লিথুয়ানিয়া

লিথুয়ানিয়া ( লিথুয়ানিয়ান : Lietuvos Respublika ), উত্তর ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। উত্তরের লাতভিয়া ও এস্তোনিয়ার সাথে লিথুয়ানিয়াও একটি বাল্টিক রাষ্ট্র এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তম। ভিলনিয়াস দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী এবং এটি বেলারুশের সাথে সীমান্তে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত।লিথুয়ালিনয়া বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে সুইডেনের বিপরীত তীরে অবস্থিত। এর উত্তর সীমান্তে লাটভিয়া, পূর্ব ও দক্ষিণে বেলারুশ, দক্ষিণ-পশ্চিমে পোল্যান্ড ও কালিনিনগ্রাদ ওবলাস্ত নামক রুশ ছিটমহল।

উক্তি

• বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং ক্রমবর্ধমান প্রকাশের সময়, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন রোধে সোভিয়েত রাষ্ট্রের বিস্তৃত সামরিক সম্পদ ব্যবহারের দীর্ঘস্থায়ী কোনও প্রচেষ্টা করা হয়নি । ইতিমধ্যেই, ১৯৮৬-৭ সালে, সরকার বাল্টিক প্রজাতন্ত্রের দলীয় নেতাদের সমর্থন করার জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যখন সংকট চরমে পৌঁছেছিল, তখন রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আগ্রহী সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর পাল্টা সংস্কার প্রচেষ্টা জর্জিয়া (১৯৮৯), আজারবাইজান (১৯৯০), লিথুয়ানিয়া (১৯৯১), লাটভিয়া (১৯৯১) এবং মলদোভা (১৯৯২) জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল। যাইহোক, এই পদক্ষেপগুলি ছোট আকারের ছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে কিন্তু রাশিয়ার বাইরে বসবাসকারী ২৫ মিলিয়ন রুশদের দ্বারা কোনও উল্লেখযোগ্য সহিংস সমর্থনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি , উদাহরণস্বরূপ, যারা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনের সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । গর্বাচেভ , মার্কসবাদের জাদুকরের শিক্ষানবিশ, গল্পের মতো, শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য কোনও জাদুকর ছাড়া, তিনি কখনও যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিলেন তা চাননি।
  • জেরেমি ব্ল্যাক , দ্য কোল্ড ওয়ার: আ মিলিটারি হিস্ট্রি (২০১৫)

• সোভিয়েত সংবিধানের ছয় অনুচ্ছেদ, যা কমিউনিস্ট পার্টিকে ক্ষমতার একচেটিয়া অধিকার নিশ্চিত করেছিল, ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিলুপ্ত করা হয়। তবে, নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলটি কার্যকরভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অক্ষম প্রমাণিত হয়। তাছাড়া, গর্বাচেভ প্রয়োজনে কেবল একটি শিথিল কনফেডারেশন হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। এইভাবে, যখন প্রজাতন্ত্রগুলি তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন গর্বাচেভ ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে তাদের মধ্যে সৈন্য প্রেরণ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। এই নীতির ফলে লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার রাজধানী রিগা এবং ভিলনিয়াসে যথাক্রমে সংঘর্ষ শুরু হয়। ভিলনিয়াসে টেলিভিশন টাওয়ার রক্ষাকারী চৌদ্দজন নিরস্ত্র ব্যক্তি নিহত হন এবং রিগায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দখলে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এই পদক্ষেপগুলি জাতীয়তাবাদীদের ভীত করেনি বরং উভয় শহরেই ব্যারিকেড নির্মাণের দিকে পরিচালিত করে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী স্মৃতিসৌধের জন্য, বিশেষ করে ভিলনিয়াসে, প্রতিমাসংক্রান্ত (আইকনিক) মুহূর্ত এবং স্থানগুলি প্রদান করা হয়েছিল।
  • জেরেমি ব্ল্যাক , দ্য কোল্ড ওয়ার: আ মিলিটারি হিস্ট্রি (২০১৫)
• যে কেউ লিথুয়ানিয়াকে শত্রু হিসেবে বেছে নেবে, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও শত্রু হয়ে উঠবে ।
  • জর্জ ডব্লিউ. বুশ , ভিলনিয়াস সিটি হলে বক্তৃতা (২৩ নভেম্বর ২০০২) [১]
• কারণ সমৃদ্ধি পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও রাজনীতি যখন উন্মুক্ত হয়ে গেল , তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হওয়ার ফলে লিথুয়ানিয়ার মতো একটি রাষ্ট্রের কী লাভ হয়েছে তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ল । লিথুয়ানিয়ানরা কীভাবে এটি ঘটেছে তা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল - হিটলার এবং স্ট্যালিন ১৯৩৯ সালের নাৎসি-সোভিয়েত চুক্তিতে তাদের সংযুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন । তারা জার্মানি এবং পূর্ব ইউরোপে বর্তমানে যা ঘটছে তা ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছিল । ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে ভিলনিয়াসে সোভিয়েত সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের উপর গুলি চালালে যত সন্দেহই থাকুক না কেন তা অদৃশ্য হয়ে যায় এবং ১৯ শে ফেব্রুয়ারি লিথুয়ানিয়ানরা সিদ্ধান্তমূলকভাবে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। লাটভিয়া এবং এস্তোনিয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছিল । প্রেমের আশায় থাকা গর্বাচেভ এখনও প্রতিরোধ করতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু যদি বাল্টিকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে ট্রান্সককেশিয়ান প্রজাতন্ত্রগুলি কেন একই কাজ করতে পারত না? নাকি মোল্দাভিয়ানরা ? এমনকি ইউক্রেনীয়রাও ? এই প্রশ্নগুলি ১৯৯১ সালের বসন্তে গর্বাচেভের মুখোমুখি হয়েছিল, এবং তার কাছে এর কোনও উত্তর ছিল না। "[যদিও আমরা সর্বগ্রাসী দানবকে হত্যা করছিলাম," চেরনিয়াভ স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, "এর স্থলাভিষিক্ত কী হবে সে বিষয়ে কোনও ঐক্যমত্য তৈরি হয়নি; এবং তাই, পেরেস্ত্রোইকা তার অবস্থান হারাচ্ছিল, এবং এর দ্বারা চালিত শক্তিগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল।"
  • জন লুইস গ্যাডিস , দ্য কোল্ড ওয়ার: আ নিউ হিস্ট্রি (২০০৫), পৃ. ২৫৪
• যদি লিথুয়ানিয়াকে আবার আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা একা থাকব না যেমনটা কিছু ভয়াবহ ঐতিহাসিক মুহূর্তে ছিলাম ।
  • লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতি ডালিয়া গ্রিবাউসকাইট রেডিও ফ্রি ইউরোপ রেডিও লিবার্টিতে (১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬) উদ্ধৃত এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন , "লিথুয়ানিয়া স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার উদযাপন করছে"
• প্রায় একই সময়ে, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতন ঘটে, কিন্তু পুঁজিবাদের সাথে এর অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল। এটা ভাবা সহজ যে এই দেশগুলি কখনই বাজার অর্থনীতির কাছাকাছি ছিল না, কিন্তু ১৯৫০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন , পোল্যান্ড , চেকোস্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলির মাথাপিছু জিডিপি স্পেন , পর্তুগাল এবং গ্রিসের মতো দরিদ্র পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় প্রায় এক চতুর্থাংশ বেশি ছিল । ১৯৮৯ সালে, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি কোথাও কাছাকাছি ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির পূর্ব অংশ পশ্চিম জার্মানির চেয়ে ধনী ছিল । ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর যখন বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটে, তখন পূর্ব জার্মানির মাথাপিছু জিডিপি পশ্চিম জার্মানির তুলনায় অর্ধেকও ছিল না। এই দেশগুলির মধ্যে, যারা সবচেয়ে বেশি উদারীকরণ করেছিল তারা গড়ে দ্রুততম সময়ে উন্নত হয়েছে এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কমিউনিস্ট-পরবর্তী ছাব্বিশটি দেশের বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি বার্ষিক ২.৭ শতাংশ দ্রুত বৃদ্ধির সাথে যুক্ত ছিল। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, যারা বর্তমানে ইইউর সদস্য , বিশেষ করে বাল্টিক দেশগুলি, এস্তোনিয়া , লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া। আজ, তারা বিশ্বের সবচেয়ে মুক্ত দেশগুলির মধ্যে একটি এবং স্বাধীনতার পর থেকে তাদের গড় আয় তিনগুণেরও বেশি। তবে জর্জিয়ার মতো সাম্প্রতিক সংস্কারকদেরও লক্ষ্য করা যায় । এটিকে অর্থনৈতিক ঝুড়ির মামলা হিসেবে দেখা হত, কিন্তু ২০০৩ সালে গোলাপ বিপ্লবের পর এটি মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি করে এবং চরম দারিদ্র্যের হার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করে।
  • জোহান নরবার্গ , পুঁজিবাদী ইশতেহার: কেন বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার বিশ্বকে বাঁচাবে (২০২৩)
• লিথুয়ানিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার ৯৮তম বার্ষিকী উদযাপনের সময় মার্কিন জনগণের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র এবং নিরাপত্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে লিথুয়ানিয়া অন্যদের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করে চলেছে। ইইউ পূর্বাঞ্চলীয় অংশীদারিত্বে আপনার কাজের মাধ্যমে অন্যান্য দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পন্ন করতে সহায়তা করার প্রতি আপনার নিষ্ঠা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, আপনি ইউক্রেনের সাথে দাঁড়িয়ে এবং আফগানিস্তানের প্রতি আপনার ধারাবাহিক সমর্থন বজায় রেখে আপনার সীমানার বাইরে নেতৃত্ব প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছেন ।
  • রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তার লিথুয়ানিয়ান প্রতিপক্ষ ডালিয়া গ্রিবাউসকাইটকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন, যা বাল্টিক টাইমস (১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬) এ উদ্ধৃত করা হয়েছে, "রাষ্ট্রপতি ওবামা লিথুয়ানিয়াকে "গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের মডেল" হিসেবে প্রশংসা করেছেন।"
• বাল্টিক রাষ্ট্রলোতে—এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ায়—লাল ফৌজের প্রত্যাবর্তনও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধের সূত্রপাত করেছিল। ১৯১৮ সালে রাশিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার পর, হিটলারের সঙ্গে স্তালিনের চুক্তির পর, ১৯৪০ সালে এই তিনটি দেশ সোভিয়েতদের দখলে চলে যায়। এই দখলদারিত্ব ছিল নিষ্ঠুর; এবং অনেক বাল্টিক জনগণ ১৯৪১ সালে জার্মান আক্রমণ স্বস্তির সঙ্গে স্বাগত জানায়। তারা তখন তাদের ক্রোধ রুশ-ইহুদি সহ অন্যান্য স্থানীয় সংখ্যালঘুদের উপর চাপিয়ে দেয়। জার্মান পরাজয়ের অর্থ হল লাল ফৌজের প্রত্যাবর্তন এবং রক্তপাতের আরেক দফার সূচনা। তিনটি বাল্টিক দেশেই প্রাক্তন অফিসারদের ঘিরে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে , যাদের বেশিরভাগই নাৎসিদের সাথে সহযোগিতা করেছিলেন ; তারা সম্মিলিতভাবে " বন ভ্রাতৃগণ " নামে পরিচিত ছিলেন। এই লড়াই প্রায় এক দশক ধরে চলে এবং পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটনা ; যার বেশিরভাগই লিথুয়ানিয়ায় ঘটে। ১৯৪০ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে বাল্টদের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশকে নির্বাসিত করা হয়েছিল অথবা সোভিয়েত শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়েছিল।
  • অড আর্ন ওয়েস্টাড, দ্য কোল্ড ওয়ার: আ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি (২০১৭)