রমেশচন্দ্র মজুমদার
অবয়ব
অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৮৮৮- ১৯৮০) একজন বাঙালি ইতিহাসবিদ। তিনি সচরাচর আর, সি, মজুমদার নামে অভিহিত। তিনি ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২ সালে পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আর.সি. মজুমদার প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপর অনেক কাজ করেছেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের উপরও অনেক কাজ করেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- প্রাচীন হিন্দু যুগে সমগ্র বাংলা দেশের কোন একটি বিশিষ্ট নাম ছিল না। ইহার ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। উত্তর বঙ্গে (বর্তমান রাজসাহী বিভাগ) পুণ্ড্র ও বরেন্দ্র (অথবা বরেন্দ্রী), পশ্চিম বঙ্গে (বর্দ্ধমান বিভাগ) রাঢ় ও তাম্রলিপ্তি এবং দক্ষিণ ও পূর্ব্ববঙ্গে (প্রেসিডেন্সি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) বঙ্গ, সমতট, হরিকেল, ও বঙ্গাল প্রভৃতি দেশ ছিল। এতদ্ভিন্ন উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের কতকাংশ গৌড় নামে সুপরিচিত ছিল। এই সমুদয় দেশের সীমা ও বিস্তৃতি সঠিক নির্ণয় করা যায় না এবং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাহার বৃদ্ধি ও হ্রাস হইত। মুসলমান যুগেই সর্ব্বপ্রথম এই সমুদয় দেশ একত্রে বাংলা অথবা বাঙ্গালা এই নামে পরিচিত হয়। এই বাংলা হইতেই ইউরোপীয়গণের 'বেঙ্গলা' (Bengala) ও 'বেঙ্গল' (Bengal) নামের উৎপত্তি।
- "বাংলা দেশের ইতিহাস", প্রকাশক: জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ: ফাল্গুণ ১৩৫২, পৃষ্ঠা: ১-২
- উত্তরে হিমালয় পর্বত হইতে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত সমতলভূমি লইয়া বাংলাদেশ গঠিত। পূর্ব্বে গারো ও লুসাই পর্বত ও পশ্চিমে রাজমহলের নিকটবর্তী পৰ্ব্বত ও অনুচ্চ মালভূমি পর্যন্ত এই সমতলভূমি বিস্তৃত। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বহুসংখ্যক নদনদী এই বিশাল সমতলভূমিকে সুজলাসুফলা-শস্যশ্যামলা করিয়াছে। পশ্চিমে গঙ্গা ও পূর্ব্বে ব্রহ্মপুত্র এবং ইহাদের অসংখ্য শাখা উপশাখা ও উপনদীই বাংলা দেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সম্পাদন ও ইহার বিভিন্ন অংশের সীমা নির্দেশ করিয়াছে।
- "বাংলা দেশের ইতিহাস", প্রকাশক: জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ: ফাল্গুণ ১৩৫২, পৃষ্ঠা: ২
- মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস বঙ্গবিভাগের প্রস্তাব গ্রহণ করিলে স্থির হইল যে, বঙ্গদেশের বিধানসভায় ভারতীয় সদস্যগণ দুইভাগে বিভক্ত হইবে। যে সব জিলায় মুসলমানদের সংখ্যা বেশী এবং অন্য সব জিলার সদস্যগণ-এই দুই দল পৃথকভাবে মিলিত হইয়া ভোট দিবে–তাহারা বঙ্গদেশকে বিভক্ত করার পক্ষে কি বিপক্ষে। যদি ইহার যে কোন দলের অধিকসংখ্যক সদস্য দেশ বিভাগ করার পক্ষে ভোট দেয়, তাহা হইলে বঙ্গদেশ দুই ভাগ করা হইবে। তদনুসারে ২০শে জুন, ১৯৪৭ বঙ্গদেশের যে অংশে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাহার সদস্যদের মধ্যে ৫৮ জন বঙ্গবিভাগে সপক্ষে এবং ২১ জন বিপক্ষে ভোট দিল। অন্য অংশের সদস্যদের মধ্যে ১০৬ জন বঙ্গবিভাগের বিপক্ষে এবং ৩৫ জন ইহার সপক্ষে ভোট দিল। ১৯৪৭ সনের ১৫ই ও ১৬ই জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাধারণ ও লর্ডসভা ভারত-স্বাধীনতার বিল পাশ করিল এবং ১৮ই ইহা আইনে পরিণত হইল। স্থির হইল যে, ১৫ই অগষ্ট (১৯৪৭) তারিখ হইতে ভারত স্বাধীন হইবে। অখণ্ড বঙ্গ বা বাংলাদেশ ভারতের মানচিত্র হইতে মুছিয়া গেল, তাহার পরিবর্তে হইল পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান।
- "বাংলা দেশের ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড (১৯০৫-১৯৪৭)" প্রকাশক: জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যাণ্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ: ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৫, পৃষ্ঠা: ৪৬৩-৪৬৪
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।