রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ এপ্রিল ১৮৮৫ – ২৩ মে ১৯৩০) ছিলেন ভারতীয় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ। তিনি আর. ডি. ব্যানার্জি নামে পরিচিত। মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সুপ্রাচীন ধংসাবশেষ আবিষ্কার তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। কুষান সম্রাট কণিষ্ক সম্পর্কে তিনি যে সব তথ্য আবিষ্কার করেন তা প্রামান্য বলে বিবেচিত হয়েছে। বাংলায় পাল রাজবংশ সম্পর্কিত বহু তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরে খননকার্যের পরিচালক ছিলেন তিনি। মুদ্রাসম্বন্ধীয় বিষয়ে বাংলাতে প্রথম গ্রন্থ রচনা তার অন্যতম কৃতিত্ব। তার অন্যতম সাহিত্য কর্মগুলি হলো প্রাচীন মুদ্রা প্রথম ভাগ (১৯১৫), বাঙ্গালার ইতিহাস ২ খন্ডে, লেখমালানুক্রমণী (প্রথম খণ্ড, প্রথম ভাগ), ত্রিপুরীর হৈহয় জাতির ইতিহাস, উড়িষ্যার ইতিহাস, ভমারার শিবমন্দির, বাঙ্গালীর ভাস্কর্য, শশাঙ্ক, পাষাণের কথা (১৯১৪), ময়ূখ (১৯১৬), করুণা (১৯১৭), অনুক্রম (১৯৩১), ধর্ম্মপাল, ব্যতিক্রম, অসীম, পক্ষান্তর প্রভৃতি। এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার বাংলা ও ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
উক্তি
[সম্পাদনা]- ধাতু আবিষ্কার করিয়া আদিম মানবগণ ক্রমশঃ অনাবশ্যক আড়ম্বরের বশবর্ত্তী হইয়াছিলেন। এই সময় হইতে মানবসমাজে জীবনযাত্রা-নির্ব্বাহে অনাবশ্যক অলঙ্কার ও আভরণের ব্যবহার আরব্ধ হয়। তাম্রনির্ম্মিত কঙ্কণবলয়ই মানবজাতির শৈশবে ললনাগণের সর্ব্বাপেক্ষা বহুমূল্য আভরণ ছিল। ভারতে বহুবিধ তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্র ও আভরণ আবিষ্কৃত হইয়াছে; ইহা হইতে পণ্ডিতগণ অনুমান করেন যে, এতদ্দেশে বহুকাল যাবৎ তাম্রের ব্যবহার ছিল। ভারতে কোন্ সময়ে তাম্রের যুগ আরম্ভ হইয়াছিল, তাহা বলিতে পারা যায় না; তবে অনুমান হয় যে, আর্য্যবিজয়ের সময়ে অথবা তাহার অব্যবহিত পরে লৌহের ব্যবহার আরম্ভ হয় এবং ক্রমশঃ তাম্রের ব্যবহার উঠিয়া যায়।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫
- দূরে পাটলীপুত্রবাসী ভিক্ষুদত্ত যে স্তম্ভ দেখিতেছ উহার একপ্বার্শে অদ্যাবধি সেই অস্ত্রাঘাতের চিহ্ন বর্ত্তমান আছে। পরে জানিয়াছি, ঐ ধাতু তাম্র। শুনিয়াছি, যে জাতীর মনুষ্য তাম্রনির্ম্মিত্ত অস্ত্র ব্যবহার করিত, তাহাদিগের বংশধরেরা বিস্তীর্ণ দাক্ষিণাত্যে এখনও বাস করিতেছে। তোমাদের সংগ্রহশালায় তাম্রনির্ম্মিত আয়ুধের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত অল্প, কিন্তু তুমি বোধ হয় এই জাতীয় অস্ত্র অনেক দেখিয়াছ। তোমাদিগের পূর্ব্বপুরুষেরা যখন লৌহনির্ম্মিত অস্ত্রের সাহায্যে ভারতবর্ষ অধিকার করেন, তখন পূর্ব্ববাসীরা তাড়িত হইয়া বিন্ধ্য পর্ব্বতের দক্ষিণে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিল। ক্রমে বিজেতারাও লৌহ ব্যবহার করিতে আরম্ভ করায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তাম্রের ব্যবহার রহিত হইয়া যায়। একদিন রাত্রিকালে তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্রধারী কতকগুলি লোক আমাদিগের বক্ষের উপর আসিয়া কয়েক স্থানে অগ্নি প্রজ্বালিত করিল। বহুকাল পরে সেই দিন ঐ আলোক দর্শন করিলাম।
- পাষাণের কথা- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
- ভারতবর্ষের নানা স্থানে নানাবিধ তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাম্রনির্ম্মিত কুঠার বা পরশু, তরবারি, ছুরিকা বা কৃপাণ, ভল্ল বা বর্ষার শীর্ষ বক্রদন্তযুক্ত ভল্ল (Harpoon) এবং নানাবিধ ছেদনাস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে। কলিকাতা মিউজিয়ামে কাণপুরের নিকটস্থিত বিঠুর, আগ্রার নিকটস্থিত মৈনপুরী, ফরক্কাবাদের নিকটস্থিত ফতেপুর এবং মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট জেলায় অবস্থিত গঙ্গেরিয়া প্রভৃতি নানা স্থানের নানাবিধ তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্র আছে। বাঙ্গালা দেশে মাত্র তিন স্থানের তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
- সহসা নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ঘাটের উপর হইতে বামাকণ্ঠে উচ্চারিত হইল, “ঘাটে কাহার নৌকা? নৌকা শীঘ্র সরাইয়া লইয়া যাও।” শব্দ শুনিয়া ধীবরের নিদ্রা ভঙ্গ হইল, যুবকের গান থামিয়া গেল। ধীবর জিজ্ঞাসা করিল,“কে?” যে নৌকা সরাইতে বলিয়াছিল, সে পুনরায় বলিল, “তোমরা কেমন লোক গো? নৌকা সরাইতে বলিতেছি সরাও না কেন? মাঠাকুরাণীরা যে ঘাটে যাইতে পারিতেছেন না?” ধীবর ক্রুদ্ধ হইয়া কহিল, “নৌকা সরিবে না, তোর মাঠাকুরাণীদিগকে অন্য ঘাটে যাইতে বল্।”
- ময়ূখ, ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১-২
- সুবর্ণের পরে তাম্র আবিষ্কৃত হইয়াছিল। মানবজাতির সর্ব্বপ্রাচীন ধাতব অস্ত্রসমূহ তাম্রনির্ম্মিত। তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্রশস্ত্র তীক্ষ্ণধার, কিন্তু সুকঠিন নহে। টিন্ আবিষ্কৃত হইবার পরে, তাম্রনির্ম্মিত দ্রব্যাদি কঠিন করিবার জন্য নয়ভাগ তাম্রের সহিত একভাগ টিন্ মিশ্রিত হইত, এই মিশ্রধাতুর নাম ব্রঞ্জ।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০
- শরৎকাল, মধ্যাহ্ন, ভাগীরথীর পশ্চিম কূলে সহকারবৃক্ষের ছায়ায় একখানি ক্ষুদ্র নৌকার উপরে বসিয়া জনৈক যুবক অন্যমনস্ক হইয়া গুন্গুন্ করিয়া গান করিতেছিল। তাহার পার্শ্বে তীর ও ধনু এবং দুই তিনটি সদ্যোনিহত পক্ষী নৌকার উপরে পড়িয়াছিল। ক্ষুদ্র নৌকার অপর পার্শ্বে জনৈক প্রৌঢ় ধীবর লগিতে নৌকা বাঁধিয়া নিশ্চিন্ত মনে নিদ্রা যাইতেছিল। একটি বহুপুরাতন ইষ্টকনির্ম্মিত ঘাটের উপরে সহকার বৃক্ষটি শতাধিক বর্ষপূর্ব্বে জন্ম গ্রহণ করিয়াছিল, কালক্রমে তাহার আকারবৃদ্ধির অনুপাতে প্রাচীন ঘাটেরও জরাবৃদ্ধি হইয়াছিল। ভাদ্রমাস, ভাগীরথী কূলে-কূলে ভরিয়া উঠিয়াছে, প্রাচীন ঘাটের তিন চারিটি মাত্র সোপান ডুবিতে অবশিষ্ট আছে। ঘাটের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া একটি গাভী হরষিত মনে উচ্ছিষ্ট কদলী পত্র চর্ব্বণ করিতেছিল। চারিদিক নিস্তব্ধ।
- ময়ূখ, প্রথম পরিচ্ছেদ; ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১
- প্রাচীন মিশর, বাবিরুষ (Babylon) ও আসুর (Assyria) দেশের প্রাচীনকালের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, এই সকল দেশে অতি প্রাচীনকাল হইতে তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্রের প্রচলন ছিল। প্রত্নবিদ্যাবিদ্গণ অনুমান করেন যে, মিশরদেশে সাম্রাজ্যের যুগের পূর্ব্বে (Pre-dynastic Age) তাম্রের ব্যবহার আরব্ধ হইয়াছিল। খৃষ্টের জন্মের চারি সহস্র বৎসর পূর্ব্বে মিশরদেশে প্রথম সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়, ইহার পূর্ব্ব হইতে মিশরে তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্রের ব্যবহার ছিল। পণ্ডিতগণ মনুমান করেন যে, খৃষ্ঠের জন্মের চারি সহস্ৰ বৎসর পূর্ব্বে প্রাচীন বাবিরুষে তাম্রের ব্যবহার ছিল। মিশর, বাবিরুষ প্রভৃতি প্রাচীনরাজ্যে ২০০০ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দ পর্য্যন্ত তাম্রের ব্যবহার অপ্রতিহত ছিল।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩-১৪
- হরিনাথ অগত্যা নীরব হইল। তর্করত্ন পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “সমাজের কোন হানি হয় নাই, তথাপি সমাজ রক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছ; কিন্তু বৃদ্ধ অপুত্রক রাধামোহনের একমাত্র কন্যা দস্যুকর্ত্তৃক অপহৃত হইয়াছে, তাহার উদ্ধারের কি ব্যবস্থা করিয়াছ?”
“কি করব? ফিরিঙ্গী হার্ম্মাদ গোলা গুলি লইয়া লড়াই করে, একি যে সে দস্যু যে লাঠিয়াল পাঠাইয়া লড়াই করিব? ফৌজদার সুবাদার অবধি ফিরিঙ্গীর ভয়ে শঙ্কিত; সেখানে আমরা কি করিব?”- ময়ূখ, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১-১২
- পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ইতিহাসে নব্য প্রস্তরের যুগের পরবর্ত্তিকালকে তাম্রের যুগ (Copper age) আখ্যা প্রদান করা হইয়াছে। তাম্রের যুগের শেষভাগের নাম ব্রঞ্জের যুগ। উত্তরাপথে বা দক্ষিণাপথে অদ্যাবধি এই নূতন মিশ্রধাতু-নির্ম্মিত কোন অস্ত্র আবিষ্কৃত হয় নাই এবং এই জন্য পণ্ডিতগণ অনুমান করিয়া থাকেন যে, ভারতবাসী আদিম মানবগণ মিশ্রধাতুর ব্যবহার জানিতেন না। নব্য-প্রস্তরের যুগ ও তাম্রের যুগের মধ্যে সীমা নির্দ্দেশ করা কঠিন। পৃথিবীর সর্ব্বত্র তাম্রের যুগে, এমন কি লৌহের যুগে (Iron age) পর্য্যন্ত শিলানির্ম্মিত অস্ত্রের ব্যবহার দেখিতে পাওয়া যায়।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০-১১
- কোন কোনও দিন দ্বিপ্রহরে পিপাসিত মৃগসমূহ জলাম্বেষণে আসিয়া অশ্বত্থ বৃক্ষতলে বিশ্রাম করিত, ইহাদিগের পদচিহ্ন বর্ষা ব্যতীত অপর সময়ে সপ্তাহকাল পর্য্যন্ত বৃক্ষতলে দৃষ্ট হইত। একদিন প্রভাতে দীর্ঘাকার, ক্ষীণদেহ একটি ব্যাঘ্র বৃক্ষতলে ক্লান্তি দূর করিতেছিল এবং সময়ে সময়ে উৎকর্ণ হইয়া বনমধ্য হইতে আগত পদশব্দ লক্ষ করিতেছিল। অল্পক্ষণ পরে বহু দূরে হস্তিপদশব্দ শ্রুত হইল। সেই পদশব্দ বনবাসী স্বাধীন করিযূথের আহারান্বেষণে যথেচ্ছ পাদচারণের শব্দ নহে, মনুষ্যকর্ত্তৃক চালিত হস্তীর ধীর—সমভাবে পাদক্ষেপণের শব্দ।
- পাষাণের কথা- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮
- ভারতের প্রথম শক-সাম্রাজ্যের শেষ দশায় ইউচিগণ বাহ্লীক পরিত্যাগ করিয়া ক্রমশঃ উত্তরাপথের দিকে অগ্রসর হইতে আরম্ভ করেন। অবশেষে ইউচি জাতির পাঁচটি প্রধান বিভাগ, কুষাণবংশ কর্ত্তৃক একত্র হয়। এই সময় হইতে ইউচিগণ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠেন এবং একে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শকরাজ্যগুলি অধিকার করেন। কুষাণবংশীয় রাজা কুজুলকদফিসের সময়ে, কপিশা গান্ধার ও পঞ্চনদে শকক্ষত্রপগণের অধিকার শেষ হইয়াছিল বলিয়া অনুমান হয়। কুজুলকদফিস খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর প্রারম্ভে জীবিত ছিলেন। তাঁহার পরে বিমকদফিস বারাণসী পর্য্যন্ত অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
- এই কথা শুনিয়া একজন নাবিক নৌকার কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল এবং ক্ষণকাল পরে জনৈক প্রৌঢ় ব্যক্তির সহিত ফিরিয়া আসিল। প্রৌঢ় যুবকের কাহিনী শুনিয়া তাহাকে পরিচয় দিতে অনুরোধ করিল, কিন্তু যুবক কিছুতেই পরিচয় দিল না। তখন প্রৌঢ় কহিল, “যুবক, তুমি বীর, অস্ত্র ধরিতে জান, বন্দুক ধরিতে শিখিয়াছ কি?” “এমন কোন অস্ত্র নাই যাহা ধরিতে শিখি নাই।” “তুমি কি জাতি?” “আমি ব্রাহ্মণ। অন্য কোন কথা জিজ্ঞাসা করিবেন না; আপনি জীবনদাতা, আপনার আদেশ অমান্য করিতে হইলে সংকোচ বোধ হয়।”
- ময়ূখ, তৃতীয় পরিচ্ছেদ, ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬-১৭
- ভানুগুপ্তের জীবিতকালে অথবা তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে মালবরাজ যশোধর্ম্মদেব মগধ, গৌড় ও বঙ্গ অধিকার করিয়াছিলেন। তাঁহার মন্দশোরে আবিষ্কৃত থোদিতলিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, হিমালয় হইতে মহেন্দ্রগিরি পর্য্যন্ত, লৌহিত্য বা ব্রহ্মপুত্রতীর হইতে পশ্চিমসমুদ্র পর্য্যন্ত তাঁহার অধিকার বিস্তৃত হইয়াছিল। যশোধর্ম্মদেবের যে শিলালিপিতে তাঁহার ব্রহ্মপুত্রতীর পর্য্যন্ত অধিকার বিস্তারের বর্ণনা আছে, তাহা ৫৮৯ বিক্রম সম্বৎসরে (৫৩২-৩৩ খৃঃ অব্দ) উৎকীর্ণ হইয়াছিল[১১৯] কিন্তু দামোদরপুরে আবিষ্কৃত ভানুগুপ্তের তাম্রলিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে, তিনি ২১৪ গৌপ্তাব্দে (৫৩৩ খৃঃ অব্দ) জীবিত ছিলেন।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩-৮৪
- পরদিন প্রভাতে নগর নিস্তব্ধ, জনশূন্য। প্রান্তরে কৃষক হলকর্ষণ করিতে বা মেষপাল চারণ করিতে আসে নাই। প্রতিদিন প্রত্যূষে সঙ্ঘারামবাসী ভিক্ষুগণ তথাগতের শরীর অর্চ্চনা করিতে আসিতেন, কিন্তু সেদিন বেষ্টনী, স্তূপ ও গর্ভগৃহ জনশূন্য, গর্ভগৃহ মধ্যে মৃতপ্রায়া রাজমাতা শরীর-নিধানের সম্মুখে ধূলিতে লুটাইতেছেন। বহুদূরে বহু অশ্বপদ শব্দ শ্রুত হইল, ক্রমে উত্তরে ঘন কৃষ্ণবর্ণ মেঘের ন্যায় শকসৈন্যের পুরোভাগ দৃষ্ট হইল, দেখিতে দেখিতে তাহারা প্রান্তরস্থিত নদীতীরে আসিয়া উপনীত হইল। তখন নবেদিত সূর্য্যের কিরণমালা আসিয়া স্তূপের উচ্চচূড়া কেবল স্পর্শ করিয়াছে। রক্তবর্ণ প্রস্তরনির্ম্মিত সুগঠিত স্তূপ ও বেষ্টনী দেখিয়া একবার যেন তাহারা থমকিয়া দাঁড়াইল, তাহার পর সুশিক্ষিত বলবান অশ্বগণ এক এক লম্ফে ক্ষীণকায়া নদী পার হইয়া আসিল।
- পাষাণের কথা- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯
- গৌড়দেশে কতকাল পর্য্যন্ত বুধগুপ্তের অধিকার অক্ষুণ্ণ ছিল তাহা বলিতে পারা যায় না। সারনাথে আবিষ্কৃত শিলালিপি হইতে জানিতে পারা যায় যে, ১৫৭ গৌপ্তাব্দে (৪৭৬ খৃঃ অব্দ) বারাণসীতে অর্থাৎ মধ্যদেশে বুধগুপ্তের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। দামোদরপুরের তাম্রলিপিতে যদিও তারিখ নাই তথাপি ইহা হইতে স্পষ্ট প্রমাণ হইতেছে যে পুণ্ড্রবর্দ্ধনভুক্তি কিছুকাল বুধগুপ্তের রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল।
- বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]

