বিষয়বস্তুতে চলুন

রুচি

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

রুচি বলতে মনে সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর হিসেবে অনুভূত হয়, এমন খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের জন্য সাময়িক মানসিক উদ্দীপনা, অভিলাষ বা আকাংক্ষাকে বোঝায়। তবে বলতে শুধু যে আহারে রুচি তা কিন্তু নয়। মার্জিত আচার-আচরণ, দীপ্তি, সৌন্দর্য, পছন্দ প্রভৃতিকেও বোঝায়। আবার একজন ব্যক্তির রুচি হলো তার পছন্দের জিনিসপত্র। সমাজবিজ্ঞানে রুচি বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তি বা সামাজিক গোষ্ঠীর খাদ্যাভাস, সাংস্কৃতিক ও নন্দন তত্ত্ব চর্চার ধরন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিষয়ভিত্তিক পছন্দ বা নির্বাচনকে। রুচি একটি প্রীতিকর অনুভূতি। রুচি সব ধরনের উন্নত জীবে বিদ্যমান। প্রতিটি ব্যক্তির আচরণের সাথেও রুচির সম্পর্ক আছে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • নিজের রুচি খাবার জিনিষের বেলায় চলে, পেট আপনার সেখানে আপ রুচি খানা, কিন্তু হৃদয় নিয়ে যেখানে কথা সেখানে আপ রুচি চালাতে গেলে চলে না। হৃদয়কে কেবল আপনার করে’ রাখলে নিজেই ঠকি, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয় মেলানোতেই রস পাই, সুতরাং বলতে পারি যে, রস হ’ল দুইকে মিলিয়ে সেতু, রুচি হ’ল দুইকে পৃথক করে প্রাচীর।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৩
  • শেষে দেখি ইলিশ মাছের
    জলপানে আর রুচি নাই,
    চিতল মাছের মুখটা দেখেই
    প্রশ্ন তারে পুছি নাই।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কদমাগঞ্জ উজাড় করে, ছড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
  • টাকা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু নিয়তিকে বশে রাখা দূরের কথা, নিজের নিকটতম মানুষগুলোকেও নিজের মতামত বা রুচিতে আবদ্ধ রাখা যায় না।
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার, ‘রচনাপ্রসঙ্গ: অতি বিরল প্রজাতি’, অমিয়ভূষণ রচনা সমগ্র, ১১দশ খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৪, পৃ. ৬৮
  • বাড়ির মধ্যে আমাদেরই বেশী মিল—শিক্ষাদীক্ষা এক ধরনের, কিন্তু গোড়ায় গোড়ায় আমাদের রুচি ও আদর্শের অনেক পার্থক্যও ছিল। বেথুন স্কুলের আবহাওয়ায় আমি ছিলাম ভারি স্বদেশপ্রেমিক। নতুন মামা একদিন আমাদের কোন একটা সার্কাসে নিয়ে যেতে চাইলেন—একটা বাঙালীর ও একটা উইলসন সাহেবের—যেটায় আমাদের অভিরুচি।
    • সরলা দেবী চৌধুরানী, জীবনের ঝরাপাতা- সরলা দেবী চৌধুরানী, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, প্রকাশক- শিশু সাহিত্য সংসদ প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮
  • বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সকলের জন্য নয়, প্রত্যেকে নিজের রুচি আর প্রবৃত্তি অনুসারেই ধর্মাচরণ করতে পারে এবং তাতেই সিদ্ধিলাভ করে ধন্য হতে পারে। কিন্তু জনসাধারণ যদি কেবল বাহ্য অনুষ্ঠান পালন করে এবং ধর্মের অন্যান্য অঙ্গ উপেক্ষা করে কেবল ভক্তির চর্চা করে, তবে তার সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হতে পারে না।
    • রাজশেখর বসু, জাতিচরিত্র, বিচিন্তা - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৮
  • বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে হলে সাধনার প্রয়োজন। কিন্তু রুচি এমন একটা জিনিস যাকে বলা যেতে পারে সাধনদুর্লভ, তাকে পাওয়ার বাঁধা পথ ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন। সহজ ব্যাক্তি-গত রুচি-অনুযায়ী বলতে পারি যে, এই আমার ভালো লাগে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গদ্যকাব্য, সাহিত্যের স্বরূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮
  • নারীর স্বাধীনতার প্রসঙ্গে মন তাহার কোনকালেই সায় দিতে চাহিত না। ইহাতে মঙ্গল নাই, ইহা ভাল নয়—তাহার রুচি ও আজন্ম সংস্কার এ কথা অনুক্ষণ তাহার কানে কানে বলিত। অথচ, শাস্ত্রীয় অনুশাসনগুলার মধ্যেও যে ইহাদের প্রতি গভীর অবিচার নিহিত আছে এ সত্য তাহার ন্যায়নিষ্ঠ চিত্ত কিছুতেই অস্বীকার করিতে পারিত না।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
  • সন্ধ্যাবেলা কাজ বন্ধ করিয়া পুনরায় নৌকায় ফিরিয়া আসিলাম। সাঁওতালগণ এক ঝুড়ি মৃত মশা সঙ্গে আনিয়াছিল। শুঁড় ও ডানা ও পা ফেলিয়া দিয়া সাঁওতালেরা মশা পোড়াইয়া ভক্ষণ করিল। তাহারা বলিল যে, ইহার মাংস অতি উপাদেয়, ঠিক বাদুড়ের মাংসের মত। আমাকে একটু চাকিয়া দেখিতে বলিল, কিন্তু আমার রুচি হইল না।
    • ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ডমরু-চরিত - ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬
  • আজ অধিকার কাড়বার বেলা তারা যে-সব উচ্চ-অঙ্গের কথা বলে তাতে বোঝা যায়, তাদের নামে রুচি’ আছে; কিন্তু কাল যখন ‘জীবে দয়া’র দিন আসবে তখন দেখব, আমিষের প্রতি জিহ্বার লেলিহান চাঞ্চল্য। কারণ, নামটা হচ্ছে মুখে, আর লোভটা হচ্ছে মনে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রায়তের কথা, কালান্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • বাইরে থেকে মনের মধ্যে সুন্দর যে পথে আসছে অসুন্দরও সেই পথ ধরেই আনাগোনা করছে। বসন্তের হাওয়া গায়ে লাগে, আবার বসন্ত রোগ সেও গায়ে লাগে—দুয়ের বেলাতেই শরীরে কাঁটাও দিয়ে ওঠে, কিন্তু মন বিচার করে’ বলে এটা সুন্দর ওটা ভয়ঙ্কর বিশ্রী। দাঁতের বেদনা সুন্দর অবস্থা কেউ বলে না, এখানে ব্যক্তিগত রুচি নিয়ে কথাই ওঠে না, কিন্তু দাঁতগুলি কেমন তার বেলা রুচিভেদে তর্ক ওঠে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসুন্দর, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১২
  • যারা আমাদের একশো বা দু’শো বছর পর আসবে, তারা আমাদের ঘৃণা করবে, কারণ আমরা এত বোকাভাবে ও রুচিহীনভাবে জীবন কাটিয়েছি। হয়তো তারা সুখী হওয়ার উপায় খুঁজে পাবে।
  • সুন্দর বস্তু কেন সুন্দর তাহা বুঝিতে পারা, অন্য সমস্ত সুন্দর বস্তুর সহিত তুলনা করিয়া তাহাকে তাহার যথাযোগ্য আসন দেওয়া, একটা সুন্দর বস্তু হইতে দশটা সুন্দর বস্তুর কথা মনে পড়া, অবস্থাবিভেদে একটি সুন্দর বস্তুর সৌন্দর্য্যবিভেদ কল্পনা করিতে পারা কি সকলের সাধ্য? সকল চক্ষুই কি শরীরী পদার্থের মধ্যে অশরীরী কি-একটি দেখিতে পায়? অল্পই হউক আর অধিক হউক কল্পনা ত সকলেরই আছে। উন্মাদগ্রস্ত ব্যক্তির অপেক্ষা কল্পনা কাহার আছে? কল্পনা প্রবল হইলেই কবি হয় না। সুমার্জ্জিত সুশিক্ষিত ও উচ্চ শ্রেণীর কল্পনা থাকা আবশ্যক। কল্পনাকে যথাপথে নিয়োগ করিবার নিমিত্ত বুদ্ধি ও রুচি থাকা আবশ্যক করে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পিপেলস্ প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৩
  • কোনও ব্যক্তি বা বিদ্বৎসংঘের ফরমাশে ভাষার সৃষ্টি স্থিতি লয় হতে পারে না। শক্তিশালী লেখকদের প্রভাবে ও সাধারণের রুচি অনুসারে ভাষার পরিবর্তন কালক্রমে ধীরে ধীরে ঘটে। কিন্তু প্রকৃতির উপরেও মানুষের হাত চলে। সাধারণের উপেক্ষার ফলে যদি একটা বিষয় কালােপযোগী হয়ে গড়ে না ওঠে, তথাপি প্রতিষ্ঠাশালী কয়েকজনের চেষ্টায় অল্পকালেই তার প্রতিকার হতে পারে। অতএব সাধু আর চলিত ভাষার সমস্যায় হাল ছেড়ে দেবার কারণ নেই।
    • রাজশেখর বসু, সাধু ও চলিত ভাষা, লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- রঞ্জন পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮২
  • বিনয় নিজের কৃত কর্মে প্রথমটা স্তম্ভিত হইয়া গেল। তাহার পরে বাড়ি গিয়া তাহার বুকের মধ্যে শেল বিঁধিতে লাগিল। এই ক্ষণকালের মধ্যেই গোরাকে সে যে কত বড়ো একটা আঘাত দিয়াছে তাহা মনে করিয়া তাহার আহারে বিশ্রামে রুচি রহিল না।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা, পরিচ্ছেদ ১৯, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৬
  • ভীষ্ম দুর্যোধনকে বললেন, বৎস, তুমি অর্জুনকে জয় করতে পারবে না, তাঁর সঙ্গে সন্ধি কর। পাণ্ডবদের সঙ্গে তোমার সৌহার্দ্য হ’ক, তুমি তাঁদের অর্ধ রাজ্য দাও, যুধিষ্ঠির ইন্দ্রপ্রস্থে যান, তুমি মিত্রদ্রোহী হ’য়ে অকীর্তি ভোগ ক’রো না। আমার মৃত্যুতেই প্রজাদের শান্তি হ’ক, রাজারা প্রীতির সহিত মিলিত হ’ন, পিতা পুত্রকে, মাতুল ভাগিনেয়কে, ভ্রাতা ভ্রাতাকে লাভ করুন। মুমূর্ষু লোকের যেমন ঔষধে রুচি হয় না, দুর্যোধনের সেইরূপ ভীষ্মবাক্যে রুচি হ’ল না।
    • কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, ভীষ্মবধপর্বাধ্যায়, অনুবাদক- রাজশেখর বসু, মহাভারত - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০৭-৪০৮
  • হিন্দিতে প্রবাদ আছে 'আপ্ রুচি খানা—পর রুচি পহেরনা’, খাবারের স্বাদ আমাদের প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভাবে নিতে হয় সুতরাং সেখানে আমাদের স্বরাজ, কিন্তু পরণের বেলায় পরে যেটা দেখে’ সুন্দর বলে সেইটেই মেনে চলতে হয়, না হলে নিন্দে; সুতরাং সেখানে কেউ জোর ক’রে বলতে পারে না এইটেই পরি পাঁচজনে যা বলে বলুক, আমরা নিজের বুদ্ধিকেও সেখানে প্রাধান্য দিতে পারিনে, দেশ কাল যে সুন্দর পরিচ্ছদের সম্মান করে তাকেই মেনে নিতে হয়। একটা কথা কিন্তু মনে রাখা চাই, সাজ গোজ পোষাক পরিচ্ছদ ইত্যাদির সম্বন্ধে কিছু ওলট পালট সময়ে সময়ে যে হয়ে আসছে তা ঐ ব্যক্তিগত স্বাধীন রুচি থেকেই আসছে। সুতরাং সব দিক দিয়ে সুন্দর অসুন্দরের বোঝা-পড়া আমাদের ব্যক্তিগত রুচির উপরেই নির্ভর করছে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌন্দর্যের সন্ধান, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯২-৯৩
  • যে লোক আপনাকেই বড়ো করে চায় সে আর-সমস্তকেই খাটো করে। যার মনে বাসনা আছে সে কেবল সেই বাসনার বিষয়েই বুদ্ধ, বাকি সমস্তের প্রতিই উদাসীন। উদাসীন শুধু নয়, হয়তো নিষ্ঠুর। এর কারণ এই, প্রভুত্বে কেবল তারই রুচি যে ব্যক্তি সমগ্রের চেয়ে আপনাকেই সত্যতম ব’লে জানে; বাসনার বিষয়ে তারই রুচি যার কাছে সেই বিষয়টি সত্য, আর-সমস্তই মায়া। এই-সকল লোকেরা হচ্ছে যথার্থ মায়াবাদী।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্ববোধ, শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক-বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০ - ৪১
  • অনেক গল্পকারও পাঠকসাধারণের স্বাভাবিক সুস্থ রুচির দিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক মনে করেন না। লােকে বিকৃত প্রেম আর লালসার চিত্র চায়, রােমাঞ্চ চায়, সেজন্য আমাদের কথাগ্রন্থে তাই থাকে—এ কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়। গল্পকার নিজের রুচি অনুসারেই লেখেন এবং তিনি যদি শক্তিমান হন তবে পাঠকবর্গের মনেও তার রুচি সঞ্চারিত হয়। পাঠক ফরমাশ করে না, লেখকের কাছ থেকে যা পায় তাই হাল ফ্যাশন বলে মেনে নেয়।
    • রাজশেখর বসু, নিসর্গচর্চা, বিচিন্তা - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৩
  • রুচি অনুসারে একই জিনিষ সুন্দর বা অসুন্দর আস্বাদ দেয়। চীনে বাড়ীতে গিয়ে দেখলেম এক সুন্দর কাচের বাটিতে ছেলেরা শুটকি মাছ খাচ্ছে; বাটিটা সুন্দর লাগলো, আহার্যের গন্ধটা কিন্তু চেনা নয় বলেই আমার নাকে ভারি অসুন্দর ঠেকলো। এই ব্যক্তিগত রুচি অরুচি ইত্যাদির উপরে যে রচনা উঠতে পারলে তাই যথার্থ সুন্দর হয়ে উঠলো।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসুন্দর, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৭-২১৮
  • আমাদের দেশে একে ত লাইব্রেরীর অভাব, তারপর লাইব্রেরী যেখানে আছে সেখানে পাঠকের অভাব। সাময়িক পত্রে এখন, চুট্‌কী গল্পই বেশী। এতে পাঠকের রুচি বিকৃত হ’য়ে যায়। তাঁরা আর কঠিন ভাবপূর্ণ বিষয় পড়তে পারেন না, ঐ চানাচুর, সাড়ে আঠার ভাজাতেই মস্‌গুল্ হ’য়ে থাকেন। কিন্তু চাই ভাল জিনিষ। উৎকৃষ্ট বিষয়ের অনুশীলন কর্‌তে লোকের যাতে প্রবৃত্তি ও রুচি জন্মে—তারই বন্দোবস্ত কর্‌বার জন্যে আমাদের সচেষ্ট থাক্‌তে হবে।
    • প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পাঠাগার ও প্রকৃত শিক্ষা, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬৯
  • পশু ও মানুষের মধ্যে একটা বড়োরকমের পার্থক্য হচ্ছে মন। পশু যখন তৃণভূমিতে বিচরণ করে, আমমাংসের লোভে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অতিভোজনে নিদ্রা যায়, কিংবা প্রজননক্রিয়ার দুর্নিবার আকর্ষণে সঙ্গিনীকে আয়ত্তের মধ্যে আনে, তখন সে নিতান্তই আহার-নিদ্রা-ভয়-মৈথুন প্রভৃতি স্কুল শারীরবৃত্তির দ্বারাই চালিত হয়। কিন্তু মানুষ তদতিরিক্ত প্রয়োজনের বশে অরণ্য ছেড়ে গুহাভ্যন্তরে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে, আমমাংসের বদলে অগ্নিপক মাংসে তার রুচি বাড়ে, স্কুল দেহবাসনা একপ্রকার নির্দেহী আবেগ, আনন্দ ও বেদনার জ্যোতির্ময় ঊর্ধ্বায়ন লাভ করে, যাকে বলা যাবে প্রেম। আসলে মানুষ মনোজীবী, পশুরা দেহজীবী।
  • মানুষের অন্তর অন্যের সঙ্গে মিলতে চায়, ভাব করতে চলে, কিন্তু ভাবের লোকটি সহজে তো খুজে পায় না, ফলেই সেখানে একের রুচি অন্যের রুচিতে ভিন্নতা নিয়ে দুটি মানুষ পৃথক। এই ভাবে মানুষ এককালে দলে দলে পাশাপাশি থেকেও ছিল রুচি দিয়ে পৃথক, ক্রমে মানুষ নিজের বড় সমাজ বড় ধর্ম এমনি সব বাঁধন নিজে সৃষ্টি করে দলে ভারি হয়ে একটি কৃত্রিম ঐক্য পেয়ে বিভিন্ন সমাজ ও বিভিন্ন জাতি হ’য়ে উঠলো, এবং সেই জাতির কুলানুগত আচার ব্যবহার শিক্ষা দীক্ষার ধারা ধরে চলতে চলতে অন্ততরের ভাবনা-চিন্তাতেও দেখতে এক হ’য়ে উঠলো দুটি ভিন্ন রুচির মানুষ—এ যেন বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতে থাকলো।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৩
  • রসবোধ বা উচ্চাঙ্গের সাহিত্য-জ্ঞান সকলের কাছে আশা করাই অসঙ্গত; কিন্তু প্রাকৃত রুচি ও অশিক্ষিত মনোবৃত্তি যদি শিক্ষিত সমাজেও প্রশ্রয় পায়, তবে সর্ব্ববিধ সাহিত্যিক আলোচনাই নিষ্ফল। আধুনিকত্বের ধ্বজাধারী নব্য রসিকসম্প্রদায় যে রুচি ও রসবোধকে সদম্ভে প্রচার করিতেছেন, তাহার বিরুদ্ধে কিছু বলিয়া লাভ নাই; কারণ যাহা নিতাম্ভই সাময়িক, এবং সেই হেতু বহুব্যাপ্ত, তাহাকে লইয়া বিচার চলে না।
    • মোহিতলাল মজুমদার, অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র, বিবিধ কথা -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭
  • খায় না সে দানাপানি—ঘাস পাতা বিচালি,
    খায় না সে ছোলা ছাতু ময়দা কি পিঠালি;
    রুচি নাই আমিষেতে, রুচি নাই পায়সে,
    সাবানের সূপ আর মোমবাতি খায় সে।
    আর কিছু খেলে তার কাশি ওঠে খক্‌খক্,
    সারা গায়ে ঘিন্‌ঘিন্ ঠ্যাং কাঁপে ঠক্‌ঠক্।
    • সুকুমার রায়, ট্যাঁশ্ গরু, আবোল তাবোল, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২
  • নিজের রুচি অনুসারে দেখার সঙ্গে রসিকের দেখার পার্থক্য এই যে রসিক তিনি গণ্ডির হিসেব জেনে গণ্ডি পেরিয়ে জিনিষটিকে প্রাণ দিয়ে ধরার সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন, আর যে নিজের রুচি অনুসারে এটা ওটা দেখে সে গণ্ডির হিসেব একেবারেই অগ্রাহ্য করে, যেটা তার ভালো সেইটেই, সবার ভালো ঠাউরে নেয়। নিছক নিজত্ব নিয়ে আছে, কোনো জাতির সঙ্গে কোনো কালান্তগত প্রথার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন শিল্প বিশ্বের কোথাও নেই, সুতরাং একেবারে আপ রুচি নিয়ে রসের জগতে রচনার জগতে বিচরণ করতে গেলে এমন হ’তে পারে যে, হয়তে হাতে মণি উঠলে কিন্তু ফেলে দিলেম সেটা ঢেল। বলে’, কিম্বা শবরীর হাতের গজমুক্তার মতো নিজের কাছে রাখলেম দিবির খেলার জিনিষ বলে’, মর্মটা অজ্ঞাত রইলো।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৩
  • খাবারওয়ালাকে যদি প্রশ্ন করি—মিষ্টান্নে রং দাও কেন, বিকট বিলিতী গন্ধ দাও কেন, সে উত্তর দেয়, খদ্দের এইরকম রং আর গন্ধ চায় যে। কথাটা পুরােপুরি সত্য নয়। তীব্র কৃত্রিম গন্ধযুক্ত সবুজ রঙের গ্রীন ম্যাংগাে সন্দেশ পছন্দ করে এমন লােক হয়তাে আছে। কিন্তু আসল কথা, খাবারওয়ালা নিজের রুচি আর বুদ্ধি অনুসারে যে রং দেয়, গন্ধ দেয়, অদ্ভুত অদ্ভুত নাম দেয়, ক্রেতা তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, মনে করে এই হচ্ছে আধুনিক ফ্যাশন। খাদ্যের স্বাভাবিক বর্ণ গন্ধ স্বাদ অনেকেরই ভাল লাগে, কিন্তু মিষ্টান্নকার তা বােঝে না।
    • রাজশেখর বসু, নিসর্গচর্চা, বিচিন্তা - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৩
  • যাইবার কয় দিন পূর্ব্ব হইতে কমল আবার বড় অসুস্থ বোধ করিতে লাগিল। চক্ষু জ্বালা করে, মাথা ধরে, আহারে রুচি নাই, মুখ বিস্বাদ,— শরীরে সুখ নাই। কমলের ঘুসঘুসে জ্বর হইতেছিল। শরীরের শক্তি ক্রমে ক্ষয় হইয়া আসিতেছিল; অথচ সে ক্ষয় ধীরে ধীরে হইতেছিল,—সহজে অনুভূত হয় না। নিয়তির কঠোর কার্য্য প্রকৃতি যেন স্নেহবশে যথাসম্ভব যাতনাবিহীন করিতেছিল।
    • হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, প্রকাশক- বসুমতী পুস্তকবিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭১
  • মানুষ যখন নিজেই একটি ব্যক্তি তখন এই ব্যক্তিগত রুচি অরুচি লোপ করে’ সম্পূর্ণ নিরাসক্ত ও নিরপেক্ষভাবে কিছু রচনা করা তার পক্ষে অসম্ভব। রচনার বিষয় নির্বাচন সেও রুচি অনুসারে করে’ চলে মানুষ; যে চা নিজের জন্য প্রস্তুত করা গেল সে আমার রুচি অনুসারে চিনি দুধ না দিয়ে যেমন তেমন পাত্রে খেলেও কারো কিছু বলবার নেই, কিন্তু পরকে যেখানে নিমন্ত্রণ দিচ্ছি সেখানে পরের মুখ অনেকখানি চেয়ে কার্যটি নিষ্পন্ন করতে হয়, না হ’লে ব্যাপার পণ্ড হতেও পারে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসুন্দর, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৮
  • ব্যক্তিগত রুচি বা রসবোধ লইয়া বিবাদ করা চলে না—বঙ্কিমচন্দ্রের কাব্যে যে রস আছে, তাহা আধুনিক মনোধর্ম্ম বা জৈব-প্রবৃত্তির অনুকূল না হইতে পারে—যেখানে ধর্ম্মগত বিরোধ আছে, সেখানে রসবিচার অবান্তর। কিন্তু এইরূপ মনোধর্ম্ম ও ব্যক্তিগত সংস্কার, বা বিশেষ প্রবৃত্তির বশবর্ত্তী হইয়া যাহারা সাহিত্যের সার্ব্বভৌমিক আদর্শকে অস্বীকার করে, এবং সাহিত্যসমালোচনা বা রসবিচারের মূল নীতি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হইয়াও যুক্তি-তর্কের আস্ফালন করে, তাহারাই যদি বাঙালী শিক্ষিত-সমাজের মুখপাত্ররূপে গণ্য হয়, তবে এ জাতির শিক্ষা-দীক্ষার পরিচয় সত্যই লজ্জাজনক।
    • মোহিতলাল মজুমদার, অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র, বিবিধ কথা -মোহিতলাল মজুমদার, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮
  • রুচির সঙ্গে যোগ দেয় নিজের স্বভাব, চিন্তার অভ্যাস, সমাজের পরিবেষ্টন ও শিক্ষা। এগুলি যদি ভদ্র ব্যাপক ও সুক্ষবোধশক্তিমান হয় তা হলে সেই রূচিকে সাহিত্যপথের আলোক ব’লে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু রুচির শুভসম্মিলন কোথাও সত্য পরিণামে পৌঁচেছে কি না তাও মেনে নিতে অন্য পক্ষে রুচিচর্চার সত্য আদর্শ থাকা চাই। সুতরাং রুচিগত বিচারের মধ্যে একটা আনিশ্চয়তা থেকে যায়। সাহিত্যক্ষেত্রে যুগে যুগে তার প্রমাণ পেয়ে আসছি।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গদ্যকাব্য, সাহিত্যের স্বরূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮
  • রুচি বদলায় আদর্শও বদলায়, যেটা ছিল এককালের চাল সেটা হয় অন্যকালের বেচাল, ছিল টিকি এল টাই, ছিল খড়ম এল বুট, এমনি কত কি! গাছগুলো অনেককাল ধরে’ এক অবস্থায় রয়েছে—সেই জন্যে এই গুলোকেই আদর্শ গাছ ইত্যাদি বলে’ আমাদের মনে হয় কিন্তু পৃথিবীর পুরাকালের গাছ পাতা ফল ফুলের আদর্শ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা—অথচ তারাও তো ছিল সুন্দর!
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌন্দর্যের সন্ধান, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৫
  • পথের দুদিকের সৌন্দর্য আমাদের দেশের মতই। ফ্রান্‌সের সৌন্দর্য বোধে এবং ব্রিটেনের সৌন্দর্য বোধে অনেক প্রভেদ। ফ্রেন্‌চরা গাছের ডাল কাটে যখন গাছে নতুন পাতা গজায়। এরা শুকনা ডালও ভাংগে না। আমাদের দেশে অভাবে পড়ে অনেকে আজকাল হয়ত শুকনা ডাল ভাংগে কিন্তু পূর্বে তা করত না। এখানে ফ্রেন্‌চ রুচি এবং ব্রিটিশ রুচিতে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
    • রামনাথ বিশ্বাস, আজকের আমেরিকা - রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয়- সংস্করণ, প্রকাশক- পর্যটক প্রকাশনা ভবন, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
  • অপূর্ব্ব বলিয়াছিল সংসারে তাহার আর রুচি নাই, সন্ন্যাসই তাহার একমাত্র শ্রেয়ঃ। শশী এই প্রস্তাব অনুমোদন করিতে পারে নাই, সে যুক্তি-সহযোগে খণ্ডন করিয়া বুঝাইতেছিল যে, এরূপ অভিসন্ধি ভাল নহে, কারণ সন্ন্যাসের মধ্যে আর মজা নাই; বরঞ্চ, বরিশাল কলেজে প্রফেসারির আবেদন যদি মঞ্জুর হয়ত গ্রহণ করাই কর্ত্তব্য।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮৪-২৮৫
  • স্ত্রী-স্বাধীনতা বিষয়ে অতি সাবধানে কথাবার্তা কহা উচিত। ইংলন্‌ডে গেলেই বঙ্গীয় ইউরোপ-যাত্রীদের চর্মচক্ষে কী-যে এক বিস্ময়জনক ছবি পড়ে, তাহাতে করিয়া তাঁহাদের জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন একেবারেই বন্ধ হইয়া যায়; ইংলন্‌ডের জলবায়ু স্বতন্ত্র, ইংলন্‌ডের পুরাবৃত্ত স্বতন্ত্র, ইংলন্‌ডের জনসমাজের রুচি স্বতন্ত্র—আমাদের দেশের জলবায়ু পুরাবৃত্ত জনসমাজের রুচি স্বতন্ত্র- ইংলন্‌ডীয় প্রকৃতির উপর ইংলন্‌ডের সমাজ প্রতিষ্ঠিত, আমাদের দেশীয় প্রকৃতির উপর আমাদের দেশীয় সমাজ প্রতিষ্ঠিত—ইউরোপ-যাত্রী বঙ্গযুবকদের এ জ্ঞানটি সহসা বিলুপ্ত হইয়া যায়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ষষ্ঠ পত্র, য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৭
  • মন সুন্দরের দিকে ফিরে ফিরে চায় অসুন্দরের দিক থেকে বারে বারে সরে’ আসে—এই জানা কথা বেশি করে’ জানানো নিষ্প্রয়োজন, কিন্তু যারি থেকে মন সরে পড়তে চায় তাই অসুন্দর নাও হ’তে পারে— হয়তো আমাদের নিজেদের দেখার ভুলে চোখের সামনে থাকতেও সুন্দরকে চিনতে পারলেম না এমনো হওয়া বিচিত্র নয়। সুন্দরে অসুন্দরে একটা পরিষ্কার ভেদাভেদ নির্ণয় করে’ দেওয়া কঠিন ব্যক্তিগত রুচি ও অরুচির হিসেবে দেখে চল্লে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসুন্দর, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১২
  • নির্বাচনের দোষে মাত্রাজ্ঞানের অভাবে অতিরিক্ত বাজে উপাদান এসে পড়ে, অভীষ্ট স্বাদে অবাঞ্ছিত স্বাদ জন্মায়। তার উপর আবার ভোক্তার পূর্ব অভ্যাস আছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা আছে, ব্যক্তিগত রাগদ্বেষ আছে। এত বাধা বিঘ্ন অতিক্রম ক’রে, ভোক্তার রুচি গঠিত ক’রে, কল্যাণের অন্তরায় না হয়ে, যাঁর সৃষ্টি স্থায়ী হবে, তিনিই শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা।
    • রাজশেখর বসু, রস ও রুচি, লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- রঞ্জন পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৩

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]