সুদান
অবয়ব

সুদান (বা দ্য সুদান; আনুষ্ঠানিক নাম সুদান প্রজাতন্ত্র) আয়তনের দিক থেকে আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এই দেশটি আফ্রিকার শৃঙ্গ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংযোগস্থলে অবস্থিত। উত্তরে মিশর, উত্তর-পূর্বে লাল সাগর, পূর্বে ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে কেনিয়া ও উগান্ডা, দক্ষিণ-পশ্চিমে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিমে চাদ, এবং উত্তর-পশ্চিমে লিবিয়া দ্বারা বেষ্টিত। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের দশম বৃহত্তম দেশ।
উদ্ধৃতি
[সম্পাদনা]- আমরা এই ভূখণ্ডের প্রতি আবেগাপ্লুত শুধু এ কারণে নই যে এখানে নদীগুলো প্রবাহিত হয়। আমাদের গভীর টান এই কারণে যে এটি ইসলামের ভূমি… এই জাতির রয়েছে গৌরবময় এক অতীত। গর্ডন পাশা, যিনি চীনাদের অপমান করেছিলেন—সুদানে আমাদের লোকেরা তাঁর শিরচ্ছেদ করেছিল।
- হাসান আল-আউধা, সুদানি মুসলিম ব্রাদারহুড, "সুদানি ইসলামিক নেতারা দারফুরে মার্কিন বাহিনী পাঠানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন"। MEMRI। ০৩ জুলাই ২০০৭
- গত দুই দশকের বেশি সময়জুড়ে যেসব বিষয় আমার জন্য গভীর অনুশোচনার কারণ হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো—আমরা (সুদান) যখন দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে সামগ্রিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করি, এরপর যা ঘটেছিল। আমরা সেই চুক্তি স্বাক্ষর করি। আন্তরিকভাবে তা বাস্তবায়ন করি, এবং দক্ষিণ সুদানের ভাইদের আমরা শান্তি চুক্তির নির্ধারিত সীমার চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছিলাম। আমি বহু বছর দক্ষিণ সুদানে লড়াই করেছি, সুদানের একতা রক্ষার জন্য। আমি যুদ্ধক্ষেত্রে একজন কমান্ডার হিসেবে লড়েছি, শুধু দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখার লক্ষ্যেই। একজন রাজনীতিক হিসেবে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি, প্রাণপণে চেষ্টা করেছি দেশকে এক রাখার জন্য। সেটাই ছিল আমার লক্ষ্য। কিন্তু এত বছরের পরিশ্রম, এত শ্রমের পরেও ফলাফল যা পেলাম, তা আমার প্রত্যাশার বিপরীত ছিল। সুদান বিভক্ত হয়ে গেল—এটাই এমন একটি বিষয়, যা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি, কারণ সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় আঘাত।
- ওমর আল-বশির, (২০১৪) সূত্র: "সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্টের সাক্ষাৎকার", দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪
- চলুন, এখনকার ক্ষুধা পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। বিশ্বে ৮১১ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খাধ্যাভাবের মধ্যে আছে। ২৮৩ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে — যারা ধীরে ধীরে অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৫ মিলিয়ন মানুষ, বিশ্বের ৪৩টি দেশে, তীব্র খাদ্যসংকটে — অর্থাৎ, দুর্ভিক্ষ যেন ওদের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, মাদাগাস্কার, মিয়ানমার, গুয়াতেমালা, ইথিওপিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, মোজাম্বিক, নাইজার, সিরিয়া, মালি, বুর্কিনা ফাসো, সোমালিয়া, হাইতি — এমন বহু দেশ। পৃথিবীতে অতীতে অনেকবার দুর্ভিক্ষ দেখা গেছে। কিন্তু একইসঙ্গে এত দেশে, এত বড় পরিসরে কখনও কি এমন দুর্যোগ দেখা গেছে? এর পেছনে তিনটি বড় কারণ। প্রথমত, মানুষের সৃষ্ট সংঘাত। অসংখ্য গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক লড়াই চলছে, যেখানে খাদ্যকে রণকৌশলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জলবায়ুগত বিপর্যয়। বন্যা, খরা, পঙ্গপালের আক্রমণ এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার কারণে বহু অঞ্চলে ফসলের ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়ত, কোভিড-১৯। এই মহামারি বিশ্বের সামনে আরেকটি খাদ্যসংকট তৈরি করেছে — যা আগের চেয়ে অনেক গভীর। লকডাউন লাখ লাখ মানুষের জীবিকা শেষ করে দিয়েছে। খাদ্য পরিবহন থেমে গেছে। বাজারে মূল্যবৃদ্ধি বেড়েছে। ফলে দরিদ্র মানুষ খাবার কিনতে পারছে না — বেঁচে থাকার মৌলিক সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। এই মহামারির প্রভাব বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় প্রবল ঝাঁকুনি দিয়েছে। কোভিডের সময়ে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের আয় হারিয়ে গেছে। খাবারের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। খাবার পরিবহনের খরচ ৩ থেকে ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোয় এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যেমন আলেপ্পো, সিরিয়া — যেটি একটি যুদ্ধের ময়দান, আমি সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলাম — এখন সেখানে খাবারের দাম দুই বছরের তুলনায় সাত গুণ বেড়েছে। এই তিনটি দুর্যোগ — সংঘাত, জলবায়ু বিপর্যয় ও কোভিড — একত্রে এক নজিরবিহীন সংকটের জন্ম দিয়েছে।
- ডেভিড বিসলি, [১] বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নোবেল শান্তি পুরস্কার বক্তৃতা], ১০ ডিসেম্বর ২০২১
- ২০১৮ সালে, যখন বিক্ষোভকারীরা নির্মম ও গণবিধ্বংসী শাসনব্যবস্থা পতনের মুখে ঠেলে দেয়, তখন অংশগ্রহণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিল নারী। তারা এমন একটি সুদানের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে থাকবে না দমন, হয়রানি কিংবা যৌন সহিংসতা। তারা চেয়েছিল, প্রায় ৩০ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর হবে। কিন্তু আজ, সুদানি নারীরা দুইটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নৃশংস সংঘর্ষের নির্মম শিকার। একদিকে রয়েছে সুদানের নিয়মিত বাহিনী—SAF (Sudanese Armed Forces), অন্যদিকে আধাসামরিক বাহিনী RSF (Rapid Support Forces)। এই দুই গোষ্ঠীই দারফুরের গৃহযুদ্ধে বর্বরতা চালিয়েছে। গত এক বছরে, তাদের সহিংসতা সীমাহীন রূপ নিয়েছে। তারা বন্দীদের হত্যা করেছে, নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছে সাধারণ মানুষের ওপর। শিশুদের জোরপূর্বক সৈন্য হিসেবে নিয়োগ করেছে। খাদ্য ও সহায়তা সামগ্রী লুট করেছে, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। একজন নারী এনপিআরকে বলেন, “যদি তারা চুরি করতে না পারে, তাহলে তারা জ্বালিয়ে দেয়।” তারা আবারও, বিশ বছর আগের মতো, দারফুর অঞ্চলের আরববহির্ভূত জাতিগোষ্ঠীগুলোর ওপর পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে। গত মাসে কিছু ভিডিও প্রকাশ পায় যেখানে সৈন্যরা জাতিগত গালাগালি দিতে দিতে কাটা মাথা হাতে রাস্তায় মিছিল করছিল। জাতিসংঘের তথ্যমতে, মাত্র একটি হামলায় ১৫,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। মোট ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ—এর মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ শিশু—ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। তার ওপর, সুদানি নারীরা যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত ধর্ষণের ভয়াবহতার মুখোমুখি হচ্ছে। একজন ২১ বছরের তরুণী বেঁচে ফেরা নারী বলেন, “আমি গুনেও বলতে পারব না, আমাকে কতবার ধর্ষণ করা হয়েছে।” এই সংঘাত থামাতে কূটনৈতিক চেষ্টা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, প্রতিবারই তা লঙ্ঘিত হয়েছে। বরং সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
- বেন কার্ডিন, "We Cannot Be Silent About Sudan," যুক্তরাষ্ট্র সেনেটে প্রদত্ত বক্তৃতা, ইউ.এস. ক্যাপিটল, ওয়াশিংটন ডিসি, ২২ মার্চ ২০২৪; Vital Speeches of the Day, খণ্ড ৯০, সংখ্যা ৬, পৃ. ১৪০–১৪১, ২০২৪
- অন্ধকার যুগ শেষ হয়েছে, এবং আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যা অর্জিত হয়েছে যুব ও তাদের ত্যাগের মাধ্যমে, এবং এটি চলতে থাকবে এবং নেতৃত্ব দিবে তরুণরা, এই মন্ত্রীর মাধ্যমে, পরবর্তী ইতিহাস তৈরির জন্য, যা হবে গণতান্ত্রিক সরকারের প্রথম নির্বাচিত সরকার, রূপান্তরকালের পর, যেখানে যুবকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে।
- সুদানি রক্ত অত্যন্ত মূল্যবান, চলুন রক্তপাত বন্ধ করি এবং যুবকদের শক্তি সৃজনশীলতা ও উন্নয়নের দিকে প্রবাহিত করি।
- আবদালা হামদক, (২০২১) উদ্ধৃত "ব্যাখ্যা: কেন সুদানে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী আবদালা হামদকের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ক্ষুব্ধ" শীর্ষক প্রবন্ধে ফ্রন্টলাইন, ২৩ নভেম্বর ২০২১।
- অনেক সুদানি তরুণ ভালোভাবে শিক্ষিত। তবে অর্থনীতি অস্থির, ফলে সবাই প্রভাবিত হচ্ছে, শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবাই। আপনি দেখবেন টুক-টুক [ট্যাক্সি] চালকরা ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক, অত্যন্ত শিক্ষিত মানুষ - কিন্তু তারা চাকরি পায় না এবং যেকোনোভাবে তাদের আয় বাড়াতে চায়।
- মেইসন হাসান, এক তরুণ প্রতিযোগী এবং পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী, উদ্ধৃত বিবিসি নিউজ-এ, "সুদানের উদ্যোক্তাদের টিভি শোতে তাদের ড্রাগনদের সম্মুখীন হতে হয়", ১৯ নভেম্বর ২০১৩।
- তৃতীয়ত, যদি আমেরিকানদের এই যুদ্ধগুলোর উদ্দেশ্য ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক হয়, তবে উদ্দেশ্যটি ইহুদীরার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে সেবা করা এবং জেরুজালেম-এ তাদের দখল এবং মুসলিমদের হত্যাকাণ্ড থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া। এর সেরা প্রমাণ হচ্ছে তাদের ইরাক ধ্বংস করতে উত্সাহ এবং সৌদি আরব, মিশর, এবং সুদানসহ অঞ্চলের সব রাষ্ট্রকে ছোট ছোট কাগজের রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা, এবং তাদের বিভাজন এবং দুর্বলতার মাধ্যমে ইসরায়েল'এর অস্তিত্ব এবং ক্রুসেড যাত্রার দখলকে অব্যাহত রাখার জন্য।
- আমি আশাবাদী, কারণ ১৯৮৫ সালের বিপ্লবের মতো, এইবার পুরো সুদান অংশগ্রহণ করছে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে পুরুষ ও মহিলাদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।
- আওদেয়া মাহমুদ (২০১৯)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় সুদান সম্পর্কে বিশ্বকোষীয় নিবন্ধ

উইকিভ্রমণে সুদান সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।

উইকিপিডিয়ায় সুদান সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।

উইকিঅভিধানে সুদান শব্দটি খুঁজুন।