সমকামী পুরুষ
অবয়ব
সমকামী পুরুষ বলতে সেইসব পুরুষদের বোঝায়, যাদের যৌন পরিচয় বা যৌন আচরণ মূলত অন্য পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। অর্থাৎ, তারা অন্য পুরুষদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]
- অনেক সমকামী পুরুষকে ছোটবেলা থেকেই গালিগালাজ বা অপমানজনক নামে ডাকা হয়েছে। এমনকি সেই সময়ও, যখন তারা হয়তো এখনো জানত না ‘সমকামিতা’ কী। সমকামী পুরুষদের অপমান করার জন্য যেসব খারাপ বা অবমাননাকর শব্দ ব্যবহৃত হয় (যেমন: ফ্যাগট, প্যান্সি, পাফ, শার্ট-লিফটার, ব্রাউন-হ্যাটার, ফেয়ারি, ব্যাটি-বয়, কুইয়ার ইত্যাদি), সেগুলোর এত সংখ্যক উপস্থিতি থেকেই বোঝা যায়, সমাজে তাদেরকে কতটা হেয় করা হয়। ছোট থেকেই এভাবে কথা শুনে শুনে অনেক সমকামী পুরুষ নিজের ভিতরে একধরনের কঠিন মনভাব তৈরি করে নেন। অনেকে অন্যের দুর্বল দিক বা অদ্ভুত দিকগুলো ধরতে পারার এক ধরনের দক্ষতাও তৈরি করে ফেলেন।
- পল বেকার, পোলারি: দ্য লস্ট ল্যাঙ্গুয়েজে অফ গে মেন, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, (২ সেপ্টেম্বর ২০০৩), পৃ. ৭৪।
- তাকে ভালোবাসো, আর তাকে তোমায় ভালোবাসতে দাও। তুমি কি সত্যি বিশ্বাস করো, স্বর্গের পর এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে?
- জেমস বাল্ডউইন, জিওভানি'জ রুম, ডায়াল প্রেস, (১৯৫৬), পৃ. ৫৪।
- যারা “না-মহিলা এবং না-পুরুষ” এই ধারণা নিয়ে গবেষণা করেছেন, তারা প্রায়শই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন—এই “না-মহিলা এবং না-পুরুষ” ব্যক্তিরাই ছিলেন এই দেশের প্রথম সমকামী নারী ও পুরুষ। উইলিয়ামস (১৯৯২), রস্কো (১৯৮৮), অ্যালেন (১৯৮১) এবং আরও অনেকে বলেছেন, মার্কিন আদিবাসী সমাজে যেসব সমকামী নারী এবং পুরুষ ছিলেন, তাদের অনেকেই এই “না-পুরুষ এবং না-মহিলা” গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এমন ধরনের মানুষ প্রায় সব মার্কিন আদিবাসী গোষ্ঠীতেই দেখা যেত।
- লেস্টার বি. ব্রাউন, টু স্পিরিট পিউপিল: আমেরিকান ইন্ডিয়ান, লেসবিয়ান উইমেন এন্ড গে মেন, হাওয়ার্থ প্রেস, ১৯৯৭), পৃ. ৩১।

- সমকামী পুরুষদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থেকে একটা জিনিস শিখেছি, যেটা খুবই কষ্টের। সেটা হলো—নারী আর পুরুষের মধ্যে যে লড়াই চলে, সেটা বিপরীত দিক থেকে দেখতে কেমন লাগে। এটা বলতে লজ্জা হয়, কিন্তু শেষে বুঝতে হয়েছে—অনেক সময় নারীরাও এমন কিছু করে, যা সমকামীদের বিরুদ্ধে যায় বা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য তৈরি করে। এমনকি তারা যেসব সন্তান বড় করে, তাদের মধ্যেও যৌনতা নিয়ে অনেক নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়। তবে আমি এটা বলছি না যে, নারীরাও পুরুষদের মতো সমানভাবে দায়ী। কারণ সমাজ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় পুরুষেরাই, আর এই ব্যবস্থা চালু রাখার জন্যও তারাই সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করে। তবে আমি এখন আর মনে করি না, সব নারীই শুধু নির্দোষ ভুক্তভোগী আর সব পুরুষই নারীবিদ্বেষী দানব।
- প্যাট ক্যালিফিয়া, দ্য কলম্বিয়া রিডার অন লেসবিয়ান্স অ্যান্ড গে মেন ইন মিডিয়া, সোসাইটি অ্যান্ড পলিটিক্স, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস,, (১৯৯৯), পৃ. ৯৫।
- জন ক্যাম্পবেল অনলাইনে সমকামী পুরুষদের সংস্কৃতিতে অনলাইন জগতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বিশেষ করে গে ইন্টারনেট রিলে চ্যাট (IRC) চ্যানেলের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সমকামী সমাজ গঠনে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে, এই জায়গাগুলোতে একজন ব্যক্তি কীভাবে নিজের পরিচয় গড়ে তোলেন বা সামলান, সেটাও বিশ্লেষণ করেছেন।
- এলিজা ক্যাসিডি, গে মেন, আইডেন্টিটি অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া: এ কালচার অফ পার্টিসিপেটরি রিলাকট্যান্স, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, (৯ এপ্রিল ২০১৮)।
- “অসামাজিক ও বিশৃঙ্খল আচরণ” নামে যেই অপরাধে কোয়েনিগসে ধৃত পুরুষদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, সেটা ছিল সাধারণত সেই অভিযোগ, যা সমকামী পুরুষ বা নারীদের বিরুদ্ধে আনা হতো—যদি তারা রাস্তায় বা কোনো সর্বজনীন জায়গায় একত্রিত হতেন, বা কোনো পুরুষ অন্য পুরুষকে যৌনভাবে কাছে টানার চেষ্টা করতেন [১৯২০-এর দশকের নিউ ইয়র্ক শহরে]। ‘বিশৃঙ্খল আচরণ’ আইনটি সমকামীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হলেও, এটা ছিল সেই আইনের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এই আইন ব্যবহৃত হতো জনসমক্ষে প্রচলিত সামাজিক নিয়মের বাইরে যেকোনো আচরণকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে।
- জর্জ চন্সি, গে নিউ ইয়র্ক: জেন্ডার, আর্বান কালচার অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ দ্য গে মেল ওয়ার্ল্ড, ১৮৯০–১৯৪০, (আগস্ট ২০০৮), বেসিক বুকস, পৃ. ১৭২।
- “সমকামিতা একটা অসুখ”, যেমন শিশুকে ধর্ষণ করা বা জেনারেল মোটর্সের কোম্পানির প্রধান হতে চাওয়া একটা অসুখ।
- এলড্রিজ ক্লিভার, সোল অন আইস (১৯৬৮)।

- অনেক লাতিনো সমকামী পুরুষ মূলধারার সমকামী সংস্কৃতিতে ঠিকভাবে মিশতে পারেন এবং ভালোভাবে চলাফেরা করেন। কিন্তু মানসিকভাবে তারা অনেক সময় আলাদা ও অস্বস্তিকর অনুভব করেন। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন—তাদের গায়ের রং বা চেহারা প্রচলিত সৌন্দর্যবোধের সঙ্গে না মেলা, কিংবা সমকামী সমাজের মধ্যেই থাকা শ্রেণি ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্য।
- . লাতিনো গে মেন অ্যান্ড এইচআইভি: কালচার, সেক্সুয়ালিটি অ্যান্ড রিস্ক বিহেভিয়ার,, (২ ডিসেম্বর ২০১৩), টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, পৃ. ১৩১।
- আজ আমরা যেভাবে “সমকামী” ব্যক্তি কথাটা ব্যবহার করি, সেটা একশো বছর আগেও অনেকের কাছে বোধগম্য ছিল না। ১৯৪০-এর দশকে যখন বলা হয়েছিল যে, মানুষ আসলে একধরনের ধারাবাহিকতায় থাকে—কেউ একেবারে সমকামী বা একেবারে বিপরীতলিঙ্গপ্রেমী না-ও হতে পারে—তখন সেটা ছিল খুবই অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক ধারণা। ১৯৭০-এর দশকে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে “গে প্রাইড” বা “সমকামী গর্ব” ঘোষণা করা হয়েছিল । একইভাবে, ১৯৮০-এর দশকে এইডস রোগ নিয়ে সমকামী ও দ্বৈতলিঙ্গপ্রেমী পুরুষদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে হলে তখনকার সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানতে হয়। তারা যেভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিল, সেটা পুরোপুরি বুঝতে গেলে জানা দরকার, সেই সমকামী সমাজ তাদের কীভাবে তৈরি করেছিল, কীভাবে সাহস জুগিয়েছিল। তেমনই, চিকিৎসা পরীক্ষা, চিকিৎসা পদ্ধতি, ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার নিয়ে সমকামী সমাজ যে রাজনৈতিক আন্দোলন করেছে, সেটাও বোঝা যায় না—যদি না সমাজ আর চিকিৎসাব্যবস্থার মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কটা বোঝা যায়।
- পিটার এম. ডেভিস, ফোর্ড সি. আই. হিকসন, পিটার ওয়েদারবার্ন, অ্যান্ড্রু জে. হান্ট, সেক্স, গে মেন অ্যান্ড এইডস, (৩১ অক্টোবর ২০১৩), টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস,, পৃ. ৫।
- অনেকেই মনে করে বয়স্ক সমকামী পুরুষদের জীবনটা কঠিন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তারা অনেক সময় বয়স্ক সাধারণ (বিপরীতলিঙ্গপ্রেমী) পুরুষদের চেয়ে ভালোভাবে বয়সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। কারণ তারা ছোটবেলা থেকেই সমাজের অনেক বাধা উপেক্ষা করে বড় হয়েছেন। তারা সমাজের প্রচলিত নিয়মের বাইরে থেকেও কীভাবে টিকে থাকতে হয়, সেটা শিখে ফেলেছেন। আমাদের সমাজ বয়স্ক মানুষদের অনেক সময় গুরুত্ব দেয় না বা উপেক্ষা করে। কিন্তু সমকামী বয়স্ক পুরুষরা এই ধরনের অবহেলা বা অপমান মানিয়ে নিতে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত। কারণ তারা অনেক দিন ধরে সমকামিতার অপবাদ সহ্য করে এসেছে।
- জন ডিচেকো এবং অ্যালান এল. এলিস গে মেন অ্যাট মিডলাইফ: এইজ বিফোর বিউটি, (৯ জানুয়ারি ২০১৪)।, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস

- আমি মনে করি আমি ঐতিহাসিক সংরক্ষণে সমকামী পুরুষদের আপাতদৃষ্টিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতিকে বাঁধাধরা ধারণার উপাদান হিসাবে দেখেছি। তাই বিষয়টিকে তখন গুরুত্ব দিইনি। আমি ভেবেছিলাম, যদি যৌনতা বাদ দিই, তাহলে সমকামী আর সাধারণ পুরুষদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তাই আমি ধরে নিয়েছিলাম, সমকামী পুরুষদের প্রাচীন বাড়ি মেরামত, পুরনো জিনিস সংগ্রহ বা ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ফুলের ব্যবসা, চুল কাটার কাজ বা ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি এতটা ঝোঁক আসলে একটা ভুল ধারণা। কিন্তু এখন আমার কাছে পরিষ্কার যে, এসব ক্ষেত্রে তাদের আকর্ষণ সত্যিই বিশেষ কিছু। আমি এখন আর এসবকে স্রেফ “বাঁধাধরা ধারণা” বলে উড়িয়ে দিই না। বরং আমি ভাবি, এগুলো আমাদের সমাজ ও মানসিকতার গভীর সত্যের প্রতিফলন। সমকামী পুরুষরা এমন অনেক পেশায় কাজ করেন, যেগুলো মূলত নারীদের আধিপত্যে চলে—এমন সব পেশা, যেখানে সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা আর অতীতের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। এসব পেশায় তারা প্রতিভা ও দক্ষতার কাজ করেন। এটা সম্ভবত সমকামী পরিচয়ের মধ্যেকার একটি মৌলিক পার্থক্য থেকেই জন্ম নেয়।
- উইল ফেলোজ আ প্যাশন টু প্রিজার্ভ: গে মেন অ্যাজ কিপার্স অফ কালচার, (২৬ আগস্ট ২০০৫), ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন প্রেস, পৃ. ১০।
- ফেয়ারি বা “নরম” ধরনের ছেলেদের - প্রকৃতি - তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বন্ধ করে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
- এফ. স্কট ফিটজজেরাল্ড, "দ্য ক্র্যাক-আপ", উদ্ধৃত:এসকোয়ার (ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬)।
- সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট দল আর শাসকরা সমকামিতার প্রতি কখনও দ্ব্যর্থপূর্ণ, কখনও বা খুবই কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। তবুও, অনেক সমকামী ব্যক্তি সমাজতন্ত্রের আদর্শকে গ্রহণ করেছেন। আসলে, সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের শুরুর দিক থেকেই অনেক পথিকৃত ও প্রবক্তা—যেমন জার্মানির ম্যাগনাস হির্শফেল্ড, ফ্রান্সের আন্দ্রে জিদ, আর আমেরিকার হ্যারি হে—“স্বাধীনতা, সাম্য আর ভ্রাতৃত্ব”-এর স্বপ্ন সমাজতন্ত্রের মধ্যেই দেখেছিলেন। তাই তারা দৃঢ়ভাবে বামপন্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
- গার্ট হেকমা, হ্যারি উস্টারহুইস, জেমস ডি. স্টেকলি, গে মেন অ্যান্ড দ্য সেক্সুয়াল হিস্ট্রি অফ দ্য পলিটিক্যাল লেফট (১৯৯৫), হ্যারিংটন পার্ক প্রেস, পৃ. ৬।

- মধ্য শতাব্দীতে (১৯৫০-এর দিকে) সমকামী পুরুষদের জীবনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট দিশানির্দেশ ছিল না। কীভাবে জীবন গড়ে তুলবে, তা নিয়ে তাদের সামনে কোনও পরিষ্কার পথ ছিল না। কিন্তু তারপর প্রতি দশকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। নানা রকমের "নকশা" তৈরি হতে থাকে। সাহিত্য, জনপ্রিয় সংস্কৃতি আর বাস্তব জীবনে সমকামী পুরুষদের উপস্থিতি ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যায়। কিছু কিছু সমকামী যুগলের কথাও উঠে আসে। সমকামী পুরুষরা নিজেদের পরিচয় আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে শেখে। তারা নিজেদের মতো করে একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করে, নিজেদের যৌনতার কথা খোলাখুলিভাবে স্বীকার করতে শেখে। জীবন ধীরে ধীরে আরও ভালো হতে থাকে—যাদের সঙ্গী ছিল, তাদের জন্যও এবং যারা একা ছিল, তাদের জন্যও। কিন্তু মধ্য শতাব্দীতে এসব কেউই জানত না। অনেকে তো এসব কল্পনা করতেও ভয় পেত।
- জন ইবসন, মেন উইদআউট ম্যাপস: সাম গে মেইলস অফ দ্য জেনারেশন বিফোর স্টোনওয়াল (২২ অক্টোবর ২০১৯), ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, পৃ. ১২০।
- "হোমোফোবিয়া" বা "সমকামভীতি" শব্দটি চালু হওয়ার ফলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বদলাতে শুরু করে। আগে সমকামীদেরই নৈতিক অপরাধী হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেইসব মানুষরা, যারা অযৌক্তিকভাবে সমকামীদের ভয় পায় বা তাদের প্রতি বিদ্বেষ দেখায়। তবে, এই শব্দটি (হোমোফোবিয়া) পুরোপুরি ঠিকভাবে সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষের প্রকৃতি বোঝাতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সমকামীদের প্রতি শত্রুতা দেখায়, তারা সবসময় ভয়ে নয়, বরং রাগ, ঘৃণা বা বিতৃষ্ণা থেকে এই আচরণ করে। সহজভাবে বললে, অনেকের মধ্যে ভয় না থেকে অন্য ধরনের নেতিবাচক আবেগ কাজ করে।
- রুসি জসপাল, দ্য সোশ্যাল সাইকোলজি অফ গে মেন (১৪ আগস্ট ২০১৯), স্প্রিংগার ইন্টারন্যাশনাল প্রেস, পৃ. ৮২।
- দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে বর্ণবৈষম্য আর ধর্মীয় মৌলবাদ সমাজের অনেক গভীরে পৌঁছে গিয়েছিল। তবুও, কৃষ্ণাঙ্গ সমকামী পুরুষরা নিজেদের জন্য একটা জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। তারা সেখানে ভালো ও পরিপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছে। যদিও তারা মনে করে, সবকিছু একেবারে ঠিক হয়ে যায়নি, তবুও তারা দক্ষিণেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি যখন উত্তর, মধ্য-পশ্চিম আর পশ্চিম আমেরিকার শহরগুলিতে অনেক সমকামী মানুষ চলে যাচ্ছিল, তখনও তারা সেখানেই থেকে গিয়েছিল। এমনকি দক্ষিণের মানুষের এখনও অনেক রক্ষণশীল মনোভাব থাকা সত্ত্বেও, তারা নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।
- প্যাট্রিক জনসন, ইট টি: ব্ল্যাক গে মেন অফ দ্য সাউথ (২০০৮), ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা প্রেস, পৃ. ২।

- কাস্ত্রো আর তাঁর বিপ্লবী সাথী চে গুয়েভারা সমকামী পুরুষদের ভালো চোখে দেখতেন না। তারা প্রায়ই সমকামীদের "মারিকোনেস" (অর্থাৎ গালির মতো করে "ফ্যাগটস") বলে ডাকতেন। তাদের দৃষ্টিতে সমকামীতা ছিল বিপ্লববিরোধী ও ধনী সমাজের বিলাসিতার একটা দৃষ্টান্ত।
- জেমস কারচিক, ফিদেল কাস্ত্রোর হররিফিক রেকর্ড অন গে রাইটস, (২৭ নভেম্বর ২০১৬), দ্য ডেইলি বিস্ট
- অনেক সময় কিছু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সমকামী পুরুষদের বিষাদগ্রস্ততার সমস্যা অতিরিক্ত করে দেখেন। তারা এমন কিছু স্বাভাবিক আচরণকেও মানসিক রোগের লক্ষণ বলে ধরে নেন। আবার কিছু বিশেষজ্ঞ ঠিক উল্টো করেন—তারা বিষণ্ণতার সমস্যাকে গুরুত্ব দেন না। তারা ভাবেন, সমকামী পুরুষরা শুধু "সমকামী বলেই" দুঃখিত বা অখুশি। কিন্তু আসলে, অনেক সময় তাদের সত্যিকারের সমস্যা বিষাদগ্রস্ততা।
- মার্টিন ক্যান্টর, ট্রিটিং ইমোশনাল ডিসঅর্ডার ইন গে মেন, (১৯৯৯), প্র্যাগার
- সমাজ পুরুষদের পুরুষত্ব (পুরুষালি ভাব) নিয়ে যেভাবে একটা নির্দিষ্ট রূপ চায়, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমকামী পুরুষদের অনেক সময় নিজেদের চাপের মধ্যে পড়তে হয়। ফলে তাদের নিজেদের আসল পরিচয় খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকের জন্য সমকামী পুরুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়াটাই সহজ বা পরিষ্কার সিদ্ধান্ত হয় না।
- মাইকেল এম. কোসেট কাউন্সেলিং গে মেন, অ্যাডোলেসেন্টস অ্যান্ড বয়েজ, (২৭ জুন ২০১৪), টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস
- যদি কোনো পুরুষ আরেক পুরুষের সঙ্গে শুয়ে, যেমন করে সে কোনো নারীর সঙ্গে শোয়, তবে তারা দুজনেই জঘন্য পাপ করেছে। তাদের অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড হবে; তাদের মৃত্যু তাদের ওপরেই বর্তাবে।
- “কিছু পুরুষ আছেন, যারা বাহ্যিকভাবে পুরোপুরি 'স্বাভাবিক' এবং শক্তিশালী, শুধু তারাই পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। আবার কিছু পুরুষ আছে, যারা অতি নারীত্বপূর্ণ এবং বিরক্তিকর।” এই ধরনের সমকামীবিদ্বেষীতা সমকামী পুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়; সরাসরি পুরুষরা সাধারণত এমনভাবে আলাদা করে দেখে না। যখন এই কথা প্রকাশ করা হয়, তখন এর উদ্দেশ্য হয় নারীত্বপূর্ণ সমকামীদের ত্যাগের বিনিময়ে সাধারণ পুরুষদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করা। "স্ট্রেট-অ্যাক্টিং" সমকামী পুরুষ (এখনও অনেক পরিচয় বিজ্ঞাপনে এই শব্দ দেখা যায়) চায় সাধারণ সমাজ তাকে গ্রহণ করুক। আর তার ধারণা, অন্য সমকামীদের ঘৃণা করে সে সাধারণ পুরুষদের কাছাকাছি যেতে পারবে। তার কথার অর্থ এমন দাঁড়ায়: "আমি ওদের মতো নই। আমি তোমাদের মতো। আমি ওদের ঘৃণা করি, এটাই প্রমাণ করে আমি তোমাদের মতো।"
- মার্ক লিলি, গে মেন'স লিটারেচার ইন দ্য টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি, ম্যাকমিলান, (২০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩), পৃ. ১৬৪।
- গবেষণা দেখিয়েছে, পুরুষরা সাধারণত নিজেদের শরীরকে কার্যক্ষমতার দিক থেকে মূল্যায়ন করে, আর নারীরা চেহারার দিক থেকে। মনে করা হয় এই কারণে, সমকামী পুরুষদের শরীর নিয়ে অসন্তুষ্টি বেশি হয়। কারণ, তারা পুরুষ হিসেবেও দেখা হয় এবং নারীদের মতো যৌন বস্তু হিসেবেও দেখা হয়। ফলে দুই দিক থেকেই তারা নেতিবাচকভাবে নিজেদের বিচার করে।
- বেঞ্জামিন লিপটন, গে মেন লিভিং উইথ ক্রনিক ইলনেসেস অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটিজ: ফ্রম ক্রাইসিস টু ক্রসরোডস, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, (১১ জুন ২০১৪), পৃ. ৪৭।

- শ্রেণিবিভাজন (class) বিশেষ করে এশীয় সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে আরও জটিল। এখানে মূল সমস্যা হলো, এশীয় আমেরিকানদের সম্পর্কে ভুল ধারণা। "মডেল মাইনরিটি" নামে পরিচিত হওয়ায়, এশীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত সফল ও আর্থিকভাবে এগিয়ে আছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু নিউইয়র্কের মতো শহরে অভিবাসী এশীয়দের জন্য বাস্তবতা ভিন্ন। তাদের ইংরেজি]তে সাবলীলতা বা সাংস্কৃতিক পুঁজি কম মনে করা হয়। অনেক সময় তাদের শিশুসুলভ, নিষ্পাপ বা "নারীসুলভ" দেহ হিসেবে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি এশীয় দেহকে একধরনের ছদ্ম-শিশুপ্রেমী (pseudo-pedophilic) মতো করে ফেলে, যা খুব সমস্যা তৈরি করে।
- মার্টিন এফ. মানালানসান চতুর্থ, গ্লোবাল ডিভাস: ফিলিপিনো গে মেন ইন দ্য ডায়াসপোরা, ডিউক ইউনিভার্সিটি প্রেস, (১০ ডিসেম্বর ২০০৩), পৃ. ৮৫।
- কৃষ্ণাঙ্গ সমকামী প্রান্তিকতার একটি কারণ ছিল "সমকামীবিদ্বেষ" মনোভাব। অর্থাৎ, যাদের সমকামী বা সমকামী নারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের প্রতি ভয় এবং ঘৃণা। শুরুতে যারা সমকামীবিদ্বেষ নিয়ে ভাবনা শুরু করেছিলেন, তারা এই বিদ্বেষকে নারীদের প্রতি ঘৃণার (নারীবিদ্বেষ) সঙ্গে জুড়ে দেখেছিলেন। এতে বর্ণ ও গায়ের রঙের বিষয়গুলো অনেক সময় চাপা পড়ে যেত। আবার কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে, এই বিদ্বেষ মানুষের মনোভাব বা নৈতিক চিন্তা থেকে আসে। অনেক ঐতিহাসিক ব্যাখ্যায় সমকামীবিদ্বেষ বলতে শুধু পায়ুকাম (sodomi) (পুরনো আইনে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌন সম্পর্ক) নিয়ে শাস্তি দেওয়া বা প্রকাশ্যে সমকামী আচরণকে কেন্দ্র করে কথা বলা হয়েছে। ফলে যারা একসঙ্গে বর্ণবাদ আর যৌন পরিচয়ের বৈষম্যের শিকার, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো প্রায়ই অবহেলিত হয়েছে। তারা সঙ্গী থাকুক বা একা, পুরুষালি হোক বা নারীসুলভ, সক্রিয় হোক বা নিষ্ক্রিয় — কৃষ্ণাঙ্গ সমকামী পুরুষরা শুধু নাগরিক অধিকারের জন্য এবং সমকামীবিদ্বেষের অবসানের জন্য নয়, বরং আরও সূক্ষ্ম বৈষম্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন, যা তাদের প্রতি বিদ্বেষ আর অবজ্ঞা তৈরি করত।
- কেভিন মামফোর্ড, ট স্ট্রেইট, নট হোয়াইট: ব্ল্যাক গে মেন ফ্রম দ্য মার্চ অন ওয়াশিংটন টু দ্য এইডস ক্রাইসিস, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা প্রেস, (১২ জানুয়ারি ২০১৬), পৃ. ৫।
- বন্ধুত্ব হলো সমকামী পুরুষদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বন্ধুত্বের মাধ্যমেই তারা নিজেরা একটা সমাজ গড়ে তোলে। বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যেই তারা নিজেদের পরিচয় তৈরি করে, নিজেদের সংস্কৃতি গড়ে, নিজেদের এলাকা গড়ে তোলে। ব্যক্তিগত জীবন আর বৃহৎ সামাজিক ব্যাপার—সবই বন্ধুত্বের মাধ্যমে একসঙ্গে মিশে যায়। বন্ধুত্বই তাদের জীবন, পরিচয়, সংস্কৃতি ও সমাজ গড়ে তোলার প্রধান ভরসা।
- পিটার এম. নার্ডি গে মেন'জ ফ্রেন্ডশিপস: ইনভিন্সিবল কমিউনিটিজ, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো প্রেস, (১৫ জুলাই ১৯৯৯), পৃ. ১৩।

- সমকামী পুরুষ বলতে সাধারণভাবে বোঝানো হয়—এমন পুরুষ, যারা অন্য পুরুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন। তবে এটা আসলে একটি জটিল বিষয়ের খুব সরলীকৃত ব্যাখ্যা। ইতিহাস জুড়ে পুরুষেরা পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু "সমকামী" (gay) পরিচয়টি মূলত একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা, যার বয়স মাত্র একশো বছরের মতো। এমনকি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও, সব পুরুষ যারা পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন বা পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন, তারা সবাই নিজেদের "সমকামী" বলে মনে করেন না। যারা নিজেদেরকে সমকামী হিসেবে মানেন, তাদের মধ্যেও অনেক ধরনের বৈচিত্র্য আছে। তবুও, সমকামী পুরুষদের মধ্যে কিছু মিল দেখা যায়। যেমন—একটা সমষ্টিগত ইতিহাস এবং কিছুটা মিল থাকা সংস্কৃতি। কারণ, সমকামী পুরুষদের পরিচয়, অভিজ্ঞতা এবং জীবনপথ সময়ের সাথে বদলাচ্ছে। তাই, তাদের সম্পর্কে সবসময় আধুনিক তথ্য ব্যবহার করাই জরুরি।
- গে মেন: অক্সফোর্ড বিবলিওগ্রাফিজ অনলাইন রিসার্চ গাইড, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, (মে ২০১০)।
- সমকামী পুরুষেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে (বিশেষ করে বিনোদন জগতে) পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু তাদের খুব কম সংখ্যককেই গৃহস্থ মানুষ বা বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে দেখা হয়। তাদের নিয়ে ধারণা করা হয় যে তারা পরিবার গড়ার, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের, সন্তানের লালন-পালনের বা স্থায়ী প্রেমের দিকে ঝোঁক রাখেণ না। আবার, রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত বলেও তারা খুব একটা বিবেচিত হন না (যেমনটা অনেক সময় সমকামী নারীদের ক্ষেত্রে হয়)। এই ধারণাগুলোর সঙ্গে সমকামী পুরুষদের দূরত্ব থাকার জন্যই, তাদের (স্বাভাবিক) সমাজব্যবস্থার মূলধারায় প্রবেশের সুযোগ কম হয়েছে। মনে করা হয়েছে, তাদের জীবনচাহিদা আর স্বপ্ন অনেকটাই সমকামী নারীদের চেয়ে আলাদা।
- ক্রিস্টোফার পুলেন, ডকুমেন্টিং গে মেন: আইডেন্টিটি অ্যান্ড পারফরমেন্স ইন রিয়েলিটি টেলিভিশন অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম, ( (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)), ম্যাকফারল্যান্ড প্রেস, পৃ. ১।

- ১৯৮১ সালের কাছাকাছি সময় থেকে এইডস রোগের প্রভাব সমকামী পুরুষদের সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণ হারানোর পাশাপাশি, সমাজের মূলধারায় সমকামী পুরুষদের দৃশ্যমানতা, স্বীকৃতি এবং প্রভাব অনেক বেড়ে যায়।
- জে. গেরেমি কুয়ার্টো, লেস্টার বি. ব্রাউন, টেরি কুক, স্টিভেন সারোসি,গে মেন অ্যান্ড এজিং, (১৯৯৭), গারল্যান্ড প্রেস, পৃ. ৩।
- সমকামী পুরুষেরা প্রায়ই সেইসব নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন, যাদের তারা সুন্দর মনে করেন। একটা প্রচলিত ভুল ধারণা আছে—সমকামী পুরুষেরা নাকি নারীবিদ্বেষী। আসলে বাস্তবে, বহু সমকামী পুরুষ নারীদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও প্রশংসাবোধ রাখেন। তা সে কোনো চলচ্চিত্রের নায়িকা হোক বা তার প্রিয় নারী বন্ধু। সমকামী পুরুষেরা নারীদের একাধিক ভালোবাসেন। আর তাদের নারী বন্ধুদের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রতি তাদের অকপট ভালোবাসা সত্যিই নজরকাড়া।
- লরা রাফাটি, স্ট্রেইট উইমেন, গে মেন: অ্যাবসোলুটলি ফ্যাবুলাস ফ্রেন্ডশিপস, ওয়াইল্ডক্যাট ক্যানিয়ন প্রেস, (সেপ্টেম্বর ২০০১), পৃ. ১৫৬।
- গে লিবারেশন ফ্রন্ট যখন রাজনৈতিক ময়দানে আসে, তখন তারা সমাজের নানা প্রতিষ্ঠানের (যেমন আইন, ধর্ম, চিকিৎসাশাস্ত্রের নৈতিকতা) বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনামূলক কথা জোরালোভাবে প্রকাশ করেন। তারা নিজেদের (সমকামী নারী ও পুরুষদের) আলাদা, ব্যতিক্রমী এবং বিদ্রোহী হিসেবে তুলে ধরেছিল। আর এই ভিন্নধর্মী চেহারা গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। পত্রিকা আর টিভি তাদের গল্প প্রচার করতে থাকে।
- লুসি রবিনসন, গে মেন অ্যান্ড দ্য লেফট ইন পোস্ট-ওয়ার ব্রিটেন: হাউ দ্য পার্সোনাল গট পলিটিক্যাল, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি প্রেস, (১৯ জুলাই ২০১৩), পৃ. ৭৫।

- সমকামী পুরুষেরা যখন সমাজে আরও দৃশ্যমান হতে শুরু করেন, তখন অনেকে চেষ্টা করেন পুরনো যে ছক ছিল—"সমকামী মানেই মেয়েলি"—সেই ছকটা ভাঙতে।
"ক্লোন লুক" নামে একটা স্টাইল জনপ্রিয় হয়, যেখানে পুরুষেরা পুলিশ বা নির্মাণ শ্রমিকদের মতো শক্তপোক্ত চেহারায় নিজেদের তুলে ধরেন। কিন্তু অনেকেই এই ধাঁচ মানতে চাননি। তাদের প্রশ্ন ছিল, "আড়াল থেকে বেরিয়ে যদি আবার সেই পুরুষতান্ত্রিক রূপটাকেই মেনে নিতে হয়, তাহলে মুক্তি কোথায়?" মানে, শুধু প্রকাশ্যে আসার জন্য নিজেদের আবার সেই দমনকারী সমাজের ছকেই ঢালাই করা ঠিক নয়—এটাই ছিল মূল কথা।
- রিচার্ড স্মিথ, সিডিউসড অ্যান্ড অ্যাব্যান্ডনড: এসেজ অন গে মেন অ্যান্ড পপুলার মিউজিক, ব্লুমসবারি পাবলিশিং, (৬ অক্টোবর ২০১৬), পৃ. ২১।
- পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা (মেয়েদের তুচ্ছ করা) আসলে সাধারণ পুরুষদের কাছ থেকে এসেছে। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব মূলত একটি প্রথাগত ভাবনা, যা সমকামী পুরুষদের অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এমন নয় ।তবে বাস্তবে দেখা যায়, টিকে থাকার জন্য অনেক সময় সমকামী পুরুষেরাও এই মনোভাব নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে বাধ্য হন। আরেক দিক থেকে বলা হয়, কিছু সমকামী পুরুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের অবজ্ঞা করেন, কারণ তারা প্রচলিত "ছেলেমেয়ে বিয়ে করে সংসার করবে" এই নিয়মের বিরোধিতা করতে চান। যেসব সমকামী লেখক স্বীকার করেন যে সমকামী পুরুষদের মধ্যে নারী বিদ্বেষ আছে, তারা বলেন—নারী বিদ্বেষ দুঃখজনক হলেও, এটি এক ধরনের "মুক্তির" প্রকাশ। লেখক উইলিয়াম মান (১৯৯৪) বলেছিলেন, তাঁর বন্ধুরা নারীদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করলেও, সেটা আসলে নিজেদের মুক্তির একরকম ভুল প্রকাশ ছিল—মেয়েদের বিরুদ্ধে নয়, বরং প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
- জেন ওয়ার্ড, গে ম্যাসকুলিনিটিজ, (২০০০), সেজ পাবলিকেশনস, পৃ. ১৬৫।
- "হ্যাজিং" সংক্রান্ত পর্নোগ্রাফি (নবীনদের নির্যাতনের দৃশ্য) এবং সেনাবাহিনীতে নবীন নির্যাতনের বাস্তব ঘটনাগুলো পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়— কীভাবে সমকামী ও সাধারণ পুরুষেরা একে অপরের যৌন আচরণ এবং লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে খেলা করেন। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ পুরুষ সেনা ও নাবিকেরা কখনও কখনও সমকামীদের মতো মেকি যৌন আচরণ করে "rites of passage" সম্পন্ন করেন। তারা জানেন এসব আচরণ বাইরে করলে তাদেরকে সমকামী ভাবা হতো। আসলে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এই সমকামী ইঙ্গিতগুলো ব্যবহার করেন, যাতে অপমান বা অস্বস্তির মাত্রা বাড়ে। অন্যদিকে, অনেক সমকামী পুরুষও, সোজাসাপ্টা পুরুষদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ বা "hetero-masculinity" কে আকর্ষণীয় মনে করেন। তারা সাধারণ পুরুষদের আচরণ খেয়াল করে শেখেন এবং নিজেদের মধ্যে এমন বৈচিত্র্যময় ভূমিকা তৈরি করেন—যেমন, "সাধারণ"-এর মতো আচরণ করা।
- জেন ওয়ার্ড, গে ম্যাসকুলিনিটিজ, (২০০০), সেজ পাবলিকেশনস, পৃ. ১৬৫।
- বেশিরভাগ সমকামী পুরুষের মদ্যপানের কারণ নিজদেরকে আলাদা ভাবা নয়। তবে যাদের মদ্যপানের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে পড়ার অনুভূতি জড়িত থাকতে পারে। আসলে মদ্যপানের কারণে আলাদা হয়ে পড়ার অনুভূতি তৈরি হয়, তাদের মধ্যে থাকা কোনো পূর্ববর্তী ইচ্চছার জন্য নয়। সমকামী পুরুষেরা অনেক সময় মনে করেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে মদ্যপান করাটা স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত। তাই তারা অনেকেই খেয়ে থাকেন।
- থমাস এস. ওয়েইনবার্গ, গে মেন, ড্রিঙ্কিং অ্যান্ড অ্যালকোহলিজম, (১৯৯৪), সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- যেসব সমকামী পুরুষের শরীর বড় (মোটা বা বিশাল), তারা একসঙ্গে দুই দিক থেকে অবজ্ঞা ও আঘাতের শিকার হন। একদিকে, সাধারণ সমাজে তাদের যৌন পরিচয়ের জন্য তাদের ছোট করা হয়। অন্যদিকে, সমকামী সমাজের ভেতরেও, যেখানে বাহ্যিক চেহারা (স্মার্ট, ফিট চেহারা) খুব গুরুত্ব পায়, সেখানে তাদের দেহের আকারের জন্য আলাদা করে অবহেলা করা হয়। ফলে বড় শরীরের সমকামী পুরুষেরা দুই দিক থেকেই বাদ পড়েন — মূলধারার সমাজ থেকেও, আর নিজেদের সমকামী সমাজ থেকেও। এইভাবে তারা এমন এক অবস্থায় পৌঁছান, যেখানে এক বঞ্চিত গোষ্ঠীর মধ্যেও তারা আরও বেশি বঞ্চিত হয়ে থাকেন।
- জেসন হোয়াইটসেল, ফ্যাট গে মেন: গার্থ, মার্থ অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অফ স্টিগমা, (২৫ জুলাই ২০১৪), এনওয়াইইউ প্রেস।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় সমকামী পুরুষ সম্পর্কে বিশ্বকোষীয় নিবন্ধ
উইকিমিডিয়া কমন্সে সমকামী পুরুষ সম্পর্কিত মিডিয়া