বিষয়বস্তুতে চলুন

রুপা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

রুপা বা রৌপ্য বা রুপো বা রূপা একটি ধাতব মৌলিক পদার্থ। রুপার অস্তিত্ব সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জানা ছিল। এমনকি প্রাচীনকালে সোনার চেয়ে রুপা দামী ছিল। কারণ সোনা মূলত মুদ্রা ও অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু রুপা অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ছাড়াও জলপাত্র তৈরীতে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রুপার খনির সন্ধান জানতো। যেকোনো ধাতুর চেয়ে এই ধাতুটির সর্বোচ্চ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা, তাপ পরিবাহিতা রয়েছে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • রৌপ্য জল অপেক্ষা প্রায় এগার গুণ ভারি। রৌপ্য শুক্ল ও উজ্জ্বল। স্বর্ণে যেমন পাতলা পাত ও সরু তার হয় ইহাতেও প্রায় সেই রূপ হইতে পারে। রৌপ্য এমত ভারসহ সে এক যবোদয় স্থূল তারে ৪ মন ১১ সের ভার ঝুলাইলেও ছিঁড়িয়া পড়ে না।
    পৃথিবীর প্রায় সকল প্রদেশেই রূপার আকর আছে। কিন্তু আমেরিক দেশে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক।
    রূপাতে টাকা, আধুলি, সিকি, দুআনি নির্ম্মাণ করে। রূপাতে নানা প্রকার অলঙ্কার এবং ঘটী. বাটী প্রভৃতিও নির্ম্মাণ করিয়া থাকে।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ধাতু, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫
  • আমার রাজার বাড়ি কোথায় কেউ জানে না সে তো!
    সে বাড়ি কি থাকত যদি লোকে জানতে পেত।
    রুপো দিয়ে দেয়াল গাঁথা, সোনা দিয়ে ছাত,
    থাকে থাকে সিঁড়ি ওঠে সাদা হাতির দাঁত।
    সাত-মহলা কোঠায় সেথা থাকেন সুয়োরানী,
    সাত রাজার ধন মানিক-গাঁথা গলার মালাখানি।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজার বাড়ি, শিশু- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৫
  • আকরিকের মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, টিন, পাথুরিয়া কয়লা প্রচুর পাওয়া যায়। লৌহ অধিক পাওয়া যায় না। লৌহের অনেক কার্য্য তাম্র দ্বারা সম্পন্ন হইয়া থাকে। এখানকার তাম্রের ন্যায় উৎকৃষ্ট তাম্র পৃথিবীর কুত্রাপি পাওয়া যায় না। জাপানীরা ইহা এক ইঞ্চ মােটা ও এক ফুট লম্বা পাত করিয়া বিক্রয় করে। অপকৃষ্ট তাম্র ইষ্টকাকারে বিক্রীত হয়। জাপানে তামার খনিতে সময়ে সময়ে স্বর্ণ পাওয়া যায়। সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত কেহই স্বর্ণখনির কার্য্য করিতে পারে না। এখানকার টিন রৌপ্যের ন্যায় শুভ্র ও উজ্জ্বল। জাপানের নানাস্থানে একরূপ মৃত্তিকা পাওয়া যায়, তাহা হইতে মনােহর বাসন প্রস্তুত হয়। চীনাবাসন বলিয়া ইহা পৃথিবীর নানাদেশে বিক্রয় হইয়া থাকে।
    • উমাকান্ত হাজারী, নব্য জাপান, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
  • রাজা মানিকের দেশে মানিকের চুড়ি নিয়ে, সোনার দেশে সোনার মল গড়িয়ে, মুক্তোর রাজ্যে এলেন।
    সে দেশে রাজার বাগানে দুটি পায়রা। তাদের মুক্তোর পা, মানিকের ঠোঁট, পান্নার গাছে মুক্তোর ফল খেয়ে মুক্তোর ডিম পাড়ে। দেশের রানী সন্ধ্যাবেলা সেই মুক্তোর মালা গাঁথেন, রাতের বেলায় খোঁপায় পরেন, সকাল বেলায় ফেলে দেন।
    দাসীরা সেই বাসি মুক্তোর হার এক জাহাজ রুপো নিয়ে বাজারে বেচে আসে।
    রাজা এক জাহাজ রুপো দিয়ে সুওরানীর গলায় দিতে সেই মুক্তোর এক ছড়া হার কিনলেন।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭
  • সোনা-রুপো আর হীরে-জহরত
    পোঁতা ছিল সবই মাটিতে,
    জহরি যে যত সন্ধান পেয়ে
    নে গেছে যে যার বাটীতে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উপহার, শিশু- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২১
  • অলঙ্কারগুলি বিভক্ত হইলে, একজন দস্যু বলিল, “আমরা সোণা রূপা লইয়া কি করিব, একখানা গহনা লইয়া কেহ আমাকে এক মুটা চাল দাও, ক্ষুধায় প্রাণ যায়—আজ কেবল গাছের পাতা খাইয়া আছি।” একজন এই কথা বলিলে সকলেই সেইরূপ বলিয়া গোল করিতে লাগিল। “চাল দাও”, “চাল দাও”, “ক্ষুধায় প্রাণ যায়, সোণা রূপা চাহি না।” দলপতি তাহাদিগকে থামাইতে লাগিল, কিন্তু কেহ থামে না, ক্রমে উচ্চ উচ্চ কথা হইতে লাগিল, গালাগালি হইতে লাগিল, মারামারির উপক্রম। যে, যে অলঙ্কার ভাগে পাইয়াছিল, সে, সে অলঙ্কার রাগে তাহার দলপতির গায়ে ছুড়িয়া মারিল।
  • ভূ-গর্ভ হইতে তাম্র লৌহ স্বর্ণ রৌপ্য প্রভৃতি ধাতুগুলিকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাহারা বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না। নানা বিজাতীয় বস্তুর সহিত মিশ্রিত হইয়া সেগুলি আকারে প্রকারে এমন বিকৃত অবস্থায় থাকে যে, সেগুলিকে ধাতু বলিয়া চিনিয়া লওয়া কঠিন হয়। এই সকল অবিশুদ্ধ ধাতুকে শুদ্ধ করিবার জন্য যে-সকল উপায় প্রচলিত আছে, তাহাদের কোনটিই সহজ বা অল্পব্যয়সাধ্য নয়।
    • জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
  • ধর্ম্মের স্বর্গীয় জ্যোতির নিকটে স্বর্ণ রৌপ্য হীরকের পার্থিব জ্যোতি কোথায় থাকে? কেবল এক লক্ষ্যের দোষে ধর্ম্মকেও দূষিত মনে হয়। বিষয়-সুখই যাহার লক্ষ্য থাকে, সে পৃথিবীতে ধর্ম্মের হীনাবস্থা ও পাপের স্ফীতভাব দেথিয়া ঈশ্বরের অখণ্ড মঙ্গল স্বরূপেতেও দোষারোপ করিতে প্রবৃত্ত হয়।
    • দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ (১২৭৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬
  • এদিকে সত্যানন্দ অন্য সুরঙ্গ দিয়া অবতরণপূর্ব্বক এক নিভৃত ভূগর্ভকক্ষায় নামিলেন। সেখানে জীবানন্দ ও ভবানন্দ বসিয়া টাকা গণিয়া থরে থরে সাজাইতেছে। সেই ঘরে স্তূপে স্তূপে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, হীরক, প্রবাল, মুক্তা সজ্জিত রহিয়াছে। গত রাত্রের লুঠের টাকা, ইহারা সাজাইয়া রাখিতেছে।
  • সোনা রূপা ও তামা অনেক সময়ে খাঁটি ধাতুর আকারেও পাওয়া যায় এবং খনিজ তাবস্থায় তাহাদের শোধনও লোহার চাইতে অনেক সহজ। সেইজন্য তামা প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার শিখিবার পরেও মানুষে অনেকদিন পর্যন্ত লোহা বানাইবার কৌশল বাহির করিতে পারে নাই।
    • সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫০
  • সকল দেশেই নানা প্রকার মুদ্রা চলিত আছে। আমাদের দেশে যে সকল মুদ্রা চলিত, তন্মধ্যে পয়সা তাম্রনির্ম্মিত; দুআনি, সিকি, আধুলি, টাকা রৌপ্যনির্ম্মিত; আর ঐরূপ সিকি, আধুলি, টাকা স্বর্ণনির্ম্মিতও আছে। স্বর্ণনির্ম্মিত টাকাকে সুবর্ণ ও মোহর কহে।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্রয় বিক্রয়-মুদ্রা, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
  • পৃথিবীর সব জাত বিশ্বাস করে যে, তার মত ভুবনবরেণ্য জাত আর দুটো নেই। গরীব জাতের তার উপর আরেকটা বিশ্বাস যে, তার দেশের মাটি খুঁড়লে সোনা রুপো তেল বেরবে তার জোরে সে বাকী দুনিয়া, ইস্তেক চন্দ্রসূর্য কিনে ফেলতে পারবে।
  • যা ভয় করছিলুম ঠিক তাই। আমার হাতে একটা রুপো আর তামার তারে জড়ানো পলা-বসানো আংটি ছিল। মেম হঠাৎ সেটাকে দেখে বললে- - হাউ লভ্‌লি! দেখি বাবু কি রকম আংটি।
    আমি ভয়ে ভয়ে হাতটি এগিয়ে দিলুম, যেন আঙুল হাড়া অস্তর করাচ্ছি। মেম ফস করে আংটিটি খুলে নিয়ে নিজের আঙুলে পরিয়ে বললেন বিউচিফুঃ!
    • রাজশেখর বসু, স্বয়ংবরা, কজ্জলী - পরশুরাম, ষষ্ঠ সংস্করণ, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২০
  • খনির রাজা বল্লেন, “ভয় কি? এখনি আলাে হবে। এই ত আমার দেশ, যেখানে সােণা, রূপা, তামা, শীশা, এই সব পাওয়া যায়।”
    খানিক পরে অনেক গুলাে ভূতের মত লােক মশাল হাতে নিয়ে গাড়ীর কাছে এল; তখন মশালের আলােতে মুরলা দেখ্‌ল কি আশ্চর্য দেশ। লাল রংএর তামার রাস্তা, দুইধারে বন, সে বনের গাছপালা সব শাদা শীশার। বনের পরে প্রকাণ্ড মাঠ, তাতে রূপার ঘাস ঝক্‌ঝক্ কর্‌ছে; সেই মাঠের মাঝখানে সােণার রাজবাড়ী। সেই বাড়ীর দরজার কাছে এসে রাজা বল্লেন, “আমি এই দেশের রাজা; এই আমার বাড়ী। তুমি এখানকার রাণী হলে।”
    • সুখলতা রাও, ঘুমের দেশ, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, কলকাতা, মুদ্রক- ব্রাহ্মমিশন প্রেস, প্রকাশসাল= ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০-৯১
  • যে-সমস্ত জিনিস মানুষে সর্বদা ব্যবহার করে, আজ যদি হঠাৎ তাহার কোনোটির অভাব পড়িয়া যায়, তাহা হইলে ঠিক বোঝা যায়, কোন জিনিসটার যথার্থ মূল্য কতখানি। সোনা রূপা মণি মুক্তা সব যদি হঠাৎ একদিন পৃথিবী হইতে লোপ পায়, তবে অনেক শৌখিন লোকে হা-হুতাশ করিবে-মানুষের টাকা-পয়সার কারবারের বিষম গোলোযোগ উপস্থিত হইবে, রূপার অভাবে ফটোগ্রাফের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হইয়া আসিবে এবং ছোটোখাটো অনেকরকমের অসুবিধার সৃষ্টি হইবে।
    • সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৯
  • গোল কোরো না গোল কোরো না/ছোটন ঘুমায় খাটে।/এই ঘুমকে কিনতে হলো/নওয়াববাড়ির হাটে।/সোনা নয় রুপা নয়/দিলাম মোতির মালা/তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে/ঘর করে উজালা।
  • দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য চলার মানে হচ্ছে এদের উভয়ের জিনিষপত্র বদলাবদলি করে নেওয়া। একটি দেশ কেবল কিনেই যাবে আর অন্যটি খালি বেচতেই থাকবে, এ কখনও সম্ভব নয়। সে চেষ্টা করতে গেলে সমস্ত দামই সোনা বা রূপো দিয়ে দিতে হবে; দু দিন পরেই দেখা যাবে, আর দেবার মতো সোনার রুপো অবশিষ্ট নেই, সুতরাং এই একপেশে বাণিজ্য নিজে থেকেই থেমে যাবে। দুই দেশে পরস্পর বাণিজ্য যখন চলে তখন দু পক্ষের মধ্যে পণা-বিনিময় হয়, তার সামঞ্জস্যও সে নিজেই খাড়া করে নেয়—কখনও সে বাণিজ্যের লাভের পাল্লা এ দেশের দিকে বেশি ঝুঁকে যায়, কখনও-বা ও দেশের দিকে ঝোঁকে।
    • জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫০৩
  • আর এক স্থানে, (গৃহদির সম্মুখে, খানিকটা “পদ-পথ” জুড়িয়া) কতকগুলি লোক মিহি কাপড়ের উপর নক্সা ছাপিতেছে। এই কাপড়গুলা বাষ্পবৎ স্বচ্ছ; লাল, সবুজ কিংবা হল‍্দে জমির উপর,—রূপালি কিংবা সোনালি রঙের ছোট-ছোট নক‍্সা; এই নক‍্সাগুলি আদৌ স্থায়ী নহে; একফোঁটা বৃষ্টির জলে সমস্তই ধুইয়া যায়। কিন্তু উহার বর্ণবিন্যাস অতি চমৎকার; এই সকল কাপড় অতি “খেলো” হইলেও, এখন এই মুক্তবায়ুসেবী শিল্পীদিগের হস্ত হইতে বাহির হইয়া আইসে, তখন যেন উহা কোন পরীর মোহন অবগুণ্ঠন বলিয়া মনে হয়। সোনা, সোনা, এখানে সর্ব্বত্রই সোনা; অথবা তাহার অভাবে ঝুটা-জরি, সোনালি পাত—এমন কোন কিছু —যাহা দীপ্ত ভানুর উজ্জ্বল কিরণে ঝিক‍্মিক্ করে, কিংবা কুতূহলী দর্শকের নেত্ররঞ্জন করে।
    • পিয়ের-লোটি, হৈদরাবাদে, ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, পিয়ের-লোটির ফরাসী থেকে অনুবাদ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৪
  • স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র এই তিনটি প্রধান ধাতু হইতে আকরিক যৌগিক পদার্থ আজকাল এত সহজে বিচ্ছিন্ন করা হইতেছে যে, তাহার বিবরণ শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়।
    • জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
  • মুদ্রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতুখণ্ড। স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র এই তিন প্রকার ধাতুতে মুদ্রা নির্ম্মিত হয়। এই সকল ধাতু দুষ্পাপ্য, এই নিমিত্ত ইহাতে মুদ্রা নির্ম্মণ করে। দেশের রাজা ভিন্ন আর কোন ব্যক্তিরই মুদ্রা প্রস্তুত করিবার অধিকার নাই! রাজাও স্বহস্তে মুদ্রা প্রস্তুত করেন না। মুদ্রা প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত রাজার লোক নিযুক্ত করা থাকে। রাজা স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র ক্রয় করিয়া দেন। ঐ নিযুক্ত ভূত্যেরা উহাতে মুদ্রা প্রস্তুত করে। যে স্থানে মুদ্রা প্রস্তুত করা যায় তাহাকে টাকশাল কহে। কলিকাতা রাজধানীতে একটী টাকশাল আছে।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্রয় বিক্রয়-মুদ্রা, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭
  • হােয়াইট দ্বীপে কয়লা, কেরাসিন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের আকর আছে। জাপানের তাম্রখনি পৃথিবীমধ্যে বিখ্যাত। এক্ষণে সমগ্র জাপান সাম্রাজ্যে ৫৭টী রৌপ্য ১৩৬টী তাম্র-রৌপ্য এবং ৭২টী মিশ্রধাতুর খনি আছে। এই সমস্ত খনি হইতে গত পূর্ব্ব বর্ষে ৯ লক্ষ মণ তাম্র ৬২ হাজার মণ স্বর্ণ, দেড় লক্ষ মণ রৌপ্য, ২৫ কোটী মণ কয়লা উত্তোলিত হইয়াছিল। গতবর্ষে জাপানে যে সুবর্ণখনি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার মূল্য আনুমানিক হিসাবে ৪০০ কোটী স্থির হইয়াছে।
    • উমাকান্ত হাজারী, নব্য জাপান, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯
  • জগতের লোকে এখন বুঝিবেন, প্রকৃতির এই যে বিচিত্র লীলা তাহা নব্বইটি মূলপদার্থ অবলম্বন করিয়া চলিতেছে না,—সকল পরিবর্ত্তনের গোড়ায় একই বর্ত্তমান। স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরক, লৌহ, তাম্র সকল একেরই বিচিত্র রূপ। আল্‌কেমিষ্টরা লৌহকে সুবর্ণে পরিণত করিবার জন্য যে সাধনা আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহা দুঃস্বপ্ন দেখিয়া করেন নাই। লৌহকে সুবর্ণ করিবার জন্য পরশ পাথর এই ভূমণ্ডলে এবং এই প্রকৃতির মধ্যেই আছে।
    • জগদানন্দ রায়, পরশ-পাথর, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
  • যখন সম্পূর্ণ চৈতন্য হইল, দেখিলেন এক অপূর্ব ঘরে একটি দীপ জ্বলিতেছে। তিনি একটি শয্যায় শুইয়া রহিয়াছেন। এরূপ সুরম্য ঘর তিনি কখনো দেখেন নাই। সমস্ত ঘর সুন্দর শ্বেতপ্রস্তর দ্বারা নির্মিত। রৌপ্যের শামাদানে দীপ জ্বলিতেছে ও সমস্ত গৃহ সুগন্ধে আমোদিত করিতেছে। তাহার পালঙ্ক দ্বিরদবদখচিত, সুবর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা বিভূষিত। সম্মুখে একটি রৌপ্য-আধারের উপর এক রৌপ্য-পাত্রে জল রহিয়াছে, নীচে শয্যা হইতে কিঞ্চিৎ দূরে একটি বিচিত্র গালিচার উপর এক যবনকন্যা ও এক খোজা বসিয়া অতি মৃদুস্বরে কথোপকথন করিতেছে।
    • রমেশচন্দ্র দত্ত, মাধবীকঙ্কণ, এগার পরিচ্ছেদ, মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশক- পুস্তকালয়, প্রকাশস্থান- কলকাতা,, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯
  • ভারতবর্ষের অনেক স্থানই বহু লোকাকীর্ণ। শিল্পিগণ শাল, গালিচা, রেসম ও সূতার কাপড় প্রভৃতি প্রস্তুত করে। এই সকল বাণিজ্য দ্রব্যের বিনিময়ে পৃথিবীর অনেকস্থান হইতে স্বর্ণ ও রৌপ্য আসিয়া ভারতবর্ষে জমা হয়। ভারতবর্ষীয়েরা অপরদেশোৎপন্ন দ্রব্য অধিক পরিমাণে ব্যবহার করে না। সুতরাং, এই স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রায় সমস্তই, অন্যত্র না গিয়া, ভারতবর্ষে থাকিয়া যায়। এজন্য, অতি সামান্য অবস্থার লোকেও স্ত্রী কন্যাদিগকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার দিয়া থাকে।
    • আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত, প্রকাশস্থান- কলকাতা,, প্রকাশসাল- ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
  • তারকপুত্রগণ ময় দানবকে ত্রিপুরনির্মাণের ভার দিলে। ময় দানব তপস্যার প্রভাবে একটি স্বর্ণের, একটি রৌপ্যের এবং একটি কৃষ্ণলৌহের পুর নির্মাণ করলেন। প্রথম পুরটি স্বর্গে, দ্বিতীয়টি অন্তরীক্ষে এবং তৃতীয়টি পৃথিবীতে থাকত। এই পুরত্রয়ের প্রত্যেকটি চক্রযুক্ত; দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে শত যোজন, এবং বৃহৎ প্রাকার তোরণ প্রাসাদ মহাপথ প্রভৃতি সমন্বিত। তারকাক্ষ স্বর্ণময় পুরে, কমলাক্ষ রৌপ্যময় পুরে, এবং বিদ্যুন্মালী লৌহময় পুরে বাস করতে লাগল।
    • কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, কর্ণপর্ব, অনুবাদক- রাজশেখর বসু, মহাভারত - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭৫
  • রঘুপতি কহিলেন, “শাহেন শা, রুপা সোনা বা আর কোনো ধাতু চাহি না, আমি এখন শাণিত ইস্পাত চাই। আমার নালিশ শুনুন, আমি বিচার প্রার্থনা করি।”
    সুজা কহিলেন, “ভারী মুশকিল! এখন আমার বিচার করিবার সময় নহে। ব্রাহ্মণ, তুমি বড়ো অসময়ে আসিয়াছ।”
    রঘুপতি কহিলেন, “শাহ্‌জাদা, সময় অসময় সকলেরই আছে। আপনি বাদশাহ, আপনারও আছে; এবং আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, আমারও আছে। আপনার সময়মত আপনি বিচার করিতে বসিলে আমার সময় থাকে কোথা?”
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজর্ষি, অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ, রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০০

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]