বিষয়বস্তুতে চলুন

সোনা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

সোনা বা স্বর্ণ একটি ধাতব হলুদ বর্ণের ধাতু। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই ধাতুর সাথে পরিচিত ছিল। অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য, চকচকে বর্ণ, বিনিময়ের সহজ মাধ্যম, কাঠামোর স্থায়ীত্বের কারণে সেই প্রাচীনকাল থেকেইএটি অতি মূল্যবান ধাতু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। সোনা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার তৈরির প্রথা এখনও চলে আসছে। প্রাচীনকালের সকল জাতিতেই স্বর্ণের ব্যবহার ছিল। মিশরীয় সম্রাটদের দ্বারা নির্মিত পিরামিডগুলো খনন করে প্রচুর সোনার অলঙ্কার ও জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে অনেক জায়গায় রূপক অর্থে সোনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে সোনা বা সোনার মতো মূল্যবান বা সুন্দর কিছু বোঝানোর জন্য।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • সোনা মৌলিক, ওকে সাধারণ উপায়ে যত সূক্ষ্ম ভাগ করো সোনা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। জল যৌগিক, ওকে ভাগ করলে দুটো মৌলিক গ্যাস বেরিয়ে পড়ে, একটার নাম অক্সিজেন আর একটার নাম হাইড্রোজেন। এই দুটি গ্যাস যখন স্বতন্ত্র থাকে তখন তাদের এক রকমের গুণ, আর যেই তারা মিশে হয় জল, তখনি তাদের আর চেনবার জো থাকে না, তাদের মিলনে সম্পূর্ণ নূতন স্বভাব উৎপন্ন হয়।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরমাণুলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯
  • আমাদের রঙ কালো, তোমাদের রঙ সাদা। আমাদের বসন সাদা, তোমাদের বসন কালো। তোমরা শ্বেতাঙ্গ ঢেকে রাখো, আমরা কৃষ্ণদেহ খুলে রাখি। আমরা খাই সাদা জল, তোমরা খাও লাল পানি। আমাদের আকাশ আগুন, তোমাদের আকাশ ধোঁয়া। নীল তোমাদের স্ত্রীলোকের চোখে, সোনা তোমাদের স্ত্রীলোকের মাথায়; নীল আমাদের শূন্যে, সোনা আমাদের মাটির নীচে। তোমাদের ও আমাদের অনেক বর্ণভেদ। ভুলে যেন না যাই যে, তোমাদের দেশ ও আমাদের দেশের মধ্যে কালাপানির ব্যবধান। কালাপানি পার হলে আমাদের জাত যায়, না হলে তোমাদের জাত থাকে না।
  • সন্ধ্যাবেলা সোনার জাহাজ সোনার পাল মেলে অগাধ সাগরের নীল জল কেটে সোনার মেঘের মতো পশ্চিম মুখে ভেসে গেল। ভাঙা ঘরে দুওরানী নীল সাগরের পারে চেয়ে, ছেঁড়া কাঁথায় পড়ে রইলেন। আর আদরিনী সুওরানী সাতমহল অন্তঃপুরে, সাতশো সখীর মাঝে, গহনার কথা ভাবতে ভাবতে, সোনার পিঞ্জরে সোনার পাখির গান শুনতে শুনতে, সোনার পালঙ্কে ঘুমিয়ে পড়লেন।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬
  • গলাইলে স্বর্ণের ভার কমিয়া যায় না ও বর্ণের ব্যত্যয় হয় না; এজন্য স্বর্ণকে উৎকৃষ্ট ধাতু কহে। স্বর্ণ জল অপেক্ষা উনিশ গুণ ভারি। এক সরিষা প্রমাণ স্বর্ণকে পিটিয়া দীঘে ও প্রস্থে নয় অঙ্গুল পাত প্রস্তুত করা যাইতে পারে; এবং ঐ প্রমাণ স্বর্ণে ২৩৫ হাত তার প্রস্তুত হইতে পারে। স্বর্ণ এমত ভারসহ যে এক যবোদর মাত্র স্থূল তারে ৫ মন ৩৪ সের ভার ঝুলাইলেও ছিঁড়িয়া পড়ে না।
    স্বর্ণ স্বভাবতঃ অতিশয় উজ্জ্বল ও সুশ্রী, ইহা মলিন হয় না; এ জন্য লোকে উহাতে অলঙ্কার গড়ায়। স্বর্ণেতে যে টাকা প্রস্তুত হয তাহাকে মোহর কহে। স্বর্ণের মুল্য সর্ব্ব ধাতু অপেক্ষা অধিক। বিশুদ্ধ স্বর্ণের বর্ণ কাঁচা হরিদ্রার মত।
    পৃথিবীর প্রায় সকল প্রদেশেই স্বর্ণের আকর আছে; কিন্তু উষ্ণপ্রধান দেশেই অধিক।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ধাতু, বোধোদয়- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দ (১২৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
  • আকরিকের মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, টিন, পাথুরিয়া কয়লা প্রচুর পাওয়া যায়। লৌহ অধিক পাওয়া যায় না। লৌহের অনেক কার্য্য তাম্র দ্বারা সম্পন্ন হইয়া থাকে। এখানকার তাম্রের ন্যায় উৎকৃষ্ট তাম্র পৃথিবীর কুত্রাপি পাওয়া যায় না। জাপানীরা ইহা এক ইঞ্চ মােটা ও এক ফুট লম্বা পাত করিয়া বিক্রয় করে। অপকৃষ্ট তাম্র ইষ্টকাকারে বিক্রীত হয়। জাপানে তামার খনিতে সময়ে সময়ে স্বর্ণ পাওয়া যায়। সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত কেহই স্বর্ণখনির কার্য্য করিতে পারে না। এখানকার টিন রৌপ্যের ন্যায় শুভ্র ও উজ্জ্বল। জাপানের নানাস্থানে একরূপ মৃত্তিকা পাওয়া যায়, তাহা হইতে মনােহর বাসন প্রস্তুত হয়। চীনাবাসন বলিয়া ইহা পৃথিবীর নানাদেশে বিক্রয় হইয়া থাকে।
    • উমাকান্ত হাজারী, নব্য জাপান, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
  • সোনা রূপা ও তামা অনেক সময়ে খাঁটি ধাতুর আকারেও পাওয়া যায় এবং খনিজ তাবস্থায় তাহাদের শোধনও লোহার চাইতে অনেক সহজ। সেইজন্য তামা প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার শিখিবার পরেও মানুষে অনেকদিন পর্যন্ত লোহা বানাইবার কৌশল বাহির করিতে পারে নাই।
    • সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫০
  • মিথ্যা শুধু মানুষের বুঝিবার এবং বুঝাইবার ফলটা। সোনাকে পিতল বলিয়া বুঝানও মিথ্যা, বুঝাও মিথ্যা, তাহা জানি। কিন্তু তাহাতে সোনারই বা কি, আর পিতলেরই বা কি আসে যায়। তোমরা যাহা ইচ্ছা বুঝ না, তাহারা যা তাই ত থাকে। সোনা মনে করিয়া তাহাকে সিন্দুকে বদ্ধ করিয়া রাখিলেও তাহার সত্যকার মূল্য বৃদ্ধি হয় না, আর পিতল বলিয়া টান মারিয়া বাহিরে ফেলিয়া দিলেও তাহার দাম কমে না।
    • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব), দশম পরিচ্ছেদ, শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব)-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক-গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, সপ্তদশ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা ৪২
  • সূর্য এই পৃথিবীর চেয়ে প্রায় তেরো লক্ষ গুণ বড়ো। এত বড়ো সূর্য আকাশের একটা ধারে আমাদের কাছে দেখা দিয়েছে একটি সোনার থালার মতো। সূর্যের ভিতরকার সমস্ত তুমুল তোলপাড়ের যখন খবর পাই আর তার পরে যখন দেখি ভোরবেলায় আমাদের আমবাগানের পিছন থেকে সোনার গোলকটি ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসছে, জীবজন্তু গাছপালা আনন্দিত হয়ে উঠছে, তখন মনে ভাবি আমাদের কী রকম ভুলিয়ে রাখা হয়েছে; আমাদের ব’লে দিয়েছে তোমাদের জীবনের কাজে এর বেশি জানবার কোনো দরকার নেই।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরমাণুলোক, বিশ্বপরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
  • রানী বললেন— মহারাজ, ভালোয় ভালোয় তুমি ঘরে এলেই আমার সকল সাধ পূর্ণ হয়। তুমি যখন আমার ছিলে তখন আমার সোহাগও অনেক ছিল, সাধও অনেক ছিল। সোনার শাড়ি অঙ্গে পরে সাতমহল বাড়িতে হাজার হাজার আলো জ্বালিয়ে সাতশো সখীর মাঝে রানী হয়ে বসবার সাধ ছিল, সোনার পিঞ্জরে শুক-শারীর পায়ে সোনার নূপুর পরিয়ে দেবার সাধ ছিল। মহারাজ, অনেক সাধ ছিল, অনেক সাধ মিটেছে। এখন আর সোনার গহনায় সোনার শাড়িতে কী কাজ? মহারাজ, আমি কার সোহাগে হীরের বালা হাতে পরব? মোতির মালা গলায় দেব? মানিকের সিঁথি মাথায় বাঁধব? মহাবাজ, সেদিন কি আর আছে! তুমি সোনার গহনা দেবে, সে সোহাগ তো ফিরে দেবে না! আমার সে সাতশো দাসী সাতমহল বাড়ি তো ফিরে দেবে না! বনের পাখি এনে দেবে, কিন্তু, মহারাজ, সোনার খাঁচা তো দেবে না! ভাঙা ঘরে সোনার গহনা চোর-ডাকাতে লুটে নেবে, ভাঙা খাঁচায় বনের পাখি কেন ধরা দেবে? মহারাজ, তুমি যাও, যাকে সোহাগ দিয়েছ তার সাধ মেটাও গে, ছাই সাধে আমার কাজ নেই।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
  • ইহার মধ্যে রাজবাড়ি হইতে সোনার রথ লইয়া লোক উপস্থিত। সেই রথে চড়িয়া সকলে রাজবাড়ি আসিলেন। সেখানে কতরকম জিনিস দিয়া যে তাঁহাদিগকে আদর করা হইল, তাহার সীমা নাই। আর আহারের আয়োজনের কথা কি বলিব? তেমন মিঠাই সন্দেশ আমি কখনো দেখি নাই। পাণ্ডবেরা দামী পোশাক পরিয়া সোনার থালায় সেই-সকল মিষ্টান্ন আহার করিলেন। যে সকল জিনিস তাঁহাদিগকে দেওয়া হইয়াছিল, তাহার মধ্যে অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া আর কিছু তাঁহারা লইলেন না।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, আদি পর্ব, ছেলেদের মহাভারত, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০১
  • যদিও যে-পরিমাণ সোনা তিনি আশা করেছিলেন, সে-পরিমাণ সোনা তিনি সঙ্গে আনতে পারেন নি, কিন্তু দ্বিতীয় অভিযানে তিনি আশা করলেন যে সোনার খনির আসল সন্ধান এবার তিনি নিয়ে আসতে পারবেন। সারা স্পেনের মধ্যে রাজাজ্ঞা ঘোষিত হয়ে গেল...কলম্বাস দ্বিতীয় বার অভিযানে বেরুচ্ছেন এবং এবার তাঁর সঙ্গে যাঁরা সেই নতুন দেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে চায়, তাদের নিয়ে যাওয়া হবে।
    • নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৯
  • পরেশবাবু সোনার দর ক্রমেই কমাচ্ছেন, বাজারে একশ পনর টাকা ভরি থেকে সাত টাকা দশ আনায় নেমেছে। ব্রিটিশ সরকার সস্তায় সোনা কিনে আমেরিকার ডলার-লোন শোধ করেছেন। আমেরিকা খুব রেগে গেছে, কিন্তু আপত্তি করবার যুক্তি স্থির করতে পারছে না। ভারতের স্টারলিং ব্যালান্সও ব্রিটেন কড়ায় গণ্ডায় শোধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু এদেশের প্রধান মন্ত্রী উত্তর দিয়েছেন—আমরা তোমাদের সোনা ধার দিই নি, ডলারও দিই নি; যুদ্ধের সময় জিনিস সরবরাহ করেছি, সেই দেনা জিনিস দিয়েই তোমাদের শ‍ুধতে হবে।
    • রাজশেখর বসু, পরশ পাথর, গল্পকল্প - পরশুরাম, পরশ পাথর, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১
  • ইসাবেলায় থাকতে থাকতে কলম্বাস খবর পেলেন যে, সেখান থেকে প্রায় চার দিনের পথ একটা জায়গা আছে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে সোনা পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে ওজেদা বলে এক দুঃসাহসিক যুবক ছিল। কলম্বাস ওজেদার ওপর সেই ভার দিলেন। ওজেদা লোকজন নিয়ে সেই সোনার সন্ধানে বেরিয়ে গেল।
    • নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬২
  • ছোটোরানী সাত-মহল বাড়ির সাত-তলার উপরে সোনার আয়না সামনে রেখে, সোনার কাঁকুইয়ে চুল চিরে, সোনার কাঁটা সোনার দড়ি দিয়ে খোঁপা বেঁধে সোনার চেয়াড়িতে সিঁদুর নিয়ে ভুরুর মাঝে টিপ পরছেন, কাজল-লতায় কাজল পেড়ে চোখের পাতায় কাজল পরছেন, রাঙা পায়ে আলতা দিচ্ছেন, সখীরা ফুলের থালা নিয়ে, পানের বাটা নিয়ে রাজরানী ছোটোরানীর সেবা করছে— রাজা সেখানে এলেন।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৮
  • দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য চলার মানে হচ্ছে এদের উভয়ের জিনিষপত্র বদলাবদলি করে নেওয়া। একটি দেশ কেবল কিনেই যাবে আর অন্যটি খালি বেচতেই থাকবে, এ কখনও সম্ভব নয়। সে চেষ্টা করতে গেলে সমস্ত দামই সোনা বা রূপো দিয়ে দিতে হবে; দু দিন পরেই দেখা যাবে, আর দেবার মতো সোনার রুপো অবশিষ্ট নেই, সুতরাং এই একপেশে বাণিজ্য নিজে থেকেই থেমে যাবে। দুই দেশে পরস্পর বাণিজ্য যখন চলে তখন দু পক্ষের মধ্যে পণা-বিনিময় হয়, তার সামঞ্জস্যও সে নিজেই খাড়া করে নেয়—কখনও সে বাণিজ্যের লাভের পাল্লা এ দেশের দিকে বেশি ঝুঁকে যায়, কখনও-বা ও দেশের দিকে ঝোঁকে।
    • জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫০৩
  • নেতাজীকে সোনায় ওজন—বর্মী, ভারতীয় ও মালয়ের অধীবাসি নেতাজীকে চার বার সোনা দিয়া ওজন করেন এবং সেই সোনা আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্য ব্যয়িত হয়। নেতাজীর ওজন আন্দাজ দুই মণ হইবে।
    • নেতাজীর জীবনী ও বাণী - নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৫
  • রাজা সেই মানিকের চুড়ি নিয়ে, সোনার দেশে এলেন। সেই সোনার দেশে স্যাক্‌রার দোকানে নিরেট সোনার দশগাছা মল গড়ালেন। মল জ্বলতে লাগল যেন আগুনের ফিন্‌কি, বাজতে লাগল যেন বীণার ঝংকার— মন্দিরার রিনি-রিনি।
    রাজা মানিকের দেশে মানিকের চুড়ি নিয়ে, সোনার দেশে সোনার মল গড়িয়ে, মুক্তোর রাজ্যে এলেন।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭
  • এদিকে সত্যানন্দ অন্য সুরঙ্গ দিয়া অবতরণপূর্ব্বক এক নিভৃত ভূগর্ভকক্ষায় নামিলেন। সেখানে জীবানন্দ ও ভবানন্দ বসিয়া টাকা গণিয়া থরে থরে সাজাইতেছে। সেই ঘরে স্তূপে স্তূপে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, হীরক, প্রবাল, মুক্তা সজ্জিত রহিয়াছে। গত রাত্রের লুঠের টাকা, ইহারা সাজাইয়া রাখিতেছে।
  • চাঁদ উঠেছে, ফুল ফুটেছে
    কদম তলায় কে?
    হাতী নাচ্‌‌বে, ঘোড়া নাচ্‌‌বে,
    সোনামণির বে!
    • যোগীন্দ্রনাথ সরকার, সোনামণির বে, খুকুমণির ছড়া - যোগীন্দ্রনাথ সরকার, প্রকাশক- সিটি বুক সোসাইটি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩০৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪০
  • কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে উৎসাহের বশে যে-সব লোক এসেছিল, তাদের মধ্যে একটা দল ভেঙে পড়লো...তারা ভেবেছিল, তারা যেখানে যাচ্ছে, সেখানে দাঁড়ালেই পায়ে সোনার ধূলো লাগবে...কিন্তু তার বদলে তারা যখন দেখলো, অতি নিদারুণ অবস্থার মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে এবং যে-কোন মুহূর্ত্তে হয়ত নরখাদকদের আক্রমণে তাদের পেটে চলে যেতে হবে...তখন তারা গোপনে বিদ্রোহী হয়ে উঠলো...এবং কলম্বাস যখন জাহাজের আশেপাশে চারদিকে সোনার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, সেই সময় তারা স্থির করলো যে, একখানা জাহাজ নিয়ে তারা স্পেনে পালিয়ে যাবে, এবং সেখানে গিয়ে কলম্বাসের সমস্ত কথা যে ধাপ্পা তা প্রচার করবে।
    • নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৩
  • গোল কোরো না গোল কোরো না/ছোটন ঘুমায় খাটে।/এই ঘুমকে কিনতে হলো/নওয়াববাড়ির হাটে।/সোনা নয় রুপা নয়/দিলাম মোতির মালা/তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে/ঘর করে উজালা।
  • বানর বলল— মা, রাজামশায় মোহর দিয়েছেন। সেই মোহরে ভাঙা ঘর নতুন করেছি, ছেঁড়া কাঁথা নতুন করেছি, নতুন পিঁড়ে পেতেছি, তুই সোনার থালে গরম ভাত, সোনার বাটিতে তপ্ত দুধ খাবি চল।
    রানী খেতে বসলেন। কতদিন পরে সোনার থালায় ভাত খেলেন, সোনার ঘটিতে মুখ ধুলেন, সোনার বাটায় পান খেলেন, তবু মনে সুখ পেলেন না। রানী রাজভোগ খান আর ভাবেন— আজ রাজা সোনার থালে ভাত পাঠালেন, কাল হয়তো মশানে নিয়ে মাথা কাটবেন।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৭
  • চার্চিলকে আর সামলানো যাচ্ছে না, তিনি খেপে গিয়ে বলছেন, আমরা কমনওয়েল‍্থের সর্বনাশ হ’তে দেব না, ইউএন-ওর কাছে নালিশ ক’রে সময় নষ্টও করব না। ভারতে আবার ব্রিটিশ শাসন স্থাপিত হ’ক, আমাদের ফৌজ গিয়ে ওই পরেশটাকে ধ’রে আনুক, আইল-অভ-ওআইটে ওকে নজরবন্দী করে রাখা হ’ক। সেখানে সে যত পারে সোনা তৈরি কর‍ুক, কিন্তু সে সোনা এম্পায়ার-সোনা, ব্রিটিশ রাষ্ট্রসংঘের সম্পত্তি, আমরাই তার বিলি করব। বার্নার্ড শ বলেছেন, সোনা একটা অকেজো ধাতু, তাতে লাঙল কাস্তে কুড়ুল বয়লার এঞ্জিন কিছুই হয় না। পরেশবাবু সোনার মিথ্যা প্রতিপত্তি নষ্ট ক’রে ভাল করেছেন। এখন তিনি চেষ্টা কর‍ুন যাতে সোনাকে ইস্পাতের মতন শক্ত করা যায়। সোনার ক্ষুর পেলেই আমি দাড়ি কামাব।
    • রাজশেখর বসু, পরশ পাথর, গল্পকল্প - পরশুরাম, পরশ পাথর, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫১-৫২
  • এলো চুলে সোনা বউ/আলতা দিয়ে পায়।/নোলক নাকে, কলসি কাঁখে,/জল আনতে যায়
    • এলো চুলে সোনা বউ, বাংলা প্রচলিত ছড়া,সূত্র:
  • পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আ য় আ য় আয়।
    ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে, মরি হা য় হা য় হায়।
    হাওয়ার নেশায় উঠল মেতে দিগ্‌বধূরা ধানের ক্ষেতে—
    রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে, মরি হা য় হা য় হায়।
  • দুওরানী ভাঙা ঘর ছেড়ে, ছেঁড়া কাঁথা ছেড়ে, সোনার শাড়ি পরে নতুন মহলে এলেন। সোনার পালঙ্কে বসলেন, সোনার থালে ভাত খেলেন, দীন-দুঃখীকে দান দিলেন, রাজ্যে জয় জয় হল; রাগে ছোটোরানীর সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠল।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮
  • হে রাজকন্যা সাড়া দাও, কেন মৌন পাষান?
    আমার সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে তুমি তুলবে না ধান?
    হে রাজকন্যা, ঘুম ভাঙলো না? সোনার কাঠি
    কোথা থেকে পাব, আমরা নিঃস্ব, ক্ষেতেই খাটি।
    সোনার কাঠির সোনা নেই, আছে ধানের সোনা,
    তাতে কি হবে না? তবে তো বৃথাই অনুশোচনা॥
    • সুকান্ত ভট্টাচার্য, ব্যর্থতা, অপ্রচলিত রচনা, সুকান্ত সমগ্র- সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রকাশক- সারস্বত লাইব্রেরী, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০৫
  • সোনা তৈরি আর বিক্রি সব চেয়ে সোজা কারবার, কিন্তু রাশিপরিমাণে উৎপাদন করতে গেলে একলা পারা যায় না। পরেশবাবু কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন এবং অনেক দরখাস্ত বাতিল করে সদ্য এম. এস-সি পাস প্রিয়তোষ হেনরি বিশ্বাসকে দেড় শ টাকায় বাহাল করলেন। তার আত্মীয় স্বজন বিশেষ কেউ নেই, সে পরেশবাবুর কারখানাতেই বাস করতে লাগল। প্রিয়তোষ প্রাতঃকৃত্য স্নান আহার ইত্যাদির জন্য দৈনিক এক ঘণ্টার বেশী সময় নেয় না, সাত ঘণ্টা ঘুময়, আট ঘণ্টা কারখানার কাজ করে, বাকী আট ঘণ্টা সে তার কলেজের সহপাঠিনী হিন্দোলা মজুমদারের উদ্দেশে বড় বড় কবিতা আর প্রেমপত্র লেখে এবং হরদম চা আর সিগারেট খায়। অতি ভাল ছেলে, কারও সঙ্গে মেশে না, রবিবারে গির্জেতেও যায় না, কোনও বিষয়ে কৌতূহল নেই, কখনও জানতে চায় না এত সোনা আসে কোথা থেকে। পরেশবাবু মনে করেন, তিনি পরশ পাথর ছাড়া আর একটি রত্ন পেয়েছেন—এই প্রিয়তোষ ছোকরা। সে বৈদ্যুতিক হাপরে বড় বড় মুচিতে সোনা গলায় আর মোটা মোটা বাট বানায়। পরেশবাবু তা এক মারোয়াড়ী সিণ্ডিকেটকে বেচেন আর ব্যাংকের খাতায় তাঁর জমা অঙ্কের পর অঙ্ক বাড়তে থাকে। পরেশ-গৃহিণীর এখন ঐশ্বর্যের সীমা নেই। গহনা প’রে প’রে তাঁর সর্বাঙ্গে বেদনা হয়েছে, সোনার উপর ঘেন্না ধ’রে গেছে, তিনি শ‍ুধু দু হাতে শাঁখা এবং গলায় রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে লাগলেন।
    • রাজশেখর বসু, পরশ পাথর, গল্পকল্প - পরশুরাম, পরশ পাথর, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এণ্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮
  • সাতটি সোনা চাঁপার মধ্যে
    সাতটি সোনা মুখ,
    পারুল দিদির কচি মুখটি
    কর্ত্তেছে টুক‍্টুক্!
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাত ভাই চম্পা, কড়ি ও কোমল-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- পীপ্‌ল্‌স লাইব্রেরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৯
  • এইভাবে বিদ্রোহীদের দমন করে কলম্বাস সঙ্গে প্রায় চারশো লোক নিয়ে ওজেদা যে জায়গায় নদীর জলে স্বর্ণরেণু দেখে এসেছিল, সেখানে যাত্রা করলেন। স্পেন থেকে আসবার সময় তিনি সঙ্গে করে খনি-খাতকদের নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে এসে দেখলেন যে, নদী থেকে সোনা সংগ্রহ করতে যথেষ্ট সময় নেবে এবং তাঁর আশা হলো যে নিশ্চয়ই নদীর তীরের কাছে কোথাও মাটির নীচে সোনার খনি আছে।
    • নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৩-৬৪
  • সোনাকে বিশেষ কোন একটা রূপ দিতে হ’লে ছাঁচে চালতে হয়, কিন্তু সেই ছাঁচের এমন গুণ নেই যে রূপোকে সোনা করে; তেমনি জাতিকে বিশেষ একটা গঠন দিতে হ’লে জাতীয় শিক্ষার ছাঁচ দরকার, কিন্তু সেই ছাচঁকে কিছু সৃষ্টি করার স্বাভাবিক উপায় বলে’ ভুল করা সোনা গালাবার মতিটাকে সোনা সৃষ্টি করার উপায় বলে’ ধরে’ নেওয়া। সোনা আপনি তৈরি হয় স্বভাবের নিয়মে, মানুষের হাতে গড়া সোনা সে জাত সোনা নয়—সে কেমিক্যাল সোনা।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২৯-২৩০
  • ভূ-গর্ভ হইতে তাম্র লৌহ স্বর্ণ রৌপ্য প্রভৃতি ধাতুগুলিকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাহারা বিশুদ্ধ অবস্থায় থাকে না। নানা বিজাতীয় বস্তুর সহিত মিশ্রিত হইয়া সেগুলি আকারে প্রকারে এমন বিকৃত অবস্থায় থাকে যে, সেগুলিকে ধাতু বলিয়া চিনিয়া লওয়া কঠিন হয়। এই সকল অবিশুদ্ধ ধাতুকে শুদ্ধ করিবার জন্য যে-সকল উপায় প্রচলিত আছে, তাহাদের কোনটিই সহজ বা অল্পব্যয়সাধ্য নয়।
    • জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪-২৫
  • ছাতারের বাসায় কোকিলের ডিম্, সে ডিমের ভিতর কোকিলের কুহুতান সুষুপ্ত থাকে—ছাতারে তা দিয়ে ফোটায় বলে' কি বাহাদুরী তার? ক্ষুদ্র বীজের ভেতর শেফালির সৌরভ নিদ্রিত, উড়ে বেটা গাছের গোড়ায় জল দেয় বলে' কি সৌরভের স্রষ্টা সে? জগাই মাধাই যদি খাঁটি সোনা না হ'য়ে প্রকৃতই খাঁটি লোহা হ'ত, তাদের লৌহহৃদয়কে গিল্টি করা চলত, সোনা করা সম্ভব হ'ত না।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পাগলের সভা, কমলাকান্তের পত্র - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- প্রবর্ত্তক পাবলিশিং হাউস, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৩
  • আর এক স্থানে, (গৃহদির সম্মুখে, খানিকটা “পদ-পথ” জুড়িয়া) কতকগুলি লোক মিহি কাপড়ের উপর নক্সা ছাপিতেছে। এই কাপড়গুলা বাষ্পবৎ স্বচ্ছ; লাল, সবুজ কিংবা হল‍্দে জমির উপর,—রূপালি কিংবা সোনালি রঙের ছোট-ছোট নক‍্সা; এই নক‍্সাগুলি আদৌ স্থায়ী নহে; একফোঁটা বৃষ্টির জলে সমস্তই ধুইয়া যায়। কিন্তু উহার বর্ণবিন্যাস অতি চমৎকার; এই সকল কাপড় অতি “খেলো” হইলেও, এখন এই মুক্তবায়ুসেবী শিল্পীদিগের হস্ত হইতে বাহির হইয়া আইসে, তখন যেন উহা কোন পরীর মোহন অবগুণ্ঠন বলিয়া মনে হয়। সোনা, সোনা, এখানে সর্ব্বত্রই সোনা; অথবা তাহার অভাবে ঝুটা-জরি, সোনালি পাত—এমন কোন কিছু —যাহা দীপ্ত ভানুর উজ্জ্বল কিরণে ঝিক‍্মিক্ করে, কিংবা কুতূহলী দর্শকের নেত্ররঞ্জন করে।
    • পিয়ের-লোটি, হৈদরাবাদে, ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ, পিয়ের-লোটির ফরাসী থেকে অনুবাদ, অনুবাদক- জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৪
  • বড় বাজারের সোনাপটীর একটী বড় দোকানে অনেক সোনা বেচা-কেনা হয়, সুতরাং রাত্রিকালে ঐ দোকানে যে অনেক টাকার সোনা ও নগত টাকা থাকে, সেবিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। ঐ দোকানের মধ্যে দুইটী বড় লোহার সিন্ধুক আছে, উহার মধ্যেই ঐ সকল মূল্যবান দ্রব্য ও নগত টাকা রক্ষিত হয়। রাত্রিকালে দোকানে কেহ থাকে না। ঐ লোহার সিন্দুকদ্বয়ের চাবি ও দোকানের চাবি, মালিক দোকান বন্ধ হইলে আপন বাড়ীতে লইয়া যান। রাত্রিকালে দোকানের রক্ষণাবেক্ষণের ভার পুলিস-প্রহরীর উপরই নির্ভর থাকে।
    • প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, মেকি লোক, চতুর্থ পরিচ্ছেদ, মেকি লোক - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১০
  • কাঁচা সোনার রঙ পায় পিতল, কিন্তু সোনার গুণ তাতে পৌঁছোয় না হাজার বার সোনা জাতীয় শিক্ষার ছাঁচে চালেও। পুড়িয়ে পিটিয়ে লোহাকে ইস্পাত করা যায়, পিতলকে ছুরির আকার দেওয়াও চলে কিন্তু ইস্পাতের গুণ পিতলে পৌছোয় না। মানুষ অদ্ভুত কৌশলে লোহাকে বাতাসের উপরে উড়িয়ে দিয়েছে পাখীর মতো, কিন্তু সেই লোহাতে পাখীর প্রাণ পৌছে দেবার সাধ্য মানুষের কোনো যুগে হবে বলে’ বিশ্বাস করে কি কেউ?
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতি ও শিল্প, বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩০
  • কিন্তু এর নাম কাঞ্চনজঙ্ঘা কেন? যেভাবে জ্বলিতেছে, তাতে সোনার রং তো মোটেই নাই। বরং এর এই রজতকান্তি দেখিয়া এর নামকরণ হওয়া উচিত ছিল—রজতজঙ্ঘা। আবার ভাবিয়া সংশোধন করিলাম যে, ভোরের প্রথম আলো যখন এর বরফের চূড়া স্পর্শ করে, তখন নিশ্চয় এর সারাদেহ সোনায় ঝল্‌মল্‌ করিয়া উঠে। সে সময়ে এর কনককান্তি দেখিয়াই বোধ হয় এর নামকরণ হইয়া থাকিবে—কাঞ্চনজঙ্ঘা।
    • অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বক্সা ক্যাম্প- অমলেন্দু দাশগুপ্ত, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • ব্রিটেন সমস্ত পৃথিবীর মহাজন হয়ে বসল; লণ্ডন হল পৃথিবীর টাকার বাজার। কিন্তু টাকা ধার দিচ্ছে বলে মস্ত মস্ত বস্তায় পুরে সোনা রূপো বা নগদ টাকা ইংলণ্ড থেকে অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল এমন কিন্তু মনে কোরো না। আধুনিক যুগের ব্যবসা এরকমভাবে চলে না; সে চালাতে গেলে যত সোনা রূপো লাগে অত নগদ সোনা-রূপোর সম্বলই নেই পৃথিবীতে। অজ্ঞ লোকেরা সোনা বা রূপোকেই একটা পরম প্রয়োজনীয় বস্তু বলে মনে করে; কিন্তু আসলে এগুলো হচ্ছে পণ্য-বিনিময়ের এবং জিনিষপত্র কেনা-বেচার সহায়ক উপকরণ মাত্র। সোনারূপো মানুষ খেতে পারে না, পরতে পারে না, বা অন্য-কোনো ভাবে ব্যবহার করতে পারে না—এক, গয়না করে অবশ্য পরতে পারে; কিন্তু তাতে মানুষের উপকার বিশেষ কিছুই নেই।
    • জওহরলাল নেহেরু, বিশ্ব-ইতিহাস প্রসঙ্গ- জওহরলাল নেহরু, অনুবাদক- সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫০৩
  • রাজা বললেন— সোনার দেশ থেকে তোমার পায়ের সোনার মল আনব।
    রানী গলার গজমতি হার দেখিয়ে বললেন— দেখ রাজা, এ মুক্তো বড়ো ছোটো, শুনেছি কোন দেশে পায়রার ডিমের মতো মুক্তো আছে, তারি একছড়া হার এনো।
    রাজা বললেন— সাগরের মাঝে মুক্তোর রাজ্য, সেখান থেকে গলার হার আনব। আর কী আনব রানী?
    তখন আদরিনী সুওরানী সোনার অঙ্গে সোনার আঁচল টেনে বললেন— মা গো, শাড়ি নয় তো বোঝা! আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি পাই তো পরে বাঁচি।
    রাজা বললেন— আহা, আহা, তাই তো রানী, সোনার আঁচলে সোনার অঙ্গে ছড় লেগেছে, ননীর দেহে ব্যথা বেজেছে। রানী, হাসিমুখে বিদায় দাও, আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি আনিগে।
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষীরের পুতুল, অবনীন্দ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- প্রকাশ ভবন, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • যে-সমস্ত জিনিস মানুষে সর্বদা ব্যবহার করে, আজ যদি হঠাৎ তাহার কোনোটির অভাব পড়িয়া যায়, তাহা হইলে ঠিক বোঝা যায়, কোন জিনিসটার যথার্থ মূল্য কতখানি। সোনা রূপা মণি মুক্তা সব যদি হঠাৎ একদিন পৃথিবী হইতে লোপ পায়, তবে অনেক শৌখিন লোকে হা-হুতাশ করিবে-মানুষের টাকা-পয়সার কারবারের বিষম গোলোযোগ উপস্থিত হইবে, রূপার অভাবে ফটোগ্রাফের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হইয়া আসিবে এবং ছোটোখাটো অনেকরকমের অসুবিধার সৃষ্টি হইবে।
    • সুকুমার রায়, লোহা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪৯
  • ষ্টেশনের নামটায় আমাদের দৃষ্টি আটকাইয়া গেল—রাজাভাতখাওয়া! কোন রাজার ভাত খাওয়ার সঙ্গে ইহার যোগ আছে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। নামের মধ্যেই ষ্টেশনটির পরিচয় নিহিত আছে। রাজা হীরা-মুক্তা-সোনা-দানা না খাইয়া আমাদের মত সামান্য মনুষ্যেরা যে ভাত খাইয়া থাকে, সেই ভাতই ভক্ষণ করিয়াছেন, এই অসামান্য কীর্তিকেই বোধ হয় এই নামকরণে স্থায়িত্ব দিয়া স্মরণীয় করিয়া রাখার চেষ্টা হইয়াছে! এইটুকু পর্যন্ত চোখ বুজিয়াই অনুমান করিয়া লইলাম।
    • অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বক্সা ক্যাম্প- অমলেন্দু দাশগুপ্ত, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক- বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৬
  • তরুণ স। তা কি বলব ভাই, মন্ত্রের গুণে সব করা যায়, মুখবন্ধ, চোখ বন্ধ হয়, লোহাকে সোনা, সোনাকে লোহা করা যায়, মানুষকে গাধা ভেড়া যা খুসী করা যায়।
    প্রহরী। মানুষকে গাধা করা কিছু বাহাদুরী না; তবে লোহাকে সোনা করতে পারলে একটা কাজ হোত, তোমাদের বিদ্যেও বোঝা যেত।
    তরুণ স। এ লোকটা নিরেট মুর্খ। চল ঠাকুর আমরা যাই। মন্ত্র শক্তি বুঝবে ওর মত লোক?
    প্রহরী। আচ্ছা। ঠাকুর। আমাকে মস্তর শিখিয়ে দাও, যাতে আমি লোহা সোনা করতে পারি, তখন যা বল কর্‌ব।
    • কামিনী রায়, সিতিমা- কামিনী রায়, প্রকাশক-শ্রী প্রবোধচন্দ্র সরকার, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩২৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩১
  • কলম্বাস যে স্বর্ণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি তা পাঠাতে পারেন নি। সেই জন্যে রাজা ও রাণীর মন ইতিমধ্যেই ভারাক্রান্ত হয়ে ছিল। তারপর যখন তাঁরা শুনলেন যে, কলম্বাস সেখানকার লোকদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন করছেন এবং নিজের জন্যে কলসী-কলসী সোনা সঞ্চয় করে রাখছেন, তখন রাজা ও রাণীর মন তিক্ত হয়ে উঠলো। তাঁরা অপর পক্ষের কথা শোনবার আগেই নিজেদের মনে কলম্বাস-সম্বন্ধে বিরূপ হয়ে রইলেন; এবং কলম্বাসের গতিবিধি ও কাজ সম্বন্ধে নিজের চোখে দেখে রিপোর্ট করবার জন্যে তাঁরা তাঁদের একজন বিশ্বস্ত উচ্চ রাজকর্ম্মচারীকে পাঠালেন।
    • নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রজয়ী কলম্বাস - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭০-৭১
  • থেরী অনুপমা ছিলেন সাকেত নগরের এক বিখ্যাত ধনীর মেয়ে, তিনি লিখেছেন, “আমার সৌন্দর্যখ্যাতি শুনে আমাকে বিবাহ করবার জন্য বহু রাজপুত্র, বহু শ্রেষ্ঠিপুত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের দূতেরা এসে পিতাকে বলতেন ‘অনুপমাকে ওজন ক’রলে যত সোনা হয়, তার আটগুণ সোনা দে'ব, আমাদের পাত্রকে কন্যাদান করুন’ কিন্তু লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধকে দেখবার জন্য আমার প্রাণ উদ্বুদ্ধ হ’ল, তাঁর চরণবন্দনা ক'রে আমি ধ্যানে বসলুম। তিনি আমায় ধর্ম দীক্ষা দিলেন।”
    • অনুরূপা দেবী, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থা, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩
  • পনেরোদিন খালি গান-বাজনাই চলিল। ষোল দিনের দিন দ্রৌপদী স্নানের পর আশ্চর্য পোশাক এবং অলংকার পরিয়া সোনার মালা হাতে সভায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। অমনি গোলমাল থামাইয়া, বাজনা থামাইয়া সারা সভাটি চুপচাপ।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, আদি পর্ব, ছেলেদের মহাভারত, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল-১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৯৬-১৯৭
  • খনির রাজা বল্লেন, “ভয় কি? এখনি আলাে হবে। এই ত আমার দেশ, যেখানে সােণা, রূপা, তামা, শীশা, এই সব পাওয়া যায়।”
    খানিক পরে অনেক গুলাে ভূতের মত লােক মশাল হাতে নিয়ে গাড়ীর কাছে এল; তখন মশালের আলােতে মুরলা দেখ্‌ল কি আশ্চর্য দেশ। লাল রংএর তামার রাস্তা, দুইধারে বন, সে বনের গাছপালা সব শাদা শীশার। বনের পরে প্রকাণ্ড মাঠ, তাতে রূপার ঘাস ঝক্‌ঝক্ কর্‌ছে; সেই মাঠের মাঝখানে সােণার রাজবাড়ী। সেই বাড়ীর দরজার কাছে এসে রাজা বল্লেন, “আমি এই দেশের রাজা; এই আমার বাড়ী। তুমি এখানকার রাণী হলে।”
    • সুখলতা রাও, ঘুমের দেশ, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, কলকাতা, মুদ্রক- ব্রাহ্মমিশন প্রেস, প্রকাশসাল= ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯০-৯১
  • স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র এই তিনটি প্রধান ধাতু হইতে আকরিক যৌগিক পদার্থ আজকাল এত সহজে বিচ্ছিন্ন করা হইতেছে যে, তাহার বিবরণ শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়।
    • জগদানন্দ রায়, রসায়নীবিদ্যার উন্নতি, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৫
  • হােয়াইট দ্বীপে কয়লা, কেরাসিন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের আকর আছে। জাপানের তাম্রখনি পৃথিবীমধ্যে বিখ্যাত। এক্ষণে সমগ্র জাপান সাম্রাজ্যে ৫৭টী রৌপ্য ১৩৬টী তাম্র-রৌপ্য এবং ৭২টী মিশ্রধাতুর খনি আছে। এই সমস্ত খনি হইতে গত পূর্ব্ব বর্ষে ৯ লক্ষ মণ তাম্র ৬২ হাজার মণ স্বর্ণ, দেড় লক্ষ মণ রৌপ্য, ২৫ কোটী মণ কয়লা উত্তোলিত হইয়াছিল। গতবর্ষে জাপানে যে সুবর্ণখনি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার মূল্য আনুমানিক হিসাবে ৪০০ কোটী স্থির হইয়াছে।
    • উমাকান্ত হাজারী, নব্য জাপান, নব্য জাপান ও রুষ জাপান যুদ্ধের ইতিহাস - উমাকান্ত হাজারী, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশসাল- ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯
  • জগতের লোকে এখন বুঝিবেন, প্রকৃতির এই যে বিচিত্র লীলা তাহা নব্বইটি মূলপদার্থ অবলম্বন করিয়া চলিতেছে না,—সকল পরিবর্ত্তনের গোড়ায় একই বর্ত্তমান। স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরক, লৌহ, তাম্র সকল একেরই বিচিত্র রূপ। আল্‌কেমিষ্টরা লৌহকে সুবর্ণে পরিণত করিবার জন্য যে সাধনা আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহা দুঃস্বপ্ন দেখিয়া করেন নাই। লৌহকে সুবর্ণ করিবার জন্য পরশ পাথর এই ভূমণ্ডলে এবং এই প্রকৃতির মধ্যেই আছে।
    • জগদানন্দ রায়, পরশ-পাথর, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
  • সন্ধ্যার সময় সওদাগর আসতেই তার বন্ধু এসে মুখখানা হাঁড়ির মতো করে বলল, “ভাই! একটা বড় মুশকিলে পড়েছি। তোমার ছেলেটিকে তুমি যখন দিয়ে গেলে, তখন দেখলাম দিব্যি কেমন নাদুস-নুদুস ফুট্‌ফুটে চেহারা—কিন্তু এখন দেখছি কিরকম হয়ে গেছে—ঠিক যেন বাঁদরের মতো দেখাচ্ছে! কি করা যায় বল তো বন্ধু!” ব্যাপার দেখে সওদাগরের তো চক্ষুস্থির! সে বলল, “কি পাগলের মতো বকছ? মানুষ কখনো বাঁদর হয়ে যায়?” মহাজন অত্যন্ত ভালো মানষের মতো বলল, “কি  জানি ভাই! আজকাল কি-সব ভূতের কাণ্ড হচ্ছে, কিছু বুঝবার জো নেই। এই দেখ না সেদিন আমার সোনার মোহরগুলো খামখা বদলে সব তামার পয়সা হয়ে গেল। অদ্ভুত ব্যাপার!”
    • সুকুমার রায়, দুই বন্ধু, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]