতো ‘দিনিয়া’—যা ইসলামি তত্ত্ব অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।
    • প্রাককথনে রাম স্বরূ উদ্ধৃত: গুরবচন সিং টি.এস., ও রাম স্বরূপ (১৯৯১).মুসলিম লীগ এট্যাক অন শিখস অ্যান্ড হিন্দুজ ইন দ্য পাঞ্জাব ১৯৪৭।
  • মানসেরা ও আরও কিছু স্থানে (উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) ক্যাম্পে নিয়মিত হিন্দু মেয়েদের বিক্রি করা হতো।
    • কিরপাল সিংহ, সিলেক্ট ডকুমেন্টস অন পার্টিশন অফ পাঞ্জাব-১৯৪৭, পৃ. ৬৩৯ : পাঞ্জাব, হরিয়ানা, এবং হিমাচল-ভারত এবং পাঞ্জাব-পাকিস্তান, ন্যাশনাল বুক শপ, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৬৩৯
  • ১৯৪৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে, যখন দাঙ্গা সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছেছিল, তখন উদ্বেগজনক সংখ্যায় ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে উন্মত্ত জনতা যেন কোনও সীমা মানছিল না। দাঙ্গার এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, অনেক জায়গায়—পরিকল্পিতভাবেই হোক বা এলোমেলোভাবে—নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করা হচ্ছিল, বিশেষ করে সেই জায়গাগুলোতে যেখানে বিশাল সংখ্যক উদ্বাস্তুরা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় জড়ো হয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, কিরপাল সিংহ লিখেছেন যে কামোকে রেলপথে দুটি ট্রেন একে অপরকে অতিক্রম করছিল—একটিতে ছিল ২৬০ জন উদ্বাস্তু এবং অপরটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনারা বুঝতে পারার পর যে উদ্বাস্তুদের ট্রেনটিতে হিন্দুরা রয়েছে, তারা সেই ট্রেনটিকে আক্রমণ করে। বেশিরভাগ পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং ৫০ জন নারী ও কিশোরীকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়। পূর্ববঙ্গেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। আনসার বাহিনী—যারা নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল—তারা হিন্দু নারীদের উপর হামলা চালায় ও অপহরণ করে। একজন সাক্ষাৎকারদাতা জানিয়েছেন, তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করে আসার সময় ট্রেনে ছিলেন এবং আত্মরক্ষার জন্য শৌচালয়ে লুকিয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি অপহৃত হননি, তবে তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, কিভাবে মেয়েদের ট্রেন থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছিল। কামোকে, গুজরানওয়ালা জেলার গণহত্যা সম্পর্কে এক ভারতীয় কর্মকর্তা লিখেছেন, “এই নারকীয় ঘটনার সবচেয়ে লজ্জাজনক দিক ছিল যুবতী মেয়েদের পুলিশ বাহিনী, ন্যাশনাল গার্ডস (একটি ইসলামী-ফ্যাসিবাদী সংগঠন), ও স্থানীয় দুষ্কৃতীদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া। কামোকে রেলস্টেশনের কাছে একটি খোলা জায়গায় স্টেশন হাউস অফিসার দিলদার হুসেন মেয়েদের জড়ো করেন এবং জনতাকে যা খুশি তা করতে বলেন। হত্যাকাণ্ডের পরে মেয়েদের এমনভাবে ভাগ করে দেওয়া হয় যেন তারা মিষ্টির প্যাকেট!” পরে ইস্ট পাঞ্জাব পুলিশের ও লিয়াজঁ সংস্থার চেষ্টায় কিছু মেয়ে কামোকে, এমিনাবাদ ও আশপাশের গ্রামগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়। কামোকে ট্রেন থেকে অপহৃত কমপক্ষে ৭০ জন মেয়ের একটি তালিকা জেলা লিয়াজঁ অফিসার পুলিশের হাতে তুলে দেন। সন্দেহ করা হয় যে এই মেয়েদের অনেককেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বা গোপনে কোথাও আটকে রাখা হয়েছে।
    • বিনা ডি'কোস্টা, ন্যাশন বিল্ডিং, জেন্ডার অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইমস ইন সাউথ এশিয়া, রাউটলেজ, 2011, ২০১১, পৃ. ৫৭–৬০. পার্টিশন অফ ইন্ডিয়া, ১৯৪৭. [১]
  • উপরে যেমন বলা হয়েছে, পাকিস্তান গঠনের প্রাথমিক ধারণাটি ছিল যে এটি গঠিত হবে পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, সিন্ধু, কাশ্মীর, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বালুচিস্তান নিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই পরিকল্পনার একটি সংশোধিত রূপ প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় যে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি পূর্ব দিকে আসাম ও বাংলা এবং দক্ষিণে হায়দ্রাবাদ ও মালাবারকেও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার কথা পরিকল্পনা করা হয়। এইভাবে উত্তর-পশ্চিমে, পূর্বে এবং দক্ষিণে—ভারতের চারপাশে মুসলিম শক্তির বিস্তৃত ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যেন অ-মুসলিম ভারতের চারপাশ ঘিরে ফেলা যায়। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে আরও ছোটো কিন্তু গুরুত্বহীন নয় এমন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিল—যেমন ইউনাইটেড প্রভিন্সেস (বর্তমান উত্তর প্রদেশ), রাজপুতানার কেন্দ্রস্থলে এবং বিহার|বিহারে। ফলে ভারতের শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোর মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র ভারতের মুসলমানদের জন্য আলাদা আলাদা মুসলিম-অধিকৃত রাষ্ট্র তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। এইভাবে ভারতকে অনেকগুলো নতুন মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্রে ভাগ করে দেওয়ার ছক আঁকা হয়েছিল।
  • সর্দার আবদুর রব নিস্তার, যিনি তখন পাকিস্তান সরকারের একজন সদস্য ছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন — “পাকিস্তান শুধু আমাদের নিজেদের রক্ত প্রবাহের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে এবং প্রয়োজন হলে বা সুযোগ এলে অন্যদের রক্ত ঝরিয়েও অর্জন করা যেতে পারে। মুসলমানরা অহিংসার অনুসারী নয়।”
  • এর পরিণতিস্বরূপ, ১৯৪৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে, প্রায় ১০ লক্ষ হিন্দু ও শিখ পশ্চিম পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলা, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, বালুচিস্তান, লাহোর শহর এবং অমৃতসর থেকে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিলেন। তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল পাঞ্জাব সরকার, পাঞ্জাবের শিখ রাজ্যগুলি এবং হিন্দু মহাসভা ও শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির মতো সংগঠনগুলিকে। এই সময়ে মুসলিম উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। যারা ছিলেন, তারা প্রধানত এসেছিলেন অমৃতসর থেকে — কেবল সেখানেই আগস্ট পর্যন্ত হিন্দু ও শিখরা মুসলিম আক্রমণের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।
  • একজন মুসলমানের অধিকার হওয়া উচিত পাঁচজন হিন্দুর সমান — অর্থাৎ, প্রতিটি মুসলমানের মূল্য পাঁচ হিন্দুর সমান।
    যতক্ষণ না পাকিস্তান এবং ভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিচের পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত:
    (ক) হিন্দুদের মালিকানাধীন সব কারখানা ও দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া, (খ)ধ্বংস করা ও লুট করা। (গ) এবং লুটের সম্পদ মুসলিম লিগ অফিসে জমা দেওয়া।
    (ঘ) হিন্দুদের ধীরে ধীরে হত্যা করা এবং তাদের সংখ্যা হ্রাস করা।
    (ঙ) সব মন্দির ধ্বংস করে ফেলা।
    (চ) মুসলিম লিগের সব সদস্যদের কাছে অন্তত একটি ছোট অস্ত্র — যেমন পকেট ছুরি — সর্বদা থাকা উচিত, যাতে তারা হিন্দুদের হত্যা করতে পারে এবং তাদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে।
    (জ) হিন্দু নারীদের ধর্ষণ, অপহরণ ও জোরপূর্বক মুসলিম করে তোলা উচিত, ১৮ অক্টোবর ১৯৪৬ থেকে এই কর্মসূচি শুরু করা উচিত।
    (ঝ) হিন্দু সংস্কৃতি ধ্বংস করে দেওয়া উচিত।
    (ঞ) মুসলিম লিগ সদস্যদের সবসময় হিন্দুদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে হবে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্যভাবে তাদের বয়কট করতে হবে।
    • মুসলিম লিগের সদস্যদের দ্বারা মুসলমানদের মধ্যে প্রচারিত প্রচারপত্র থেকে উদ্ধৃত।
      উদ্ধৃত: খোসলা, জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ৩১৩।
  • এখন মুসলিম শাসন চলছে। পাকিস্তান গঠিত হয়েছে। আমরা শাসক, আর হিন্দুরা প্রজা।" "শিখদের পাকিস্তানী পতাকা ওড়াতে হবে… এবং আমাদের খরাজ (ভূমি কর) ও অন্যান্য কর দিতে হবে।"
    • জাহান খান, একজন বিধায়ক, মুসলিম লিগের বিশিষ্ট কর্মী ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য।
      উদ্ধৃত: খোসলা, জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ঘটনাবলীর একটি সমীক্ষা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১৫৮-১৫৯

ভারত বিভাগের সময় সহিংসতা ও গণহত্যা সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]
  • ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে, আমি পূর্ব পাঞ্জাবে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কারণ আমাকে ফিরোজপুরে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তারিখটি আমার ঠিক মনে নেই, কিন্তু ২৩, ২৪ বা ২৫ আগস্টের কোনো একদিন বিকেল ৪টার দিকে আমি মন্টগোমেরি জেলার ডেপুটি কমিশনার রাজা হাসান আখতার (পি.সি.এস.)-এর আদালত কক্ষে একটি যৌথ ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশ সভায় উপস্থিত ছিলাম। উক্ত বৈঠকে, ডেপুটি কমিশনার পরিষ্কারভাবে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দেন — তারা যেন কোনো শিখকে রেহাই না দেয়, এবং যেখানেই শিখদের দেখবে, সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। তবে হিন্দুদের আপাতত কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি। আমি সেই সভায় উপস্থিত একমাত্র অ-মুসলিম ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম...
    • শ্রী পি. এল. সোনধি, এম.আই.সি., ফিরোজপুর, এই বিবৃতি প্রদান করেন। এই বিবৃতিটি রেকর্ড করা হয় শ্রী বনওয়ারিলাল (ডেপুটি কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারী) ও শ্রী মোহন সিং বাত্রা (এম.আই.সি., ফাজিলকা)-এর উপস্থিতিতে শপথ।
    • তালিব, এস. জি. এস. (১৯৫০)। মুসলিম লিগ কর্তৃক পাঞ্জাবে শিখ ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, ১৯৪৭। অমৃতসর: শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি। [১৪] [১৫] [১৬] ২৩২-২৩৩
  • “তোমাকে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে চলে গেলেই ভালো। যদি তুমি এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করো, তাহলে পরিণতির জন্য দায়ী থাকবে শুধুমাত্র তুমি নিজেই। জনগণ তোমাকে এখানে 'পঞ্চম স্তম্ভের গুপ্তচর' হিসেবে দেখতে চায় না। আর এই অবস্থায় সরকারের কোনো সুরক্ষা চাওয়া বোকামি হবে, কারণ এখন তাতে কোনো কাজ হবে না।
    • এক 'পাকিস্তান ছাড়ো' সতর্কবার্তার উদাহরণ। অ্যান্টি ফিফথ কলামিস্ট অর্গানাইজেশন, লাহোর। একটি অনুলিপি প্রেরিত হয়েছিল পূর্ব পাঞ্জাব সরকারের মুখ্যসচিবের (ক্যাম্প: জলন্ধর) কাছে অবগতির জন্য। নোটিশ নম্বর: ১১৯/সিএলও/৩, তারিখ: ২৯-৯-১৯৪৭ স্বাক্ষরিত: রাম রতন। উদ্ধৃত: তালিব, এস. জি. এস. (১৯৫০)। মুসলিম লিগ কর্তৃক পাঞ্জাবে শিখ ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, ১৯৪৭. অমৃতসর: শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি। [১৭] [১৮] [১৯] ২৩৪
  • শেখুপুরার হিন্দু ও শিখেরা সম্ভবত রাওয়ালপিন্ডি ও মুলতানের পরেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। পাকিস্তানি ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং পরিকল্পিত নৃশংস হত্যার ঝড়ে তাদের ওপর যে আঘাত নেমে এসেছিল, তা ছিল হঠাৎ ও প্রবল। মাত্র দুই দিনের মধ্যেই সেখানে প্রায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ মানুষ নিহত হয়। শেখুপুরায় মুসলিম লিগ কর্মীরা, বেসামরিক কর্মকর্তারা, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলিতভাবে হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল, তা সম্ভবত মানব ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। এই ষড়যন্ত্র এত বড় পরিসরে ও পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সংগঠিত হয়েছিল যে তা দৃষ্টান্তহীন। শেখুপুরার গ্রামাঞ্চলে, লাহোরের মতোই, হিন্দু ও শিখদের খুঁজে বের করে হত্যা করার জন্য তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হয়। তাদের নিজেদের ঘর থেকে বের করে এনে গণহারে হত্যা করা হয়। জেলাজুড়ে মুসলমানদের আক্রমণের মুখে হিন্দু ও শিখদের ওপর যে নিষ্ঠুরতা চালানো হয়, তার ব্যাপ্তি ও নির্মমতা কল্পনাও করা কঠিন।
  • রাইবিন্ড, লাহোর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এখানে দুটি প্রধান রেলপথ একে অপরকে অতিক্রম করে—একটি লাহোর-ফিরোজপুর-দিল্লি লাইন এবং অপরটি লাহোর-মুলতান-করাচি লাইন। এই স্থানটি ছিল লাহোর, মন্টগোমারি, মুলতান এবং সিন্ধ থেকে আসা হিন্দু-শিখ উদ্বাস্তুদের ট্রেনগুলোর আগমনের একটি প্রধান কেন্দ্র। এই জায়গায় বারবার ট্রেনের ওপর হামলা হয়। যারা বেঁচে ফিরেছেন, তারা জানান—রাইবিন্ডে পৌঁছেই তারা রেললাইনের ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত শত শিখের মৃতদেহ দেখতে পান। মুসলিম গুন্ডা, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলে প্রায় কখনোই কোনো ট্রেনকে হামলার হাত থেকে রেহাই দিত না—বিশেষ করে যদি সেই ট্রেনে হিন্দু-শিখদের রক্ষা করার মতো শক্তিশালী নিরাপত্তা না থাকত। এই ধরনের হামলা বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত খুবই সাধারণ ছিল। ধারণা করা হয়, ১৫ আগস্টের পর রাইবিন্ডে কমপক্ষে ১২টি ট্রেনে হামলা হয়েছিল এবং হাজার হাজার হিন্দু ও শিখ নিহত হয়। আর কোনো রেলওয়ে স্টেশনে এত বড় রক্তপাত ঘটেনি। এর মধ্যে একটি ট্রেনে ৪ঠা সেপ্টেম্বর হামলা হয়, যেখানে ৩০০ জন হিন্দু ও শিখকে হত্যা করা হয়। (১৩২-১৩৩) ... ওয়াজিরাবাদ, একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন, যা লাহোর-রাওয়ালপিন্ডি-পেশোয়ার লাইন এবং জম্মু-শিয়ালকোট লাইনের সংযোগস্থল। এই স্থানটিও কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল হিন্দু-শিখ উদ্বাস্তুদের ওপর ট্রেন হামলা এবং শহর ও স্টেশনে ব্যাপক গণহত্যার জন্য। (১৮১)... এটি ছিল একসময় হিন্দু-শিখ ব্যবসায়ীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কিন্তু রাইবিন্ডের মতো, এখানেও উদ্বাস্তু ট্রেনের ওপর হামলার সংখ্যা ছিল অগণিত।(১৮৫)
  • কাসুর অঞ্চলের গ্রামাঞ্চল ছিল মূলত শিখ অধ্যুষিত, যদিও শহরের ভেতর মুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৭ই আগস্ট যখন জানা যায় যে কাসুর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তখন মুসলিমরা অমুসলিমদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। কাসুর অশান্ত হয়ে পড়ায় পাকিস্তান থেকে ভারতের দিকে অমুসলিমদের একমাত্র পালানোর পথও বন্ধ হয়ে যায়। রেলস্টেশনে ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত হয়। শহরের ভেতর এক গলি থেকে আরেক গলিতে হিন্দু ও শিখদের ঘরবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালানো হয়। ঘরবাড়ি, দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শহর এবং শহরতলিতে মাত্র দু’দিনে শত শত হিন্দু ও শিখ নিহত হন। কিছু অমুসলিম ব্যক্তি প্রাণে রক্ষা পেয়ে পালাতে সক্ষম হন, কারণ অমৃতসর জেলার ভারতীয় সীমান্ত ছিল কাছাকাছি, কেম করণ দিক দিয়ে। কিন্তু ফিরোজপুর দিক দিয়ে খুব কম মানুষ পালাতে পেরেছিলেন, কারণ পথে যে শতদ্রু নদীর সেতু পড়ত, তা মুসলিম সৈন্যদের দখলে ছিল। তারা অমুসলিমদের দেখলেই গুলি চালাত। অমুসলিমদের সম্পত্তিতে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। স্কুল, সিনেমা হল, দোকান, কারখানা—কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। যদিও কারফিউ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু অন্যান্য স্থানের মতো এখানেও তা মুসলিম গুন্ডাদের কাজ সহজ করে তোলে। হিন্দু ও শিখরা ঘর থেকে বের হতে না পারায় তাদের আগুনে পুড়িয়ে বা গলা কেটে হত্যা করা হয়।
  • হিন্দু ও শিখদের ঘরে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটেছে। শহরে কারফিউ জারি থাকা সত্বেও একদল মুসলিম জোর করে কোনও হিন্দু বা শিখের বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ত। তারপর বাড়ির পুরুষ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে কোনো একজন পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো। বাইরে নিয়ে গিয়েই তাদের ছুরি মেরে হত্যা করা হতো। এরপর তাদের ঘরের সম্পত্তি পরিকল্পিতভাবে লুটপাট করা হত। বয়স্ক মহিলাদের হত্যা করা হত। আর যদি যুবতীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো এবং ধর্ষণ করা হতো। মোজাং এলাকায় এমন একটি শিখ পরিবার ছিল, যাদের ছয় বা সাতজন পুরুষ সদস্য এবং ততজন মহিলা ছিলেন। ওই পরিবারও একই পরিণতির শিকার হয়। প্রথমে পুরুষদের বাইরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর মহিলারা সম্মান রক্ষার জন্য তাদের বাড়ির উপরের তলা থেকে নিচে ঝাঁপ দেন। তাঁরা মারাত্মকভাবে আহত হন, তবে কেউ মারা যাননি। এই ধরনের ঘটনা কেবল একটি বা দুইটি পরিবারের সঙ্গে নয়, বরং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
  • আমৃতসরে একসাথে বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়... অনেকের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, পেট চিরে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে পড়েছিল, হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছিল, এবং আরও নানা ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল... ৭ই মার্চ আমৃতসরকে একটি জ্বলন্ত নরক বলে বর্ণনা করা হয়। শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলছিল। অমুসলিমদের দোকান-পাট ধ্বংস করা হয়েছিল বা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছিল। [...] জগমায়া মন্দির এবং রামতীর্থ মন্দির অপবিত্র করা হয়েছিল, দেবমূর্তিগুলি ভেঙে ফেলে বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। মন্দির চত্বরে থাকা ভক্তদের হত্যা করা হয়। দেবপুরা মন্দির এবং দেবতা খুঁ-তেও একই ধরনের হামলা হয় এবং সেখানে থাকা মানুষদেরও মেরে ফেলা হয়। বেশ কিছু তরুণীকে অপহরণ করা হয়।
    • খোসলা জি.ডি. (১৯৮৯) স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, দিল্লি, [৩৫] এছাড়াও উদ্ধৃত: এম.এ. খান ইসলামী জিহাদ: জোরপূর্বক ধর্মান্তর, সাম্রাজ্যবাদ এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার (২০১১)
  • রাওয়ালপিণ্ডির গ্রামাঞ্চলের অবস্থা বর্ণনার ঊর্ধ্বে ছিল... সব ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত একদল মুসলমান, স্লোগান দিতে দিতে ও ঢাক ঢোল বাজাতে বাজাতে, একটি নির্দিষ্ট গ্রামের দিকে এগিয়ে যেত এবং চারদিক থেকে ঘিরে ফেলত... অন্যরা সুন্দর ও তরুণী মেয়েদের খুঁজে বের করে তুলে নিয়ে যেত। প্রায়ই যুবতীদের প্রকাশ্যে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হতো, আর সেই সময় অন্য দুষ্কৃতিরা আশপাশে দৌড়ে বেড়াত, লুটপাট করত এবং ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত... কিছু নারী আত্মহত্যা করতেন, বা একপ্রকার নির্লিপ্ত মনোভাব নিয়ে স্বজনদের হাতে মৃত্যুবরণ করতেন। কেউ কেউ কুয়োতে ঝাঁপ দিতেন, কেউ কেউ আর্তনাদ করতে করতে আগুনে পুড়ে মরতেন ... কিছু কিছু গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেত... ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি মানে ছিল সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া... কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছোট শিশুদের ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে দেওয়া হতো। একটি গ্রামে, যেসব নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের একত্রিত করে আগাছা ও জ্বালানির গাছের ডাল দিয়ে বৃত্ত তৈরি করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। এক নারী তার চার মাসের শিশুকে আগুন থেকে বাঁচাতে অন্যদিকে ছুড়ে দেন। শিশুটিকে বর্শায় গেঁথে আবার আগুনে ফেলে দেওয়া হয়।
    • খোসলা জি.ডি. (১৯৮৯) স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, দিল্লি, [৩৬] এছাড়াও উদ্ধৃত: এম.এ. খান ইসলামী জিহাদ: জোরপূর্বক ধর্মান্তর, সাম্রাজ্যবাদ এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার (২০১১)
  • মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেটরা, মুসলমান পুলিশ আধিকারিকদের সহায়তায়, শহরের দায়িত্বে ছিলেন এবং দুষ্কৃতিকারীদের সাহায্য করতেন ও প্রশ্রয় দিতেন। মুসলিম গুন্ডাদের দল ছিল সুসংগঠিত এবং নিজেদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও রেখেছিল। অভিযানের সময় সাদা পোশাক পরিহিত ডাক্তার ও স্ট্রেচার বহনকারীরা তাদের সঙ্গে থাকত ... একজন শিখ আইনজীবী যখন পুলিশের সহায়তা চান, তখন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে মিথ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন এবং বলেন যে তিনি শুধুই নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলছেন। পরদিন একজন মুসলিম পুলিশ কনস্টেবল এই শিখ আইনজীবীকে গুলি করার চেষ্টা করেন... মুসলিম জাতীয় রক্ষীদের সহায়তায় এক মুসলিম জনতা দল রং মহলে এসে দোকানপাট লুট করতে শুরু করে। অ-মুসলিম বাসিন্দারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তখন এক মুসলিম সাব-ইনস্পেক্টর পুলিশ দল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং অ-মুসলিম প্রতিরোধকারীদের ওপর গুলি চালায়। এক তরুণ হিন্দু সাহস করে ওই সাব-ইনস্পেক্টরের কাছে প্রতিবাদ জানালে, তিনি তাকে জোর করে ধরে গুলি করে হত্যা করেন... যখন ভারত সরকারের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাঞ্জাব সরকার সমস্ত সামর্থ্য নিয়ে দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা করছিল, তখন পশ্চিম পাঞ্জাব সরকার, সরকারি ও বেসরকারি নানা কাজের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীদের উৎসাহ দিচ্ছিল।
    • খোসলা জি.ডি. (১৯৮৯) স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, দিল্লি, [৩৭] এছাড়াও উদ্ধৃত: এম.এ. খান ইসলামী জিহাদ: জোরপূর্বক ধর্মান্তর, সাম্রাজ্যবাদ এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার (২০১১)
  • মন্দির সড়কে অবস্থিত হরগোবিন্দ গুরুদ্বারায় আশ্রয় নেওয়া অ-মুসলিমদের গণহত্যা ছিল চরম নৃশংসতার আরেকটি ঘটনা। প্রায় ৩৫০ জন অ-মুসলিম এই গুরুদ্বারায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে হিন্দু সেনার একটি দল পাহারায় ছিল। ১৪ আগস্ট সেই হিন্দু রক্ষী দলকে সরিয়ে মুসলিম রক্ষীদের বসানো হয়। সেদিন সন্ধ্যায় একাধিক আগুনের গোলা গুরুদ্বারার ভিতরে ছুঁড়ে মারা হয়। আগুনে আতঙ্কিত হয়ে যারা বাইরে বেরিয়ে আসে, তাদের মুসলিম রক্ষীরা গুলি করে হত্যা করে অথবা মুসলিম ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ছুরি মেরে তাদের হত্যা করে। এইভাবে ৩৫০ জনকেই মেরে ফেলা হয়। এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এক ন্যাশনাল গার্ড সদস্য তার এক হিন্দু বন্ধুকে একদিন আগেই এই বিষয়ে বলেছিল। ঐ হিন্দু ব্যক্তি তখন সাময়িকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং পরে এই হামলার কাহিনি বর্ণনা করেন।
    • খোসলা জি.ডি. (১৯৮৯) স্টার্ন রেকনিং: বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, লাহোর,পৃষ্ঠা ১২৫
  • ডোবারান গ্রামে ১৭০০ জনের মতো লোক ছিল, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল শিখ। ১০ মার্চ সকালে আশপাশের গ্রামগুলি থেকে সশস্ত্র হামলাকারীরা দলে দলে এসে ডোবারানের সামনে জড়ো হতে থাকে। অ-মুসলিম বাসিন্দারা স্থানীয় গুরুদ্বারায় আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা ফাঁকা ঘরবাড়ি লুট করে এবং সেগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। শিখদের কাছে কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা গুরুদ্বারা থেকে আত্মরক্ষা করছিল। কিন্তু তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং দ্রুত গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। তখন হামলাকারীরা তাদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানায় এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে কেউ তাদের ক্ষতি করবে না। প্রায় ৩০০ জন বাইরে এসে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাদের বারকত সিংহ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাখা হয়। রাতে সেই বাড়ির ছাদ কেটে কেরোসিন ঢেলে তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। পরদিন সকালে গুরুদ্বারার দরজা ভেঙে ফেলা হয়। ভিতরে থাকা অবশিষ্ট শিখরা তলোয়ার হাতে বেরিয়ে আসে এবং লড়তে লড়তে মারা যায়। এই বিভীষিকাময় গণহত্যা থেকে খুব অল্প কয়েকজনই বাঁচতে পেরেছিলেন।
    • খোসলা জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ঘটনাবলীর একটি সমীক্ষা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১১০
  • মুসলিম ম্যাজিস্ট্রেটরা মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় দুষ্কৃতিকারীদের সহায়তা ও প্রশ্রয় দিয়েছিলেন... [যখন এক বরিষ্ঠ শিখ আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পুলিশ সহায়তা চান] তখন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেন এবং বলেন, তিনি নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলছেন... যখন ভারত সরকার ও পূর্ব পাঞ্জাব সরকার সমস্ত সামর্থ্য নিয়ে দাঙ্গা থামাতে সচেষ্ট হয়েছিল, তখন পশ্চিম পাঞ্জাব সরকার অনেক সরকারি ও বেসরকারি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীদের উৎসাহ জুগিয়েছিল।
    • খোসলা জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাগের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ঘটনাবলীর একটি সমীক্ষা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ১০১-১১৯
  • লেখক কী গভীরভাবে কামনা করেছিলেন যেন এই গ্রন্থটি ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদী একটি মন্তব্যের মাধ্যমে শেষ করা যেত। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। সদ্ভাবনার এক নতুন যুগের বদলে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও নিষ্ঠুরতার এমন এক অধ্যায়, যার তুলনা ভারতের ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই লজ্জা ও বর্বরতার কাহিনি পুনরায় বর্ণনা করার এখানে প্রয়োজন নেই, কারণ তা আলোচিত সময়সীমার বাইরে পড়ে। কেবল ভারতের স্বাধীনতার মূল্য বোঝাতে লিওনার্ড মসলের লেখা কয়েকটি পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করলেই যথেষ্ট:
    "... দুঃখজনক হলেও স্বীকার করতে হয়, যে তারা স্বাক্ষরিত প্রতিশ্রুতি ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করতে উৎসাহ পেয়েছিল পশ্চিম পাঞ্জাবের ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ফ্রান্সিস মুডি-র কাছ থেকে। তিনি ১৯৪৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মি. জিন্নাহ-কে চিঠি লিখে বলেন: ‘আমি সবাইকে বলছি, আমি পরোয়া করি না শিখরা কীভাবে সীমান্ত পার হবে; বড় কথা হলো, ওদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে ফেলতে হবে।’”
    “৬ লক্ষ মানুষ নিহত। ১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ তরুণীকে অপহরণ করে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে অথবা নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।”
    মসলে আরও লেখেন: “এইসব ঘটনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এসব কিছুই ঘটত না যদি স্বাধীনতাকে এতটা তাড়াহুড়ো করে কার্যকর না করা হতো। একটু ধৈর্য ধরলে সব বিপর্যয় এড়ানো যেত... জিন্নাহ এক বছরের মধ্যেই মারা যান। শুধু একটু ধৈর্য... শুধু একটু না-হতাশ হওয়া।”
    • লিওনার্ড মসলে, স্যার ফ্রান্সিস মুডি উদ্ধৃত, আর.সি. মজুমদার, ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস, খণ্ড ১

ভারত বিভাগের সময় শরণার্থীদের সম্পর্কে উক্তি

[সম্পাদনা]
  • ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে ভারতে আসার রাস্তাগুলোতে প্রতিদিনই দেখা যেত এক অন্তহীন, বিষণ্ণ মিছিল। সেই মিছিলে ছিল শিখ পুরুষ, নারী, শিশু ও গবাদি পশু—সবাই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত। কেউ কেউ ঠেলাগাড়িতে সামান্য কিছু উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র নিয়ে চলছিল, আবার কেউ হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছিল ভারত অভিমুখে। এই ধূলিধূসর, ক্লান্ত, হয়রান শিখরাই ছিল লায়লপুর থেকে পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত পাকিস্তানি সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিতাড়িত মানুষ।
  • প্রিয় জিন্নাহ, উদ্বাস্তু সমস্যা এক বিশাল রূপ নিচ্ছে। আমি যতদূর দেখতে পাচ্ছি, তা একমাত্র জনগণনার রিপোর্টেই নির্ধারিত। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় এক লক্ষ মানুষের আগমন ঘটছে। শেখুপুরা জেলার চুহারকানায় আমি এক থেকে দেড় লক্ষ শিখকে শহরের ভিতরে ও আশপাশে—বাড়ির ভিতর, ছাদে, সর্বত্র—জমায়েত হতে দেখেছি। সেই দৃশ্যটা যেন ছিল ঠিক এলাহাবাদের মাঘ মেলার মতো। তাদের সরাতে গেলে ৪,০০০ লোক ধরে এমন ৪৫টি ট্রেন লাগবে। আর যদি তাদের সেখানেই থাকতে দেওয়া হয়, তবে প্রতিদিন তাদের জন্য ৫০ টন খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। একই জেলায় গোবিন্দগড়ে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ শিখ অস্ত্রসহ জড়ো হয়েছিল। তারা ডেপুটি কমিশনারের (যিনি একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান) সঙ্গে কথাও বলতে অস্বীকার করে। তিনি শান্তিপূর্ণ বার্তা নিয়ে এগিয়ে গেলেও তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যদিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষে তাদের প্রত্যেককে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। আমি সবাইকে বলছি, শিখরা কীভাবে সীমান্ত পার হয়, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আসল বিষয় হলো, যত দ্রুত সম্ভব এদের বিদায় করা। এখনো লায়লপুরের প্রায় ৩ লক্ষ শিখ যাওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ নেই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরও যেতে হবে।
  • রাওয়ালপিন্ডি বিভাগের অবস্থা ছিল অগ্নিগর্ভ। এই অঞ্চলের হিন্দু ও শিখ গ্রামীণ জনসংখ্যা প্রায় সম্পূর্ণভাবে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল। ... হাজার হাজার বিধবা ও অনাথ শিশুর আশ্রয় হঠাৎ করে এত বড় সংকট সৃষ্টি করেছিল, যার সমাধান প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্ন ও আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা এই অসহায় মানুষরা অমৃতসর থেকে পূর্ব পাঞ্জাবের প্রতিটি শহর ও গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এইসব মানুষদের অবস্থা ছিল সত্যিই করুণ—এরা এমন এক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিল যার নজির অতীতে নেই। পাঞ্জাব রাজ্য সরকার এবং শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি, হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের মতো বেসরকারি সংগঠনগুলো এই অসহায় মানুষদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কাজটা ছিল পাহাড়সম। পূর্ব পাঞ্জাবে যাদের কিছুটা সম্পদ বা সহায় ছিল, এমন অল্পসংখ্যক ছাড়া বাকি সবাই প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। তাদের জন্য জীবনে আর তেমন আশাও ছিল না। মুসলিম লীগের এই অভিযানের ফলে অন্তত দশ লক্ষ পরিশ্রমী ও কর্মক্ষম মানুষকে এই দশায় পড়ে।
  • প্রায় সব উদ্বাস্তু পুরুষকেই কুপিয়ে বা গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। নারীদের ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। বয়স্ক নারীদের পরে হত্যা করা হয়, আর তরুণীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা চলেছিল। শিশুদের মাটিতে আছড়ে ফেলে হত্যা করা হত।
  • উদ্বাসনের ঢেউ এত দ্রুতগতিতে এবং এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে যে উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা ও স্থানান্তরের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে কিছুটা সময় লেগে যায়। গোটা পশ্চিম পাঞ্জাবজুড়ে অমুসলিমদের মনে এই বিশ্বাস জন্মে যায় যে, পাকিস্তান ছাড়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। কারণ, এক-দুদিনের মধ্যেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যেখানে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং একমাত্র বিকল্প হয়ে দাঁড়ায় পালিয়ে যাওয়া। গ্রাম ও পল্লী এলাকা থেকে মানুষ শিকার হওয়া জন্তুর মতো দৌড়ে শহরে আশ্রয় নিতে শুরু করে, এই আশায় যে হয়তো সেখানে নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু তারা নিজেদের গবাদি পশু, ঘরের জিনিসপত্র বা প্রিয় বস্তুগুলো সঙ্গে নিতে পারেনি। পথে তাদের হয়রানি করা হয়, খোঁজখবর নিয়ে লুট করা হয়, তরুণী মেয়েদের লাঞ্ছনা করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। যারা দুর্গম বা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বাস করত, তাদের পক্ষে পালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শহর ও নগরগুলোতে উদ্বাস্তুদের বিশাল সমাগম ঘটতে থাকে। লাখ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে উদ্বাস্তু শিবিরে দিন কাটাতে শুরু করে—একেবারে পশুর মতো জীবন যাপন। খাবার-পানীয় বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রায়ই তাদের ওপর হামলা হয়। বড় বড় গ্রাম থেকে ভারতের অভিমুখে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ ও বিপদসঙ্কুল যাত্রা শুরু হয়। কোনো কোনো দল এত বড় ছিল যে তা এক একবার এক মাইল পর্যন্ত লম্বা হতো। এগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে চলত সাগোধা, লায়ালপুর, মন্টগোমেরি, বল্লোকি হয়ে ফিরোজপুরের দিকে। অন্যান্য স্থানে ট্রেন ও মোটর লরিতে উদ্বাসন শুরু হয়। কিন্তু ট্রেন ও যানবাহনের সংখ্যাই ছিল অপ্রতুল, আর আসনসংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। প্রতিটি ট্রেনে ছিল উপচে পড়া—লোকজন ছাদে উঠতো, ট্রেনের বাইরের দেয়ালে ঝুলে থাকত, দরজার হাতলে আটকে থাকত, আর এই অবস্থাতও পাথরের আঘাত কিংবা গুলির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকত সবসময়। কোনো কারণ ছাড়াই প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ট্রেন থামিয়ে রাখা হতো। খাবার তো দেওয়া হতোই না, জলও পাওয়া যেত না। কেউ যদি কোনো কারণে ট্রেন ছেড়ে বাইরে যেত, তবে তার জীবিত ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা থাকত না। শিশুরা, এমনকি কোলে থাকা নবজাতকেরাও তৃষ্ণা ও অনাহারে মারা যেত। যখন শিশুরা জল চেয়ে কাদত, আর সেই কান্নাও একসময় থেমে যেত শুকিয়ে যাওয়া গলায়—তখন অসহায় বাবা-মায়েরা হতাশায় তাদের নিজের প্রস্রাব খাইয়ে দিত। একটার পর একটা ট্রেন আক্রমণ করে গুণ্ডাবাহিনী ও সশস্ত্র ন্যাশনাল গার্ডরা, যাদের সহায়তা করত বেলুচ সৈন্যরা—যাদের আদতে নিরাপত্তার জন্য পাঠানো হয়েছিল। মোটর লরি ও ট্রাকে করে যাত্রা কোনো দিক থেকেই নিরাপদ বা আরামদায়ক ছিল না। বেশিরভাগ ট্রাকই ছিল ছাদহীন মালবাহী গাড়ি। বেশি লোক তুলত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই অবস্থায় যাত্রীরা দাঁড়িয়েই যেত। এসব গাড়িও প্রায়শই হামলার শিকার হতো এবং লুটপাট চলত। পায়ে হেঁটে যাত্রা করা দলগুলোর অবস্থা ছিল আরও করুণ। বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী এই দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রা সহ্য করতে না পেরে রাস্তার ধারে শুয়ে পড়তেন, নিঃশব্দেই মৃত্যুবরণ করতেন—এতে করে গোটা পথ ভরে উঠত ফুলে যাওয়া, পচে যাওয়া মৃতদেহ ও মানুষের ও পশুর কঙ্কালে। মৃতদের জন্য দাঁড়িয়ে শোক প্রকাশ করার সময়ও ছিল না। দলটিকে এগিয়ে যেতেই হতো—এটা ছিল এক পরাজিত জনগোষ্ঠীর পালিয়ে যাওয়ার গল্প।
    • খোসলা, জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ২২৪।
  • উদ্বাস্তু যাত্রী বহনকারী ট্রেনের ওপর একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছিল। একটি ট্রেন ১৯৪৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দাদান খান থেকে যাত্রা শুরু করে, কিন্তু যাত্রাপথে তিনটি আলাদা আলাদা স্থানে হামলার শিকার হয়। এই হামলাগুলোর ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়। চালিসার কাছে একদল মুসলিম জনতা ট্রেনটি থামিয়ে প্রায় দুইশো নারীকে জোর করে নিয়ে যায় এবং বহু পুরুষ ও নারীকে হত্যা করে। এরপর দ্বিতীয়বার হামলা হয় মুঘলপুরার কাছে এবং তৃতীয়বার হারবনস্পুরায়। মুঘলপুরায় হামলাটি হয় দুপুরের দিকে। ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের ওপর আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে শত শত মানুষ খালের ধারে অবস্থান করছিল। প্রশাসন তাদের থামানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, এমনকি তাদের নিরুৎসাহিতও করেনি।
    • খোসলা, জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ২২৮-২২৯।
  • ১৯৪৭ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, লায়লপুর থেকে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের একটি দল পদব্রজে রওনা হয়। তাদের সঙ্গে মুসলিম সেনাবাহিনীর একটি দল নিরাপত্তার জন্য ছিল। ১৫ই সেপ্টেম্বর তারা বালোকি পৌঁছায়, কিন্তু সেখানে এক দল মুসলিম জনতা পদব্রজে রওনা হওয়া দলটির ওপর আক্রমণ চালায়। অবাক করার মতো বিষয়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনারা সেই জনতার সঙ্গে মিলে শরণার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। ধারণা করা হয়, এই হামলায় প্রায় এক হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই বিশাল দলটি প্রায় ছয় মাইল লম্বা ছিল এবং যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের শিকার হয়। শরণার্থীরা বহুদিন ধরে খাবার ছাড়াই চলছিলেন। ভারতের সরকার যদি রসদ না পাঠাতো, তাহলে তাদের অনেকেই পথেই মারা যেতেন।
    • খোসলা, জি. ডি. (১৯৮৯)। স্টার্ন রেকনিং: ভারত বিভাজনের আগে ও পরের ঘটনাবলির একটি পর্যালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃষ্ঠা ২৩০।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]