বিষয়বস্তুতে চলুন

সন্দেহ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সন্দেহ হলো এক প্রকার মানসিক অবস্থা, যেখানে মন কোনো বিষয়ে নিশ্চিত বা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না। এটি অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাস, অথবা কোনো বিষয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস না করার একটি অনুভূতি। এটি হলো সত্যতা নির্ণয়ে অনিশ্চয়তা।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • বিশ্ব-জোড়া পাঠশালা মোর,
    সবার আমি ছাত্র,
    নানান ভাবের নতুন জিনিস,
    শিখছি দিবারাত্র;
    এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
    পাঠ্য যে-সব পাতায় পাতায়,
    শিখছি সে-সব কৌতূহলে
    সন্দেহ নাই মাত্র॥
    • সুনির্মল বসু, সবার আমি ছাত্র, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
  • গোলাপ ফুলের মধ্যে সৌন্দর্যের একটি অসীমতা আছে তাহার কারণ, সে সম্পূর্ণরূপেই গোলাপ ফুল— সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ, কোনো অনির্দিষ্টতা নাই। এইজন্যই গোলাপ ফুলের মধ্যে এমন একটি আবির্ভাব সুস্পষ্ট হইয়াছে যাহা চন্দ্রসূর্যের মধ্যে, যাহা জগতের সমস্ত সুন্দরের মধ্যে। সে সুনিশ্চিত সত্যরূপে গোলাপ ফুল বলিয়াই সমস্ত জগতের সঙ্গে তাহার আত্মীয়তা সত্য।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সীমার সার্থকতা, পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৭-১৬৮
  • কিন্তু আমার মৌতাত যখন পাতলা হইয়া আসে, তখন আমার নিরেট অর্থাৎ জমাট বুদ্ধিটাও একটু তরল হইয়া পড়ে এবং সন্দেহ সুবুদ্ধির মুর্ত্তি ধরিয়া আমাকে জ্বালাতন করে; তাহার কোন প্রতিকার না করিতে পারিয়া আমি একমাত্রা আফিম চড়াইয়া সে সন্দেহকে ঘুম পাড়াইয়া দি। সন্দেহটা এই—জার্ম্মাণি যে আমার অসহযোগনীতি গ্রহণ করিয়া আমাকে এবং নীতিটাকে ধন্য করিয়াছে সেটার শেষ পর্য্যন্ত মান রাখিবে ত?
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিরুপদ্রবী, কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- প্রবর্ত্তক পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭০
  • বাঙ্গালী জাতীয় জীবনের অন্য সব ক্ষেত্রে অগ্রণী না হলেও আমার স্থির বিশ্বাস যে, স্বরাজ-সংগ্রামে বাঙ্গলার স্থান সর্ব্বাগ্রে। আমার মনের মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই যে, ভারতবর্ষে স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত হবেই এবং স্বরাজ প্রতিষ্ঠার গুরুভার প্রধানতঃ বাঙ্গালীকে বহন করতে হবে।
    • সুভাষচন্দ্র বসু, তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, শ্রীগোপাললাল সান্যাল কর্ত্তৃক সঙ্কলিত ও প্রকাশিত, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬
  • শব্দের আরম্ভে অনেক যুক্ত অক্ষরের যুক্ত উচ্চারণ থাকে না, যেমন জ্ঞান শব্দের জ্ঞ; কিন্তু অজ্ঞ শব্দে উহার যুক্ত উচ্চারণ সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। ক্ষকারও সেইরূপ— ক্ষয় এবং অক্ষয় শব্দের উচ্চারণে তাহা প্রমাণ হইবে। অতএব অসংযুক্ত বর্ণমালায় ক্ষকার দলভ্রষ্ট একঘরে; তাহাতে সন্দেহ নাই।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বানান-প্রসঙ্গ, বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৯৪
  • বাড়িতে তখন কেহ ছিল না। দুপুরে বাড়িতে কেহ কোনদিনই প্রায় থাকিত না, থাকিবার কেহ ছিল না—আত্মীয় অথবা বন্ধু। সন্দেহ করিয়াই শ্যামার এমন বুক ধড়ফড় করিতে লাগিল যে তার ভয় হইল হঠাৎ বুঝি তার ভয়ানক অসুখ করিয়াছে। সারাটা দুপুর সে ক্রমান্বয়ে শীত ও গ্রীষ্ম এবং রােমাঞ্চ অনুভব করিয়া কাটাইয়া দিল। সন্দেহ প্রত্যয় হইল একমাসে। কড়া শীতের সঙ্গে শ্যামার অজ্ঞাতে যাহার আবির্ভাব ঘটিছিল সে জন্ম লইল শরৎকালে। জগজ্জননী শ্যামা জগতে আসিয়া মানবী শ্যামাকে একেবারে সাতদিনের পুরাতন জননী হিসাবে দেখিলেন। শ্যামার বধূজীবনের সমস্ত বিস্ময় ও রহস্য, প্রত্যাশা ও উত্তেজনা তখন নিঃশেষ হইয়া আসিয়াছে। নিঃশেষ হইবার আগে ওসব যে তাহার খুব বেশি পরিমাণে ছিল তা বলা যায় না। জীবনে শ্যামার যদি কোনদিন কোন অসাধারণত্ব থাকিয়া থাকে সে তাহার আত্মীয়স্বজনের একান্ত অভাব। জন্মের পর জগতে শ্যামার আপনার বলিতে ছিল মা আর এক মামা। এগার বছর বয়সে সে মাকে হারায়। মামাকে হারায় বিবাহের এক বছরের মধ্যে। মামার কিছু সম্পত্তি ছিল। প্রকৃতপক্ষে, উত্তরাধিকারীবিহীন এই মামাটির কিছু সম্পত্তি না থাকিলে শীতল শ্যামাকে বিবাহ করিত কিনা সন্দেহ। মৃত্যুর মধ্যে মামাকে হারাইলে সম্পত্তি শ্যামা পাইত সন্দেহ নাই।
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জননী, প্রথম পরিচ্ছেদ, জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিঃ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২
  • বাড়ন্ত গাছ প্রতি সেকেণ্ডে কতটুকু বৃদ্ধি পায় তাহা পর্য্যন্ত এই কল লিখিয়া দেয়। ইহাতে জানা যায় যে, এই গাছটি এক মিনিটে এক ইঞ্চির লক্ষ ভাগের ৪২ ভাগ করিয়া বাড়িতেছিল। গাছটিকে তখন একখানা বেত দিয়া সামান্য রকমে আঘাত করিলাম। অমনি গাছের বৃদ্ধি একেবারে কমিয়া গেল। সে আঘাত ভুলিয়া গাছের আধ ঘণ্টার অধিক সময় লাগিয়াছিল। তাহার পর অতি সন্তর্পণে সে পুনরায় বাড়িতে আরম্ভ করিল। হে বেত্রপাণি স্কুলমাষ্টার, তোমার কানমলা খাইয়া কেহ কেহ যে হাইকোর্টের জজ পর্য্যন্ত হইয়াছেন, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু ছেলেরা তোমার হাতে বেত খাইয়া যে হঠাৎ লম্বায় বাড়িয়া উঠিবে, এ সম্বন্ধে গুরুতর সন্দেহ আছে।
    • জগদীশচন্দ্র বসু, আহত উদ্ভিদ, অব্যক্ত - জগদীশচন্দ্র বসু, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৮-১৮৯
  • স্ত্রীর নামটি অনাথবন্ধু পছন্দ করেন নাই এবং স্ত্রীটিকেও রূপে গুণে তিনি আপন যোগ্য জ্ঞান করিতেন না, কিন্তু বিন্ধ্যবাসিনীর মনে স্বামীসৌভাগ্যগর্বের সীমা ছিল না। সকল স্ত্রীর সকল স্বামীর অপেক্ষা তাঁহার স্বামী যে সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ, এ সম্বন্ধে তাঁহার কোনো সন্দেহ ছিল না এবং তাঁহার স্বামীরও কোনো সন্দেহ ছিল না, এবং সাধারণের ধারণাও এই বিশ্বাসের অনুকূল ছিল।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রায়শ্চিত্ত, গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড)- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ২৪৬
  • দেখিতে খুব জমকালো তাহাতে সন্দেহ নাই। মুখ ভার করিয়া দাঁড়াইলে, নেহাৎ কেওকেটা বলিয়া উড়াইয়া দিতে ভরসা হয় না। কিন্তু গায়ের জোরে সে বাঘের চাইতে বড় কি না, তাহা সন্দেহের বিষয়।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিড়ালের জাত, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০৬
  • রাজনৈতিক উৎপাত তো ছিলই, তা ছাড়া আবার ধর্মসম্বন্ধীয় গোলযোগেরও সূত্রপাত হয়েছিল। লোকে রোমান ধর্মসম্প্রদায়কে সন্দেহ করতে শুরু করল; আগের মতো তারা আর চার্চের আদেশ মানতে রাজি হল না। ধর্মের ব্যাপারে সন্দেহ বিপজ্জনক। সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক পোপের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছিলেন, সমাজচ্যুত হবার ভয়ে তিনি ভীত হন নি। এমনকি, সম্রাট লিখিতভাবে পোপকে কতকগুলো প্রশ্নও করেছিলেন, কিন্তু গোপ তার সদুত্তর দিতে পারেন নি। সেই সময়ে ইউরোপে অনেকের মনেই নানা সন্দেহ জেগেছিল। অনেকে আবার পোপ কিংবা চার্চের অধিকার নিয়ে মাথা ঘামায় নি বটে, কিন্তু ধর্মসম্প্রদায়ের কর্তৃপক্ষের বিলাসিতা আর ব্যভিচারে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
    • জওহরলাল নেহেরু, রোমান ধর্ম সম্প্রদায় কর্তৃক বলপ্রয়োগ, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৭
  • তোমাকে কবি বলে সন্দেহ করেছিলুম, আজ সন্দেহ করছি ফিলজফার বলে। চমৎকার বলেছ। সহজকে সহজ রাখতে হলে শক্ত হতে হয়। ছন্দকে সহজ করতে চাও তো যতিকে ঠিক জায়গায় কষে আঁটতে হবে। লোভ বেশি, তাই জীবনের কাব্যে কোথাও যতি দিতে মন সরে না, ছন্দ ভেঙে গিয়ে জীবনটা হয় গীতহীন বন্ধন।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মিলনতত্ত্ব, শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০৯
  • কিন্তু প্রভাতের সন্দেহ ঘুচিল না। তাহার মনে হইল, যেন পিতার ব্যবহার বিরক্তিমুক্ত নহে। যখন সন্দেহের কোনও কারণ না থাকে, তখন যে ব্যবহার দৃষ্টিপথে পতিত হয় না, সন্দেহ-শঙ্কিত হৃদয়ে তাহা সহজেই অনুভূত হয়। বরং সন্দেহকলুষিত হৃদয়-দর্পণে অনেক সময় অবিকৃত দ্রব্যের প্রতিবিম্বও বিকৃত দেখায়।
    • হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, প্রকাশক- বসুমতী পুস্তকবিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০
  • বরং ভুল করে সন্দেহ করা ভালাে, কিন্তু সন্দেহ করে ভুল করা সাংঘাতিক। খাঁটি বােকাই যদি হয় তাহলে কেউ ওদের বাঁচাতে পারবে না, আর যদি হয় খাঁটি দুশমন তাহলে ওদের মারবে কে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম অধ্যায়, চার অধ্যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
  • জাতপাতের এই বিভেদভাব থেকে আমাদের দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তার কথা তো অত্যন্ত মোটা বুদ্ধির লোকও বুঝতে পারে। এসব বিভেদ দূর করতে পারলে যে দেশের কল্যাণ হয়, এতে কারও সন্দেহ নেই।
    • মুন্সি প্রেমচাঁদ, ভগবানের সং, প্রেমচন্দ গল্পসংগ্রহ- প্রেমচন্দ, প্রকাশক- পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- নভেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ১০৯
  • ইসলাম সম্পর্কে অনেক অমুসলিমদের মধ্যে বড় কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যা "আল্লাহ" শব্দের সাথে সম্পর্কিত। বিভিন্ন কারণে অনেকে বিশ্বাস করে যে মুসলমানরা খ্রিস্টান ও ইহুদিদের চেয়ে আলাদা ঈশ্বরের উপাসনা করে। এটি সম্পূর্ণ ভুল, কারণ "আল্লাহ" কেবলমাত্র "ঈশ্বর"-এর আরবি শব্দ — আর ঈশ্বর কেবল একজনই। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে — মুসলমানরা নূহ, ইব্রাহিম, মূসা, দাউদ ও ঈসার ঈশ্বরের উপাসনা করে — তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
  • বালককালে বাঁশির উপরে দখল ছিল না; বাজিয়েছিলেম যেমন-তেমন করে, পথে লোক জড়ো হয় নি। তার পরে যৌবনে বাঁশিতে সুর লাগল বলে যখন নিজের মনে সন্দেহ রইল না, তখন সকলকে নিঃসংকোচে বলেছি ‘তোমরা শোনো।’
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সম্মান, আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১০ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৮
  • বাণ গৌড়ী রীতির লক্ষণ বলেছেন, অক্ষরডম্বর। এই আড়ম্বরের প্রবৃত্তি এখনও আছে। অনেক বাক্যে অকারণে শব্দবাহুল্য এসে পড়েছে, লেখকরা গতানুগতিক ভাবে এই সব সাড়ম্বর বাক্য প্রয়োগ করেন। ‘সন্দেহ নাই’—এই সরল প্রয়োগ প্রায় উঠে গেছে, তার বদলে চলছে—‘সন্দেহের অবকাশ নাই’। ‘চা পান’ বা ‘চা খাওয়া’ চলে না, ‘চা পর্ব’ লেখা হয়। ‘মিষ্টান্ন খাইলাম’ স্থানে ‘মিষ্টান্নের সদ্‌ব্যবহার করা গেল’। মাঝে মাঝে অলংকার হিসাবে এরকন প্রয়োগ সার্থক হতে পারে, কিন্তু যদি বার বার দেখা যায় তবে তা মুদ্রাদোষ।
    • রাজশেখর বসু, ভাষার মুদ্রাদোষ ও বিকার, বিচিন্তা - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
  • সুজাবেগকে এইভাবে চিন্তা করিতে দেখিয়া বাহারবানু বলিল— “ইতস্ততঃ করিতেছ কেন নবাব সাহেব! কি ভাবিতেছ তুমি? আমার এ সামান্য অনুরোধ রক্ষায় কেন এত সন্দেহ? কেন এত সংকোচ?”
    সুজাবেগ নিদ্রোত্থিতের ন্যায় চমকিত ভাবে বলিলেন, “না-না—কিসের সংকোচ? কিসের সন্দেহ? যদি কোথাও শান্তি পাই, তাহা তোমার নিকটে। যদি কোথাও আরাম পাই— তাহা তোমার সাহচর্য্যে! এ মরুময় জীবনের শান্তিদায়িনী স্নিগ্ধ স্রোতস্বিনী তুমি! ছিঃ—আমার গভীর প্রেমে অতটা সন্দেহ করিও না! একটা সামান্য বিষয়ে কেন তোমায় স্পর্শ করিয়া শপথ করিতে যাইব— যাহা করিতে আমার এ চিত্ত স্বাধীন ইচ্ছায় সম্পূর্ণ শক্তিবান। আমার কথার উপর কি তোমার একটুও বিশ্বাস নাই বাহারবানু?”
    • হরিসাধন মুখোপাধ্যায়, দেওয়ানা, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭
  • এখনাে আমরা অস্পষ্টতার আড়ালেই রহিয়া গেলাম। অস্পষ্টতাকে মানুষ সন্দেহ করে। আজ বাংলাদেশে একজন মানুষও আছে কি যে এই সন্দেহ হইতে মুক্ত? যাহা হউক, আমাদের মধ্যে এই অস্পষ্টতার গােধূলি ঘনাইয়া আসিয়াছে; এইটেই ছায়াকে বস্তু ও বস্তুকে ছায়া ভ্রম করিবার সময়। এখন পরে পরে কেবলই ভুল-বােঝাবুঝির সময় বাড়িয়া চলিল।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছাত্রশাসনতন্ত্র, শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১৬
  • শাস্ত্র, সন্দেহ, বিচার, সমন্বয়, সঙ্গতি—ইহাই মীমাংসার ক্রম। যতক্ষণ না শাস্ত্রে সন্দেহ জন্মে, ততক্ষণ বিচারের অবসর ও মীমাংসার প্রয়োজনই উপস্থিত হয় না। রামমোহনের অলোকসামান্য প্রতিভা প্রাচীন ও প্রচলিতের অসারতা ও ভ্রান্তি দেখিয়া তাহার প্রতি সন্দিহান হইয়াছিল। তাই সেই সন্দেহ হইতে বিচার, সেই বিচারের ফলে তিনি নূতন মীমাংসায় উপনীত হন। কিন্তু দেশের লোকের মনে তখনও এরূপ গভীর সন্দেহের উদয় হয় নাই; তাঁহাদের বিবেকও জাগে নাই। প্রাচীনকে লইয়াই তাঁরা তখনও সন্তুষ্ট ছিলেন। শাস্ত্র ও স্বাভিমতের মধ্যে তখনও কোনও প্রবল বিরোধ উৎপন্ন হয় নাই। দেশের লোকে শাস্ত্র কি, তাহা জানিতেন না। জানিবার প্রয়োজন-বোধ পর্য্যন্ত তাঁহাদের জন্মায় নাই। সুতরাং রাজা যে মীমাংসার প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করেন, তাহা বুঝিবার ও ধরিবার বাসনা এবং শক্তি দু’য়েরই তখন একান্ত অভাব ছিল।
    • বিপিনচন্দ্র পাল, পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী, চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫০-১৫০
  • "হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কিছু সন্দেহ পাপ। তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং কেউ কারও পরনিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃণা করো। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
    • সূরা আল-হুজুরাত (৪৯:১২)
  • নেকড়ের হন্যেয় দেশ ছিন্নভিন্ন, সন্দেহ ও ভয়
    কলুষ ছড়ায় দুই হাতে, গায় শৃগালে বাহবা।
    তবুও আকাশ ছায় আমাদের মুক্তি উচ্চৈঃশ্রবা
    মানুষ দুর্জয়।
    • বিষ্ণু দে, নাম রেখেছি কোমল গান্ধার, বিষ্ণু দে কবিতা সমগ্র দুই, পৃ ১৩,
  • নিবেদিতা ভারতবর্ষকে যেরূপ ভালবাসিতেন, ভারতবাসীও ততটা ভালবাসিতে পারিয়াছে কিনা সন্দেহ।
    • ভগিনী নিবেদিতা সম্পর্কে বিপিনচন্দ্র পাল, ভারতের নিবেদিতা- রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার (১৯৯৮); গোলপার্ক, কলকাতা; পৃষ্ঠা-৬৮, (ISBN|81-85843-94-5)
  • বাবুই পাখীরে ডাকি’ বলিছে চড়াই,—
    “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই?
    আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
    তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে!”
    বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায়!
    কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
    পাকা হোক্‌, তবু ভাই, পরের ও-বাসা;
    নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর—খাসা!"
    • রজনীকান্ত সেন, স্বাধীনতার সুখ, অমৃত - রজনীকান্ত সেন, প্রকাশক- অমিয়রঞ্জন মুখােপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
  • যদি অন্যান্য বিজ্ঞানে আমাদের সন্দেহ ছাড়াই নিশ্চিতভাবে পৌঁছাতে হয় এবং ভুল ছাড়াই সত্যে পৌঁছাতে হয়, তাহলে গণিতে জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করা আমাদের উচিত।
  • সূর্য প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির লাগে প্রায় বারো বৎসর। দূরে থাকাতে ওর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে অনেক বড় হয়েছে সন্দেহ নেই কিন্তু ও চলেও যথেষ্ট মন্দ গমনে। পৃথিবী যেখানে উনিশ মাইল চলে এক সেকেণ্ডে, ও চলে আট মাইল মাত্র। কিন্তু ওর স্বাবর্তন অর্থাৎ নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে ঘোরা খুবই দ্রুত বেগে। অত বড়ো বিপুল দেহটাকে পাক খাওয়াতে ওর লাগে দশ ঘণ্টা। আমাদের একদিন একরাত্রি সময়ের মধ্যে ওর দুই দিনরাত্রি শেষ হয়েও উদ্বৃত্ত থাকে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্রহলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬
  • স্বপ্ন হয়তো সার্থক হয়েছে, হয়তো তার নিজের হাতে গড়া প্রতিকৃতির নৈপুণ্যে কারো এতটুকু সন্দেহ করবার কারণ নেই। কিন্তু সৃষ্টি কখন যে স্রষ্টাকে অতিক্রম করে গিয়েছে তারাকান্ত তা কি জানতেন? আজ তাঁর আর বিভূতির মাঝখানে সমস্ত পৃথিবী এসে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে। তার ভেতর থেকে নিজের গড়া বিভূতিকে আর আলাদা করে, একান্ত করে খুঁজে পাবেন না তিনি। তাঁর রচনা তাঁকে ছাড়িয়ে এত দূরে চলে গেছে যে সেখানে তাঁর আর একটুও দাবি নেই। তাঁর নিজস্ব পান্ডুলিপি আজ যে তাঁরই হাতের লেখা কে নিশ্চিহ্ন ভাবে মুছে দিয়ে ছাপার অক্ষরে সমস্ত পৃথিবীর মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে মুক্ত হয়ে গেছে, এই কি তিনি চেয়েছিলেন?
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, পাণ্ডুলিপি, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৩৪১
  • বিনয় হাসিয়া কহিল, “আপনাকে সত্য করেই বলছি, গোরার মতো আমার বিশ্বাসের জোর নেই। জাতিভেদের আবর্জনা ও সমাজের বিকারগুলো যখন দেখতে পাই তখন আমি অনেক সময়েই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকি— কিন্তু গোরা বলে, বড়ো জিনিসকে ছোটো করে দেখলেই সন্দেহ জন্মে— গাছের ভাঙা ডাল ও শুকনো পাতাকেই গাছের চরম প্রকৃতি বলে দেখা বুদ্ধির অসহিষ্ণুতা— ভাঙা ডালকে প্রশংসা করতে বলি নে, কিন্তু বনস্পতিকে সমগ্র করে দেখো এবং তার তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করো।”
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪১
  • প্রথমে সন্দেহ, পরে বিচারযুক্তি, তার পরে, সর্ব্বশেষে, এই বিচারযুক্তির ফলে সত্যপ্রতিষ্ঠা হইলে, সন্দেহের একান্ত নিরসন হইয়া, প্রকৃত শ্রদ্ধা বা আস্তিক্যবুদ্ধির সঞ্চার,—এই ভাবেই প্রকৃত ধর্ম্মজীবনের পূর্ব্ববৃত্ত সাধন সমাপ্ত হইয়া থাকে। এই শ্রদ্ধাই, এজন্য, ধর্ম্মজীবনের প্রথম সোপান ও মূল ভিত্তি। আর এ কালের অনেক বাঙ্গালী ও ভারতবাসী শিবনাথ বাবুর শিক্ষাদীক্ষার প্রেরণায় নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের সর্ব্ববিধ পূর্ব্বসংস্কারবর্জ্জিত হইয়া, সন্দেহ, বিচার, প্রভৃতির সাহায্যে ক্রমে গভীর আস্তিক্যবুদ্ধি লাভ করিয়াছেন। অনেকে তাঁর নায়কত্বে “না” এর পথ বাহিয়া গিয়া, পরে “হাঁ” এর রাজ্যে যাইয়া পৌঁছিয়াছেন। আর ইঁহারা ব্রাহ্মসমাজে থাকিয়া বা তাহার বাহিরে যাইয়া, নিজ নিজ সাধনশক্তির দ্বারা যে দিকে ও যে পরিমাণে দেশের ধর্ম্মজীবন ও কর্ম্মজীবনকে ফুটাইয়া তুলিয়াছেন বা তুলিতেছেন, তার জন্য এদেশের বর্ত্তমান সাধনা কিয়ৎপরিমাণে শিবনাথ বাবুব নিকটে ঋণী রহিয়াছে, সন্দেহ নাই।
    • বিপিনচন্দ্র পাল, পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী, চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৭৬-১৭৭
  • গোরু ঘোড়া শুকর কিছুতেই যাহাদের আপত্তি নাই তাহার যে তিমি খাইতে বেশি দিন আপত্তি করিবে, এরূপ বোধ হয় না। যাঁহারা ইহার মধ্যেই ও জিনিসটা খাইতে অভ্যাস করিয়াছেন, তাহার বলেন—চমৎকার মাংস। ইউরোপের বাজারে ইহাকে গো-মাংস বলিয়া চালাইলেও কেহ কোনো তফাত বুঝিবে কিনা সন্দেহ।
    • সুকুমার রায়, তিমির ব্যবসা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪৬
  • আমেলিয়া হাসিয়া বলিলেন, “তুমি প্রথমেই যে ভড়কাইয়া যাইতেছ? আমার সকল কথা শুনিলে কাজটা অসম্ভব মনে হইবে না। এই বিপুল অর্থ অপহরণ করিবার শক্তি আমার নাই এরূপ মনে করিও না, এরূপ কঠিন কার্য্যেও আমি এই নুতন হস্তক্ষেপণ করিতেছি; এমন দুষ্কর কর্ম্মে ইতিপূর্ব্বেও আমি কৃতকার্য হইয়াছি। আমি এমন কৌশলে টাকাগুলি সরাইতে চাই, যেন কেহই আমাদের কার্য্যের কোনও প্রমাণ না পায়। আমাকে ত সন্দেহ করিতে পারিবেই না; তোমার উপরেও পুলিশের সন্দেহ হইবে না।”
    রাইমার হাসিয়া বলিল, “পুলিশ সন্দেহ করিতে পারিলে আর বাহাদুরী কি?”
    • দীনেন্দ্রকুমার রায়, রূপসী বোম্বেটে - দীনেন্দ্রকুমার রায়, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশস্থান- মেহেরপুর, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০-৪১

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]