বিষয়বস্তুতে চলুন

সাম্রাজ্যবাদ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সাম্রাজ্যবাদ হলো পররাজ্যের উপর অধিকার বিস্তারের নীতি। এটিকে প্রায় নঞর্থকভাবে বিবেচনা করা হয়, যেহেতু এতে স্থানীয় জনগণকে শোষণের মাধ্যমে অল্প আয়াসে ধনী হবার উদ্দেশ্য থাকে। আধুনিককালে এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয় যে উপনিবেশবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ এবং পরেরটি ছাড়া তার অস্তিত্ব থাকতে পারে না।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • বুঝতে পেরেছিলাম এশিয়াতে ইউরোপীয়ানরা যে সাম্রাজ্যবাদ চালাচ্ছে সেই সাম্রাজ্যবাদ অতি সত্বর ধ্বংস হবে। চীনের সাম্রাজ্যবাদী মতলব ছিল শুধু চীনা ধনীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতা পাবার ইচ্ছা সকলের মনে আলোকায়িত, ইন্দোচীনের অবস্থাও তাই—অতএব এশিয়া আর পরাধীন থাকবে না। এখন বুঝতে পেরেছি বহুপূর্বে আমি যে ধারণা করেছিলাম তাই ফলবতী হয়েছে। আমরা স্বাধীন হয়েছি এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর কি হতে পারে?
  • এই বিপুল পৃথিবীতে ভারতবর্ষের একটি মাত্র শত্রু আছে, যে শত্রু শতাধিক বর্ষকাল তাহাকে শোষণ করিয়াছে, যে শক্ত ভারতমাতার জীবন-শোণিত চুষিয়া লইতেছে—সে শত্রু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যে দিন পরাভূত হইবে, সেই দিনই ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবে। এই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবিচ্ছিন্ন আপোষহীন সংগ্রামেই আমার সমস্ত জীবন কাটিয়াছে। আমি শৈশব হইতেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে চিনিয়াছি। |
  • কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতাকামী সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী দলগুলির মিলন ক্ষেত্র; অতএব, কংগ্রেসের অন্তর্ভূত কি বহির্ভূত অপরাপর সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী প্রতিষ্ঠানের সহিত কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যে পার্থক্য থাকিলেও স্বাধীনতা-যুদ্ধে ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাহাদের আদর্শগত কোন পার্থক্য নাই।
  • ইউরোপের ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের অসামঞ্জস্য ও স্ববিরোধিতা, সাম্রাজ্যভোগী ও সাম্রাজ্যলোভীর সংগ্রামকে আসন্ন করিয়া তুলিল। বিভিন্ন রাষ্ট্র সঙ্ঘবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়া যে বৈপ্লবিক গণশক্তি আন্তর্জাতিক মহারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিতেছিল— নেতাদের দুর্ব্বলতায় সে স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল। জাতির বিরুদ্ধে জাতির জিঘাংসাপ্রবৃত্তি রণোন্মাদনায় রক্তপিপাসু হইয়া উঠিল।
  • রাশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিপর্য্যস্ত, সাম্রাজ্যবাদী মহাযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সমাজব্যবস্থা ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে; বিপ্লববিরোধী দলগুলি অসন্তোষকে নূতন উপায়ে জাগাইয়া তুলিবার জন্য গোপন আন্দোলনে রত; দুর্ভিক্ষ তাহার করাল ছায়া বিস্তার করিতেছে।
  • সুতরাং এই যন্ত্র বিপ্লবের পরিণামরূপে ধনতান্ত্রিক সভ্যতা ছড়িয়ে পড়ল পৃথিবী জুড়ে, সর্বত্রই কর্তৃত্ব রইল ইউরোপের। আর, ধনতন্ত্রের ফল হল সাম্রাজ্যবাদ। তাই এই শতকটিকে ‘সাম্রাজ্যবাদী শতাব্দী’ বলা চলে। কিন্তু এই নূতন যুগটির সাম্রাজ্যবাদ প্রাচীন রোম, চীন, ভারত, আরবীয়, বা মঙ্গোলদের সাম্রাজ্যবাদ থেকে অনেক পৃথক। এ সাম্রাজ্য এক নূতন ধরনের, কাঁচা মাল ও বাজার, এই এদের একমাত্র কাম্য। নূতন শ্রমশিল্পবাদেরই সন্তান এই নূতন সাম্রাজ্যবাদ। সেকালে বলা হত, ‘বাণিজ্য পতাকার অনুসরণ করে’, আর অনেক সময় বাইবেলের অনুসরণ করেছে এই পতাকা। ধর্ম বিজ্ঞান দেশপ্রেম, সব-কিছুরই ঐ এক উদ্দেশ্য হল—বাণিজ্যশিল্পে যারা পশ্চাৎপদ, যারা দুর্বল, তাদের দূর করে দিয়ে যন্ত্রের প্রভুরা, কোটিপতিরা দিন দিন অর্থবৃদ্ধি করবেন। সত্য ও প্রেমের নামে খৃষ্টান মিশনারিরা গিয়ে এই সাম্রাজ্যবাদের খুঁটি গাড়ত আর তাদের কোনো অনিষ্ট হলেই তাদের দেশবাসীরা দেশ-জয়ের পেত বিপুল সুযোগ।
  • আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ এশিয়াতে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হল এবং প্রাচীন সভ্যতার দেশগুলোর উপরে তার কীরকম প্রতিক্রিয়া হল তাই লক্ষ্য করা। এই অধ্যয়নের পক্ষে আদর্শ সাম্রাজ্য হচ্ছে ভারতবর্ষ; এই শিল্পতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের আর-একটি নূতন এবং খুব লক্ষ্য করবার মতো রীতির দেখা পেলাম আমরা চীনদেশে।
  • প্রথমে এটি একধরনের বৈপরীত্য বলে মনে হতে পারে যে রক্ষণশীলদের আন্তর্জাতিকতাবিরোধী মনোভাব এত ঘন ঘন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যত বেশি অচেনাকে অপছন্দ করে এবং নিজের সংস্কার বা রীতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, তত বেশি সে নিজেকে অন্যদের 'সভ্য' করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাবতে থাকে। তবে, এই 'সভ্যতা' দেওয়ার প্রক্রিয়া হয় না সেই স্বতঃস্ফূর্ত ও বাধাহীন আদানপ্রদানের মাধ্যমে যেটিকে উদারবাদীরা সমর্থন করে, বরং হয় 'কার্যকর শাসনব্যবস্থা' চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। এটা লক্ষণীয় যে, এই ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেখা যায়, রক্ষণশীলরা উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রীদের সঙ্গে হাত মেলায়।
    • ফ্রিডরিখ হায়েক, হোয়াই আই অ্যাম নট আ কনজারভেটিভ, দি কনস্টিটিউশন অফ লিবার্টি (১৯৬০)
  • সাম্রাজ্যবাদের রচয়িতারা, যুদ্ধের নীতিনির্ধারকরা, কর্পোরেট-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী শাখা—এবং মিডিয়ায় তাদের গোলামি করা সভাসদরা—এরা সকলেই প্রকৃতপক্ষে অবৈধ। এই সরল সত্যটি বললেই, আমাদের অনেকের মতো, আপনাকেও মিডিয়ার মূলধারা থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর যদি কেউ এই সত্যটি প্রমাণ করে দেয়, যেমন করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, চেলসি ম্যানিং, জেরেমি হ্যামন্ড এবং এডওয়ার্ড স্নোডেন—যারা আমাদের ক্ষমতার অন্তর্জগতের ঝলক দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন, তবে তাদের পেছনে লেগে পড়ে রাষ্ট্রযন্ত্র—তাদের শিকার বানানো হয়, দমন করা হয়।
    • ক্রিস হেজেস, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ-এর মামলা ও 'আইনের শাসন' এর বাস্তবতা পুনর্মূল্যায়ন, সালন (১৫ জুন ২০২১)
  • সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা দুটি দিক থেকে আসে। একদিকে, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের ভেতরে জাতীয়তাবাদের জোয়ার উঠছে, যা স্বশাসন ও স্বাধীনতার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমানভাবে মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে 'একচেটিয়া সাম্রাজ্য' ধারণাটি অতীতের একটি যুগের সঙ্গে সম্পর্কিত; এবং বিশ্বের পশ্চাৎপদ অঞ্চলগুলোকে—অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির দিক থেকে, সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব হিসেবে দেখা উচিত।
    • অ্যালডাস হাক্সলি, ইম্পেরিয়ালিজম অ্যান্ড কলোনিজ, অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া অফ প্যাসিফিজম (১৯৩৭), পৃষ্ঠা ৪৫
  • উপনিবেশবাদ ছিল সাম্রাজ্যবাদের একটি দিকমাত্র। উপনিবেশবাদ নির্ভর করত বিদেশি রাজনৈতিক শাসনের ওপর, এবং এটি পৃথিবীর কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ছিল সব উপনিবেশের ভিত্তি, এবং তা সারা বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত ছিল (শুধুমাত্র সেখানে বাদ পড়েছিল, যেখানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে তা উৎখাত হয়েছিল)। এবং সাম্রাজ্যবাদে সব পুঁজিবাদী দেশই অংশগ্রহণ করতে পারত। সুতরাং, কোনো পুঁজিবাদী দেশের উপনিবেশ না থাকলেও, তারা উপনিবেশ ও অর্ধ-উপনিবেশবিশ্ব—যা ছিল মহানগর-কেন্দ্রিক পুঁজিবাদের পেছনের উঠোন—শোষণের সুফল ভোগ করতে পারত।
  • আমাদের দেশের নাগরিকরা বিশেষভাবে স্বাধীন, তারা নিজেদের কল্যাণ সাধনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তারা সামরিকতন্ত্রের বোঝা বহন করে না। তাদের কোনো সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার ভার বইতে হয় না। প্রত্যেক মা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে তাঁর সন্তানরা এখানে এক নিষ্ঠাবান, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ ভূমি খুঁজে পাবে। যে উঁচু স্তম্ভের পাশে আমরা একত্রিত হয়েছি এবং সামনের সেই মর্যাদাপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের পুরুষত্বের মানদণ্ড প্রকাশ পায় ওয়াশিংটন ও লিঙ্কনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। তারা অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং অতুলনীয়। সবচেয়ে বড় কথা—তারা আমেরিকান।
  • ঈশ্বর না করুন, ভারত যদি কখনো পাশ্চাত্যের ধাঁচে শিল্পায়নের পথে হাঁটে। একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ আজ সমগ্র বিশ্বকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে। যদি তিনশো মিলিয়ন মানুষের একটি গোটা জাতি একই ধরনের অর্থনৈতিক শোষণের পথে হাঁটে, তবে তা পৃথিবীকে নিঃশেষ করে দেবে।
  • আমার দৃষ্টিতে, সাম্রাজ্যবাদ একটি অত্যন্ত সহজ ও স্পষ্ট বিষয়। এটি বাস্তবে তখনই বিদ্যমান হয়, যখন একটি বড় দেশ অন্য একটি অঞ্চল দখল করে, এবং সেখানকার নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী-পুরুষকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেই দেশের আইনের অধীনে আনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সোভিয়েত নীতিই ঠিক এই কাজটাই করেছে। এটা দেখানো কঠিন নয়; কঠিন হচ্ছে যখন স্মৃতি থেকে উদ্ধৃতি দিই, তখন একটি-দুটি যুক্তি বাদ পড়ে যায়। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাশিয়ারা একেবারে সরাসরি তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র দখল করেছে, ফিনল্যান্ডের একাংশ, রোমানিয়ার একাংশ, পোল্যান্ডের একাংশ, জার্মানির একাংশ কেড়ে নিয়েছে— এবং সুপরিকল্পিত এক নীতির মাধ্যমে, যেখানে ছিল অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও বাহ্যিক চাপের সংমিশ্রণ, তারা এমন সব সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে যেগুলোকে সঠিকভাবেই 'স্যাটেলাইট' বলা হয়: ওয়ারশ, প্রাগ, বুদাপেস্ট, সোফিয়া, বুখারেস্ট, তিরানা ও পূর্ব বার্লিনে।
    যদি এ সকল ঘটনাকে সাম্রাজ্যবাদের বহিঃপ্রকাশ না বলা হয়, যদি এগুলোকে একটি সচেতন ও ইচ্ছাকৃতভাবে গৃহীত সাম্রাজ্যবাদী নীতির ফল না ধরা হয়—তাহলে আমাদের আবার শব্দগুলোর নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করতে হবে।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]