বিষয়বস্তুতে চলুন

মোমবাতি

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

মোমবাতি হলো আলোকসজ্জা প্রদানের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। এটি একটি জ্বলন্ত বাতি যার গঠনের বেশির ভাগই মোম দিয়ে তৈরি করা হয়। সারা বিশ্বজুড়ে দুই সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে মোমবাতির ব্যবহার হয়ে আসছে। অন্যান্য ধরণের আলোক উৎস আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এটি গৃহমধ্যস্থ আলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। বৈদ্যুতিক আলোর আবিস্কারের পর মোমবাতির আলোর ব্যবহার একেবারেই কম গিয়েছে। তবুও প্রতীকী এবং নান্দনিক উদ্দেশ্যে মোমবাতি এখনও ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশে এর ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • আজ কাল কি গ্রামে কি সহরে সর্ব্বত্রই কেরোসিন তৈলের দীপ ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কিন্তু যেরূপ কেরোসিন দীপ হইতে অনর্গল ধূম নির্গত হইয়া গৃহ দুর্গন্ধময় ও শীঘ্র উত্তপ্ত করিয়া তুলে, সেরূপ নিকৃষ্ট দীপ গৃহে প্রজ্জ্বলিত করা স্বাস্থ্যের পক্ষে নিতান্ত ক্ষতিজনক। উৎকৃষ্ট কিরোসিন দীপ হইলেও বদ্ধগৃহে উহা ব্যবহার করা ভাল নহে। কারণ, উৎকৃষ্ট দীপ হইতেও অল্প পরিমাণে ধূম নির্গত হয় এবং অন্যান্য তৈল অপেক্ষা কিরোসিন তৈলের দীপ সমুদ্দীপ্ত বলিয়া এই দীপ্তির প্রভাবে শীঘ্রই গৃহের বাতাস উষ্ণ হইয়া উঠে। এই সকল কারণে কিরোসিন দীপের সম্মুখে বসিয়া পাঠ করা অপেক্ষা পাঠের সময় মোমবাতি অথবা অন্ততঃ পক্ষে দুইটি পলিতাবিশিষ্ট সরিষা বা নারিকেল তৈলের দীপ ব্যবহার করাও ভাল। শয়নকক্ষে সারারাত্রি কিরোসিনের আলো জ্বালাইয়া রাখা কোন ক্রমেই উচিত নহে।
    • স্বর্ণকুমারী দেবী, বিশুদ্ধ জলবাতাস, গল্পস্বল্প- স্বর্ণকুমারী দেবী, চতুর্থ সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫-৫৬
  • আরে বাপ রে! বসলো দেখ দুই পায়ে ভর করে,
    বুক দুরদুর বুড়ো ভল্লুর, মোমবাতি যায় পড়ে।
    ভীষণ ভয়ে দাঁত কপাটি, তিন মহাবীর কাঁপে,
    গড়িয়ে নামে হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ির ধাপে ধাপে।
    • সুকুমার রায়, বিষম কাণ্ড, বিবিধ কবিতা, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৮
  • আমার ষোড়শ জন্মদিনের কথা বেশ মনে পড়ে। লম্বা খাবার টেবিলে নানারকম মিষ্টান্ন ফল ফলু সাজান—মাঝখানে একটা ঝকঝকে রূপার থালার উপর একটি বড় কেকের পাশে পাশে গোল করে ষোলটি মোমবাতি দীপ্যমান। আজ যত বছরের হলুম, এ গৃহে ততগুলি দীপ জ্বলে উঠল আজ—এই সুন্দর ইংরেজী প্রথাটির অনুসরণ দিদির নতুনত্ব—যতদূর মনে পড়ে মেজমামীও কোনদিন এটা করেন নি।
    • সরলা দেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা- সরলা দেবী চৌধুরানী, পরিচ্ছেদ আট, প্রকাশক- শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
  • ভোর পর্যন্ত কুঠির দপ্তরখানায় মোমবাতি জ্বেলে কাজ চলল। সবাই অত্যন্ত ক্লান্ত।, ছোটসাহেব ও ডেভিডব ও বিশ্রাম নেয়নি বা কাজে ফাকি দেয়নি। সূর্য ওঠার আগেই বড়সাহেব এসে হাজির হোলো। দুই সাহেব কি কথাবার্তা হলো, বড়সাহেব রাজারামকে বললেন—মার্কা খতিয়ান বদল হইল?
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৭
  • শীতল বিড় বিড় করিয়া বলিল, মোমবাতি ছিল, সব খরচ হয়ে গেছে। রাখাল গিয়া মোড়ের দোকান হইতে কতগুলি মোমবাতি কিনিয়া আনিল। এই অবসরে শ্যামা হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া ঘরে গিয়া বসিয়াছে, বাহিরে বড় ঠাণ্ডা। শীতলকে দুটো একটা কথাও সে জিজ্ঞাসা করিয়াছে, প্রায় অবান্তর কথা, জ্ঞাতব্য প্রশ্ন করিতে কি জানি শ্যামার কেন ভয় করিতেছিল। ভিতরে ঢুকিবার আগে রাস্তার আলোতে শীতলের পাগলের মত মূর্তি দেখিয়া শ্যামা তো কাঁদিয়াছিল, অন্ধকার ঘরে সে বেদনা কি ভয়ে পরিণত হইয়াছে? রাখাল ফিরিয়া আসিয়া একটা মোমবাতি জ্বালিয়া জানালায় বসাইয়া দিল। ঘরে কিছু নাই, তক্তপোষের উপর শুধু একটা মাদুর পাতা, আর ময়লা একটা বালিশ। মেঝেতে একরাশি পোড়া বিড়ি আর কতগুলি শালপাতা ছড়ানো।
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জননী, সপ্তম পরিচ্ছেদ, জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিঃ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪
  • পরেশ চিঠিখানা লইয়া পকেটে রাখিলেন। সুচরিতা তাহার স্নিগ্ধ হস্তে তাঁহার ডান হাতখানি ধরিয়া নিঃশব্দে তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে বেড়াইতে লাগিল। ক্রমে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনীভূত হইয়া আসিল, বাগানের দক্ষিণ পার্শ্বের গলিতে রাস্তার একটি আলো জ্বলিয়া উঠিল। সুচরিতা মৃদুকণ্ঠে কহিল, “বাবা, তোমার উপাসনার সময় হয়েছে, আমি তোমার সঙ্গে আজ উপাসনা করব।” এই বলিয়া সুচরিতা হাত ধরিয়া তাঁহাকে তাঁহার উপাসনার নিভৃত ঘরটির মধ্যে লইয়া গেল- সেখানে যথানিয়মে আসন পাতা ছিল এবং একটি মোমবাতি জ্বলিতেছিল। পরেশ আজ অনেক ক্ষণ পর্যন্ত নীরবে উপাসনা করিলেন। অবশেষে একটি ছোটো প্রার্থনা করিয়া তিনি উঠিয়া আসিলেন।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২৫
  • চিঠি প’ড়ে পরেশবাবু বললেন, তুমি তো আচ্ছা বোকা হে! হিন্দোলা নিজেই স’রে পড়ছে, এ তো অতি সুখবর, এতে দুঃখ কিসের? তোমার আবার কালীঘাটে পূজো দেওয়া চলবে না, না হয় গির্জেয় দুটো মোমবাতি জ্বেলে দিও। নাও, এখন ওঠ, চোখে মুখে জল দাও, চা আর খানকতক লুচি খাবে এস।
    • রাজশেখর বসু, গল্পকল্প - পরশুরাম, পরশ পাথর, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫
  • “হিন্দুস্থানে প্রীতিকর কিছু নেই বললেই হয়। অধিবাসীরা দেখতে সুশ্রী নয়। বন্ধুবান্ধবের সম্মিলন অথবা অবাধ মেলামেশার আনন্দের সঙ্গে তারা অপরিচিত। তাদের প্রতিভা নেই, মনের বিচার-বিবেচনার শক্তি নেই, ব্যবহারে ভদ্রতা নেই, লোকের প্রতি সহানভূতি অথবা সদয়ভাব নেই, যন্ত্রের সাহায্যে অথবা অন্যরূপে শিল্পকলার উন্নতি করার কোনো ক্ষমতা নেই, স্থাপত্যবিদ্যার জ্ঞান অথবা নৈপুণ্য নেই। তাদের ভালো ঘোড়া নেই, ভালো মাংস নেই, আঙুর অথবা খরমুজ নেই, ভালো ফল নেই, বরফ কিংবা ঠাণ্ডা জল নেই, ভালো খাবার নেই, বাজারে রুটি নেই, স্নানাগার নেই, বিদ্যাপীঠ নেই, মোমবাতি নেই, মশাল নেই, বাতিদান নেই।”
    • মোগল সম্রাট বাবরের ভারত-বর্ণনায়, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬৪-২৬৫
  • শঙ্কর ভাবছিল—এই জনহীন আরণ্য অঞ্চলে এত বড় একটা প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় যে ঘটে গেল, তা কেউ দেখতেও পেতো না, যদি তারা না থাকতো। সভ্য জগৎ জানেও না, আফ্রিকার গহন অরণ্যের এ আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব। কেউ বল্লেও বিশ্বাস করবে না হয়তো। সকালে বেশ স্পষ্ট দেখা গেল, মোমবাতি হাওয়ার মুখে জ্বলে গিয়ে যেমন মাথার দিকে অসমান খাঁজের সৃষ্টি করে, পাহাড়ের চূড়াটার তেমনি চেহারা হয়েচে। কুল্পী বরফটাতে ঠিক যেন কে আর একটা কামড় বসিয়েচে।
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অষ্টম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৬
  • মস্‌জেদের পশ্চিম পার্শ্বে, অন্ধ আতুরদিগের অনাথাশ্রম এবং পান্থদিগের জন্য পান্থশালা নির্ম্মিত হইয়াছিল। পথিক এবং অনাথ আতুরগণ এখানে উপযুক্ত ভরণ পোষণ পাইত। উজ্জ্বল কাংস্য-নির্ম্মিত কারুকার্য্যময় নানা আকারের শত শত প্রদীপ ও ফানুস রাত্রিকালে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায় মস্‌জেদের আশ্চর্য্য সুষমা ষোলকলায় প্রদীপ্ত করিয়া তুলিত। পবিত্র রমজান মাসে ৫০ পাউণ্ড ওজনের একটী মোমবাতি দিবারাত্র ধর্ম্মেপদেষ্টার পার্শ্বদেশে প্রজ্বলিত হইত। এতদ্ব্যতীত কাচনির্ম্মিত, স্বর্ণখচিত সুগন্ধি-তৈলের দশ সহস্র ঝাড়, দেওয়ালগিরি, ফানুস ও লণ্ঠন প্রজ্বলিত হইয়া ইহাকে আলোক-প্রাসাদে পরিণত করিত! তিন শত ভৃত্য, আম্বর-চন্দন জ্বালাইতে, উপাসকদিগকে আতর ও গোলাপ বিতরণ করিতে, প্রদীপ প্রজ্বালন এবং তৈল সুগন্ধ করিবার জন্য নিযুক্ত থাকিত।
    • স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • প্যাগোডার দরজায় বর্মী ফুলওয়ালী ফুল ও মোমবাতি বিক্রয় করিতেছে। বুদ্ধদেবের মূর্ত্তির সম্মুখে সারি সারি মোমবাতি জ্বলিতেছে। ফুঙ্গী ঘণ্টা বাজাইয়া জয়মঙ্গল গাথা পাঠ করিতেছেন। জগদ্ব্যাপী এই মহাযুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বুদ্ধদেবের মুখ তেমনি অচঞ্চল—অধরে তেমনি রহস্যময় হাসি। পূজারীগণের কণ্ঠে ধ্বনিত হইল অহিংসার অবতার বুদ্ধদেবের প্রতি আনুগত্য—বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি—ধম্মং শরণং গচ্ছামি। কিন্তু একা ব্রহ্মের নরনারী শরণ লইলে কি হইবে? যতদিন না সারা জগৎ অহিংসা মন্ত্রে ব্রতী না হয়, ততদিন যুদ্ধ চলিবে—সাইরেন বাজিবে—বোমা পড়িবে—মানুষ পতঙ্গের ন্যায় মরিবে।
    • এম. জি. মুলকর, আজাদী সৈনিকের ডায়েরী- এম. জি. মুলকর, বার্মা ত্যাগের বৃথা চেষ্টা, প্রকাশক-ওরিয়েন্টাল এজেন্সী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
  • বাপ্‌ রে কি ডানপিটে ছেলে!—
    শিলনোড়া খেতে চায় দুধভাত ফেলে!
    একটার দাঁত নেই, জিভ দিয়ে ঘ’ষে,
    এক মনে মোমবাতি দেশলাই চোষে!
    আরজন ঘরময় নীল কালি গুলে,
    কপ্ কপ্ মাছি ধ’রে মুখে দেয় তুলে!
    • সুকুমার রায়, ডানপিটে, আবোল তাবোল, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫২
  • কোথাও একটা দ্বীপ নাই, কেবল চাতালের একধারে যেখানে বাহকেরা পালকি নামাইয়া রাখিয়া একত্র বসিয়া ধূমপান করিতেছে তাহারই অদূরে একখণ্ড জ্বলন্ত শুষ্ককাষ্ঠ হইতে কতকটা যৎকিঞ্চিৎ আলোকিত হইয়াছে। খবর পাইয়া ভৃত্য আসিয়া এককড়িকে একটা ঘরের মধ্যে লইয়া গেল। সমস্ত কক্ষ মদের গন্ধে পরিপূর্ণ এককোণে মিটমিট করিয়া একটা মোমবাতি জ্বলিতেছে এবং অপরপ্রান্তে একটা ভাঙ্গা তক্তপোশের উপর বিছানা পাতিয়া বীজগাঁয়ের জমিদার জীবন চৌধুরী বসিয়া আছেন।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেনা পাওনা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ); পৃষ্ঠা ৫
  • এখান হইতে দ্বিতীয় তলায় নামিবার জন্য আবার সিঁড়ি—সিঁড়িটা একটা প্রকাণ্ড ঘরের মধ্যে নামিয়াছে। ঘরের ছাদটা একটা গম্বুজের মতো। চারিদিকে বড়ো-বড়ো কাঠের ঠেকা দেওয়া হইয়াছে তা না হইলে ছাদ ভাঙিয়া পড়িতে পারে। ঘরটা এত উঁচু যে তাহার মধ্যে আমাদের গড়ের মাঠের মনুমেণ্টটিকে অনায়াসে খাড়া করিয়া বসানো যায়। ঘরের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড লবণের ঝাড়লণ্ঠন, তাহার মধ্যে তিনশত মোমবাতি জ্বালানো হয়―কিন্তু তাতেও এত বড়ো ঘরের অন্ধকার দূর হয় না।
    • সুকুমার রায়, পাতালপুরী, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৮
  • মস্ত হল-ঘরের এককোণে উপরে উঠিবার সিঁড়ির মাঝে মাঝে কাঠ নাই, এই দিয়া ভারতী হীরার হাত ধরিয়া দ্বিতলে উঠিয়া সুমুখের বারান্দা পার হইয়া এতক্ষণে এত দুঃখের পরে নির্দ্দিষ্ট স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইল। ঘরের মধ্যে চাটাই পাতা, একধারে গোটা-দুই মোমবাতি জ্বলিতেছে এবং তাহারই পার্শ্বে সভানেত্রীর আসনে বসিয়া সুমিত্রা! অপর প্রান্তে ডাক্তার বসিয়াছিলেন, তিনিই সস্নেহ কণ্ঠে ডাকিয়া কহিলেন, এসো ভারতী, আমার কাছে এসে বোস।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৪
  • কর্ডোভার ন্যায় গ্রাণাডাতেও নানাবিধ শিল্পের উন্নতি ও বিকাশ হইয়াছিল। কাগজ, রেশমী বস্ত্র, লৌহের অস্ত্র শস্ত্র, হস্তিদন্তের শিল্প, কাঠের খোদাই, পাথরের কারুকার্য্য, তাম্র ও কাংস্য পাত্রের গঠন প্রণালী, সূচী শিল্প প্রভৃতি অসাধারণ উন্নতিলাভ করিয়াছিল। গ্রাণাডার তরবারী ও ছুরী দামেস্কের তরবারী ও ছুরির ন্যায় প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। সুগন্ধি সাবান, উৎকৃষ্ট কাগজ, মোমবাতি, রেশমী বস্ত্র, লৌহের অস্ত্র, বহুমূল্য গালিচা এবং মখমল এখান হইতে নানাস্থানে প্রেরিত হইত। সঙ্গীত সম্বন্ধীয় বীণা, এস্রাজ, রুদ, হার্প প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের পরিবর্ত্তন ও উন্নতি এখানেই হয়।
    • স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা - সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী,তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৪-৮৫
  • খায় না সে দানাপানি—ঘাস পাতা বিচালি,
    খায় না সে ছোলা ছাতু ময়দা কি পিঠালি;
    রুচি নাই আমিষেতে, রুচি নাই পায়সে,
    সাবানের সূপ আর মোমবাতি খায় সে।
    আর কিছু খেলে তার কাশি ওঠে খক্‌খক্,
    সারা গায়ে ঘিন্‌ঘিন্ ঠ্যাং কাঁপে ঠক্‌ঠক্।
    • সুকুমার রায়, ট্যাঁশ্ গরু, আবোল তাবোল, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২
  • শিয়রের দেয়ালে খান-দুই চকচকে ভোজালি টাঙ্গানো, এককোণে একটা বন্দুক ঠেস দিয়ে রাখা, হাতের কাছে একটা ভাঙ্গা তেপায়ার উপর একজোড়া পিস্তল, অদূরে ঠিক সুমুখের বারান্দায় কি একটা বন্য পশুর কাঁচা চামড়া ছাদ হইতে ঝুলানো―তাহার নিকট দুর্গন্ধ মাঝে মাঝে নাকে লাগিতেছে। বোধ হয় খানিক পূর্বেই গুলি করিয়া একটা শিয়াল মারা হইয়াছে। সেটা তখন পর্যন্ত মেঝেয় পড়িয়া―তাহারই রক্ত গড়াইয়া কতকটা স্থান রাঙ্গা হইয়া আছে। জমিদার শয্যার উপর চিত হইয়া শুইয়া শুইয়া কি একখানা বই পড়িতেছিলেন। মাথার কাছে আর একটা মোটা বাঁধানো বইকে বাতিদান করিয়া মোমবাতি জ্বালানো হইয়াছে; সেই আলোকে চক্ষের পলকে অনেক বস্তুই ষোড়শীর চোখে পড়ল।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেনা পাওনা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- কামিনী প্রকাশালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ); পৃষ্ঠা ১২
  • সাধারণ ব্রাহ্ম ও নববিধানীদের কারো ছিল ১০।১৫ দিনব্যাপী, কারো একমাসব্যাপী ব্রহ্মোৎসব, আমাদের ছিল শুধু একটি দিন ১১ই মাঘ। কিন্তু আমাদের শৈশবে সেদিনের আগমনীস্বরূপ আসত একমাস আগে থাকতে উঠানে লোহার থাম। অতি প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড ও অত্যন্ত ভারি ভারি থাম, তার একটু, ধাক্কা লাগলেই মাথা ফেটে যেতে পারে। সেগুলিকে দিনকতক ধরে খানিকটা তফাৎ তফাৎ করে উঠানধারে লাইন টেনে ফেলে রাখা হত। তারপর অনেক হাত নীচু পর্যন্ত গর্ত খুড়ে বনিয়াদ মজবুত করে সেগুলি পোঁতা হত। ১০ই মাঘে এক থাম থেকে আর এক থামে গাঁদাফুলের মালা লম্বা করে ঝুলিয়ে দেওয়া হত, আর তার মাঝে মাঝে থামের গায়ে শামাদান ও দেওয়ালে বেলোয়ারের ঝাড় লাগান হত। উপরের দুদিককার বারান্দায়ওবঝাড় টাঙ্গিয়ে রাখা হত। মোমবাতি কিন্তু মাত্র একদিন আগে বসান হত, বেশী আগে বসালে পাছে চুরি হয়ে যায়।
    • সরলা দেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা- সরলা দেবী চৌধুরানী, পরিচ্ছেদ দশ, প্রকাশক- শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৪, ৬৭
  • বাসন-মাজার পরে ঘাটে যাওয়া, রান্না, খাওয়ানো দাওয়ানো, দুপুরে পান মুখে দিয়াই ছুটিতে হইবে ঘাটে, গরুকে জল খাওয়াইতে সে নদীর ধারের মাঠে, যেখানে গরুকে গোঁজ পুঁতিয়া রাখিয়া আসা হইয়াছে। সেই সময়টা যা একটু ভালো লাগে—নীল আকাশ, নদীর ধারে কাশ ফুল দোলে, মস্ত জিউলি গাছের গা বাহিয়া সাদা সাদা মোমবাতি-ঝরা মোমের মতো আটা ঝরিয়া পড়ে, হু হু খোলা হাওয়া বয় ওপারের দেয়াড়ের চর হইতে, পাট-বোঝাই গরুর গাড়ির দল ক্যাঁচ কোঁচ করিতে করিতে ঘাটের পথের রাস্তা দিয়া কোথায় যেন যায়।
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাকগাড়ি, জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৭
  • তখনও অপূর্ব্ব চোখ খুলিতে পারিল না, স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। যাইবার পূর্ব্বে ভারতী বলিল, সবই আছে, কেবল মোমবাতি ফুরিয়ে গেছে, আমি নীচে থেকে এক বাণ্ডিল কিনে দিয়ে যাচ্ছি, এই বলিয়া সে নিঃশব্দে দ্বার খুলিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল। মিনিট কয়েক পরে বাতি লইয়া যখন ফিরিয়া আসিল, তখন কতকটা পরিমাণে বোধ হয় আপনাকে অপূর্ব্ব সামলাইয়া লইতে পারিয়াছিল। চোখ মুছা শেষ হইয়াছে, কিন্তু ভিজা পাতার নীচে সে দুটি রাঙা হইয়া আছে।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯-৭০
  • অন্তর্জাল আর ই-মেল শাসিত দুনিয়ায় আমরা যতই মহানাগরিক সপ্রতিভ আর চতুর নির্মাণের ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন হই না কেন, কবিতার ভাষাকে দুমড়ে মুচড়ে তাক লাগিয়ে দেওয়ার চালাকি দেখতে না-পেয়ে আশ্বস্ত হই যেন। একুশ শতকের এই প্রারম্ভিক দশক যখন ধীরে ধীরে অন্তিম প্রহরে পৌছে যাচ্ছে, এখনও কত অনায়াসে ফুল ও মোমবাতি চিহ্নায়িত বাচনের ভিত্তি হতে পারে। চারদিককার ধূসর ও নিরাবেগ অভ্যাসের ফুর্তি-ফার্তার মধ্যে এখনও চাপা অন্তর্নাট্যের আভাস বিষাদের স্নান আভা বয়ে আনে কবিতায়।
    • তপোধীর ভট্টাচার্য, গ্রহাণুপুঞ্জের আকাশ, সময় অসময় নিঃসময়- তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- একুশশতক, কলকাতা, প্রকাশসাল-২০১০ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৭
  • ডাক্তারবাবু একখণ্ড মোমবাতি জ্বালাইয়া পকেট হইতে কয়েকখানা চিঠি বাহির করিয়া জবাব লিখিতে বসিলেন। মিনিট দশেক নীরবে অপেক্ষা করিয়া অপূর্ব্ব বিরক্ত ও উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিল, চিঠিগুলো কি অত্যন্ত জরুরি? ডাক্তার মুখ না তুলিয়া কহিলেন, হ্যাঁ।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৭
  • আমার অবস্থা দেখে বাড়িওয়ালা কৃষ্ণগোপাল দেবনাথ আমাকে নিয়ে গেলেন কাঁকুড়গাছিতে তাঁর পরিচিত এক তান্ত্রিকের কাছে। প্রণামী হিসেবে দিতে হল এক কেজি চিনি, একটা মোমবাতি, একপ্যাকেট ধূপকাঠি ও একশো টাকা। তান্ত্রিকের নাম ধীরেন্দ্রনাথ গোস্বামী। ঠিকানা ৬৮ মানিকতলা মেন রোড। “তান্ত্রিকবাবা ধূপ মোমবাতি জ্বালিয়ে মড়ার খুলি নিয়ে কী সব মন্ত্র পড়লেন, ওটাকে নাকি খুলি চালান বলে। তারপর জানালেন—আনন্দ পালিত রোডের ওই ট্রেনে কাটা পড়া লোকটার আত্মাই আমার এই বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অতৃপ্ত আত্মা তিনজনকে রেললাইনে টেনে নিয়ে আত্মহত্যা করাবে। তৃতীয় যে ব্যক্তিকে মারবে সে হল আমি।
    • প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮০

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]