সৈয়দ আহমদ বেরলভি
অবয়ব
সৈয়দ আহমদ বেরলভি(১৭৮৬–১৮৩১) ভারতের একজন মুসলিম সংস্কারক এবং "নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পথ" (তারিকাহ মুহাম্মাদিয়াহ),নামে একটি তরিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলাসহ সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী এক সুসংগঠিত স্বাধীনতা আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সৈয়দ আহমদ। তার আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভারতে একটি অখণ্ড ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
উক্তি
[সম্পাদনা]- আফগানিস্তান এবং ইয়াগিস্তান দেশে থাকা নয়,আমার আসল লক্ষ্য হল পাঞ্জাবের শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদ প্রতিষ্ঠা করা। পাঞ্জাবের উপর সার্বভৌমত্ব দখলকারী লম্বা চুলওয়ালা কাফেররা খুবই অভিজ্ঞ, চালাক এবং প্রতারক... এ সকল অসদাচরণকারী শিখ এবং দুর্ভাগ্যবান মুশরিকরা সিন্ধু নদীর তীর থেকে রাজধানী দিল্লি পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে।
- সৈয়দ আহমদ বেরেলভী। তাঁর সমসাময়িক মুসলিম নেতাদের কাছে লেখা চিঠি, কেয়ামুদ্দিন আহমদ, দ্য ওহাবি মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া, কলকাতা, ১৯৬৬, পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত। ৩৫৮
- “সত্য ধর্মের শহীদ, মুসলিম গাজী, পরাক্রমশালী শাসক এবং সাহসী যোদ্ধারা জিহাদের মাধ্যমে যে বিশেষ উপকারিতা অর্জন করে তা বর্ণনাতীত। জিহাদ আধ্যাত্মিক সুফিদের সহজ আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে বিশিষ্ট পীর (উলামা) পদে উন্নীত করতে সক্ষম করে। জিহাদ ‘উলামা’দেরকে সত্য ধর্ম প্রচার করতে এবং ধর্মীয় শিক্ষা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে... ধার্মিক সুন্নিদের সাথে কাফেরদের মেলামেশা এবং ইসলামী রীতিনীতি ও প্রশাসনিক আইনের প্রচার কাফেরদের মুসলিম হতে প্ররোচিত করতে পারে। যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিহত হয় তারাও উপকৃত হয় কারণ তাদের মৃত্যু তাদের কুফরে অবিচল থাকার সময়কে হ্রাস করে এবং তাই তাদের শাস্তির বোঝা হালকা হয়ে যায়। তাদের পরিবারও উপকৃত হয় কারণ তারা মুসলমানদের দাস হয়ে যায় এবং তাদের সাথে তাদের মেলামেশা তাদের ইসলাম গ্রহণ করতে প্ররোচিত হতে পারে।”
- সাইয়্যিদ আতহার আব্বাস রিজভী, শাহ ‘আব্দুল-আজিজ, ৫০৬-৫০৭। ইবনে, ওয়ারাক (২০১৭)। ইসলামী সন্ত্রাসবাদে ইসলাম: বিশ্বাস, ধারণা এবং আদর্শের গুরুত্ব। অধ্যায় ১৫
- প্রত্যেকের জানা উচিত যে, জিহাদ একটি সুবিধাজনক এবং কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। মানবজাতি বিভিন্ন উপায়ে এর সুবিধাগুলি থেকে উপকৃত হয়, ঠিক যেমন বৃষ্টি, যার সুবিধা উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ উভয়ের উপরই বর্ষিত হয়। যদি মুসলমানরা জিহাদ করে, তাহলে তারা জান্নাত লাভ করবে,যার মধ্যে রয়েছে সময়মত বৃষ্টিপাত, প্রচুর গাছপালা, লাভ ও বাণিজ্যের বৃদ্ধি, দুর্যোগ ও মহামারীর অনুপস্থিতি, সম্পদের বৃদ্ধি এবং জ্ঞানী ও পরিপূর্ণ মানুষের উপস্থিতি।
- রুডল্ফ পিটার্স, ইসলাম এবং উপনিবেশবাদ: আধুনিক ইতিহাসে জিহাদের মতবাদ (মাউটন পাবলিশার্স, ১৯৭৯) ৪৭, স্পেন্সার, রবার্ট (২০১৮) থেকে উদ্ধৃত। জিহাদের ইতিহাস: মুহাম্মদ থেকে আইএসআইএস পর্যন্ত।
- “একজন প্রশ্নকারী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি এতদূরে গিয়ে শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছেন কেন? এদেশের বর্তমান শাসক ইংরেজরাও কি ইসলামের অস্বীকারকারী নয়? দেশের অভ্যন্তরে তাদের বিরুদ্ধে জেহাদ করে ভারতবর্ষ তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন না কেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ইংরেজ সরকার যদিও ইসলামের অস্বীকারকারী কিন্তু তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অন্যায় অনাচার করে না …এবং তাদেরকে ধর্মীয় কর্তব্য পালনে ও ফরয ইবাদতে বাধা দান করে না। আমরা তাদের দেশে প্রকাশ্যে বক্তৃতা করি ও ধর্ম পালন করি। তারা কখনও এটি নিষেধ করে না এবং এই ব্যাপারে বাধাও দেয় না। … আমাদের আসল কাজ হল খোদার তওহীদ ও মহানবী(সা.)-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা আমরা সেই কাজ নিদ্বিধায় এ দেশে করতে পারছি। তাহলে আমরা ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে কী কারণে জিহাদ করব এবং ইসলামী নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে কেন আমরা অযথা উভয় পক্ষের রক্তাপাত ঘটাব? এই সদুত্তর শুনে প্রশ্নকারী চুপ হয়ে গেল এবং জিহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝে গেল।”
- এ বিষয়ে তার জীবনী রচয়িতা মোহাম্মদ থানেশ্বরী বলেন, (‘সাওয়ানেহ আহমদী কাল’ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৭১)
- শিখ বাহিনীর উপর আমরা অতর্কিত হামলা করবনা তাই তারা টিলা অতিক্রম করে সমতলে আসার পূর্বে তোমরা কখনোই আক্রমন করবেনা।
- তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ পাক আমার সাথে তিনটি ওয়াদা করেছেন। এক. আমি ও আমার মোজাহিদ বাহিনী যেখানেই থাকি কুদরতি রিযিকের ব্যবস্থা করবেন। দুই. আমাকে কোন যাদু-টোনা করা হলে কিংবা বিষপান করালে তা কোন ক্রিয়া করবেনা। তিন. আমার ইন্তেকালের পরে কেউই আমার লাশ খুঁজে পাবেনা।
- (সাওয়ানেহ আহমদী, সীরতে সাইয়্যিদ আহমদ র., ওয়াসীলে ওয়াজীর আলা তরীকুল বশীর ওয়ান নাযীর)
সৈয়দ আহমদ বেরলভি সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- জীবনের প্রথমদিকে,দীর্ঘ সাত বছর সায়্যিদ আহমদ (র.) আমির খান নামক এক যোদ্ধার সাথে বিভিন্ন অভিযানে যোগদান করেন। সাত বছর পর সায়্যিদ আহমদ বুঝতে পারেন তিনি ভুল মানুষের সাথে পথ চলছেন। আমির খানের একমাত্র উদ্দেশ্য বিভিন্ন জায়গায় হামলা করে সম্পদ আহরণ করা এবং নিজেকে নবাবদের কাতারে শামিল করা।আমির খানের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে সায়্যিদ আহমদ (র.) মনোনিবেশ করেন ভারতের মুসলিম সমাজের দিকে।প্রস্তুতি ও লোকবল বৃদ্ধির আশায় মুসলিম সমাজে হাত দিয়ে সায়্যিদ আহমদ (র.) প্রচ- হতাশ হন। তিনি উপলব্ধি করেন, বেশিরভাগ মুসলমান কেবল নামেই মুসলমান। ইসলামের মূল শিক্ষা ভুলে এরা ডুবে আছে নিজেদের বানানো রসম-রেওয়াজের মধ্যে।
- সায়্যিদ আহমদ (র.) তখন মুসলিম সমাজে প্রচলিত শিরক-বিদআতের অপনোদনে মনোনিবেশ করেন। তিনি এ আন্দোলনের নাম দেন ‘তরিকায়ে মুহাম্মাদিয়া’। দুনিয়ালোভী মৌলভীদের কাছে না গিয়ে সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে তিনি ইসলামের মূল শিক্ষা পৌঁছে দিতে শুরু করেন। এর ফল আসে আশার চেয়েও বেশি। সাধারণ মুসলমানরা দলে দলে তার দিকে হাত বাড়ায়। সায়্যিদ আহমদ (র.) উপমহাদেশের মুসলমানদের অঘোষিত আমির হয়ে দাঁড়ান।তার এ আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ইংরেজদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল। ফলাফলস্বরূপ তারা তাকে ‘ওয়াহাবি’ বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করে। সুচতুর ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল, এই খেতাব সায়্যিদ আহমদের উত্তাল ঢেউকে থামিয়ে দেবে। কিন্তু তাদের সে কূটকৌশল সফল হয়নি।
- সায়্যিদ আহমদ (র.) তিনটি জিনিসকে ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদার সাথে সাংঘর্ষিক মনে করতেন। একটি হচ্ছে সূফীবাদের নামে ভ্রান্ত মতবাদ, আরেকটি শিয়াদের ভ্রান্ত আকীদা, আরেকটি হিন্দুদের রসম-রেওয়াজ। শিয়া ও ভ্রান্ত সূফীদের বিরুদ্ধে লাগাতার তিন বছর তিনি হাজার হাজার মুরিদীনসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন।
- সায়্যিদ আহমদ (র.) আট হাজার মুজাহিদ সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তবে তিনি সরাসরি পাঞ্জাব যাননি। বর্তমান ভারত ও পাকিস্তান পুরোটা ঘুরে লোকবল সংগ্রহ এবং জিহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রচার করে করে তিনি আফগানিস্তানে পৌঁছান। কান্দাহার, কাবুল অতিক্রম করে নওশহরে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখানে শিখ রাজা বুখ্য সিং-এর বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। সে যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সাহস, আগ্রহ-উদ্দীপনা শতগুণে বেড়ে যায়। ১৮২৬ সালে তিনি পাখতুন জাতিগোষ্ঠীর বাসস্থান পেশাওয়ারে পৌঁছান। পাখতুনদের নেতৃত্ব ছিল পাঠানদের হাতে। সায়্যিদ আহমদ (র.) সেখানে গিয়েই ইসলামী অনুশাসন বাস্তবায়ন করেন। পাঠানদেরকে সরিয়ে তার সাথে আগত আলিমদের হাতে তিনি নেতৃত্ব তুলে দেন। এরপর পাঞ্জাবের রাজা রনজিত সিং-এর কাছে পত্র পাঠান। পত্রে লেখা ছিল- হয় ইসলাম কবূল করো, নয় জিযিয়া দাও, নয় তো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।
- সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার ও সময়ের শ্রেষ্ঠতম বুযুর্গ। তিনি মুসলিম সমাজে যে সকল শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার অনুপ্রবেশ করেছিলো সেগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মানুষের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুন্দর করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ‘তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া’ নামে একটি তরীকার প্রবর্তন করেছিলেন। এ তরীকার মাধ্যমে তিনি মুসলিম জনসমাজের আত্মা পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রচলিত কুসংস্কার ও অনৈতিক কার্যাবলীর বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিলেন। তাঁর আন্দোলন আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
- সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) আল্লাহর রাহে নিবেদিত মহান বুযুর্গ ছিলেন।তিনি সায়্যিদুনা হযরত হুসাইন (রা.)-এর ফয়যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ইসলামের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণে যারা প্রাণ দেন তারা দুনিয়া থেকে চলে গেলেও অমর থাকেন। সায়্যিদ আহমদ শহীদ (র.) আজো মানুষের অন্তরে বেঁচে আছেন। তিনি বাল্যবয়স থেকেই তিনি মানুষের সেবায় নিবেদিত হয়েছিলেন। অন্ধ, আতুর, রুগ্ন ব্যক্তিদের জন্য পানি এনে দিতেন, তাদের জ্বালানী সংগ্রহ করে দিতেন। সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী (র.) অনুরূপ বাল্যবয়স থেকেই অসহায় মানুষের খেদমত করেছেন। সৈয়দ আহমদ বেরলভী (র.) আশিকে রাসূল ছিলেন। ফানা ফির রাসূল তাঁর হাসিল ছিল। বারবার রাসূল (সা.) এর দীদারও নসীব হয়েছে। তার হাতে অনেক মানুষ মুসলমান হয়েছে। হজে গমনের আগে কলকাতায় তাঁর হাতে এত অধিক মানুষ মুসলমান হয়েছিল যে তাদের খতনার জন্য ১০/১৫ জন লোক নিযুক্ত করতে হয়েছিল। তাছাড়া এ সময় এত অধিক সংখ্যক লোক তাঁর হাতে বায়’আত হয়েছিল যে সরাসরি হাতে হাত রেখে বায়’আত সম্ভব হয়নি বিধায় তিনি কাপড় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি রাতের বেলা ইবাদত-বন্দেগী আর রুনাজারীতে অতিবাহিত করতেন। শাহাদাতের আগের রাতেও মুজাহিদদের নিয়ে রুনাজারি করেছেন। হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। তার সুস্বাস্থ্যকে দ্বীনের কাজে লাগিয়েছেন, জিহাদে ব্যয় করেছেন, সারাজীবন তরীকতের খেদমত করেছেন। যিনি তরীকা প্রতিষ্ঠা করেন, তাসাউফের তালীম দেন, তাওয়াসসুলে বিশ্বাস করেন, যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেন, মীলাদ পড়েন তিনি ওহাবী হন কিভাবে? নামের সাথে মুহাম্মদিয়া থাকলেই কি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাবের অনুসারী হয়ে যায়? তাহলে আহমদিয়া থাকলেই কি আমরা কাদিয়ানী বলব? হযরত সৈয়দ আহমদ বেরলভী (র.) মানুষের হৃদয়ে ইসলামের আলো জ্বেলেছেন। তাঁর আদর্শ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, এতীম, অনাথ, অসহায়ের সেবা করা। তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
- সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ছাড়া আমাদের তরীকার সিলসিলা অচল। গোড়া কেটে আগায় পানি দিলে যেমন গাছ বাঁচে না, তেমনি শহীদে বালাকোট (র.) কে বাদ দিলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবেনা। **স্মরণ সম্মেলনে দারুল আমান কুমিল্লার পীর ছাহেব হযরত মাওলানা আবু বকর ছাহেব বলেন
- সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের সিপাহসালার, অনুসরণীয় বুযুর্গ ও তরীকতের ইমাম ছিলেন। তিনি শিরক, বিদআতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এমনকি অল্পসংখ্যক সঙ্গী-সাথী নিয়ে বালাকোটের ময়দানে শাহাদাত বরণ করেছেন। কারবালার ইতিহাসের সাথে বালাকোটের সামঞ্জস্য আছে। হযরত হোসাইন (রা.) যেমন বাতিলের সাথে আপস করেননি তেমনি হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.)ও বাতিলের সাথে আপস করেননি। এদেশের প্রায় সকল হক দরবার তাঁর সাথে সম্পর্কিত ও তাঁর চেতনায় উজ্জীবিত।
- হযরত সায়্যিদ আহমদ বেরেলভী (রহ) হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ) ও হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্র (রহ) সংস্কার আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন এবং বিল্পবী মনন দ্বারা উদীপ্ত ছিলেন। বেরেলভী যে তরীকায়ে মুহাম্মদিয়া বিন্যস্ত করেছিলেন তাতে কতকগুলো সবক রয়েছে, যা কলবকে সজীব করে তোলে। যেমন- হকীকতে সায়ফুল্লাহর ফয়েয, মাকামাতে শোহাদার ফয়েয, নিসবতে জামি আর ফয়েয, কুওয়তের ফয়েয ইত্যাদি। এই ধরনের ফয়েয বা প্রাচুর্য প্রবাহ ফয়েয অনুশীলনকারীর ভেতরে এক অনন্য শক্তি সঞ্চারিত করে।....তরীকায়ে মুহাম্মদীয়াতের তা‘লিম তিনি তাঁর মুরীদানের মধ্যে বিস্তৃতি করেন ফলে বিপ্লবী চেতনায় সবাই উদ্বুদ্ধ হন। তিনি যে জিহাদের ডাক দেন তাতে সাড়া দিয়ে উপ-মহাদেশের শত শত লোক সাড়া দেন, তিনি চেয়েছিলেন স্বদেশ বিজাতীয় প্রভাব ও শাসন থেকে মুক্ত হোক, মুক্তি ও স্বাধীনতার আস্বাদন লাভ করুক দেশ। তাঁর সান্নিধ্যে এসে লক্ষ লক্ষ মুসলিম হিদায়াত প্রাপ্ত হন, অনেক অমুসলিমও ইসলামে দাখিল হন। সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীরও তাঁর মুরীদ হন।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিপিডিয়ায় সৈয়দ আহমদ বেরলভি সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।