লোহা
অবয়ব
লোহা বা লৌহ একটি ধাতব মৌলিক পদার্থ। পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরের অংশে এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরের বেশিরভাগ অংশে লোহা পাওয়া যায়। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ উপাদান। ধাতব অবস্থায়, পৃথিবীর ভূত্বকে লোহা বিরল, যা মূলত উল্কাপিণ্ডের জমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিপরীতে, লৌহ আকরিক পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যদিও এগুলি থেকে ব্যবহারযোগ্য ধাতু আহরণের জন্য ভাটি বা ধাতব চুল্লি ব্যবহার করা হয়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- লৌহ সকল ধাতু অপেক্ষা অধিক কার্য্যোপযোগী। এই ধাতুতে লাঙ্গলের ফাল, কোদাল,ক্যাস্তয়া প্রভৃতি কৃষি কার্য্যের যন্ত্র সকল নিৰ্মাণ করে। ছুরী, কাঁচী, কুড়াল, খন্তা, কাটারি, চবিকুলুপ, শিকল, পেরেক, ছূচ, হাতা বেড়ী, কড়া, হাতুড়ি ইত্যাদি যে সকল বস্তু সর্ব্বদা প্রয়োজনে লাগে সে সমুদয় লৌহে নির্ম্মিত। ইহা ভিন্ন নানা বিধ অস্ত্র শস্ত্রও লৌহে নির্ম্মাণ করিয়া থাকে।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ধাতু, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
- মাঠে যে ধান কাটছে, রাস্তায় যে মোট বইছে, কারখানায় যে লোহা পিটছে, রাত জেগে যে লিখছে, চেয়ারে বসে যে শাসন করছে, নতুন পৃথিবীর নতুন মানুষের মহিমা তাদের প্রত্যেকের ওপরই নির্ভর করছে......
- নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, নতুন পৃথিবীর নতুন মানুষ - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রথম প্রকাশ- আষাঢ় ১৩৬৪, প্রকাশক-রাইটার্স সিণ্ডিকেট প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬
- পৃথিবীতে এমন দেশ নাই যেখানে লোহা পাওয়া যায় না। পথে ঘাটে, মাটিতে জলেতে, খুঁজিতে গেলে সর্বত্রই লোহা পাওয়া যায়। অথচ এক সময়ে লোকে লোহার ব্যবহার জানিত না, লোহা তৈয়ারি করিতে পারিত না। জল লাগিয়ে লোহায় মরিচা ধরিয়া যায়। লোহাধাতু আর লোহার মরিচা, দুটা এক জিনিস নয়। কিন্তু মরিচা বা 'লৌহমল’ নানারকমে ‘শোধন’ করিয়া তাহা হইতে আবার খাটি লোহা বাহির করা যায়। যে-মস্ত খনিজ জিনিস হইতে লোহা তৈয়ারি করা হয়, সেগুলিও এইরকম মরিচা-জাতীয় জিনিস, অনেক হাঙ্গামা করিয়া তাহাদের শোধন না করিলে তাহা হইতে লোহা বাহির হয় না।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৯-২৫০
- সম্মোহনকারী সম্মোহিতকে যদি ‘সাজেশন’ দিতে থাকেন, এবার তোমার ডান হাতের কজিতে একটা গনগনে লোহা খুব সামান্য সময়ের জন্য ছোঁয়াব। লোহাটা আগুনে পুড়ে টকটকে লাল হয়ে রয়েছে, টকটকে লাল গরম লোহাটা এবার তোমার ডান কজিতে ঠেকানো হবে। ফলে একটা ফোসকা পড়বে। ভয় নেই, শুধু একটা ফোসকা পড়বে এই সাজেশনের সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতের কজিতে ঠাণ্ডা লোহা ঠেকালেও দেখা যাবে যে ওখানে Second degree burn সৃষ্টি হয়ে ফোসকা পড়েছে।
- প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- প্রকাশসাল ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৮
- কর্মকার লাঙ্গল, কোদাল, দা, দরজার কব্জা, বড় কাঁটা, তালা প্রভৃতি তৈরী করিত। বাহির হইতে আমদানী লৌহপিণ্ড ও লোহার পাত হইতেই এ সব অবশ্য তৈরী হইত। নাটাগোড়িয়া (কলিকাতার নিকট), ডোমজুড়, মাকড়দহ, বড়গাছিয়া (হাওড়া) প্রভৃতি স্থানে লোহার তালা চাবি তৈরী হইত। কিন্তু জার্মানী হইতে আমদানী সস্তা জিনিষের প্রতিযোগিতায় এই দেশীয় শিল্প লুপ্তপ্রায় হইয়াছে।
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আত্মচরিত- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক- ওরিয়েণ্ট বুক কোম্পানি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬৮
- জ্যোতিষীরা বলেন, এখন পৃথিবীতে যেমন বিসুভিয়স্, এট্না প্রভৃতি কয়েকটি মাত্র আগ্নেয়গিরি আছে, অতি প্রাচীনকালের অবস্থা এরকম ছিল না। তখন পৃথিবী খুব গরম ছিল; এজন্য অসংখ্য আগ্নেয় পর্ব্বত মাটি, পাথর, লোহা, তামা প্রভৃতি জিনিস জোরে জোরে আকাশের উপর দিকে ছুড়িত। এই সব জিনিসের মধ্যে কতকগুলি পৃথিবীর আকর্ষণের সীমা পারও হইয়া যাইত।
- জগদানন্দ রায়, উল্কাপিণ্ড, গ্রহ-নক্ষত্র- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৭
- এক-একরকম কাজের জন্য এক-একরকম লোহা। আজকাল ভালো ইস্পাত ও উঁচুদরের লোহা করিতে হইলে আগে খাঁটি কাঁচা লোহা তৈয়ারি করা হয়। তার পর তাহার সঙ্গে ঠিক দরকারমতো অন্য কোনো ধাতু বা কয়লা প্রভৃতি মিশাইয়া আবার সমস্তটা গলাইয়া একসঙ্গে জ্বাল দিয়া লইতে হয়।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫১
- ছাতারের বাসায় কোকিলের ডিম্, সে ডিমের ভিতর কোকিলের কুহুতান সুষুপ্ত থাকে—ছাতারে তা দিয়ে ফোটায় বলে' কি বাহাদুরী তার? ক্ষুদ্র বীজের ভেতর শেফালির সৌরভ নিদ্রিত, উড়ে বেটা গাছের গোড়ায় জল দেয় বলে' কি সৌরভের স্রষ্টা সে? জগাই মাধাই যদি খাঁটি সোনা না হ'য়ে প্রকৃতই খাঁটি লোহা হ'ত, তাদের লৌহহৃদয়কে গিল্টি করা চলত, সোনা করা সম্ভব হ'ত না।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পাগলের সভা, কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- প্রবর্ত্তক পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৩
- মানুষের যে-কোনো অস্ত্র বা যে-কোনো যন্ত্র বল- বড়ো-বড়ো কামান, এঞ্জিন বা মোটর হইতে লাঙল কোদাল কাঁটা পেরেক পর্যন্ত- সবটাতেই লোহার দরকার হয়। যার মধ্যে লোহা নাই এমনও অসংখ্য জিনিস তৈয়ারি করিবার সময়ে লোহার যন্ত্র ব্যবহার করিতে হয়। যে জিনিসে তাহারও দরকার হয় না, যেমন অনেক ডাক্তারি ওষুধ, সেখানেও অনেক সময়েই কয়লার চুল্লি জ্বালিতে হয় এবং সেই কয়লা ডাঙিয়া উঠাইবার জন্য খনিতে লোহার কোদাল আর অনেক কলকব্জার দরকার হয়।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৯
- ছেলেবেলায় যখন একদিন মাস্টারমশায় দেখিয়ে দিলেন লোহার টুকরো আগুনে তাতিয়ে প্রথমে হয় গরম, তার পরে হয় লাল টকটকে, তার পরে হয় সাদা জ্বলজ্বলে, বেশ মনে আছে তখন আমাকে এই কথা নিয়ে ভাবিয়েছিল যে, আগুন তো কোনো একটা দ্রব্য নয় যেটা লোহার সঙ্গে বাইরে থেকে মিশিয়ে লোহাকে দিয়ে এমনতরো চেহারা বদল করাতে পারে। তার পরে আজ শুনছি আরো তাপ দিলে এই লোহাটা গ্যাস হয়ে যাবে। এ সমস্তই জাদুকর তাপের কাণ্ড, সৃষ্টির আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত চলেছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরমাণুলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১
- কাঁচা সোনার রঙ পায় পিতল, কিন্তু সোনার গুণ তাতে পৌঁছোয় না হাজার বার সোনা জাতীয় শিক্ষার ছাঁচে চালেও। পুড়িয়ে পিটিয়ে লোহাকে ইস্পাত করা যায়, পিতলকে ছুরির আকার দেওয়াও চলে কিন্তু ইস্পাতের গুণ পিতলে পৌছোয় না। মানুষ অদ্ভুত কৌশলে লোহাকে বাতাসের উপরে উড়িয়ে দিয়েছে পাখীর মতো, কিন্তু সেই লোহাতে পাখীর প্রাণ পৌছে দেবার সাধ্য মানুষের কোনো যুগে হবে বলে’ বিশ্বাস করে কি কেউ?
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩০
- মানুষের সকলরকম কাজে যেসমস্ত তৈজস বা বাসনপত্রের দরকার হয়, তাহার সমস্তই খনিজ জিনিসের তৈয়ারি। সেই-সমস্ত জিনিস সংগ্রহ করিয়া তাহাকে কাজের উপযোগী করিয়া গড়িতেও লোহার দরকার হয়। ঘরের দরজা জানলা, কড়ি বরগা, আসবাবপত্র, এ-সমস্ত কাঠের তৈয়ারি হইতে পারে, কিন্তু সেই কাঠকে কাটিয়া চিরিয়া চাঁচিয়া ঘষিয়া দরকারমতো গড়িয়া লইবার জন্য পদে পদেই লোহার কুড়াল করাত র্যাঁদা বাটালি প্রভৃতি যন্ত্রের দরকার হয়।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৯
- যেহেতু জন্তুদের নখদন্ত তাদের বাহিরের দান, এইজন্যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরেই এই নখদন্তের পরিবর্তন বা উন্নতি নির্ভর করে। কিন্তু মানুষের নখদন্ত তার অন্তঃকরণের সৃষ্টি; এইজন্যে সেই পাথরের বর্শাফলকের 'পরেই সে ভর করে রইল না, তার সমস্ত হাতিয়ার পাথরের কোঠা থেকে লোহার কোঠায় এসে পৌছল। এতে প্রমাণ হয়, মানুষের অন্তঃকরণ সন্ধান করছে; যা তার চারি দিকে আছে তাতেই সে আসক্ত হয়ে নেই, যা তার হাতের কাছে নেই তাকে হাতের তলায় আনছে। পাথর আছে তার সামনে, তাতে সে সন্তুষ্ট নয়; লোহা আছে মাটির নীচে, সেখানে গিয়ে সে ধাক্কা দেয়। পাথরকে ঘষেমেজে তার থেকে হাতিয়ার তৈরি করা সহজ; কিন্তু তাতেও তার মন উঠল না, লোহাকে আগুনে গলিয়ে, হাতুড়িতে পিটিয়ে ছাঁচে ঢালাই করে যা সব চেয়ে বাধা দেয় তাকেই আপনার সব চেয়ে অনুগত করে তুললে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যের আহ্বান, কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯১
- এর পর পরেশবাবু ধীরে ধীরে অগ্রসর হ’তে লাগলেন, তাড়াতাড়ি করলে বিপদ হ’তে পারে। কিছু সোনা বেচে নোট পেয়ে ব্যাংকে জমা দিলেন, কম্পানির কাগজ আর নানারকম শেয়ারও কিনলেন। বালিগঞ্জে কুড়ি বিঘা জমির উপর প্রকাণ্ড বাড়ি আর কারখানা করলেন, ইট সিমেণ্ট লোহা কিছুরই অভাব হ’ল না, কারণ, কর্তাদের বশ করা তাঁর পক্ষে অতি সহজ।
- রাজশেখর বসু, পরশ পাথর, গল্পকল্প - পরশুরাম, পরশ পাথর, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৬
- পৃথিবীতে যত লোহার কারখানা আছে, তাহাতে প্রতি বৎসর তিনশো কোটি মণ লোহা তৈয়ার হয়। এবং বছর বছর ইহার পরিমাণ বাড়িয়াই চলিয়াছে। লোহা নানারকমের হয়। যে লোহা ঢালাই করিয়া সাধারণত কডি বরগা শিক প্রভৃতি তৈয়ারি হয় আর যে ইস্পাত লোহা ক্ষুর বা তলোয়ারের জন্য ব্যবহার হয়, এ দুয়ের মধ্যে অনেকখানি তফাত। সাধারণ চুল্লির মধ্যে যে লোহা তৈয়ারি হয়, তারা একেবারে খাঁটি লোহা নয়; আমরা যতরকম লোহা সর্বদা ব্যবহার করি, তাহার কোনোটাকেই ঠিক খাঁটি লোহা বলা যায় না। এই-সব লোহার সঙ্গে অল্প বা বেশি পরিমাণে অঙ্গার বা কয়লা, গন্ধক ফস্ফরাস প্রভৃতি নানারকম জিনিসের মিশাল থাকে এবং সেই মিশালের জন্য লোহার রূপ গুণ নানারকম হইয়া যায়।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫০
- কক্ষটি আকারে ও আয়তনে এত ক্ষুদ্র, ইহার উচ্চতা এমন কম যে, দেখিলে মনে হয়, সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য ইহা সৃষ্ট হয় নাই, অপরাধীদিগের উপযুক্ত করিয়াই ইহা নির্ম্মিত। কক্ষটির একটি মাত্র দরজা, ক্ষুদ্র কিন্তু স্থূল লৌহ-নির্ম্মিত; দরজার আয়তনের তুলনায় ইহার হুড়কা ও খিল একটু বিরাটই বলিতে হইবে। এতদ্সত্ত্বেও এই কক্ষটির দৃঢ়তায় সন্দিহান হইয়াই যেন গৃহনির্ম্মাতা অদ্ভুত সাবধানতা অবলম্বন করিবার জন্য লৌহের পাত দিয়া সমস্ত কক্ষটি মুড়িয়া দিয়াছে। সেই অস্পষ্ট কম্পমান আলোকে কৃষ্ণবর্ণ ধাতু যেন ভ্রূকুটি করিতেছিল, মানুষকে জীবন্ত কবর দিবার যেন প্রতীক্ষা করিতেছিল। পূর্ব্বোক্ত লৌহ দ্বার ব্যতীত যাতায়াতের আর একটি সত্য অথবা নকল পথ এই কক্ষে ছিল।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ, রাজমোহনের স্ত্রী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অনুবাদক- সজনীকান্ত দাস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫
- আমি আমার রসূলদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি আর তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও (সত্য মিথ্যার) মানদন্ড যাতে মানুষ ইনসাফ ও সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আমি অবতীর্ণ করেছি লোহা যাতে আছে প্রচন্ড শক্তি আর মানুষের জন্য নানাবিধ উপকার যাতে আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারেন আল্লাহকে না দেখেই তাঁকে আর তাঁর রসূলদেরকে কারা (এই লোহার শক্তি দিয়ে ও যাবতীয় উপায়ে) সাহায্য করে। আল্লাহ বড়ই শক্তিমান, মহাপরিক্রমশালী।
- আল কোরআন,৫৭:২৫
- লৌহ জিনিষটা সুলভ হইলেও ইহাকে বিশুদ্ধ অবস্থায় সংগ্রহ করা বড় কঠিন। অথচ বিশুদ্ধ লৌহের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। সাধারণ লৌহে তার প্রস্তুত করিতে গেলে, যে শ্রম লাগে, বিশুদ্ধ লৌহ লইয়া কার্য করিলে তাহার শতাংশ শ্রমেরও আবশ্যক হয় না। তা ছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রাদিতে এই প্রকার লৌহের চুম্বক ব্যবহার করিলে অল্প শক্তিতে অনেক কাজ আদায় করা যাইতে পারে। জর্ম্মানির লিপ্জিক্ (Leipsic) নগরের কারখানায় যে বিশুদ্ধ লৌহ প্রস্তুত করা হইতেছে, তাহা দ্বারা আজকাল অনেক যন্ত্রাদি নির্ম্মাণ করিয়া পরীক্ষা চলিতেছে। সাধারণ যন্ত্রের তুলনায় বিশুদ্ধ লৌহনির্ম্মিত কলে প্রায় আড়াই গুণ অধিক কাজ পাওয়া যাইতেছে। ইহা কম লাভের কথা নয়!
- জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
- একশত বৎসর পূর্বে ইটালি দেশে গ্যালভানি নামে একজন অধ্যাপক দেখিতে পাইলেন যে, লোহা ও তামার তার দিয়া একটা মরা ব্যাঙকে স্পর্শ করিলে ব্যাঙটা নড়িয়া উঠে। তিনি অনেক বৎসর ধরিয়া এই ঘটনাটির অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। এরূপ সামান্য বিষয় লইয়া এত সময় অপব্যয় করিতে দেখিয়া, লোকে তাঁহাকে উপহাস করিত। তাঁহার নাম হইল, “ব্যাঙ-নাচান” অধ্যাপক। বন্ধুরা আসিয়া বলিতে লাগিলেন, “মরা ব্যাঙ যেন নড়িল, কিন্তু ইহাতে লাভ কি?”
- জগদীশচন্দ্র বসু, মন্ত্রের সাধন, অব্যক্ত - জগদীশচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩২
- বড় বাজারের সোনাপটীর একটী বড় দোকানে অনেক সোনা বেচা-কেনা হয়, সুতরাং রাত্রিকালে ঐ দোকানে যে অনেক টাকার সোনা ও নগত টাকা থাকে, সেবিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। ঐ দোকানের মধ্যে দুইটী বড় লোহার সিন্ধুক আছে, উহার মধ্যেই ঐ সকল মূল্যবান দ্রব্য ও নগত টাকা রক্ষিত হয়। রাত্রিকালে দোকানে কেহ থাকে না। ঐ লোহার সিন্দুকদ্বয়ের চাবি ও দোকানের চাবি, মালিক দোকান বন্ধ হইলে আপন বাড়ীতে লইয়া যান। রাত্রিকালে দোকানের রক্ষণাবেক্ষণের ভার পুলিস-প্রহরীর উপরই নির্ভর থাকে।
- প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, মেকি লোক, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, মেকি লোক - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০
- সীতরাম বলিলেন, পাঁচ শ লোকে একটা দরওয়াজা ভাঙ্গিতে পারি না?”
সকলে হাসিতে লাগিল। একজন বলিল, “দরওয়াজা যে লোহার?”
সীতা। মানুষ কি মিছরির? না কাদার?
আর এক জন বলিল, “লোহার কপাট কি হাত দিয়া ভাঙ্গিব? না দাঁত দিয়া কাটিব? না নখ দিয়া ছিঁড়িব?”
সকলে হাসিল। সীতারাম বলিলেন, “কেন, পাঁচ শ লোকের লাথিতে এক জোড়া কপাট কি ভাঙ্গে না? হোক না কেন লোহা—এক হয়ে কাজ করিলে, লোহার কথা দূরে থাক, পাহাড়ও ভাঙ্গা যায়, সমুদ্রও বাঁধা যায়। কাঠবিড়ালীতে সমুদ্র বাঁধার কথা শুন নাই?”
তখন এক জন বলিল, “লোকটা বলিতেছে মন্দ নয়। তা ভাই, না হয় যেন লোহার কপাটও ভাঙ্গিলাম—বাহিরে যে সিপাহী তাহারা?”- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭১-১৭২
- আগে জাহাজ পালে চলিত। বাল্যকালে গঙ্গার ঘাটে পাল-উড়ান জাহাজ দেখিতে পাইতাম। এখনত কলকব্জার দিন। এক-একখানি বাণিজ্যপোত করিতে কত লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। তা ছাড়া এক-একখানি নূতন ধরণের রণপোত নির্ম্মাণ করিতে ৩।৪ কোটি টাকার কমে হয় না। কত সরঞ্জাম, কত ইঞ্জিনিয়ার, কত নক্সাদার প্রথমেই দরকার। তারপর হাজার হাজার টন লোহার প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন সর্বরাহ করিতে কত লোহার কার্খানা। যাঁহারা তাতার লোহার কার্খানা দেখিয়াছেন, তাঁহারা জানেন যে, একটি লোহার কারখানা কি! কত সহস্র লোক সেখানে খাটে। দানবীর এণ্ড্রু কার্ণেগীর লোহার কার্খানা বিক্রি হইল ৯০ কোটি টাকা দামে! তারপর সেই লোহা পেটা ও ঢালাইয়ে কত লোক খাটে। হাতুড়ির ঘায়ে আর অবশ্য এখন পেটাই হয়, না, কিন্তু বাতাস-ঠেলা হাতুড়ি (pneumatic hammer) চালাইতেও কম লোক লাগে না।
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অন্ন-সমস্যা ও তাহার সমাধান, আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী, লেখক- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক-চক্রবর্তী চ্যাটার্জি এণ্ড কোম্পানি লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭-৮৮
- আকরিকের মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, টিন, পাথুরিয়া কয়লা প্রচুর পাওয়া যায়। লৌহ অধিক পাওয়া যায় না। লৌহের অনেক কার্য্য তাম্র দ্বারা সম্পন্ন হইয়া থাকে। এখানকার তাম্রের ন্যায় উৎকৃষ্ট তাম্র পৃথিবীর কুত্রাপি পাওয়া যায় না। জাপানীরা ইহা এক ইঞ্চ মােটা ও এক ফুট লম্বা পাত করিয়া বিক্রয় করে। অপকৃষ্ট তাম্র ইষ্টকাকারে বিক্রীত হয়। জাপানে তামার খনিতে সময়ে সময়ে স্বর্ণ পাওয়া যায়। সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত কেহই স্বর্ণখনির কার্য্য করিতে পারে না। এখানকার টিন রৌপ্যের ন্যায় শুভ্র ও উজ্জ্বল। জাপানের নানাস্থানে একরূপ মৃত্তিকা পাওয়া যায়, তাহা হইতে মনােহর বাসন প্রস্তুত হয়। চীনাবাসন বলিয়া ইহা পৃথিবীর নানাদেশে বিক্রয় হইয়া থাকে।
- উমাকান্ত হাজারী, নব্য জাপান, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
- মাঝে মাঝে চুল্লির ঢাকনি খুলিয়া, গাড়ি-বোঝাই কয়লা-মিশানো লৌহখনিজের মসলা চুল্লির মধ্যে ঢালিয়া দেয়-একেবারে বিশত্রিশ বা একশো-দুশো মণ। চুল্লির মধ্যে সেই-সমস্ত মসলা গলিয়া পুড়িয়া তরল লোহা হইয়া জমিতে থাকে। মাঝে মাঝে চুল্লির নর্দমা দিয়া লোহার ময়লা ‘গাদ' বাহির করিয়া দিতে হয়। দরকার মতো শোধন হইলে পর পাশের একটা নল খুনিয়া তরল লোহা ঢালিয়া ফেলিতে হয়।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫০
- তরুণ স। তা কি বলব ভাই, মন্ত্রের গুণে সব করা যায়, মুখবন্ধ, চোখ বন্ধ হয়, লোহাকে সোনা, সোনাকে লোহা করা যায়, মানুষকে গাধা ভেড়া যা খুসী করা যায়।
প্রহরী। মানুষকে গাধা করা কিছু বাহাদুরী না; তবে লোহাকে সোনা করতে পারলে একটা কাজ হোত, তোমাদের বিদ্যেও বোঝা যেত।
তরুণ স। এ লোকটা নিরেট মুর্খ। চল ঠাকুর আমরা যাই। মন্ত্র শক্তি বুঝবে ওর মত লোক?
প্রহরী। আচ্ছা। ঠাকুর। আমাকে মস্তর শিখিয়ে দাও, যাতে আমি লোহা সোনা করতে পারি, তখন যা বল কর্ব।- কামিনী রায়, সিতিমা- কামিনী রায়, প্রকাশক-শ্রী প্রবোধচন্দ্র সরকার, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩১
- শূন্যে ঝুলন্ত দেবমূর্তির অসাধারণত্ব সুলতান মামুদকে আকর্ষণ করে। মামুদ শুধু মন্দিরের ধনরত্ন লুঠ করেই বিরত হননি। তিনি যুক্তিবাদী মন নিয়ে দেবমূর্তির শূন্যে ঝুলে থাকার কারণ জানতে উৎসুক হয়ে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে আসা বিজ্ঞানী, ধাতুবিদ ও বাস্তুকারদের নিয়ে মূর্তিটি পরীক্ষা করে দেখেন যে ওটি লোহার তৈরি। বিশেষজ্ঞরা আরও মত প্রকাশ করেন যে, সম্ভবত মন্দিরের দেওয়ালের চারপাশে চুম্বক-পাথর বসানো আছে। এমন করে চুম্বক-পাথর বসানো হয়েছে, যাতে, লোহার মূর্তিটি মাঝামাঝি একটা জায়গায় এনে ছেড়ে দিলে বিভিন্ন প্রান্তের চুম্বক-আকর্ষণে শূন্যে ভেসে থাকছে।
- প্রবীর ঘোষ, অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ, প্রকাশক- দে’জ পাবলিশিং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- প্রকাশসাল ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৪
- লৌহ ও গন্ধক এই দুই মূলপদার্থের এক এক পরমাণু একত্র হইলে একটি যৌগিক পদার্থের (Iron sulphide) উৎপত্তি হয়। লৌহ এবং গন্ধক এই দুইয়ের কোন ধর্ম্মই পদার্থটিতে দেখা যায় না। ডুবার্ন্ সাহেব বলেন, লৌহের “সজীবকণা” সকল যখন গন্ধকের “সজীবকণা” গুলিকে উদরস্থ করিয়া আর এক জাতীয় “সজীবকণার” উৎপত্তি করে, কেবল তখনি লৌহ ও গন্ধকের রাসায়নিক সংমিশ্রণ ঘটে। তিন চারিটি মৌলিক পদার্থের রাসায়নিক সংযোগ হইলেও ঠিক পূর্ব্বোক্তপ্রকারে মৌলিক “সজীবকণা”-গুলি পরস্পরের কোষাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া এক একটি পৃথক “সজীবকণা”র উৎপত্তি করে। লৌহ ও গন্ধকের রাসায়নিক মিলনে, লৌহের কণা গন্ধকের কণার ভিতর প্রবেশ করে, কি গন্ধকের সজীব কোষ লৌহকোষের ভিতর আশ্রয় লয়, তাহা উপেক্ষার বিষয় নহে। ডুবার্ন্ সাহেব বলিয়াছেন, যে পর্য্যায়ে “সজীবকণা”-গুলি পরস্পরের ভিতর আশ্রয় গ্রহণ করে, তাহা নির্ণয় করিতে পারিলে অনেক রাসায়নিক রহস্যেরও প্রকৃতি নির্ণয় করা যাইতে পারিবে।
- জগদানন্দ রায়, একটি নূতন আবিষ্কার, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৭-১৮৮
- একবার যদি কোথাও কোনো লোহা বানাইবার কারখানায় যাও, তাহা হইলে বুঝিতে পারিবে যে লোহার মতো সামান্য জিনিসের জন্যও মানুষকে কতখানি চিন্তা পরিশ্রম ও হাঙ্গামা করিত হয়। আমাদের দেশে সাক্চিতে টাটা কোম্পানির লোহার কারখানা আছে-সেখানে প্রতি বৎসর হাজার হাজার মণ লোহা আর ইস্পাত তৈরি হয়। প্রকাণ্ড চিমনির মতো বড়ো-বড়ো পাথরের চুল্লি, তাহার মধ্যে সারাদিন সারারাত আগুনের আর বিশ্রাম নাই। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, রাবণের চিতার মতো সে আগুন জলিতে থাকে।
- সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫০
- উত্তর হইল, অফিসে যাচ্ছি। আজ আমি, জেনারেল ফন রুণডাস (রুণুদাশ), যাচ্ছি দুর্গের কমাণ্ডাণ্টের সঙ্গে মিলিটারী কনফারেন্সে আলোচনা করতে।” বলিয়াই আমার মশারী-টানাইবার একটা লোহার ডাণ্ডা টান মারিয়া খাটিয়া হইতে খুলিয়া লইলেন।
বলিলাম, “আরে, করেন কি?”
—“ভয় নেই, ফেরৎ পাবেন। দরকার আছে, নিয়ে যাচ্ছি।” বলিয়া তিনি ঘর হইতে ব্যারাকের বারান্দায় আসিলেন।
বারান্দায় একটা লোহার খাটিয়াতে বসিয়া অফিস-আর্দালী নীলাদ্রি বাবুদের প্রদত্ত সিগারেট সেবন করিতেছিল। প্রভু বলিলেন, “চল।”- অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বক্সা ক্যাম্প- অমলেন্দু দাশগুপ্ত, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০১
- জলের একটা বিশেষ ধর্ম্ম এই যে, অপর পদার্থের তুলনায় ইহা অধিক তাপ ধরিয়া রাখিতে পারে। একসের লৌহে এবং ঠিক্ একসের জলে সমান তাপ প্রয়োগ কর। লৌহ তাহাতে অত্যন্ত গরম হইয়া দাঁড়াইবে, হয়ত তাহা স্পর্শ করাও অসম্ভব হইবে; কিন্তু জল তাহাতে সে প্রকার অসহ্য উষ্ণতা দেখাইবে না, অথচ তাপটা সম্পূর্ণ জলেই থাকিয়া যাইবে। এই কারণে ৬০০ ডিগ্রী উত্তপ্ত লৌহপিণ্ড অপেক্ষা সেই প্রকার উষ্ণ জলে অধিক তাপ গুপ্তাবস্থায় থাকিয়া যায়।
- জগদানন্দ রায়, চা-পান, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৬-২০৭
- কিছুক্ষণ সিপাহীরা এই মতাবলম্বী হইয়া নিরস্ত হইল। কয়েদীদিগের দ্বার ভঙ্গের উদ্যম দেখিয়া নানাবিধ হাস্য পরিহাস করিতে লাগিল। বলিতে লাগিল, “বাঙ্গালী লোহার কপাট ভাঙ্গিবে, আর বানরে সঙ্গীত গায়িবে, সমান কথা।”
লোহা সহজে ভাঙ্গে না বটে, কিন্তু দেয়াল ফাটিতে পারে। লোহার চৌকাট দেয়ালের ভিতর গাথা ছিল। দুই চারি দণ্ড পরে আলিয়ার খাঁ জ্যোৎস্নার আলোকে সভয়ে দেখিল, অবিরত সবল পদাঘাতের তাড়নে দেয়াল ফাটিয়া উঠিয়াছে। তখন সে বলিল, “আর দেখ কি? জমাদ্দারজিকে সম্বাদ দাও। এইবার কপাট পড়িবে।”- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রথম সংস্করণ, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৪
- ইতিমধ্যে ১৭৬৫ সালে জেম্স্ ওয়াট্ তাঁর স্টীম-এঞ্জিন তৈরি করলেন। এই বিরাট আবিষ্কারের থেকে কারখানায় বাষ্পের ব্যবহার গৃহীত হল। নূতন নূতন কারখানার জন্যে কয়লার প্রয়োজন ঘটল, ফলে কয়লার উৎপাদন বেড়ে গেল। কয়লার ব্যবহারের ফলে খনিজ পদার্থ থেকে বিশুদ্ধ লোহা নিষ্কাশনের নূতন পদ্ধতি বের হল। ফলে লৌহশিল্প দ্রুত উন্নত হতে লাগল।
- জওহরলাল নেহেরু, ইংলণ্ডে শিল্পবিপ্লবের আরম্ভ, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০৩
- ধাতু আবিষ্কার করিয়া আদিম মানবগণ ক্রমশঃ অনাবশ্যক আড়ম্বরের বশবর্ত্তী হইয়াছিলেন। এই সময় হইতে মানবসমাজে জীবনযাত্রা-নির্ব্বাহে অনাবশ্যক অলঙ্কার ও আভরণের ব্যবহার আরব্ধ হয়। তাম্রনির্ম্মিত কঙ্কণবলয়ই মানবজাতির শৈশবে ললনাগণের সর্ব্বাপেক্ষা বহুমূল্য আভরণ ছিল। ভারতে বহুবিধ তাম্রনির্ম্মিত অস্ত্র ও আভরণ আবিষ্কৃত হইয়াছে; ইহা হইতে পণ্ডিতগণ অনুমান করেন যে, এতদ্দেশে বহুকাল যাবৎ তাম্রের ব্যবহার ছিল। ভারতে কোন্ সময়ে তাম্রের যুগ আরম্ভ হইয়াছিল, তাহা বলিতে পারা যায় না; তবে অনুমান হয় যে, আর্য্যবিজয়ের সময়ে অথবা তাহার অব্যবহিত পরে লৌহের ব্যবহার আরম্ভ হয় এবং ক্রমশঃ তাম্রের ব্যবহার উঠিয়া যায়।
- রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়, প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল - ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫
- ভূ-গর্ভ হইতে তাম্র লৌহ স্বর্ণ রৌপ্য প্রভৃতি ধাতুগুলিকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাহারা বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না। নানা বিজাতীয় বস্তুর সহিত মিশ্রিত হইয়া সেগুলি আকারে প্রকারে এমন বিকৃত অবস্থায় থাকে যে, সেগুলিকে ধাতু বলিয়া চিনিয়া লওয়া কঠিন হয়। এই সকল অবিশুদ্ধ ধাতুকে শুদ্ধ করিবার জন্য যে-সকল উপায় প্রচলিত আছে, তাহাদের কোনটিই সহজ বা অল্পব্যয়সাধ্য নয়।
- জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
- শাস্ত্রকারেরা কচ্ছপী বীণাকেই বাগ্দেবী সরস্বতীর হাতের যন্ত্র বলিয়া ব্যাখ্যা করেন; আমাদিগের বর্ণ্যমান কচ্ছপী বীণাটীতে যে সাতটী তার আবদ্ধ আছে, তন্মধ্যে চারিটী লৌহের এবং তিনটী পিত্তলের। যথা—
একচিহ্ন-বিশিষ্ট লৌহতারটীকে নায়কী অথবা প্রধান তার বলে। নায়কী তারটী লৌহনির্ম্মিত, সুতরাং অতি দৃঢ় বলিয়া বাদনকালে ইহারই বিশেষ প্রয়োজন হইয়া থাকে। এই তারটী সচরাচর উদারা সপ্তকের মধ্যম করিয়া বাঁধা যায়। দুই ও তিনচিহ্নবিশিষ্ট পিত্তল তারদ্বয় উদারা সপ্তকের ষড়্জ, চারিচিহ্নবিশিষ্ট লৌহ তারটী উদারার পঞ্চম, পাঁচচিহ্নবিশিষ্ট পিত্তলতার নিম্নসপ্তকের ষড়্জ, ছয়চিহ্নবিশিষ্ট লৌহতার মুদারার ষড়্জ ও সাতচিহ্নবিশিষ্ট লৌহতারটী মুদারার পঞ্চম করিয়া বাঁধার রীতি আছে।- শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, যন্ত্রকোষ- শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৮২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮-১৯
- জগতের লোকে এখন বুঝিবেন, প্রকৃতির এই যে বিচিত্র লীলা তাহা নব্বইটি মূলপদার্থ অবলম্বন করিয়া চলিতেছে না,—সকল পরিবর্ত্তনের গোড়ায় একই বর্ত্তমান। স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরক, লৌহ, তাম্র সকল একেরই বিচিত্র রূপ। আল্কেমিষ্টরা লৌহকে সুবর্ণে পরিণত করিবার জন্য যে সাধনা আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহা দুঃস্বপ্ন দেখিয়া করেন নাই। লৌহকে সুবর্ণ করিবার জন্য পরশ পাথর এই ভূমণ্ডলে এবং এই প্রকৃতির মধ্যেই আছে।
- জগদানন্দ রায়, পরশ-পাথর, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
- কোন কোন বন্দী মৃত্তিকা-শয্যায় শায়িত, অথচ তাহাদের হস্ত-পদ লৌহশৃঙ্খলে লৌহ-পেরেকে ভূতলে আবদ্ধ। কাহারও বক্ষঃস্থল পর্য্যন্ত ভূগর্ভে নিহিত, কাহারও বা গলদেশ পর্য্যন্ত মৃত্তিকায় প্রোথিত। ঐ দিকে দেখুন! নরাকার রাক্ষসগণ হাসিতে হাসিতে জীবন্ত জীবের অঙ্গ হইতে সুতীক্ষ ছুরিকা দ্বারা চর্ম্ম ছাড়াইতেছে, লবণ মাখাইতেছে, সাঁড়াশি দিয়া চক্ষু কেমন করিয়া টানিয়া বাহির করিতেছে। দেখুন, দেখুন,—লৌহশলাকা—উত্তপ্ত লৌহশলাকা—মানুষের হাতে পায়ে হাতুড়ীর আঘাত বসাইয়া মৃত্তিকার সহিত কি ভাবে আঁটিয়া দিতেছে! এ সময়ে তাহাদের প্রাণে কি বলিতেছে, তাহা কি ভাবা যায়, না সহজ জ্ঞানে বোঝা যায়? কাহারও বা হস্ত-পদ মৃত্তিকার সহিত লৌহ পেরেকে আবদ্ধ, বক্ষে পাষাণ চাপা, চক্ষু ঊর্দ্ধে, কোন দিকে দৃষ্টির ক্ষমতা নাই, দৃষ্টি কেবল অনন্ত আকাশে।
- মীর মশাররফ হোসেন, এজিদ-বধ পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ, বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্রফ হোসেন, প্রকাশসাল- ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৪৬
- লৌহ জল অপেক্ষা সাত আট গুণ ভারি। ইহা টিন ভিন্ন আর সকল ধাতু অপেক্ষা হালকী। লোহাতে মানুষের চুলের সমান সরু তার হইতে পারে। ইহা সকল ধাতু অপেক্ষা অধিক ভারসহ; এক যবে্দর স্থূল তারে ৬ মন ১৭ সের ভারি বস্ত ঝুলাইলেও ছিঁড়িয়া যাইবেক না।
লৌহ সকল ধাতু অপেক্ষা অধিক পাওয়া যায় এবং সকল দেশেই ইহার আকর আছে। কিন্তু ইংলণ্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, রুশিয়া এই কয়েক দেশে অধিক।- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ধাতু, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
- আমরা পৃথিবীতে যত সামগ্রী দেখিতে পাই, তাহাদের প্রত্যেকেই এক একটি নির্দ্দিষ্ট উত্তাপ পাইলে দ্রব হয়। লৌহকে অল্প তাপ দিতে থাক, তাহা গলিবে না, কিন্তু প্রযুক্ত তাপের মাত্রা ১১৫০° ডিগ্রিতে উঠিলেই উহা গলিতে আরম্ভ করিবে। কেবল লৌহ নয়, স্বর্ণ রৌপ্য তাম্র শিলা মৃত্তিকা সকল বস্তু ঐ লৌহের ন্যায়ই এক একটি নির্দ্দিষ্ট উষ্ণতায় গলিতে আরম্ভ করে। কিন্তু এই প্রকারে দ্রব হওয়ার সহিত বাহিরের চাপের একটা অতি নিকট সম্বন্ধ আছে। যে-পাত্রে ধাতুকে গালানো যাইতেছে, তাহার ভিতরে যদি কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করা যায়, তাহা হইলে সাধারণ বায়ুর চাপে উহা যে উষ্ণতায় গলিয়া যাইত, এখন আর সে উষ্ণতায় গলিবে না। উষ্ণতা অধিক লাগিবে।
- জগদানন্দ রায়, পৃথিবীর শৈশব, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩২
- দিল্লীর স্তম্ভ যে লৌহ দ্বারা নির্মিত, স্যার রবার্ট হ্যাড্ফিল্ড তাঁহার কারখানায় উহা বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করেন। এই স্তম্ভ এক হাজার বৎসর পূর্বে নির্মিত হইয়াছিল বলিয়া প্রসিদ্ধ। স্যার রবার্ট বলেন, পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে যে, এই লৌহ অতি আশ্চর্য রকমের বস্তু। ইহাতে এমন কোন বিশেষ গুণ নিশ্চয়ই ছিল, যাহার ফলে এই এক হাজার বৎসর ইহা টিকিয়া আছে, কোনরূপ মরিচা পড়ে নাই; বর্তমান যুগে যে সমস্ত লৌহ প্রস্তুত হয়, তাহা অপেক্ষা উহা শ্রেষ্ঠ।
- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আত্মচরিত- প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রকাশক- ওরিয়েণ্ট বুক কোম্পানি, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৫
- পৃথিবীর নানা জায়গায় উল্কাপিণ্ডের যে-সব অংশ কুড়াইয়া পাওয়া গিয়াছে, সেগুলিতে কি কি জিনিস আছে, বৈজ্ঞানিকেরা পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন; কিন্তু পরীক্ষায় তাহাতে একটিও নূতন দ্রব্য ধরা পড়ে নাই। পৃথিবীর লোহা, তামা, প্রভৃতি ধাতু এবং মাটি-পাথর-বালি প্রভৃতি অ-ধাতু জিনিসই পাওয়া গিয়াছে। উল্কাপিণ্ডগুলি যে এককালে সত্যই পৃথিবীর উপরকার বস্তু ছিল, ইহা দেখিয়াও কতকটা বুঝা যায় না কি?
- জগদানন্দ রায়, উল্কাপিণ্ড, গ্রহ-নক্ষত্র- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, প্রকাশস্থান- এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ), প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৮
- আজকাল শহরে শহরে বিদ্যুতের আলো দেখা যায়। জাহাজে রেলগাড়িতে সবখানেই ‘বিজলীবাতি’র আমদানি হইয়াছে। জল জোগাইবার জন্য রাস্তায় যেমন নল বসানো হয়, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাঠাইবার জন্য সেইরকম লোহা বা তামার তার খাটাইতে হয়। জলের কারখানায় বড়ো-বড়ো দমকলের চাপে জল ঠেলিয়া উঁচুতে তোলে, সেই তোলা-জল শহরের নল বাহিয়া চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে। বিদ্যুতের ব্যবস্থাও কতকটা সেইরকম —বিদ্যুতের কারখানায় বড়ো-বড়ো কলে বিদ্যুৎ জমাইয়া রাখে, আর সেই বিদ্যুৎ আপনার চাপে তারের পথ ধরিয়া বহুদূর পর্যন্ত ছুটিয়া যায়।
- সুকুমার রায়, আশ্চর্য আলো, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০৮
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় লোহা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে লোহা শব্দটি খুঁজুন।